আমাদের অজান্তেই আমরা মুনাফিক | মুনাফিক কি এবং মুনাফিকে পরিণত হওয়ার কারণ

মুনাফিক
আমাদের অজান্তেই আমরা মুনাফিক | মুনাফিক কি এবং মুনাফিকে পরিণত হওয়ার কারণ (ব্যাখ্যা সহ বিস্তারিত)

“মুনাফিক” শব্দটির সাথে আমরা সবাই পরিচিত। মুনাফিক শব্দটি এসেছে নিফাক থেকে। ইসলামে মুমিন মুত্তাকী শব্দগুলো যেমন আল্লাহ্ বিশ্বাসীদের জন্য ব্যবহৃত হয়। ঠিক তেমনি কাফের মুনাফিক শব্দ গুলো আল্লাহ্ অবিশ্বাসীদের জন্য ব্যবহৃত হয়।
একজন মুসলিমের যখন ঈমানের দুর্বলতা আসে তখন সে ধীরে ধীরে মুনাফিকীতে লিপ্ত হয়। এবং এভাবে চলতে চলতে একসময় সে ঈমানহারা হয়ে যায়। আজ আমরা জানার চেষ্টা করবো কীভাবে একজন মুসলিম নিজের অজান্তেই মুনাফিকে রুপান্তর হয়।

মুনাফিক কে?
মুনাফিক শব্দটি এসেছে আরবি “নিফাক” শব্দ থেকে। আরবি নিফাক শব্দের অর্থ হলো কপটতা, প্রতারণা, ভন্ডামী, বা অন্তরে এক রকম ধারণা পোষণ করা এবং বাইরে অন্য রকম প্রকাশ করা। ইসলামী পরিভাষায় এর অর্থ হলো, অন্তরে কুফরি গোপন রেখে মুখে ঈমানের কথা বলা বা স্বীকার করা। একইসাথে লোক দেখানোর জন্য বিভিন্ন ইসলামিক অনুষ্ঠানাদি বা ইবাদত পালন করা। অর্থাৎ কেউ নিজেকে সবার কাছে মুমিন পরিচয় দিয়ে ভিতরে ভিতরে অন্তরে আল্লাহ্ বিরোধী চিন্তা চেতনা লালন করাই হচ্ছে মুনাফিকের কাজ। যে ব্যক্তি এরূপ করে তাকে ইসলামী পরিভাষায় ‘মুনাফিক’ বলা হয়।
এছাড়াও এমন অনেকে আছে যাদের ইসলামের প্রতি আগ্রহ নেই। বরং ব্যাপকরকম অনীহার কারণে ইসলাম সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করে না। যারফলে মুখে ও অন্তরে আল্লাহ্ আছে বিশ্বাস করে। কিন্তু তারা এমন এমন কাজ করে, যে কাজের কারণে তাদের ঈমান নষ্ট হয়ে যায়। এবং ঈমানের দূর্বলতার কারণে তারা মুনাফিকিতে লিপ্ত হয়ে পড়ে। অথচ তারা জানতেই পারে না তাদের কর্মকান্ড তাদেরকে মুনাফিকিতে পরিনত করেছে।

অতএব মুনাফিকের সংজ্ঞা থেকে এটা স্পষ্ট হয় যে মুনাফিক দুই ধরনের।
১) বিশ্বাসগত মুনাফিক।
২) কর্ম বা আমলগত মুনাফিক।

১) বিশ্বাসগত মুনাফিক
যে মুনাফিক প্রকাশ্যে ঈমানের ঘোষণা দিয়ে মনে মনে আল্লাহ এবং রাসুল (সাঃ) সম্পর্কে বিরুপ ধারণা ও ঘৃণা পোষণ করে। একইসাথে রাসুলের (সাঃ) বিরুদ্ধাচরণ করে তারা হচ্ছে বিশ্বাসগত মুনাফিক। এই জাতীয় মুনাফিক রাসুল (সাঃ) জীবদ্দশায় ছিলো। তারা ঈমানের দাবি করে সুযোগ সুবিধা নিয়ে সময়ে অসময়ে রাসুলের বিরুদ্ধে অপবাদ এবং তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করতো। সেইসাথে কাফিরদের সাথে মিলিত হয়ে রাসুল (সাঃ) হত্যার পরিকল্পনায়ও করেছিল। এইজাতীয় মুনাফিক হচ্ছে কাফেরের সমতুল্য। এদের অবস্থান জাহান্নামে। বর্তমানে কিছু এজেন্টধারী মুনাফিক ছাড়া এমন মুনাফিক সচারচর নেই।

২) কর্ম বা আমলগত মুনাফিক
কর্ম বা আমলগত মুনাফিক হলো, যে মুখে ঈমানের দাবি করে, কিন্তু অন্তরে ঈমানের পরিপন্থী ধারণা পোষণ করে এবং কাজে কর্মে তা প্রকাশও করে। সেইসাথে ইসলামী জ্ঞানার্জনে অলসতা ও বিরুপ মনোভাব প্রকাশ করা। ইসলামী আইনকানুনের প্রতি বিদ্বেসসহ আমলের ব্যাপারে গাফিলতি করা ব্যক্তিই হচ্ছে আমলগত মুনাফিক।
অর্থাৎ এইজাতীয় ব্যক্তি ইসলামের বিরুদ্ধে নয় বরং ইসলামের বিধিনিষেধ মেনে না চলার পক্ষে। এরা যেসব আমল করা দরকার তা পরিত্যাগ করে এবং যা নিষেধকৃত তা বাস্তবায়ন করে। মোটকথা ইসলামের প্রতি উদাসীন ব্যক্তি এই শ্রেণীতে পড়ে। বর্তমান বিশ্বে এইজাতীয় মুনাফিকের সংখ্যাই বেশী। এই শ্রেণীর মুনাফিক জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে ধীরে ধীরে কুফরি কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে। যা তাদেরকে কুরআনের বিরুদ্ধে দাড় করিয়ে দেয়।

আপনি যেভাবে মুনাফিক হতে পারেন:
মুনাফিক চেনার জন্য কুরআনে অসংখ্য আয়াত এবং রাসূলুল্লাহ সাঃ এর অনেক হাদিস রয়েছে। আমরা এইসব আয়াত এবং হাদীস পর্যালোচনা করলে খুব সহজেই বুঝতে পারবো আমাদের মধ্যে কাদের কাদের মুনাফিকের আলামত রয়েছে এবং আমরা কী কী কারণে মুনাফিকে পরিনত হচ্ছি!

আল্লাহর বিধান বিদ্বেষী মুনাফিক:
আমাদের সমাজে আজ আমরা এমন অনেক মুসলিম আছি যারা দুনিয়াদারী করার জন্য আল্লাহর বিভিন্ন আইনকানুনকে কটাক্ষ করছি। যেসব আইনকানুন তাদের বিরুদ্ধে যায় তারা সেগুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলে। যদিও তারা নিজেদের মুসলিম বলে দাবি করে। আল্লাহ্ তাদের সম্পর্কে কুরআনে বলেন,

” আর মানুষের মধ্যে কিছু লোক এমন রয়েছে যারা বলে, আমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান এনেছি অথচ আদৌ তারা ঈমানদার নয়।” [ সুরা বাকারা ২:৮ ]

এই আয়াতে আল্লাহ্ স্পষ্ট করে বলে দিচ্ছেন, এমন কিছু মুসলমান আছে যারা মুখে ঈমানের দাবি করে কিন্তু কখনোই ঈমানদার হতে পারে না তাদের কর্মগুণে। অর্থাৎ তাদের কর্মকান্ডই বলে দেয় যে এরা ঈমানদার নয় বরং এরা মুনাফিক। যেমন আল্লাহ বলেন –

” আর যখন তাদের বলা হয় — ”আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার দিকে এবং রসূলের দিকে এসো’’, তুমি দেখতে পাবে মুনাফিকরা তোমার কাছ থেকে ফিরে যাচ্ছে বিতৃষ্ণার সাথে। “( সূরা নিসা : ৬১)

অর্থাৎ ঐসব মুনাফিককে যখন আল্লাহ এবং রাসূলের সাঃ পথে চলার জন্য আহবান করা হয় তারা সেদিকে না এসে অবজ্ঞার সহিত অন্যদিকে ফিরে যায়। এবং এরাই হচ্ছে মুনাফিক। এখন আমাদের সমাজে এমন মুসলমান ভুড়িভুড়ি। যারা শুধুমাত্র জন্মগত মুসলমান। ইসলামের আইনকানুন বিধিনিষেধের প্রতি তাদের কোনো তোয়াক্কা নেই। কোনপ্রকার আমলের ধারেকাছে নেই।

এরা দুনিয়াবী ক্ষমতার লোভে আখিরাতকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। তাদেরকে ইসলামের কথা বললেই নানান ছলছুতোয় পার পাওয়ার চেষ্টা করে। ক্ষেত্রবিশেষে কুরআনের পাল্টা দুনিয়াবী যুক্তি দিয়ে নিজের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করে। দুনিয়াদারীই হচ্ছে তাদের কাছে গুরত্বপূর্ণ। আখিরাতের বিশ্বাস নেই বলে আখিরাতের চিন্তাও নেই। এরাই হচ্ছে প্রকৃত মুনাফিক।

এখন আপনি নিজেই নিজের দিকে তাকান। আপনার দ্বারা এমন কোনো কিছু কি হচ্ছে যা ইসলামের আইনের সাথে সাংঘর্ষিক? যেমন ভাস্কর্য বা মূর্তি ইসলামে হারাম। এখন কেউ যদি এই ভাস্কর্য বা মূর্তির পক্ষে গিয়ে ইসলামের বিপক্ষে চলে যায়, তাহলে সে হবে সুস্পষ্ট মুনাফিক।

আচরণগত মুনাফিক:
পবিত্র হাদীস শরীফে মুনাফিকদের নিয়ে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। সবচেয়ে প্রসিদ্ধ হাদিসটি হচ্ছে -আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ‘স (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘চারটি স্বভাব যার মধ্যে থাকবে সে খাঁটি মুনাফিকগণ্য হবে। আর যে ব্যক্তির মাঝে তার মধ্য হতে একটি স্বভাব থাকবে, তা ত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকদের একটি স্বভাব থেকে যাবে। (সে স্বভাবগুলি হল,) ১। তার কাছে আমানত রাখা হলে খিয়ানত করে। ২। কথা বললে মিথ্যা বলে। ৩। ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে এবং ৪। ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হলে অশ্লীল ভাষা বলে।’’(সহীহুল বুখারী ৩৪, ২৪৫৯, ৩১৭৮, মুসলিম ৫৮, তিরমিজী ২৬৩২, নাসায়ী ৫০২০ আবূ দাউদ ৪৫৮৮, আহমাদ ৬৭২৯, ৬৮২৫, ৬৮৪০)

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   মোকছুদুল মোমেনীন বেহেস্তের কুন্‌জী বইয়ে বর্ণিত হাদিসের নামে বা ধর্মের নামে বা ইসলামের নামে প্রচলিত মিথ্যা বর্ণনা বা গল্প বা কাহিনী

এই হাদিসটি আমরা সবাই জানি। এই হাদীস অনুসারে উপমহাদেশে ৮০ শতাংশের উপরে মুসলমান মুনাফিকী নিয়ে বাস করছে। কেননা বর্তমান সময়ে মিথ্যা বলে না এমন একজন মানুষ পাওয়া দুষ্কর হবে। আর ওায়াদা ভঙ্গ এবং আমানত খিয়ানতও অস্বাভাবিক কিছু নয়। এটা এখন হরহামেশাই হচ্ছে। আর গালাগালি অশ্লীল ভাষাতো এধরনের রেওয়াজে পরিনত হয়েছে। আমরা কেউ এরথেকে বেঁচে নেই গুটিকয়েক বাদে।

সুতরাং উপরোক্ত এই আলামত যদি আমার আপনার চরিত্রে স্পষ্ট থাকে, তাহলে আমি আপনি নিজেকে কীভাবে আর মুসলিম দাবি করতে পারি? আজ যারাই ক্ষমতার কেন্দ্র যায় তাদেরই এইসব মুনাফিকী গুণাবলি প্রকাশ পায়। যাদেরই দুনিয়াবী অর্থ বিত্তের ক্ষমতা আছে তার কখনোই অন্যকে পরোয়া করে না। আর এইসব করে এবং তাদের সমর্থন করে কীভাবে আমরা নিজের মুসলিম দাবি করতে পারি?

সালাত পরিত্যাগকারী মুনাফিক:
যারা জামাতের সহিত সালাত বা নামাজ আদায় করে না তাদেরকে মুনাফিকের সাথে তুলনা করা হয়েছে। পবিত্র হাদীসে এসেছে,

‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমাদের (সাধারণ) ধারণা, স্পষ্ট মুনাফিক্ব ব্যতীত কেউ জামা’আত থেকে অনুপস্থিত থাকতে পারে না। আমরা তো আমাদের মধ্যে এমন লোকও দেখেছি, যারা (দুর্বলতা ও অসুস্থতার কারণে) দু’জনের উপর ভর করে (মসজিদে) যেত এবং তাকে (সলাতের) কাতারে দাঁড় করিয়ে দেয়া হত।…….. আর তোমরা তোমাদের নাবীর সুন্নাত ত্যাগ করলে অবশ্যই কুফরীতে জড়িয়ে পড়বে। (সহীহ্ মুসলিমে এসেছে ‘তোমরা অবশ্যই পথভ্রষ্ট হবে’ শব্দে। আর এটাই মাহফূয।( সংক্ষেপিত, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৫৫০, ইবনে মাজাহ, মুসলিম, মুসতাদে আহমাদ, দারিমী)

উপরোক্ত হাদিসে খুবই সুস্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, যারা (বিনা কারণে) জামাতে সালাত আদায় করে না তারা স্পষ্ট মুনাফিকীতে রয়েছে। শুধু তাই নয় সালাত ত্যাগ করা মানে কুফুরিতে লিপ্ত হওয়া। এই ব্যাপারে অসংখ্য হাদিস রয়েছে।

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, বান্দা এবং শিরক ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সলাত ছেড়ে দেয়া। (সহিহ মুসলিম- ১৪৮)

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কুফর ও ঈমানের মধ্যে পার্থক্য হল নামায ত্যাগ করা।( ইবনু মা-জাহ -১০৭৮, মুসলিম)

বুরাইদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমাদের ও তাদের (কাফিরদের) মধ্যে (মুক্তির) যে প্রতিশ্রুতি আছে তা হল সালাত । সুতরাং যে ব্যক্তি সালাত ছেড়ে দেয়, সে কুফরী কাজ করে। (ইবনু মা-জাহ- ১০৭৯, জামে’ আত-তিরমিজি -২৬২১)

উপরোক্ত হাদিস থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণিত যে, যারাই সালাত আদায় করে না, তারা নিশ্চিত কুফরিতে রয়েছে। তাদের ঈমান সন্দেহযুক্ত। সুতরাং রাসূল সাঃ যেখানে জামাতে সালাত আদায় না করাকে মুনাফিকী, আর সালাত আদায় না করাকে কুফরি বলেছেন। সেখানে আমাদের অধিকাংশেরও বেশী মুসলমান জামাতে সালাত আদায় তো দূরের কথা! সালাতই আদায় করে মাত্র শতে দশজন। অতএব বাকি অধিকাংশ মুসলমান কীভাবে ঈমানদার থাকে?

আমাদের চিন্তা করা উচিত আমরা আসলেই কি মুমিন তথা আল্লাহর উপর বিশ্বাসী আছি কিনা? নাকি মুখে আল্লাহ্ আছে বলে স্বীকার করে অন্তরে আল্লাহ্কেই পাত্তা দিচ্ছি না। (নাঊজুবিল্লাহ)

সুতরাং এই সহজ হিসাবটা যদি আমরা বুঝতে পারি, তাহলে এটা সহজেই অনুমেয় যে সালাত আদায় না করে আমরা সত্যিকারের মুনাফিকীতে রয়েছি। অতএব আমরা নিজেদেরই অজান্তে নিজেরাই মুনাফিকে পরিনত হচ্ছি শুধুমাত্র সালাত আদায় না করার কারণে।

সালাতে অলসতাকারীরা মুনাফিক:
আমরা আগেই জেনেছি যারা সালাত আদায় করে না তারা মুনাফিক এবং কুফরিতে রয়েছে। এছাড়াও যারা সালাত আদায় করে তাদের মধ্যেও মুনাফিক রয়েছে। আল্লাহ্ বলেন,

” অবশ্যই মুনাফেকরা প্রতারণা করছে আল্লাহর সাথে, অথচ তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতারিত করে। বস্তুতঃ তারা যখন সালাতে দাঁড়ায় তখন দাঁড়ায়, একান্ত শিথিল ভাবে লোক দেখানোর জন্য। আর তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে।” [ সুরা নিসা ৪:১৪২ ]

এই আয়াত দ্বারা স্পষ্ট যে, সালাত খুযু খুশুর সহিত আদায় না করা মুনাফিকের লক্ষণ। সেইসাথে লোক দেখানোর জন্য সালাতে অংশ নেওয়া হলেও মুনাফিক বলে গন্য হবে। আমাদের সমাজে মানুষ বৃদ্ধ হলে তবেই সালাতে অংশ নেয়। শক্তি সমর্থ থাকা অবস্থায় কখনো মসজিদমুখী হয়না। যখন শক্তি সামর্থ্য দিয়ে টাকাপয়সা উপার্জন করতো তখন কখনোই আল্লাহ্কে সময় দেওয়ার সময় তাদের ছিলো না।

এখান ছেলে সন্তানরা বড় হয়ে রোজগার করছে বলে বাবা ঘরে বেকার। অর্থাৎ ঘরে কোনো কাজ করার থাকে না বলেই মসজিদে সালাতে অংশ নেয়। আর কিছু লোক আছে ছেলে মেয়ে বড় হয়ে বিয়ের উপযুক্ত হলে তবেই মসজিদে নামাজ কালাম পড়ে।

একইসাথে এমন কিছু বিত্ত শ্রেণীর মুসলমান আছে। যাদের টাকাপয়সার অভাব নেই। সমাজে প্রচুর নাম ডাক। তখন তারা মানুষের সম্মান এবং খ্যাতি পাওয়ার জন্য নিয়মিত মসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করে। সেইসাথে টাকাপয়সার জোরে মসজিদ মাদ্রাসার বিভিন্ন পদ পদবী কমিটিতে জড়িত হয়।

এইসব পদ পদবী পাওয়ার পর এবং পাওয়ার জন্যও অসংখ্য বিত্তশালী নিয়মিত সালাতে অংশগ্রহণ করে। যাদের মূল উদ্দেশ্য আল্লাহ্কে সন্তুষ্ট করা নয়। বরং বান্দাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই আসল উদ্দেশ্য। এইসব সকল প্রকৃতির লোকই হচ্ছে মুনাফিকের শ্রেণীভুক্ত।

এই জাতীয় মুসল্লিদের জন্য আল্লাহ্ আরো ঘোষণা করেন,
অতএব দুর্ভোগ সেসব মুসল্লিদের, যারা তাদের সালাত সম্বন্ধে বে-খবর; (সূরাঃ মাঊন, আয়াতঃ ৪- ৫)

সুতরাং যারাই সালাত সম্পর্কে উদাসীন তাদের জন্য রয়েছে দূর্ভোগ। অতএব আমরা যারা নিজেদের অজান্তে সালাতকে গুরুত্ব না দিয়ে দুনিয়াদারী করছি, তাদের চিন্তা করা উচিত আসলেই কি আমাদের ঈমান আছে নাকি গেছে। এভাবেই আমরা আমাদের কাজকর্মে আজ মুনাফিকে পরিনত হয়েছি।

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   সমাজে প্রচলিত কিছু শিরক এর তালিকা জেনে নিই (পর্ব ৪)।

কুরআন অস্বীকারকারীরা মুনাফিক:
কুরআন অস্বীকারকারী সরাসরি কাফির। কিন্তু এমন এক প্রকার কুরআন অস্বীকারকারী আছে যারা ঈমানের পাশাপাশি কুরআনকে কৌশলে অস্বীকার করে। তারা নানান ফন্দি ফিকির করে কুরআনকে অস্বীকার করার চেষ্টা করার কারণে মুনাফিকে পরিনত হচ্ছে।

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে (সূরা মারইয়্যামের ৫৯ আয়াত পাঠ করার পর) বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন,

“ষাট বছর পর কিছু অপদার্থ পরবর্তীগণ আসবে, তারা নামায নষ্ট করবে ও প্রবৃত্তিপরায়ণ হবে; সুতরাং তারা অচিরেই অমঙ্গল প্রত্যক্ষ করবে। অতঃপর এক জাতি আসবে, যারা কুরআন পাঠ করবে, কিন্তু তা তাদের কণ্ঠের অক্ষকাস্থি পার হবে না। (হৃদয়ে জায়গা পাবে না।) কুরআন তিন ব্যক্তি পাঠ করে; মু’মিন, মুনাফিক ও ফাজের।” বর্ণনাকারী বাশীর বলেন, আমি অলীদকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ওরা তিন ব্যক্তি কে কে?’ তিনি বললেন, ‘মুনাফিক তা অস্বীকার করে, ফাজের তার অসীলায় পেট চালায় এবং মু’মিন তার প্রতি ঈমান রাখে।’ (আহমাদ ১১৩৬০, হাকেম ৩৪১৬, ৮৬৪৩, সিলসিলাহ সহীহাহ ১/২৫৭)

অর্থাৎ একশ্রেণির মুসলমান কুরআন পড়বে কিন্তু তারা কুরআন পড়েও তা অস্বীকার করবে। অর্থাৎ তাদের কুরআন পড়াটা শুধু তিলাওয়াতই হবে। এর অন্তর্নিহিত অর্থ তারা জানে না এবং জানার চেষ্টাও করবে না। তাই কুরআনের অর্থ না জানার কারণে আল্লাহ্ কুরআনে কী দিয়েছেন কী বলেছেন কী নিষেধ করেছেন ইত্যাদি তার কিছুই তারা অবগত হতে পারে না। ফলে তারা না জেনে কুরআন বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে কুরআনকে অস্বীকার করে ফেলে। এবং তারা কাফের মুনাফিকে পরিনত হয়।

আবার আরেকটি শ্রেণী হচ্ছে, তারা কুরআন পড়ে এবং তার মধ্যে কী আছে তাও জানে। কিন্তু সেই অনুযায়ী আমল করে না এবং চেষ্টাও করে না। বরং ক্ষেত্রবিশেষে কুরআনের বিরুদ্ধে কাজ করে কুরআন বিরোধী হয়ে মুনাফিকীতে লিপ্ত হয়।

এখন আমরা যদি আমাদের নিজেদের যাচাই করি, তাহলে দেখতে পাবো যে, শতকরা ২০/৩০ জন কুরআন পড়তে জানলেও শতে ৫ জনও কুরআন সম্পর্কে জানে না। অর্থাৎ কুরআনের অনুবাদ তথা কুরআনে আল্লাহ্ কী বলেছেন, কী আদেশ দিয়েছেন কী নিষেধ করেছেন ইত্যাদি কিছুই জানে না।

অতএব শুধু কুরআন তিলাওয়াত করলেই সমস্ত নেকী আপনার কাজে আসবে না। যতক্ষন না সেই অনুযায়ী আমল করা না হচ্ছে। যদি কুরআন পড়ার পরও কুরআনে নিষিদ্ধ কাজ থেকে আমরা বিরত হতে না পারি বা কুরআন পড়ার পরও কুরআন অনুযায়ী আমল না করি। তাহলে আমরা কীভাবে নিজেদের মুসলিম দাবি করতে পারি?

সুতরাং আমি আপনি যদি কুরআন পড়ে বা না পড়ে কুরআনের বিরুদ্ধে চলে যায়, তাহলে আমরা আর কীভাবে নিজেদের মুসলিম দাবি করতে পারি? অতএব আমরা জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে নিজেদের অজান্তেই মুনাফিকে পরিনত হচ্ছি।

ইসলামের জ্ঞান না থাকাও মুনাফিক:
প্রতিটি মুসলমানের ইসলামের জ্ঞানার্জন করা ফরজ। অর্থাৎ প্রতিটি মুমিনকেই শরীয়তের নূন্যতম হুকুম আহকাম সম্পর্কে অবগত হতে হবে এবং জানার চেষ্টা থাকতে হবে। পবিত্র হাদীসে এসেছে,
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “ইলম বা জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফরয ” (মিশকাতুল মাসাবিহ-২১৮, ইবনে মাজাহ -২২৪)

তাছাড়া আল্লাহ্ নিজেই বলেন,
” যারা জানে এবং যারা জানে না; তারা কি সমান হতে পারে? চিন্তা-ভাবনা কেবল তারাই করে, যারা বুদ্ধিমান। “[ সুরা যুমার ৩৯:৯ ]

” যে ব্যক্তি জানে যে, যা কিছু পালনকর্তার পক্ষ থেকে আপনার প্রতি অবর্তীর্ণ হয়েছে তা সত্য, সে কি ঐ ব্যক্তির সমান, যে অন্ধ? তারাই বোঝে, যারা বোধশক্তি সম্পন্ন।” [ সুরা রা’দ ১৩:১৯ ]

উপরোক্ত হাদীস ও কুরআনের আয়াত থেকে বুঝা যাচ্ছে প্রতিটি মুমিনের দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। কেননা দ্বীন সম্পর্কে না জানা বা জানার চেষ্টা না করাই হচ্ছে দ্বীন পালন না করা বা দ্বীনের ব্যাপারে উদাসীনতা। যা কখনোই ইসলাম সমর্থন করে না।

পবিত্র হাদীসে এসেছে,

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অমুক অমুক ব্যক্তি আমাদের দ্বীনের ব্যাপারে কিছু জানে বলে আমি ধারণা করি না। রাবী লায়স বর্ণনা করেন যে, লোক দু‘টি মুনাফিক ছিল। ( সহিহ বুখারী আচার-ব্যবহার ৬০৬৭ নং হাদীস আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৩২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫২৮)

এই হাদীস থেকে আমরা এই শিক্ষা পায় যে, দ্বীনের ব্যাপারে কিছু না জানা হচ্ছে মুনাফিকী। অর্থাৎ যে নিজেকে ঈমানদার দাবি করবে তাকে অবশ্যই দ্বীন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখতে হবে। শুধু মুসলিম ঘরে জন্মেছি বলেই মুসলমান হয়ে যাবো ব্যাপারটা কখনোই এমন নয়।

মুসলিম হতে হলে কালেমা বুঝে তবেই ঈমান আনতে হবে। শুধু তাইনয় ইসলামের সাধারণ খুটিনাটি বিষয় সম্পর্কে জ্ঞানও রাখতে হবে। বিশেষ করে তাওহীদ, শির্ক, বিদআত ইত্যাদি। যা না জানার কারণে ঈমান ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।

আমরা দুনিয়াবী জীবনযাপনের জন্য সন্তানদের ছোট থেকেই দুনিয়াবী শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার জন্য জীবনমরণ চেষ্টা করি। অথচ এই দুনিয়া আল্লাহ্ এবং পরকালের কাছে কিছুই নয়। যে ঈমান এনে নিজেকে ঈমানদার দাবি করে, তাকে অবশ্যই দুনিয়ার চাইতে আখিরাতকে বেশী প্রাধান্য দিতে হবে। আর এই জন্যই দ্বীনের পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকা আবশ্যক। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই এই বিষয়ে বেমালুম ভুলে থাকে।

আমাদের উপমহাদেশে আমরা সুফিবাদী ইসলাম পালন করার কারণে অধিকাংশ মুসলমানই দ্বীন সম্পর্কে মাথা ঘামায় না। আমরা শুধুমাত্র বছরে একবার দুবার ওয়াজ মাহফিলে যাওয়ার মাধ্যমে দ্বীন জানার চেষ্টা করি। তাও আবার তবারুক দেওয়ার আগে মাহফিলে বসি। এতে করে দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে সিংহভাগ মানুষ গাফেল থাকি। এছাড়াও প্রতি সপ্তাহে জুমার বয়ানও আমরা অধিকাংশ মানুষ শোনি না। যারফলে আমাদের দ্বীনের সঠিক জ্ঞানার্জন হয় না।

সুফিবাদী মুসলমানদের প্রপাগান্ডায় শতকরা ৯৫ শতাংশ মুসলমান কুরআন পড়ে বুঝার চেষ্টা করে না। যেকারণে আল্লাহ্ কুরআনে কী আদেশ দিয়েছেন এবং নিষেধ করেছেন তা কেউ -ই জানতে পারে না। এই না জানার কারণে অধিকাংশ মুসলমান সঠিক দ্বীন ইসলাম পালন থেকে দূরে থাকে। যারফলে এভাবেই আমরা মৌলিকঅর্থে মুনাফিকিতে পরিনত হচ্ছি। যা আমরা নিজেরাই জানি না।

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   ব্যাখ্যা ও উদাহরণসহ কেয়ামতের আলামত ও ভবিষ্যতবাণী পর্ব-৩

আল্লাহ ভুলে দুনিয়ামুখী হওয়া:
দুনিয়াবী প্রভাব প্রতিপত্তি ও ক্ষমতার লোভে আমরা একশ্রেণির ক্ষমতাশালী মুসলমান সৎ কাজের পরিবর্তে অসৎ কাজের আদেশ দিচ্ছি। সেইসাথে কেউ সৎ কাজে উদ্বুদ্ধ হলে তাকেও থামিয়ে দেই। এছাড়াও আমরা এমনভাবে দুনিয়াদারী করি যেন পরকাল বলে কিছুই নেই। অর্থাৎ আল্লাহ্কে ভুলে এবং ইসলামের প্রতি সম্পূর্ণ উদাসীন হয়ে আমরা শুধুমাত্র দুনিয়াবী জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। এই দুনিয়াদারীই আমাদেরকে পরিনত করছে আল্লাহর অবাধ্য মুনাফিকিতে। আল্লাহ্ বলেন,

” মুনাফিক পুরুষ এবং মুনাফিক নারী, এরা (স্বভাব চরিত্রে) একেঅপরের মতোই। তারা ( উভয়েই মানুষদের) অসৎ কাজের আদেশ দেয় ও সৎকাজ থেকে বিরত রাখে এবং (আল্লাহর পথে খরচ করা থেকে) উভয়েই নিজেদের হাত বন্ধ করে রাখে ; তারা (যেমনি এই দুনিয়ায়) আল্লাহকে ভুলে গেছে, আল্লাহ তাআলাও (তেমনি আখিরাতে) তাদের ভুলে যাবেন; নিঃসন্দেহে মুনাফিকরা সবাই পাপিষ্ঠ। ” (সূরা তাওবা :৬৭)

অর্থাৎ যারাই অসৎ কাজের আদেশ দিয়ে সৎকাজ সমূহ বন্ধের নির্দেশ দেয় সেইসাথে আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে না তারা স্পষ্টত মুনাফিক। আর এইজাতীয় মানুষ আমাদের সমাজে অহরহ।

আমাদের মধ্যে কিছু মানুষ আছে যারা ক্ষমতার বলে ইসলামের বিভিন্ন দাওয়াতী কার্যক্রম পছন্দ করে না। বরং এইসব বাদ দিয়ে নাচগানকে পছন্দ করে বেশী। সেইসাথে দাওআতী কাজের চাইতে নাচগানের কনসার্টে সময় দেয় এবং আয়োজনে নিয়োজিত থাকে।

আর এরাই হচ্ছে বর্তমানে সময়ের খুবই খারাপ প্রকৃতির মুনাফিক। অথচ আমরা মুখে ঈমানের দাবি করলেও কখনোই আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করি না। বরং কেউ আল্লাহ্‌র রাস্তায় চলতে চাইলে বা কিছু করতে চাইলে সেখানে বাঁধা দেই। আর এভাবেই আমরা আমাদের অজান্তে মুনাফিকে পরিনত হচ্ছি।

অশ্লীলতা ও বাকপটুতা:
আজ আমরা তথ্যপ্রযুক্তির সহজলভ্যতার কারণে বিভিন্নভাবে নানান অশ্লীলতায় জড়িয়ে পড়ছি। সেইসাথে স্কুল কলেজ অফিসে বন্ধু ও কলিগদের কাছে জনপ্রিয় হওয়ার জন্য বাচালতা এবং বাকপটুতা অবলম্বন করি। যাতে আমাদের অন্যদের থেকে আলাদা চেনা যায়। অথচ হাদিসে এসেছে, ধান্ধাবাজি বাকপটুতা নিফাকের একটি শাখা মাত্র।

আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত,
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘লজ্জা, সম্ভ্রম ও অল্প কথা বলা ঈমানের দুটি শাখা। অশ্লীলতা ও বাকপটুতা (বাচালতা) নিফাকের (মুনাফিকির) দুটি শাখা।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২০২৭)

সুতরাং আমরা আজ যখনই সময় পায় তখনই অশ্লীলতা নিয়ে মেতে উঠি। আমরা বুঝতেই পারছি না যে, এই সামাজিক মাধ্যম ফেইসবুক, ইউটিউব, টিকটক, লাইকী ইত্যাদি আমাদের কত ক্ষতি করছে।
একজন মানুষ হোক সে ছাত্র, চাকুরিজীবী, ব্যবসায়ী, গৃহীনি, দোকানের কর্মচারী ইত্যাদি যে যেই কাজই করুক না কেন, সময় পেলেই আমরা মোবাইল নিয়ে বসে পড়ি। যার ৯০ শতাংশেরও অধিক মানুষ বিনোদনের আশায় ইন্টারনেটে ঢুকি।

আর ঢুকতেই আমাদের সামনে চলে আসে বিনোদন যা ইসলাম সমর্থিত নয়। বিনোদনের নামে ফেইসবুক ইউটিউবে যা চলছে তা ঈমান ধ্বংস করার পাঁয়তারা। একইসাথে টিকটক এবং লাইকী হচ্ছে চরম অশ্লীলতা। যেখানে নারীরা সেলিব্রিটি হওয়ার আশায় তাদের সম্ভ্রম পর্যন্ত বিলিয়ে দিচ্ছে অকাতরে। যা অশ্লীলতাকেও হার মানায়।

এইসব করে কীভাবে আমি আপনি নিজেকে এখনো মুসলিম দাবি করি। কেননা ইসলাম আমাদের শ্লীলতার শিক্ষা দেয়, সম্মানের শিক্ষা দেয়। সেখানে দ্বীন সম্পর্কে কুরআন সম্পর্কে না জানার কারণে আমরা আজ হয়ে যাচ্ছি মুনাফিক। এই যে আমাদের কাজ কর্মে আমরা মুনাফিক হয়ে পড়ছি, তা আমরাও জানতে পারি না।

একইভাবে বন্ধু ও সহকর্মীদের কাছে সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য আমরা অশ্লীল গালগল্পে বাকপটুতার চর্চা করি। যেসব আলোচনার বিষয়বস্তুই থাকে নগ্নতা ও অশ্লীলতা। যা আমরা প্রায়শই করি খেলার ছলে। আর আমাদের বাগ্মিতা আনন্দ দেয় সবাইকে। আমরা হয়ে উঠি জনপ্রিয়।

অথচ আমরা জানতেই পারি না এই সস্তা অশ্লীল জনপ্রিয়তা আমাদেরকে পরিনত করছে মুনাফিকে। যা আমরা কখনোই কল্পনাও করি না। এভাবেই আমরা আমাদেরই অজান্তে হয়ে পড়ছি মুনাফিক।

মানুষকে ধোঁকা দেওয়া:
আমাদের মধ্যে একশ্রেণির মুসলমান আছে, যারা খুব সুকৌশলে অন্যান্য মুমিনদের ধোঁকা দেয় এবং প্রতারণা করে। যা সুস্পষ্ট মুনাফিকের লক্ষণ। আল্লাহ্ বলেন

‘…তারা (মুনাফিকরা) আল্লাহকে এবং যারা ঈমান এনেছে তাদের (মুসলিমদের) ধোঁকা দিচ্ছে। অথচ তারা নিজেদেরই ধোঁকা দিচ্ছে এবং তারা তা অনুধাবন করে না…।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৮-১০)

এখানে সুস্পষ্ট যে, যারা মুনাফিক তারা ঈমানদারদের বিভিন্ন ভাবে ধোঁকা দেয়। আমাদের সমাজে আমরা এমন কিছু মুসলমান আছি যারা নামেমাত্র মুসলমান। না আছে আমাদের দ্বীনের জ্ঞান, না আছে আমল। অথচ দাড়ি টুপি পড়ে এমন ভাব ধরি। যেন সাক্ষাৎ আল্লাহ্‌র অলি!

আমরা ইসলামের বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা এমনভাবে পালন করি যেন সবাই আমাদের তারিফ করে। অথচ অন্তরে ইসলামের কোনো ভয়ভীতি নেই। এভাবেও আমাদের এক শ্রেণীর মুসলমান আছে, যারা লোক দেখানো ইবাদত বন্দেগী করে আর দশজন মুসলমানকে ধোঁকা দিচ্ছে।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা সুস্পষ্টভবে প্রমাণিত যে, শুধু জন্মগত মুসলমান হলেই কখ‌নো প্রকৃত মুসলমান হওয়া যায় না। শুধু ইসলামের আনুষ্ঠানিকতা পালন করলেই মুমিন হওয়া যায় না। মুমিন মুসলিম হতে হলে প্রকৃত ঈমান আনা দরকার। আমরা যারা মুখে ঈমানের দাবি করে নিজেদের মুসলিম পরিচয় দিচ্ছি, তাদের আচার আচরণে কথা বার্তায় বিশ্বাস ও আকিদায় আজ মুনাফিকের স্পষ্ট লক্ষণ প্রতীয়মান।

সুতরাং স্পষ্টত মুনাফিকের লক্ষণ নিয়ে কীভাবে আমরা নিজেদের মুমিন মুসলিম দাবি করতে পারি? সত্যি কথা হচ্ছে আমরা জানিই না যে আমাদের ঈমান আকিদা আজ মুনাফিকীতে পরিপূর্ণ। আমরা ধরেই নিয়েছি মুসলমানের ঘরে যেহেতু জন্ম নিয়েছি, সেহেতু আমরা হাজারো পাপ করলেও আমাদের ঈমান নষ্ট হবেনা। আর এভাবেই আমরা জানি না যে আমাদের অজান্তেই আজ আমরা মুনাফিক হয়ে গেছি এবং যাচ্ছি।

সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী (পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম)

MuslimPoint Organization

About MuslimPoint Organization

MuslimPoint একটি অনলাইন ভিত্তিক ইসলামী প্রশ্নোত্তর, গ্রন্থাগার, ব্লগিং, কুরআন, হাদিস, কুইজ এবং বিষয় ভিত্তিক রেফারেন্স প্ল্যাটফর্ম।

View all posts by MuslimPoint Organization →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *