কবর ও মানুষের পরীক্ষা ।

কবর-muslimpoint

মৃত্যুর মাধ্যমে মানুষের ইহকালীন জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটবে। পরকালীন যাত্রা পথের প্রথম মনযিল হচ্ছে ‘কবর’। কবরে মানুষকে পৃথিবীর কর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাসী মানুষ সঠিক ও সুন্দর উত্তর দিবে। ফলে তার কবর শান্তিময় হবে। পক্ষান্তরে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি অবিশ্বাসী ব্যক্তি উত্তর দিতে পারবে না। ফলে তার কবর ভয়াবহ শাস্তির স্থলে পরিণত হবে। এভাবে উভয় শ্রেণীর মানুষই ক্বিয়ামত দিবস পর্যন্ত কবরে অবস্থান করবে। এ প্রসঙ্গেই নিম্নোক্ত হাদীছ-

আসমা বিনতে আবূবকর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি নবী করীম (ছাঃ)-এর স্ত্রী আয়েশা (রাঃ)-এর নিকটে গেলাম। তখন সূর্যগ্রহণ হয়েছিল এবং লোকেরা সেজন্য ছালাতে দাঁড়িয়েছিল। আর তিনিও ছালাতে দাঁড়িয়েছিলেন। আমি তাকে প্রশ্ন করলাম, লোকেরা ছালাত পড়ছে কেন? তখন তিনি সুবহানাল্লাহ বলে হাত দিয়ে আসমানের দিকে ইঙ্গিত করলেন। আমি বললাম, এটা কি কোন আযাবের আলামত? তখন তিনি হ্যাঁ সূচক ইঙ্গিত করলেন। বর্ণনাকারিণী বলেন, আমিও তখন (ছালাতের জন্য) দাঁড়ালাম। পরিশেষে (গ্রহণজনিত) অন্ধকার কেটে গেল। আর আমি (দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ানোর ফলে যে ক্লান্তি এসেছিল তা দূর করার উদ্দেশ্যে) আমার মাথায় পানি ঢালতে লাগলাম। আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) যখন ছালাত শেষ করলেন তখন প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা করলেন। অতঃপর বললেন, আমি এই স্থানে থেকে যা দেখলাম, তা হচ্ছে জান্নাত ও জাহান্নাম। আর আমার নিকট অহী পাঠানো হয়েছে যে, নিশ্চয়ই তোমাদেরকে কবরের মধ্যে দাজ্জালের ফেতনার ন্যায় অথবা তার কাছাকাছি ফেতনায় লিপ্ত করা হবে। বর্ণনাকারী বলেন, ‘ন্যায় (মিছল) অথবা কাছাকাছি (কারীবা) এ শব্দ দু’টির কোনটি আসমা (রাঃ) বলেছিলেন, তা আমার মনে নেই। তোমাদের প্রত্যেকের সম্মুখেই আমাকে উপস্থিত করে তাকে প্রশ্ন করা হবে যে, এ লোকটি সম্পর্কে কি জান? অতঃপর যে ব্যক্তি ঈমানদার ও নিশ্চিত বিশ্বাসী হবে- বর্ণনাকারী বলেন, আসমা ঈমানদার (মুমিন) শব্দ বলেছিলেন না ইয়াক্বীনকারী (মুক্বীন) বলেছিলেন তা আমার স্মরণ নেই। তখন সে বলবে, ইনি মুহাম্মাদ, আল্লাহর রাসূল। তিনি সুস্পষ্ট দলীল ও হেদায়াত নিয়ে আমাদের কাছে এসেছিলেন এবং আমরা তাতে সাড়া দিয়ে ঈমান এনেছি এবং তা অনুসরণ করেছি। এরপর তাকে বলা হবে, তুমি নেক্কার বান্দারূপে ঘুমাও, আমরা নিশ্চিতরূপে জানলাম যে, তুমি ইয়াক্বীনকারী ছিলে। আর যে ব্যক্তি মুনাফিক বা সন্দেহকারী সে বলবে, (এই ব্যক্তি কে?) আমি তা জানি না। (দুনিয়ায়) আমি মানুষকে কিছু কথা বলতে শুনেছি এবং আমিও তাই বলেছি’ (বুখারী হা/৯৮৯ ‘সূর্য গ্রহণের বর্ণনা’ অধ্যায়)

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   "হাসবি রাব্বি জাল্লাল্লাহ, মাফি কালবি গাইরুল্লাহ", সমাজে প্রচলিত বা জনপ্রিয় এই ইসলামিক গান/সঙ্গীত বা গজল বা নাশিদ এর মধ্যে ভুল-ভ্রান্তি বা মিথ্যাচার

অপর এক বর্ণনায়ও হাদীছটি বর্ণিত হয়েছে। আসমা বিনতে আবুবকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি (একবার) আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। লোকেরা তখন ছালাত আদায় করছিলেন। আমি প্রশ্ন করলাম, ব্যাপার কি? তখন তিনি মাথার সাহায্যে আসমানের দিকে ইশারা করলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম (আযাব, ক্বিয়ামত বা অন্য কিছুর) আলামতের কথা বলছেন কি? তিনি মাথা দিয়ে ইশারা  করলেন অর্থাৎ হ্যাঁ বললেন। (তখন আমিও তাদের দেখাদেখি ছালাতে যোগ দিলাম)। অতঃপর আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ছালাত এত দীর্ঘায়িত করলেন যে, আমি প্রায় বেহুঁশ হয়ে যাচ্ছিলাম। আমার পাশেই একটি চামড়ার মশকে পানি রাখা ছিল। আমি সেটি খুলে আমার মাথায় পানি দিতে শুরু করলাম। তারপর যখন সূর্য উজ্জ্বল হয়ে উঠল তখন আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ছালাত শেষ করে ফিরে এলেন এবং লোকদের উদ্দেশ্যে খুৎবা দিলেন। প্রথমে তিনি আল্লাহর যথোপযুক্ত প্রশংসা করলেন। তারপর বললেন, আম্মা বা‘দ…। আসমা বলেন, তখন আনছারদের কিছু সংখ্যক মহিলা যেন কিসের একটা গুঞ্জন তুললেন। তাই আমি তাদেরকে চুপ করাবার উদ্দেশ্যে তাদের প্রতি ঝুঁকে পড়লাম। তারপর আয়েশাকে জিজ্ঞেস করলাম, আয়েশা বললেন, তিনি বলেছেন, এমন কোন জিনিস নেই যা আমাকে দেখানো হয়নি, আমি আজ এ স্থানে থেকেই সেসব কিছুই দেখে নিলাম। এমনকি জান্নাত ও জাহান্নাম দেখলাম। আমার নিকট প্রত্যাদেশ পাঠানো হয়েছে যে, কবরে তোমাদেরকে মসীহ দাজ্জালের ফেতনার (পরীক্ষার) ন্যায় বা অনুরূপ ফেতনায় ফেলা হবে (অর্থাৎ তোমাদেরকে পরীক্ষার সম্মুখীন করা হবে)। তোমাদের প্রত্যেককে উঠানো হবে এবং প্রশ্ন করা হবে। এ লোকটি সম্পর্কে (অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সম্পর্কে) তুমি কি জান? তখন মুমিন অথবা মুক্বীন নবী করীম (ছাঃ) এ দু’টির মধ্যে কোন শব্দটি বলেছিলেন সে ব্যাপারে বর্ণনাকারী হিশামের মনে সন্দেহ রয়েছে। সে (কবরবাসী) বলবে, তিনি হচ্ছেন আল্লাহর রাসূল (ছাঃ), তিনি মুহাম্মাদ, তিনি আমাদের নিকটে সুস্পষ্ট দলীল ও হেদায়াত নিয়ে এসেছিলেন। অতঃপর আমরা ঈমান এনেছি, তাঁর আহবানে সাড়া দিয়েছি, তাঁর আনুগত্য করেছি এবং তাঁকে সত্য বলে গ্রহণ করেছি। তখন তাকে বলা হবে, নেক্কার হিসাবে ঘুমিয়ে থাক। তুমি যে তাঁর প্রতি ঈমান এনেছ তা আমরা অবশ্যই জানতাম। আর যে মুনাফিক বা মুরতাব (সন্দেহ পোষণকারী কাফের) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এ দু’টির মধ্যে কোন শব্দটি বলেছিলেন সে সম্পর্কে হিশামের সন্দেহ রয়েছে- তাকেও প্রশ্ন করা হবে যে, এই ব্যক্তি সম্পর্কে তুমি কি জান? জবাবে সে বলবে, আমি কিছুই জানি না। অবশ্য মানুষকে তার সম্পর্কে কিছু একটা বলতে শুনেছি আমিও তাই বলতাম’ (বুখারী হা/৯২২ ‘জুম‘আ’ অধ্যায়)

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   চরমোনাই পীর এর ভুল ভ্রান্তি বা মিথ্যাচার , ব্যাখ্যা ও দলিল বা রেফারেন্স সহ

 

collected: here

MuslimPoint Organization

About MuslimPoint Organization

MuslimPoint একটি অনলাইন ভিত্তিক ইসলামী প্রশ্নোত্তর, গ্রন্থাগার, ব্লগিং, কুরআন, হাদিস, কুইজ এবং বিষয় ভিত্তিক রেফারেন্স প্ল্যাটফর্ম।

View all posts by MuslimPoint Organization →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *