ব্যাখ্যা ও উদাহরণসহ কেয়ামতের আলামত ও ভবিষ্যতবাণী পর্ব-৩

কেয়ামতের আলামত ও ভবিষ্যতবাণী
ব্যাখ্যা ও উদাহরণসহ কেয়ামতের আলামত ও ভবিষ্যতবাণী

[প্রথমেই বলে রাখি কিয়ামতের জ্ঞান শুধুমাত্র আল্লাহ’র কাছে আছে ।
‘(হে নবী মুহাম্মাদ!) মানুষ তোমাকে কিয়ামত (কবে হবে, সে) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। তুমি বলো, এর (একেবারে সঠিক) জ্ঞান শুধুমাত্র আল্লাহ’র কাছে আছে। আর (হে নবী !) তুমি কি জানো, কিয়ামত (ঘটার) সম্ভাবনা নিকটে চলে এসেছে !’ [সূরা আহযাব ৬৩]
এখানে শুধুমাত্র হাদিস ও কিছু অনুমানের ভিত্তিতে আমরা কিয়ামতের আলামতগুলো ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি । সুতরাং এখানের সকল বক্তব্য কে আমরা কখনো চূড়ান্ত বলে মনে করি না । এগুলো শুধু উল্লেখ করছি, যাতে এই রেওয়ায়েতসমূহে বর্ণিত কোনো ঘটনা ঘটতে দেখলে তা চিনে নিতে পারেন এবং রেওয়াতের হক্ব আদায় করতে পারেন।
উল্লেখ্য, যেহুতু হয়তো এখানে বর্ণিত অল্প কিছু হাদিসের সনদগত ও অন্যান্য দূর্বলতা থাকতে পারে তাই এখানে উল্লেখিত হাদিসসমূহ কোনো বিজ্ঞ মুহাদ্দেস আলেমের পরামর্শ ব্যাতীত কারো কাছে বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছি।]

# হযরত আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ يَأْكُلُونَ فِيهِ الرِّبَا ” ، قَالَ : قِيلَ له: الناس كُلُّهُمْ ؟ قَالَ : ” مَنْ لَمْ يَأْكُلْهُ مِنْهُمْ نَالَهُ مِنْ غُبَارِهِ . اخرجه احمد فى المسند: ٩/٤٦٨ رقم ١٠٣٦٠, قال حمزة احمد الزين: اسناده صحيح; و البيهقي فى سنن الكبرى :٥/٢٧٥ . كذا رواه أبو داود ، والنسائي ، وابن ماجه من غير وجه ، عن سعيد بن أبي خيرة عن الحسن ، به – ‘মানুষের উপর একটি জামানা আসবে, যে জামানায় তারা সূদ খাবে। আবু হুরায়রাহ রা. বলেন: তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল: লোকজনের সবাই (খাবে)? রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: তাদের মধ্যে যে খাবে না, তাকে ওর ধুলাবালির অংশ (হলেও) স্পর্শ করবে’। [মুসনাদে আহমদ- ৯/৪৬৮, হাদিস ১০৩৬০; সুনানুল কুবরা, বাইহাকী- ৫/২৭৫]

ফায়দা: এই ভবিষ্যতবাণী আমাদের এ জামানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। পৃথিবীর এমন কি কোনো দেশ আছে, যেখানে সূদী ব্যাংক, বীমা বা সাহায্য সংস্থা ধুমিয়ে সূদের কারবার করছে না?! মুসলীম-অমুসলীম কেউ কি এসব থেকে বিরত আছে?! যারাও-বা ইমানের কারণে সূদ থেকে বিরত থাকতে সচেষ্ট, তারাও কি এমন কোনো খাত পাচ্ছেন, যেখানে কোনো না কোনো ভাবে সামান্য হলেও সূদের ধুলাবালি লাগানো ব্যাতীরেকে পূর্ণ হালাল ভাবে লেনদেন করতে পারছেন?! যারা সূদের মাসআলাহ গভীরভাবে জানেন, তারা প্রতি পদক্ষেপে হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করেন যে, আজ সূদের ধুলো থেকে বাঁচাটাও কত কঠিন হয়ে গেছে। কপাল পোঁড়ার দল মুর্খতার কারণে আজকাল হালাল জিনিসপত্রের মধ্যেও সূদ ঢুকিয়ে দিয়েছে। যেমন: ফ্রিজ, ইলেকট্রিক চুলা, মটরসাইকেল ইত্যাদি হালাল জিনিস, কিন্তু এরা এর লেনদেনের মধ্যেও সূদী কিস্তি ও ডিসকাউন্ট সিস্টেম সংযুক্ত করে দিয়েছে, ডেবিটকার্ড ক্রেডিটকার্ড বিকাশ কোনোটাই বাদ যায়নি। গ্রাম গঞ্জেও মানুষ আজ আত্বীয় বা বন্ধুকে পর্যন্ত মাত্র ১০০ টাকা ধার দিয়ে বিনিময়ে ২০০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে; মানে ১০০ টাকার উপর ১০০ টাকা সূদ; মানে ১০০% সূদ। এরা-তো ডা. ইউনুসের চাইতেও বড় সূদখোর । الله اعلم بالصواب

# হযরত আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ، لاَ يُبَالِي المَرْءُ مَا أَخَذَ مِنْهُ، أَمِنَ الحَلاَلِ أَمْ مِنَ الحَرَامِ . رواه البخاري في الصحيح, كتاب البيوع, باب من لم يبال من حيث كسب المال: حديث رقم ٢٠٥٩; و النسائي في سننه: رقم ٤٤٥٤; و أحمد في المسند: ٢/٤٣٥; و و الدارمى في سننه: رقم ٢٥٣٦ – ‘মানুষের উপর এমন একটি জামানা আসবে, যখন কেউ এতে ভ্রুক্ষেপ করবে না যে, সে যা গ্রহন করেছে -তা হালালের অন্তর্ভূক্ত, না হারামের’। [সহিহ বুখারী, হাদিস ২০৫৯; সুনানে নাসায়ী, হাদিস ৪৪৫৪; মুসনাদে আহমদ- ২/৪৩৫; সুনানে দারেমী, হাদিস ২৫৩৬]

ফায়দা: আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন- يَا أَيُّهَا النَّاسُ كُلُوا مِمَّا فِي الْأَرْضِ حَلَالًا طَيِّبًا وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِين – হে ইমানদারগণ! পৃথিবীর মধ্যে যা আছে তা থেকে তোমরা (আমার কুরআন ও রাসুলে’র সুন্নাহ’য় প্রদর্শিত) হালাল ও পবিত্র জিনিস ভক্ষন করো। আর (কুরআন ও সুন্নাহ’কে পিঠের পিছনে নিক্ষেপ করে) তোমরা শয়তানের পদক্ষেপ সমূহের অনুসরণ করো না। নিশ্চই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু’। [সুরা বাকারাহ ১৬৮]

ইসলামের প্রতিটি যুগেই বহু মুসলমান (যেমন শাসক, প্রশাসক, ধ্বনী ব্যবসায়ী প্রমুখ লোকজন) পার্থিব নানাবিধ স্বার্থে আল্লাহ তাআলার উপরোক্ত আদেশের সাথে খেয়ানত করে হারাম খেয়েছে -এতে কোনোই সন্দেহ নেই। কিন্তু কোনো যুগেই তাদের হারামখোরীতা ব্যাপক আকার ধারণ করেনি -যদিও-বা কোনো কোনো যুগে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বিদ্যমান ছিল। এজন্য কেউ যদি প্রত্যেক যুগের হারামখোরদের সাথে উপরোক্ত হাদিসকে ফিট্ করার চেষ্টা করে তাহলে তা ভুল হবে। কারণ, ‘কেয়ামতের আলামত’ বলতে এমন জিনিস/অবস্থা উদ্দেশ্য হয়, যা অন্যসব জিনিস/ বিষয় থেকে এতটা ভিন্ন/ভিন্ন-মাত্রার হয় যে, তা উল্লেখযোগ্য ভাবে মানুষের চোখে পড়ে। উপরোক্ত হাদিসে একটি বিশেষ জামানার দিকে ইশারা করা হয়েছে, যখন উম্মাহ’র হারামখোরীতার উক্ত অবস্থা তার আগেকার ইসলামী ইতিহাসের যে কোনো যুগকে লজ্জায় ফেলে দিবে। তবেই তা ‘কেয়ামতের একটি আলামত হওয়ার’ মর্যাদা পেতে পারে। এই হাদিসে মূলতঃ এমন বিশেষ একটি জামানার কথা বলা হচ্ছে, যখন উম্মাহ’র মধ্যে বেশিরভাগ মানুষের অবস্থা এমন হবে যে, তারা আয়-রোজগারের প্রশ্নে আল্লাহ’র শরয়ীতের ধার ধারার মতো পর্যায়ে থাকবে না। জন্তু জানোয়াররা যেভাবে দিন-রাত শুধু পেট পালার ধান্দায় এখানে ওখানে ঘুরে বেড়ায়, উম্মাহ’র ওই লোকগুলির অবস্থাও জেন্তু জানোয়ারের মতো হবে।

আজ উম্মাহ’র মধ্যে শাসক শ্রেণি থেকে নিয়ে দরিদ্র দিনমজুর পর্যন্ত এবং বেুড়ো থেকে নিয়ে ছোট বয়সের টোকাই পর্যন্ত এই ব্যাধিতে আক্রান্ত। আমার মতে, উপরের হাদিসে আমাদের এই শেষ জামানার উম্মাহ’র পচন ধরা লোকগুলির দিকে ইশারা করা হয়েছে, যাদের হালাল-হারাম বিচার করার সময়টুকু পর্যন্ত নেই। الله اعلم بالصواب

# আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ يَظْهَرُ الرِّبَا ، وَالزِّنَا ، وَالْخَمْرُ. رواه الطبراني في الأوسط : ٧/٣٤٩ رقم ٧٦٩٥ , وقال المنذري الترغيب والترهيب : ٣/٧ : رواته رواة الصحيح ; قال الهيثمى في مجمع الزوائد : ٤/١٢١ : رواه الطبراني في في الأوسط و رجاله رجال الصحيح – ‘কেয়ামতের পূর্বে -রিবা (সূদ), যিনা (ব্যাভিচার) এবং খামরুন (মদ ও মাদক)- (ব্যাপক ভাবে) প্রকাশ পাবে’। [আল-মু’জামুল কাবীর, ত্বাবরাণী- ৭/৩৪৯ হাদিস ৭৬৯৫; তারগীব, মুনযিরী- ৩/৭; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৪/১২১]

# উবাদাহ বিন সামিত রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- لَيَسْتَحِلَّنَّ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي الْخَمْرَ بِاسْمٍ يُسَمُّونَهَا إِيَّاهُ . رواه أحمد في المسند : ٥/٣١٨ ; قال قال ابن حجر في فتح الباري : ١٠/٥٥ : سنده جيد ; و صححه الألباني في سلسلة الأحاديث الصحيحة : ١/١٨٢ رقم ٩٠ و في غاية المرام : ١/٢٤; و اخرجه ايضا ابن ماجه : رقم ٣٣٨٥ – ‘অবশ্যই (শেষ জামানায়) আমার উম্মতের মধ্যে একটি গোষ্ঠি খামরুন (মদ ও মাদক)কে হালাল গণ্য করে নিবে -এমন নাম ব্যবহার করে, যে নামে শুধু তাকেই নামকরণ করা হবে’। [মুসনাদে আহমদ– ৫/৩১৮; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৩৩৮৫; আল-মুসান্নাফ, ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ- ৫/৬৮; মুসনাদে বাযযার, হাদিস ২৭২০; মুসনাদে আবু দাউদ তায়ালিসী, হাদিস ৫৮৭]

LUSSORY-GOLD-ALCOHOL-HALAL-WINE-SPARKLING মদ

শেষ জামানা ভবিষ্যৎ বানীফায়দা: যেমন, উবাদাহ বিন সামিত রা. থেকেই বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- لَيَسْتَحِلَّنَّ آخِرُ أُمَّتِي الْخَمْرَ تُسَمِّيهَا بِاسْمِهَا . رواه محمد بن أبي شيبة في المصنف , كتاب الأشربة , باب من حرم المسكر وقال : هو حرام ، ونهى عنه : ٥/٦٨ رقم ٢٣٧٥٩ و رجاله كلهم من ثقة كما في زوائد ابن أبي شيبه على الكتب الستة لدكتور عبد الستار : ص ٧٣٣ رقم ٦٢٩ – ‘অবশ্যই আমার আখেরী উম্মত (-এর মধ্যে একটি গোষ্ঠি) খামরুন (মদ ও মাদক)কে হালাল গণ্য করে নিবে -তার (এমন) নাম ব্যবহার করে, যে নামে তার নামকরণ করা হবে’। [আল-মুসান্নাফ, ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ- ৫/৬৮ হাদিস ২৩৭৫এ থেকে বোঝা য়ায়, এই অ-কাম’টি করবে এই উম্মতের শেষ জামানার লোকদের মধ্যে একটি গোষ্ঠি। আজ আমরা এমন এক যুগে বাস করছি, যখন কত নামের নামি-দামী সব মদ ও মাদক দ্রব্য মুসলমান বলে দাবীদার নারী-পুরুষদের খোরাক হয়ে আছে ! মুসলীশ প্রধান দেশগুলিতে মদ পান ও ব্যবসার লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে ! আজ-তো ‘হালাল মদ’-এরও লেভেল দেখা যাচ্ছে !!!! الله اعلم بالصواب

# আনাস রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- إِِذَا اسْتَحَلَّتْ أُمَّتِي خَمْسًا فَعَلَيْهِمُ الدَّمَارُ، إِِذَا ظَهَرَ التَّلَاعُنُ، وَشَرِبُوا الْخُمُورَ، وَلَبِسُوا الْحَرِيرَ، وَاتَّخِذُوا الْقِيَانَ، وَاكْتَفَى الرِّجَالُ بِالرِّجَالِ، وَالنِّسَاءُ بِالنِّسَاءِ . رواه البيهقي في شعب الإيمان : ٧/٣٢٩ رقم ٥٠٨٦ ; و الطبراني في مسند الشاميين : رقم ٥١٩ ، وأبو نعيم في حلية الأولياء : ٦/١٢٣ ; قال المنذري في الترغيب والترهيب : ٣/١٣٨ : سناده صحيح أو حسن أو ما قاربهما ; اورده الالباني في صحيح الترغيب الترهيب : ٢/٦٠٨ رقم ٢٣٨٦ و قال : حسن لغيره – ‘আমার উম্মত যখন পাঁচটি জিনিসকে (ব্যাপক ভাবে) হালাল করে নিবে, তখন তাদের উপরে ধ্বংস-বরবাদি আপতিত হবে। যখন (উম্মতের মধ্যে) পারষ্পরিক লা’নত দান প্রকাশ পাবে, (যখন) তারা খামরুন (মদ ও মাদক) সেবন করবে, (যখন পুরুষরা) রেশমি পোশাক পরিধান করবে, (বিভিন্ন আমোদ, প্রমোদ ও বিনোদন আসোরে) গাইকা (নারী)দেরকে অবলম্বন করবে, এবং পুরুষ পুরুষকে ও নারী নারীকে (যৌনচর্চার জন্য) যথেষ্ট মনে করবে’। [শুআবুল ইমান, বাইহাকী- ৭/৩২৯ হাদিস ৫০৮৬; মুসনাদে শামেয়ীন, ত্বাবরাণী, হাদিস ৫১৯; হিলইয়াতুল আউলিয়াহ, আবু নুআইম- ৬/১২৩; তারগীব, মুনযিরী- ৩/১৩৮]

ফায়দা: এখানে اسْتَحَلَّتْ أُمَّتِي -‘আমার উম্মত হালাল গণ্য করে নিবে’-এর মধ্যে اسْتَحَلَّتْ ক্রিয়াটি মূলে اِستَحَلَّ থেকে উৎপন্ন, যার বহু অর্থের মধ্যে একটি মশহুর অর্থ হল: কোনো হারাম/অবৈধ কিছুকে হালাল/বৈধ মনে করা বা গণ্য করা। এর আরেকটি অর্থ হল- কোনো কিছু কার্যকর/চালু করা বা চালুর পথ খুলে দেয়া। এখানে দুটি অর্থই হতে পারে এবং আমাদের এই শেষ জামানার উম্মাহ’র বাস্তব অবস্থা থেকে অনুমিত হয় যে, ইতিমধ্যে তারা এই দুই অর্থকেই পূর্ণতা দিয়ে দিয়েছে।

প্রথমে বলা হয়েছে إِِذَا ظَهَرَ التَّلَاعُنُ – ‘যখন (উম্মতের মধ্যে) পারষ্পরিক লা’নত দান প্রকাশ পাবে’ – অর্থাৎ মুসলীম উম্মহ একসময় বিভিন্ন ফেরকা ও দলে দলে বিভক্ত হয়ে যাবে এবং দ্বীনের মূল বিষয়ে একতাবদ্ধ ভাই ভাই হয়ে থাকার পরিবর্তে এক ফেরকা আরেক ফেরকাকে এবং এক দল আরেক দলকে লা’নত করার একটা কালচারই সমাজে চালু করে রাখবে, আবার কেউ কেউ হয়তো একে হালালই মনে করবে। আমাদের এই শেষ জামানার উম্মাহ এই দুই অর্থকেই পূর্ণতা দিয়ে দিয়েছে। যৎসামান্য আত্বসম্ভ্রমবোধ সম্পন্ন মুমিন দ্বীন হিফাজতের খাতের এসব থেকে নিজেদের মুখ ও হাতকে দূরে রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করে চলছেন।

সমকামিতা

এই হাদিসের আরেকটি উল্লেখযোগ্য কথা হল- اكْتَفَى الرِّجَالُ بِالرِّجَالِ، وَالنِّسَاءُ بِالنِّسَاءِ – ‘পুরুষ পুরুষকে ও নারী নারীকে (যৌনচর্চার জন্য) যথেষ্ট মনে করবে’। এই পাপটি লুত আ.-এর কওম সমাজে ব্যাপক ভাবে চালু করেছিল। আজ মুসলীম উম্মাহ’র কোনো কোনো গোষ্ঠির মাঝে এই রোগ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এখন-তো এক পুরুষ আরেক পুরুষের সাথে এবং এক নারী আরেক নারীর সাথে যৌনাচার ও সমকামীতার মতো মারাত্মক হারাম কাজটিকে ‘অধিকার’ হিসেবে চিহ্নিত করার পায়তারা চলছে। বিভিন্ন অমুসলীম-প্রধান দেশে (অষ্ট্রেলিয়া, অষ্ট্রিয়া, জার্মানি, মাল্টা, বলিভিয়া, তাইওয়ান, ভারত ইত্যাাদি দেশে) সরকারী ভাবে একাজের লাইসেন্স/অনুমতিও দেয়া হচ্ছে, কোনো কোনো দেশে সমকামীদের মাঝে ঘটা করে বিয়ে-শাদির ব্যাবস্থা করা হচ্ছে। খোদ জাহেদ চৌধুরী নামের বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত এক যুবক সিন রোগান নামের আরেক যুবককে যুক্তরাজ্যের পশ্চিম মিডল্যান্ডের ওয়ালসাল শহরে বিয়ে করে, যে বিয়েকে -এক মুসলিম (!) সঙ্গীর অংশগ্রহণে যুক্তরাজ্যের প্রথম সমাকামী বিবাহ বলে দাবি করা হচ্ছে। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাযিউন)

যাবের বিন আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- حَدَّثَنَا حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ جَرِيرٍ الصُّورِيُّ ، ثنا عُثْمَانُ بْنُ سَعِيدٍ الصَّيْدَاوِيُّ ، ثنا سُلَيْمَانُ بْنُ صَالِحٍ ، ثنا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ ثَابِتِ بْنِ ثَوْبَانَ ، عَنِ الْحَجَّاجِ بْنِ دِينَارٍ ، عَنْ مُحَمَّد بْنِ الْمُنْكَدِرِ ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ ، قَالَ : ….., سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، يَقُولُ : ….., أَلا وَإِنَّ أَشَدَّ مَا أَتَخَوَّفُ عَلَى أُمَّتِي مِنْ بَعْدِي عَمَلَ قَوْمِ لُوطٍ , فَلْتَرْتَقِبْ أُمَّتِي الْعَذَابَ , إِذَا تَكَافَأَ النِّسَاءُ بِالنِّسَاءِ وَالرِّجَالُ بِالرِّجَالِ . اخرجه طبراني فى مسند الشاميين, رقم ١٥١, فوائد تمام الرازي ٨٥٩ – ‘শোন, আমার (ইন্তেকালের) পর সব থেকে যে মারাত্মক জিনিসটি আমার উম্মাতের ব্যাপারে আমাকে অধিকতর শংকিত করে তোলে , সেটা হল লূত জাতির (সমকামীতার মতো মারাত্মক গোনাহর) কাজটি। আমার উম্মতের উপর (লূত জাতির মতো) আযাবের আশংকা রয়েছে, যখন (তাদের এক) নারী (আরেক) নারীকে এবং (এক) পুরুষ (আরেক) পুরুষকে (যৌনচর্চার জন্য) যথেষ্ট বলে অবলম্বন করে নিবে। [মুসনাদে শামেয়ীন, ত্বাবরাণী, হাদিস ১৫১]

উবাই বিন কা’ব রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন: وقال ابن أبي حاتم : حدثنا الحسن بن عرفة ، حدثني الوليد بن بكير أبو خباب ، عن عبد الله بن محمد العدوي ، عن أبي سنان البصري ، عن أبي قلابة ، عن زر بن حبيش ، عن أبي بن كعب قال : قِيلَ لَنَا أَشْيَاءُ تَكُونُ فِي آخِرِ هَذِهِ الْأُمَّةِ عِنْدَ اقْتِرَابِ السَّاعَةِ ، مِنْهَا نِكَاحُ الرَّجُلِ امْرَأَتَهُ ، أَوْ أَمَتَهُ فِي دُبُرِهَا ، وَذَلِكَ مِمَّا حَرَّمَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ ، وَيَمْقُتُ اللَّهُ عَلَيْهِ وَرَسُولُهُ ، وَمِنْهَا : نِكَاحُ الرَّجُلِ الرَّجُلَ ، وَذَلِكَ مِمَّا حَرَّمَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ ، وَيَمْقُتُ اللَّهُ عَلَيْهِ وَرَسُولُهُ . وَمِنْهَا نِكَاحُ الْمَرْأَةِ الْمَرْأَةَ ، وَذَلِكَ مِمَّا حَرَّمَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ ، وَيَمْقُتُ اللَّهُ عَلَيْهِ وَرَسُولُهُ . وَلَيْسَ لِهَؤُلَاءِ صَلَاةٌ مَا أَقَامُوا عَلَى هَذَا ، حَتَّى يَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَصُوحًا . قَالَ زِرٌّ : فَقُلْتُ لِأُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ : فَمَا التَّوْبَةُ النَّصُوحُ ؟ فَقَالَ : سَأَلْتُ رَسُولَ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – فَقَالَ : ” هُوَ النَّدَمُ عَلَى الذَّنْبِ حِينَ يَفْرُطُ مِنْكَ ، فَتَسْتَغْفِرُ اللَّهَ بِنَدَامَتِكَ مِنْهُ عِنْدَ الْحَاضِرِ ، ثُمَّ لَا تَعُودُ إِلَيْهِ أَبَدًا . اورده ابن كثير في تفسير القران العظيم , سورة تحريم :٤/٤١٨ ; و رواه ايضا الدارقطني في الأفراد، والبيهقي في شعب الإيمان : ٥٤٥٧ ، وابن النجار كما في إتحاف الجماعة بما جاء في الفتن والملاحم و أشراط الساعة : ٢/١٥٤ و في الدر المنثور: ٦/٢٤٥ ; جزء لالحسن بن عرفة , تحقيق: عبد الرحمان الفريوائي : رقم ٤٢ – ‘আমাদের কাছে এমন সব বিষয় বলা হয়েছে, যা শেষ জামানায় যখন কেয়ামত নিকটবর্তী হয়ে আসবে তখন ঘটবে। ওগুলোর মধ্যে রয়েছে- পুরুষ কর্তৃক তার স্ত্রী বা তার দাসীর নিতম্বের মধ্যে সঙ্গম করা -আর ওটা (এমন জঘন্য গোনাহ’র কাজ) যা আল্লাহ ও তাঁর রাসুল হারাম করেছেন এবং (যার কারণে) আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তার উপরে মারাত্মক ঘৃনা প্রকাশ করেন। ওগুলোর মধ্যে (আরো) রয়েছে- (এক নারী) পুরুষ (আরেক) পুরুষকে সঙ্গম করা -আর ওটা (এমন জঘন্য গোনাহ’র কাজ) যা আল্লাহ ও তাঁর রাসুল হারাম করেছেন এবং (যার কারণে) আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তার উপরে মারাত্মক ঘৃনা প্রকাশ করেন। । ওগুলোর মধ্যে (আরো) রয়েছে- (এক নারী) নারী (আরেক) নারীকে সঙ্গম করা -আর ওটা (এমন জঘন্য গোনাহ’র কাজ) যা আল্লাহ ও তাঁর রাসুল হারাম করেছেন এবং (যার কারণে) আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তার উপরে মারাত্মক ঘৃনা প্রকাশ করেন। তারা এই (পাপ অভ্যাসের) উপরে থাকাবস্থায় যেসব নামায আদায় করবে তা (কবুল) হবে না -যাবৎ না তারা আল্লাহ’র সমিপে ‘তাওবাতুন নাসুহা’র মতো তওবা করে। যির বলেন: আমরা উবাই বিন কাব রা.কে জিজ্ঞেস করলাম: ‘তাওবাতুন নাসুহা’ কি? তিনি বলেন: আমিও রাসুলুল্লাহ সা. কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বললেন: এটা হল (কোনো) পাপের উপরে (অনুতপ্ত হয়ে) এতটা কাঁদতে থাকা যে, তা তোমার জন্য যথেষ্ট হয়ে যায়। সুতরাং, আল্লাহ’র কাছে ক্ষমা চাও; আজই তাঁর কাছে অনুতপ্ত হও। (তবে) এরপরে আর কখনো (ওই পাপে পূণরায়) ফিরে যাওয়া চলবে না’। [ইবনু আবি হাতিম: তাফসিরে ইবনে কাসির– ৪/৪১৮, সুরা তাহরিম; জুয, আল-হাসান বিন আরাফাহ- ৪২; শুআবুল ইমান, বাইহাকী- ৫৪৫৭; আদ-দুররুল মানছুর, সুয়ূতী- ৬/২৪৫; কানজুল উম্মাল- ৩৯৬৪০]

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   এক রাকাত বিতর সালাত বা নামাজের দলিল , ব্যাখ্যা ও দলিল বা রেফারেন্স সহ

আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- حدثنا ابن وهب عن عمرو بن الحارث عن سعيد بن أبي هلال عن عياش بن عبد الله بن معبد عنأبي معبد مولى ابن عباس عن أبي هريرة قال: “ لا تقوم الساعة حتى يتسافد الناس في الطرق كما يتسافد الدواب، يستغني الرجال بالرجال، والنساء بالنساء، أتدرون ماالتساحق؟ قالوا: لا، قال: تركب المرأة المرأة ثم تسحقها. اخرجه نعيم بن حماد في الفتن ١٧٩٤ , وهذا حديث صحيح رجاله ثقات، وعياش هو عباس بن عبد الله بن معبد ابن عباس ثقة، ونعيم بن حماد ثقة حجة، وهِم من لينه، وقد أفردته بترجمة مستقلة بينت فيها ثقته وإتقانه- ‘কেয়ামত কায়েম হবে না, যাবৎ না মানুষ রাস্তাপথে সঙ্গম করে, যেভাবে জন্তু-জানোয়ার সঙ্গম করে থাকে, (যাবৎ না) পুরুষ পুরুষকে এবং নারী নারীকে (যৌনচর্চার জন্য) যথেষ্ট মনে করে। তোমরা কি জানো (নারীদের) সমকামীতা কি? সাহাবাগণ বললেন: না। রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: এক নারী আরেক নারীর উপর আরোহন করে, তারপর সমকামীতা করে’। [আল-ফিতান, নুআইম বিন হাম্মাদ, হাদিস ১৭৯৪]

বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ ছিলেন মানুষের চরিত্রের সর্বোত্তম চিকিৎসক। তিনি এই সমকামীতার মারাত্মক কবীরাহ গোনাহ থেকে উম্মতকে হেফাজতে রাখার জন্য কি চমৎকারই-না প্রেসকিপশন দিয়েছেন। তিনি ﷺ বলেছেন- لا ينظر الرجل إلى عورة الرجل ولا المرأة إلى عورة المرأة ولا يفضي الرجل إلى الرجل في ثوب واحد ولا تفضي المرأة إلى المرأة في الثوب الواحد – কোনো পুরুষ অপর পুরুষের লজ্জাস্থানের দিকে তাকাবে না এবং কোনো নারী অপর কোনো নারীর লজ্জাস্থানের দিকে তাকাবে না। কোনো পুরুষ অপর পুরুষের সাথে একই চাদর/কাপড়ের ভিতরে একত্রে সময় কাটাবে না এবং কোনো নারী অপর কোনো নারীর সাথে একই চাদর/কাপড়ের ভিতরে একত্রে সময় কাটাবে না। [সহিহ মুসলীম ৩৩৮; জামে তিরমিযী ২৭৯৩] الله اعلم بالصواب

# হযরত আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- لا تقوم الساعة حتى يقترب الزمان وتكون السنة كالشهر والشهر كالجمعة والجمعة كاليوم واليوم كاحتراق الخوصة . رواه أبو يعلى ورجاله رجال الصحيح , كذا فى مجمع الزاوئد ومنبع الفوائدلالهيثمي: ٧/٦٣٩ رقم ١٢٤٧٣ – ‘কেয়ামত সংঘটিত হবে না -যাবৎ না জামানা কাছাকাছি হয়ে যায়। বছর হবে মাসের মতো, মাস হবে সপ্তাহের মতো, সপ্তাহ হবে দিনের মতো এবং দিন হবে জ্বলন্ত টুকড়োর মতো (যা কিছুক্ষন পরেরই নিভে যায়)’। [মুসনাদে আবু ইয়া’লা: মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৭/৬৩৯]

ফায়দা: এখানে ‘আখেরী জামানার’ একটি অবস্থার কথা বলা হয়েছে, যে জামানার কোনো এক সময় ইমাম মাহদী রা. আবির্ভূত হবেন। [মিরকাতুল মাফাতিহ, আলী ক্বারী- ৮/৪৩০; তুহফাতুল আহওয়াযী- ৬/৪৫২] এই হাদিসের একটি অর্থ-তো এই যে, শেষ জামানায় বছর, মাস বা দিনগুলো খুব দ্রুত গতিতে জীবন থেকে বিদায় নিয়ে যাচ্ছে বলে অনুভূত হবে, যেমনটা পানি ভর্তি কোনো বোতলকে উল্টো করে ধরে পানিকে পড়তে দিলে পানি পড়ার শেষ দিককার সময়টিতে খুব দ্রুত গতিতে পানি বেড় হয়ে যায়। এরকম অভিজ্ঞতা এযুগের মনে হয় সবারই রয়েছে। আমার-তো এমনও মনে হয় যে, এই-তো ২/৩ দিন আগে জুম্আর নামায পড়ে এলাম, আবার শুক্রবার জুমআর দিন চলে এল !!! ১০/১৫ বছর আগের ঘটনাকে মনে হয় এই সেই দিনই-তো ঘটলো, এরই মধ্যে ১০টা বছর কোন দিক দিয়ে চলে গেল?! সকালে উঠলেই রাত চলে আসে, আবার সকালে উঠলেই আবার রাত। কত দ্রুত চলে যাচ্ছে সময় !

modern-technology

এই হাদিসের আরেকটি অর্থ এই হতে পারে যে, এখানে শেষ জামানায় অত্যাধুনিক সব জিনিস আবিষ্কারের দিকে ইশারা করা হয়ে থাকতে পারে, যার ফলশ্রুতিতে মানুষের জীবনের বিভিন্ন অঙ্গনের গতি আগেকার জামানাগুলোর চাইতে অনেক সহজতর ও স্বল্প সময়ের ভিতরে করার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে গেছে। যেমন: আগেকার জামানায় পায়ে হেটে, ঘোড়া/উটে চড়ে দূরের সফর করতে গিয়ে মাসকে মাস সময় লাগে যেতো, যা আজ গাড়ি, বাস, ট্রেন, প্লেন ইত্যাদিতে চড়লে কত দ্রুততর সময়ের মধ্যেই গন্তব্যস্থলে গৌছানো সম্ভব হয় ! আগের জামানায় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চিঠিপত্র বা কোনো সংবাদ পৌছাতে কত দিন/মাস লেগে যেতো, সেখানে আজ মোবাই বা ল্যাপটপে বসে সেকেন্ডের মধ্যেই উভয়ে উভয়কে স্ক্রিনে দেখেই যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে ! এসব আবিষ্কার কি মানুষের জীবন ও সময়কে কাছাকাছি করে আনে নি?! হাদিসের ইশারা এদিকেও হতে পারে বলে আমি মনে করি। الله اعلم بالصواب

# হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- من اقتراب الساعة انتفاخ الأهلة ، و أن يرى الهلال لليلة ، فيقال : هو ابن ليلتين . أخرجه الطبراني في المعجم الصغير : رقم ١١٣٠ ; و في الأوسط أيضا : ٢/١٣٠ عن أبي هريرة مرفوعا; والداني في السنن الواردة في الفتن : ١/٤٦٥ رقم ٣٩٨, ٣٩٩ ; وحسَّنه الألباني في صحيح الجامع :٥٨٩٩ و في السلسلة الصحيحة: ٥/٣٦٦ رقم ٢٢٩٢ – ‘কেয়ামতের নিকবর্তী সময়ে (এমনও হবে যে,) নতুন চাঁদ বড় আকারে (উদিত) হবে। (সে সময় এমনও হবে যে,) চাঁদকে আগের রাতেই দেখে নেয়া হবে, পরে বলা হবে: ওটা-তো দুই দিনের (গত হওয়া চাঁদের) অংশ’। [আল-মু’জামুস সাগীর, ত্বাবরাণী, হাদিস ১১৩০; আল-মু’জামুল আউসাত, ত্বাবরাণী- ২/১৩০; আস-সুনান, ইমাম দানী- ১/৪৬৫ হাদিস ৩৯৮, ৩৯৯; আল-মুসান্নাফ, ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ- ৮/৬৬৪]

ফায়দা: এখানে ‘কেয়ামতের নিকটবর্তী সময়’ বলতে শেষ জামানা উদ্দেশ্য।ইসলামী আরবী মাসগুলো যেহেতু ২৯ বা ৩০ দিনে মাস হয়ে থাকে, তাই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সচেতন মুসলমানগণ রোযা বা ঈদের সময়ে প্রথমে ২৯ তারিখে চাঁদ উঠেছে কিনা -তা আকাশের দিকে তাকিয়ে কিংবা ‘সরকারী চাঁদ দেখা কমিটি’র চাঁদ দেখার বিষয়টি রেডিও/টেলিভিশনের খবরে খোঁজ করে নেয়। অনেক সময় মেঘ ও বৃষ্টি-বাদল ইত্যাদির কারণে কারোরই চাঁদ দেখা নিশ্চিত না হলে, তারা ৩০ তারিখে একইভাবে চাঁদ দেখে। কিন্তু ২৯ মাস হোক বা ৩০ দিনে, সর্বাবস্থায়ই যে কোনো মাসের প্রথম তারিখের চাঁদ স্বভাবতঃই অতীব পাতলা আকারের বাঁকানো দেখায়। কিন্তু এই হাদিসে ইংগীত করা হয়েছে, শেষ জামানায় এমনও হবে যে, মুসলমানদের কারো কারো কাছে প্রথম তারিখের চাঁদকে প্রথম তারিখের ওঠা মনে হবে না বরং মনে হবে এক দিন আগে ওঠা চাঁদের মতো একটু বেশি মোটা, আর সে ধারনা করে বসবে- ‘কিরে! আমরা কি তাহলে চাঁদটিকে এক দিন পরে তথা দ্বিতীয় দিন দেখতে পেলাম ! তার মানে কি আমরা এক দিন পরে রোযা/ঈদ পালন করছি!…ইত্যাদি ইত্যাদি…!’ অন্যের কথা কী বলবো, এরকম ঘটনা খোদ আমার সাথেই একাধিকবার হয়ে গেছে !প্রথম তারিখের চাঁদ দেখে আমার মন বিশ্বাস করতে চাইছিল না যে, তা আজই প্রথম উঠেছে, আমার মনে দৃঢ়তার সাথে বলে উঠছিল ‘চাঁদটা গত কাল উঠেছে, কোনো কারণে আমরা তা দেখতে পাইনি!’ তখন এই ভবিষ্যৎবাণীটির কথা মনে পড়ে গেছে। আপনাদের কি অভিজ্ঞতা জানি না, আমি এব্যাপারে নিঃসন্দেহ যে, উপরোক্ত ভবিষ্যৎবাণীটি আমাদের এই শেষ জামানার দিকে ইশারাকৃত। আর ‘নতুন চাঁদ বড় আকারে উদিত হতে দেখা’ বলতে অস্বাভাবিক ভৌগলিক কোনো পরিবর্তনের কারণেও কখনো নতুন মাসের প্রথম দিনের চাঁদকে দেখতে কিছুটা বড় আকারের মনে হতে পারে, আবার শেস জামানার আলামত হিসেবে আল্লাহ তাআলা তা বিশেষ ভাবে প্রকাশ করে দিতে পারেন।

হাদিসের আরেকটি অংশ হল- يرى الهلال لليلة ‘চাঁদকে আগের রাতেই দেখে নেয়া হবে’। মুসলমানদের উপরে শরয়ী হুকুম হল, তারা নিজেদের দেশ/অঞ্চলে চাঁদ দেখে রোযা, ঈদ ইত্যাদি পালন করবে। কারণ, পৃথিবীর সকল স্থানে একই সাথে দিন রাত হয় না, একই সাথে মাস শুরু বা শেষও হয় না। সুতরাং, রোযা বা ঈদ একই সাথে করার ধারনাটা প্রকৃতি ও শরীয়তের স্বাভাবিক নিয়মের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর যুগ থেকে এভাবেই স্বাভাবিক নিয়মে চাঁদ দেখে রোযা, ঈদ ইত্যাদি পালিত হয়ে আসছে। কিন্তু আমাদের এই শেষ জামানায় শরীয়তের ইলম সম্পর্কে মুর্খতা ব্যাপক আকার ধারন করায় অতি আবেগী কিছু মুসলীম গোষ্ঠির মাথায় কী হয়েছে যে, তারা মক্কা মদিনার রোযা ও ঈদের সাথে মিলিয়ে তাদের নিজেদের দেশ/অঞ্চলেও রোযা-ঈদ পালন করতে অতিব আগ্রহী এবং বাস্তবেও দেশের মুসলমানদের সাথে একত্রে রোযা/ঈদ শুরু না করে, বরং তাদের নিজ দেশ/অঞ্চলে চাঁদ ওঠার আগেই সৌদিতে চাঁদ উঠেছে কিনা তা দেখে থাকে এবং সেই অনুযায়ী নিজেদের দেশে আলাদা ভাবে রোযা/ঈদ পালন করে। আরেক গোষ্ঠি আছে, যারা তাদের নিজেদের দেশ বা অঞ্চলে দেখা চাঁদের উপরে ভিত্তি করেই রোযা/ঈদ পাল করে বেটা, কিন্তু সৌদিতে চাঁদ উঠেছে কিনা তা আগে ভাগে দেখে নেয়, কারণ তারা অভিজ্ঞতায় দেখেছে যে, সৌদিতে চাঁদ ওঠার ১/২ দিন পরে তাদের দেশ/অঞ্চলে চাঁদ ওঠে। হতে পারে, হাদিসটিতে এই দ্বিবিধ বিষয়ের দিকেই ইংগীত করা হয়েছে।

হাদিসের অংশ- يرى الهلال لليلة –‘চাঁদকে আগের রাতেই দেখে নেয়া হবে’ -এই বাক্যের মধ্যে এই অত্যাধুনিক জামানার দিকে ইশারা থাকারই প্রমাণ মেলে। কেননা, আগেকার জামানাগুলোতে দূরবর্তী দেশ/অঞ্চলের খবর এজামানার মতো এত দ্রুত পৌছানোর কোনোই মাধ্যম বিদ্যমান ছিল না। এই জামানায় মোবাইল, টেলিভিশন, ইন্টারনেট কমিউনিকেশন ইত্যাদির মাধ্যমে পৃথিবীর কোনো দেশ/অঞ্চলের খবরাখবর অন্য কোনো দেশ/অঞ্চলে নিমিশের মধ্যেই পৌছানো এমনকি স্ক্রিনে লাইভ দেখাও সম্ভব। উদাহরণ স্বরূপ, যেসব গোষ্ঠি সৌদিতে দেখা চাঁদের ভিত্তিতে রোযা/ঈদ পালন করে থাকে, তাদের দেশে যদি ১/২ দিন পরে চাঁদ ওঠার অভিজ্ঞতা থেকে থাকে, তাহলে তারা সেই অনুযায়ী ১/২ আগেই উক্ত অত্যাধুনিক মিডিয়ার সাহায্যে অতি সহজেই সৌদিতে রোযা/ঈদ পালন করা হচ্ছে কিনা তা জেনে নিতে পারে। যা হোক, আমার মতে, আমাদের এই জামানায় হাদিসের ভবিষ্যৎবাণীটি পূর্ণ হয়ে গেছে। الله اعلم بالصواب

# হযরত উকবা বিন আমের রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- سيهلك من أمتي أهل الكتاب وأهل اللبن ” ، قال عقبة : ما أهل الكتاب يا رسول الله ؟ قال : ” قوم يتعلمون كتاب الله يجادلون به الذين آمنوا ” قال : فقلت : ما أهل اللبن يا رسول الله ؟ ” قال : ” قوم يتبعون الشهوات ويضيعون الصلوات ” . اخرجه الحاكم فى المستدرك: ٦/٣٧٤, و قال: هذا حديث صحيح الإسناد ولم يخرجاه و وافقه الذهبى; و ابن جرير الطبري فى تفسيره: تحت سورة الغفير -٦٩ , و الرويانى فى المسند: ١/١٨٣ رقم ٢٣٩, ٢٤٠ – ‘অতি শিঘ্রই আমার উম্মতের মধ্যে কিতাবধারী ও দুধধারী’রা বরবাদ হয়ে যাবে। হযরত উকবা রা. জিজ্ঞেস করলেন: ‘কিতাবধারী কে -ইয়া রাসুলাল্লাহ’? তিনি ﷺ বললেন: ‘ওই সকল (মুনাফেক) লোক, যারা আল্লাহ’র কিতাব (আল-কুরআন)-কে শিখে নিবে এবং তা দিয়ে মুমিনদের সাথে বাকবিতন্ডা/ঝগড়াবিবাদ করবে’। হযরত উকবা রা. বলেন: ‘আমি জিজ্ঞেস করলাম: দুধধারী কি -ইয়া রাসুলাল্লাহ’? তিনি ﷺ বললেন: ‘ওইসমস্ত লোক যারা কুপ্রবৃত্তির পিছে পিছে চলবে এবং নামাযকে নষ্ট ও বরবাদ করে ফেলবে’। [মুসতাদরাকে হাকিম- ৬/৩৭৪; মুসনাদে রুইয়ানী– ১/১৮৩, হাদিস ২৩৯, ২৪০; তাফসীরে তাবারী, ইবনে জারীর- ১৮/২৯৬]

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   দুই রাকাত সালাত বা নামাজের দলিল সহিহ বুখারী থেকে , ব্যাখ্যা ও দলিল বা রেফারেন্স সহ

ফায়দা: দুধধারী বলতে সম্ভবতঃ আরবের গ্রাম্য-বুদ্দু লোকরা উদ্দেশ্য, যারা উট/দুম্বা/বকরী/ভেড়ার দুধ দিয়ে প্রধানত জীবন যাপন করে, তাদের হাতে একসময় অঢেল সম্পদ চলে আসবে এবং তারা কু-প্রবৃত্তির পিছনে চলবে ও নামাযকে নষ্ট করে ফেলবে। ইমাম ত্বাবরাণী রহ. হযরত উকবা বিন আমের রা. থেকে বর্ণনা করেছে যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- أتخوف على أمتي اثنتين: يتبعون الأرياف والشهوات، ويتركون الصلاة والقرآن؛ يتعلمه المنافقون يجادلون به أهل العلم. اخرجه طبراني ,كنز العمال: ١١/١١٦ رقم ٣٠٨٤٢ -‘আমি আমার উম্মতের উপর দুটি বিষয় নিয়ে ভয় করি: (১) তারা গ্রামকে শহরে রুপান্তর (করার পিছনে পড়ে যাবে) ও নফসানী-খাহেশাতের অনুগত্য করবে এবং নামায ও কুরআন’কে ছেড়ে দিবে। (তখন মোক্ষম সুযোগ দেখে মুসলমানদের মধ্যে ফিতনা ছড়ানোর উদ্দেশ্যে) মুনাফেকরা কুরআনের ইলম শিখে নিবে (এবং) তা দিয়ে আহলে-ইলম (হক্কানী আলেম)গণের সাথে তর্ক-বিতর্ক করবে’। [ত্বাবরাণী: কাঞ্জুল উম্মাল– ৫/৬৪৫, হাদিস ৩০৮৪৬]

এখানে গ্রামকে শহরে রুপান্তর দ্বারা সম্ভবতঃ আরব বিশ্বে এক সময়কার গ্রাম্য লোকগুলির হাতে অঢেল সম্পদ হয়ে যাওয়া এবং গ্রামকে শহরে পরিণত করার দিকে ইশারা করা হয়েছে, যেটাকে অন্য এক হাদিসে শেষ জামানা বোঝারে একটি বিশেষ আলামত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেমন: মুসনাদে আহমদ’ -এ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-এর সূত্রে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে, যার অংশ বিশেষ এই- إذا رأيتَ الأَمَةُ ولدتْ رَبَّتَها أو رَبَّها ورأيتَ أصحابَ الشاءِ تَطاولوا بالبنيانِ ورأيتَ الحُفاةَ الجِياعَ العالةَ كانوا رؤوسَ الناسِ فذلك من مَعَالمِ الساعةِ وأَشْراطِها قال : يا رسولَ اللهِ ومن أصحابُ الشاءِ والحُفاةُ الجِياعُ العالةُ قال : العَرَبُ . رواه الإمام أحمد:١/٣١٩ رقم ٢٩٢٦, قال شعيب الأرنؤوط : حديث حسن – ‘তুমি যখন দেখবে যে, মা তার মনিবা বা মনিবকে প্রসব করেছে, এবং (যখন) দেখবে যে, (একসময়) মেষপালের রাখাল (ছিল -এমন গ্রাম্য) লোকগুলি (হঠাৎ যেন অঢেল অর্থ-সম্পদের মালিক হয়ে গেছে এবং টেক্কা দিয়ে) একে অন্যের চাইতে উঁচু উঁচু ইমারত তৈরীতে লেগে গেছে, এবং (যখন) দেখবে যে, পাদুকাহীন, দারিদ্রপিষ্ট-হতদরিদ্র ব্যাক্তিগুলি (অপরাপর) লোকজনের সর্দার/মনিব/নেতা/মাতব্বর হয়ে গেছে, তখন (বুঝবে যে) ওটা কেয়ামতের একটি সংকেত এবং ওর লক্ষনসমূহের একটি। লোকটি বললো: ইয়া রাসুলাল্লাহ! (এই) মেষপালের রাখাল ও পাদুকাহীন, দারিদ্রপিষ্ট-হতদরিদ্র ব্যাক্তিগুলি কারা? রাসুলুল্লাহ সা. বললেন: আরব (লোকরা)’। [মুসনাদে আহমদ- ১/৩১৯, হাদিস ২৯২৬; সহিহ ইবনে হিব্বান- ১/৩৯৭; মিরকাতুল মাফাতিহ, ক্বারী ১/১২৮] আজ হাতে পয়সা হওয়ার পর দুবাই, কাতার, কুয়েত প্রভৃতি দেশগুলিতে যে ভয়াবহ বদদ্বীনী ও অশ্লীলতা কোমড় গেড়ে বসেছে, মনে হয় সেই বিষয়গুলোর দিকেই উপরোক্ত হাদিসে ইশারা করা হয়েছে। الله اعلم بالصواب

# আনাস বিন মালিক রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- لَا تَنْقَضِي الدُّنْيَا حَتَّى تَكُونَ عِنْدَ لُكَعِ بْنِ لُكَعٍ . أخرجه ابن حبان في صحيحه , كِتَابُ التَّارِيخِ ذِكْرُ الْإِخْبَارِ بِأَنَّ الدُّنْيَا يَمْلِكُهَا مَنْ لَا حَظَّ لَهُ فِي الْآخِرَةِ : ١٥/١١٦ رقم ٦٧٢١ ؛ قال شعيب الأرنؤوط : اسناده صحيح – ‘দুনিয়া ধ্বংস হবে না, যাবৎ না তা লুকা’র সন্তান লুকা’র কাছে (হস্তগত) হয়’। [সহিহ ইবনে হিব্বান– ১৫/১১৬ হাদিস ৬৭২১]

ফায়দা: হারেস বিন হিশাম রহ. তাঁর পিতার সূত্রে কয়েকজন সাহাবী রা. থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেছেন- يوشك أن يغلب على الدنيا لكع بن لكع . أخرجه احمد في مسنده : ٥/٤٣٠ , رجاله كلهم ثقات كما في السلسلة الصحيحة : ٤/٩ رقم ١٥٠٥ ; و خرجه ايضا الطحاوي في شرح مشكل الآثار : ٢/٤٢٨ , رجاله كلهم ثقات , قال شعيب الأرنؤوط : اسناده صحيح : ٥/٢٩٤ رقم ٢٠٥١ ; أخرجه الطبراني ايضا في الأوسط برقم ٧٣١٦ و ٤٦٧٧ ؛ قال الهيثمي في مجمع الزوائد : ٧/٣٢٥ : رواه الطبراني في الأوسط بإسنادين ورجال أحدهما ثقات – ‘অচিরেই এমন হবে যে, লুকা’র সন্তান লুকা’ (এই) পৃথিবীর (মানুষের) উপরে গালেব/ প্রবল হয়ে যাবে’। [মুসনাদে আহমদ- ৫/৪৩; শারহু মুশকিলিল আছার, ইমাম তাহাবী- ২/৪২৮; আল-মু’জামুল আউসাত, হাদিস ৪৬৭৭, ৭৩১৬; আল-মুসান্নাফ, ইমাম আব্দুর রাজ্জাক- ১১/৩১৬ হাদিস ২০৬৪২; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৭/৩২৫]

হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَكُونَ أَسْعَدَ النَّاسِ بِالدُّنْيَا لُكَعُ ابْنُ لُكَعٍ . أخرجه الترمذي في سننه , أبواب الفتن : ٤/٤٩٣ برقم ٢٢٠٩ ؛ وصححه الألباني في صحيح الترمذي و في الجامع الصغير : رقم ١٣٣٩ – ‘কেয়ামত কায়েম হবে না, যাবৎ না লুকা’র সন্তান লুকা (এই) পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান (বিবেচিত) হয়’। [সুনানে তিরমিযী– ৪/৪৯৩ হাদিস ২২০৯]

আরবরা তাদের দাস-দাসীদেরকে সমাজের لُكَع (লুকা’) তথা নীচ, হীন বা নিম্ন শ্রেণির মানুষ বলে গণ্য করতো। পরবর্তিতে এই শব্দটি সমাজের আহাম্মক, বেউকুফ, নির্বোধ শ্রেণির মানুষদেরকে বুঝাতে ব্যবহৃত হতে থাকে। [শারহু মুশকিলিল আছার, ইমাম ত্বাহাবী- ৫/২৯৫; আন-নিহায়াহ, ইবনুল আছির- ৪/২৬৮]

এই ধরনের ব্যাক্তি বা ব্যাক্তিদের হাতে ‘দুনিয়া হস্তগত’ হওয়ার অর্থ পারে ‘রাজনৈতিক ক্ষমতা’ হস্তগত হওয়া কিংবা দুনিয়ার মূল্যবান ধ্বনসম্পদের উপরে তার অবৈধ কবজা ও অপব্যাহারের প্রসস্থ্য সুযোগ সৃষ্টি হওয়া, কিংবা ‘রাজনৈতিক ক্ষমতা’ ও ‘ধ্বনসম্পদ’ দুটো এক সাথেই তার করায়ত্বে আসা। অর্থাৎ, এরকম ব্যাক্তি হতে পারে কোনো রাষ্ট্রের শাসক বা প্রশাসক শ্রেণির কেউ, কিংবা হতে পারে তারও নিম্নের কোনো পদের কর্ণধার, যারা সমাজের উপরে খবরদারী করবে। এরা হবে মূলতঃ সমাজের ফাসেক/ফাজের/মুনাফেক শ্রেণির ব্যাক্তিরা, যারা পার্থিব ক্ষমতা ও আয়েশী বা বিলাশী জীবন উপভোগের মাধ্যমে দুনিয়ার উপরে তাদের খবরদারী চালাবে। এখানে لكع بن لكع – (লুকা’র সন্তান লুকা) বলতে আমাদের এই শেষ জামানার দিকে ইংগীত করা হয়েছে, তার প্রমাণ হল, ইমাম ইবনু মুনাদী রহ. নিজ সনদে উম্মে সালমাহ রা. থেকে রেওয়ায়েত করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ এরশাদ করেছেন- ليأتين على الناس زمان يكذب فيه الصادق ويصدق فيه الكاذب ويخون فيه الأمين ويؤمن فيه الخئون ويشهد فيه المرء و إن لم يستشهد ويحلف المرء وإن لم يستحلف ويكون أسعد الناس بالدنيا لكع بن لكع لا يؤمن بالله ورسوله . اخرجه الطبراني في الأوسط: ٦/٢٤١ رقم ٨٦٤٣ و الكبير: ٢٣/٣١٤، و ابن المنادي في الملاحم: ١/٣٥٥ رقم ٣٠٧، قال الهيثمى في مجمع الزوائد : ٧/٢٢٦ : رواه الطبراني في الأوسط والكبير وفيه عبد الله بن صالح كاتب الليث وهو ضعيف وقد وثق – “মানুষের উপরে অবশ্যই এমন জামানা আসবে, যখন (পৃথিবীর মানুষের সামনে প্রকৃত) সত্যবাদীকে মিথ্যুক বানানো হবে, আর মিথ্যুককে বানানো হবে সত্যবাদী; এমনিভাবে (প্রকৃত) আমানতদারকে খেয়ানতকারী বানানো হবে, আর খেয়ানতকারীকে বানানো হবে আমানতদার। (আর মানুষজন প্রতারকদের প্রতারনা ও ধাপ্পাবাজী বুঝতে না পেরে ওগুলোকেই সত্য মনে করতে থাকবে, আর প্রকৃত সত্য ও সত্যপন্থিরা সর্বসাধারণের দৃষ্টির আরালে থাকবে)। সে জামানায় (এমনও হবে যে), কোনো ব্যাক্তি -তার কাছে সাক্ষ্য তলব না করা সত্ত্বেও (নিজ থেকেই সে) সাক্ষ্য দিয়ে দিবে এবং কোনো ব্যাক্তি -তার কাছে হলফ (কসম) তলব না করা সত্ত্বেও (নিজ থেকেই সে) হলফ/কসম করে বসবে, (তারা এসব করতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা’কে ভয় করবে না)। (সে জামানায়) লুকা’র সন্তান লুকা -(যে মুমিন সুলভ) ইমান রাখবেনা আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রাসুলের প্রতি -(সে-ই এই) পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান (বিবেচিত) হবে, (যদিও সে হবে আদপে মুনাফেক)”। [আল-মু’জামুল আউসাত, ইমাম ত্বাবরাণী- ৬/২৪১ হাদিস ৮৬৪৩; আল-মু’জামুল কাবীর, ইমাম ত্বাবরাণী- ২৩/৩১৪; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৭/২২৬ হাদিস ১২২২৫; আল-মালাহীম, ইমাম ইবনু মুনাদী- ১/৩৫৫ হাদিস ৩০৭; জামেউস সাগীর, ইমাম সুয়ূতী- ২/৪৪৪] পরবর্তীতে আমরা দেখাবো যে, এসব বৈশিষ্ট শেষ জামানাতেই ঘটবে।

আমরা শেষ জামানায় এসে এই পচন ধরা পৃথিবীর দেশ ও সমাজগুলোর দিকে যদি তাকাই, তাহলে এই উম্মাহ’র মধ্যে এমন কিছু লুকা’ মানের ক্ষমতাধর ব্যাক্তির দেখা পাবো, যাদের বাপ-দাদারাও লুকা’ ছিল, কিন্তু হঠাৎ তারাই আজ উম্মাহ’র মধ্যে সবচাইতে ধ্বনী ও ক্ষমতাধর হয়ে বসেছে।

উপরে আমরা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-এর সূত্রে একটি হাদিস বর্ণনা করে এসেছি, যার অংশ বিশেষ এই- إذا رأيتَ الأَمَةُ ولدتْ رَبَّتَها أو رَبَّها ورأيتَ أصحابَ الشاءِ تَطاولوا بالبنيانِ ورأيتَ الحُفاةَ الجِياعَ العالةَ كانوا رؤوسَ الناسِ فذلك من مَعَالمِ الساعةِ وأَشْراطِها قال : يا رسولَ اللهِ ومن أصحابُ الشاءِ والحُفاةُ الجِياعُ العالةُ قال : العَرَبُ . رواه الإمام أحمد:١/٣١٩ رقم ٢٩٢٦, قال شعيب الأرنؤوط : حديث حسن – ‘তুমি যখন দেখবে যে, মা তার মনিবা বা মনিবকে প্রসব করেছে, এবং (যখন) দেখবে যে, (একসময়) মেষপালের রাখাল (ছিল -এমন গ্রাম্য) লোকগুলি (হঠাৎ যেন অঢেল অর্থ-সম্পদের মালিক হয়ে গেছে এবং টেক্কা দিয়ে) একে অন্যের চাইতে উঁচু উঁচু ইমারত তৈরীতে লেগে গেছে, এবং (যখন) দেখবে যে, পাদুকাহীন, দারিদ্রপিষ্ট-হতদরিদ্র ব্যাক্তিগুলি (অপরাপর) লোকজনের সর্দার/মনিব/নেতা/মাতব্বর হয়ে গেছে, তখন (বুঝবে যে) ওটা কেয়ামতের একটি সংকেত এবং ওর লক্ষনসমূহের একটি। লোকটি বললো: ইয়া রাসুলাল্লাহ! (এই) মেষপালের রাখাল ও পাদুকাহীন, দারিদ্রপিষ্ট-হতদরিদ্র ব্যাক্তিগুলি কারা? রাসুলুল্লাহ সা. বললেন: আরব (লোকরা)’। [মুসনাদে আহমদ- ১/৩১৯, হাদিস ২৯২৬; সহিহ ইবনে হিব্বান- ১/৩৯৭; মিরকাতুল মাফাতিহ, ক্বারী ১/১২৮]

# হযরত আবু হুরায়রাহ ও আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- ليأتين على الناس زمان يكون عليكم أمراء سفهاء يقدمون شرار الناس ويظهرون حب خيارهم ويؤخرون الصلاة عن مواقيتها فمن أدرك ذلك منكم فلا يكونن عريفا ولا شرطيا ولا جابيا ولا خازنا . أخرجه أبو يعلى ٢/٣٦٢ ، رقم ١١١٥ . قال الهيثمى ٥/٢٤٠ : رجاله رجال الصحيح خلا عبد الرحمن بن مسعود ، وهو ثقة – ‘অবশ্যই মানুষের উপর এমন জামানা আসবে, যখন তোমাদের উপর নির্বোধ-বেউকুফ শাসকদের আগমন ঘটবে, যারা নিকৃষ্ট নিকৃষ্ট লোকদেরকে কাছে রাখবে, যার প্রতি ইচ্ছা মহব্বত প্রকাশ করবে এবং নামাযকে তার ওয়াক্ত থেকে বিলম্বে (কাযা করে) আদায় করবে। তোমাদের মধ্যে যারা এটা দেখতে পাবে, তারা (ওদের) আরেফ, সৈন্য, কর-উসূলকারী এবং কোষাধক্ষ হতে যেও না। [মুসনাদে আবু ইয়া’লা-৫/২৪০, হাদিস ১১১৫; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৫/২৪০]

ফায়দা: আমি এখানে عريف (আরেফ) অর্থ হল যে ব্যাক্তি কোনো কিছু সম্পর্কে জ্ঞান রাখে। ইমাম হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন- وسمي العريف عريفا لأنه يعرّف الإمام أحوال العسكر আরেফ-কে এজন্য আরেফ বলা হয় যেহেতু সে বাদশাহ ও (তার) সৈন্যবাহীনির হাল-হালত সম্পর্কে ভাল জানাশোনা রাখে। [ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার-৬/৬০১] তিনি আরো বলেছেন- وسمي بذلك لكونه يتعرف أمورهم ، حتى يعرف بها من فوقه عند الاحتياج – আরেফ-কে এজন্য আরেফ বলা হয় যেহেতু তাদের বিষয়আসয় সম্পর্কে তার ভাল জানাশোনা থাকে। বরং কোথায় কী প্রয়োজন – সে সম্পর্কে তার জানাশোনার স্তর তাদের থেকে উপরেই থাকে। [ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার-১৩/১৬৯] আর এজন্যই রাজা-বাদশাহ’রা عريف (আরেফ)-দেরকে সাথে রাখে যাতে প্রয়োজনে তাদের থেকে শলাপরামর্শ নেয়া যায়।

এই অত্যাধুনিক শেষ জামানায় বিভিন্ন দেশের সরকারগুলির ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (যারা সরকারকে গোপন তথ্য সরবরাহ করে, যেমন আমেরিকার সিআইএ, রাশিয়ার কেজিবি, ভারতের ‘র’, ইসরাঈলের মোসাদ ইত্যাদি)-এর সদস্যরা হল সবচাইতে শক্তিশালী عريف (আরেফ)। সরকারের বিভিন্ন বিভাগ/মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা প্রমূখও عريف (আরেফ)-এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত। উপদেষ্টা হতে পারে যে কোনো বিষয়ে, যেমন: অর্থনৈতিক উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা, নিরাপত্তা উপদেষ্টা, রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা, সংস্কৃতিক উপদেষ্টা ইত্যাদি। এদেরকে সংশ্লিষ্ট বিষয় সহ আনুষঙ্গিক আরো বিষয়আসয়, দেশ ও দুনিয়ার হালচাল, রাজনৈতিক অবস্থা ইত্যাদি সম্পর্কে গভীর জানাশোনা রাখতে হয়। সরকারগুলো এজন্যই এদেরকে সাথে রাখে কারণ তারা বিশ্বাস করে তাদের উপদেষ্টারা তাদের চাইতে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে বেশি জানে ও বোঝে এবং প্রয়োজনে তাদের থেকে শলাপরামর্শ নেয়। তবে আরেফ শুধু এই উপদেষ্টা’র মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং যারা عريف (আরেফ) -এর উদ্দেশ্য পূরণ করবে তারাও এই হাদিসের সাবধানবাণীর আওতায় পরবে। যেমন: সরকারী গুপ্তচর, সরকারের নিজেস্ব দলীয় গুপ্তচর, মিডিয়া ইত্যাদি যারা সরকারগুলিকে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে বিভিন্ন অপরাধে সহায়তা করে থাকে। এযুগের আরেক প্রকার عريف (আরেফ) রয়েছে যার খবর বেশিরভাগ মানুষই রাখে না। এরা হল সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত বিভিন্ন সোসাল মিডিয়া (যেমন ফেসবুক, টুইটার, গুগোলপ্লাস, ইন্সটাগ্রাম, ইউটিউব ইত্যাদি)র মধ্যে গোপনে ঢুকে থাকা عريف (আরেফ), যারা কোন কোন Users সরকারের বিপক্ষে বা দ্বীন ইসলাম কায়েমের পক্ষে মানুষকে ডাকার পিছনে বিশেষ ভুমিকা রাখছে তাদের IP (Internet Protocol), মোবাইল নম্বর ও নাম-ঠিকানা ইত্যাদি যথাসম্ভব সংগ্রহ করে সরকারী কর্তৃপক্ষের হাতে দেয়, পরে তারা বাঁছাই করে কাউকে কাউকে Black Listed করে এবং প্রয়োজন হলে তাদেরকে রাজনৈতিক বেড়াজালে ফেলে নাটক সাজিয়ে দালাল মিডিয়া গুলোকে দিয়ে বাম্পার প্রচার প্রচারণা চালায় যে -‘অমুক অমুক দেশ বিরোধী, মানবতা বিরোধী, সন্ত্রাসী ইত্যাদি কর্মকান্ডে জড়িত’ !!!

রাসুলুল্লাহ ﷺ শেষ জামানার এসব ফাসেক-ফাজের ও নির্বোধ শাসকদের উল্লেখীত সরকারী পদগুলো গ্রহণ করা থেকে দূরে থাকার নসিহত করেছেন মুমিনদেরকে। কারণ, এই শাসকগুলি ঘন ঘন যত অন্যায়-অবিচার, সম্পদ আত্বসাৎ, খুন-খারাবি ও শরীয়ত বিরোধী পাপ করতে থাকবে তা-তো এসব পদ গ্রহনকারীদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহযোগীতাতেই তারা বাস্তবায়ন করবে। ফলে শাসকদের পাপের ভাগি তারাও হবে। الله اعلم بالصواب

# হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ ﷺ থেকে শুনে বর্ণনা করেছেন যে- ليأتين على الناس زمان؛ قلوبهم قلوب الأعاجم. (قيل: وما قلوب الأعاجم؟ قال:) حب الدنيا، سنتهم سنة الأعراب، ما أتاهم من رزق جعلوه في الحيوان، يرون الجهاد ضررا، والزكاة مغرما . رواه الطبراني في الكبير:١٣/٣٦ مرفوعًا و حسنه الألباني في السلسلة الصحيحة: ٩/١٣٧ رقم ٣٣٥٧; و رواه أبو يعلى مرفوعًا و الحارث بن أبي أسامة في مسنده موقوفاً كما في المطالب العالية: ٢/١٠١ و البوصيري في المجردة: ١/١٣٦, و لكن الحديث صحيح موقوفاً كما قال الحافظ ابن حجر: و هو أصح – ‘মানুষের উপর অবশ্যই একটি জামানা আসবে, (যখন) তাদের অন্তরগুলো হবে (একেকটা) আ’জামদের (অনারবদের) অন্তর’। (জিজ্ঞেস করা হল: আ’জামদের অন্তর কি? তিনি বললেন:) দুনিয়ার (ধ্বনসম্পদ, নারী, বাড়ি, পোশাক আসাক, প্রভৃতির প্রতি) আসক্তি (দ্বারা আচ্ছন্ন অন্তর, যেসব অন্তরে আখেরাত ও দ্বীনের আহাম্মিয়াত/গুরুত্ব থাকবে অনুপস্থিত)। তাদের রীতি রেওয়াজ হবে আরবদের রীতি রেওয়াজ। আল্লাহ তাদেরকে যে রিজেক দিবেন, তারা (সেগুলোকে সাধ্য মতো দ্বীন ইসলাম ও মুসলমানদের দুনিয়া ও আখেরাতের ফায়দায় না লাগিয়ে বরং) তা (পার্থিব) জীবনের (নানাবিধ ভোগ-বিলাস, আরাম-আয়েশ, আনন্দ-ফুর্তির) মধ্যে ব্যায় করবে। তারা (আল্লাহ’র ফরযকৃত) জিহাদ’কে (পৃথিবীর মানুষ জন্য একটি) ক্ষতিকারক (বিধান বলে) মনে করবে, আর যাকাত’কে মনে করবে (তাদের উপর আরোপিত) জরিমানা (স্বরূপ এক বোঝা)’। [আল-মু’জামুল কাবীর, ত্বাবরাণী- ১৩/৩৬; মুসনাদে আবু ইয়া’লা ও মুসনাদে হারেছ: মা তালেবুল আলীয়া- ২/১০১]

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   বিকাশ(bKash) থেকে সুদ বা ইন্টারেস্ট নেওয়া বন্ধ করবেন যেভাবে ।

ফায়দা: অনারবদেরকে -বিশেষ করে রোমের খৃষ্টান ও পারোস্যের অগ্নীপূজকদেরকে- বোঝানোর জন্য ‘আযম’ শব্দটি ব্যবহৃত হত। এই হাদিসে রাসুলুল্লাহ ﷺ ‘আযম (অনারব) লোকদের অন্তর’ বলতে সম্ভবতঃ তাঁর সময়কার বনু আসফার বা রোমের খৃষ্টানদেরকে বোঝাতে চেয়েছেন। রোম জাতি রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর আগেও পার্থিব নানাবিধ ভোগবিলাসে মত্ত এক জাতি ছিল, তাঁর যুগেও ওরকমই ছিল, তাঁর পরের যুগগুলিতেও ওরকম ছিল, এমনকি বিগত চোদ্দশ বছরের ইতিহাস দেখলেও বোঝা যাবে যে তাদের খাসলতে কোনোরূপ পরিবর্তন আসেনি। বর্তমান পশ্চিমা ইউরোপ আমেরিকার এই সাদা চামড়ার লোকগুলি ওদেরই উত্তরসূরী, যাদের ভোগ বিলাসী লাইফ-ষ্টাইল কারো অজানা নয়। বর্তমানকার মুসলমানদের পরষ্পরে মাঝে যাবতীয় ফিতনা-ফ্যাসাদের পিছনে এরা, নিকট ভবিষ্যতে ওদের সাথেই ইমাম মাহদীর সাথে যুদ্ধ সংঘটিত হবে, কেয়ামত রোমের এই নিকৃষ্ট লোকগুলির উপরই আসবে।

রাসুলুল্লাহ ﷺ সম্ভবতঃ এইসব বনু আসফার বা রোম জাতির অন্তরগুলোর সাথে তুলনা করে বোঝাতে চেয়েছেন যে, রোম জাতির লোকদের অন্তরে যেমন আল্লাহ’র ভয় নেই, দুনিয়াটাই যেন তাদের বেহেশত, তাদের ওঠা-বসায় খানাপিনায় চলাফেরায় শয়নে-স্বপনে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শুধু পার্থিব উন্নতি, আয়েশ ও ভোগ বিলাস প্রকাশ পায়, একটা সময় এমন আসবে যখন তাঁর উম্মতের মধ্যে এক শ্রেণির লোকদের অন্তর থেকেও আল্লাহ’র ভয় বলতে গেলে বিদায় নিয়ে যাবে এবং তারা এমন হয়ে যাবে যেন দুনিয়াটাই যেন তাদের বেহেশত, তাদের ওঠা-বসায় খানাপিনায় চলাফেরায় শয়নে-স্বপনে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শুধু পার্থিব উন্নতি, আয়েশ ও ভোগ বিলাস প্রকাশ পাবে।

সাহল বিন সা’দ -এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- اللَّهُمَّ لَا يُدْرِكْنِي زَمَانٌ ، أَوْ لَا تُدْرِكُوا زَمَانًا لَا يُتْبَعُ فِيهِ الْعَلِيمُ ، وَلَا يُسْتَحَى فِيهِ مِنَ الْحَلِيمِ ، قُلُوبُهُمْ قُلُوبُ الْأَعَاجِمِ ، وَأَلْسِنَتُهُمْ أَلْسِنَةُ الْعَرَبِ . رواه أحمد في مسنده : ٥/٣٤١ اسناده منقطع ، قال المنذري في الترغيب والترهيب: ١/٦٥ رقم ١٧٣ رواه أحمد و في إسناده ابن لهيعة وهو ضعيف – “হে আল্লাহ! ওই জামানার সাক্ষাত যেন আমি না পাই, অথবা (বলেছেন) তোমরা যেন ওই জামানার সাক্ষাত না পাও, যে জামানায় (কোনো কোনো গোষ্ঠি এত স্বেচ্ছাচারী হয়ে যাবে যে,) আল-আলীম (মহা জ্ঞানী আল্লাহ’র) অনুগত্য করা হবে না, যে সময়ে আল-হালিম (মহাধৈর্যশীল আল্লাহ) থেকে লজ্জা করা হবে না। তাদের অন্তরগুলো হবে আ’জামদের (অনারবদের) অন্তর (যেমন হয়), আর তাদের ভাষাগুলো হবে আরবের ভাষা (যেমন হয়)”। [মুসনাদে আহমদ- ৫/৩৪১; আস-সুনানুল ওয়ারিদাহ, ইমা দানী- ১/৫২৭ হাদিস ২২১; তারগীব ওয়াত তারহীব, মুনযিরী- ১/৬৫; ফাইজুল কাদির, মুনাভী- ২/১৮৫ হাদিস ১৫৪৩]

হযরত আলী রা. থেকে আরেক রেওয়াতে বর্ণিত হয়েছে- يأتي على الناس زمان؛ لا يتبع فيه العالم، ولا يستحيى فيه من الحليم، ولا يوقر فيه الكبير، ولا يرحم فيه الصغير، يقتل بعضهم بعضًا على الدنيا، قلوبهم قلوب الأعاجم، وألسنتهم ألسنة العرب، لا يعرفون معروفًا، ولا ينكرون منكرًا، يمشي الصالح فيهم مستخفيًا، أولئك شرار خلق الله، لا ينظر الله إليهم يوم القيامة . رواه الديلمي , كذا‏ كنز العمال: ١١/٢٨٦ رقم ٣١١٨٧ – ‘মানুষের উপর একটি জামানা আসবে, যখন (মানুষ স্বেচ্ছাচারী হয়ে যাবে, নিজে নিজে মত দিবে, শরীয়তের ব্যাপারে বিজ্ঞ) আলেমের অনুসরণ করা হবে না, হালিম (ধৈর্যবান ব্যাক্তি) থেকে লজ্জাবোধ করবে না, বড় ব্যাক্তিকে সম্মান করা হবে না, ছোট’র প্রতি দয়া করা হবে না, একজন আরেকজনকে দুনিয়ার খাতিরে হত্যা করবে। তাদের অন্তরগুলো হবে আ’জামদের (অনারবদের) অন্তর (যেমন হয়), আর তাদের ভাষাগুলো হবে আরবের ভাষা (যেমন হয়)। তারা না মা’রুফ (আল্লাহ’র নির্দেশিত নেককাজ) চিনবে, আর না মুনকার (শরীয়ত-বিরোধী কাজ)কে ঘৃনা করবে। নেককার ব্যাক্তি তাদের মাঝে লুকিয়ে লুকিয়ে চলবে। (এই যে বদ লোকগুলি) এরাই হল আল্লাহর ‍নিকৃষ্ট সৃষ্টি। আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাদের দিকে তাকাবেনও না’। [দাইলামী: কাঞ্জুল উম্মাল- ১১/২৮৬, হাদিস ৩১১৮৭]

আলী রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ সা. এরশাদ করেছেন- يَأْتِي على النَّاس زمَان آلِهَتهم بطونهم شرفهم مَتَاعهمْ قبلتهم نِسَاؤُهُم دينهم دراهمهم ودنانيرهم أُولَئِكَ شَرّ الْخلق لَا خلاق لَهُم . أخرجه الديلمى في الفردوس بمأثور الخطاب : ٥/٤٤٤ رقم ٨٦٨٨ , و وقره جلال الدين السيوطي في جامع الأحاديث: ٢٣/٤٥٨ رقم ٢٦٤٢٠ ; و المتقي في كنز العمال: ١١/٢٨٥ رقم ٣١١٨٦- ‘মানুষের উপরে এমন এক জামানা আসবে, (যে জামানায়) তাদের পেটগুলো হবে তাদের ইলাহ (উপাস্য); ভোগ-সামগ্রি হবে তাদের ভদ্রতা/সভ্যতা, তাদের নারীরা হবে তাদের কিবলাহ (লক্ষ্যবস্তু), আর তাদের দিনার ও দেরহাম (তথা টাকা পয়সা)গুলোই হবে তাদের ধর্ম। ওই লোকগুলি হল (আল্লাহ’র) নিকৃষ্ট সৃষ্টি। (তারা তাদের জীবনকে এমনভাবে পরিচালিত করবে যেন) তাদের সৃষ্টিকর্তা বলতে কেউ নেই’। [মুসনাদে দাইলামী– ৫/৪৪৪ হাদিস ৮৬৮৮; জামেউল হাদিস, ইমাম সুয়ূতী- ২৩/৪৫৮ হাদিস ২৬৪২০; কানজুল উম্মাল- ১১/২৮৫ হাদিস ৩১১৮৬; কাশফুল খাফা- ২/৩৯৯]

আরব জাহানের মধ্যে দুবাই, আমীরাত, কাতার, কুয়েত ইত্যাদি দেশগুলোর অর্থশালীদের লাইফ ষ্টাইল, আয়েশ ও ভোগ বিলাসের সামগ্রি ও তার প্রকারভেদ দেখলে কে না বলবে যে, উপরের হাদিসে তাদের দিকেই ইংগীত করা হয়েছে ! মুসলীম উম্মাহ’র দুঃখ-দুর্দশার প্রতি তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। তারা একেক বেলায় একেক ড্রেস পড়ে একেক গাড়িতে ঘোরে, দেশে বিদেশে বিভিন্ন ডিজাইনের বাড়ি কেনে, দামী দামী রকমারি সব খাওয়া দাওয়া আইটম তাদের জন্য প্রস্তত থাকে, কেউ কেউ ডিসকো পার্টিতে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি টাকা উড়িয়ে দেয়, দামী দামী সব দেশি-বিদেশি বেশ্যাদের সাথে রাত কাটায়। মদ পান, রেশমী পোশাক পরিধান, স্বর্ণ পরিধান কোনটা তারা বাদ দেয়?! তাদের বিয়ে সাদি ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের পিছনে যে মোটা অংকের অর্থ ব্যায় করে, তাতে হয়-তো আজ ইথিওপিয়ার দূর্ভিক্ষ দূর হয়ে যেতো !!! আমার মতে, আমাদের এই শেষ জামানায় আরব জাহানের উক্ত বিলাশপ্রিয় শ্রেণিটির দ্বারা এই ভবিষ্যৎবাণী পূর্ণ হয়ে গেছে। الله اعلم بالصواب

# আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে এরশাদ করতে শুনেছি- إِذَا تَبَايَعْتُمْ بِالْعِينَةِ ، وَأَخَذْتُمْ أَذْنَابَ الْبَقَرِ ، وَرَضِيتُمْ بِالزَّرْعِ ، وَتَرَكْتُمْ الْجِهَادَ ، سَلَّطَ اللَّهُ عَلَيْكُمْ ذُلًّا لَا يَنْزِعُهُ حَتَّى تَرْجِعُوا إِلَى دِينِكُمْ . رواه وأبو داود في سننه , أبواب الإجارة , باب في النهي عن العينة :٣٤٦٢ , وصححه الألباني في صحيح أبي داود ; والبزار في المسنده : ٥٨٨٧ ، والطبراني في مسند الشاميين : ٢٤١٧ ; و أحمد في المسنده : ٤٩٤٧ – ‘তোমরা (মুসলমানরা) যখন পরষ্পরে ঈনাহ লেনদেনে লিপ্ত হবে, (যখন) তোমরা (অপরাপর জাতির ন্যায় শুধু দুনিয়া কামাইয়ের ধান্দায় হালের) গরুর লেজ পাকড়িয়ে ধরবে, (যখন) তোমরা কৃষিকাজ (ও তা থেকে পাওয়া ফলন) নিয়ে খুশি/তুষ্ট থাকবে, আর (এদিকে শরয়ীতের ফরয/ওয়াজিব চাহিদা থাকা সত্ত্বেও) জিহাদকে পরিত্যাগ করে বসবে, (তখন) আল্লাহ তোমাদের উপরে যিল্লতী (অপমান ও লাঞ্চনা) চাপিয়ে দিবেন। (তখন তোমরা অমুসলীম ও মুনাফেকদের অধিনে অপমান ও লাঞ্চনার জীবন কাটাবে)। তিনি তা (তোমাদের উপর থেকে ততক্ষন পর্যন্ত) উঠিয়ে নিবেন না, যাবৎ না তোমরা তোমাদের দ্বীনের দিকে ফিরে আসো’। [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৩৪৬২; মুসনাদে বাযযার, হাদিস ৫৮৮৭; মুসনাদে শামেয়ীন, হাদিস ২৪১৭; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ৪৯৪৭]

ফায়দা: ঈনাহ (الْعِينَة) হল কোনো জিনিস কারো কাছে নির্দিষ্ট মূল্যে বাকিতে বিক্রি করে সেটিই আবার তার কাছ থেকে কম মূল্যে নগদে কিনে নেয়া, যাতে এরকম লেনদেনের মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করা যায়। এটা মূলতঃ রিবা বা সূদেরই একটি প্রকার, যা দ্বারা বাহানা করে নাজায়েয পন্থায় লাভবান হয়ে থাকে। উপরের প্রথম হাদিসে-তো দেখে এসেছেন যে, এই উম্মত শেষ জামানায় ব্যাপক ভাবে সূদী লেনদেনে জড়িয়ে পড়বে। আর এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, প্রকাশ্য সূদের পাশাপাশি এই উম্মাহ হিলা-বাহানার আশ্রয়েও সূদী লেনদেন করবে।

জেনে রাখা জরুরী যে, মুসলীম উম্মাহ’র আগে হিলা-বাহানার আশ্রয়ে আল্লাহ’র হারামকৃত জিনিসকে হালাল করে নিয়েছিল ইহূদীদের একটি গোষ্ঠি। তাদের সাপ্তাহিক পবিত্র দিন ছিল সাবাতের (শনিবার) দিন এবং সে দিন তাদের জন্য মাছ শিকার করা হারাম করা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও তাদের অনেকেই হিলা-বাহানার আশ্রয়ে আদপে সে দিনই মাছ ধরতো; তা এভাবে যে, তারা সাবাতের দিন সরাসরি মাছ না ধরে সে দিন শুধু মাত্র মাছ ধরার জাল/ফাঁদ পেতে রাখতো, আর রোববার এসে ওই জাল/ফাঁদে আটকা পড়া মাছগুলোকে উঠিয়ে নিতো। তাদের সমাজের মুমিনদের অনেকেই একাজে বাঁধা দিতে চাইলে ওরা যুক্তি দেখাতো যে, ‘আমরা-তো সাবাতের দিন মাছ ধরিনি, ধরেছি রবিবার’!!! পরে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে বানর বানিয়ে দেন। যেমন আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন- وَلَقَدْ عَلِمْتُمُ الَّذِينَ اعْتَدَوْا مِنكُمْ فِي السَّبْتِ فَقُلْنَا لَهُمْ كُونُوا قِرَدَةً خَاسِئِينَ – فَجَعَلْنَاهَا نَكَالًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهَا وَمَا خَلْفَهَا وَمَوْعِظَةً لِّلْمُتَّقِينَ – “আর তোমরা-তো তাদের কথা ভাল করেই জানো, যারা তোমাদের মধ্যে সাবাতের ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করেছিল। আমরা তখন তাদেরকে বললাম, তোমরা লাঞ্চিত বানর হয়ে যাও। বস্তুতঃ আমরা এ(ঘটনাটি)কে তাদের জন্য দৃষ্টান্ত বানিয়েছি, যারা সে (ঘটনার) সামনে (বিদ্যমান) ছিল এবং যারা তার পরে আসবে, আর (আমরা এই ঘটনাটিকে) মুত্তাকীদের জন্য (একটি) উপদেশ (বানিয়ে দিয়েছি)”। [সুরা বাকারাহ ৬৫, ৬৬]

মুসলীম উম্মাহও আজ ইহূদীদের মতো নানা হিলা-বাহানায় বিভিন্ন হারাম জিনিসকে হালাল করে নিচ্ছে, আর ভাবছে তারা কোনো দোষ করছে না! ফায়দা: আরেক হাদিসে আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে , রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- لَيَأْتِيَنَّ عَلَى أُمَّتِي مَا أَتَى عَلَى بني إسرائيل حَذْوَ النَّعْلِ بِالنَّعْلِ، . رواه الترمذي فى سننه, أبواب الإيمان, ما جاء في افتراق هذه الأمة: حديث رقم ٢٦٤١, حكم الالبانى: حسن، المشكاة (١٧١ التحقيق الثاني) ، الصحيحة (١٣٤٨) , الحديث بهذه الزيادة حسَّنه العراقي في تخريج الإحياء: ٣/٢٣٠ ; و الحاكم فى المستدرك: ١/٢٠٨ رقم ٤٤٤ – ‘ বনী ইসরাঈলের উপর যা ঘটেছিল আমার উম্মতের উপরও তা অবশ্যই ঘটবে; (যেমনি ভাবে এক পায়ের) জুতা (আরেক পায়ের) জুতার (সাথে) মিলে যায়’। [সুনানে তিরমিযী, হাদিস ২৬৪১, মুসতাদরাকে হাকিম– ১/২০৮, হাদিস ৪৪৪]

এই হাদিসে কৃষি কাজ ও গরুর হাল ধরাকে নাজায়েয বলা মোটেও উদ্দেশ্য নয়, কারণ অন্য বহু হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, এর সবই জায়েয। এখানে মূল উদ্দেশ্য হল, আল্লাহ তাআলা তাঁর শেষ নবী মুহাম্মাদ ﷺ-এর উপরে যে পূর্ণাঙ্গ ‘দ্বীন ইসলাম’ নাজিল করেছেন, তার কোনো রকম ক্ষতি হতে দেখে কিংবা চাহিদা থাকা তার হিফাজত ও সংরক্ষনের জন্য জীহাদের মতো গুরুত্বপূর্ণ ফরয দায়িত্ব পালন বাদ দিয়ে দুনিয়াদারের মতো ব্যবসা বানিজ্য, কৃষি কাজ ইত্যাদি দুনিয়াবী বিষয়াদি নিয়ে লিপ্ত থাকা ওই ব্যাক্তির কাজ হতে পারে না, যে দাবী করে যে, সে মুসলীম (আল্লাহর কাছে আত্বসমর্পণকারী)।الله اعلم بالصواب

# ছওবান রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেছেন- لأَعْلَمَنَّ أَقْوَامًا مِنْ أُمَّتِي يَأْتُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِحَسَنَاتٍ أَمْثَالِ جِبَالِ تِهَامَةَ بِيضًا فَيَجْعَلُهَا اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ هَبَاءً مَنْثُورًا . قَالَ ثَوْبَانُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ صِفْهُمْ لَنَا ، جَلِّهِمْ لَنَا أَنْ لاَ نَكُونَ مِنْهُمْ وَنَحْنُ لاَ نَعْلَمُ ، قَالَ : أَمَا إِنَّهُمْ إِخْوَانُكُمْ وَمِنْ جِلْدَتِكُمْ وَيَأْخُذُونَ مِنَ اللَّيْلِ كَمَا تَأْخُذُونَ وَلَكِنَّهُمْ أَقْوَامٌ إِذَا خَلَوْا بِمَحَارِمِ اللَّهِ انْتَهَكُوهَا . أخرجه ابن ماجه: رقم ٤٢٤٥, و قال البوصيري في الزوائد : ١/٢٦٢ هذا إسناد صحيح رجاله ثقات, وقال المنذري: ٣/١٧٨ : رواه ابن ماجه ورواته ثقات; وصححه الألباني في صحيح ابن ماجه و في السلسلة الصحيحة: ٢/١٨ رقم ٥٠٥ – ‘আমি আমার উম্মতের মধ্যে এমনসব গোষ্ঠির কথা জানি, যারা কেয়ামতের দিন তিহামাহ’র সাদা পাহাড়ের সমান নেক আমল নিয়ে আসবে, তবে আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা ওগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধুলা বানিয়ে দিবেন’। সওবান রা. বললেন: ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাদের কাছে তাদের বৈশিষ্ট বর্ণনা করুন, আমাদেরকে তাদের হাল-অবস্থা বর্ণনা করুন, যাতে আমরা আমাদের অজান্তেই তাদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে না যাই’। রাসুলুল্লাহ ﷺ বললে: বস্তুতঃ ওরাও হবে তোমাদেরই (মুসলমান) ভাইরা, তাদের চামড়াও হবে তোমাদের মতোই। তোমরা রাত’কে যেভাবে গ্রহন করো, তারাও (সেভাবে) গ্রহন করবে। কিন্তু তারা হবে এমনসব গোষ্ঠি যে, তারা যখন আল্লাহ’র হারামকৃত বিষয় নিয়ে একাকিত্ব হবে, তখন তারা তা লঙ্ঘন করে বসবে’। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৪২৪৫]

ফায়দা: যেসকল মুসলীম নর-নারী নামায রোযা নিয়মিত আদায় করেন, সাথে সুযোগ পেলে গোপনে পর্ণ বা ফাহেশা ছবি ও ভিডিও দেখেন, তাদের জন্য এই হাদিসে বিশেষ সতর্কবাণী রয়েছে। الله اعلم بالصواب

MuslimPoint Organization

About MuslimPoint Organization

MuslimPoint একটি অনলাইন ভিত্তিক ইসলামী প্রশ্নোত্তর, গ্রন্থাগার, ব্লগিং, কুরআন, হাদিস, কুইজ এবং বিষয় ভিত্তিক রেফারেন্স প্ল্যাটফর্ম।

View all posts by MuslimPoint Organization →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *