ব্যাখ্যা ও উদাহরণসহ কেয়ামতের আলামত ও ভবিষ্যতবাণী পর্ব-৪

কেয়ামতের-আলামত-ও-ভবিষ্যতবাণী
ব্যাখ্যা ও উদাহরণসহ কেয়ামতের আলামত ও ভবিষ্যতবাণী

[প্রথমেই বলে রাখি কিয়ামতের জ্ঞান শুধুমাত্র আল্লাহ’র কাছে আছে ।
‘(হে নবী মুহাম্মাদ!) মানুষ তোমাকে কিয়ামত (কবে হবে, সে) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। তুমি বলো, এর (একেবারে সঠিক) জ্ঞান শুধুমাত্র আল্লাহ’র কাছে আছে। আর (হে নবী !) তুমি কি জানো, কিয়ামত (ঘটার) সম্ভাবনা নিকটে চলে এসেছে !’ [সূরা আহযাব ৬৩]
এখানে শুধুমাত্র হাদিস ও কিছু অনুমানের ভিত্তিতে আমরা কিয়ামতের আলামতগুলো ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি । সুতরাং এখানের সকল বক্তব্য কে আমরা কখনো চূড়ান্ত বলে মনে করি না । এগুলো শুধু উল্লেখ করছি, যাতে এই রেওয়ায়েতসমূহে বর্ণিত কোনো ঘটনা ঘটতে দেখলে তা চিনে নিতে পারেন এবং রেওয়াতের হক্ব আদায় করতে পারেন।
উল্লেখ্য, যেহুতু হয়তো এখানে বর্ণিত অল্প কিছু হাদিসের সনদগত ও অন্যান্য দূর্বলতা থাকতে পারে তাই এখানে উল্লেখিত হাদিসসমূহ কোনো বিজ্ঞ মুহাদ্দেস আলেমের পরামর্শ ব্যাতীত কারো কাছে বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছি।]

# সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- سيكون قوم يأكلون بألسنتهم كما يأكل البقر من الأرض . رواه البيهقي في شعب الإيمان : ٤/٢٥٢ رقم ٤٩٧٦ و قال مختر احمد في الجامع لشعب الإيمان : ٧/٤٦ رقم ٤٦٢٢ : اسناده – رجاله ثقات ; و أحمد في مسنده : ١/٧٥ ; و البغوي في شرح السنة : ١٢/٣١٨ رقم ٣٣٩٧ ; و ابو الشيخ في الأمثال : رقم ٢٩٢ ; و ابن ابي عاصم في الجهد : رقم ٢٨٠ ; و عبد الرزاق في مسنفه : ١١/٤٥٩ رقم ٢١٠٠٢ مختصرا ; و البزار كما في “كشف الأستار: ٢/٤٤٨ رقم ٢٠٨٠ و ٢٠٨١ ; و قال الألباني في السلسلة الصحيحة : ١/٧٧٩ رقم ٤١٩ : جملة القول أن الحديث بهذه الطرق حسن إن شاء اللَّه أو صحيح ، فإن له شاهدا من حديث عبد اللَّه بن عمرو – “অতি শীঘ্রই (এমন) গোষ্ঠি আসবে, (যারা) তাদের জিহবা দিয়ে এমন ভাবে ভক্ষন করবে, যেমনি ভাবে গরু জমি থেকে ভক্ষন করে থাকে”। [শুয়াবুল ইমান, বাইহাকী- ৪/২৫২ হাদিস ৪৯৭৬; মুসনাদে বাযযার: কাশফুল আসতার, হাইছামী- ২/৪৪৮ হাদিস ২০৮১; মুসনাদে আহমদ- ১/১৭৫; আল-মুসান্নাফ, আব্দুর রাজ্জাক- ১১/৪৫৯ হাদিস ২১০০২; আয-যুহদ, ইবনু আবি আসিম, হাদিস ২৮০; আল-আমছাল, আবু শায়েখ, হাদিস ২৯২; শারহুস সুন্নাহ, ইমাম বগভী- ১২/৩১৮ হাদিস ৩৩৯৭]

ফায়দা: অন্য সূত্রে এসেছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- لا تقوم الساعة حتى يخرج قوم يأكلون بألسنتهم كما تأكل البقرة بألسنتها . رواه أحمد في مسنده : ١/١٨٣ ; و قال الهيثمي في مجمع الزوائد : ٨/١١٦ : و رجاله رجال الصحيح إلا أن زيد بن أسلم لم يسمع من سعد والله أعلم . و حسنه الألباني في السلسلة الصحيحة : ١/٧٧٩ رقم ٤١٩ – “কেয়ামত কায়েম হবে না, যাবৎ না (এমন) গোষ্ঠি বেড় হয়, (যারা) তাদের জিহবা দিয়ে এমন ভাবে ভক্ষন করবে, যেমনি ভাবে গাভী তার জিহবা দিয়ে ভক্ষন করে থাকে”। [মুসনাদে আহমদ- ১/১৮৩; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৮/১১৬]

এখানে ‘জিহবা দিয়ে গরুর মতো করে খাওয়া’র কয়েকটি অর্থ হতে পারে।

(১) আরবীতে বলা হয় اكل الربا (সুদ খাওয়া)। আমরাও বলে থাকি ‘অমুকে সুদ খায়’ । অথচ বাস্তবে কেউ সূদের টাকাপয়সা চিবিয়ে খেয়ে উদরপূর্তি করে না। বরং সে দেনাদারের কাছে থেকে সূদের অর্থ নিয়ে তা নিজে কিংবা পরিবার পরিজনের জন্য ব্যয় ও ব্যবহার করে বা অন্য কাজে লাগায়। তাসত্ত্বেও বলা হয় ‘সে সূদ খায়’। একই ভাবে উপরোক্ত হাদিসে ‘জিহবা দিয়ে গরুর মতো খাওয়া’র অর্থ হতে পারে হালাল হারাম বাছবিচার না করে সামনে যা আসে হাতিয়ে নেয়া এবং গরুর যেমন অল্প খেয়ে পেট ভরে না, তেমনি হয়তো ওই সকল ব্যাক্তিদেরও অল্প অর্থে মন ভরবে না, বরং কাড়ি কাড়ি অর্থের মালিক হতে চাইবে -চাই তা যে পন্থায়েই উপার্জিত হোক না কেনো। যেমন, হযরত আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ، لاَ يُبَالِي المَرْءُ مَا أَخَذَ مِنْهُ، أَمِنَ الحَلاَلِ أَمْ مِنَ الحَرَامِ . رواه البخاري في الصحيح, كتاب البيوع, باب من لم يبال من حيث كسب المال: حديث رقم ٢٠٥٩; و النسائي في سننه: رقم ٤٤٥٤; و أحمد في المسند: ٢/٤٣٥; و و الدارمى في سننه: رقم ٢٥٣٦ – ‘মানুষের উপর এমন একটি জামানা আসবে, যখন কেউ এতে ভ্রুক্ষেপ করবে না যে, সে যা গ্রহন করেছে -তা হালালের অন্তর্ভূক্ত, না হারামের’। [সহিহ বুখারী, হাদিস ২০৫৯; সুনানে নাসায়ী, হাদিস ৪৪৫৪; মুসনাদে আহমদ- ২/৪৩৫; সুনানে দারেমী, হাদিস ২৫৩৬]

(২) ধ্বনসম্পদের মালিক হওয়ার উপায় হিসেবে নিজের বাকপটুতা ও যাদুময়ী কথার সাহায্য নেয়া এবং মিথ্যা কথা, মিথ্যা ওয়াদা ও প্রতারণার জালে ফেলে জনগণের ধ্বনসম্পদ হাতিয়ে নেয়া। সমাজের বিভিন্ন স্তরের লোকজনের মাঝে এরকম অগণীত লোক রয়েছে, যারা তাদের জবানকে কাজে লাগিয়ে মানুষের ধ্বনসম্পদ হাতিয়ে নেয়। যেমন: নেতা ও শাসক শ্রেণিদেরকে দেখা যায় তারা বিভিন্ন ভাবে জনগণের সামনে মিথ্যা কথা বলে, মিথ্যা ওয়াদা করে ক্ষমতায় যায়, তারপর ক্ষমতা পেয়ে বিপুল পরিমাণে সরকারী অর্থ হাতিয়ে নিয়ে নিজেদের আখের গোছায়। যেমন, কা’ব বিন উযরা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেছেন- إنها ستكون عليكم أمراء من بعدي يعظون بالحكمة على منابر فإذا نزلوا اختلست منهم وقلوبهم أنتن من الجيف . رواه الطبراني. قال الهيثمي:٥/٤٢٩: و رجاله ثقات – ‘ নিশ্চই আমার পর অচিরেই তোমাদের উপর এমন শাসকরা আসবে, যারা মঞ্চে দাঁড়িয়ে গুঢ়গভীর বক্তৃতা দিবে। তারা পরে যখন (মঞ্চ থেকে) নামবে, তখন তাদের থেকে (ধনসম্পদ) আত্মসাৎ করবে। তাদের অন্তরগুলো হবে মড়া প্রাণীর চাইতেও দূর্গন্ধময়’। [ত্বাবরাণী: মাজমাউয যাওয়ায়ীদ- ৫/৪২৯]

একই ভাবে আপনারা দেখেন ও শুনে থাকেন যে, বিভিন্ন প্রতারক শ্রেণি তাদের বাকপটু যাদুময়ী কথার নিপুনতায় ভরপুর ভেলকিতে ‘মোবাইল কোম্পানী থেকে পুরষ্কারের নামে’, ‘জ্বীন বাবার ভয় দেখিয়ে’, ‘ভুয়া অনলাইন প্রেমিক সেজে’, ‘ভুয়া বা প্রতারণামূলক এডভারটাইমেন্ট ও মার্কেটিং করে’, ‘ভুয়া বিয়েশাদি করে’ -কত শত পন্থায় মানুষের কত বিপুর পরিমাণ অর্থসম্পদ হাতিয়ে নিয়ে চলেছে। এরাও এই উদাহরণের অন্তর্ভূক্ত হতে পারে।

আব্দুল্লাহ বিন আমর রা.-এর সূত্রে এসেছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- إِنَّ اللهَ يُبْغِضُ البَلِيغَ مِنَ الرِّجَالِ الَّذي يَتَخَلَّلُ بِلِسَانِهِ كَمَا تَتَخَلَّلُ البَقَرَةُ . اخرجه الترمذي في سننه , كتاب الأدب : ٥/١٢٩ رقم ٢٨٥٣ ; و أبو داود في سننه , كتاب الأدب : ٤/٣٠١ رقم ٥٠٠٥ ; و أحمد في مسنده : ٢/١٦٥ و ١٨٧ ; قال ابن مفلح في الآداب الشرعية : ٢/٩١ : : إسناده جيد و حسنه شعيب الأرناؤوط , و صححه الألباني في صحيح أبي داود و صحيح الترمذي ; رواه ايضا ابن أبي شيبة في مصنفه : ١٣/٤٠٩ رقم ٢٦٨٢٢ ; و البيهقي في شعب الإيمان : ٤/٢٥١ رقم ٤٩٧٢ – “নিশ্চই আল্লাহ লোকদের মধ্যে (এমন) বাকপটু ব্যাক্তিকে ঘৃনা করেন, যে তার জবানকে এমন ভাবে চালনা করে, যেভাবে গাভী (তাদের খাবারের সময় জবানকে) চালায়”। [সুনানে তিরমিযী– ৫/১২৯ হাদিস ২৮৫৩; সুনানে আবু দাউদ- ৪/৩০১ হাদিস ৫০০৫; আল-মুসান্নাফ, ইবনু আবি শায়বাহ– ১৩/৪০৯ হাদিস ২৬৮২২; মুসনাদে আহমদ- ২/১৬৫, ১৮৭; শুয়াবুল ইমান, বাইহাকী- ৪/২৫১ হাদিস ৪৯৭২]

(৩) আরেকটা অর্থ হতে পারে, এত অস্বাভাবিক মাত্রায় দৃষ্টিকটু ভাবে খাওয়া, যেমনটা গরু তার চিহবাকে চালিয়ে অস্বাভাবিক মাত্রায় খেয়েই চলে যাবত না তার উদরপূর্তি হয়। আমি ইন্টারনেটে ঘাটাঘাটি করে এই শেষ জামানায় এমন সব মানুষের খোঁজ পেয়েছি, যারা কয়েকজনের খাবার অবিশ্বাস্য ভাবে একাই খেতে পারে, যাদেরকে দেখে মনে হয়, তাদের পেটগুলো খাবার ধারণ করার জন্য ঠিক গরুর পেটের মতো প্রশস্ত। ওরা হল বিভিন্ন দেশের প্রফেশনাল ইউটিউবার, যারা তাদের চ্যানেলগুলো সম্ভবত: এজন্যই তৈরী করেছে যে, তারা তাদের অবিশ্বাস্য মাত্রায় বিভিন্ন খাবার খাওয়ার সক্ষমতা দেখাবে এবং এর দ্বারা চ্যানেল থেকে ইউটিউবের নিয়মে ভাল অংকের অর্থ আয় করবে। এভাবে অর্থ ইনকামে বাহ্যত: দোষের কিছু নেই। মুসলীম ইউটিউবারদের উচিৎ হবে, হালাল খাদ্য খাওয়া। সে যাই হোক, উপরের মূল হাদিসের ইংগীত কিছুটা এই শেষ জামানার এসকল ব্যাক্তির এদিকেও হতে পারে। কেয়ামতের আলামত হওয়ার অর্থ সব সময় ‘মানুষের নিগেটিভ’ অবস্থা ব্যক্ত করা হয় না, বরং ‘চোখে পড়ার মতো পজেটিভ বিশেষ কিছুও উদ্দেশ্য হয়ে থাকে’, যা থেকে উম্মাহ বুঝে নিবে যে, অমুক ভবিষ্যতবাণীটি পূরণ হতে চলেছে বা হয়ে গেছে। [কিছু নমুনা দেখতে এখানে ক্লিক করুন: ১, ২, ৩, ৪]

যা হোক, আমার মতে, উপরের রেওয়ায়েথটির যতগুলো ব্যাখ্যা দেয়া হল, তার সবগুলোই আমাদের এই শেষ জামানায় পূরণ হয়ে গেছ। الله اعلم بالصواب

# আনাস রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- إِنَّ مِنَ اقْتِرَابِ السَّاعَةِ أَنْ يَفْشُوَ الْفَالِجُ , وَمَوْتُ الْفَجْأَةِ . أخرجه العقيلي في الضعفاء: ٤/١٩٥ ، وأبو بكر الدينوري في المجالسة وجواهر العلم : ٧/٢٨٣ ، وابن عدي في الكامل : ٣/١٠٨ ; اخرجه عبد الرزاق ايضا في المصنف , كتاب الجنائز , باب موت الفجاءة : ٣/٥٩٧ رقم ٦٧٨٠ اسناده ضعيف جدا كما في زوائد مصنف عبد الرزاق على الكتب الستة لد. جلال الدين عزوة : ١/٥٩٧ رقم ٤٧٨٦ ; – ‘নিশ্চই কেয়ামত যখন নিকেটে চলে আসবে, তখন প্রচুর পরিমাণে অবশ (হওয়ার রোগ) ও হঠাৎ-মৃত্যু (হওয়ার মতো ঘটনা) ঘটবে’। [আল-জুআফা, ইমাম উকাইলী- ৪/১৯৫; আল-মাজালিসাহ, ইমাম দিনুরী- ৭/২৮৩; আল-মুসান্নাফ, ইমাম আব্দুর রাজ্জাক– ৩/৫৯৭ হাদিস ৬৭৮০]

হঠাৎ-মৃত্যু-হার্ট-এটাক প্যারালাইসিস শেষ জামানা

ফায়দা: ‘কেয়ামতের নিকটবর্তী’ সময়ে বলতে এখানে আমাদের এই ‘শেষ জমানা’ উদ্দেশ্য। আর বোঝাই যাচ্ছে যে, এখানে শরীর অবশ হওয়ার রোগ বলতে ‘প্যারালাইসিস’ রোগ, এবং ‘হঠাৎ-মৃত্যু’ বলতে ‘হঠাৎহার্ট এ্যাটাকে মৃত্যু’ উদ্দেশ্য। এই রেওয়ায়েতের সনদে শক্ত কালাম অবশ্যই রয়েছে, কিন্তু এই ভবিষ্যৎবাণীটি আমাদের এই শেষ জামানায় এতটাই বাস্তব সম্মত ভাবে প্রমাণিত যে, একে কোনো সচেতন মানুষ অস্বীকার করতে পারবে না। الله اعلم بالصواب

# আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ : سُوءُ الْجِوَارِ ، وَقَطِيعَةُ الأَرْحَامِ ، وَتَعْطِيلُ السَّيْفِ مِنَ الْجِهَادِ ، وَأَنْ تُخْتَلَ الدُّنْيَا بِالدِّينِ . أخرجه ابن أبي الدنيا في مكارم الأخلاق، واختلافهم : رقم ٣٥٤ ; و محمد بن سليمان لوين المصيصي في جزء: رقم ١٠٤; و أبو نعيم الأصبهاني في أخبار أصبهان : ١/٣٢٥ ; و اورده السيوطي في فى الدر المنثور لالسيوطي: ٧/٤٦٨ و قال رواه ابن مردويه، والديلمي ; سنده ضعيف جدا – ‘কেয়ামতের লক্ষনসমূহের মধ্যে রয়েছে- মন্দ প্রতিবেশিত্ব, রক্তসম্পর্ক কর্তন, জিহাদ থেকে তরবারী (’র ব্যবহার) উঠে যাওয়া। এবং এও রয়েছে যে, (তখন) দ্বীনের (অসৎ ব্যবহারের) মাধ্যমে দুনিয়া(-র মানুষকে)কে প্রতারিত করা হবে’। [মাকারিমুল আখলাক, ইবনু আবিদ্দুনিয়া, হাদিস- ৩৫৪; যুজ, ইবনু সুলাইমান, হাদিস- ১০৪; আখবারু ইসবাহান, আবু নুআইম- ১/৩২৫; মুসনাদুল ফিরদাউস, দাইলামী- ১৯১; তালখিসুল মুতাশাবেহ, খতিব- ১/১৭৮ হাদিস ৮৮; মারদুওয়াই: আদ-দুররুল মানসুর, সুয়ূতী- ৭/৪৬৮ ; কানজুল উম্মাল- ১৪/২৪০ হাদিস ৩৮৫৫৮]

জিহাদ-থেকে তরবারীর ব্যবহার উঠে যাবে
ফায়দা: এই রেওয়ায়েতের সনদে শক্ত কালাম রয়েছে। তবে এখানে এমন একটি বিশেষ আলামতের কথা বর্ণিত হয়েছে, যা প্রমাণ করে যে, এটি রাসুলুল্লাহ ﷺ থেকে আগত একটি ইলমী রত্নে অংশ, যা উক্ত মুহাদ্দেসগণের কাছে পৌছেছে। আর সেটা হল- تَعْطِيلُ السَّيْفِ مِنَ الْجِهَادِ – ‘জিহাদ থেকে তরবারী (’র ব্যবহার) উঠে যাওয়া’। আমি এখানে এই ইতিহাসের দিকে যাচ্ছি না যে, কে/কারা প্রথম বন্দুক আবিষ্কার করে এবং কখন তা যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়। অমুসলীমরা মুসলমানদের অনেক আগেই যুদ্ধে বন্দুক ও কামান ব্যবহার শুরু করেছে। তবে মুসলমানদের ‘জিহাদ’-এর কথা বলতে গেলে বলতে হয়, গত দু’শ বছর আগেও তৎকালীন ভারত উপমহাদেশে মুসলমানগণ কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার সময় তরবারী ব্যবহার করছিলেন। টিপু সুলতান (মৃ: ১৭৯৩ ইং), তিতুমীর (মৃ: ১৮৩১ ইং), শাহ আহমাদ শহীদ (মৃ: ১৮৩১ ইং) রহ.প্রমুখের ইতিহাস কমবেশি অনেকেই জানেন, যারা কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় ঢাল-তলোয়ার, তীর-বল্লম ইত্যাদির মত সনাতন যুদ্ধাস্ত্রাদি দিয়ে যুদ্ধ করেছেন। অথচ তিতুমীর রহ. যে বাঁশের কেল্লায় ছিলেন, সেটাকে ব্রিটিশরা কামান দিয়ে উড়িয়ে দেয়। কিন্তু আজ এমন এক অত্যাধুনিক জামানা অতিবাহিত করছি, যখন যুদ্ধক্ষেত্রে মুসলীম-অমুসলীম কেউই ঢাল-তরবারীর কথা চিন্তাও করতে পারে না। এটাই সেই যুগ, যখন পৃথিবীর যুদ্ধ ক্ষেত্রগুলি থেকে তরবারীর ব্যবহার বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং তার স্থান দখল করে নিয়েছে অত্যাধুনিক সব মেশিনগান, ট্যাঙ্ক, জঙ্গি বিমান, জঙ্গি জাহাজ, ড্রোন, মিসাইল ও পারোমানুবিক বোমের মতো কিংকর্তব্যবিমূরকারী সব মারনাস্ত্র। কোনোই সন্দেহ নেই যে, تَعْطِيلُ السَّيْفِ مِنَ الْجِهَادِ – ‘জিহাদ থেকে তরবারী (’র ব্যবহার) উঠে যাওয়া’ ভবিষ্যৎবাণীটি আমাদের এই শেষ জামানার দিকে ইশারা করেই করা হয়েছে। অতীব নিকট ভবিষ্যতে ইমাম মাহদী রা.-ই হবেন ইসলামী ইতিহাসের প্রথম খলিফায়ে-রাশেদ, যিনি ও তাঁর অনুসারী মুজাহিদগণ যথাসাধ্য একালের আধুনিক অস্ত্রই ব্যবহার করবেন, ইনশাআল্লাহ।

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   বাবরি মসজিদ নাকি রাম মন্দির ? ইতিহাস কি বলে ? বিস্তারিত ।

হাদিসটির দ্বিতীয় বিষয়টি হল- أَنْ تُخْتَلَ الدُّنْيَا بِالدِّينِ – ‘দ্বীনের (অসৎ ব্যবহারের) মাধ্যমে দুনিয়া(-র মানুষকে)কে প্রতারিত করা হবে’। এসম্পর্কে হযরত আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- يَخْرُجُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ رِجَالٌ يَخْتِلُونَ الدُّنْيَا بِالدِّينِ يَلْبَسُونَ لِلنَّاسِ جُلُودَ الضَّأْنِ مِنَ اللِّينِ، أَلْسِنَتُهُمْ أَحْلَى مِنَ السُّكَّرِ، وَقُلُوبُهُمْ قُلُوبُ الذِّئَابِ، يَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: أَبِي يَغْتَرُّونَ، أَمْ عَلَيَّ يَجْتَرِئُونَ؟ فَبِي حَلَفْتُ لَأَبْعَثَنَّ عَلَى أُولَئِكَ مِنْهُمْ فِتْنَةً تَدَعُ الحَلِيمَ مِنْهُمْ حَيْرَانًا. رواه الترمذى:٤/٥٢٢ رقم ٢٤٠٤; في سنده يحيى بن عبيد الله بن عبد الله بن موهب قال الذهبي ضعفوه وقال أحمد في أبيه أحاديثه مناكير;و البغوي فى شرح السنة: ٧/٣٩٠; سعيد بن منصور فى السنة:١/٨٣٠ رقم ٣٦١; و ابن عبد البر فى جامع بيان العلم: ١١٤٠ – ‘আখেরী জামানায় এমন এমন লোকজন বেড় হবে, যারা (দুনিয়ার স্বার্থে) দ্বীন (ইসলামকে) ব্যবহার করে দুনিয়া (-র মানুষজন)কে প্রতারিত করবে, তারা মানুষের সামনে ভেড়ার নরম চামড়া পরিধান করবে, তাদের কথাবার্তা হবে চিনির চেয়েও মিঠা, (কিন্তু) তাদের অন্তরগুলো হবে একেকটা (হিংস্র) নেকড়ের অন্তর। আল্লাহ তাআলা বলবেন: তারা কি (আমার ঢিল দানে ) প্রতারিত হয়ে আছে, নাকি আমার বিরুদ্ধে দুঃসাহস দেখাচ্ছে? আমি আমার শপথ নিচ্ছি, আমি তাদের এসব লোকদের উপর অবশ্যই এমন ফিতনা পাঠিয়ে দিবো যে, তাদের মধ্যে ধৈর্যশীল ব্যাক্তিকেও (তা) দিশেহারা করে তুলবে’। [সুনানে তিরমিযী- ৪/৫২২, হাদিস ২৪০৪; শারহুস সুন্নাহ, বাগাভী- ৭/৩৯০; সুনানে সাঈদ বিন মানসুর- ১/৮৩, হাদিস ৩৬১; জামেউ বায়ানিল ইলম, ইবনু আব্দিল বার- ১১৪০] আরেক রেওয়ায়েতে আছে- إِذَا لَبِسُوا مُسُوكَ الضَّأْنِ ، قُلُوبُهُمْ أَنْتَنُ مِنَ الْجِيفَةِ ، وَأَمَرُّ مِنَ الصَّبْرِ ، يُغَشِّيهِمُ اللَّهُ فِتْنَةً يَتَهَاوَكُونَ فِيهَا تَهَاوُكَ الْيَهُودِ الظَّلَمَةِ – ‘…যখন (দেখবে যে, লোকেরা) ভেড়ার চামড়া পরিধান করছে, তাদের অন্তরগুলো মৃতপ্রাণির চাইতেও দুর্গন্ধযক্ত হয়ে গেছে, শক্ত বস্তুর চাইতেও কঠিন হয়ে গেছে, তখন আল্লাহ তাদেরকে এমন ফিতনা’য় নিক্ষেপ করবেন যে, তারা তাতে এমনভাবে উৎভ্রান্ত হয়ে ফিরবে, যেভাবে জালেম ইহূদী উৎভ্রান্ত হয়ে ফিরে। [হিলইয়াতুল আউলিয়াহ, আবু নুআইম- ৩/৩৫৮, হাদিস ৪৫৫৫] এই রেওয়ায়েতটি বিস্তারিত নিচে আসছে। الله اعلم بالصواب

# আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- إِذَا اتُّخِذَ الفَيْءُ دُوَلًا، وَالأَمَانَةُ مَغْنَمًا، وَالزَّكَاةُ مَغْرَمًا، وَتُعُلِّمَ لِغَيْرِ الدِّينِ، وَأَطَاعَ الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ، وَعَقَّ أُمَّهُ، وَأَدْنَى صَدِيقَهُ، وَأَقْصَى أَبَاهُ، وَظَهَرَتِ الأَصْوَاتُ فِي المَسَاجِدِ، وَسَادَ القَبِيلَةَ فَاسِقُهُمْ، وَكَانَ زَعِيمُ القَوْمِ أَرْذَلَهُمْ، وَأُكْرِمَ الرَّجُلُ مَخَافَةَ شَرِّهِ، وَظَهَرَتِ القَيْنَاتُ وَالمَعَازِفُ، وَشُرِبَتِ الخُمُورُ، وَلَعَنَ آخِرُ هَذِهِ الأُمَّةِ أَوَّلَهَا، فَلْيَرْتَقِبُوا عِنْدَ ذَلِكَ رِيحًا حَمْرَاءَ، وَزَلْزَلَةً وَخَسْفًا وَمَسْخًا وَقَذْفًا وَآيَاتٍ تَتَابَعُ كَنِظَامٍ بَالٍ قُطِعَ سِلْكُهُ فَتَتَابَعَ . أخرجه الترمذي: كتاب الفتن: ٤/٤٩٥ رقم ٢٢١١ وقال: هذا حديث غريب; و الخطيب في تاريخه: ٣/١٥٧ ; ابن أبي الدنيا: ٦/٤١ – ‘যখন ফাই’কে (নিজের ব্যাক্তিগত) সম্পদ হিসেবে গ্রহন করা হবে, আমানতকে গণীমত হিসেবে (গ্রহন করে তার খেয়ানত করা হবে) , যাকাতকে জরিমানা (মনে করা হবে), (আল্লাহ’র) দ্বীন ভিন্ন অন্য কিছুর জন্য (যেমন নিছক পার্থিব উন্নতি ও সুখ-শান্তির জন্য) শিক্ষা গ্রহন করা হবে, পুরুষ তার স্ত্রীর অনুগত্য করবে আর মা’র (অকৃতজ্ঞ ও) অবাধ্য হবে, বন্ধুকে (তুলনামূলক) কাছে টানবে আর পিতা’কে দূরে ঠেলে দিবে, মসজিদগুলোতে (মুমিন-মুসলমানদের উপর মুনাফেক ও ফাসেক-ফাজের লোকগুলির দৌরাত্ব ও) গলার আওয়াজ প্রকাশ পাবে, কবীলাহ (জেলা/উপজেলা/গ্রাম/অঞ্চল)গুলোর মাথা/(মাতব্বর গোছের) মুরুব্বি’ হবে তাদের ফাসেক (পাপিষ্ট, স্বভাব-চরিত্রে পঁচন ধরা বদ) লোকগুলি, জাতি/গোত্রে’র নেতা হবে তাদের ছোটলোকগুলি, কোনো মানুষকে সম্মান করা হবে তার অনিষ্টতার ভয়ে, (কন্ঠ ও শরীরের দিকে আকৃষ্ট কারীনী) গায়ীকা ও বাদ্যযন্ত্র (সমেত গান-বাজনার মহল উল্লেখযোগ্য মাত্রায়) প্রকাশ পাবে, (প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে) মদ পান করা হবে, এই উম্মাতের শেষ দিককার (এক শ্রেণির) লোকজন তার প্রথম দিককার লোকদেরকে লা’নত দিবে। (যখন এসব ঘটতে দেখবে), তখন তোমরা লু’হাওয়া, ভূমিকম্পন, খাসফ (ভূমিধ্বস), মাসখ (আকৃতির বিকৃতি) ও ক্বায্ফ (বর্ষন) -এর প্রতীক্ষায় থেকো। আলামতগুলি একটি আরেকটিকে অনুসরণ করবে যেমনি ভাবে মালার সুতা কেটে গেলে (তার পুঁথিদানাগুলো) একটি আরেকটিকে অনুসরণ করে (ঝড়ে পড়ে)’। [সুনানে তিরমিযী- ৪/৪৯৫ হাদিস ২২১১; তারিখে বাগদাদ, খতীব- ৩/১৫৭; ইবনে আবিদ্দুনিয়া- ৬/৪১]

ফায়দা: আমার মতে, এই হাদিসে শেষ জামানার উম্মাহ’র ইমান-আমলের অধঃপনের বিশেষ কিছু নমুনা দেয়া হয়েছে, যেগুলোতে উম্মাহ ব্যাপকভাবে লিপ্ত হলে বোঝা যাবে যে, কেয়ামত অতীব নিকটে এসে গেছে। সচেতন সকলেই জানে যে, মুসলীম উম্মাহ এই শেষ জামানায় এসে হাদিসটিতে বর্ণিত সবগুলো পাপের সাথেই নিজেদেরকে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় জড়িয়ে নিয়েছে। মনে রাখা দরকার, আল্লাহ তাআলা যাকে-তাকে যখন-তখন তাঁর আযাবে গ্রেফতার করেন না, বরং তাঁর কাছে নেকি ও পাপের পরিমাপ/দাড়িপাল্লা রয়েছে এবং রয়েছে পাপে গ্রেফতারের নিজেস্ব সুন্নাহ/নীতি। তিঁনি যখন কোনো গোষ্ঠিকে তাদের এক বা একাধিক পাপের কারণে আযাবে গ্রেফতার করেন, তখন বুঝে নিতে হবে যে, ওই গোষ্ঠিটি তাদের ওই পাপের সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে এবং আল্লাহ তাআলা তাঁর ওয়াদা অনুসারে তাদেরকে আযাবে গ্রেফতার করে ফেলেছেন। আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- يكون في آخر هذه الأمة خسف ومسخ وقذف . قالت: قلت: يا رسول الله، أنهلك وفينا الصالحون؟ قال: ” نعم، إذا ظهر الخبث. أخرجه الترمذي: كتاب الفتن – باب ما جاء في الخسف: ٤/٤٧٩ وقال: هذا حديث غريب، والحديث صححه الألباني. صحيح الجامع: ٢/١٣٥٥ – ‘এই উম্মতের শেষভাগে খাসফ (ভূমিধ্বস), মাসখ (আকৃতি-বিকৃতি) এবং ক্বাযফ হবে’। তিনি বলেন: আমি বললাম – ইয়া রাসুলুল্লাহ ! আমাদের মধ্যে নেককার লোক থাকা সত্ত্বেও কি আমারা (তখন ভূমিধ্বসে) ধ্বংস হয়ে যাবো? রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: হ্যাঁ, (এমন ঘটবে তখন) যখন (সমাজে) খাবাসাত (অশ্লীলতা, নোংরামী, বদচরিত্র এবং এসবের উপকরণ) ব্যাপক আকার ধারন করবে’। [সুনানে তিরমিযী- ৪/৪৭৯] মানুষ যখন উপরোক্ত পাপগুলোর সীমা অতিক্রম করে চলতে থাকবে এবং তওবার ধারধারবে না, তখন দেখা যাবে যে, পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে উল্লেখযোগ্য পরিমানে ভূমিকম্প, ভূমিধ্বস, দানবীয় ঘুর্নিঝড়, লু-হাওয়া ইত্যাদি উম্মাহ’র চরম পাপী গোষ্ঠিদের উপরে আযাব হিসেবে আছড়ে পড়ছে।

হাদিসটিতে বলা হয়েছে- إِذَا اتُّخِذَ الفَيْءُ دُوَلًا– ‘যখন ফাই’কে (নিজের ব্যাক্তিগত) সম্পদ হিসেবে গ্রহন করা হবে’। দুই ধরনের জিনিসকে শরীয়তের পরিভাষায় ‘ফাই’ বলে অবিহিত করা হয়ে থাকে: (১) স্বশস্ত্র জিহাদের সময় কাফেররা বিনা যুদ্ধে তাদের ধ্বনসম্পদ ফেলে পালিয়ে গলে উক্ত গণীমতকে ‘ফাই’ বলা হয়, (২) ইসলামী রাষ্ট্রের কোথাও এমন ভূ-গর্ভস্ত খনিজ সম্পদকেও ‘ফাই’ বলা হয়, যা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে আমানত স্বরূপ থাকে, যা জনগণের উপরার্থে ব্যবহারযোগ্য। আমার মতে, ‘ফাই’ বলতে এখানে ভূ-গর্ভস্ত খনিজ সম্পদকে বোঝানো হয়েছে, যেমন: খনিজ তেল, গ্যাস সোনা ইত্যাদি। আজ মুসলীম নামধারি অসৎ শাসক ও এলিট শ্রেণিরা তেল-গ্যাসের মতো মূল্যবান সরকারী খনিজ সম্পদ ও তা থেকে অর্জিত অর্থকে কত অন্যায্য কৌশলে নিজেদের স্বার্থ ও বিলাসীতায় অপব্যাবহার করছে -তা কে না জানে!

হাদিসটিতে আরো বলা হয়েছে- ظَهَرَتِ الأَصْوَاتُ فِي المَسَاجِدِ– ‘মসজিদগুলোতে (মুমিন-মুসলমানদের উপর মুনাফেক ও ফাসেক-ফাজের লোকগুলির দৌরাত্ব ও) গলার আওয়াজ প্রকাশ পাবে’। আজ এমন কোনো মসজীদ মনে হয় বাকি নেই, যার মুতাওয়াল্লি, সভাপতি ও সদস্যপদগুলো দখল করে আছে মহল্লার প্রকাশ্য হারামখোর (যেমন: সূদী ব্যাংকের বড় কর্মকর্তা, আত্বীয়স্বজন/অন্যের জমিজমা ও ধ্বনসম্পদ দখলকারী ইত্যাদি) বা মাস্তান পোষা মুরুব্বি/মাতব্বার/নেতা/পাতিনেতা অথবা চাঁদাবাজ কিংবা ওইসকল আধুনিক শিক্ষিত মুনাফেক মহল যারা এমন মতবাদে বিশ্বাসী যা সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ইসলামী শরীয়ত বিলুপ্তী চায় ! মুসল্লীদের বেশিরভাগের অবস্থাই একই। মসজিদে কুরআন-সুন্নাহ’র আলোকে ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা কিংবা শরয়াহ বিরোধী কোনো দেশীয় আইন বা ইসলাম বিরোধী কোনো মতবাদ (যেমন: ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, সমাজতন্ত্র ইত্যাদি) নিয়ে কোনো কথা বলতে ধরলেই মুসুল্লী ও মসজিদ কমিটির এই খবিস ফাসেক অংশটি মসজিদেই উচ্চবাচ্চ শুরু করে দেয়। কোথাও কোথাও ইমাম ও খতিব সাহেবকে হুমকি-ধমকী, মারধর, এমনকি বেড় করে দেয়ার বহু ঘটনা অহরহ ঘটছে। হাদিসে এসব মুনাফেক ও ফাসেক-ফাজেরদের গলার আওয়াজ উচু করার দিকেই ইশারা করা হয়েছে। যেমন, আতা বিন ইয়াসির রা. থেকে বর্ণিত রেওয়ায়েতে আছে- مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ عُلُوُّ صَوْتِ الْفَاسِقِ فِي الْمَسَاجِدِ . رواه عبد الرزاق في المصنف , كتاب الصلاة , باب تزيين المساجد والممر في المسجد : ٣/١٥٦ رقم ٥١٣٨– ‘কেয়ামতের লক্ষনসমূহের মধ্যে এও রয়েছে যে, মসজিদের মধ্যে ফাসেক ব্যাক্তির গলা উচ্চগ্রামে উঠবে’। [আল-মুসান্নাফ, ইমাম আব্দুর রাজ্জাক- ৩/১৫৬ হাদিস ৫১৩৮]

গাইকা-নারী-শেষ-জামানা মহানবীর ভবিষ্যৎবাণী

আরো বলা হয়েছে- ظَهَرَتِ القَيْنَاتُ وَالمَعَازِفُ– ‘(কন্ঠ ও শরীরের দিকে আকৃষ্ট কারীনী) গায়ীকা (রমণী) ও বাদ্যযন্ত্র (সমেত গান-বাজনার মহল উল্লেখযোগ্য মাত্রায়) প্রকাশ পাবে’। নারীর নাচ-গানের ফিতনা কম বেশি প্রত্যেক জামানাতেই ছিল; তবে তা ছিল অনেক অনেক ক্ষদ্র পরিসরে। কিন্তু আমরা এমন এক যুগে বাস করছি যখন দেশে দেশে, শহরে-গ্রামে, অলীতে-গালিতে, বাসার ভিতরে ছাদে, রাস্তায়, খোলা মাঠে, স্কুল-কলেজ-ভার্সিটিতে, পার্টিতে, নাটক থিয়েটারে, মুভি-সিনেমায় -এমন কোনো স্থান কি বাদ আছে, যেখানে ব্যাপক হারে নারী-পুরুষের নাচ-গান ও বাদ্যযন্ত্রের ঝনঝনানি থেকে কোনো দিন বাদ যায় ?! অমুসলীম দেশগুলো-তো ‘নারী গাইকা’ ফিতনার গুরু, যারা এ ফিতনাকে মুসলম সমাজে রপ্তানী করেছিল বহু আগেই। আর এখন-তো চলছে ‘নারী-স্বাধিনতা’র রমরমা মৌসুম, যার মধ্যে শুধু বেপর্দা মুসলীম নারীরাই নয়, খোদ (নামকা ওয়াস্তে) হিজাব/বোরকা পড়ে মুসলীম নারীরা একেবারে কনসার্ট করছে শুরু করেছে। এখন-তো খোদ বোরকা বহু আগে উন্নত টেকনোলজির কারণ এসব আজ এতটাই সহজলভ্য হয়ে গেছে যে, মানুষ টিভিতে, মোবইলে, ইন্টারনেট ওয়েবপেজে যখন মন চায় ‘চালু’ করে শোনে দেখে।

আর হাদিসে বর্ণিত لَعَنَ آخِرُ هَذِهِ الأُمَّةِ أَوَّلَهَا – ‘এই উম্মাতের শেষ দিককার (এক শ্রেণির) লোকজন তার প্রথম দিককার লোকদেরকে লা’নত দিবে’– বলতে সম্ভবতঃ ওইসকল শিয়া’দেরকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, যারা রাসুলুল্লাহ সা.-এর বহু সাহাবীগণকে বিশেষ করে হযরত আবু বকর সিদ্দিক রা., হযরত ওমর ফারুক রা.-এর মতো শ্রেষ্ঠ মর্তবার সাহাবীগণকে লা’নত (অভিশাপ) দান করাকে তাদের দ্বীনের অংশ বলে বিশ্বাস করে থাকে এবং লা’নত করে; এমন কি মদিনাতে সুযোগ পেলে রাসুলুল্লাহ সা.-এর দু’পার্শ্বে শায়ীত এই দুই মহান সাহাবীদ্বয়ের উপর লা’নত বর্ষন করে আসে। (নাউযুবিল্লাহী মিন যালিক) الله اعلم بالصواب

# আলী রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বর্ণনা করেছেন- ليأتين على الناس زمان؛ يطرى فيه الفاجر، ويقرب فيه الماحل، ويعجز فيه المنصف، في ذلك الزمان تكون الأمانة فيه مغنمًا، والزكاة فيه مغرمًا، والصلاة تطاولًا، والصدقة منا، وفي ذلك الزمان استشارة الإماء، وسلطان النساء، وإمارة السفهاء . رواه ابن المنادي كما جاء في جامع الأحاديث لجلال الدين السيوطي : ٣٢/٦١ رقم ٣٤٧١٢ ; و في إتحاف الجماعة بما جاء في الفتن والملاحم وأشراط الساعة : ٢/٣٨ ; اورده المتقي في كنز العمال : ١٤/٥٧٥ رقم ٣٩٦٤١ – ‘মানুষের উপরে অবশ্যই এমন জামানা আসবে, যখন ফাজের (পাপঘেঁষা খবিস কিসিমের) ব্যাক্তির (অমূলক) প্রশংসা করা হবে, প্রতারককে কাছে রাখা হবে, ইনসাফগার ব্যাক্তিকে (সামাজিক ভাবে) কোণঠাসা করে দেয়া হবে। ওই জামানায় এমন হবে যে, তখন (মানুষজনের দ্বীনদারিত্ব না থাকায় তাদের কাছে) আমানত হয়ে যাবে গণীমত (স্বরূপ, যা তারা নিজেদের ব্যাক্তিগত সম্পর্দের মতো ভোগ করবে। তাদের মধ্যে মুনাফেকী, বদদ্বীনীতা ও ভোগবাদীতা জেঁকে বসার কারণে শরীয়তে ফরযকৃত) যাকাত (-কে তাদের কাছে মনে) হবে জরিমানা (স্বরূপ), নামায হবে দীর্ঘায়িত (তবে অন্তসারশুন্য অথবা বারাবারি মূলক), (তারা যাও-বা কিছু) দান-সদকাহ (করবে, তা) হবে খোঁটাদানমূলক। সেই জামানায় বাদীর কাছে পরমর্শ চাওয়া হবে, নারী রাষ্ট্রপ্রধান হবে এবং মন্ত্রীরা হবে নির্বোধ’। [ইবনু মুনাদী: আল-জামেউল কাবির, ইমাম সুয়ূতী- ৩২/৬১ হাদিস ৩৪৭১২; কানজুল উম্মাল- ১৪/৫৭৫ হাদিস ৩৯৬৪১; ইতহাফুল জামাআহ – ২/৩৮]

ফায়দা: এই রেওয়ায়েতটি এবং উপরের তিরমিযীর রেওয়ায়েতটি একই জামানার বর্ণনা দিচ্ছে, যে জামানায় মানুষজন তার কাছে রক্ষিত আমানতের খেয়ানত করবে, যেন সে গণীমতের মধ্যে তার অংশ পেয়ে গেছে এবং সে তা নিজের মতো ব্যবহার করছে, এবং যে জামানায় তারা যাকাতকে জরিমানার মতো একটা আর্থিক শাস্তি বা বোঝা বলে মনে করবে। এটা ওই জামানা, যখন سلطان النساء – তথা ‘নারী হবে (দেশের) রাষ্ট্রপ্রধান’। ইসলামী শরয়তে নারী-রাষ্ট্রপ্রধান সম্পূর্ণ নাজায়েয -এর উপরে মুসলীম উম্মাহ’র ইজমা রয়েছে। মুসলীম উম্মাহ’র বিগত প্রায় ১৪৫০ বছরের ইতিহাসে শরীয়তের এই বিধানটিকে প্রথম পদদলিত করা হয় ১৯৮৬ ইং সালে ‘বেনজির ভুট্টো’কে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধান বানানোর মাধ্যমে। ১৯৯৩ ইং সালে আবার সে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধান হয়। খালেদা জিয়া ১৯৯১ ইং সালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান হয়। শেখ হাসিনা ১৯৯৬ ইং সালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান হয়। আমার জানা মতে, মুসলীম বলে দাবীদার নারীদের মধ্যে এই তিনজন ছাড়া (আজ ২২ এপ্রিল ২০১৯ ইং পর্যন্ত) চতুর্থ কোনো (মুসলীম দাবীদার) নারী এই উম্মাহর মধ্যে কোনো দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হয়নি। এ থেকে বোঝা গেল, এই ভবিষ্যৎবাণীটি আমাদের এই শেষ জামানার দিকে ইশারা করেই করা হয়েছে। الله اعلم بالصواب

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   নেতা, শাসক , মন্ত্রী, সৈন্য, কোষাধক্ষ, কর-উসূলকারী সম্পর্কে ব্যাখ্যা ও উদাহরণসহ কেয়ামতের আলামত ও ভবিষ্যতবাণী

# হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- حَدَّثَنَا أَبُو إِسْحَاقَ بْنُ حَمْزَةَ ، وَسُلَيْمَانُ بْنُ أَحْمَدَ ، وَاللَّفْظُ لَهُ ، قَالا : ثنا إِبْرَاهِيمُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ عَوْنٍ ، ثنا سُوَيْدُ بْنُ سَعِيدٍ ، عَنْ فَرَجِ بْنِ فَضَالَةَ ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُبَيْدِ بْنِ عُمَيْرٍ اللَّيْثِيِّ ، عَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ الْيَمَانِ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” مِنِ اقْتِرَابِ السَّاعَةِ اثْنَتَانِ وَسَبْعُونَ خَصْلَةً : إِذَا رَأَيْتُمُ النَّاسَ أَمَاتُوا الصَّلاةَ ، وَأَضَاعُوا الأَمَانَةَ ، وَأَكَلُوا الرِّبَا ، وَاسْتَحَلُّوا الْكَذِبَ ، وَاسْتَخَفُّوا الدِّمَاءَ ، وَاسْتَعْلَوُا الْبِنَاءَ ، وَبَاعُوا الدِّينَ بِالدُّنْيَا ، وَتَقَطَّعَتِ الأَرْحَامُ ، وَيَكُونُ الْحُكْمُ ضَعْفًا ، وَالْكَذِبُ صِدْقًا ، وَالْحَرِيرُ لِبَاسًا ، وَظَهَرَ الْجَوْرُ ، وَكَثُرَ الطَّلاقُ ، وَمَوْتُ الْفُجَاءَةِ ، وَائْتُمِنَ الْخَائِنُ ، وَخُوِّنَ الأَمِينُ ، وَصُدِّقَ الْكَاذِبُ ، وَكُذِّبَ الصَّادِقُ ، وَكَثُرَ الْقَذْفُ ، وَكَانَ الْمَطَرُ قَيْظًا ، وَالْوَلَدُ غَيْظًا ، وَفَاضَ اللِّئَامُ فَيْضًا ، وَغَاضَ الْكِرَامُ غَيْضًا ، وَكَانَ الأُمَرَاءُ فَجَرَةً ، وَالْوُزَرَاءُ كَذِبَةً ، وَالأُمَنَاءُ خَوَنَةً ، وَالْعُرْفَاءُ ظَلَمَةً ، وَالْقُرَّاءُ فَسَقَةً ، وَإِذَا لَبِسُوا مُسُوكَ الضَّأْنِ ، قُلُوبُهُمْ أَنْتَنُ مِنَ الْجِيفَةِ ، وَأَمَرُّ مِنَ الصَّبْرِ ، يُغَشِّيهِمُ اللَّهُ فِتْنَةً يَتَهَاوَكُونَ فِيهَا تَهَاوُكَ الْيَهُودِ الظَّلَمَةِ ، وَتَظْهَرُ الصَّفْرَاءُ ، يَعْنِي الدَّنَانِيرَ ، وَتُطْلَبُ الْبَيْضَاءُ ، يَعْنِي الْدَرَاهِمَ ، وَتَكْثُرُ الْخَطَايَا ، وَتَغُلُّ الأُمَرَاءُ ، وَحُلِّيَتِ الْمَصَاحِفُ ، وَصُوِّرَتِ الْمَسَاجِدُ ، وَطُوِّلَتِ الْمَنَائِرُ ، وَخُرِّبَتِ الْقُلُوبُ ، وَشُرِبَتِ الْخُمُورُ ، وَعُطِّلَتِ الْحُدُودُ ، وَوَلَدَتِ الأَمَةُ رَبَّهَا ، وَتَرَى الْحُفَاةَ الْعُرَاةَ وَقَدْ صَارُوا مُلُوكًا ، وَشَارَكَتِ الْمَرْأَةُ زَوْجَهَا فِي التِّجَارَةِ ، وَتَشَبَّهَ الرِّجَالُ بِالنِّسَاءِ ، وَالنِّسَاءُ بِالرِّجَالِ ، وَحُلِفَ بِاللَّهِ مِنْ غَيْرِ أَنْ يُسْتَحْلَفَ ، وَشَهِدَ الْمَرْءُ مِنْ غَيْرِ أَنْ يُسْتَشْهَدَ ، وَسُلِّمَ لِلْمَعْرِفَةِ ، وَتُفِقِّهَ لِغَيْرِ الدِّينِ ، وَطُلِبَتِ الدُّنْيَا بِعَمَلِ الآخِرَةِ ، وَاتُّخِذَ الْمَغْنَمُ دُوَلا ، وَالأَمَانَةُ مَغْنَمًا ، وَالزَّكَاةُ مَغْرَمًا ، وَكَانَ زَعِيمُ الْقَوْمِ أَرْذَلَهُمْ ، وَعَقَّ الرَّجُلُ أَبَاهُ ، وَجَفَا أُمَّهُ ، وَبَرَّ صَدِيقَهُ ، وَأَطَاعَ زَوْجَتَهُ ، وَعَلَتْ أَصْوَاتُ الْفَسَقَةِ فِي الْمَسَاجِدِ ، وَاتُّخِذَتِ الْقَيْنَاتُ وَالْمَعَازِفُ ، وَشُرِبَتِ الْخُمُورُ فِي الطُّرُقِ ، وَاتُّخِذَ الظُّلْمُ فَخْرًا ، وَبِيعَ الْحُكْمُ ، وَكَثُرَتِ الشُّرَطُ ، وَاتُّخِذَ الْقُرْآنُ مَزَامِيرَ ، وَجُلُودُ السِّبَاعِ صِفَاقًا ، وَالْمَسَاجِدُ طُرُقًا ، وَلَعَنَ آخِرُ هَذِهِ الأُمَّةِ أَوَّلَهَا ، فَلْيَتَّقُوا عِنْدَ ذَلِكَ رِيحًا حَمْرَاءَ ، وَخَسْفًا ، وَمَسْخًا ، وَآيَاتٍ ” ، غَرِيبٌ مِنْ حَدِيثِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُبَيْدِ بْنِ عُمَيْرٍ ، لَمْ يَرْوِهِ عَنْهُ فِيمَا أَعْلَمُ إِلا فَرَجُ بْنُ فَضَالَةَ . اخرجه ابو نعيم حلية الأولياء , رقم الحديث ٤٥٥٥; قال الألباني في ” السلسلة الضعيفة و الموضوعة ” ٣/٣١٤ : قلت : و هو ضعيف كما قال الحافظ العراقي ٣/٢٩٧ ، و فيه علة أخرى و هي الانقطاع – `কেয়ামত নিকটবর্তী হয়ে আসার খাসলত (জামানার চারিত্রিক বৈশিষ্ট) রয়েছে বাহাত্তর’টি’। যখন তোমরা দেখবে যে, (১) লোকেরা নামাযকে মেড়ে ফেলছে, (২) আমানতকে বরবাদ করছে, (৩) সূদ খাচ্ছে, (৪) মিথ্যাকে হালাল করে নিচ্ছে, (৫) হত্যাকে তুচ্ছ বিষয় মনে করছে, (৬) উঁচু উঁচু দালান বানাচ্ছে, (৭) দ্বীনকে দুনিয়ার বিনিময়ে বিক্রি করে দিচ্ছে, (৮) রক্ত-সম্পর্ক কর্তন করে ফেলছে, (৯) আইন-কানুন ভেঙ্গে পড়েছে, (১০) সত্যকে মিথ্যা বানানো হচ্ছে, (১১) রেশমী কাপড় (মুসলমান পুরুষদের জন্য হারাম হওয়া সত্ত্বেও স্বাভাবিক) পোষাক হয়ে গেছে, (১২) অন্যায়-অবিচার ব্যাপক আকার ধারন করেছে, (১৩) তালাক/ডিভোর্স প্রচুর পরিমানে হচ্ছে, (১৪) (লোকজনের) আকষ্মিক মৃত্য ঘটছে, (১৫) খেয়ানতকারীকে (সমাজের চোখে) আমানতদার বানানো হচ্ছে, (১৬) আমানতদারকে খেয়ানতকারী বানানো হচ্ছে, (১৭) মিথ্যুককে (সমাজের চোখে) সত্যবাদী বানানো হচ্ছে, (১৮) সত্যবাদীকে মিথ্যুক বানানো হচ্ছে, (১৯) কুৎসা/পরনিন্দা/কদুক্তি করা হচ্ছে প্রচুর পরিমানে, (২০) বৃষ্টি অত্যধিক গরম হয়ে গেছে, (২১) সন্তান গোস্মাওয়ালা-রাগী হয়ে গেছে, (২২) দুশ্চরিত্র/দুর্নীতিপরায়ণ/বদ/পাপাসক্ত/খারাপ লোকের বন্যা বয়ে যাচ্ছে, (২৩) অভিজাত/সম্ভ্রান্ত/ভদ্র লোকের আকাল পড়েছে, (২৪) প্রশাসক শ্রেণি পাপাসক্ত হয়ে গেছে, (২৫) মন্ত্রিরা মিথ্যা কথায় অভ্যস্থ হয়ে গেছে, (২৬) আমানতদাররাও খেয়ানত করছে, (২৭) আরেফ’রা জুলুম/অন্যায় করছে, (২৮) (কুরআন) পাঠকারীরা ফাসেক/পাপাসক্ত হয়ে গেছে, (২৯) যখন (দেখবে যে, লোকেরা) ভেড়ার চামড়া পরিধান করছে, (৩০) তাদের অন্তরগুলো মৃতপ্রাণির চাইতেও দুর্গন্ধযক্ত হয়ে গেছে, (৩১) শক্ত বস্তুর চাইতেও কঠিন হয়ে গেছে, (৩২) তখন আল্লাহ তাদেরকে এমন ফিতনা’য় নিক্ষেপ করবেন যে, তারা তাতে এমনভাবে উৎভ্রান্ত হয়ে ফিরবে, যেভাবে জালেম ইহূদী উৎভ্রান্ত হয়ে ফিরে। (৩৩) (এমনিভাবে যখন দেখবে যে,) হলদে বস্তু প্রকাশ পাচ্ছে তথা দিনার (স্বর্ণ মুদ্রা) , (৩৪) উজ্জ্বল বস্তুর চাহিদা হচ্ছে তথা দিরহাম (রৌপ্য মৃদ্রা), (৩৫) পাপ ও অপরাধ বিপুল পরিমানে হচ্ছে, (৩৬) প্রশাসকরা রিষ্টপুষ্ট হয়ে গেছে, (৩৭) কুরআনের কপিগুলোকে পরিপাটি করা হচ্ছে, (৩৮) মসজিদগুলোকে (বিভিন্ন স্টাইলে) আকার দেয়া হচ্ছে, (৩৯) মিম্বরগুলোকে লম্বা বানানো হচ্ছে, (৪০) অন্তরগুলো বিরান হয়ে গেছে, (৪১) মাদকসমূহ সেবন করা হচ্ছে, (৪২) (দেশে দেশে আল্লাহ’র নাজিলকৃত শরয়ী) হ্বদ’গুলোকে অকেজো/নিষ্ক্রিয় করে দেয়া হয়েছে, (৪৩) মা তার প্রভু’কে প্রসব করছে, (৪৪) দেখবে যে, (একসময় যারা ছিল) খালি’পা বস্ত্রহীন (সেই) লোকগুলি রাষ্ট্র-কর্ণধার হয়ে গেছে, (৪৫) নারী তার স্বামীর ব্যাবসায় শরিক হচ্ছে, (৪৬) পুরুষ নারীর সাদৃশ্যতা অবলম্বন করছে এবং (৪৭) নারী (সাদৃশ্যতা অবলম্বন করছে) পুরুষের, (৪৮) কসম খেতে বলা ব্যাতীতই (মানুষজন নিজ থেকে) কসম খাচ্ছে, (৪৯) সাক্ষ্য দান করতে বলা ব্যাতীতই মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে দিচ্ছে, (৫০) (শুধু) পরিচিতকে সালাম দেয়া হচ্ছে, (৫১) দ্বীন নয় -এমন বিষয়ের জন্য গভীর জ্ঞান অর্জন করা হচ্ছে, (৫২) আখেরাতের আমল দিয়ে দুনিয়া তলব করা হচ্ছে, (৫৩, ৫৪, ৫৫) গণীমত’কে সাধারণ ধ্বন-সম্পদ হিসেবে, আমানতকে গণীমত হিসেবে এবং যাকাতকে জরিমানা হিসেবে ধরে নেয়া হচ্ছে, (৫৬) কওমের নিচ/তুচ্ছ/অপদার্থ/নিকৃষ্ট লোকগুলি তাদের (কওমের) লিডার/প্রধান হচ্ছে, (৫৭) মানুষ তার পিতার অবাধ্য হচ্ছে, (৫৮) মায়ের সাথে দুর্ব্যাবহার করছে, (৫৯) বন্ধুর ক্ষতিসাধন করছে, (৬০) স্ত্রীর অনুগত্য করছে, (৬১) ফাসেক লোকগুলি মসজিদে উঁচু আওয়াজে কথা বলছে, (৬২)(লোকজন) গাইকা (রমণী)দেরবে ও বাদ্যযন্ত্রকে (তাদের আনন্দ বিনোদন হিসেবে) অবলম্বন করে নিয়েছে, (৬৩) রাস্তাপথে (প্রকাশ্যে) মাদকদ্রব্য সেবন করা হচ্ছে, (৬৪) জুলুম ও অন্যায়-অবিচারকে গর্বের বিষয় হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে, (৬৫) বিচার বিক্রি হচ্ছে, (৬৬) সৈন্যসামন্তের সংখ্যা বিপুল হয়ে গেছে, (৬৭) কুরআনকে বাদ্য হিসেবে, (৬৮) জানোয়ারের চামড়াকে মুজা হিসেবে এবং (৬৯) মসজিদগুলো রাস্তাপথ হিসেবে গ্রহন করা হচ্ছে, (৭০) এই উম্মতের শেষের লোকেরা পূর্বের ব্যাক্তিদের উপর লা’নত দিচ্ছে, তখন তোমরা লাল বাতাস (লু-হাওয়া), ভূমিধ্বস, আকৃতির বিকৃতি এবং নিদর্শন (প্রকাশ পাওয়া)-এর ব্যাপারে ভয় করে চলো। [হিলইয়াতুল আউলিয়াহ, আবু নুআইম- ৩/৩৫৮, হাদিস ৪৫৫৫]
এসিড রেইন বৃষ্টি

ফায়দা: এই রেওয়ায়েতে كَانَ الْمَطَرُ قَيْظًا– ‘বৃষ্টি অত্যধিক গরম হয়ে গেছে’ বলতে অনেকের মতে এযুগের ‘এসিড-বৃষ্টি (Acid Rain)’-এর দিকে ইশারা করা হয়েছে। এর বেশিরভাগই মানুষের পরিবেশ দূষনের কারণে কৃত্রিম ভাবে সৃষ্ট হয়ে থাকে। বায়ুর জটিল সব কৃত্রিম দূষনের কারণে এমন সব রাসায়নীক বিক্রিয়া ঘটে যে, পরিবেশ এসিডিক হয়ে যায়, যার ক্ষতিকর প্রভাবে অনেক সময় গাছের পাতা ও ডাল-পালাও পুড়ে যায়। আমার মতে, এই ভবিষ্যৎবাণী আমাদের এই শেষ জামানায় পূর্ণ হয়ে গেছে।

এই রেওয়ায়েতে عُطِّلَتِ الْحُدُودُ – ‘হ্বদ’গুলোকে অকেজো/নিষ্ক্রিয় করে দেয়া হয়েছে’ বলতে আল্লাহ’র নাজিলকৃত শরয়ী হুদ সমূহ (যেমন: চোরের হাত কাটা আইন, বিবাহীত জেনাকারীর রজম আইন, ফ্যাসাদকারী/সন্ত্রাসী/ডাকাতের উল্টো দিকের হাত-পা কর্তন আইন ইত্যাদি) রাষ্ট্রীয় বিচার ব্যবস্থা থেকে বিলুপ্ত করে তা অকার্যোকর/নিষ্ক্রিয়/অকেজো করে দেয়া উদ্দেশ্য। الله اعلم بالصواب

# ইমাম ত্বাবরাণী রহ. নিজ সূত্রে হযরত উতায়ী সা’দী রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন- خَرَجْتُ فِي طَلَبِ الْعِلْمِ حَتَّى قَدِمَتُ الْكُوفَةَ ، فَإِذَا أَنَا بِعَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ ، بَيْنَ ظَهْرَانَيْ أَهْلِ الْكُوفَةِ ، فَسَأَلْتُ عَنْهُ ، فَأُرْشِدْتُ إِلَيْهِ ، فَإِذَا هُوَ فِي مَسْجِدِهَا الْأَعْظَمِ فَأَتَيْتُهُ ، فَقُلْتُ: يَا أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ إِنِّي جِئْتُ أَضْرِبُ إِلَيْكَ أَلْتَمِسُ مِنْكَ عِلْمًا ، لَعَلَّ اللَّهَ أَنْ يَنْفَعَنَا بِهِ بَعْدَكَ ، فَقَالَ لِي: مِمَّنِ الرَّجُلُ؟ قُلْتُ: رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْبَصْرَةِ. قَالَ: مِمَّنْ؟ قُلْتُ: مِنْ هَذَا الْحَيِّ مِنْ بَنِي سَعْدٍ. فَقَالَ لِي: يَا سَعْدِيُّ ، لَأُحَدِّثَنَّ فِيكُمْ بِحَدِيثٍ سَمِعَتْهُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، وَأَتَاهُ رَجُلٌ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ ، أَلَا أَدُلُّكَ عَلَى قَوْمٍ: كَثِيرَةٌ أَمْوَالُهُمْ ، كَثِيرَةٌ شَوْكَتُهُمْ ، تُصِيبُ مِنْهُمْ مَالًا دَبْرًا أَوْ قَالَ: كَثِيرًا؟ قَالَ:” مَنْ هُمْ؟ “. قَالَ: هَذَا الْحَيُّ مِنْ بَنِي سَعْدٍ ، مِنْ أَهْلِ الرِّمَالِ ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ:” مَهْ ، فَإِنَّ بَنِي سَعْدٍ عِنْدَ اللَّهِ ذُو حَظٍّ عَظِيمٍ ” . سَلْ يَا سَعْدِيُّ. قُلْتُ: أَبَا عَبْدَ الرَّحْمَنِ ، هَلْ لِلسَّاعَةِ مِنْ عِلْمٍ تُعْرَفُ بِهِ السَّاعَةُ؟ قَالَ: وَكَانَ مُتَّكِئًا فَاسْتَوَى جَالِسًا ، فَقَالَ: يَا سَعْدِيُّ ، سَأَلَتْنِي عَمَّا سَأَلْتُ عَنْهُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ ، هَلْ لِلسَّاعَةِ مِنْ عِلْمٍ تُعْرَفُ بِهِ السَّاعَةُ؟ فَقَالَ:” نَعَمْ ، يَا ابْنَ مَسْعُودٍ ، إِنَّ لِلسَّاعَةِ أَعْلَامًا ، وَإِنَّ لِلسَّاعَةِ أَشْرَاطًا ، أَلَا وَإِنَّ مِنْ أَعْلَامِ السَّاعَةِ وَأَشْرَاطِهَا أَنْ يَكُونَ الْوَلَدُ غَيْظًا ، وَأَنْ يَكُونَ الْمَطَرُ قَيْظًا ، وَأَنْ يَفِيضَ الْأَشْرَار فَيْضًا. يَا ابْنَ مَسْعُودٍ ، إِنَّ مِنْ أَعْلَامِ السَّاعَةِ وَأَشْرَاطِهَا أَنْ يُؤْتَمَنَ الْخَائِنُ ، وَأَنْ يُخَوَّنَ الْأَمِينُ. يَا ابْنَ مَسْعُودٍ ، إِنَّ مِنْ أَعْلَامِ السَّاعَةِ وَأَشْرَاطِهَا أَنْ تُوَاصَلَ الْأَطْبَاقُ ، وَأَنْ تُقَاطَعَ الْأَرْحَامُ. يَا ابْنَ مَسْعُودٍ، إِنَّ مِنْ أَعْلَامِ السَّاعَةِ وَأَشْرَاطِهَا أَنْ يَسُودَ كُلَّ قَبِيلَةٍ مُنَافِقُوهَا ، وَكُلَّ سُوقٍ فُجَّارُهَا. يَا ابْنَ مَسْعُودٍ، إِنَّ مِنْ أَعْلَامِ السَّاعَةِ وَأَشْرَاطِهَا أَنْ تُحَرَّفَ الْمَحَارِيبُ ، وَأَنْ تُخَرَّبَ الْقُلُوبُ. يَا ابْنَ مَسْعُودٍ إِنَّ مِنْ أَعْلَامِ السَّاعَةِ وَأَشْرَاطِهَا أَنْ يَكُونَ الْمُؤْمِنُ فِي الْقَبِيلَةِ أَذَلَّ مِنَ النَّقَدِ. يَا ابْنَ مَسْعُودٍ ، إِنَّ مِنْ أَعْلَامِ السَّاعَةِ وَأَشْرَاطِهَا أَنْ يَكْتَفِيَ الرِّجَالُ بِالرِّجَالِ ، وَالنِّسَاءُ بِالنِّسَاءِ. يَا ابْنَ مَسْعُودٍ ، إِنَّ مِنْ أَعْلَامِ السَّاعَةِ وَأَشْرَاطِهَا مُلْكُ الصِّبْيَانِ ، وَمُؤَامَرَةُ النِّسَاءِ. يَا ابْنَ مَسْعُودٍ، إِنَّ مِنْ أَعْلَامِ السَّاعَةِ وَأَشْرَاطِهَا أَنْ تُكَثَّفَ الْمَسَاجِدُ ، وَأَنْ تَعْلُوَ الْمَنَابِرُ. يَا ابْنَ مَسْعُودٍ ، إِنَّ مِنْ أَعْلَامِ السَّاعَةِ وَأَشْرَاطِهَا أَنْ يُعَمَّرَ خَرَابُ الدُّنْيَا ، وَيُخَرَّبَ عُمْرَانُهَا. يَا ابْنَ مَسْعُودٍ ، إِنَّ مِنْ أَعْلَامِ السَّاعَةِ وَأَشْرَاطِهَا أَنْ تَظْهَرَ الْمَعَازِفُ وَالْكِبْرُ ، وَشُرْبُ الْخُمُورِ. يَا ابْنَ مَسْعُودٍ ، إِنَّ مِنْ أَعْلَامِ السَّاعَةِ وَأَشْرَاطِهَا أَنْ يَكْثُرَ أَوْلَادُ الزِّنَا » . قُلْتُ: يَا أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ ، وَهُمْ مُسْلِمُونَ؟ قَالَ: نَعَمْ. قُلْتُ: أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ، وَالْقُرْآنُ بَيْنَ ظَهْرَانَيْهِمْ؟ قَالَ: نَعَمْ. قُلْتُ: أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ ، وَأَنَّى ذَلِكَ؟ قَالَ: يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ يُطَلِّقُ الرَّجُلُ الْمَرْأَةَ ، ثُمَّ يَجْحَدُهَا طَلَاقَهَا ، فَيُقِيمُ عَلَى فَرْجِهَا، فَهُمَا زَانِيَانِ مَا أَقَامَا – أخرجه الطبراني في “المعجم الكبير” ١٠/٢٢٨ ، وفي “المعجم الأوسط” ٤٨٦١ و قال الهيثمي في مجمع الزوائد: رواه الطبراني في الأوسط والكبير وفيه سيف بن مسكين وهو ضعيف: ٧/٦٢٤; و الحديث ضعفه البيهقي كما في “البداية والنهاية” لابن كثير: ١٩/٢٧٤، و العراقي في المغني عن حمل الأسفار في الأسفار، في تخريج ما في الإحياء من الأخبار: ص ٦٥٦ ، والسخاوي في “الأجوبة المرضية: ٢/٥٢٤ – ‘আমি (একবার) ইলমের তলবে বেরিয়ে পড়লাম, এমনকি শেষে কুফায় গিয়ে পৌছলাম। আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর খোঁজে ছিলাম, এমন সময় আমার সামনে কুফাবাসীদের দেখা মিললো। আমি (তাদেরকে) তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম এবং (তিনি এখন কোথায় আছেন তা জানার পর) আমি সোজা তাঁর কাছে চলে গেলাম। তিনি তখন (কুফার) বড় মসজিদে অবস্থান করছিলেন। আমি তার কাছে গিয়ে বললাম: হে আবু আব্দির রহমান! আমি এত কষ্ট করে আপনার কাছে এসেছি, যাতে আপনার কাছ থেকে ইলম হাসিল করতে পারে। হতে পারে আল্লাহ তাআলা আপনার পর এর দ্বারা আমাদেরকে উপকৃত করবেন। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন: আপনি কোথাকার লোক? আমি বললাম: আমি বসরা’র লোক। জিজ্ঞেস করলেন: (আপনি) কোন গ্রোত্রের? আমি বললাম: এই যে বনু সা’দ -এর যারা জীবিত আছে (আমি) তাদের একজন। তিনি আমাকে বললেন: হে সা’দী! আমি অবশ্যই তোমাদের কাছে এমন হাদিস বর্ণনা করবো যা আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ -কে বলতে শুনেছি। আমি (একবার) রাসুলুল্লাহ ﷺ -এর কথা শুনছিলাম, এমন সময় তাঁর কাছে এক ব্যাক্তি এসে বললো: আমি কি একটি কওমের কথা আপনাকে জানাবো না! তাদের প্রচুর ধ্বনসম্পদ, শান-শওকতও অনেক। কিন্তু সেগুলো থেকে এক কপর্দকও তাদের মেলে না অথবা বলেছে: এত বিপুল (সম্পদ থেকে এক কপর্দকও তাদের মেলে না)। তিনি জিজ্ঞেস করলেন: কে তারা? লোকটি বললো: এই যে বনু সা’দ-এর যারা জীবিত আছে; যারা রিমালবাসী। রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করলেন- থামো.. নিশ্চই আল্লাহ’র কাছে বনু সা’দরা (দুনিয়াবী সম্পদের দিক থেকে) বেশ ভাগ্যের অধিকারী। (আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বললেন:) প্রশ্ন করো, হে সা’দী! আমি বললাম: হে আবু আব্দির রহমান! কিয়ামত সম্পর্কে কি কিছু জানার আছে যা দ্বারা কিয়ামত (-এর আলামত ও লক্ষন) চেনা যাবে? (এ প্রশ্ন শুনে) তিনি ঠেস্ দেয়া অবস্থা থেকে সোজা হয়ে বসলেন, তারপর বললেন: হে সা’দী! আপনি আমাকে যে প্রশ্ন করলেন, আমিও সে সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ ﷺ -কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। আমি বললাম: ইয়া রাসুলাল্লাহ ﷺ! কিয়ামত সম্পর্কে কি কিছু জানার আছে যা দ্বারা কিয়ামত (-এর আলামত ও লক্ষন) চেনা যাবে? রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: হ্যা, হে ইবনে মাসউদ। নিশ্চই কিয়ামতের অনেক আলামত আছে। নিশ্চই কিয়ামতের অনেক লক্ষন আছে। ভাল করে শোন। কিয়ামতের আলামত ও লক্ষনসমূহের মধ্যে এও রয়েছে যে: أَنْ يَكُونَ الْوَلَدُ غَيْظًا ، وَأَنْ يَكُونَ الْمَطَرُ قَيْظًا ، وَأَنْ يَفِيضَ الْأَشْرَار فَيْضًا – সন্তান হবে গোস্বাওয়ালা-রাগী, বৃষ্টি হবে গরম, নিকৃষ্ট মানুষের ঢল নামবে। হে ইবনে মাসউদ, কিয়ামতের আলামত ও লক্ষনসমূহের মধ্যে এও রয়েছে যে: أَنْ يُؤْتَمَنَ الْخَائِنُ ، وَأَنْ يُخَوَّنَ الْأَمِينُ খেয়ানতকারীকে আমানতদার ভাবা হবে এবং আমানতদারকে খেয়ানতকারী ভাবা হবে। হে ইবনে মাসউদ, কিয়ামতের আলামত ও লক্ষনসমূহের মধ্যে এও রয়েছে যে: أَنْ تُوَاصَلَ الْأَطْبَاقُ ، وَأَنْ تُقَاطَعَ الْأَرْحَامُ -ডিশসমূহ পরষ্পরে যোগাযোগ করবে এবং রেহমী সম্পর্ক কর্তন করা হবে। হে ইবনে মাসউদ, কিয়ামতের আলামত ও লক্ষনসমূহের মধ্যে এও রয়েছে যে: أَنْ يَسُودَ كُلَّ قَبِيلَةٍ مُنَافِقُوهَا ، وَكُلَّ سُوقٍ فُجَّارُهَا –সকল কবিলাহ (অঞ্চল, জেলা, পাড়া)-র নেতা হবে সেখানকার মুনাফেক ব্যাক্তিরা এবং সকল বাজার/মার্কেটের (নেতা হবে সেখানকার) ফাজের/পাপাবিষ্ঠ ব্যাক্তিরা।
হে ইবনে মাসউদ, কিয়ামতের আলামত ও লক্ষনসমূহের মধ্যে এও রয়েছে যে: أَنْ تُحَرَّفَ الْمَحَارِيبُ ، وَأَنْ تُخَرَّبَ الْقُلُوبُ – মেহরাবসমূহ ডিজাইন করা হবে এবং (মানুষের) অন্তরগুলো বিরান হয়ে যাবে।হে ইবনে মাসউদ, কিয়ামতের আলামত ও লক্ষনসমূহের মধ্যে এও রয়েছে যে: أَنْ يَكُونَ الْمُؤْمِنُ فِي الْقَبِيلَةِ أَذَلَّ مِنَ النَّقَدِ -মুমিন ব্যাক্তি লোকালয়ে ছোট ভেড়ার চাইতেও অধিক হেও/তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের পাত্র হয়ে যাবে।

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   দাজ্জালের আগমন ও ফিতনা সম্পর্কে ব্যাখ্যা ও উদাহরণসহ কেয়ামতের আলামত ও ভবিষ্যতবাণী পর্ব-১

মিম্বর মসজিদ সুন্দর লম্বা
হে ইবনে মাসউদ, কিয়ামতের আলামত ও লক্ষনসমূহের মধ্যে এও রয়েছে যে: أَنْ يَكْتَفِيَ الرِّجَالُ بِالرِّجَالِ ، وَالنِّسَاءُ بِالنِّسَاءِ -এক পুরুষ আরেক পুরুষকে এবং এক নারী আরেক নারীকে (যৌনসম্ভগের জন্য) যথেষ্ট মনে করবে। হে ইবনে মাসউদ, কিয়ামতের আলামত ও লক্ষনসমূহের মধ্যে এও রয়েছে যে: مُلْكُ الصِّبْيَانِ ، وَمُؤَامَرَةُ النِّسَاءِ – কঁচি-বয়সীদের রাষ্ট্রক্ষমতা এবং নারীদের ষঢ়যন্ত্র (প্রকাশ পাবে)। হে ইবনে মাসউদ, কিয়ামতের আলামত ও লক্ষনসমূহের মধ্যে এও রয়েছে যে: أَنْ تُكَثَّفَ الْمَسَاجِدُ ، وَأَنْ تَعْلُوَ الْمَنَابِرُ -মসজিদসমূহ ঘন ঘন (করে তৈরী করা) হবে এবং মিম্বরসমূহ লম্বা করা হবে। হে ইবনে মাসউদ, কিয়ামতের আলামত ও লক্ষনসমূহের মধ্যে এও রয়েছে যে: أَنْ يُعَمَّرَ خَرَابُ الدُّنْيَا ، وَيُخَرَّبَ عُمْرَانُهَا -পৃথিবীর বিরান অঞ্চলগুলিকে নির্মান করা হবে এবং নির্মিত অঞ্চলসমূহ বিরান করে দেয়া হবে। হে ইবনে মাসউদ, কিয়ামতের আলামত ও লক্ষনসমূহের মধ্যে এও রয়েছে যে: أَنْ تَظْهَرَ الْمَعَازِفُ وَالْكِبْرُ ، وَشُرْبُ الْخُمُورِ -বাদ্যযন্ত্র, অহংকার এবং মদ ও মাদক সেবন ব্যাপক হয়ে যাবে। হে ইবনে মাসউদ, কিয়ামতের আলামত ও লক্ষনসমূহের মধ্যে এও রয়েছে যে: أَنْ يَكْثُرَ أَوْلَادُ الزِّنَا –ব্যাভিচারজাত সন্তান প্রচুর হবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম: হে আবু আব্দির রহমান, তারা কি মুসলমান হবে? তিনি বললেন: হ্যা। আমি বললাম: আবু আব্দির রহমান, তাদের সামনে কি কুরআন থাকবে? তিনি বললেন: হ্যা। আমি বললাম: আবু আব্দির রহমান, বলেন কি! তিনি বললেন: এমন জামানা আসবে যে, পুরুষ তার স্ত্রীকে তালাক দিবে, এরপর স্ত্রীকে প্রদত্ত তালাক’কে (কার্যকর হওয়াকে) অমান্য করবে (এবং তারা আবারো স্বামী স্ত্রী’র মতো বসবাস করাকে বৈধ মনে করবে), পরে (সে ওই কথিত) স্ত্রীর লজ্জাস্থানকে (হালাল মনে করে) ব্যবহার করবে। সুতরাং, তারা উভয়ে যা করবে তাতে দুজনেরই জেনা হবে। [আল-মু’জামুল কাবির, ত্বাবরাণী- ১০/২২৮; আল-মু’জামুল আউসাত, ত্বাবরাণী, হাদিস ৪৮৬১; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৮/৬২৪; আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইবনে কাসির- ১৯/২৭৪]

ফায়দা: এই রেওয়ায়েতের ব্যাপারে শক্ত কালাম রয়েছে, তবে এতে বর্ণিত কেয়ামতের আলামতগুলোর অনেক শাহেদ ও মাফহুমী হাদিস ও আছার রয়েছে।

স্যাটেলাইট ইন্টারনেট যোগাযোগ ডিশ
এই বর্ণনাটির মধ্যে যে বাক্যাংশটি বিশেষভাবে আমার দৃষ্টি আকর্ষন করেছে সেটি হল- ‘হে ইবনে মাসউদ, কিয়ামতের আলামত ও লক্ষনসমূহের মধ্যে এও রয়েছে যে: أَنْ تُوَاصَلَ الْأَطْبَاقُ ، وَأَنْ تُقَاطَعَ الْأَرْحَامُ -ডিশসমূহ পরষ্পরে যোগাযোগ করবে এবং রেহমী (আত্বীয়তার) সম্পর্ক কর্তন করা হবে’। আমি এখানে الْأَطْبَاقُ-এর অনুবাদ করেছি ডিশসমূহ। এখানে মূল শব্দটি হল طبق যার বহুবচন হল اطباق , আর طبق অর্থ হয়- থালা, গামলা/ডিশ (Dish) , তাওয়া/কড়াই, প্লেট, ট্রে, বাঁকানো ঢাল ইত্যাদি। আমি ডিশ অনুবাদটি নিয়েছি। আর تَوَاصَلَ অর্থ হল- যোগাযোগ (communicate) করা, অবিরামভাবে সম্পর্ক (continuously) রাখা, নিবিচ্ছিন্ন (uninterrupted) যোগাযোগ করা, পরষ্পরের মধ্যে আন্ত যোগাযোগ (Intercommunicate) বা আদানপ্রদান করা ইত্যাদি। আমি অর্থ করেছি أَنْ تُوَاصَلَ الْأَطْبَاقُ – ডিশসমূহ পরষ্পরে যোগাযোগ করবে’। আমার মতে, এখানে আধুনিক যুগের ডিশ এ্যান্টেনা, মহাকাশ স্যাটেলাইট ও ওয়ারলেস (বিনা-তারের) ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থার দিকে ইশারা করা হয়েছে, যার সাহায্যে পৃথিবীর কোনো স্থান থেকে অপর স্থানে নিমিশের মধ্যে মানুষে মানুষে কথোপকথন, স্ক্রিনে লাইভ দেখা যাওয়া ও যোগাযোগ, এমনটি বিভিন্ন অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে। এগুলো কিভাবে পরষ্পরে যোগাযোগ করে, তার খানিকটা ধারনা পেতে >>> এখানে ক্লিক করুন>>>

এর পাশাপাশি বলা হয়েছে وَأَنْ تُقَاطَعَ الْأَرْحَامُ -এবং রেহমী (আত্বীয়তার/রক্ত) সম্পর্ক কর্তন করা হবে’। আল্লাহ তাআলা যে ‘রেহমী সম্পর্ক’ বজায় রেখে চলার নির্দেশ দিয়েছেন, তা শুধু মুসলমানদের নিকটাত্বীয়দের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং মানব জাতির সকলে বাবা আদম আ. ও মা হাওয়া আ.-এর সন্তান -এর হক্ব আদায় পর্যন্ত বিস্তৃত। সুতরাং, ‘রেহমী সম্পর্ক কর্তন’ বলতে গোটা মানব জাতি কর্তৃক আল্লাহ তাআলার আদেশের উপরে একতাবদ্ধ-বান্দা না হয়ে থেকে বরং নিজেদের মন মতো আক্বীদা-বিশ্বাস ও আদর্শকে জড়িয়ে ধরে খন্ডবিখন্ড হয়ে যাওয়ার সকল হেতু/কারণকে সামগ্রিক ভাবে শামিল করে নেয়। উদাহরণ স্বরূপ: যে কোনো মানুষকে অন্যায় ভাবে খুন করার অর্থ হল খুনি ব্যাক্তিটি বাবা আদম আ.-এর ওই সন্তানের সাথে তার জড়িত ‘রেহমী সম্পর্ক’কে কর্তন করে ফেললো।

গভীরভাবে চিন্তা করে দেখলে দেখা যাবে, বর্তমান অস্থির পৃথিবীতে দেশে দেশে মানুষে মানুষে যত মনস্তাত্বিক ও রাজনৈতিক যুদ্ধ, দ্বন্দ্ব, বিরোধ, দাঙ্গা, গন্ডোগোল, আর হত্যাযজ্ঞ চলছে -তা পিছনে শক্তিশালী ও খুবই তড়িৎ প্রপাগান্ডামূলক ভূমিকা রাখছে ইন্টারনেট, ডিশ ও স্যাটেলাইট ব্যবস্থা। এসব টেকনোলজি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ভায়োলেন্ট ও অশ্লিল মুভি-সিনেমা, নাটক, অভিনয়, এ্যাড্, শো, নাচ-গান-বাজনা, মিথ্যা-প্রতারণা ও উষ্কানীমূলক খবরাখবর ইত্যাদি পৃথিবীর মানুষের মন-মস্তিষ্ককে খবিস বানিয়ে দিয়েছে, যার পরিণতিতে রেহমী সম্পর্ক আজ টুকরো টুকরো হয়ে চৌচিড় হয়ে গেছে। যারা ডিশ এন্টেনা ও স্যাটেলাইট ব্যবস্থা এবং তার ব্যাপক অত্যাধুনিক ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা রাখেন তারা এর সত্যতা স্বীকার করতে বাধ্য যে, এরকম বিজ্ঞানসম্মত এই ভবিষ্যৎবাণীটি সাধারণ কোনো মানুষের বানানো মিথ্যা মন্তব্য হতে পারে না, যা প্রায় ১৫০০ বছর পর আজ বাস্তবতার মুখ দেখছে এবং যা এর আগে কোনো যুগে মুখ দেখেনি। এজন্য আমার কাছে হাদিসের এই কথাটি নিঃসন্দেহে নবুওতী ইলম থেকে সংগৃহীত একটি ইলমী রত্ন, যা আমাদের এই শেষ জামানায় জ্বলজ্যান্তভাবে পূর্ণতা লাভ করেছে।

রেওয়ায়েতটির আরেকটি বাক্যাংশ হল – أَنْ يَسُودَ كُلَّ قَبِيلَةٍ مُنَافِقُوهَا ، وَكُلَّ سُوقٍ فُجَّارُهَا – ‘সকল কবিলাহ (অঞ্চল, জেলা, পাড়া)-র নেতা হবে সেখানকার মুনাফেক ব্যাক্তিরা এবং সকল বাজার/মার্কেটের (নেতা হবে সেখানকার) ফাজের/পাপাবিষ্ঠ ব্যাক্তিরা’-এরা হল বিভিন্ন শহরাঞ্চল, গ্রাম বা পাড়া-মহল্লার ওই সকল নেতা/পাতিনেতা, মাতব্বার, মুরুব্বি শ্রেণির মুসলীম নামধারী মুনাফেক লোকগুলি, যারা সেকুলারিজম, সোসালিজস, গণতন্ত্র ইত্যাদির মতো সব পথভ্রষ্ঠ মতবাদগুলিকে তাদের মূল আদর্শ হিসেবে গ্রহন করে নিয়েছে, ফলে মুসলমানদের পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সার্বিক ক্ষেত্রটি আল্লাহ তাআলার নাজিলকৃত ইসলামী শরীয়ত দিয়ে পরিচালিত হোক তা চায় না, সহ্যও করতে পারে না, বরং তাদের সেকুলারিজম বা সোসালিজম কিংবা গণতন্ত্র অটুট রাখার স্বার্থে ইসলামী শরীয়তের পথে বিভিন্ন ভাবে বাঁধার সৃষ্টি করে দেয়। এই শেষ জামানায় এরকম মানুষ দ্বারাই সমাজ ভরা। দেশি-বিদেশী বাজার/মার্কেটগুলো সব ওই সকল ফাসেক/ফাজের ব্যাক্তির দখলে যারা সূদ, ঘুষ, জুয়া, প্রতারণা, ধোকাবাজীতে শিদ্ধহস্ত, যারা এটা চিন্তাও করে না যে তাদের ইনকাম হালাল পথে আসছে না হারাম পথে।

আরো বলা হয়েছে যে- مُلْكُ الصِّبْيَانِ ، وَمُؤَامَرَةُ النِّسَاءِ – ‘কঁচি-বয়সীদের রাষ্ট্রক্ষমতা এবং নারীদের ষঢ়যন্ত্র (প্রকাশ পাবে)’। এখানে ‘কঁচি বয়সীদের রাষ্ট্রক্ষমতা’ বলতে সম্ভবতঃ এই শেষ জামানায় মুরুব্বি শ্রেণিদের মধ্যে তুলনামূলক অভিজ্ঞ ও উপযোগী লোক বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে ক্ষমতায় না বসিয়ে বরং বিভিন্ন পার্থিব ও রাজনৈতিক স্বার্থে দলের প্রতিষ্ঠাতা নেতাদের বংশীয় কোনো অল্প বয়সের উত্তরসূরীদেরকে ক্ষমতায় বসানোর প্রচলন লক্ষ্য করা যাবে মর্মে ইশারা করা হয়েছে। এর একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল সৌদি আরবের যুবরাজ মুহাম্মাদ বিন সালমান। আর ‘নারীদের ষঢ়যন্ত্র’ বলতে উম্মাহ’র মধ্যে একটি নারী গোষ্ঠি কর্তৃক ‘নারী অধিকার ও আইন’ নিয়ে আল্লাহ’র দ্বীন ইসলামের বিরুদ্ধে ষঢ়যন্ত্র উদ্দেশ্য। অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা তাঁর সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ ﷺ-এর উপরে নারীদের অধিকার ও শরয়ী আইন বিষয়ক যে ইসলামী শরীয়ত ওহীসূত্রে নাজিল করেছেন, তার মধ্যে যে সকল শরয়ী আইন-কানুন ও অধিকারগুলোকে উক্ত নারী গোষ্ঠিটি অন্যায্য, বেইনসাফী, পক্ষপাতিত্বতা ও বৈষম্যতা মনে করবে, সেগুলোকে সমাজ ও রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে স্বমূলে বিলুপ্ত করতঃ তদস্থলে তাদের মতে যা ন্যায্য, পক্ষপাতমুক্ত ও সাম্যতাপূর্ণ মনে হবে, তা প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামের বিরুদ্ধে কোমড় বেঁধে লাগার ষঢ়যন্ত্র উদ্দেশ্য। এই শেষ জামানায় মুসলীম সমাজের নারীরা ইসলামী শরীয়ত নির্দেশিত বিশেষ করে ‘নারীর ক্ষমতায়ন’ ও ‘নারী পুরুষের সম-অধিকার’ নামে ইসলামী শরীয়তের বিশেষ করে পর্দা ব্যবস্থা, বিয়ে-তালাক, সম্পত্তির উত্তরাধিকারীতা ও ক্ষমতায়ন ইত্যাদি বিষয়ক শরয়ী আইনগুলোর বিরুদ্ধে যা করতে নেমেছে, হাদিসটিতে সেসকল ষঢ়যন্ত্রের দিকেই ইশারা করা হয়েছে।

আমার মতে, এই হাদিসে বর্ণিত সকল ভবিষ্যৎবাণী আমাদের এ জামানায় পূর্ণ হয়ে গেছে, যার কিছু কিছু ব্যাখ্যা প্রয়োজনে এরকম অন্য অরো কিছু রেওয়ায়েতের অধিনে পেশ করার চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ। الله اعلم بالصواب

# আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে এরশাদ করেছেন- سيكونُ بعدِي أمراءُ يستحِلّونَ الخمرَ بالنبيذِ والبخسَ في الصدقةِ والقتْلَ بالموعظةِ ، يقتُل البرِيء ليوطّئوا به العامةَ . أخرجه ابن عدي في الكامل في الضعفاء : ٢/٢٠٣ , اسناده ضعيف جدا , فيه الحكم الأيلي هو متروك الحديث – ‘আমার পরে এমনসব শাসকরা আসবে, যারা হালাল গণ্য করে নিবে নবিযের (তৈরী) মদকে, যাকাতের মধ্যে (শরয়ী নেসাবের চাইতে) কম করাকে, উপদেশের ছলে (মানুষ) হত্যা করাকে; (এমনও হবে যে, সমাজের) ভাল লোককে হত্যা করা হবে -তা দ্বারা জনগণকে উসকে দেয়ার উদ্দেশ্যে’। [আল-কামেল, ইবনু আদী- ২/২০৩]

MuslimPoint Organization

About MuslimPoint Organization

MuslimPoint একটি অনলাইন ভিত্তিক ইসলামী প্রশ্নোত্তর, গ্রন্থাগার, ব্লগিং, কুরআন, হাদিস, কুইজ এবং বিষয় ভিত্তিক রেফারেন্স প্ল্যাটফর্ম।

View all posts by MuslimPoint Organization →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *