জামাতের চেয়ে আউয়াল ওয়াক্তে সলাত আদায়ের গুরুত্ব বেশি , ব্যাখ্যা ও দলিল বা রেফারেন্স সহ

সালাত নামাজ আল্লাহ মোহাম্মদ(স) ভ্রান্ত ভুল জাল মিথ্যা মিথ্যাচার জয়ীফ যয়ীফ দূর্বল হাদিস সহীহ দলিল রেফারেন্স রাকাত বুখারি মুসলিম বিতর রফালিয়াদিন আমিন সশব্দে সরবে মসজিদ আউয়াল ওয়াক্ত জামাত পাচ রাফুল ইয়াদাইন মানসুখ আট তারাবি রোজা সিয়াম
জামাতের চেয়ে আউয়াল ওয়াক্তে সলাত আদায়ের গুরুত্ব বেশি , ব্যাখ্যা ও দলিল বা রেফারেন্স সহ

জামা’আতে সলাত আদায়ের গুরুত্ব ও ফজিলতঃ
আমরা সকলেই জামা’আতে সলাত আদায়ের ফজিলত সম্পর্কে জানি যে, জাম’আতে সলাত আদায় করার সওয়াব একাকী সলাত আদায় করার চেয়ে ২৫ গুন কিংবা ২৭ গুন বেশি। যেমনঃ
১. আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রা.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রসূল (স.) বলেছেন, “জামা’আতে সলাতের ফজিলত একাকী আদায়কৃত সলাত অপেক্ষা সাতাশ গুন বেশী।” -সহীহুল বুখারী (হা/৬৪৫: তাওহীদ প্রকাশনী); (হা/৬১৭: ইসলামিক ফাউন্ডেশন) এবং সহীহ মুসলিম (হা/১৩৬৩: হাদীস লাইব্রেরী); (হা/১৩৫০: ইসলামিক ফাউন্ডেশন); (হা/১৩৬২: ইসলামিক সেন্টার)
২. আবূ সা’ঈদ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি আল্লাহর রসূল (স.) কে বলতে শুনেছেন, “একাকী সলাত আদায়ের চেয়ে জামা’আতে সলাত আদায়ের ফজিলত পঁচিশগুন বেশি।” -সহীহুল বুখারী (হা/৬৪৬: তাওহীদ প্রকাশনী); (হা/৬১০: আধুনিক প্রকাশনী) এবং সহীহ মুসলিম [আবূ হুরাইরাহ (রা.) সূত্রে] (হা/১৩৬২: হাদীস লাইব্রেরী); (হা/১৩৪৯: ইসলামিক ফাউন্ডেশন); (হা/১৩৬১: ইসলামিক সেন্টার)
সলাত সমূহের আউয়াল/প্রথম/উত্তম ওয়াক্তঃ
রসূল (স.) এর নিকট সবচেয়ে উত্তম আমল ছিল আউয়াল ওয়াক্তে সলাত আদায় করা, যা আমরা নিচের হাদীস থেকে জানতে পারিঃ
ক. উম্মু ফারওয়া (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “রসূল (স.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আমল সমূহের মধ্যে কোন আমল সর্বাধিক উত্তম? তিনি (স.) উত্তরে বলেন, আউয়াল ওয়াক্তে সলাত আদায় করা।” – সূনান আবূ দাউদ (হা/৪২৬: সহীহ, আলবানী একাডেমী); অধ্যায়-২: সলাত; অনুচ্ছেদ-৯: সলাতসমূহের হিফাযত করা। তিরমিযী (হা/১৭০)
প্রশ্ন হলো, প্রত্যেক সলাতের উত্তম ওয়াক্ত বা আউয়াল ওয়াক্ত কোনটি? আমরা তা সকলেই জানি। যেমনঃ
ক. ফজর সলাতের আউয়াল ওয়াক্তঃ
সুবহি সাদিকের পরপরই আদায় করা এবং অন্ধকার থাকতেই শেষ করা। -সহীহুল বুখারী (হা/৮৭২:তাওহীদ প্রকাশনী)
খ. যোহর সলাতের উত্তম ওয়াক্তঃ
যখন কোন ব্যক্তির ছায়া ঠিক তার মাথার উপরে থাকবে তখন ওয়াক্ত শুরু হয় এবং ওয়াক্ত শেষ হয়ে যায় যখন কোন ব্যক্তির ছায়া তার সমপরিমাণ হয়। -সহীহ মুসলিম (হা/১২৭৫: হাদীস লাইব্রেরী), (হা/১২৬২: ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
গ. আসর সলাতের আউয়াল ওয়াক্তঃ
কোন বস্তুর ছায়া তার একগুণ বা সমপরিমাণ হয় ওয়াক্ত শুরু হয় এবং শেষ হয় কোন বস্তুর ছায়া তার দ্বিগুণ হলে।” –সূনান আবূ দাউদ (হা/৩৯৩: হাসান, আলবানী একাডেমী)
ঘ. মাগরিব সলাতের উত্তম ওয়াক্তঃ
ওয়াক্ত শুরু হয় সুর্যাস্তের ঠিক পর পরই এবং এমন সময় সলাতের সময় শেষ হবে যখন (সলাত শেষে) কেউ তীর ছুড়লে তা পতিত হওয়ার জায়গা দেখা যাবে। -সহীহ মুসলিম (হা/১৩২৭: হাদীস লাইব্রেরী), (হা/১২১৪: ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
ঙ. ইশা সলাতের উত্তম ওয়াক্তঃ
যখন লালিমা দূর হয়ে যায় তখন থেকেই ওয়াক্ত শুরু তবে রসূল (স.) দেরী করে (অর্ধেক রাত্রি পর্যন্ত) আদায় করতে পছন্দ করতেন। -সহীহ মুসলিম (হা/১৩৩১: হাদীস লাইব্রেরী), (হা/১৩১৮: ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
কোন কোন সলাত (আউয়াল ওয়াক্তে) আদায়ের ক্ষেত্রে আমরা (অধিকাংশই) যত্নবান নইঃ
আমাদের দেশে অধিকাংশ (৯৫-৯৬%) অঞ্চলেই একক কোন ইমামের অর্থাৎ ইমাম আবূ হানীফা (রহ.) এর অন্ধ তাকলীদ করতে গিয়ে রসূল (স.) এর বিশুদ্ধ হাদীসকে পরিত্যাগ করে দেরী করে বা সলাতের শেষ ওয়াক্তে সলাত আদায় করে। বিশেষ করে, ফজর ও আসর সলাতের ক্ষেত্রে তা প্রকট যে, ফজর সলাত আদায় করে সুর্য উঠার ১৫-২০ মিনিট পূর্বে আর আসর সলাত আদায় করে সুর্যাস্তের ১.১৫ ঘন্টা থেকে ১.৩০ ঘন্টা পূর্বে।
অথচ, রসূল (স.) ফজর ও আসর সলাতের ক্ষেত্রে কি বলেছেন, তা কি মাজহাবী ভাইয়েরা জানে? তাদের উদ্দেশ্যে (একই সাথে আমাদের কারো যদি এ অভ্যাস থেকে থাকে, তাদের জন্যও) দুটি হাদীসঃ
ক. জারীর ইবনু আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “আমরা একদা রসূল (স.)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি পূর্ণিমার রাতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন, নিশ্চয় তোমরা তোমাদের রবকে অচিরেই দেখতে পাবে, যেভাবে তোমরা এই চাঁদকে দেখতে পাচ্ছ। তাকে দেখতে তোমাদের কোন কষ্টের সম্মুখীন হতে হবে না। ‘সুতরাং সুর্য উদয়ের পূর্বের সলাত ও সুর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বের সলাতের প্রতি যন্তবান হও। অতঃপর তিনি এই আয়াত পড়েন, ‘সুতরাং তোমরা প্রতিপালকের প্রশংসায় তাসবীহ পাঠ কর সূযোদয়ের পূর্বে ও সূয ডুবার পরে’ -সূরা ক্বাফ (৫০:৩৯)।” -সহীহুল বুখারী (হা/৫৫৪: তাওহীদ প্রকাশনী); (হা/৫২৭ প্রকাশনী- ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
খ. আব্দুল্লাহ ইবনু ফাযালাহ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, “তিনি বলেছেন, রসূল (স.) একদা আমাকে কিছু বিষয় শিক্ষা দান করেন। তার মধ্যে রয়েছে, তুমি (নির্ধারিত সময়ে) পাঁচ ওয়াক্তে সলাতের হিফাযত করবে। আমি বললাম, এই সময়গুলো আমার জন্য খুব ব্যস্ততার। সুতরাং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমাকে নির্দেশ দিন। যখন আমি তা পালন করব, তখন যেন আমার জন্য তা যথেষ্ট হয়। তিনি (স.) বললেন, তুমি দুই আসরকে হিফাযত কর অর্থাৎ যথাযথভাবে আদায় কর। আমাদের ভাষায় দুই আসর শব্দটি প্রচলিত না থাকায় আমি বললাম, দুই আসর কী? তিনি (স.) বললেন, সূয উঠার পূর্বের সলাত এবং সূয অস্ত যাওয়ার পূর্বের সলাত।” – সূনান আবূ দাউদ (হা/৪২৮: সহীহ, আলবানী একাডেমী)
ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে অর্থাৎ আউয়াল ওয়াক্তে সলাত আদায়ের গুরুত্ব:
ক. আবূ আমর শায়বানী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি আব্দুল্লাহ ইবনু মাস’উদ (রা.) এর দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, এ বাড়ীর মালিক আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন যে, “আমি আল্লাহর রসূল (স.) কে জিজ্ঞাসা করলাম, কোন আমল আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়? তিনি (স.) বললেন, ‘যথা সময়ে সলাত আদায়’ করা। ইবনু মাস’উদ (রা.) পুনরায় জিজ্ঞাসা……” সহীহ বুখারী (হা/৫২৭: তাওহীদ প্রকাশনী); পর্ব (৯): সলাতের সময়সমূহ; অধ্যায় (৫): সঠিক সময়ে সলাত আদায়ের মর্যাদা। সহীহ মুসলিম (হা/১৫৩-১৫৭: হাদীস লাইব্রেরী)
খ. উম্মু ফারওয়া (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “রসূল (স.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আমল সমূহের মধ্যে কোন আমল সর্বাধিক উত্তম? তিনি উত্তরে বলেন, আউয়াল ওয়াক্তে সলাত আদায় করা।” – সূনান আবূ দাউদ (হা/৪২৬: সহীহ, আলবানী একাডেমী); অধ্যায়-২: সলাত; অনুচ্ছেদ-৯: সলাতসমূহের হিফাযত করা। তিরমিযী (হা/১৭০)
ওয়াক্ত শুরু হওয়ার সাথে সাথে সলাত আদায় না করার অর্থ হচ্ছে সলাতকে বিনষ্ট করা, আর সলাতকে নষ্ট করার পরিণাম জাহান্নামঃ
মহান আল্লাহ বলেন, “ধ্বংস (দুর্ভোগ) সেই সকল সলাত আদায়কারীদের জন্য, যারা তাদের সলাত সম্পর্কে উদাসীন/অমনযোগী (কিংবা সলাতের ব্যাপারে গাফলতি করে)।” -সূরা মাউন (১০৭:৪-৫)
এ আয়াতদ্বয়ের তাফসীরে ‘তাফসীর আহসানুল বায়ান’ এ বলা হয়েছে, “সলাতে অমনযোগী বা উদাসীন বলে ঐ সমস্ত লোকদেরকে বুঝানো হয়েছে, যারা মোটেও সলাত আদায় করে না অথবা প্রথমদিকে পড়ত অতঃপর তাদের মধ্যে অলসতা এসে পড়েছে অথবা সলাত যথাসময়ে আদায় করে না, বরং যখন মন চায় তখন পড়ে নেয় অথবা দেরী করে আদায় করতে অভ্যাসী হয় অথবা বিনয়-নম্রতার (ও একাগ্রতার) সাথে সলাত আদায় করে না ইত্যাদি।”
অন্যদিকে ‘তাফসীর উবনু কাসীর’ এ উপরোক্ত আয়াতদ্বয়ের তাফসীরে বলা হয়েছে যে, তারাই তাদের সলাত থেকে উদাসীন যারা নিয়মিতভাবে বা অধিকাংশ সময়ে আউয়াল ওয়াক্তের বদলে আখেরী ওয়াক্তে সলাত আদায় করে এবং তারা রুকু ও সিজদাহ ঠিকমত আদায় করে না।
আর এরাই হল মুনাফিক যাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয় মুনাফিকরা আল্লাহকে ধোঁকা দেয়, আর তিনিও তাদের ধোঁকায় ফেলেন। যখন ওরা সলাতে দাঁড়ায়, তখন অলসভাবে (গাফলতির সাথে) দাঁড়ায় এবং লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে।” সূরা নিসা (৪:১৪২)
আল্লাহ মুনাফিকদের সলাত সম্পর্কে আরো বলেন, “মুনাফিকরা অলস ও গাফিল অবস্থায় সলাত আদায় করতে আসে।” –সূরা তওবা (৯:৫৪)
আল্লাহ তা’আলা অনত্র বলেন, “(ইব্রাহীম ও ইসরাঈলের নেককার বান্দাগণের) পরে এল অপদার্থ উত্তরসূরীরা। তারা সলাত বিনষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করল। সুতরাং অচিরেই তারা ধ্বংসে (জাহান্নামে) পতিত হবে।” –সূরা মারিয়াম (১৯:৫৯)
উপরে উল্লেখিত কোরআনের আয়াতগুলোর বাস্তবতাই হল রসূল (স.) এ নিম্মোক্ত হাদীসঃ
ক. আনাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আজকাল কোন জিনিসই সে অবস্থায় পাই না, যেমন রসূল (স.) এর যুগে ছিল। প্রশ্ন করা হল, সলাতও কি? সে ক্ষেত্রেও যা হক নষ্ট করার তা-কি তোমরা করনি? -সহীহ বুখারী (হা/৫২৯: তাওহীদ প্রকাশনী); (হা/৫০৪: ইসলামিক ফাউন্ডেশন); পর্ব (৯): সলাতের সময়সমূহ; অধ্যায় (৭): নির্ধারিত সময় হতে দেরিতে সলাত আদায় করে তার হক নষ্ট করা
খ. যুহরী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি দামিশকে, আনাস ইবনু মালিক (রা.) এর নিকট উপস্থিত হলাম। তিনি তখন কাঁদছিলেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনাকে কোন বিষয়টি কাঁদাচ্ছে? তিনি বললেন, আল্লাহর রসূল (স.) এর যুগে যা কিছু পেয়েছি তার মধ্যে কেবল সলাত ছাড়া আর কিছুই বহাল নেই। কিন্তু সলাতকেও নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। -সহীহ বুখারী (হা/৫৩০: তাওহীদ প্রকাশনী); (হা/৫০৫: ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
গ. রসূল (স.) বলেন, “আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, আমি আপনার উম্মতের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সলাত ফরয করেছি, আর একটি অঙ্গিকার করেছি যে, নিশ্চয় যে ব্যক্তি সেগুলোকে ওয়াক্ত অনুযায়ী যথাযথভাবে আদায় করে উপস্থিত হবে, আমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাব। আর যে সেগুলোকে সংরক্ষণ করবে না, তার জন্য আমার কোন অঙ্গিকার নেই।”- আবূ দাউদ (হা/৪৩০: হাসান, আলবানী একাডেমী)
উল্লেখ্য যে, উক্ত হাদীসটি উপমহাদেশীয় ছাপা সূনান আবু দাঊদে নেই। এর কারণ কি? এর একমাত্র কারণ হল, মাজহাবী গোঁড়ামি।
জামা‘আতের চেয়ে আউয়াল ওয়াক্ত বেশী গুরুত্বপূর্ণ:
আমরা যারা কোরআন ও বিশুদ্ধ হাদীস অনুযায়ী চলতে চেষ্টা করি তারা আউয়াল ওয়াক্তে সলাত আদায়ের গুরুত্ব জানি এবং সলাতকে নষ্ট করার পরিণাম সম্পর্কেও জানি। তাই, আমাদের মহল্লার মাসজিদে সঠিক/আউয়াল ওয়াক্ত/সময়ে জামা’আত হয়। সুতরাং আমরা নিজ এলাকায় অবস্থান করি, তাহলে তো অবশ্যই আমরা সেই জামা’আতে শরীক হয়ে জামা’আতের (২৫ গুন বা ২৭ গুন) সওয়াব লাভ করতে পারি।
কিন্তু আমাদেরকে যদি চাকুরী কিংবা ব্যবসা বা পড়াশুনার জন্য এমন কোন এলাকায় বা দেশে অবস্থান করতে হয় যেখানে সঠিক সময়ে সলাত আদায় না করে বরং ওয়াক্তের শেষের দিকে জামা’আত করে সালাত আদায় করা হয়, তখন কি আমরা ২৫ গুন বা ২৭ গুন বেশি সওয়াবের আশায় জামো’আতের অপেক্ষা করব? নাকি আমরা সম-মনা কয়েকজন একত্রিত হয়ে জামা’আত আদায় করে ফেলব? যদি জামা’আত করার মত লোক না হয় (অর্থাৎ আমি যদি একা হই) তাহলে আমি কি করব? এ ক্ষেত্রে আল্লাহ তা’আলা ও তার রসূল (স.) এর নির্দেশনা কি? চলুন, জেনে নিইঃ
ক. আল্লাহ তা‘আলা সলাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে বলেন, “নিশ্চয় মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে সলাত ফরয করা হয়েছে।” -সূরা নিসা (৪:১০৩)
খ. আবু যার (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূল (স.) আমাকে বলেছেন, “তুমি যদি এমন ইমামের অধীনস্থ হয়ে পড়, যে সলাতকে তার ওয়াক্ত (আউয়াল ওয়াক্ত বা উত্তম ওয়াক্ত) থেকে সরিয়ে দেরী করে পড়বে বা সলাতকে তার ওয়াক্ত থেকে মেরে ফেলবে, তখন তুমি কী করবে? আমি তখন বললাম, আপনি আমাকে কী করতে বলছেন? তখন রসূল (স.) বললেন, সলাতের সময়েই সলাত আদায় করে নাও। অতঃপর তাদের সাথে যদি আদায় করতে পার, তাহলে আদায় কর। তবে তা তোমার জন্য নফল হবে।” -সহীহ মুসলিম (হা/১৩৫১: হাদীস লাইব্রেরী); (হা/১৩৩৮: ইসলামিক ফাউন্ডেশন); (হা/১৩৫০: ইসলামিক সেন্টার)
গ. আবু যার (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূল (স.) আমাকে বলেছেন, “হে আবূ যার! আমার পরে অচিরেই এমন আমীর বা শাসকদের আবির্ভাব ঘটবে, যারা একবারে শেষ ওয়াক্তে সলাত আদায় করবে। এরুপ হলে তুমি কিন্তু (সলাতের উত্তম সময়ে) সলাত আদায় করে নিবে। পরে যদি তুমি তাদের সাথে সলাত আদায় কর, তাহলে তা তোমার জন্য নফল হিসেবে গণ্য হবে। আর যদি তা না করতে পার, তাহলে তুমি অন্তত তোমার সলাত রক্ষা করতে সক্ষম হলে।” -সহীহ মুসলিম (হা/১৩৫২: হাদীস লাইব্রেরী); (হা/১৩৩৯: ইসলামিক ফাউন্ডেশন); (হা/১৩৫১: ইসলামিক সেন্টার)
ঘ. আবু যার (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার বন্ধু রসূল (স.) আমাকে আমীরের বা নেতার আদেশ শুনতে ও মানতে আদেশ করেছেন, যদিও সে একজন হাত-পা কাটা ক্রীতদাস হয়। আর আমি যেন সময় মতো (আউয়াল বা প্রথম ওয়াক্তে) সলাত আদায় করি। এরপরে তুমি দেখ যে, লোকজন (জামা’আতে সলাত আদায় করে নিয়েছে, তাহলে তুমি তো আগেই তোমার সলাত হিফাযত করেছ। অন্যথায় (অর্থাৎ-তাদের সাথে জামা’আতের সলাত পেলে) তা তোমার জন্য নফল হিসেবে গণ্য হবে। -সহীহ মুসলিম (হা/১৩৫৩: হাদীস লাইব্রেরী); (হা/১৩৪০: ইসলামিক ফাউন্ডেশন); (হা/১৩৫২: ইসলামিক সেন্টার)
ঙ. উবাদাহ ইবনু সামিত (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (স.) আমাকে বলেছেন, “অচিরেই আমার পরে তোমাদের উপর এমন শাসকের আগমন ঘটবে, কর্মব্যস্ততা যাদেরকে নির্ধারিত সময়ে আদায় হতে বিরত রাখবে। অতএব তখন তোমরা নির্ধারিত সময়ে সলাত আদায় করে নিবে। এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রসূল (স.)! আমি কি ঐ সলাত পুনরায় তাদের সাথেও আদায় করব? তিনি (স.) বললেন, হ্যাঁ, ইচ্ছে হলে আদায় করতে পার।” –সূনান আবূ দাউদ (হা/৪৩৩: সহীহ, আলবানী একাডেমী); অধ্যায়-২: সলাত; অনুচ্ছেদ-১০: ইমাম ওয়াক্ত মোতাবেক সলাত আদায়ে বিলম্ব করলে।
চ. রসূল (স.) বলেছেন, “তোমাদের প্রতিপালক আনন্দিত হন ঐ ছাগলের রাখালের প্রতি যে একা পর্বত শিখরে দাড়িয়ে সলাতের আযান দেয় এবং সলাত আদায় করে। আল্লাহ তা‘আলা তখন ফিরিশতাগণকে লক্ষ্য করে বলেন, তোমরা আমার বান্দার প্রতি লক্ষ্য কর! সে আমার ভয়ে আযান দিচ্ছে এবং সলাত আদায় করছে। আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করালাম।” –সূনান আবূ দাউদ (হা/১২০৩: সহীহ, আলবানী একাডেমী)
উপরোক্ত আয়াত ও হাদীসগুলো থেকে শিক্ষাঃ
১. সলাতকে তার প্রথম ওয়াক্তেই আদায় করা।
২. জামা’আতের কারণে বিলম্ব করে একেবারে ওয়াক্তের শেষে সলাত আদায় না করা।
৩. কারণ বশতঃ একই দিনে এক ওয়াক্তের সলাত আউয়াল ওয়াক্তে আদায়ের পর জামা’আতের সাথে পুনরায় আদায় করা যাবে।
৪. এক্ষেত্রে প্রথমে আদায়কৃত সলাত ফরজ হিসেবে এবং পুনরায় আদায়কৃত সলাত নফল হিসেবে গণ্য হবে।
৫. অত্যাচারী শাসকের সাথেও সলাত আদায়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে (যদি সে সলাতের সময়কে নষ্ট না করে)। তা এ আশংকায় যে, দলে দলে বিভক্তির মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ’র ঐক্যে যেন ফাঁটল সৃষ্টি না হয়।
শেষ কথাঃ
যেহেতু আল্লাহ তা’আলা নির্দিষ্ট সংখ্যক সলাত নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করার জন্য ফরজ করেছেন এবং রসূল (স.) এর নিকট সর্বোত্তম আমল হল ‘আউয়াল ওয়াক্তে’ সলাত আদায় করা, আর আউয়াল ওয়াক্তে সলাত আদায় না করলে যদি সলাতকে নষ্ট করা হয়, তাহলে আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত ওয়াক্ত শুরুর সাথে সাথে সলাত আদায় করা (একাকী হলেও)।
অন্যদিকে যেহেতু জামা‘আতে সলাত আদায়ের চেয়ে আউয়াল ওয়াক্তকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে এবং ওয়াক্ত অনুযায়ী সলাত আদায় করলে আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানোরও অঙ্গীকারও করেছেন (এমনকি কোন রাখালও যদি ওয়াক্ত অনুযায়ী একাকী সলাত আদায় করে, তবুও তাকে ক্ষমা করে দেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করান), সেহেতু আর দেরী করে নয় বরং ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে সলাত আদায় করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হই (বিশেষ করে ফজর ও আসর সলাতের ব্যাপারে কারণ, ফজর ও আসর সলাতের ক্ষেত্রেই বেশী অবহেলা করা হয়)।
আর এটা যদি করতে পারি, তাহলে শুধুমাত্র ২৫ গুন কিংবা ২৭ গুন কেন, তারও চেয়ে বেশি সওয়াব লাভ করতে পারি! কারণ, যেহেতু রসূল (স.) বলেছেন, “আমার পর তোমাদের মধ্যে যারা বেচে থাকবে, তারা অল্পদিনের মধ্যেই বহু মতভেদ প্রত্যক্ষ করবে। তোমরা নতুন নতুন বিষয় আবিষ্কার হতে দূরে থাকবে, কেননা তা গোমরাহী। তোমাদের মধ্যে কেউ সে যুগ পেলে সে যেন আমার সুন্নাত ও সৎপথপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নাতে দৃঢ়ভাবে অবিচল থাকে। তোমরা এসব সুন্নাতকে চোঁয়ালের দাতের সাহায্যে শক্তভাবে কামড়ে ধরে থাকেবে।” –আত্ তিরমিযী (হা/২৬৭৬: সহীহ, হুসাইন আল মাদানী প্রকাশনী)
অনত্র রসূল (স.) বলেছেন, কেউ নেক কাজের ইচ্ছা করল কিন্তু কাজটি বাস্তবে পরিণত করলনা, তবুও আলাহ তার জন্য পূর্ণ সওয়াব লিখবেন আর কাজটি বাস্তবে পরিণত করলে দশগুণ থেকে সাতশতগুণ এমনকি তারও অধিক পরিমাণে পূন্য আল্লাহ দান করবেন। –সহীহ বুখারী (হা/৬৪৯১: তাওহীদ প্রকাশনী) এবং সহীহ মুসলিম (হা/২৩৬: প্রকাশনী-হাদীস একাডেমী); ((হা/২৪৬: প্রকাশনী-ইসলামিক সেন্টার)
হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে আপনার কোরআন ও রসূল (স.) এর সুন্নাহকে দাঁত দিয়ে আঁকড়ে ধরে রাখার তাওফিক দান করুন। -আমিন

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   এক রাকাত বিতর সালাত বা নামাজের দলিল , ব্যাখ্যা ও দলিল বা রেফারেন্স সহ
MuslimPoint Organization

About MuslimPoint Organization

MuslimPoint একটি অনলাইন ভিত্তিক ইসলামী প্রশ্নোত্তর, গ্রন্থাগার, ব্লগিং, কুরআন, হাদিস, কুইজ এবং বিষয় ভিত্তিক রেফারেন্স প্ল্যাটফর্ম।

View all posts by MuslimPoint Organization →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *