দাজ্জালের আগমন ও ফিতনা সম্পর্কে ব্যাখ্যা ও উদাহরণসহ কেয়ামতের আলামত ও ভবিষ্যতবাণী পর্ব-৩

কেয়ামতের আলামত ও ভবিষ্যতবাণী মোহাম্মাদ (স) future আখেরী বা শেষ জামানার ফিতনা ফ্যাসাদ (الروم) রোম সম্রাজ্য ও মুসলীম উম্মাহ গাজওয়াতুল হিন্দ বা ভারতের যুদ্ধ ও ইমাম মাহদীর নেতৃত্ব দাজ্জালের আগমন ও ফিতনা দাজ্জাল মাসীহুদ-দাজ্জাল মাসীহ
দাজ্জালের আগমন ও ফিতনা সম্পর্কে ব্যাখ্যা ও উদাহরণসহ কেয়ামতের আলামত ও ভবিষ্যতবাণী

[আমরা ইতিপূর্বে কেয়ামতের আলামত ও ভবিষ্যতবাণী সম্পর্কে পর্ব ভিত্তিক অনেকগুলো হাদিস ও আছার পেশ করেছি। সেগুলো দেখতে এখানে ক্লিক করুন ।]
[প্রথমেই বলে রাখি কিয়ামতের জ্ঞান শুধুমাত্র আল্লাহ’র কাছে আছে ।
‘(হে নবী মুহাম্মাদ!) মানুষ তোমাকে কিয়ামত (কবে হবে, সে) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। তুমি বলো, এর (একেবারে সঠিক) জ্ঞান শুধুমাত্র আল্লাহ’র কাছে আছে। আর (হে নবী !) তুমি কি জানো, কিয়ামত (ঘটার) সম্ভাবনা নিকটে চলে এসেছে !’ [সূরা আহযাব ৬৩]
এখানে শুধুমাত্র হাদিস ও কিছু অনুমানের ভিত্তিতে আমরা কিয়ামতের আলামতগুলো ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি । সুতরাং এখানের সকল বক্তব্য কে আমরা কখনো চূড়ান্ত বলে মনে করি না । এগুলো শুধু উল্লেখ করছি, যাতে এই রেওয়ায়েতসমূহে বর্ণিত কোনো ঘটনা ঘটতে দেখলে তা চিনে নিতে পারেন এবং রেওয়াতের হক্ব আদায় করতে পারেন।
উল্লেখ্য, যেহুতু হয়তো এখানে বর্ণিত অল্প কিছু হাদিসের সনদগত ও অন্যান্য দূর্বলতা থাকতে পারে তাই এখানে উল্লেখিত হাদিসসমূহ কোনো বিজ্ঞ মুহাদ্দেস আলেমের পরামর্শ ব্যাতীত কারো কাছে বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছি।]

দাজ্জাল সম্পর্কে আরো বেশ কিছু হাদিস ও আছার


# আনাস বিন মালেক রা. -এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেছেন- لَيْسَ مِنْ بَلَدٍ إِلَّا سَيَطَؤُهُ الدَّجَّالُ ، إِلَّا مَكَّةَ وَالْمَدِينَةَ ، وَلَيْسَ نَقْبٌ مِنْ أَنْقَابِهَا إِلَّا عَلَيْهِ الْمَلَائِكَةُ صَافِّينَ تَحْرُسُهَا ، فَيَأْتِي سِبْخَةَ الْجُرُفِ ، فَيَضْرِبُ رِوَاقَهُ ، فَتَرْجُفُ الْمَدِينَةُ ثَلَاثَ رَجَفَاتٍ ، يَخْرُجُ إِلَيْهِ مِنْهَا كُلُّ كَافِرٍ وَمُنَافِقٍ . أخرجه مسلم في صحيحه : رقم ٢٩٤٣ – “এমন কোনো শহর নেই যেখানে সে(ই খবিস দাজ্জাল) অচিরেই (দাপটের সাথে) পা মাড়িয়ে না বেড়াবে -কেবল মক্কা ও মদিনা ছাড়া। আর (মদিনার) এমন কোনো অলিগলি নেই, যার কাছে ফিরেশতাগণের সারি (অস্ত্র হাতে) পাহারারত: অবস্থায় না থাকবে। ফলে সে (মদিনা’র অনতিদূরে) সাবখাতুল-যুরফ (এলাকা)-এ এসে ওটার কিনারায় আঘাত/প্রহার করবে। এতে মদিনা তিন বার কম্পনে প্রকম্পিত হয়ে উঠবে। তখন সকল কাফের ও মুনাফেক (মদিনা থেকে) বের হয়ে তার কাছে যাবে”। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ২৯৪৩]

ফায়দা: অন্য রেওয়ায়েতে এসেছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেছেন- يَجِيءُ الدَّجَّالُ فَيَطَأُ الْأَرْضَ إِلَّا مَكَّةَ وَالْمَدِينَةَ فَيَأْتِي الْمَدِينَةَ فَيَجِدُ بِكُلِّ نَقْبٍ مِنْ نِقَابِهَا صُفُوفًا مِنْ الْمَلَائِكَةِ فَيَأْتِي سَبْخَةَ الْجَرْفِ فَيَضْرِبُ رِوَاقَهُ فَتَرْجُفُ الْمَدِينَةُ ثَلَاثَ رَجَفَاتٍ فَيَخْرُجُ إِلَيْهِ كُلُّ مُنَافِقٍ وَمُنَافِقَةٍ . رواه أحمد في مسنده : ٣/١٩١ ، وهو حديث صحيح على شرط مسلم : – “দাজ্জালে এসে পৃথিবীতে (দাপটের সাথে) পা মাড়িয়ে চলবে -কেবল মক্কা ও মদিনা ছাড়া। পরে সে মদিনায় (ঢোকার উদ্দেশ্যে) আসবে। তখন সে সেখানকার অলিগলির প্রতিটিতে ফিরেশতাদেরকে সারিবদ্ধভাবে (অস্ত্র হাতে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখতে) পাবে। ফলে সে (মদিনা’র অনতিদূরে) সাবখাতুল-যুরফ (এলাকা)-এ এসে ওটার কিনারায় আঘাত/প্রহার করবে। এতে মদিনা তিন বার কম্পনে প্রকম্পিত হয়ে উঠবে। তখন সকল মুনাফেক-পুরুষ ও মুনাফেক-নারী (মদিনা থেকে বের হয়ে) তার কাছে যাবে”। [মুসনাদে আহমদ– ৩/১৯১; আল-মুসান্নাফ, ইবনু আবি শায়বাহ- ১২/১৮১]

এই হাদিসে যে বলা হয়েছে যে, দাজ্জাল মক্কা ও মদিনায় প্রবেশ করতে পারবে না, এর ব্যাখ্যা সম্পর্কে মুহাক্কেক আলেমগণ বলেছেন যে, দাজ্জাল ‘মক্কার হারাম সীমা’ এবং ‘মদিনার হারাম সীমা’র ভিতরে প্রবেশ করতে পারবে না। এটাই সর্বগ্রহনীয় ব্যাখ্যা এবং এই ব্যাখ্যার দ্বারা দাজ্জাল বিষয়ক আরো বহু জটিল প্রশ্নের সমাধান হয়ে যায়, যার কিছু নমুনা নিম্নেও দেখতে পাবেন। الله اعلم بالصواب

# মিহযান বিন আদরা’ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি এরশাদ করেন- ان رسول الله صلى الله عليه وسلم خطب الناس فقال : يَوْمُ الْخَلاصِ وَمَا يَوْمُ الْخَلاصِ ، يَوْمُ الْخَلاَصِ وَمَا يَوْمُ الْخَلاَصِ ، يَوْمُ الْخَلاَصِ وَمَا يَوْمُ الْخَلاَصِ ، ثَلاثًا ، فَقِيلَ لَهُ : وَمَا يَوْمُ الْخَلاَصِ ؟ قَالَ : يَجِيءُ الدَّجَّالُ فَيَصْعَدُ أُحُدًا فَيَنْظُرُ الْمَدِينَةَ فَيَقُولُ لأَصْحَابِهِ : أَتَرَوْنَ هَذَا الْقَصْرَ الأَبْيَضَ ؟ هَذَا مَسْجِدُ أَحْمَدَ ، ثُمَّ يَأْتِي الْمَدِينَةَ فَيَجِدُ بِكُلِّ نَقْبٍ مِنْهَا مَلَكًا مُصْلِتًا ، فَيَأْتِي سَبْخَةَ الْحَرْفِ فَيَضْرِبُ رُوَاقَهُ ، ثُمَّ تَرْجُفُ الْمَدِينَةُ ثَلاثَ رَجَفَاتٍ ، فَلا يَبْقَى مُنَافِقٌ وَلا مُنَافِقَةٌ ، وَلا فَاسِقٌ وَلا فَاسِقَةٌ إِلا خَرَجَ إِلَيْهِ ، فَذَلِكَ يَوْمُ الْخَلاصِ . رواه أحمد في مسنده : ٤/٣٣٨ ، و قال الهيثمي في مجمع الزوائد : ٣/٣١١ : و رجاله رجال الصحيح ، و قال شعيب الأرنؤوط في تحقيقه : ٤/٣٣٨ رقم ١٨٩٩٦ : إسناده ضعيف لانقطاعه عبد الله بن شقيق لم يسمع محجن بن الأدرع ، رواه الحاكم ايضا في المستدرك : ٤/٥٤٣ و قال : هذا حديث صحيح على شرط مسلم و لم يخرجاه , و وافقه الذهبي، و قال الألباني في رسالته : قصة المسيح الدجال: ص ٨٩ : وهو كما قالا إن سلم من الانقطاع بين عبد الله بن شقيق ومحجن فقد أدخل بينهما رجاء بن أبي رجاء الباهلي في رواية لأحمد ابن حنبل : ١/٤٦ : وإسنادها أصح من إسناده الرواية الأولى لكنها على كل حال لا بأس بها في الشواهد ، و رواه ايضا الطبرانى في الأوسط : ٣٥١٥، و حنبل بن إسحاق في الفتن : رقم ٣٦ – “(একবার) রাসুলুল্লাহ ﷺ লোকজনের সামনে কথা রাখছিলেন। তখন (এক পর্যায়ে) বললেন: ‘ইয়ামুল খালাস (বহিষ্কারের দিন)! (তোমরা জানো কি) ইয়ামুল খালাস কী? ইয়ামুল খালাস (বহিষ্কারের দিন)! (তোমরা জানো কি) ইয়ামুল খালাস কী? ইয়ামুল খালাস (বহিষ্কারের দিন)! (তোমরা জানো কি) ইয়ামুল খালাস কী’? (এভাবে কথাটি তিনি) তিনবার বললেন। তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল: ‘(ইয়া রাসুলাল্লাহ!) ‘ইয়ামুল খালাস (বহিষ্কারের দিন) কী’? তিনি বললেন: ‘দাজ্জাল (মদিনার কাছে) আসবে। পরে সে উহূদ (পাহাড়)-এ আরোহন করবে। তারপরে সে (ওখান থেকে) মদিনার (মসজিদের) দিকে তাকিয়ে তার সঙ্গিসাথীদেরকে বলবে: ‘তোমরা কি এই সাদা বিল্ডিংটিকে দেখতে পাচ্ছো? এটা হল আহমাদ -এর মসজিদ’। এরপর সে (ওখান থেকে নেমে) মদিনায় (ঢোকার উদ্দেশ্যে) আসবে। (এসে) দেখতে পাবে যে, সেখানকার প্রতিটি গলিতে ফিরেশতা অস্ত্রহাতে রয়েছে। তখন সে (মদিনা’র অনতিদূরে) সাবখাতুল-যুরফ (এলাকা)-এ এসে সেটার কিনারায় আঘাত/প্রহার করবে। এরপর মদিনা তিন বার কম্পনে প্রকম্পিত হয়ে উঠবে। তখন এমন কোনো মুনাফেক পুরুষ, মুনাফেক নারী, ফাসেক পুরুষ ও ফাসেক নারী বাকি থাকবে না, যে (মদিনা থেকে) বের হয়ে তার কাছে না যাবে। এটাই হল ‘ইয়ামুল খালাস (বহিষ্কারের দিন)’। [মুসনাদে আহমদ– ৪/৩৩৮, ৫/৩১ ; মুসতাদরাকে হাকিম- ৪/৫৪৩; আল-মু’জামুল আউসাত, ত্বাবরাণী, হাদিস ৩৫১৫; মু’জামুস সাহাবাহ, ইবনু কানে- ১৮১৪; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৩/৩১১]

ফায়দা: এই হাদিসে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, দাজ্জাল মদিনায় প্রবেশ করতে যাওয়ার আগে প্রথমে উহূদ পাহাড়ে অবতরন করবে। এরপর সেখান থেকে ‘মসজিদে নববী’র দিকে তাকিয়ে বলবে- أَتَرَوْنَ هَذَا الْقَصْرَ الأَبْيَضَ ؟ هَذَا مَسْجِدُ أَحْمَدَ – “তোমরা কি এই সাদা বিল্ডিংটিকে দেখতে পাচ্ছো? এটা হল আহমাদ -এর মসজিদ”। সহিহ মুসলীমের রেওয়ায়েতে আছে- حَتَّى يَنْزِلَ دُبُرَ أُحُدٍ – ‘এমনকি সে উহূদ (পাহাড়)-এর পাদদেশে অবতরণ করবে’। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ১৩৮০] এর অর্থ হল, উহূদ পাহাড়েরর যে অংশটি ‘মদিনার হারাম সীমা’র বাহিরে অবস্থিত তার পাদদেশে কোথাও সে অবতরন করবে।

রাসুলুল্লাহ ﷺ যে সময় এই ভবিষ্যতবাণীটি ব্যাক্ত করেছিলেন, তখন তাঁর মদিনা সমজিদটি ছিল খেজুর গাছের স্তম্ভ, ডালপালা, পাতার ছাউনি ইত্যাদি দিয়ে বানানো একটি মসজিদ। ১৯৪৭ ইংস সালের দিকে আরবে তেল আবিষ্কৃত হওয়ার আগে কেউ কি ভেবেছিল মদিনার ‘মসজিদে নববী’ এতটা উন্নত প্রযুক্তির শানদার একটি মসজিদ তৈরী হবে !? এখানে ‘সাদা’ বলতে একেবারে ধবধবে সাদা উদ্দেশ্য নয়। কোনো কিছুকে মোটের উপরে বোঝানোর জন্যও এধরনের কথা বলা হয়ে থাকে। আরবে সেকালে ‘সাদা চামড়ার খৃষ্টানদেরকে’ বলা হত ‘বনু আসফার’। অথচ ‘আসফার’ হল হলদে রং। এজন্য মসজীদে নববীকে ‘সাদা বিল্ডিং’ বলাতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই। কারণ এটিকে মোটের উপরে ‘সাদা বিল্ডিং’ বলা হয়েছে। আর তাছাড়া বৈদ্যুতিক পাওয়ারী লাইটে ঘেরা মসজিদে নববীকে রাতের বেলা গোটা মসজিদটিকে একটি জ্যোতির্ময় সাদা উজ্জল সমজিদই দেখায়। রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর বাণী মোবারকটি আজ প্রায় চেদ্দি’শ বছর পরে এসে ‘মু’জেজা’ আকারে প্রকাশ পেয়েছে। তার মানে আমরা দাজ্জালের খুব কাছে চলে এসেছি। আল্লাহু আলাম ।

এরপরে দাজ্জাল উহূদের পাদদেশ থেকে নেমে মদিনায় ঢোকার জন্য অগ্রসর হবে এবং মদিনার প্রতিটি দ্বারপথে ফিরেশতাগণকে তরবারী নিয়ে প্রস্তুত অবস্থায় দেখতে পাবে। ফলে সে উপায়ন্ত না দেখে সেখান থেকে ফিরে গিয়ে ‘সাবখাতুল-যুরফ’ এলাকায় আসবে। ইবনে মাজাহ-তে দূর্বল সনদে এভাবে এসেছে- حَتَّى يَنْزِلَ عِنْدَ الظُّرَيْبِ الأَحْمَرِ عِنْدَ مُنْقَطَعِ السَّبَخَةِ فَتَرْجُفُ الْمَدِينَةُ بِأَهْلِهَا ثَلاَثَ رَجَفَاتٍ – “অবশেষে (উপায়ন্ত না দেখে) সে (মদিনার অনতিদূরের একটি) বিচ্ছিন্ন সাবখা’র নিকটে (অবস্থিত একটি) লাল টিলার কাছে (গিয়ে) অবতরণ করবে। তখন মদিনা তার অধিবাসিদেরকে নিয়ে তিনবার (ভীষন জোরে) প্রকম্পিত হয়ে উঠবে”। [সুনানে ইবনে মাজাহ- ২/১৩৫৯ হাদিস ৪০৭৭]

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   ব্যাখ্যা ও উদাহরণসহ কেয়ামতের আলামত ও ভবিষ্যতবাণী পর্ব-৪

‘মদিনা তৈয়্যেবা’র ‘হারাম সীমার’ বাইরে অবস্থিত ‘লাল টিলা’ এবং ‘সাবখাতুল যুরফ’ সম্পর্কে কিছুটা ধারনা পেতে এখানে ক্লিক করুন: [ ১, ২] الله اعلم بالصواب

# আবু সাঈদ খুদরী রা. -এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তিনি এরশাদ করেন- حَدَّثَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا حَدِيثًا طَوِيلًا عَنْ الدَّجَّالِ ، فَكَانَ فِيمَا يُحَدِّثُنَا بِهِ أَنَّهُ قَالَ: يَأْتِي الدَّجَّالُ ، وَهُوَ مُحَرَّمٌ عَلَيْهِ أَنْ يَدْخُلَ نِقَابَ المَدِينَةِ ، فَيَنْزِلُ بَعْضَ السِّبَاخِ الَّتِي تَلِي المَدِينَةَ ، فَيَخْرُجُ إِلَيْهِ يَوْمَئِذٍ رَجُلٌ ، وَهُوَ خَيْرُ النَّاسِ – أَوْ مِنْ خِيَارِ النَّاسِ – فَيَقُولُ أَشْهَدُ أَنَّكَ الدَّجَّالُ الَّذِي حَدَّثَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَدِيثَهُ ، فَيَقُولُ الدَّجَّالُ: أَرَأَيْتُمْ إِنْ قَتَلْتُ هَذَا ، ثُمَّ أَحْيَيْتُهُ ، هَلْ تَشُكُّونَ فِي الأَمْرِ؟ فَيَقُولُونَ: لاَ ، فَيَقْتُلُهُ ثُمَّ يُحْيِيهِ ، فَيَقُولُ: وَاللَّهِ مَا كُنْتُ فِيكَ أَشَدَّ بَصِيرَةً مِنِّي اليَوْمَ ، فَيُرِيدُ الدَّجَّالُ أَنْ يَقْتُلَهُ فَلاَ يُسَلَّطُ عَلَيْهِ . أخرجه البخاري في صحيحه , كتاب الفتن , باب لا يدخل الدجال المدينة : ٧١٣٢ ، ومسلم في صحيحه : ٢٩٣٨ – “একদিন রাসুলুল্লাহ ﷺ আমাদের কাছে দাজ্জালের ব্যাপারে দীর্ঘ আলোচনা রাখলেন। (সেদিন) ওর ব্যাপারে তিনি আমাদেরকে যা কিছু বলেছিলেন, তার মধ্যে এও বলেছিলেন যে: ‘দাজ্জাল আসবে। তবে তার জন্য মদিনার (সকল) অলিগলিতে প্রবেশ করা নিষিদ্ধ থাকবে। তখন সে এক সাবখ (এলাকা)-এ অবতরন করবে যা মদিনার (অনতিদূর) পাশেই (অবস্থিত) হবে। সেই (দাজ্জালের) সময় (একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা এই ঘটবে যে) এক (যবক) ব্যাক্তি -আর সে হবে মানুষের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যাক্তি অথবা (বলেছেন) মানুষের মধ্যে নির্বাচিত ব্যাক্তি- সে বের হয়ে (দাজ্জালের সামনে গিয়ে) বলবে: ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুই হচ্ছিস দাজ্জাল যার কথা রাসুলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে বলে গেছেন’। তখন দাজ্জাল (অন্যদেরকে উদ্দেশ্য করে) বলবে: ‘আমি যদি একে হত্যা করে পরে ওকে পুনর্জীবিত করি তাহলে তোমারা কী বলবে? (আমি যে তোমাদের রব/প্রভু -সে) ব্যাপারে কি তোমাদের কোনো সন্দেহ থাকবে’? এতে তারা বলবে: ‘না’। তখন সে তাকে হত্যা করে আবার জীবিত করবে। এতে সে(ই যুবকটি) বলবে: ‘আল্লাহ’র কসম! (রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর বাণীর হুবহু বাস্তবায়ন আমার নিজের চোখের সামনে খোদ্ আমারই সাথে হতে দেখে) তোর (দাজ্জাল হওয়ার) ব্যাপারে (আজ আমার যে ইমানী অন্তর্দৃষ্টি লাভ হল) এত পরিষ্কার অন্তর্দৃষ্টি আজকের পূর্বে আমার (জীবনে আর) কখনো লাভ হয়নি’। তখন দাজ্জাল তাকে (আবারো) হত্যা করতে চাইবে, কিন্তু তার উপরে চড়াও পাবে না”। [সহিহ বুখারী, হাদিস ৭১৩২; সহিহ মুসলীম, হাদিস ২৯৩৮]

# আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- يَأْتِي الْمَسِيحُ مِنْ قِبَلِ الْمَشْرِقِ هِمَّتُهُ الْمَدِينَةُ ، حَتَّى يَنْزِلَ دُبُرَ أُحُدٍ ، ثُمَّ تَصْرِفُ الْمَلائِكَةُ وَجْهَهُ قِبَلَ الشَّامِ وَهُنَالِكَ يَهْلِكُ . رواه مسلم في الحج باب صيانة المدينة : ١٣٨٠ ، وأحمد: ٢٧٥٠٨ ، والترمذي في الفتن :٢١٦٩ – ‘মাসিহ (দাজ্জাল) আসবে পূর্বদিক থেকে; তার লক্ষ্য হবে মদিনা। এমনকি সে উহূদ (পাহাড়)-এর পাদদেশে অবতরণ করবে। এরপর ফেরেশতাগণ তার মাথাকে শাম-এর দিকে ঘুরিয়ে দিবেন। (ফলে সে শামে চলে যাবে ও ঘটনার এক পর্যায়ে ঈসা আ.-এর হাতে) সেখানে নিহত হবে’। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ১৩৮০; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ২৭৫০৮; সুনানে তিরমিযী, হাদিস ২১৬৯]

ফায়দা: ইতিপূর্বে উল্লেখীত হাদিস সমূহ ও তার ব্যাখ্যা গুলো পর্যালোচনা করে দেখলে অনুমিত হয় যে, দাজ্জাল বের হলে ইরানের সত্তর হাজার ইহূদী তার বশ্যতা মেনে নিবে ও তার অনুসরণ করবে। সম্ভবত: তারপর সে মদিনার কাছে এসে প্রথমে উহূদ পাহাড়ের পাদদেশে অবতরন করবে। এরপর ‘সাবখাতুল-যুরফ’ এলাকায় তার গমন, তারপর মদিনা তিনবার কেঁপে ওঠা এবংএর ফলে সকল কাফের ও মুনাফেক নারী-পুরুষ মদিনা থেকে বের হয়ে তার কাছে যাওয়া ইত্যাদি শেষে ফেরেশতাগণ তার মাথাকে শামের দিকে ঘুড়িয়ে দিবে, ফলে সে মদিনা ছেড়ে শামে চলে যাবে লোকজনকে ফিতনায় ফেলানোর জন্য। الله اعلم بالصواب

# নাফে বিন উৎবাহ বিন আবি ওয়াক্কাস রা. -এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বর্ণনা করেন – كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي غَزْوَةٍ – قَالَ – فَأَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَوْمٌ مِنْ قِبَلِ الْمَغْرِبِ عَلَيْهِمْ ثِيَابُ الصُّوفِ فَوَافَقُوهُ عِنْدَ أَكَمَةٍ فَإِنَّهُمْ لَقِيَامٌ وَرَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَاعِدٌ – قَالَ – فَقَالَتْ لِي نَفْسِي ائْتِهِمْ فَقُمْ بَيْنَهُمْ وَبَيْنَهُ لاَ يَغْتَالُونَهُ – قَالَ – ثُمَّ قُلْتُ لَعَلَّهُ نَجِيٌّ مَعَهُمْ ‏.‏ فَأَتَيْتُهُمْ فَقُمْتُ بَيْنَهُمْ وَبَيْنَهُ – قَالَ – فَحَفِظْتُ مِنْهُ أَرْبَعَ كَلِمَاتٍ أَعُدُّهُنَّ فِي يَدِي قَالَ : تَغْزُونَ جَزِيرَةَ الْعَرَبِ فَيَفْتَحُهَا اللَّهُ ثُمَّ فَارِسَ فَيَفْتَحُهَا اللَّهُ ثُمَّ تَغْزُونَ الرُّومَ فَيَفْتَحُهَا اللَّهُ ثُمَّ تَغْزُونَ الدَّجَّالَ فَيَفْتَحُهُ اللَّهُ ‏‏.‏ قَالَ فَقَالَ نَافِعٌ يَا جَابِرُ لاَ نَرَى الدَّجَّالَ يَخْرُجُ حَتَّى تُفْتَحَ الرُّومُ ‏. رواه مسلم في الصحيح , كتاب الفتن وأشراط الساعة : ٤/٢٢٢٥ رقم ٢٩٠٠، و أحمد في المسند : ٤/٣٣٨، و ابن ماجه في سننه : ٢/١٣٧٠ رقم ٤٠٩١ – “আমরা এক গাজওয়া’য় (জিহাদে) রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর সাথে ছিলাম’। নাফে রা. বলেন: ‘তখন পশ্চিম দিক থেকে একটি কওম নবী ﷺ-এর কাছে এল। তাদের গায়ে ছিল পশমের পোশাক। তারা একটি টিলার নিকটে তাঁর সাথে পরিচয় বিনিময় করলো। তখন তারা দাঁড়িয়ে ছিল এবং রাসুলুল্লাহ ﷺ ছিলেন বসে’। নাফে রা. বলেন: ‘আমি নিজ মনে একথা বললাম যে, আমি তাদের কাছে গিয়ে তাদের ও তাঁর মাঝে দাঁড়াই, যাতে তারা (সুযোগ বুঝে আবার) হত্যা করে না ফেলে। পরে বললাম, তিঁনি হয়তো তাদের সাথে (এমন কোনো) গোপনীয় আলাপ বলছেন (যার মধ্যে আমার শরীক থাকা উচিৎ হবে না)। (কিন্তু যাই হোক) পরে আমি তাদের কাছে এসে তাদের ও তাঁর মাঝে দাঁড়ালাম’। নাফে রা. বলেন: ‘তখন আমি তাঁর থেকে চারটি কথা মুখস্ত করে নিলাম, (এবং) সেগুলোকে আমি আমার হাতেই গুণে রাখলাম’। তিঁনি বললেন: ‘তোমরা জাজিরাতুল আরবের (কাফেরদের) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, পরে আল্লাহ তাতে (তোমাদের মুসলমানদেরকে) বিজয় দান করবেন। এরপর (তোমরা) ফারেসের (কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে), পরে আল্লাহ তাতে বিজয় দান করবেন। এরপর তোমরা রোমের (কাফেরদের) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, পরে আল্লাহ তাতে বিজয় দান করবেন। এরপর তোমরা দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, পরে আল্লাহ তাতে (তোমাদেরকে) বিজয় দান করবেন”। [সহিহ মুসলীম– ৪/২২২৫ হাদিস ২৯০০; মুসনাদে আহমদ– ৪/৩৩৮; সুনানে ইবনে মাজাহ- ২/১৩৭০ হাদিস ৪০৯১; হিলইয়াতুল আউলিয়াহ, আবু নুআইম- ৮/২৮১]

ফায়দা: জারিজারুত আরবে মুশরেক কাফেরদের সাথে, তারপর ফারেসের কাফেরদের সাথে, তারপর বোমদের কাফেরদের সাথে সাহাবীগণ জিহাদ করেছেন এবং আল্লাহ তাআলা তাঁদেরকে বিজয় দান করেছেন। আমাদের এই আখেরী জামানায় ইমাম মাহদী রা.-এর নেতৃত্বে মুসলমানগণ দাজ্জালের সাথে জিহাদ করবেন এবং দাজ্জাল তার বাহীনি সহ পরাজিত হবে। الله اعلم بالصواب

# ইমরান বিন হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- لَا تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي يُقَاتِلُونَ عَلَى الْحَقِّ ظَاهِرِينَ عَلَى مَنْ نَاوَأَهُمْ، حَتَّى يُقَاتِلَ آخِرُهُمُ الْمَسِيحَ الدَّجَّالَ . رواه أبو داود في سننه, كتاب الجهاد, باب في دوام الجهاد: حديث رقم ٢٤٨٤ , و صححه الالبانى في سلسلة الأحاديث الصحيحة: ٤/٦٠١ رقم ١٩٠٩ ; و أحمد: حديث رقم ١٩٨٩٥ و قال شعيب الارنؤوط: إسناده صحيح على شرط الشيخين ; و الحاكم في المستدرك: ٣/٤٥٠ و قال: صحيح على شرط مسلم و وافقه الذهبي – ‘আমার উম্মতের মধ্যে একটি গোষ্ঠি (জামাআত/দল) সর্বদা হক্বের উপর (প্রতিষ্ঠিত) থেকে (ইসলাম বিরোধীদের সাথে) ক্বিতাল (সমর জিহাদ) করবে। তারা (সর্বদা অদমনীয় থাকবে এবং) যারা তাঁদের বিরুদ্ধে নামবে, তাঁরা তাদের উপরে প্রবল থাকবে। এমনকি তাঁদের শেষভাগ (-এর মুমিন মুজাহিদগণ) মাসিহ্ দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে’। [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ২৪৮৪; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ১৯৮৯৫; মুসতাদরাকে হাকিম- ৩/৪৫০]

ফায়দা: নাহিক বিন সুরাইম আস-সাকুনী থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেছেন- لتقاتلن المشركين حتى تقاتل بقيتكم الدجال ، على نهر بالأردن ، أنتم شرقيه ، و هم غربيه ، و ما أدري أين الأردن يؤمئذ من الأرض . اخرجه البزار في كشف الأستار: ٤/١٣٨ رقم ٣٣٨٧ ; و و الطبراني في مسند الشاميين: رقم . قال الهيثمي في في ” مجمع الزوائد : ٧/٣٤٩ : رواه الطبراني والبزار ورجال البزار ثقات ; و اخرجه ايضا ابن سعد في الطبقات: ٧/٤٢٢ ; والديلمي في مسند الفردوس: ٤/١٨٦ ; وابن أبي عاصم في الآحاد والمثاني برقم ٧٧٣ ; و قال الألباني في ” السلسلة الضعيفة و الموضوعة: ٣/٤٦٠ رقم ١٢٩٧ – ‘অবশ্যই মুশরেকদের সাথে তোমাদের যুদ্ধ হবে। এমনকি তোমাদের (মুসলমানদের) বাকি অংশ দাজ্জালের সাথে যুদ্ধ করবে -উরদুনে অবস্থিত (একটি) নহরের ধারে, যার পূর্ব পার্শ্বে থাকবে তোমরা, আর তার পশ্চিম পার্শ্বে থাকবে ওরা। (রাবী বলেন:) আমি জানি না, সেদিন উরদুন (অঞ্চলটি) পৃথিবীর কোথায় হবে’। [মুসনাদে বাযযার -৪/১৩৭ হাদিস ৩৩৮৭; মুসনাদে শামেঈন, ত্বাবরাণী ; আল-আহাদ ওয়াল মাছানী, ইবনু আবি আসিম, হাদিস ৭৭৩; আত-ত্ববাকাত, ইবনে সা’দ- ৭/৪২২; মুসনাদে ফিরদাউস, দাইলামী- ৪/১৮৬; তারিখে দামেশক, ইবনু আসাকীর -৬২/৩২৩; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৭/৩৪৯]

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   জ্বিন বিষয়ক আয়াত

এই হাদিসে ‘উরদুন’ বলতে বর্তমান সময়কার জর্দান দেশ উদ্দেশ্য। জর্দান ও ইসরাইলের মাঝখানে যে নহর/নদীটি উভয় দেশকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে, হাদিসের উরদুনে অবস্থিত নহর/নদী বলতে সেই নহরটিই উদ্দেশ্য। ২৫১ কিমি. দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট জর্দান নদীটি এশিয়া মহাদেশ এর মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে দীর্ঘতম নদী, যা শেষ হয়েছে মৃত সাগর বা Dead sea তে।

এখানে মুজাহিদগণের একটি জামাআতের সাথে দাজ্জাল ও তার অনুসারী ইহুদীদের যুদ্ধ হবে। ঈসা ইবনে মারইয়াম আ. আসমান থেকে সিরিয়ার দামেশকের জামে’ মসজিদের মিনারে অবতরণ করবেন এবং ফিলিস্তিনের লুদ নামক স্থানে দাজ্জালকে হত্যা করবেন। খুব সম্ভবতঃ দাজ্জালের মৃত্যুর পর তার অনুসারী ইহূদীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালাতে থাকবে, তখন মুসলমানরা তাদেরকে পাইকারী হারে হত্যা করবে। যেমন, আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ সা. এরশাদ করেছেন- لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يُقَاتِلَ الْمُسْلِمُونَ الْيَهُودَ ، فَيَقْتُلُهُمُ الْمُسْلِمُونَ حَتَّى يَخْتَبِئَ الْيَهُودِيُّ مِنْ وَرَاءِ الْحَجَرِ وَالشَّجَرِ، فَيَقُولُ الْحَجَرُ أَوِ الشَّجَرُ: يَا مُسْلِمُ يَا عَبْدَ اللهِ هَذَا يَهُودِيٌّ خَلْفِي ، فَتَعَالَ فَاقْتُلْهُ ، إِلَّا الْغَرْقَدَ، فَإِنَّهُ مِنْ شَجَرِ الْيَهُودِ . رواه مسلم , كتاب الْفِتَنِ وَأَشْرَاطِ السَّاعَةِ, بَاب لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَمُرَّ الرَّجُلُ بِقَبْرِ الرَّجُلِ فَيَتَمَنَّى أَنْ يَكُونَ مَكَانَ الْمَيِّتِ مِنْ الْبَلَاءِ: رقم ٢٩٢٢ ; و الدانى في السنن الواردة في الفتن, بَابُ مَا جَاءَ فِي قِتَالِ هَذِهِ الأُمَّةِ أَهْلَ: ٤٥١; و أحمد في المسنده: رقم ٢٧٥٠٢ ; و الخطيب البغدادي في تاريخ: ٨/١١٤ – ‘কেয়ামত কায়েম হবে না, যাবৎ না মুসলমানরা ইহুদীদের সাথে ক্বিতাল (স্বসস্ত্র জিহাদ) করে। পরে মুসলমানরা তাদেরকে কতল করবে। এমনকি (মুসলমানদের ধাওয়া খেয়ে) ইহূদীরা পাথর ও গাছের পিছনে লুকিয়ে পড়বে। তখন পাথর বা গাছ বলবে: ‘হে মুসলীম! ওহে আল্লাহ’র বান্দা ! এই যে আমার পিছনে ইহূদী (লুকিয়ে আছে)’। তখন সে এসে তাকে কতল করবে। শুধু বাবলা গাছ স্বতন্ত্র (সে একথা বলবে না), কারণ সে ইহূদীদের গাছ’। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ২৯২২; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ২৭৫০২; আস-সুনানুল ওয়ারিদাহ, ইমাম দানী, হাদিস ৪৪৯; তারিখে বাগদাদ, খতীব- ৮/১১৪]

হাদিসটিতে মুশরেকদের সাথে যুদ্ধ বলতে আমার মতে ‘গাজওয়াতুল হিন্দ’ উদ্দেশ্য। যেমন, সওবান রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- عِصَابَتَانِ مِنْ أُمَّتِي أَحْرَزَهُمَا اللَّهُ مِنَ النَّارِ: عِصَابَةٌ تَغْزُو الْهِنْدَ، وَعِصَابَةٌ تَكُونُ مَعَ عِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ عَلَيْهِمَا السَّلَام. روى النسائي فى سننه: ٣١٧٥ ، و أحمد فى المسند:١٨/٣٧ رقم ٢٢٣٩٦, وهو حديث صحيح، صححه الإمام السيوطي في الجامع الصغير، والألباني في صحيح الجامع: ٤٠١٢ والصحيحة: ١٩٣٤ – ‘আমার উম্মতের মধ্যে দুটি দল রয়েছে, আল্লাহ তাদের উভয়কে দোযখ থেকে মুক্তি দিবেন। (১) হিন্দ (ভারত)-এর সাথে গাজওয়া (জিহাদ) করনেওয়ালা দল এবং (২) ঈসা ইবনে মানইয়াম আ.-এর সঙ্গী দল।’। [সুনানে নাসায়ী, হাদিস ৩১৭৫; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ২২৩৯৬]

আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- وَعَدَنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم غَزْوَةَ الْهِنْدِ فَإِنْ أَدْرَكْتُهَا أُنْفِقْ فِيهَا نَفْسِي وَمَالِي فَإِنْ أُقْتَلْ كُنْتُ مِنْ أَفْضَلِ الشُّهَدَاءِ وَإِنْ أَرْجِعْ فَأَنَا أَبُو هُرَيْرَةَ الْمُحَرَّرُ. روى النسائي ٣١٧٣ ، وأحمد ٢/٢٢٩, والحديث ضعفه الألباني في ضعيف سنن النسائي ٢٠٢ ، ٢٠٣ . وكذلك الشيخ شعيب الأرنؤوط في تخريجه لمسند أحمد ١٢/٢٩ , البداية والنهاية لابْنُ كَثِيرٍ: ١٩/١٠ – ‘রাসুলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে গাজওয়ায়ে-হিন্দ -এর ওয়াদা করেছেন। সুতরাং আমি যদি তা পেয়ে যাই, তাহলে আমি আমার জান ও মাল (আল্লাহ’র রাস্তায়) দিয়ে দিবো। আর যদি আমাকে (ওই যুদ্ধে) কতল করে ফেলা হয়, তাহলে আমি হবো সর্বোত্তম শহিদগণের মধ্যে একজন। আর আমি যদি (ওই জিহাদে বেঁচে) ফিরে আসি, তাহলে আমি আবু হুরায়রাহ হবো (দোযখের শাস্তি থেকে) মুক্তিপ্রাপ্ত ’। [সুনানে নাসায়ী, হাদিস ৩১৭৩; মুসনাদে আহমদ- ২/২২৯; আল-বিদায়াহ ওয়ান-নিহায়াহ, ইবনে কাসির- ১০/১৯]

মুজাহিদগণ ভারতের মুশরেকদের উপরে জয় লাভ করার পর তাদের লিডারদেরকে বেঁধে নিয়ে যখন শাম-এ যাবেন তখন সেখানে গিয়ে তাঁরা ঈসা ইবনে মারইয়াম আ.-কে দেখে ধন্য হবেন। ইমাম নুআইম বিন হাম্মাদ (মৃ: ২২৮ হি:) নিজ সনদে হযরত আবু হুরায়রাহ রা.-এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন- عن صفوان بن عمرو ، عن بعض المشيخة ، عن أبي هريرة رضي الله عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم – وذكر الهند – فقال : ليغزون الهند لكم جيش يفتح الله عليهم ، حتى يأتوا بملوكهم مغللين بالسلاسل ، يغفر الله ذنوبهم ، فينصرفون حين ينصرفون فيجدون ابن مريم بالشام . قال أبو هريرة : إن أنا أدركت تلك الغزوة بعت كل طارف لي وتالد وغزوتها ، فإذا فتح الله علينا وانصرفنا فأنا أبو هريرة المحرر ، يقدم الشام فيجد فيها عيسى بن مريم ، فلأحرصن أن أدنوا منه فأخبره أني قد صحبتك يا رسول الله . قال : فتبسم رسول الله صلى الله عليه وسلم وضحك ثم قال : هيهات ، هيهات . رواه نعيم بن حماد في ” الفتن ” : ص/٤٠٩, وفي سنده إبهام الراوي عن أبي هريرة ، كما أن في سنده بقية بن الوليد مدلس وقد عنعن – ‘রাসুলুল্লাহ ﷺ (একবার) হিন্দ-এর উল্লেখ করলেন। তিনি বললেন: অবশ্যই তোমাদের (মুসলমানদের একটি) সৈন্যদল হিন্দে’র সাথে গাজওয়া (জিহাদ) করবে (এবং) আল্লাহ (তাআলা তোমাদের মুজাহিদগণকে) তাদের উপর বিজয় দান করবেন। এমন কি তারা ওদের রাষ্ট্রনায়কদেরকে শিকলে বেঁধে নিয়ে আসবে। আল্লাহ তাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। এরপর তারা (তাদেরকে রেখে) চলে যাবে এবং শাম-এ (গিয়ে) তারা ঈসা ইবনে মারইয়াম (আ.)-এর দেখা পাবে’। (রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর একথা শুনে) হযরত আবু হুরায়রাহ রা. বলেন: আমি যদি (আমার জীবনকালে) সেই গাজওয়া (জিহাদ) পেয়ে যাই, তাহলে আমার নতুন-পুরাতন তল্পিতল্পা সব বিক্রি করে দিয়ে সেই গাজওয়ায় অংশ নিবো। এরপর আল্লাহ তাআলা যখন আমাদেরকে বিজয় দান করবেন এবং আমরা সেখান থেকে ফিরে আসবো, তখন আমি আবু হুরায়রাহ হবো (দোযখের আগুন থেকে) মুক্তিপ্রাপ্ত। (আহা ! সেই সময়ে আবু হুরায়রাহ’র কি আনন্দ হত, যখন) সে শাম-এ গিয়ে সেখানে ঈসা ইবনে মারইয়াম (আ.)-এর দেখা পেতো! ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার খুব ইচ্ছে হয় তাঁর সান্নিধ্যে যেতে এবং তাঁকে এই খবর দিতে যে আমি আপনরা সাহাবী। তিনি বলেন: রাসুলুল্লাহ ﷺ (আমার একথা শুনে) মুচকি হেসে দিলেন, অতঃপর বললেন: এমনটা হবার নয় ! এমনটা হবার নয়’! [আল-ফিতান, নুআইম বিন হাম্মাদ, হাদিস ১২৩৬] ইমাম নুআইম বিন হাম্মাদ (মৃ: ২২৮ হি:) নিজ সনদে হযরত সাফওয়ান রা.-এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন- حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ ، حَدَّثَنَا صَفْوَانُ بْنُ عَمْرٍو ، عَمَّنْ حَدَّثَهُ ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، قَالَ : ” يَغْزُو قَوْمٌ مِنْ أُمَّتِي الْهِنْدَ ، يَفْتَحُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ حَتَّى يَأْتُوا بِمُلُوكِ الْهِنْدِ مَغْلُولِينَ فِي السَّلاسِلِ ، فَيَغْفِرُ اللَّهُ لَهُمْ ذُنُوبَهُمْ ، فَيَنْصَرِفُونَ إِلَى الشَّامِ ، فَيَجِدُونَ عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ عَلَيْهِ السَّلامُ بِالشَّامِ ” . رواه نعيم بن حماد في ” الفتن ” (ص/٣٩٩) قال : حدثنا الوليد ، عن صفوان بن عمرو ، عمن حدثه عن النبي صلى الله عليه وسلم . وهذا إسناد ظاهر الضعف بسبب عنعنة الوليد بن مسلم ، وظاهره ـ أيضا ـ الإرسال ، لأنه ليس فيه أن من حدث صفوان بن عمرو سمع النبي صلى الله عليه وسلم ، ولا أنه كان صحابيا – ‘অবশ্যই আমার উম্মতের একটি গোষ্ঠি হিন্দ-এর সাথে গাজওয়া (জিহাদ) করবে।আল্লাহ (তাআলা ওই মুজাহিদগণকে) তাদের উপর বিজয় দান করবেন। এমনকি তারা হিন্দে’র রাষ্ট্রনায়কদেরকে শিকল দিয়ে বেঁধে নিয়ে আসবে। আল্লাহ তাদের গোনাহ সমূহ ক্ষমা করে দিবেন। এরপর তারা শাম-এর দিকে ড়ওনা হবে। তারা শামে (গিয়ে) ঈসা ইবনে মারইয়াম (আ.)-এর দেখা পাবে’। [আল-ফিতান, নুআইম বিন হাম্মাদ- ৩৯৯ পৃ:] الله اعلم بالصواب

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   জাহান্নাম বিষয়ক আয়াত

# হিশাম বিন আমের রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- إِنَّ رَأْسَ الدَّجَّالِ مِنْ وَرَائِهِ حُبُكٌ حُبُكٌ ، وَإِنَّهُ سَيَقُولُ : أَنَا رَبُّكُمْ ، فَمَنْ قَالَ : أَنْتَ رَبِّي افْتُتِنَ ، وَمَنْ قَالَ : كَذَبْتَ ، رَبِّيَ اللَّهُ وَعَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْهِ أُنِيبُ ، فَلَا يَضُرُّهُ ، أَوْ قَالَ : فَلَا فِتْنَةَ عَلَيْهِ . رواه عبد الرزاق في مصنفه, كتاب الجامع, باب الدجال: رقم ٢٠٨٢٨; و أحمد: ١٥٨٢٦ ; و الحاكم في المستدرك على الصحيحين: ٤/٥٠٨ ; و صححه الألباني في الصحيحة: ٢٨٠٨ – ‘নিশ্চই দাজ্জালের মাথার পিছনের (চুলগুলো পাকানো পাকানো এবং) খুব বেশি হেলেদুলে ওঠে। (সে যখন নিজকে রব/প্রভু দাবী করবে, তখন) যে (তাকে) বলবে: ‘তুমি আমার রব (প্রভু)’, সে (তার) ফিতনায় পড়বে’। আর যে বলবে: ‘তুই (একটা ফিতনাবাজ ভন্ড/প্রতারক/মিথ্যুক! তুই) মিথ্যা বলেছিস, رَبِّيَ اللَّهُ وَعَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْهِ أُنِيبُ – ‘আমার রব হলেন আল্লাহ, আমি তাঁর উপরই তাওয়াক্কুল (ভরসা) করি এবং তাঁরই দিকে আমি ফিরে যাবো’, তখন আর সে তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না, অথবা বলেছেন: তার উপরে (দাজ্জালের) কোনো ফিতনা (কার্যকর) হবে না’। [মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক -১১/৩৯৫ হাদিস ২০৮২৮; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ১৫৮২৬; মুসতাদরাকে হাকিম– ৪/৫০৮]

ফায়দা: আরেক হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- إِنَّ مِنْ بعْدِكُمْ الْكَذَّاب الْمُضِلَّ ، وَإِنَّ رَأْسَهُ مِنْ بعْدِهِ حُبكٌ حُبكٌ حُبكٌ ، ثَلَاثَ مَرَّاتٍ ، وَإِنَّهُ سَيَقُولُ : أَنَا رَبكُمْ ، فَمَنْ قَالَ : لَسْتَ رَبنَا ، لَكِنَّ رَبنَا اللَّهُ ، عَلَيْهِ تَوَكَّلْنَا وَإِلَيْهِ أَنَبنَا ، نَعُوذُ باللَّهِ مِنْ شَرِّكَ ، لَمْ يَكُنْ لَهُ عَلَيْهِ سُلْطَانٌ . رواه احمد في المسنده: ١٦/٥٤٠ رقم ٢٣٠٥٢, و صححه الألباني في سلسلة الأحاديث الصحيحة : رقم ٢٨٠٨ – ‘নিশ্চই তোমাদের পরে একটি পথভ্রষ্ঠ মিথ্যুক (আবির্ভূত) হবে। আর তার মাথার পিছনের (চুলগুলো পাকানো পাকানো এবং) খুব বেশি হেলেদুলে ওঠে। একথা তিনবার বললেন। আর নিশ্চই অতি শিঘ্রই সে বলবে: ‘আমি তোমাদের (মানবকুলের) রব/প্রভু’। তখন যে (তাকে) বলবে: ‘তুমি আমাদের রব (প্রভু) নও, ‘তুমি (একটা ফিতনাবাজ ভন্ড/প্রতারক/মিথ্যুক!)’, বরং ‘আমাদের রব হলেন আল্লাহ, আমরা তাঁর উপরই তাওয়াক্কুল (ভরসা) করি এবং তাঁরই কাছে আমরা ফিরে যাবো, আমরা আল্লাহ কাছে তোমার থেকে পানাহ চাই’, তখন আর সে তার উপরে কোনো (ফিতনার) প্রভাব খাটাতে পারবে না’। [মুসনাদে আহমদ– ১৬/৫৪ হাদিস ২৩০৫২]

# যাবির বিন আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত,তিনি এরশাদ করেন- أَخْبَرَتْنِي أُمُّ شَرِيكٍ أَنَّهَا سَمِعَتْ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ لَيَفِرَّنَّ النَّاسُ مِنْ الدَّجَّالِ فِي الْجِبَالِ قَالَتْ أُمُّ شَرِيكٍ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَأَيْنَ الْعَرَبُ يَوْمَئِذٍ قَالَ هُمْ قَلِيلٌ . رواه مسلم في ال صحيح, كتاب الفتن وأشراط الساعة: رقم ٢٩٤٥; و الترمذي: رقم ٣٩٣٠; و احمد: ٦/٤٦٢ – ‘আমাকে উম্মে শারিক রা. বলেছেন যে, তিনি রাসুলুল্লাহ ﷺ -কে বলতে শুনেছেন: ‘লোকজন অবশ্যই দাজ্জাল থেকে পালিয়ে পাহাড়ে আশ্রয় নিবে’। উম্মে শারিক জিজ্ঞেস করলেন: ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! সেদিন আরব’রা কোথায় থাকবে’? তিনি বললেন: তারা (সেদিন) সংখ্যায় কম হবে’। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ২৯৪৫; সুনানে তিরমিযী, হাদিস ৩৯৩০; মুসনাদে আহমদ- ৬/৪৬২]

ফায়দা: ইবনে মাজাহ-তে আবু উমামাহ বাহেলী রা. থেকে দূর্বল সনদে বর্ণিত রেওয়ায়েতে এসেছে- َ فَقَالَتْ أُمُّ شَرِيكٍ بِنْتُ أَبِي الْعُكَرِ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَأَيْنَ الْعَرَبُ يَوْمَئِذٍ قَالَ ‏:‏ هُمْ يَوْمَئِذٍ قَلِيلٌ وَجُلُّهُمْ بِبَيْتِ الْمَقْدِسِ وَإِمَامُهُمْ رَجُلٌ صَالِحٌ – “এতে উম্মে শারিক বিনতে আবি উকাইর রা. জিজ্ঞেস করলেন: ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! সেদিন আরবরা কোথায় থাকবে’? তিনি বললেন: ‘সেদিন তারা (সংখ্যায়) হবে অতি অল্প; তাদের অধিকাংশই (সেদিন) বাইতুল মাকদিসে (অবস্থিত) গর্বিত (সন্তানদের মধ্যে শামিল) থাকবে। (সে সময়ে) তাদের ইমাম (আমীর/খলিফা/শাসক) হবে (আমারই মেয়ে ফাতেমার বংশধরের একজন) একজন নেককার পুরুষ (আল-মাহদী)”। [সুনানে ইবনে মাজাহ- ২/১৩৫৯ হাদিস ৪০৭৭] এই রেওয়ায়েত থেকে অনুমিত হয় যে, আরবের ওই সকল মর্দে মমিন মুজাহিদগণ সে সময়ে ইমাম মাহদীর সাথে বাইতুল মাকদিসে থাকবে (যা বর্তমানে ইসরাঈলের দখলে রয়েছে), আর এদিকে দাজ্জাল মক্কা মদিনার আশেপাশে তার যা কিছু ফিতনার ভেলকী দেখানোর তা প্রদর্শন করতে থাকবে আরবকে ফিতনায় ফেলার জন্য। মক্কা ও মদিনার স্ব-স্ব হারাম সীমানার ভিতরে অবস্থানকারী মুমিনরা তো দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা পাবে, কিন্তু যারা তখন হারাম সীমানার বাহিরে থাকবে, তারেই হয়তো দাজ্জালের ভয়ে পাহাড়ে আশ্রয় নিবে। আর আরবের কাফের ও মুনাফেক নারী-পুরুষ’রা তো দাজ্জালের দলে গিয়ে যুক্ত হবে। الله اعلم بالصواب

# আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি এরশাদ করেন- مَا زِلْتُ أُحِبُّ بَنِي تَمِيمٍ مُنْذُ ثَلاثٍ سَمِعْتُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ فِيهِمْ : هُمْ أَشَدُّ أُمَّتِي عَلَى الدَّجَّالِ ، وَجَاءَتْ صَدَقَاتُهُمْ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هَذِهِ صَدَقَاتُ قَوْمِنَا ، وَكَانَتْ سَبِيَّةٌ مِنْهُمْ عِنْدَ عَائِشَةَ فَقَالَ أَعْتِقِيهَا فَإِنَّهَا مِنْ وَلَدِ إِسْمَاعِيلَ . رواه البخاري في العتق باب من ملك من العرب رقيقًا: رقم ٢٥٤٣ ، ومسلم في فضائل الصحابة: ٢٥٢٥، وأحمد: ٨٨٢٥ – ‘(আরবের) বনী তামিম (গোত্রকে) আমি ভালবেসেছি তাদের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ ﷺ থেকে তিনটি কথা শুনে: (১) আমার উম্মতের মধ্যে তারা দাজ্জালের উপর বেশি কঠিন (বোধ) হবে। (২) তাদের সাদাকাহ’র মাল এলে রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছিলেন: এটা হল আমাদের কওমের সাদাকাহ (যাকাত)। (৩) আয়েশা রা.-এর কাছে তাদের (গোত্রের) একটি দাসী ছিল, রাসুলুল্লাহ ﷺ (আয়েশা’কে) বলেছিলেন: তাকে মুক্ত করে দাও। নিশ্চই সে (আমার পূর্বপুরুষ) ইসমাঈল (আ.)-এর (বংশের) সন্তান’। [সহিহ বুখারী, হাদিস ২৫৪৩; সহিহ মুসলীম, হাদিস ২৫২৫; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ৮৮২৫]

# ওমর বিন খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি এরশাদ করেন- أَلا وَإِنَّهُ سَيَكُونُ مِنْ بَعْدِكُمْ قَوْمٌ يُكَذِّبُونَ بِالرَّجْمِ وَبِالدَّجَّالِ وَبِالشَّفَاعَةِ وَبِعَذَابِ الْقَبْرِ وَبِقَوْمٍ يُخْرَجُونَ مِنْ النَّارِ بَعْدَ مَا امْتَحَشُوا . رواه أحمد: رقم ١٥٧ و قال أحمد شاكر : إسناده صحيح – ‘শুনে রাখো, নিশ্চই তোমাদের পর এমন গোষ্ঠির আবির্ভাব হবে যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে (বিবাহিত জেনাকার নর-নারী শাস্তি) ‘রজম’কে, দাজ্জালকে, ‘শাফাআত’কে, ‘কবরের আযাব’কে এবং কঠিন আযাব ভোগের পর একটি গোষ্ঠির দোযখ থেকে বেড় হওয়াকে’। [মুসনাদে আহমদ, হাদিস ১৫৭]

# আবু দারদাহ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- مَنْ حَفِظَ عَشْرَ آيَاتٍ مِنْ أَوَّلِ سُورَةِ الْكَهْف عُصِمَ مِنْ الدَّجَّالِ . رواه مسلم في صلاة المسافرين باب فضل سورة الكهف : ٨٠٩ ، وأبو داود في الملاحم ٣٧٦٥ ، وأحمد ٢١٢٠٥ – ‘যে ব্যাক্তি সূরা কাহফ-এর প্রথম ১০টি আয়াত মুখস্ত করে নিবে, সে দাজ্জাল (-এর ফিতনা) থেকে নাজাত পাবে’। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ৮০৯; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৩৭৬৫; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ২১২০৫]

ফায়দা: কোনো কোনো রেওয়ায়েতে শেষ দশ আয়াতের কথাও আছে। এজন্য উত্তম হল, সূরা কাহফ-এর প্রথম ১০ আয়াত এবং শেষের ১০ আয়াত মুখস্ত করে নেয়া।

আবু উমামাহ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- وَإِنَّ مِنْ فِتْنَتِهِ أَنَّ مَعَهُ جَنَّةً وَنَارًا فَنَارُهُ جَنَّةٌ وَجَنَّتُهُ نَارٌ فَمَنِ ابْتُلِيَ بِنَارِهِ فَلْيَسْتَغِثْ بِاللَّهِ وَلْيَقْرَأْ فَوَاتِحَ الْكَهْفِ فَتَكُونَ عَلَيْهِ بَرْدًا وَسَلاَمًا كَمَا كَانَتِ النَّارُ عَلَى إِبْرَاهِيمَ . رواه ابن ماجه, كتاب الفتن, باب فتنة الدجال وخروج عيسى ابن مريم وخروج يأجوج ومأجوج: رقم ٤٠٧٧ , اسناده ضعيف – ‘আর নিশ্চই তার ফিতনার মধ্যে এও হবে যে, তার সাথে (মনোরম কৃত্রিম) জান্নাত ও (কৃত্রিম) দোযখ থাকবে। তবে তার দোযখটিই হচ্ছে জান্নাত এবং জান্নাতটি হচ্ছে দোযখ। যে ব্যাক্তি তার দোযখ দ্বারা বিপদগ্রস্থ হবে, সে যেন অবশ্যই আল্লাহ’র পানাহ কামনা করে এবং অবশ্যই (সূরা) কাহফ-এর প্রথম (১০টি আয়াত) তিলাওয়াত করে। এতে তার উপরে (দাজ্জালের কৃত্রিম দোয়খের শাস্তি) ঠান্ডা ও আরামদায়ক হয়ে যাবে, যেমনটা ইব্রাহিম (আ.)-এর উপরে আগুনের অবস্থা হয়েছিল’। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৪০৭৭]

MuslimPoint Organization

About MuslimPoint Organization

MuslimPoint একটি অনলাইন ভিত্তিক ইসলামী প্রশ্নোত্তর, গ্রন্থাগার, ব্লগিং, কুরআন, হাদিস, কুইজ এবং বিষয় ভিত্তিক রেফারেন্স প্ল্যাটফর্ম।

View all posts by MuslimPoint Organization →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *