পৃথিবীর ইতিহাসের প্রথম নাস্তিক বা অবিশ্বাসী সম্পর্কে অজানা তথ্য জেনে নিন | First Atheist in the World
আজকে আমরা যে ব্যক্তি নিয়ে কথা বলবো সে আসলে পৃথিবীর ইতিহাসের প্রথম নাস্তিক বা অবিশ্বাসী হিসেবে পরিচিত। তার নাম হলো ডিয়াগোরাস (Diagoras)। তিনি মূলত ডিয়াগোরাস অফ মেলোস (Diagoras of Melos) নামে বেশি পরিচিত। যদিও অনেকে বলে থাকে যে, ইতিহাসের প্রথম নাস্তিক ছিলো ম্যাথায়াস নটজেন (Matthias Knutzen) কিন্তু ইতিহাস এবং অনেকগুলো গবেষণা থেকে এটা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে পৃথিবীর ইতিহাসের প্রথম নাস্তিক বা অবিশ্বাসী ব্যক্তি হলো ডিয়াগোরাস অফ মেলোস (Diagoras of Melos)।
[আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এই বিষয়ে একটি ভিডিও আছে। চাইলে সেটা এখানে ক্লিক করে দেখে নিতে পারেন।]
প্রথমত বলে নিই, ডিয়াগোরাস বসবাস করতো প্রাচীন গ্রীসে (Ancient Greece) খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীর দিকে। তিনি মেলোস (Melos) নামক একটি দ্বীপে জন্মগ্রহণ করেন। সে আসলে গ্রীক কবি ও সোফিস্ট (Sophist) ছিলো। প্রকৃতপক্ষে, প্রাচীন গ্রীসে সোফিস্ট (Sophist) মূলত তাদেরকে বলা হতো যারা পেশাগতভাবে শিক্ষকতা করতো এবং বিভিন্ন বিষয় যেমন philosophy, music, athletics, mathematics ইত্যাদিতে দক্ষ ছিলো।
একটি তথ্য জেনে রাখা ভাল হবে যে, বাইজেন্টাইন এনসাইক্লোপিডিয়া (Byzantine Encyclopedia) এর প্রাচীন ভূমধ্যসাগরীয় বিশ্ব (ancient Mediterranean world) টপিক অনুযায়ী ডিয়াগোরাস (Diagoras) মূলত বিখ্যাত philosopher ডেমোক্রিটাস (Democritus) এর শিষ্য বা ভক্ত ছিলেন।
মূলত, সারাজীবন ধরে তিনি নাস্তিক বা অবিশ্বাসী হিসেবে পরিচিত থাকলেও তার মূল বিশ্বাস সম্পর্কে ইতিহাস থেকে অনেক কম তথ্যই জানা যায়। কিন্তু তার সম্পর্কে লেখা বই বা উপাখ্যানগুলি থেকে একথা জোর দিয়ে বলা যায় যে, তিনি প্রাচীন গ্রীক ধর্মের (Ancient Greek) বিরুদ্ধে জোরালো ভাবে কথা বলেছিলেন এবং তিনি সৃষ্টিকর্তায় অবিশ্বাসী ছিলেন।
কারণ প্রায়শই তিনি ধর্মের অনেক বিষয়ে সমালোচনা করতেন। এবং কথিত আছে যে, তিনি নাকি, দেবতা হেরাক্লিস (Divine Hero, Heracles) এর কাঠের মূর্তি দিয়ে জ্বালানি কাঠ বানিয়ে ডাল আর সবজি রান্নাও করেছিলেন। আর যেহুতু তিনি প্রকাশ্যে সংশয়বাদ প্রচার এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের কড়া সমালোচনা করতেন, এজন্য পরবর্তীতে তাকে শহর থেকে নির্বাসিত করা হয়েছিলো। কারণ সে সময়ে ধর্ম বা ধর্মীয় বিষয়গুলো বা ধর্মীয় রীতি-নীতিগুলো গ্রীক সমাজ ও সংস্কৃতিতে অনেক বড় প্রভাব বিস্তার করতো।
কিন্তু তিনি মূলত কি কারণে নাস্তিক বা অবিশ্বাসী হয়েছিলেন সেটা ইতিহাস থেকে স্পষ্টভাবে জানা যায় না। তবে কিছু গবেষণা থেকে জানা যায় যে, তিনি মূলত সেই সময়ের অর্থাৎ প্রাচীন গ্রীক ধর্মের কিছু ধর্মীয় রীতি নীতি চরমভাবে অপছন্দ করতেন এবং বিরক্ত বোধ করতেন। কিন্তু স্পষ্ট কোন কারণ ইতিহাসবিদরা কোথাও লিপিবদ্ধ করেন নাই।
পরিশেষে বলা যায় যে, এটা আসলে ১০০ ভাগ সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয় যে ডিয়াগোরাসই (Diagoras) ছিলো পৃথিবীর প্রথম নাস্তিক। কারণ হতে পারে তার আগেও নাস্তিক বা অবিশ্বাসী ছিলো কিন্তু তারা প্রকাশ করে নাই বা প্রকাশ্যে কিছু বলে নাই বা ইতিহাস ও গবেষণা থেকে তাদের অস্তিত্ব প্রমাণিত হয় নাই। কিন্তু যেহুতু ডিয়াগোরাস (Diagoras) প্রকাশ্যে নাস্তিকতা বা তার অবিশ্বাসী ধ্যান-ধারণা প্রচার করতো এবং ইতিহাস থেকে স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় এজন্য ডিয়াগোরাস (Diagoras) বা ডিয়াগোরাস অফ মেলোসকে (Diagoras of Melos) পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম নাস্তিক বা অবিশ্বাসী হিসেবে অবিহিত করা হয়।
শেষ করার আগে সূরা আল-ইসরা বা বানী-ইসরাঈল (Surah Al-Isra/Bani Israel) এর নাস্তিক বিষয়ক একটি আয়াত মনে করিয়ে দিতে চাই, আল্লাহু বলেন, “আর সাগরে যখন তোমাদেরকে বিপদ স্পর্শ করে তখন শুধু তিনি ছাড়া অন্য যাদেরকে তোমরা ডেকে থাক তারা হারিয়ে যায় ; অতঃপর তিনি যখন তোমাদেরকে উদ্ধার করে স্থলে আনেন তখন তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও। আর মানুষ খুবই অকৃতজ্ঞ।”