রাসুল (সা.) নূরের তৈরি বা সৃষ্টি নন , তিনি আমাদের মতই মানুষ ছিলেন , ব্যাখ্যা ও দলিল বা রেফারেন্স সহ
কুরআনে কারীমের বিভিন্ন আয়াত এবং সহীহ হাদীসের ভিত্তিতে একথা সুষ্পষ্ট প্রমাণিত যে, মানুষ মাটির তৈরী। নূর বা অগ্নির তৈরী নয়। এখন আসুন, কিছু কুরআনের আয়াত এবং সহীহ হাদিস থেকে রেফারেন্স সহ বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
প্রথমে বলে নিই, আমাদের মনে রাখতে হবে, সৃষ্টির উপাদানের উপর ভিত্তি করে কোন ব্যক্তির মর্যাদা নির্ণয় করা সরাসরি কুরআন ও হাদীছ বিরোধী কথা। কারণ মহান আল্লাহ বলেছেনঃ. “নিশ্চয় আল্লাহর নিকট তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি বেশি সম্মানিত যে তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক তাক্বওয়াশীল’ পরহেযগার।” – সূরা হুজুরাতঃ আয়াতঃ ৪৯:১৩।
আল্লাহ বলেছেনঃ
তোমরা যদি আমার ভালোবাসা পেতে চাও তাহলে রাসূলের আনুগত্য করো।
তিনি একথা বলেননি যে, তোমরা যদি আমার আমার ভালোবাসা পেতে চাও তাহলে নবী কি দিয়ে তৈরি করেছি তা নিয়ে ফতোয়াবাজি করো।
আল্লাহ তা’আলা আমাদের এসব অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক থেকে বিরত থাকার তৌফিক দান করুন এবং কোরআন-হাদীসকে সঠিক ভাবে উপলব্দি করার ও মেনে চলার তৌফিক দান করুন।
এখন আসুন, মূল আলোচনায়,
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) যে আমাদের মতই মাটির তৈরী মানুষ সেটা কুরআনের কিছু আয়াত থেকে প্রথমে জেনে নেওয়া যাকঃ
১। “তুমি বল, “আমি তো তোমাদের মত একজন মানুষই , ওহীর মাধ্যমে আমাকে প্রত্যাদেশ দেয়া হয়েছে যে, তোমাদের উপাস্য এক আল্লাহ্ । সুতারাং তাঁর দিকে সত্য পথে চল; এবং তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর”-(সূরা হামীম সিজদাহঃ ০৬)
২। “বল, “আমি তোমাদের মত একজন মানুষ; [কিন্তু] আমার নিকট ওহী প্রেরণ করা হয় যে, তোমাদের আল্লাহ্ এক ও অদ্বিতীয় । সুতারাং যে তাহার প্রভুর সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎ কাজ করে, এবং প্রভুর এবাদতে কাউকে শরীক না করে”(-সূরা কাহফঃ ১১০)
৩। “বল:” আমার প্রভু মহিমান্বিত! আমি তো হচ্ছি কেবল একজন মানুষ, একজন রাসুল মাত্র”(সুরা-বনী ইসরাইলঃ ৯৩)
৪। “এটা কি মানুষের জন্য আশ্চর্য্যের বিষয় যে, আমি তাদেরই একজনের নিকট আমার ওহী প্রেরণ করেছি ?”(-সূরা ইউনুসঃ ০২)
৫। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেছেনঃ “নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের বড় উপকার করেছেন, যেহেতু তাদেরই মধ্য থেকে একজনকে রাসূল হিসাবে পাঠিয়েছেন যিনি তাদের নিকট তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করেন, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন, এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দান করেন, যদিও তারা ইতোপূর্বে স্পষ্ট গুমরাহীতে নিমজ্জিত ছিল।”- সূরা ইমরানঃ আয়াতঃ ৩:১৬৪।
৬। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেছেনঃ “তোমাদের নিকট আগমন করেছে, তোমাদেরই মধ্যকার এমন একজন রাসূল, যার কাছে তোমাদের ক্ষতিকর বিষয় অতি কষ্টদায়ক মনে হয়, যিনি হচ্ছেন তোমাদের খুবই হিতাকাঙ্খী, মুমিনদের প্রতি বড়ই স্নেহশীল, করুনাপরায়ণ।”- সূরা তাওবাহঃ আয়াতঃ ৯:১২৮।
৭। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেছেনঃ “তিনিই নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন তাদের নিকট, যিনি তাদের কাছে পাঠ করেন তাঁর আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমত, যদিও তারা ইতোপূর্বে স্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত ছিল।”- সূরা-জুমুআহঃ আয়াতঃ ৬২:২।
৮। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেছেনঃ “আমি তোমাদের মধ্য হতে এরূপ রাসূল প্রেরণ করেছি যে, তোমাদের নিকট আমার নিদর্শনাবলী পাঠ করে ও তোমাদেরকে পবিত্র করে এবং তোমাদেরকে গ্রন্থ ও বিজ্ঞান শিক্ষা দেয়, আর তোমরা যা অবগত ছিলে না তা শিক্ষা দান করেন।” -সূরা বাকারাহঃ আয়াতঃ ২:১৫১।
৯। “তাদের অন্তর [তা নিয়ে] তুচ্ছ বিষয়ের মত খেলা করে। পাপীরা তাদের গোপন পরামর্শ লুকিয়ে রেখে [বলে] ” সে কি তোমাদের মত একজন মানুষ নয়? তোমরা কি দেখে শুনে যাদুর কবলে পড়বে ?” -সূরা আম্বিয়াঃ০৩
১০। “এবং তারা বলে, ” এ কি রকম রসুল, যে [সাধারণ মানুষের মত] আহার করে এবং রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করে ? তার নিকট কোন ফেরেশতা কেন অবতীর্ণ করা হলো না , যে তাঁর সাথে থাকতো সতর্ককারীরূপে? অথবা তাকে ধন ভান্ডার দেয়া হয় নাই কেন অথবা উপভোগের জন্য তার কোন বাগান নাই কেন ? ” দুষ্ট লোকেরা বলে, ” তোমরা তো এক যাদুগ্রস্থ লোকেরই অনুসরণ করছো। “-সূরা ফুরকানঃ০৭-০৮
১১। “তিনিই জেন্টাইল মানুষের জন্য তাদেরই মধ্য থেকে একজন রসুল পাঠিয়েছেন, যে তাদের নিকট আয়াত সমূহ আবৃত্তি করে, তাদের পবিত্র করে এবং শিক্ষা দেয় কিতাব ও প্রজ্ঞা। যদিও ইতিপূর্বে তারা ছিলো সুস্পষ্ট বিভ্রান্তির মধ্যে ।” -সূরা জুমুয়াহঃ২
১২। “কিন্তু তাঁর সম্প্রদায়ের অবিশ্বাসীদের প্রধাণগণ বলেছিলো, “আমরা তো তোমাকে আমাদের মত মানুষ ব্যতীত আর কিছু দেখছি না। আমাদের মধ্যে যারা নিম্নস্তরের, অপরিপক্ক বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন, তারা ব্যতীত আর কাউকে তোমাকে অনুসরণ করতে দেখছি না। ১৩। আমরা আমাদের উপর তোমাদের কোন শ্রেষ্ঠত্ব দেখছি না, বরং আমরা তোমাদের মিথ্যাবাদী মনে করি।”- সূরা হুদঃ২৭
১৪। “এরা আশ্চর্য হচ্ছে এই ভেবে যে, তাদের মধ্য থেকেই তাদের জন্য একজন সর্তককারী এসেছে এবং অবিশ্বাসীরা বলে যে, ” এ তো একজন যাদুকর , মিথ্যা বলছে ।” -সূরা ছোয়াদঃ০৪
১৫। “(শুধু তুমিই মানুষ যে তা নয়) তোমার পূর্বে যে সব পয়গম্বর আমি প্রেরণ করেছিলাম তারাও ছিলো মানুষ , যাদের জন্য আমি ওহী মঞ্জুর করেছিলাম। যদি তোমরা তা না বুঝে থাক, তবে তাদের জিজ্ঞাসা কর যারা [আল্লাহ্র] বাণীকে ধারণ করে থাকে ।” -সূরা আম্বিয়াঃ০৭
৬। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেছেনঃ “তোমাদের নিকট আগমন করেছে, তোমাদেরই মধ্যকার এমন একজন রাসূল, যার কাছে তোমাদের ক্ষতিকর বিষয় অতি কষ্টদায়ক মনে হয়, যিনি হচ্ছেন তোমাদের খুবই হিতাকাঙ্খী, মুমিনদের প্রতি বড়ই স্নেহশীল, করুনাপরায়ণ।”- সূরা তাওবাহঃ আয়াতঃ ৯:১২৮।
৭। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেছেনঃ “তিনিই নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন তাদের নিকট, যিনি তাদের কাছে পাঠ করেন তাঁর আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমত, যদিও তারা ইতোপূর্বে স্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত ছিল।”- সূরা-জুমুআহঃ আয়াতঃ ৬২:২।
৮। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেছেনঃ “আমি তোমাদের মধ্য হতে এরূপ রাসূল প্রেরণ করেছি যে, তোমাদের নিকট আমার নিদর্শনাবলী পাঠ করে ও তোমাদেরকে পবিত্র করে এবং তোমাদেরকে গ্রন্থ ও বিজ্ঞান শিক্ষা দেয়, আর তোমরা যা অবগত ছিলে না তা শিক্ষা দান করেন।” -সূরা বাকারাহঃ আয়াতঃ ২:১৫১।
৯। “তাদের অন্তর [তা নিয়ে] তুচ্ছ বিষয়ের মত খেলা করে। পাপীরা তাদের গোপন পরামর্শ লুকিয়ে রেখে [বলে] ” সে কি তোমাদের মত একজন মানুষ নয়? তোমরা কি দেখে শুনে যাদুর কবলে পড়বে ?” -সূরা আম্বিয়াঃ০৩
১০। “এবং তারা বলে, ” এ কি রকম রসুল, যে [সাধারণ মানুষের মত] আহার করে এবং রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করে ? তার নিকট কোন ফেরেশতা কেন অবতীর্ণ করা হলো না , যে তাঁর সাথে থাকতো সতর্ককারীরূপে? অথবা তাকে ধন ভান্ডার দেয়া হয় নাই কেন অথবা উপভোগের জন্য তার কোন বাগান নাই কেন ? ” দুষ্ট লোকেরা বলে, ” তোমরা তো এক যাদুগ্রস্থ লোকেরই অনুসরণ করছো। “-সূরা ফুরকানঃ০৭-০৮
১১। “তিনিই জেন্টাইল মানুষের জন্য তাদেরই মধ্য থেকে একজন রসুল পাঠিয়েছেন, যে তাদের নিকট আয়াত সমূহ আবৃত্তি করে, তাদের পবিত্র করে এবং শিক্ষা দেয় কিতাব ও প্রজ্ঞা। যদিও ইতিপূর্বে তারা ছিলো সুস্পষ্ট বিভ্রান্তির মধ্যে ।” -সূরা জুমুয়াহঃ২
১২। “কিন্তু তাঁর সম্প্রদায়ের অবিশ্বাসীদের প্রধাণগণ বলেছিলো, “আমরা তো তোমাকে আমাদের মত মানুষ ব্যতীত আর কিছু দেখছি না। আমাদের মধ্যে যারা নিম্নস্তরের, অপরিপক্ক বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন, তারা ব্যতীত আর কাউকে তোমাকে অনুসরণ করতে দেখছি না। ১৩। আমরা আমাদের উপর তোমাদের কোন শ্রেষ্ঠত্ব দেখছি না, বরং আমরা তোমাদের মিথ্যাবাদী মনে করি।”- সূরা হুদঃ২৭
১৪। “এরা আশ্চর্য হচ্ছে এই ভেবে যে, তাদের মধ্য থেকেই তাদের জন্য একজন সর্তককারী এসেছে এবং অবিশ্বাসীরা বলে যে, ” এ তো একজন যাদুকর , মিথ্যা বলছে ।” -সূরা ছোয়াদঃ০৪
১৫। “(শুধু তুমিই মানুষ যে তা নয়) তোমার পূর্বে যে সব পয়গম্বর আমি প্রেরণ করেছিলাম তারাও ছিলো মানুষ , যাদের জন্য আমি ওহী মঞ্জুর করেছিলাম। যদি তোমরা তা না বুঝে থাক, তবে তাদের জিজ্ঞাসা কর যারা [আল্লাহ্র] বাণীকে ধারণ করে থাকে ।” -সূরা আম্বিয়াঃ০৭
এখন আসুন, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) যে আমাদের মতই মাটির তৈরী মানুষ সেটা হাদিস থেকে জেনে নেওয়া যাকঃ
১। তিনি আরো বলেনঃ আমি তো একজন মানুষ, আমিও তোমাদের মত ভুলে যাই, কাজেই আমি ভুলে গেলে আমাকে তোমরা স্মরণ করিয়ে দিবে (বুখারী, ছালাত অধ্যায়, হা/৩৮৬, মুসলিম মসজিদ ও ছালাতের স্থান অধ্যায়, হা/৮৮৯)
২। ‘তিনি আরো বলেনঃ আমি তো একজন মানুষ, আমার নিকট বাদী আসে, সম্ভবত তোমাদের একজন অপর জন অপেক্ষা বেশি বাকপটু হবে, তাই আমি ধারণা করে নিতে পারি যে সে সত্য বলেছে কাজেই সে মতে আমি তার পক্ষে ফায়ছালা দিয়ে দিতে পারি । তাই আমি যদি তার জন্য কোন মুসলিমের হক ফায়ছালা হিসাবে দিয়ে থাকি, তাহলে সেটা একটা জাহান্নামের টুকরা মাত্র । অতএব সে তা গ্রহণ করুক বা বর্জন করুক (বুখারী, মাযালিম অধ্যায়, হা/২২৭৮)
৩। ‘মা আয়েশাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বাড়িতে থাকাকালীন কী কাজ করতেন ? তদুত্তরে তিনি বলেছিলেনঃ তিনি তো অন্যান্য মানুষের মত একজন মানুষ ছিলেন । তিনি তার কাপড় সেলাই করতেন, নিজ বকরীর দুধ দোহন করতেন, নিজের সেবা নিজেই করতেন (আহমাদ,হা/২৪৯৯৮, আল আদাবুল মুফরাদ প্রভৃতি, হাদীছ ছহীহ, দ্রঃ ছহীহুল আদাব আল্ মুফরাদ, হা/৪২০, মুখতাতাছার শামায়েলে তিরমিযী, হা/২৯৩, ছহীহাহ, হা/৬৭১)
পর্যালোচনাঃ-
নবী (সাঃ) কে আল্লাহ মাটির তৈরী আদম (আঃ) থেকে স্বাভাবিক মানুষের যে নিয়ম আল্লাহ করেছেন সে পদ্ধতিতেই আবদুল্লাহর ওরসে মা আমিনার গর্ভে এ পৃথিবীতে আগমন ঘটিয়েছেন । মহান আল্লাহ একাধিক স্থানে বলেছেন যে নবী (সাঃ) সৃষ্টিগত দিক থেকে بشر তথা আমাদের মতই একজন মানুষ ।
৪। হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সাঃ) নিজের দরজার কাছে বিবাদ-বিতর্ক শুনতে পেয়ে তাদের নিকট এসে বললেন-আমি তো একজন মানুষ মাত্র। আমার কাছে বাদী বিবাদীরা এসে থাকে। কেউ হয়ত অধিক বাকপটু হয়, ফলে আমি তাকে সত্য মনে করে তার পক্ষে রায় দিয়ে দেই। যদি আমি কারো পক্ষে অন্য কোন মুসলমানের হকের ব্যাপারে ফয়সালা দিয়ে থাকি, তাহলে তা জাহান্নামের টুকরো হিসেবে বিবেচিত হবে। সে তা গ্রহণ করতেও পারে, অথবা বর্জনও করতে পারে।” – সহীহ বুখারী: ৬৭৬২, সহীহ মুসলিম: ৪৫৭২, তাহাবী: ৫৬৮০, মুসনাদুশ শামীন: ৩১১৬, সুনানে দারা কুতনী: ১২৬, সুনানে বায়হাকী কুবরা: ২০৩২১।
হাদিস (২)
৫। হযরত আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত। রাসূল (সাঃ) বলেছেন: “আমিতো তোমাদের মতই একজন মানুষ। তোমরা যেমন ভুলে যাও, আমিও তেমনি ভুলে যাই। তাই আমি ভুলে গেলে তোমরা আমাকে স্বরণ করিয়ে দিও।” – সহীহ বুখারী: ৩৯২, সহীহ ইবনে হিব্বান: ২৬৬২, মুসনাদে আবী ইয়ালা: ৫২৪২, মুসনাদে তায়ালিসী: ২৭১।
৬। হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ থেকে বর্ণিত। আমি রাসূল (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, তিনি ইরশাদ করেছেন: “আমি তো একজন মানুষ মাত্র। আমি আপন প্রতিপালকের নিকট বলে রেখেছি যে, আমি যদি কোন মুসলমানকে মন্দ বলি, তাহলে সেটি যেন তার জন্যে পবিত্রতা ও সওয়াবের কারণ হয়।” – সহীহ মুসলিম: ৬৭৯০, মুসনাদে আহমাদ: ১২১২৬, সুনানে বায়হাকী কুবরা: ১৩১৬০।
এখন আসুন, একটি যুক্তি খন্ডন করার যাকঃ
রাসুল সা: কে কুরআনের ভেতর নূর বলেছেন। বিশ্ব বিখ্যাত মুফাসসিরে কোরআন হযরত ইবনে আববাস (রাঃ) এর বিশ্ব বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ ইবনে আববাস এর মধ্যে আছে-
ﻗﺪ ﺟﺎﺀﻛﻢ ﻣﻦ ﺍﻟﻠﻪ ﻧﻮﺭ ﻭ ﻛﺘﺎﺏ ﻣﺒﻴﻦ ﻳﻌﻨﻲﻣﺤﻤﺪﺍ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﺅﺳﻠﻢ –
অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট হতে তোমাদের কাছে নূর অর্থাৎ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসেছেন। (তাফসীরে ইবনে আববাস পৃষ্ঠা ৭২)।
কাজেই তিনি নুরের সৃষ্টি নন কেন?
এই দলীলটি উদাহরন স্বরুপ আরো একটু ক্লিয়ার করে বুঝে নেই।
(ক) আসল কথা হলো, আমরাও নবীকে সা: নূর মানি, তবে নুরের সৃষ্টি মানতে পারিনা। যেহেতু কুরআন সুন্নাহের কথাও উনাকে নূর বলা ছাড়া নুরের সৃষ্টি বলা হয়নি। আরেকটি বিষয় হল, নূরকে নূরের তৈরি বললে তা সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক হবে।
কুরআন এবং সুন্নাহ’র কোথাও একমাত্র ফেরেশতাদের ছাড়া অন্য কাউকে নূরের তৈরি বলা হয়নি। কারণ, স্বর্ণ কি স্বর্ণের তৈরি? রূপা কি রূপার তৈরি? তদ্রুপ নূর কি নূরের তৈরি? বরং এ সবের প্রত্যেকটা একেকটি মূল উপাদান।
মূল উপাদান খোদ্ একটি সৃষ্ট বস্তু, যার সৃষ্টিমূল উপাদান থাকেনা।
যেমন সূরা আনআম এর ১ নং আয়াতের ভাষ্য, “তিনি যুলুমাত এবং নূর সৃষ্টি করেছেন।
”
আমরা জানি যে, নূর প্রধানত ২প্রকার।
১। ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বা হিচ্ছি ( যা চোখে দেখা যায়)।
২। ইন্দ্রিয় অগ্রাহ্য বা আকলি। (যা চোখে দেখা যায় না, তবে বিবেক বলে দেয় যে ইহা নুর।)
প্রথমটি প্রকৃত অর্থে নূর আর দ্বিতীয়টি রূপক বা মাজাযি অর্থে নূর।
লক্ষ্য করুন! আল্লাহপাক ছন্দ্রকেও নূর বলেছেন। যেমন- و جعلنا القمر فيهن نورا অর্থাৎ “আমি তথায় ছন্দ্রকে বানিয়েছি নূর।” [সুরা নূহ ১৫]। কিন্তু ‘ছন্দ্রকে নূরের তৈরি বানিয়েছি’- এ রকম কি বলেছেন? না, বলেননি।
এ হিসেবে বলা হয় যে, ছন্দ্র হল ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নূর। তদ্রূপ কুরআন, ইসলাম এবং মহানবী সহ সকল নবী রাসূল সবই নূর তথা ইন্দ্রিয় অগ্রাহ্য বা বিবেকগ্রাহ্য জ্যোতি।
কাজেই এসব কিছুকে নূরের তৈরি মনে করা হলে পুরোপুরি অজ্ঞতা আর নির্বুদ্ধিতা হবে।
(খ) যে আয়াতে নবী কারীম (সা)-কে নূর বলে সম্বোধন করা হয়েছে সে গুলো প্রকৃত অর্থে নয়, বরং মাজাজী বা রুপক অর্থে। তার অনেক উপমা রয়েছে। যেমন “আমাদের দেশকে বলা হয় সোনার বাংলা। ” কিন্তু আমাদের দেশ কি প্রকৃত অর্থে সোনার তৈরী? তো কেনো বলা হয় সোনার বাংলা?
আমরা আমাদের কোনো কোনো ছেলে বা মেয়েকে আমার সোনার ছেলে বলে ডাকি সোনার মেয়ে বলে ডাকি।
বেশী ভালোবাসি তাই আদর করে এভাবে ডাকি, আসোলে কি তারা সোনার তৈরি ছেলে মেয়ে?
বায়তুল্লাহ থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হেরা পর্বতকে “জাবালে নূর” (নুরের পাহাড়) বলা হয়। তো ওই পাহাড় কি প্রকৃত অর্থে নুরের তৈরী? কী বলবেন? ?
আমরা মদিনাকে সোনার মদিনা বলি, মদিনা কি আসোলে সোনা দিয়ে তৈরি?
নবীজিকে সোনার নবী বলি, আসোলে নবীজি কি সোনার তৈরি?
তাহলে রাসূল (সাঃ) কে নূরের নবী বললে কি নবীজিকে নূরের তৈরি হিসাবে সাইভ্যস্ত করতে হবে?
এগুলি হচ্চে রুপক অর্থে, গুনাবলি মান মর্যাদা অধিক সীমাহীন বুঝাতে গিয়ে আমরা এভাবে কিছু কিছু শব্দ ব্যবহার করে থাকি।
নিশ্চয় বলতে হবে যে, এগুলো মূলত রুপক অর্থে এবং تشريفا বা সম্মান সূচক হিসেবে, কিন্তু প্রকৃত অর্থে নয়। অন্যথায় কোরআনুল কারীমকেও তো নূর বলা হয়েছে। তো এই নূরের কি ব্যাখ্যা দিবেন?
কুরআন কি নূরের তৈরী?
ইসলাম, হিদায়াত, নবুওয়াত ইত্যাদি এসবও নূর। তো এই নূরের কী ব্যাখ্যা দিবেন?
স্বয়ং আল্লাহপাক নিজেও নূর। তো এই নূরের কী ব্যাখ্যা দিবেন?
তাঁকে কি নূরের তৈরী বলবেন? তাহলে ত প্রশ্ন আসে যে, কে তাঁকে তৈরি করলেন??
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আল্লাহ নূর বলেছেন। উনাকে নূর বলাতে যদি উনি নুরের তৈরী হয়ে যান তাহলে নিন্মোক্ত বিষয়সমূহের প্রতি দৃষ্টি দেয়া দরকার।
১। আল্লাহ কুরআনকে নূর বলেছেন তাহলে কুরআন কি নুরের তৈরী?
২। আল্লাহ ইনজীলকে নূর বলেছেন তাহলে ইনজীল কি নুরের তৈরী?
৩। আল্লাহ তাওরাতকে নূর বলেছেন তাহলে তাওরাত কি নুরের তৈরী?
৪। আল্লাহ চাঁদকে নূর বলেছেন তাহলে চাঁদ কি নুরের তৈরী?
৫। আল্লাহ আগুনকে নূর বলেছেন আর ইবলীসকে আল্লাহ সৃষ্টি আগুন দ্বারা তাহলে ইবলীসও কি নুরের তৈরী? তাহলেতো ইবলীস নুরের তৈরী হয়ে যায়। এইসব বাতিলপন্থীদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন-
مَثَلُهُمْ كَمَثَلِ الَّذِي اسْتَوْقَدَ نَارًا فَلَمَّا أَضَاءَتْ مَا حَوْلَهُ ذَهَبَ اللَّهُ بِنُورِهِمْ وَتَرَكَهُمْ فِي ظُلُمَاتٍ لا يُبْصِرُونَ
তাদের উদাহরণ ঐ ব্যক্তির মত, যে আগুন জ্বালাল এরপর যখন আগুন তার চারপাশ আলোকিত করল, আল্লাহ তাদের আলো (নূর) কেড়ে নিলেন এবং তাদেরকে অন্ধকারের মধ্যে ছেড়ে দিলেন, সুতরাং তারা কিছুই দেখতে পায় না। (আল-বাকারা-১৭)
নূর মানে আলো, আমাদেরকে অনেক বস্তুই আলো দেয়। যেমনঃ বাতি, টিউব লাইট, মোমবাতি, হারিকেন, ইত্যাদি। এইগুলো আমাদেরকে আলো দেওয়ার কারণে এইগুলোকে কি আমরা আলো বা নূরের তৈরী বলব? নাকি এইগুলো অন্য উপাদান দ্বারা তৈরী। যারা এইরূপ বলবে তারা আসলে বোকার স্বর্গে বাস করে। তদ্ররূপ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে যারা নুরের তৈরী বলে তারা আসলে বোকার স্বর্গে বাস করে।
আরেকটি প্রশ্ন, হযরত আদম আঃ ছাড়া সব মানুষকে মাটির তৈরি বলা যায় কিভাবে?
কারণ, আমরা তো দেখি যে তিনি ছাড়া অন্যরা সবাই বীর্য বা নোতফা থেকে সৃষ্টি।
জবাব, মানুষ এর বীর্যের উৎস হল খাবার। আর খাবারের উৎস হল মাটি। অতএব বীর্যের উৎস মাটি। কাজেই আদম
আঃ ছাড়া প্রত্যেকটি মানুষ বীর্য থেকে সৃষ্ট হলেও পরোক্ষভাবে মাটি থেকেই সৃষ্টি।
আরেকটি কথা হল, প্রত্যেকটি বস্তু তার মূলের দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। সে জন্য মানুষের মৃত্যু হলে সে তার মূল তথা মাটির দিকে প্রত্যাবর্তন করে থাকে। আমাদের নবী সাঃ এর সৃষ্টিমূল যদি মাটি না হয়ে নূর হত, তাহলে তিনি এখন মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেছেন কেন? জবাব দিন!
এখনে, মূল বক্তব্য হলো, মহানবী সাঃ তিনি নূর তথা হিদায়াতের বাতি, তবে নূরের তৈরি নন।
নবীজির শরির কাটলে লাল রক্ত বের হতো।
নবীজি যখন কাঁদতেন চোখে পানি বের হতো।
আল্লাহ বলেছেনঃ —
মানুষ সৃষ্টির সেরা।
মানুষ শ্রেষ্ট সুন্দর।
মানুষ সবচে জ্ঞানি।
মানুষ সবচে সম্মানী।
নবীজি আল্লাহর সবচে প্রিয় বান্দা।
নবীজি সবচে উত্তম চরিত্রের মানুষ।
নবীজি সবচে সম্মানী মর্যাদাবান মানুষ।
নবীজি সবচে বড় শিক্ষক জ্ঞানী মানুষ।
নবীজি হলেন সর্বশ্রেষ্ট মানুষ।
নবীজি হলেন অসাধারন মানুষ।
নবীজি হলেন মহা মানব।
আর মানুষ মাটি দিয়েই তৈরী।
তার পরেও একশ্রেনীর নবী ওয়ালাদের কাছে নবী কিন্তু মানুষই না, তারা নবীকে মানুষই বলতে চান না।
আল্লাহর কুরআনের আয়াতকে অস্বীকার করে, তারা নাকি আবার নবীর প্রেমের আশিকান দাবী করে।
নবী যদি মানুষই না হন, তাহলে আল্লাহর সবচে প্রিয় বান্দা কি করে হবেন?
নবী যদি মানুষই না হন, তাহলে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী কি করে হবেন?
নবী যদি মানুষই না হন, তাহলে সবচে সম্মানী মর্যাদাবান কি করে হবেন?
নবী যদি মানুষই না হন, তাহলে সবচে বড় জ্ঞানী শিক্ষক কি করে হবেন?
নবী যদি মানুষই না হন, তাহলে অসাধারণ সর্বশ্রেষ্ট মহামানব কি করে হবেন?
সবচেয়ে আফসোসের বিষয় হলো, নবীকে মাটির তৈরী মানুষ বললে বেদআতিরা মুসলিমকে কাফের বলে ফতোওয়া মেরে দেয়! একজন মুসলিমকে কাফের বলা কী এতই সহজ? না, কখনই নয়, বরং এই বিষয়টি অতীব জটিল এবং সুকঠিন। কারণ একজন মুসলিম ব্যক্তিকে কাফির ফাৎওয়া দেওয়ার অর্থই হলঃ সে জীবিত অবস্থায় থাকলে তার সাথে তার স্ত্রীর সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে। নিজ মুসলিম সন্তান-সন্ততির উপর তার অবিভাবকত্ব চলবে না। সে মৃত্যু বরণ করলে তাকে গোসল দেওয়া যাবে না, কাফন পরানো যাবে না, তার জানাযা ছালাত আদায় করা যাবে না। তার জন্য মাগফেরাতের দুআ করা যাবে না, মুসলিমদের কবরস্থানে তাকে দাফন করা যাবে না। তার কোন মুসলিম আত্মীয় স্বজন তার মীরাছ পাবে না, বরং তার সমুদয় ধন-সম্পদ সরকারী বায়তুল মালে জমা হয়ে যাবে। পরকালে সে জাহান্নামে চিরস্থায়ীভাবে বসবাস করবে…প্রভৃতি। আর যদি সে প্রকৃত অর্থে কাফের না হয় তবে কাফের ফাৎওয়া দাতা আল্লাহর উপর মিথ্যারোপকারী বলে গণ্য হবে ফলে সে সর্বাধিক যালিমে পরিণত হবে। আর তার একমাত্র বাসস্থান হবে জাহান্নাম (দ্রঃ আরাফঃ)। এবং তাকে অন্যায়ভাবে কাফের বলার জন্য নিজেই কাফিরে পরিণত হবে (বুখারী প্রভৃতি)। এ থেকেই প্রতীয়মান হয় বিষয়টি কত জটিল এবং সুকঠিন। এজন্যই বড় বড় ওলামায়েদ্বীন মুসলিম ব্যক্তিকে সহজে কাফের বলেন না,বরং সে ক্ষেত্রে বহু সতর্কতা অবলম্বন করে থাকেন) তাদের এই মূর্খামীদুষ্ট ফাৎওয়া অনুযায়ী সালাফে ছালেহীনের সকলই কাফের গণ্য হবে। কারণ তারা সৃষ্টি গত দিক থেকে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে মাটির তৈরী মানুষই মনে করতেন। তাঁরা আদৌ তাঁকে নূরের তৈরী গণ্য করতেন না। সুতরাং মাটির তৈরী সর্বশ্রেষ্ঠ মানব রাসূল সাঃ কে নূরের তৈরী বলে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার চেষ্টা করাটা একটি অহেতুক চেষ্টা। তিনি মাটির তৈরী একজন মানব। তবে তিনি মহামানব। আল্লাহ তাআলার পর তিনিই শ্রেষ্ঠ। তার মত আর কেউ নেই। তিনি সকল সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। মাটির তৈরী সকল মানুষ, আগুনের তৈরী সকল জিন, নূরের তৈরী সকল ফেরেস্তা থেকে শ্রেষ্ঠ মাটির তৈরী এ মহামানব রাসূল সাঃ। যেমন সকল নূরের তৈরী ফেরেস্তার মাঝে হযরত জিবরাঈল আঃ শ্রেষ্ঠ। তেমনি মাটির তৈরী এ মহামানব রাসূল সাঃ সকল মাটির তৈরী পয়গম্বর আঃ ও সকল মানুষ ও সকল জিনও ফেরেস্তা থেকে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম। তার মত উত্তম ও শ্রেষ্ঠ কোন সৃষ্টি আল্লাহ তাআলা কখনো সৃজন করেন নি, কখনো করবেন ও না। রাসুল (সাঃ) মানুষ মাটির তৈরি, যেমন কোরআন তৈরি কাগজ-কালি দিয়ে কিন্তু কোরআনের একনাম নূর বা হেদায়াত, তেমনি রাসূল (সা:) ও রক্তে গুস্তে তৈরি শরীরে মানুষ, কিন্তু তিনি হেদায়াতের নূর বা আলো মহামানব, এবং তিনিই মহৎ চরিত্র মর্যাদা সর্বোচ্ছোস্তরে অধিষ্টিত।
এর পরও কুরআনের উপরুক্ত এতোগুলো আয়াতকে আগ্রাহ্য করে মাত্র একটি আয়াত আর একটি হাদিসের অপব্যাখ্যাকে পুজি করে পীর পন্থী হুজুরদের মনগড়া কিতাবের উদৃতি দিয়ে রাসূল সাঃ কে মাটির তৈরী থেকে নূরের তৈরী বানানোর অযথা চেষ্টা করাটা একটি হাস্যকর প্রচেষ্টা ছাড়া কিছু নয়।
কাফেররাও ঈমান আনে নাই নবী রাসুলগণ (মাটির তৈরী) মানুষ বলেঃ-
“তারা আশ্চর্য হয় যে, তাদের মধ্যে থেকেই তাদের নিকট একজন সতর্ককারী এসেছে । সুতরাং অবিশ্বাসীরা বলে, “এটা তো বড় আশ্চর্য ব্যাপার !”(-সূরা কাফঃ ০২)
“এরা আশ্চর্য হচ্ছে এই ভেবে যে, তাদের মধ্য থেকেই তাদের জন্য একজন সর্তককারী এসেছে এবং অবিশ্বাসীরা বলে যে,” এ তো একজন যাদুকর , মিথ্যা বলছে”(-সূরা ছোয়াদঃ ০৪) আল্লাহ কি মানুষকে পয়গম্বর করে পাঠিয়েছেন ? তাদের এই উক্তিই মানুষকে ঈমান আনয়ন থেকে বিরত রাখে (বনী ইস্রাঈল-৯৪) “তাদের অন্তর [তা নিয়ে] তুচ্ছ বিষয়ের মত খেলা করে । পাপীরা তাদের গোপন পরামর্শ লুকিয়ে রেখে [বলে]” সে কি তোমাদের মত একজন মানুষ নয় ? তোমরা কি দেখে শুনে যাদুর কবলে পড়বে ?”(-সূরা আম্বিয়াঃ ০৩)
“এবং তারা বলে, “এ কি রকম রসুল, যে [মানুষের মত] আহার করে এবং রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করে ? তার নিকট কোন ফেরেশতা কেন অবতীর্ণ করা হলো না, যে তাঁর সাথে থাকতো সতর্ককারীরূপে ? অথবা তাকে ধন ভান্ডার দেয়া হয় নাই কেন অথবা উপভোগের জন্য তার কোন বাগান নাই কেন ?” দুষ্ট লোকেরা বলে, “তোমরা তো এক যাদুগ্রস্থ লোকেরই অনুসরণ করছো”(-সূরা ফুরকানঃ ০৭-০৮)
“কিন্তু তাঁর সম্প্রদায়ের অবিশ্বাসীদের প্রধাণগণ বলেছিলো, “আমরা তো তোমাকে আমাদের মত মানুষ ব্যতীত আর কিছু দেখছি না । আমাদের মধ্যে যারা নিম্নস্তরের, অপরিপক্ক বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন, তারা ব্যতীত আর কাউকে তোমাকে অনুসরণ করতে দেখছি না । আমরা আমাদের উপর তোমাদের কোন শ্রেষ্ঠত্ব দেখছি না, বরং আমরা তোমাদের মিথ্যাবাদী মনে করি”(- সূরা হুদঃ ২৭)
কাফেররা বললঃ এতো আমাদের মতই মানুষ বৈ নয় , তোমরা যা খাও, সেও তাই খায় এবং তোমরা যা পান কর, সেও তাই পান করে । যদি তোমরা তোমাদের মত একজন মানুষের আনুগত্য কর, তবে তোমরা নিশ্চিতরূপেই ক্ষতিগ্রস্থ হবে (মু’মিনুন-৩৩, ৩৪)
তোমরা তো আমাদের মতই মানুষ । তোমরা আমাদেরকে ঐ উপাস্য থেকে বিরত রাখতে চাও, যার ইবাদত আমাদের পিতৃপুরুষগণ করত (ইবরাহীম-১০)
আল্লাহ পৃথিবীতে অসংখ্য নবী রাসুল পাঠিয়েছেন তারাও (মাটির তৈরী) মানুষ ছিলেনঃ-
“তোমার পূর্বেও জনপদ বাসীদের মধ্যে [নবী হিসেবে] প্রেরণ করেছিলাম মানুষকে, যাদের আমি ওহী প্রেরণ করেছিলাম”(-সূরা ইউসুফঃ ১০৯)
“তোমাদের পূর্বে আমি যত রাসুল প্রেরণ করেছি তারা সকলেই ছিলো মানুষ যারা খাদ্য গ্রহণ করতো, এবং রাস্তায় চলাফেরা করতো । বস্তুতঃ আমি তোমাদের একজনকে অন্যজনের জন্য পরীক্ষা স্বরূপ করেছি । [হে মোমেনগণ] তোমরা কি ধৈর্য্য ধারণ করবে ? নিশ্চয়ই আল্লাহ্ [সব কিছু] দেখেন”(-সূরা ফুরকানঃ ২০)
“তোমার পূর্বে যে সব পয়গম্বর আমি প্রেরণ করেছিলাম তারাও ছিলো মানুষ, যাদের জন্য আমি ওহী মঞ্জুর করেছিলাম । যদি তোমরা তা না বুঝে থাক, তবে তাদের জিজ্ঞাসা কর যারা [আল্লাহর] বাণীকে ধারণ করে থাকে”(-সূরা আম্বিয়াঃ ০৭)
“এখন তোমাদের মধ্যে থেকেই তোমাদের নিকট একজন রাসূল এসেছে”(-সূরা তাওবাঃ ১২৮) তাদের পয়গম্বর তাদেরকে বলেনঃ আমরাও তোমাদের মত মানুষ, কিন্তু আল্লাহ্ বান্দাদের মধ্য থেকে যার উপরে ইচ্ছা, অনুগ্রহ করেন (ইবরাহীম-১১)
‘‘নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের বড় উপকার করেছেন, যেহেতু তাদেরই মধ্য থেকে একজনকে রাসূল হিসাবে পাঠিয়েছেন যিনি তাদের নিকট তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওত করেন, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন, এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দান করেন, যদিও তারা ইতোপূর্বে স্পষ্ট গুমরাহীতে নিমজ্জিত ছিল (সূরাহ আলে ইমরানঃ ১৬৪)
ইবলীসও জানে মানুষ মাটির তৈরীঃ-
(ইবলীস) বললঃ আমি এমন নই যে, একজন মানবকে সেজদা করব, যাকে আপনি পচা কর্দম থেকে তৈরী ঠনঠনে বিশুষ্ক মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন (হিজর-৩৩)
আল্লাহ বললেনঃ আমি যখন নির্দেশ দিয়েছি, তখন তোকে কিসে সেজদা করতে বারণ করল ? সে বললঃ আমি আমি তার চাইতে শ্রেষ্ঠ । আপনি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি দ্বারা । বললেনঃ তুই এখান থেকে নেমে যা । এখানে অহঙ্কার করার অধিকার তোর নাই । অতএব তুই বের হয়ে যা । নিশ্চয় তুই হীনতমদের অন্তর্ভূক্ত (সূরাহ আল্ আরাফঃ ১১-১৩)
প্রশ্নঃ নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) আদম সন্তানের বাইরে না ভিতরে ?
যদি বলে বাইরে তবে তো তার সাথে কথা বলা অনর্থক । কারন মুহাম্মাদ (সাঃ) অন্যান্য মানুষের মতই আদম সন্তান ছিলেন (উপরের দ্রঃ) । আর যদি বলে যে, তিনিও আদম সন্তানের মধ্যে গণ্য, তখন আমরা বলবো উপরুক্ত কোরআনের আয়াত থেকে আমরা জেনেছি আদম (আঃ) মাটির তৈরি ছিলেন। তাহলে তাদের নিকট প্রশ্নঃ মাটির তৈরী পিতার সন্তান কিভাবে নূরের তৈরী হল ?
মানুষ যেমন পানাহার করে, তেমনি মুহাম্মাদ (সাঃ) ও পানাহার করতেন (উপরের দ্রঃ) ।
অন্যান্য মানুষের যেমন সন্তানাদি ছিল, তেমনি রাসুলদেরও সন্তানাদি ছিল, স্ত্রীও ছিল । ভূল রাসুলেরও হত (উপরের দ্রঃ) ।
রাসুল (সাঃ) অতি মানব ছিলেন না যে তিনি মৃত্যু বরণ করবেন না । এরশাদ হচ্ছে- “নিশ্চয়ই তুমি মৃত্যুবরণ করবে এবং তারা সকলে মৃত্যু বরণ করবে” (সূরা যুমার ৩০)
আর একথা কিভাবে গ্রহণ করা যায় যে, তিনি নূরের তৈরী, অথচ যাকে মানব জাতির হেদায়েতের জন্য, অনুসরণীয় একমাত্র আদর্শ হিসেবে আল্লাহ পাঠালেন মাটির মানুষদের কাছে । “নিঃসন্দেহে তুমি মহান চরিত্রের ওপর (প্রতিষ্ঠিত) রয়েছো” {সূরা আল ক্বালামঃ আয়াত ৪}
তফসীর মাআরেফুল ক্বোরআন এর ৭৯২ নং পৃষ্টায় আছে- মানবের রাসুল মানবই হতে পারেনঃ ভিন্ন শ্রেণীর সাথে পারস্পরিক মিল ব্যতীত হেদায়েত ও পথ প্রদর্শনের উপকার অর্জিত হয় না । ফেরেশতা ক্ষুধা পিপাসা জানে না, কাম-প্রবৃত্তিরও জ্ঞান রাখে না এবং শীত গ্রীষ্মের অনুভুতি ও পরিশ্রমজনিত ক্লান্তি থেকে মুক্ত । এমতাবস্থায় মানুষের প্রতি কোন ফেরেশতাকে রসুল করে প্রেরণ করা হলে সে মানবের কাছেও উপরোক্ত্ কর্ম আশা করতো এবং মানবের দুর্বলতা ও অক্ষমতা উপলব্ধি করতো না । বলুনঃ যদি পৃথিবীতে ফেরেশতারা স্বচ্ছন্দে বিচরণ করত, তবে আমি আকাশ থেকে কোন ফেরেশতা (নুরের তৈরী) কেই তাদের নিকট পয়গম্বর করে প্রেরণ করতাম (বনী ইস্রাঈল-৯৫)
আরো বিস্তারিত কিছু জেনে নেওয়া যাকঃ
নবী রাসুল নুরের তৈরী বা ফেরেশতা নন তাও আল্লাহ তায়ালা কুরআনে উল্লেখ করেছেনঃ- আর আমি তোমাদেরকে বলিনা যে, আমার কাছে আল্লাহর ভান্ডার রয়েছে এবং একথাও বলি না যে, আমি গায়বী খবরও জানি; একথাও বলি না যে, আমি একজন ফেরেশতা (নুরের তৈরী); আর তোমাদের দৃষ্টিতে যারা লাঞ্ছিত আল্লাহতাদের কোন কল্যাণ দান করবেন না । তাদের মনের কথা আল্লাহ ভাল করেই জানেন । সুতরাং এমন কথা বললে আমি অন্যায় কারী হব (হূদ-৩১)
বিদআতীরা নবীকে নূর প্রমাণ করতে যেয়ে দলীল স্বরূপ কুরআন থেকে এই আয়াত পেশ করে থাকে । যেমন, মহান আল্লাহ এরশাদ করেনঃ ‘তোমাদের নিকট নূর-তথা একটি উজ্জ্বল জ্যোতি এবং স্পষ্ট কিতাব এসেছে । এর দ্বারা আল্লাহ যারা তার সন্তুষ্টি কামনা করে, তাদেরকে নিরাপত্তার পথ প্রদর্শন করেন, এবং তাদেরকে স্বীয় নির্দেশ দ্বারা অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে আনয়ন করেন এবং সরল পথে পরিচালনা করেন’(সূরাহ আল্ মায়িদাহঃ ১৫-১৬)
অত্র আয়াতে নবীর গুণ স্বরূপ (অথবা আত্মা) তাকে নূর বা জ্যোতি বলা হয়েছে, সৃষ্টিগতভাবে তাকে নূরের তৈরী বলা হয়নি । আর কিভাবে তিনি গুণগতভাবে নূর বা জ্যোতি হলেন, তা সাথে সাথে আল্লাহ পরের আয়াতেই ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন ।
এরশাদ হচ্ছেঃ ‘হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি । এবং আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহবায়করূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে । (সূরা আল্ আহযাব: ৪৫-৪৬) নবী (সাঃ) কে উক্ত আয়াতে (রূপে) যে মহান আল্লাহ গুণগত দিক থেকে নূর বা জ্যোতি বলেছেন তা অত্র আয়াতেই একেবারেই স্পষ্ট ।
এরশাদ হচ্ছে: ‘অতএব তোমরা আল্লাহ তাঁর রাসূল এবং অবতীর্ণ নূরের প্রতি ঈমান আনয়ন কর । তোমরা যা কর, সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবগত (সূরাহ আত্ তাগাবুন: ৮)
অন্য সূরায় মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘সুতরাং যারা তাঁর (মুহাম্মাদ এর) উপর ঈমান এনেছে, তাঁকে সম্মান করেছে, সাহায্য করেছে এবং তার উপর যে নূর অবতীর্ণ করা হয়েছে তার অনুসরণ করেছে তারাই হল প্রকৃত সফলকাম (সূরা আল্ আরাফ: ১৫৭)
উক্ত আয়াতদ্বয়ে আল্লাহ কুরআনকেও ‘নূর’ বলেছেন । নূর পার্টিরা কী বলবে কুরআনও নূরের সৃষ্টি ! অথচ কুরআন মহান আল্লাহর বাণী ইহাই সকল সুন্নী মুসলিমদের বিশ্বাস । কুরআনকে সৃষ্টবস্তু জ্ঞান করা স্পষ্ট কুফরী, অতএব, কুরআনকে নূর বলার পরও যদি নূরের সৃষ্টি না বলা হয়, তবে রাসূলকে নূরের সৃষ্টি কোন্ যুক্তিতে বলা হবে ? কারণ মহান আল্লাহ নবীকে যেমন ‘নূর’ বলেছেন, ঠিক তেমনিভাবে পবিত্র আল কুরআনকেও ‘নূর’ বলেছেন ।
প্রশ্ন করতে পারেন যে, আপনি বলেছেন নবী সা. মাটির তৈরী ।
অথচ, রাসূল সা. তার এক হাদিছে বলেন যে, আল্লাহ সর্বপ্রথম আমার নূর সৃষ্টি করেছেন । এর জবাব কী ? এ উত্তরটা একটি হাদিছ দিয়ে-ই দেই । আল্লাহর রাসূল সা. অন্য হাদিছে বলেন যে, আল্লাহ সর্বপ্রথম আমার রূহ সৃষ্টি করেন । ঐ হাদিছ এবং এই হাদিছের মর্ম একই । অর্থাৎ আল্লাহর রাসূলের রুহ মোবারক নূরের তৈরী, সমস্ত শরীর নয় । কেননা মহানবী সা. এর রূহ বা পবিত্র আত্না মাটির তৈরী হবে তো দূরের কথা, কোন মানুষের আত্নাই মাটির তৈরী নয় । বরং সমস্ত মানুষের আত্নাই নূরের তৈরী ।
সৃষ্টির উপাদানের উপর ভিত্তি করে কোন ব্যক্তির মর্যাদা নির্ণয় করা সরাসরি কুরআন ও হাদীছ বিরোধী কথা ।
কারণ মহান আল্লাহ বলেই দিয়েছেনঃ. ‘নিশ্চয় আল্লাহর নিকট তোমাদের মধ্যে ঐব্যক্তি বেশি সম্মানিত যে তোমাদের মধ্যে সর্বধিক তাক্বওয়াশীল’ পরহেযগার (সূরা হুজুরাত: ১৩)
নবী (সাঃ) বলেনঃ হে মানব মন্ডলি! নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক এক। সাবধান! কোন আরবীর আজমীর (অনারব) উপর, কোন আজমীর আরবীর উপর প্রাধান্য নেই । অনুরূপভাবে কোন লাল বর্ণের ব্যক্তির কালো ব্যক্তির উপর, কোন কালো ব্যক্তির লাল বর্ণের ব্যক্তির উপর প্রাধান্য নেই । প্রাধান্য একমাত্র তাকওয়া পরহেযগারিতার ভিত্তিতে হবে । ‘নিশ্চয় আল্লাহর নিকট তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি বেশি সম্মানিত যে তোমাদের মধ্যে সর্বধিক তাক্বওয়াশীল’-পরহেযগার (আহমাদ প্রভৃতি, হাদীছ ছহীহ । দ্রঃ শাইখ আলবানীর গায়াতুল মারাম, পৃঃ১৯০, হা/৩১৩)
কাজেই নবী (সাঃ) নূর থেকে সৃষ্টি না হয়ে মাটি থেকে সৃষ্টি হওয়া তাঁর জন্য মোটেও মানহানিকর বিষয় নয়। বরং নবী (সাঃ) মাটির তৈরী হয়েও সৃষ্টির সেরা ব্যক্তিত্ব, সর্বাধিক মুত্তাক্বী-পরহেযগার । সমস্ত সৃষ্টি কুলের সর্দার, নবীকুল শিরোমণী, আল্লাহর খালীল-অন্তরঙ্গ বন্ধু । আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে হাশরের মাঠে মহান শাফাআতের অধিকারী, হাওযে কাউছারের অধিকারী, সর্ব প্রথম জান্নাতে প্রবেশকারী । মাক্বামে মাহমূদের অধিকারী, রহমাতুল লিল আলামীন, শাফিঊল মুযনিবীন এসব বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মাঝে কোনই দ্বিমত নেই । ইহাই ছাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈনে ইযাম, আইম্মায়ে মুজতাহিদীনের বিশ্বাস । যুগ পরম্পরায় এই বিশ্বাসই করে আসছেন সকল সুন্নী মুসলিম ।
‘সৃষ্টির উপাদানের ভিত্তিতে ব্যক্তি শ্রেষ্ঠত্ব অজর্ন করে’ এটা ইবলীস শয়তানের ধারণা ও দাবী মাত্র ।
এই অলিক ধারণার ভিত্তিতেই সে (ইবলীস) আগুনের তৈরী বলে মাটির তৈরী আদমকে সিজদাহ করতে অস্বীকার করে ছিল (উপরের দ্রঃ) ।
‘নবী (সাঃ) কে নূরের তৈরী গণ্য করা হলে তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ হবে, আর মাটির তৈরী গণ্য করলে সেই শ্রেষ্ঠত্ব বিলুপ্ত হবে, তাতে তার মানহানী হবে’ মর্মের যুক্তিটি শয়তানের যুক্তির সাথে মিলে কিনা চিন্তা-ভাবনা করার উদাত্ত আহ্বান রইল ।
কাফেররাও নবী রাসুলকে মাটির তৈরী মানুষ বলে তাঁর প্রতি ঈমাম আনে নাই, অনুসরণ করে নাই, তাকে আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করে নাই (উপরের দ্রঃ) । আপনারা যারা নূরের তৈরী আক্বীদা পোষণ করেন, মাটির তৈরী বলে কি আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করতে চান না ?!! এ রকম ভাবলে কাফেরদের সাথে মিলে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায় নয় কি ? আল্লাহ খালেক (সব কিছুর স্রষ্টা) আর সবকিছু তার মাখলুক (সৃষ্টি) আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আল্লাহ সমস্ত কিছুর স্রষ্টা ও তিনি সমস্ত কিছুর কর্মবিধায়ক । আকাশ ও পৃথিবীর চাবিও তাঁরই কাছে’ – {যুমার ৬২-৬৩}
আর শ্রেষ্ঠ মাখলুক হল মানুষ (মাটির তৈরী) [যে কারনে আল্লাহ নুরের তৈরী ফেরেশতাকে মাটির তৈরী মানুষ আদম (আঃ) কে সেজদা করার আদেশ দিলেন] মানুষের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হল বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) । তাঁর শ্রেষ্ঠতের বহু কারন রয়েছে । তন্মধ্যে তাঁর প্রতি আল্লাহর বানী আল কুরআন নাযিল হয়েছে এবং তিনিই আল্লাহর বানীর সর্বাপেক্ষা বুঝদ্বার ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষক । আল্লাহ আপনার প্রতি ঐশীগ্রন্থ ও প্রজ্ঞা অবতীর্ণ করেছেন এবং আপনাকে এমন বিষয় শিক্ষা দিয়েছেন, যা আপনি জানতেন না । আপনার প্রতি আল্লাহর করুনা অসীম – (নিসা-১১৩)
“বলুনঃ আমিও তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহই একমাত্র ইলাহ। অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন, সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার এবাদতে কাউকে শরীক না করে।” সুরা কাহ্ফ :১১০}
আল্লাহ্ বলেন:
আসমান যমিনে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কেউ গায়েবের খবর জানে না… [সূরা নামল, আয়াত: ৬৫]
আল্লাহ্ আরো বলেন:
“আপনি বলুন, আমি তোমাদেরকে বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহর ভাণ্ডার রয়েছে। তাছাড়া আমি অদৃশ্য বিষয়ে অবগতও নই। আমি এমনও বলি না যে আমি ফেরেশতা। আমি তো শুধু ঐ অহীর অনুসরণ করি, যা আমার কাছে আসে..”.[সূরা আন্আ’ম, আয়াত: ৫০]
আল্লাহ্ আরো বলেন:
আপনি বলে দিন, আমি আমার নিজের কল্যাণ এবং অকল্যাণ সাধনের মালিক নই, কিন্তু যা আল্লাহ্ চান। আর আমি যদি গায়েবের কথা জেনে নিতে পারতাম, তাহলে বহু কল্যাণ অর্জন করে নিতে পারতাম। ফলে আমার কোন অমঙ্গল কখনো হতে পারত না।
আমি তো শুধুমাত্র একজন ভীতি প্রদর্শক ও ঈমানদারদের জন্য সুসংবাদ দাতা…[সূরা আ’রাফ, আয়াত: ১৮৮]
রাসূল (সা:) বলেন:
আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ। তোমার যেমন ভুলে যাও আমিও তেমনি ভুলে যাই। আমি ভুল করলে তোমরা আমাকে স্মরণ করিয়ে দিও… [বুখারী],
যে ব্যক্তি রাসূল (সা:) এর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করল এই বিশ্বাস রাখলো যে, নবী (সা:) ভালমন্দের মালিক, সে কাফের হিসাবে গণ্য হবে।
রাসূল সাঃ মানুষ ছিলেন? নাকি ফেরেস্তা?
যদি বলেন ফেরেস্তা তাহলে আরবের মুশরিকদের অভিযোগ করার কি কারণ? পবিত্র কুরআনে যা বিধৃত হয়েছে এরকম শব্দে-
قُلْ سُبْحَانَ رَبِّي هَلْ كُنتُ إَلاَّ بَشَرًا رَّسُولاً (93) وَمَا مَنَعَ النَّاسَ أَن يُؤْمِنُواْ إِذْ جَاءهُمُ الْهُدَى إِلاَّ أَن قَالُواْ أَبَعَثَ اللَّهُ بَشَرًا رَّسُولاً (94) قُل لَّوْ كَانَ فِي الأَرْضِ مَلآئِكَةٌ يَمْشُونَ مُطْمَئِنِّينَ لَنَزَّلْنَا عَلَيْهِم مِّنَ السَّمَاء مَلَكًا رَّسُولاً (95)
অনুবাদ-বলুন, পবিত্র মহান আমার পালনকর্তা, আমি একজন মানব রাসূল ছাড়া কে? লোকদের নিকট হেদায়াত আসার পর তাদেরকে এ উক্তি ঈমান আনয়ন থেকে বিরত রাখে যে, “আল্লাহ কি মানুষকে রাসূলস্বরূপ প্রেরণ করেছেন?” বলুন যদি পৃথিবীতে ফেরেস্তারা বিচরণ করত, তবে আমি তাদের নিকট আকাশ থেকে ‘ফেরেস্তা রাসূল’ প্রেরণ করতাম।{সূরা বনী ইসরাঈল-৯৩, ৯৪, ৯৫}
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-
وَقَالُواْ لَوْلا أُنزِلَ عَلَيْهِ مَلَكٌ وَلَوْ أَنزَلْنَا مَلَكًا لَّقُضِيَ الأمْرُ ثُمَّ لاَ يُنظَرُونَ ( وَلَوْ جَعَلْنَاهُ مَلَكًا لَّجَعَلْنَاهُ رَجُلاً وَلَلَبَسْنَا عَلَيْهِم مَّا يَلْبِسُونَ (9)
অনুবাদ-তারা আরো বলে যে, তাঁর কাছে কোন ফেরেস্তা কেন প্রেরণ করা হল না? যদি আমি কোন ফেরেস্তা প্রেরণ করতাম, তবে গোটা ব্যাপারটি খতম হয়ে যেত। এরপর তাদেররকে সামান্য অবকাশও দেয়া হত না। যদি আমি কোন ফেরেস্তাকে রাসূল করে পাঠাতাম, তবে সে মানুষের রূপেই হত। এতেও সে সন্দেহই করত, যা এখন করছে।{সূরা আনআম-৮,৯}
রাসূল সাঃ মানুষ ছিলেন এ ব্যাপারে কোন কাফেরেরও সন্দেহ ছিল না। মক্কার কাফেরদের আশ্চর্যের এটাইতো কারণ ছিল যে, আল্লাহ তাআলা কেন ফেরেস্তা ছাড়া মানুষকে রাসূল বানিয়ে পাঠালেন?
এর জবাব আল্লাহ তাআলা কি সুন্দর শব্দে বলে দিলেন। যদি দুনিয়াতে মানুষের বদলে ফেরেস্তারা থাকতো তাহলে আল্লাহ তাআলা ফেরেস্তাই পাঠাতেন রাসূলরূপে। কিন্তু যেহেতু দুনিয়াতে মানুষ বাস করে তাই মানুষকেই পাঠানো হয়েছে রাসূল হিসেবে। এ সহজ কথাটি মক্কার কাফেররা বুঝতো না বলেই আল্লাহ তাআলা আয়াত নাজিল করে বুঝালেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল মুসলমান নামধারী কিছু বেদআতীরাও মক্কার কাফেরদের মতই অভিযোগ করে নবীজী সাঃ মানুষ নন। ফেরেস্তাদের মত নূরের তৈরী। যদি নবীজী সাঃ কে মানুষ বিশ্বাস করতে হয়, তাহলে পূর্বোক্ত আয়াতের কালীমা অনুযায়ী বিশ্বাস করতে হবে মানুষ মাটির তৈরী, তাই নবীজী সাঃ ও মানুষ তাই তিনিও মাটির তৈরী।
আর যদি বলা হয় রাসূল সাঃ মানুষ নন, ফেরেস্তা, তাহলে মক্কার কাফেররা ফেরেস্তা কেন নবীরূপে পাঠানো হলো না এ অভিযোগ কেন করল? নবীজী সাঃ মানুষ না হয়ে ফেরেস্তা হলে কাফেরদের প্রশ্ন করার কি প্রয়োজন ছিল যে, আল্লাহ তাআলা মানুষকে কেন পাঠালেন নবী করে ফেরেস্তার বদলে?
সুতরাং বুঝা গেল নবীজী সাঃ মানুষ ফেরেস্তা নয়। আর মানুষ কিসের তৈরী? তা সুষ্পষ্টই আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের উল্লেখ করেছেন।
অনুবাদ-হযরত আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ বলেছেন-আমিতো তোমাদের মতই একজন মানুষ। তোমরা যেমন ভুলে যাও, আমিও তেমনি ভুলে যাই। তাই আমি ভুলে গেলে তোমরা আমাকে স্বরণ করিয়ে দিও।{সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩৯২, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-২৬৬২, মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৫২৪২, মুসনাদে তায়ালিসী, হাদীস নং-২৭১}
جابر بن عبد الله يقول سمعت رسول الله -صلى الله عليه وسلم- يقول « إنما أنا بشر وإنى اشترطت على ربى عز وجل أى عبد من المسلمين سببته أو شتمته أن يكون ذلك له زكاة وأجرا (صحيح مسلم، كتاب البر والصلة والآدب، باب من لعنه النبى -صلى الله عليه وسلم- أو سبه أو دعا عليه وليس هو أهلا لذلك كان له زكاة وأجرا ورحمة، رقم الحديث-6790)
অনুবাদ-হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ থেকে বর্ণিত। আমি রাসূল সাঃ কে বলতে শুনেছি যে, তিনি ইরশাদ করেছেন-আমি তো একজন মানুষমাত্র। আমি আপন প্রতিপালকের নিকট বলে রেখেছি যে, আমি যদি কোন মুসলমানকে মন্দ বলি, তাহলে সেটি যেন তার জন্যে পবিত্রতা ও সওয়াবের কারণ হয়।{সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৬৭৯০, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১২১২৬, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১৩১৬০}
উপরে উল্লেখিত আয়াত সমুহ ও হাদীসগুলো একথা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলছে যে, রাসূল সাঃ মানুষ ছিলেন। ফেরেস্তা বা জিন নয়। আর মানুষ মাটির তৈরী হয় একথা মহান রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে একাধিক স্থানে স্পষ্টই বলেছেন। যা ইতোপূর্বে উদ্ধৃত হয়েছে।
রাসূল সাঃ নূরের তৈরী হলে রাসূল সাঃ এর পূর্বসূরী ও উত্তরসূরীরা কিসের তৈরী?
قال العباس بلغه صلى الله عليه وسلم بعض ما يقول الناس قال فصعد المنبر فقال من أنا قالوا أنت رسول الله فقال أنا محمد بن عبد الله بن عبد المطلب إن الله خلق الخلق فجعلني في خير خلقه وجعلهم فرقتين فجعلني في خير فرقة وخلق القبائل فجعلني في خير قبيلة وجعلهم بيوتا فجعلني في خيرهم بيتا فأنا خيركم بيتا وخيركم نفسا-1/169، رقم الحديث-3532)
অনুবাদ-হযরত আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব রাঃ বলেন-রাসূল সাঃ [একবার কোন কারণে] মিম্বরে দাঁড়িয়ে [সমবেত লোকদেরকে] জিজ্ঞেস করলেন-আমি কে? সাহাবীগণ বললেন-আপনি আল্লাহর রাসূল, আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। তখন তিনি বললেন-আমি আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুত্তালিবের ছেলে মুহাম্মদ। আল্লাহ তাআলা তামাম মাখলূক সৃষ্টি করে আমাকে সর্বোত্তম সৃষ্টির অন্তর্ভূক্ত করেছেন [অর্থাৎ মানুষ বানিয়েছেন]। এরপর তাদেরকে দু’ভাগে [আরব ও অনারব] বিভক্ত করে আমাকে উত্তম ভাগে [আরবে] রেখেছেন এবং আমাকে তাদের মধ্যে সর্বোত্তম গোত্রে পাঠিয়েছেন। এরপর সে গোত্রকে বিভিন্ন পরিবারে বিভক্ত করেছেন এবং আমাকে সর্বোত্তম পরিবারে প্রেরণ করেছেন। সুতরাং আমি ব্যক্তি ও বংশ সর্বদিক থেকে তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম।{সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-৩৫৩২, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৭৮৮, আল মু’জামুল কাবীর, হাদীস নং-৬৭৫, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩২২৯৬} রাসুল (সাঃ) মানুষ মাটির তৈরি, যেমন কোরআন তৈরি কাগজ-কালি দিয়ে কিন্তু কোরআনের একনাম নূর বা হেদায়াত, তেমনি রাসূল (সা:) ও রক্তে গুস্তে তৈরি শরীরে মানুষ, কিন্তু তিনি হেদায়াতের নূর বা আলো মহামানব, এবং তিনিই মহৎ চরিত্র মর্যাদা সর্বোচ্ছোস্তরে অধিষ্টিত।
এ প্রশ্ন আসাটা স্বাভাবিক যে, রাসূল সাঃ যদি মাটির তৈরী না হয়ে নূরের তৈরী হয়ে থাকেন। তাহলে রাসূল সাঃ এর সম্মানিত আম্মাজান আমিনা ও সম্মানিত আব্বাজান আব্দুল্লাহ যাদের ঔরসে তিনি জন্ম নিলেন তারা কিসের তৈরী? সেই সাথে নবীজী সাঃ এর সন্তানরা কিসের তৈরী? মাটির না নূরের? মাটির তৈরী থেকেতো মাটিই হবে। আর নূর থেকেতো নূরই হবে, তাই নয়কি? সুতরাং চিন্তা ভাবনা করে এসব উদ্ভট দাবি তোলা উচিত যে, রাসূল সাঃ নূরের তৈরী। যেখানে এ ব্যাপারে কোন সুষ্পষ্ট দলিলই নেই। সেখানে শুধুমাত্র নিজের আবেগ আর অন্ধতাকে পূজি করে রাসূল সাঃ কে মাটির থেকে নূরের তৈরী বানিয়ে ফেলাটা বোকামী ছাড়া কিছু নয়।
নূরের তৈরী হওয়াই কি শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণবাহী তা আমরা পূর্বের আলোচনায় বুঝতে পেরেছি, আর ঐকথা সম্পূর্ণ ভুল যে, কোন কিছু নূরের তৈরী হলেই তা শ্রেষ্ঠ হয়ে যাবে। বরং শ্রেষ্ঠত্বের মূল বিষয় হল তার অভ্যান্তরীণ গুণ শ্রেষ্ঠ হওয়া। মাটির তৈরী মানুষ নূরের তৈরী ফেরেস্তা থেকে শ্রেষ্ঠ।
এখানে মহান আল্লাহ বলেই দিয়েছেন যে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আআইহি ওয়া সাল্লাম) ঐসব লোকদেরই একজন, তিনি তাদের বাইরের কোন লোক নন। কাজেই ঐসব লোক যদি নূরের তৈরী হন, তাহলে নবী(ছাল্লাল্লাহু আআইহি ওয়া সাল্লাম)ও নূরের তৈরী হবেন, আর যদি তারা নূরের তৈরী না হন তবে তিনিও নূরের তৈরী হবেন না এটাইতো স্বাভাবিক। আসলে বিদআতীরা কুরআন ও ছহীহ হাদীছ আয়ত্ব করতে এবং এর সঠিক ব্যাখ্যা অনুধাবন করা থেকে চির ব্যর্থ, তাই তারা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে কুরআন ও হাদীছ বিরোধী কথা বলে যে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাটির তৈরী নন, বরং তিনি নূরের তৈরী। অথচ এভাবে তারা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে অধিক সম্মান দিতে গিয়ে আরো তাঁকে খাটো করে দিয়েছে। কারণ নূরের তৈরী ফেরেশতার উপর আল্লাহ মাটির তৈরী আদম (আলাইহিস্ সালাম)কে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। তাদেরকে দিয়ে আদমের সিজদা করিয়ে নিয়েছেন। (দ্রঃসূরা আল বাকারাহ: ৩৪, সূরা আল্ আ’রাফ: ১১) তাহলে কার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হল? নূরের তৈরী ফেরেশতাদের নাকি মাটির তৈরী আদম (আলাইহিস্ সাল্লাম)এর? অবশ্যই মাটির তৈরী আদম (আলাইহিস্ সালাম) এর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হল। তবে আমরা তর্কের খাতিরে এটা বললেও আমাদের বিশ্বাস, আদম (আলাইহিস্ সালাম) ফেরেশতাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে ছিলেন তাঁর ইলমের মাধ্যমে। আর এটা একমাত্র আল্লাহর অনুগ্রহেই হয়ে ছিল। তিনিই আদমের প্রতি অনুগ্রহ করে ফেরেশতাদের চেয়ে তাকে বেশি ইলম দান করে ছিলেন।
আমি বিশ্বের সকল বিদআতীকে বলতে চাই, এক লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী ও রাসূল (অনেকে বলেনঃ নবী ও রাসূলদের সর্ব মোট সংখ্যা হলঃ এক লক্ষ চব্বিশ হাজার, মতান্তরে অসংখ্য নবীগন। এভাবে বলে থাকেন, আবার এটা প্রমাণ করে তারা ঐমর্মে নবী স: এর কোন হাদীছ অবগত হননি। মুসনাদ আহমাদ, ছহীহ ইবনু ইব্বান প্রভৃতিতে নবী ও রাসূলদের সর্ব মোট সংখ্যা একলক্ষ চব্বিশ হাজার বলা হয়েছে, আরো বলা হয়েছে তাদের মধ্যে রাসূলদের সংখ্যা সর্ব মোট ৩১৫ জন দ্রঃ মুসনাদ আহমাদ ৫/১৭৯,হা/২১৫৯২, ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/ প্রভৃতি হাদীছ ছহীহ, সিলসিলাতুল আহাদীছ আছ ছহীহাহ ) এর মধ্যে শুধু নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিভাবে নূরের তৈরী হলেন? যদি তাঁকে নূরের তৈরী না বলায় তার মান খাটো করা হয়,তবে বাকী এক লক্ষ তেইশ হাজার নয়শো নিরানব্বই জন নবী রাসূলকে মাটির তৈরী বলে কি তাদের মান খাটো করা হয় না? নাকি তারাও নূরের তৈরী? কৈ কোন বিদআতীকে তো বলতে শুনি না যে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মত বাকী সমস্ত নবী, রাসূলগণও নূরের তৈরী! বরং তারা এমনটি শুধু নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ক্ষেত্রেই বলে থাকে। সুতরাং বাকী সমস্ত নবীকে মাটির তৈরী বলায় যেমন তাদের মান হানী হয় না, তদ্রুপ আমাদের নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কেও মাটির তৈরী বলায় তার মানহানী হবে না। তবে কেন বিষয়টি নিয়ে এত বাড়াবাড়ি?
কুরআন ও হাদিস থেকে আলোচনার সারকথাঃ
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নূরের তৈরী না কি মাটির তৈরী? মানুষ কিসের তৈরী? প্রথমেই বুঝতে হবে মানুষ কিসের তৈরী? কুরআনুল কারীমের বিভিন্ন আয়াত এবং সহীহ হাদীসের ভিত্তিতে একথা সুষ্পষ্ট প্রমাণিত যে, মানুষ মাটির তৈরী। নূর বা অগ্নির তৈরী নয়। কয়েকটি আয়াতের দিকে লক্ষ্য করুন:-
মহান আল্লাহ বলেছেনঃ “যখন আপনার পালনকর্তা ফেরেস্তাদের বললেন-আমি মাটির তৈরী মানুষ সৃষ্টি করব।” (সূরা সোয়াদঃ আয়াতঃ ৩৮:৭১)। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেছেনঃ “নিশ্চয় আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি পঁচা কর্দম থেকে তৈরী বিশুস্ক ঠনঠনে মাটি দ্বারা।”(সূরা হিজরঃ আয়াতঃ ১৫:২৮)। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেছেনঃ “তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পোড়া মাটির ন্যায় শুস্ক মৃত্তিকা থেকে এবং জিনকে সৃষ্টি করেছেন ধোয়া বিহীন অগ্নি থেকে।” ***সূরা আর রাহমানঃ আয়াতঃ ৫৫:১৪-১৫। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেছেনঃ “তিনিই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন মাটি দ্বারা।” {সূরা মুমিন-৬৭} আরো ইরশাদ হয়েছেঃ “আমি মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি।” ***সূরা মুমিনুনঃ আয়াতঃ ২৩:১২।
উপরোক্ত বক্তব্য থেকে মানব সৃষ্টির পদ্ধতি ও মূল উপাদান সম্পর্কে আশা করি সুষ্পষ্ট ধারণা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালার বাণী দ্বারা একথা সুষ্পষ্ট প্রমাণিত যে, মানুষ নূর বা আগুনের তৈরী নয়। বরং মাটির তৈরী। এবার বুঝতে হবে নবীজী (সাঃ) কি ছিলেন? মানুষ? না জিন? না ফেরেস্তা? রাসূল (সাঃ) জিন নন, এ ব্যাপারে সকলে একমত। তাই এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার কোন প্রয়োজন নেই। কথা হচ্ছে নবীজী (সাঃ) নূরের তৈরী ফেরেস্তা কি না? নাকি মাটির তৈরী মানুষ? রাসূল (সাঃ) মানুষ ছিলেন? নাকি ফেরেস্তা? যদি বলেন ফেরেস্তা তাহলে আরবের মুশরিকদের অভিযোগ করার কারণ কি? পবিত্র কুরআনে যা বিধৃত হয়েছে এ রকম শব্দেঃ মহান আল্লাহ বলেছেনঃ “বলুন, পবিত্র মহান আমার পালনকর্তা, আমি একজন মানব রাসূল ছাড়া কে? লোকদের নিকট হেদায়াত আসার পর তাদেরকে এ উক্তি ঈমান আনয়ন থেকে বিরত রাখে যে, “আল্লাহ কি মানুষকে রাসূলস্বরূপ প্রেরণ করেছেন?” বলুন যদি পৃথিবীতে ফেরেস্তারা বিচরণ করত, তবে আমি তাদের নিকট আকাশ থেকে ‘ফেরেস্তা রাসূল’ প্রেরণ করতাম।” ***সূরা বনী ইসরাঈলঃ আয়াতঃ ১৭:৯৩-৯৫। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেছেনঃ “তারা আরো বলে যে, তাঁর কাছে কোন ফেরেস্তা কেন প্রেরণ করা হল না? যদি আমি কোন ফেরেস্তা প্রেরণ করতাম, তবে গোটা ব্যাপারটি খতম হয়ে যেত। এরপর তাদেরকে সামান্য অবকাশও দেয়া হত না। যদি আমি কোন ফেরেস্তাকে রাসূল করে পাঠাতাম, তবে সে মানুষের রূপেই হত। এতেও সে সন্দেহই করত, যা এখন করছে।” ***সূরা আনআমঃ আয়াতঃ ৬:৮-৯।
রাসূল (সাঃ) মানুষ ছিলেন এ ব্যাপারে কোন কাফেরেরও সন্দেহ ছিল না। মক্কার কাফেরদের আশ্চর্যের এটাইতো কারণ ছিল যে, আল্লাহ তাআলা কেন ফেরেস্তা ছাড়া মানুষকে রাসূল বানিয়ে পাঠালেন? এর জবাব আল্লাহ তাআলা কি সুন্দর শব্দে বলে দিলেন। যদি দুনিয়াতে মানুষের বদলে ফেরেস্তারা থাকতো তাহলে আল্লাহ তাআলা ফেরেস্তাই পাঠাতেন রাসূলরূপে। কিন্তু যেহেতু দুনিয়াতে মানুষ বাস করে তাই মানুষকেই পাঠানো হয়েছে রাসূল হিসেবে। এ সহজ কথাটি মক্কার কাফেররা বুঝতো না বলেই আল্লাহ তাআলা আয়াত নাজিল করে বুঝালেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল মুসলমান নামধারী কিছু বেদআতীরাও মক্কার কাফেরদের মতই অভিযোগ করে নবীজী (সাঃ) মানুষ নন। ফেরেস্তাদের মত নূরের তৈরী। যদি নবীজী (সাঃ)-কে মানুষ বিশ্বাস করতে হয়, তাহলে পূর্বোক্ত আয়াতের কারীমা অনুযায়ী বিশ্বাস করতে হবে মানুষ মাটির তৈরী। তাই নবীজী (সাঃ)-ও মানুষ – তাই তিনিও মাটির তৈরী। আর যদি বলা হয় রাসূল (সাঃ) মানুষ নন, ফেরেস্তা, তাহলে মক্কার কাফেররা ফেরেস্তা কেন নবী রূপে পাঠানো হলো না এ অভিযোগ কেন করল? নবীজী (সাঃ) মানুষ না হয়ে ফেরেস্তা হলে কাফেরদের প্রশ্ন করার কি প্রয়োজন ছিল যে, আল্লাহ তাআলা মানুষকে কেন পাঠালেন নবী করে ফেরেস্তার বদলে? সুতরাং বুঝা গেল নবীজী (সাঃ) মানুষ – ফেরেস্তা নয়। আর মানুষ কিসের তৈরী? তা সুষ্পষ্টই আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের উল্লেখ করেছেন। মহান আল্লাহ বলেছেনঃ “বলুন, পবিত্র মহান আমার পালনকর্তা, আমি একজন মানব রাসূল ছাড়া কে? লোকদের নিকট হেদায়াত আসার পর তাদেরকে এ উক্তি ঈমান আনয়ন থেকে বিরত রাখে যে, “আল্লাহ কি মানুষকে রাসূলস্বরূপ প্রেরণ করেছেন?” বলুন যদি পৃথিবীতে ফেরেস্তারা বিচরণ করত, তবে আমি তাদের নিকট আকাশ থেকে ‘ফেরেস্তা রাসূল’ প্রেরণ করতাম।” – সূরা বনী ইসরাঈলঃ আয়াতঃ ১৭:৯৩-৯৫।
অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেছেনঃ “বলুন, আমিও তোমাদের মতই একজন মানুষ। আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের মাবুদ হল একজন। অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরীক না করে।” ***সূরা কাহফঃ আয়াতঃ ১৮:১১০।
অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেছেনঃ “বলুন, আমিও তোমাদের মতই মানুষ। আমার প্রতি অহী আসে যে, তোমাদের মাবুদ হল একজন। অতএব তারই প্রতি একাগ্র হও, এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। আর মুশরেকদের জন্য রয়েছে। দুর্ভোগ।” ***সূরা হা-মীম সাজদাঃ আয়াতঃ ৪১:৬।
অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেছেনঃ “আপনার পূর্বেও আমি কোন মানুষকে অনন্ত জীবন দান করিনি। সুতরাং আপনার মৃত্যু হলে তারা কি চিরঞ্জীব হবে?” ***সূরা আম্বিয়াঃ আয়াতঃ ২১:৩৪।
Alhamdulillah. Thanks a lot brother for such a great post. Jazakallah.