শেষ জামানায় মালাহেম বা মালহামা বা মহাযুদ্ধ সম্পর্কে ব্যাখ্যা ও উদাহরণসহ কেয়ামতের আলামত ও ভবিষ্যতবাণী
[আমরা ইতিপূর্বে কেয়ামতের আলামত ও ভবিষ্যতবাণী সম্পর্কে পর্ব ভিত্তিক অনেকগুলো হাদিস ও আছার পেশ করেছি। সেগুলো দেখতে এখানে ক্লিক করুন ।]
[প্রথমেই বলে রাখি কিয়ামতের জ্ঞান শুধুমাত্র আল্লাহ’র কাছে আছে ।
‘(হে নবী মুহাম্মাদ!) মানুষ তোমাকে কিয়ামত (কবে হবে, সে) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। তুমি বলো, এর (একেবারে সঠিক) জ্ঞান শুধুমাত্র আল্লাহ’র কাছে আছে। আর (হে নবী !) তুমি কি জানো, কিয়ামত (ঘটার) সম্ভাবনা নিকটে চলে এসেছে !’ [সূরা আহযাব ৬৩]
এখানে শুধুমাত্র হাদিস ও কিছু অনুমানের ভিত্তিতে আমরা কিয়ামতের আলামতগুলো ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি । সুতরাং এখানের সকল বক্তব্য কে আমরা কখনো চূড়ান্ত বলে মনে করি না । এগুলো শুধু উল্লেখ করছি, যাতে এই রেওয়ায়েতসমূহে বর্ণিত কোনো ঘটনা ঘটতে দেখলে তা চিনে নিতে পারেন এবং রেওয়াতের হক্ব আদায় করতে পারেন।
উল্লেখ্য, যেহুতু হয়তো এখানে বর্ণিত অল্প কিছু হাদিসের সনদগত ও অন্যান্য দূর্বলতা থাকতে পারে তাই এখানে উল্লেখিত হাদিসসমূহ কোনো বিজ্ঞ মুহাদ্দেস আলেমের পরামর্শ ব্যাতীত কারো কাছে বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছি।]
# হযরত মুয়ায বিন যাবাল রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- عمران بيت المقدس خراب يثرب، وخراب يثرب خروج الملحمة، وخروج الملحمة فتح القسطنطينية، وفتح القسطنطينية خروج الدجال. أخرجه أبو داود في “السنن: ٤٢٩٤ و حسّنه الألباني في صحيح أبي داود: رقم ٤٢٩٤ ; وأحمد في “مسنده: ٥/٢٤٥ رقم ٢٢١٢١; الطحاوي في “شرح مشكل الآثار: ٥١٩, ; ابن أبي شيبة في “المصنف:١٥/١٣٥ رقم ٣٨٤٧٣ ;;الطبراني في “المعجم الكبير: ٢٠/١٠٨;الحاكم في “المستدرك:٨٢٩٧ ; الديلمي في “الفردوس: ٤١٢٧; قال الحافظ ابن كثير في النهاية:١/٥٩ : وهذا إسناد جيد وحديث حسن، وعليه نور الصدق وجلالة النبوة – ‘বায়তুল-মাকদিস’-এর গড়ন (হলে ঘটনার ক্রমধারায়) ইয়াসরিব’-এর খারাবী (হবে)। ইয়াসরিব’-এর খারাবী (হলে ঘটনার ক্রমধারায়) মালহামাহ’র সূত্রপাত (হবে)।মালহামাহ’র সূত্রপাত (হলে এর ক্রমধারায় মুসলমানদের হাতে) কুসতুনতুনিয়া (তথা কনসটেন্টিনোপল, তুরষ্ক)’র বিজয় (সংঘটিত হবে), আর কুসতুনতুনিয়া’র বিজয় (সংঘটিত হলে তার কিছু কাল পর) দাজ্জালের আবির্ভাব (হবে)। [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪২৯৪; মুসনাদে আহমদ-৫/২৪৫, হাদিস ২২১২১; শারহু মুশকিলিল আছার, ত্বাহাবী, হাদিস ৫১৯; আল-মুসান্নাফ, ইবনু আবি শায়বাহ- ১৫/১৩৫, হাদিস ৩৮৪৭৩; আল-মু’জামুল কাবীর, ত্বাবরাণী- ২০/১০৮; মুসতাদরাকে হাকিম, হাদিস ৮২৯৭; মুসনাদে ফিদোউস, দাইলামী, হাদিস ৪১২৭]
# হযরত আবু দারদাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. এরশাদ করেছেন- إِنَّ فُسْطَاطَ الْمُسْلِمِينَ يَوْمَ الْمَلْحَمَةِ بِالْغُوطَةِ إِلَى جَانِبِ مَدِينَةٍ يُقَالُ لَهَا دِمَشْقُ مِنْ خَيْرِ مَدَائِنِ الشَّامِ . أخرجه أحمد: ٢١٧٢٥، وأبو داود: ٤٢٩٨، و صحّحه الألباني في صحيح الترغيب والترهيب: ٣٠٩٧ – ‘নিশ্চই মালহামা’র দিন মুসলমানদের জমায়েত (assembly) হবে গুতাহ’তে; (এ স্থানটি) শাম-এর শহর সমূহের মধ্যে সর্বোত্তম শহর -যাকে দামেশক বলে ডাকা হয় -সেই শহরের একদিকে (গুতাহ) অবস্থিত’। [মুসনাদে আহমদ, হাদিস ২১৭২৫; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪২৯৮]
# হযরত আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ স. এরশাদ করেন- إِذَا وَقَعَتِ الْمَلاحِمُ بَعَثَ اللَّهُ مِنْ دِمَشْقَ بَعْثًا مِنَ الْمَوَالِي هُمْ أَكْرَمُ الْعَرَبِ فَرْسًا ، وَأَجْوَدُهُ سِلاحًا يُؤَيِّدُ اللَّهُ بِهِمُ الدِّينَ . أخرجه ابن ماجه: ٢/٥٢٠ رقم ٤٠٩٠، والفسوي: ٢/٢٩١, وابن عساكر: ١/٢٥٨ ، والحاكم: ٤/٥٤٨, حسنه الالبانى في فضائل الشام: ٦٠ – ‘যখন মালহামাহ সমূহ (বড় বড় যুদ্ধ) সংঘটিত হবে, তখন আল্লাহ তাআলা (সিরিয়ার) দামেশক থেকে মাওয়ালী’দের এক সৈন্যদল পাঠাবেন। তারা হবে শ্রেষ্ঠ আরব অশ্বারোহী এবং উচ্চমার্গের সমরাস্ত্রবাহী। আল্লাহ তাআলা তাদের মাধ্যমে দ্বীন’কে সাহায্য করবেন’। [সুনানে ইবনে মাজাহ– ২/৫৬০, হাদিস ৪০৯০; মুসতাদরাকে হাকিম- ৪/৫৪৮; তারিখে দামেশক, ইবনু আসাকীর- ১/২৫৮]
# হযরত আব্দুল্লাহ বিন বুসর রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- بَيْنَ الْمَلْحَمَةِ وَفَتْحِ الْمَدِينَةِ سِتُّ سِنِينَ، وَيَخْرُجُ الْمَسِيحُ الدَّجَّالُ فِي السَّابِعَةِ. رواه أبو داود فى سننه, كتاب الملاحم , باب في تواتر الملاحم : رقم ٥٤٩٦ و قَالَ أَبُو دَاوُدَ: هَذَا أَصَحُّ مِنْ حَدِيثِ عِيسَى; قال الحافظ ابن حجر في فتح الباري: (٦/٣٢١) وإسناده أصح من إسناد حديث معاذ; سنن ابن ماجه: ٤٠٩٣; مسند أحمد: ١٧٢٣٨; البحر الزخار بمسند البزار: ٣٥٠٥; السنن الواردة في الفتن للداني:٤٨٩ و٦١٤ و٦٥٩; الفتن لنعيم بن حماد: ١٤٥٤ و ١٤٦٩ – ‘মালহামাহ (-ই-কুবরা তথা মহাযুদ্ধ শুরু হওয়া) এবং (কুস্তুনতুনিয়া) শহরটির বিজয় (হতে সময় লাগবে) ছয় বছর এবং মাসিহ-দাজ্জাল বেড় হবে সপ্তম বছরে’। [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৫৪৯৬; মুসনাদে আহমদ- ১৭২৩৮; মুসনাদে বাযযার, হাদিস ৩৫০৫; আস-সুন্নাহ, দানী- ৪৮৯, ৬১৪, ৬৫৯; আল-ফিতান, নুআইম বিন হাম্মাদ- ১৪৫৪, ১৪৬৯]
ফায়দা: এক হাদিসে এসেছে, হযরত মুয়ায বিন জাবাল রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- الْمَلْحَمَةُ الْكُبْرَى ، وَفَتْحُ الْقُسْطَنْطِينِيَّةِ ، وَخُرُوجُ الدَّجَّالِ فِي سَبْعَةِ أَشْهُرٍ . رواه أحمد: ٣٦/٣٧١، وأبوداود: ٤٢٩٥، والترمذي: ٢٢٣٨، وابن ماجه: ٤٠٩٢; وضعفه الألباني في ” ضعيف الترمذي ‘মালহামায়ে-কুবরা (মহাযুদ্ধ), কুস্তুনতুনিয়া বিজয় এবং দাজ্জালের বেড় হওয়া -সাত মাসের মধ্যে ঘটবে’। [জামে তিরমিযী, হাদিস ২২৩৮; মুসনাদে আহমদ- ৩৬/৩৭১; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪২৯৫; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৪০৯২]
এই হাদিসটি উপরের হাদিসের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। এখানে মূলতঃ মালহামায়ে-কুবরা (মহাযুদ্ধ)-এর প্রথম ৫টি বছরের কথা বলা হচ্ছে না, বরং তার ৬ষ্ঠ বছরের শেষ দিককার কিছু সময়, তারপর কুস্তুনতুনিয়া বিজয়, তারপর সপ্তম বছরের শুরু বা মাঝামাঝি কোনো এক সময়ে দাজ্জালের আবির্ভাব -এসব মোট সাত মাসের মধ্যে ঘটবে বলে ইংগীত করা হয়েছে। الله اعلم بالصواب
# হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- إِذَا مَلَكَ الْعَتِيقَانِ : عَتِيقُ الْعَرَبِ ، وَعَتِيقُ الرُّومِ ، كَانَتْ عَلَى أَيْدِيهِمَا الْمَلاحِمُ . اخرجه الطبرانى كما فى مجمع الزوائد: ٧/٣١٨ – قال الهيثمى: فيه ابن لهيعة و فيه ضيف و محمد بن سفيان الراوى عنه لم اعرفه; و نعيم بن حماد فى الفتن: ٢/٤٧٠ رقم ١٣٠٦, ١٣٤٠, – ‘যখন দুটি পুরানা (আমলের) শাসন ক্ষমতা (তাদের উত্তরসূরীদের দ্বারা পুণরায় চালু) হবে -পুরাণা আরব এবং পুরাণা রোম (সম্রাজ্য), (তখন ঘটনা প্রবাহে একসময় মহাযুদ্ধ) মালহামাহ তাদের দুপেক্ষের হাতেই সংঘটিত হবে। [ত্বাবরাণী: মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৭/৩১৮; আল-ফিতান, ইমাম নুআইম বিন হাম্মাদ- ১৩০৬, ১৩৪০, ১৩৪৯, ১৪১০ ; মু’জামু শুয়ূখিল কাবির, যাহবী- ৫২৪; কাঞ্জুল উম্মাল-১১/১৬২, হাদিস ৩১০৪৫; জামউয যাওয়ামে’- ১/৯০]
# আওফ বিন মালেক রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন- করেন- أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي غَزْوَةِ تَبُوكَ وَهُوَ فِي قُبَّةٍ مِنْ أَدَمٍ، فَقَالَ: اعْدُدْ سِتًّا بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ: مَوْتِي، ثُمَّ فَتْحُ بَيْتِ المَقْدِسِ، ثُمَّ مُوْتَانٌ يَأْخُذُ فِيكُمْ كَقُعَاصِ الغَنَمِ، ثُمَّ اسْتِفَاضَةُ المَالِ حَتَّى يُعْطَى الرَّجُلُ مِائَةَ دِينَارٍ فَيَظَلُّ سَاخِطًا، ثُمَّ فِتْنَةٌ لاَ يَبْقَى بَيْتٌ مِنَ العَرَبِ إِلَّا دَخَلَتْهُ، ثُمَّ هُدْنَةٌ تَكُونُ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ بَنِي الأَصْفَرِ، فَيَغْدِرُونَ فَيَأْتُونَكُمْ تَحْتَ ثَمَانِينَ غَايَةً، تَحْتَ كُلِّ غَايَةٍ اثْنَا عَشَرَ أَلْفًا . رواه البخاري , كتاب الجزية , باب ما يحذر من الغدر , حديث رقم ٣١٧٦ ; و البيهقي في السنن الكبرى : ٩/٣٧٤ رقم ١٨٨١٦ – ‘আমি ত্বাবুক যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর কাছে এলাম; তিনি তখন চামড়ার একটি তাবুতে (অবস্থান কর)ছিলেন। তিনি এরশাদ করলেন: ‘কেয়ামতের পূর্বে ছয়টি (আলামতের কথা) গণনা করে নাও। (১) আমার মৃত্যু, (২) এরপর বায়তুল মাক্বদিস বিজয়, (৩) এরপর (একটি) মহামারী, (যা) তোমাদের (তখনকার মুসলমানদের) মধ্যে বকরীর-মহামারীর মতো পাকড়িয়ে ধরবে, (৪) অঢেল ধ্বনসম্পদ; এমনকি এক ব্যাক্তিকে এক’শ দীনার দেয়া হলে তাতেও সে অখুশি/ক্রধাহ্নিত হবে। (৫) এরপর (এমন এক) ফিতনা (হবে), যা কোনো আরবের ঘরে প্রবেশ না করা থেকে বাদ যাবে না, (৬) এরপর তোমাদের (মুসলমানদের) এবং বনু-আছফার (রোম)-এর মাঝে (একটি) যুদ্ধ-বিরতি-চুক্তি (ceasefire) সম্পাদিত হবে। (কিন্তু) পরে তারা (এই চুক্তির ব্যাপারে তোমাদের সাথে) গাদ্দারী করবে, তারপর (তোমাদেরকে খতম করে দেয়ার জন্য তারা) আশিটি পতাকা তলে (সমবেত হয়ে) তোমাদের কাছে আসবে, (যার) প্রতিটি পতাকা তলে থাকবে বার হাজার সৈন্য’। [সহিহ বুখারী, হাদিস ৩১৭৬; সুনানুল কুবরা, বাইহাকী- ৯/৩৭৪ হাদিস ১৮৮১৬]
ফায়দা: রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর মৃত্যুর (৬৩২ খৃ:) প্রায় ৪ বছর পর মুসলীম জাহানের দ্বিতীয় খলিফা আমিরুল মু’মিনীন ওমর ফারূক রা.-এর শাসন আমলে (৬৩৭ খৃ:) আবু উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ’র নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো বায়তুল মাক্বদিস বিজীত হয়। উপরোক্ত হাদিসে এই বিজয়ের দিকেই ইংগীত করা হয়েছে।
খলিফা ওমর ফারূক রা.-এর শাসন আমলেই একবার সিরিয়া ও ফিলিস্তিনে ব্যাপক মহামারী দেখা দেয়। এতে প্রায় ২৫ হাজার মুসলমান মৃত্যুবরণ করেন, যার মধ্যে বিশিষ্ট সাহাবী আবু উবাইদাহ ইবনুল জাররাহও ছিলেন। উপরোক্ত হাদিসের ইংগীত এই মহামারীর দিকেই বলে আলেমগণ মনে করেন।
এই হাদিসে اسْتِفَاضَةُ المَالِ – ‘অঢেল ধ্বনসম্পদ’ বলতে আমার মতে আমাদের এই শেষ জামানার আরবদের দিকেই ইংগীত করা হয়েছে। এজামানার দুবাই, সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, আমিরাত প্রভৃতির মতো আরব দেশগুলোর এক শ্রেণির মানুষের হাতে (বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে) যে পরিমান অঢেল ধ্বনসম্পদ হয়েছে, তার নজির বিগত প্রায় ১৪৫০ বছরের ইসলামী ইতিহাসে আগে কখনই দেখা যায়নি। আমাদের এই ‘ভবিষ্যৎবাণী’ সিরিজের প্রথম হাদিসটিই আমার এ কথার স্বপক্ষে যথেষ্ঠ প্রমাণ, যেখানে ওমর ফারূক রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে-قَالَ : فَأَخْبِرْنِي عَنِ السَّاعَةِ ، قَالَ : مَا الْمَسْئُولُ عَنْهَا بِأَعْلَمَ مِنَ السَّائِلِ قَالَ : فَأَخْبِرْنِي عَنْ أَمَارَتِهَا ، قَالَ :….. وَأَنْ تَرَى الْحُفَاةَ الْعُرَاةَ الْعَالَةَ رِعَاءَ الشَّاءِ يَتَطَاوَلُونَ فِي الْبُنْيَانِ . صحيح مسلم: ٣٤ , كِتَابُ الْإِيمَانَ بَابُ معرفة الْإِيمَانِ ، وَالْإِسْلَامِ ، والقَدَرِ وَعَلَامَةِ السَّاعَةِ – ‘এক ব্যাক্তি (রাসুলুল্লাহ ﷺকে) জিজ্ঞেস করলো: কেয়ামত সম্পর্কে আমাকে জানান। রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: এ ব্যাপারে যাকে প্রশ্ন করা হয়েছে সে প্রশ্নকারীর চাইতে বেশি জানে না। লোকটি বললো: তাহলে আমাকে তার লক্ষনসমূহ সম্পর্কে বলুন। রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: (কেয়ামত ঘনিয়ে এসেছে বোঝার বিশেষ লক্ষন হল:) ……….তুমি দেখবে যে, (সমাজের একসময়কার) পাদুকাহীন, কাপড়হীন, নিঃস্ব-হতদরিদ্র, মেষপালের রাখাল (শ্রেণির গ্রাম্য) লোকগুলি (হঠাৎ যেন অঢেল অর্থ-সম্পদের মালিক হয়ে গেছে এবং টেক্কা দিয়ে) একে অন্যের চাইতে উঁচু উঁচু ইমারত তৈরীতে লেগে গেছে’। [সহিহ মুসলীম, -১/৩১ হাদিস ৮, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪৬৯৫; হিলইয়াতুল আউলিয়া, আবু নুআইম- ৮/৪২৯; সুনানু সুগরা, বাইহাকী- ১/১৪; মুসনাদে আহমদ- ১/৩১৯, হাদিস ২৯২৬; সহিহ ইবনে হিব্বান- ১/৩৯৭] আর মুসনাদে আহমদ’ -এ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-এর সূত্রেও একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে, যার অংশ বিশেষ এই- يا رسولَ اللهِ ومن أصحابُ الشاءِ والحُفاةُ الجِياعُ العالةُ قال : العَرَبُ . رواه الإمام أحمد:١/٣١٩ رقم ٢٩٢٦, قال شعيب الأرنؤوط : حديث حسن – ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! (এই) মেষপালের রাখাল ও পাদুকাহীন, দারিদ্রপিষ্ট-হতদরিদ্র ব্যাক্তিগুলি কারা? রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: আরব (লোকরা)’। [মুসনাদে আহমদ- ১/৩১৯, হাদিস ২৯২৬; সহিহ ইবনে হিব্বান- ১/৩৯৭; মিরকাতুল মাফাতিহ, ক্বারী ১/১২৮] যে খনিজ তেলের কারণে এসব আরবদের পকেট আজ এত ভারী, সেই তেলের কারণে ফিতনাকেই আবু দাউদের এক হাদিসে ফিতনাতুস-সাররা (স্বচ্ছলতার ফিতনা) বলে ইংগীত করা হয়েছে।
এরপর বলা হয়েছে ثُمَّ فِتْنَةٌ لاَ يَبْقَى بَيْتٌ مِنَ العَرَبِ إِلَّا دَخَلَتْهُ – ‘এরপর (এমন এক) ফিতনা (হবে), যা কোনো আরবের ঘরে প্রবেশ না করা থেকে বাদ যাবে না’। এটা হল ‘ফিতনাতুদ-দুহাইমা’ (ঘন কালো অন্ধকারময় ফিতনা), এসময় তাদেরকে চারি দিক থেকে জাহালাত ও জাহেলিয়্যাত আচ্ছন্ন করে নিবে এবং উম্মাহ’র একে অপরের মাঝে ‘হারাজ/খুনাখুনি’র মৌসুম চলবে। যেমন: আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- وَيْلٌ لِلْعَرَبِ مِنْ شَرٍّ قَدْ اقْتَرَبَ ، فِتَنًا كَقِطَعِ اللَّيْلِ الْمُظْلِمِ ، يُصْبِحُ الرَّجُلُ مُؤْمِنًا وَيُمْسِي كَافِرًا ، يَبِيعُ قَوْمٌ دِينَهُمْ بِعَرَضٍ مِنَ الدُّنْيَا قَلِيلٍ , الْمُتَمَسِّكُ يَوْمَئِذٍ بِدِينِهِ كَالْقَابِضِ عَلَى الْجَمْرِ ” ، أَوْ قَالَ : عَلَى الشَّوْكِ . رواه الإمام أحمد في المسند, مُسْنَدُ الْعَشَرَةِ الْمُبَشَّرِينَ بِالْجَنَّةِ, بَاقِي مُسْنَد المُكْثِرِينَ مِنَ الصَّحَابَةِ : رقم ٩٠٤٩, و قال حمزة احمد الزين: ٩/٩٥ اسناده حسن – ‘আরবে’র জন্য দূর্ভোগ; এমন এক (ঘন অন্ধকারময়) মন্দ ফিতনা ধেয়ে আসছে, (যার একেকটা) যেন রাতের অন্ধকারের ফালি/খন্ড। (সে সময়) লোকের সকাল হবে মুমিন অবস্থায় এবং সন্ধা হবে কাফের অবস্থায়। (তখন) মানুষ দুনিয়ার সামান্য কোনো গরজে তাদের দ্বীনকে বিক্রি করে দিবে। সে সময় দ্বীনকে আঁকড়ে-ধারনকারী ব্যাক্তি হবে জ্বলন্ত কয়লাকে মুষ্টিবদ্ধকারী অথবা বলেছেন শল্যধারনকারী ব্যাক্তির মতো’। [মুসনাদে আহমদ, হাদিস– ৯/৯৫ হাদিস ৯০৪৯] আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন- ويل للعرب من شر قد اقترب من فتنة عمياء صماء بكماء القاعد فيها خير من القائم والقائم فيها خير من الماشي والماشي فيها خير من الساعي ويل للساعي فيها من الله يوم القيامة . اخرجه ابن حبان فى الصحيحه : ١٥/٩٨ رقم ٦٧٠٥ , قال شعيب الأرنؤوط : إسناده صحيح على شرط مسلم – ‘আরবে’র জন্য দূর্ভোগ; এক অন্ধত্বময় বধিরতাপূর্ণ বোবা মন্দ ফিতনা ধেয়ে আসছে। এ ফিতনায় বসে থাকা ব্যাক্তি দাড়ানো ব্যাক্তির চাইতে উত্তম হবে, দাড়ানো ব্যাক্তি চলমান ব্যাক্তির চাইতে উত্তম হবে, চলমান ব্যাক্তি দৌড়ানো ব্যাক্তির চাইতে উত্তম হবে। আর কেয়ামতের দিন আল্লাহ’র পক্ষ থেকে এ ফিতনায় দৌড়ানো ব্যাক্তির জন্য দূর্ভোগ-দূর্গতি রয়েছে’। [সহিহ ইবনে হিব্বান– ১৫/৯৮ হাদিস ৬৭০৫] আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- تَكُونُ فِتْنَةٌ تَسْتَنْظِفُ الْعَرَبَ قَتْلَاهَا فِي النَّارِ، اللِّسَانُ فِيهَا أَشَدُّ مِنْ وَقْعِ السَّيْفِ . اخرجه أحمد فى المسند: ١١/١٧٠, قال أحمد شاكر: إسناده صحيح; و أبو داود فى سننه: ٤٢٦٥ و سكت عنه و قد قال في رسالته لأهل مكة كل ما سكت عنه فهو صالح; – ‘(এমন) ফিতনা হবে (যা) আরব’কে একেবারে গ্রাস/সাবার করে ফেলতে চাইবে। (এই ফেতনায় অংশ নেয়া খুনিদের মতো) নিহত ব্যাক্তিও দোযখে যাবে, (কারণ খুনি ও নিহত উভয়-ই একে অপরকে হত্যা করার নিয়তে এই ফিতনায় জড়িয়েছিল)। এই (ফিতনা’র আগুনকে ভরকিয়ে দেয়ার প্রশ্নে মানুষের বেসামাল) জবান -তরবারীর আঘাতের চাইতেও অধিক শক্তিশালী (ও কার্যকরী) ভূমিকা রাখবে’। [মুসনাদে আহমদ– ১১/১৭০; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪২৬৫; সুনানে তিরমিযী, হাদিস ২১৭৮; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৩৯৬৭; আল-ইবানাতুল কুবরা, ইবনুল বাত্তাহ- ৩৭৬; তারিখে দামেশক, ইবনুল আসাকীর- ৩১৪৭০; আল-মুসান্নাফ, ইবনু আবি শায়বা- ৭/৪৪৮] আমার মতে, এই ফিতনাটি হল যা আজ জায়োনিষ্ট ইহূদী ও খৃষ্টানরা মিলে আরব জাহানে বিশেষ করে ইরাক, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, ইয়ামেনর মুসলমানদের সাথে ইতিমধ্যে শুরু করে দিয়েছে। আর এসবের আগুনে মোটা অংকের ফান্ড দিয়ে তেল ঢালছে সৌদি আরব, কাতার, আরব আমিরাত ও দুবাইয়ের মতো ধনকুবের দেশগুলো। আর উম্মাহ’র রক্ত নিয়ে হলী খেলার এই ময়দানে অস্ত্র বিক্রির মেলা বসাচ্ছে জর্ডানের মতো আরেকটি আরব দেশ!
এরপর মুসলমানদের সাথে রোম’দের একটি যুদ্ধ-বিরতি-চুক্তির কথা বলা হয়েছে। নিকট ভবিষ্যতে ‘মালহামাতুল কুবরা (মহাযুদ্ধ)’ শুরু হবার পর ইমাম মাহদী রা.-এর সাথে রোমান খৃষ্টানদের মাঝে এই চুক্তিটি হবে মর্মে বিভিন্ন রেওয়ায়েত থেকে বোঝা যায়। এরপর রোম’রা মুসলমানদেরকে দুনিয়া থেকে চির বিদায় করে দেয়ার শেষ চেষ্টা হিসেবে ৮০টি দেশ একজোট হবে, যার অধিনে মোট (৮০*১২,০০০) জন সৈন্য = ৯ লক্ষ ৬০ হাজার সৈন্য থাকবে। الله اعلم بالصواب
# হযরত আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَنْزِلَ الرُّومُ بِالأَعْمَاقِ أَوْ بِدَابِقَ فَيَخْرُجُ إِلَيْهِمْ جَيْشٌ مِنَ الْمَدِينَةِ مِنْ خِيَارِ أَهْلِ الأَرْضِ يَوْمَئِذٍ فَإِذَا تَصَافُّوا قَالَتِ الرُّومُ خَلُّوا بَيْنَنَا وَبَيْنَ الَّذِينَ سَبَوْا مِنَّا نُقَاتِلْهُمْ . فَيَقُولُ الْمُسْلِمُونَ لاَ وَاللَّهِ لاَ نُخَلِّي بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ إِخْوَانِنَا . فَيُقَاتِلُونَهُمْ فَيَنْهَزِمُ ثُلُثٌ لاَ يَتُوبُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ أَبَدًا وَيُقْتَلُ ثُلُثُهُمْ أَفْضَلُ الشُّهَدَاءِ عِنْدَ اللَّهِ وَيَفْتَتِحُ الثُّلُثُ لاَ يُفْتَنُونَ أَبَدًا فَيَفْتَتِحُونَ قُسْطُنْطِينِيَّةَ فَبَيْنَمَا هُمْ يَقْتَسِمُونَ الْغَنَائِمَ قَدْ عَلَّقُوا سُيُوفَهُمْ بِالزَّيْتُونِ إِذْ صَاحَ فِيهِمُ الشَّيْطَانُ إِنَّ الْمَسِيحَ قَدْ خَلَفَكُمْ فِي أَهْلِيكُمْ . فَيَخْرُجُونَ وَذَلِكَ بَاطِلٌ فَإِذَا جَاءُوا الشَّأْمَ خَرَجَ فَبَيْنَمَا هُمْ يُعِدُّونَ لِلْقِتَالِ يُسَوُّونَ الصُّفُوفَ إِذْ أُقِيمَتِ الصَّلاَةُ فَيَنْزِلُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ فَأَمَّهُمْ فَإِذَا رَآهُ عَدُوُّ اللَّهِ ذَابَ كَمَا يَذُوبُ الْمِلْحُ فِي الْمَاءِ فَلَوْ تَرَكَهُ لاَنْذَابَ حَتَّى يَهْلِكَ وَلَكِنْ يَقْتُلُهُ اللَّهُ بِيَدِهِ فَيُرِيهِمْ دَمَهُ فِي حَرْبَتِهِ – কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যাবৎ রোম’রা আ’মাক অথবা দাবিক-এ অবতরণ না করে। সেসময় পৃথিবীবাসীর মধ্য থেকে (মুমিনদের) সর্বোত্তম একটি সৈন্যদল মদিনা হতে (বের হয়ে) তাদের দিকে ধাবিত হবে। তারা পরষ্পরে যখন সারিবদ্ধ হয়ে (মালহামাতুল কুবরা তথা মহাযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হবে, তখন) রোম’রা বলবে: আমাদের এবং যারা আমাদের লোকদেরকে আটকিয়ে রেখেছে তাদের মাঝ থেকে তোমরা সরে যাও, আমরা ওদের সাথে যুদ্ধ করবো। তখন মুসলমানরা বলবে: (এটা কখনই হতে পারে) না, আল্লাহ’র শপথ, আমারা তোমাদের এবং আমাদের (মুসলমান) ভাইদের মাঝ থেকে সরে দাঁড়াবো না। এরপর তাঁরা তাদের (তথা রোম বাহিনীর) সাথে যুদ্ধ করবে। তখন (যদ্ধের ভয়াবহতা দেখে মুসলমানদের মধ্যে) তিন ভাগের এক ভাগ (ভয়ে) পালিয়ে যাবে, আল্লাহ তাদের তওবা আর কখনই কবুল করবেন না। আর এক তৃতীয়াংশ শহীদ হয়ে যাবে; তাঁরা হবে আল্লাহ’র কাছে (সেই জিহাদের) সর্বোত্তম শহীদ। আর (অবশিষ্ট) এক তৃতীয়াংশ (যাঁরা বেঁচে যাবে তাঁরা ওই জিহাদে রোমদের উপর) বিজয় লাভ করবে; (পরে) তাঁরা আর কখনই ফিতনায় পতিত হবে না। এরপর তাঁরা (সামনে অগ্রসর হয়ে) কুস্তুনতুনিয়া (কন্সট্যান্টিনোপোল/ ইস্তাম্বুল, তুরষ্ক) জয় করবে। তারা যখন তাদের তরবারী জয়তুন গাছে ঝুলিয়ে গণীমতের মাল বন্টন করতে থাকবে, এমন সময় শয়তান তাদের মাঝে চিৎকার দিয়ে বলবে: নিশ্চই মাসিহ (দাজ্জাল) তোমাদের পরিবারের পিছনে লেগেছে। তখন তাঁরা (অবস্থার সত্যতা যাঁচাইয়ের জন্য) বেরিয়ে পড়বে, কিন্তু (বাস্তবে) খবরটি ছিল মিথ্যা। তাঁরা যখন শাম-এ গিয়ে পৌছবে, (তখন) দাজ্জাল বের হবে। তাঁরা জিহাদের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে সারিবদ্ধ হতে হতেই (আযান ও) নামাযের আকামত দেয়া হবে। তখন ঈসা ইবনু মারইয়াম (আ.) নাজিল হবেন। এরপর (নামায আদায় করা হবে ইমাম মাহদীর ইমামতীতে এবং নামাযের পর দাজ্জালের মুকাবেলায় মুসলীম উম্মাহ’র) তিনি নেতৃত্ব দিবেন। আল্লাহ’র দুশমন (দাজ্জাল) যখন তাঁকে দেখবে, তখন সে এমনভাবে গলে যাবে যেভাবে লবন পানিতে গলে যায়। তিনি যদি তাকে (ওভাবেই) ছেড়ে দিতেন, তাহলে (সে গলতে গলতে) একসময় (পুরাপুরি) ধ্বংস হয়ে যেতো। কিন্তু আল্লাহ ঈসা আ.-এর হাত দ্বারা তাকে হত্যা করবেন। তাই (শেষ পর্যন্ত ) ঈসা আ.-এর বর্শার মধ্যে তার রক্ত তারা দেখতে পাবে। [সহিহ মুসলীম ২৮৯৭]
ফায়দা: রোম’রা যাদের সাথে যুদ্ধ করবে মর্মে এই হাদিসে ইংগিত রয়েছে তাঁরা হলে ইমাম মাহদী রা. ও তাঁর মুমিন মুজাহিদগণ। নবী করিম ﷺ এখানে ‘রোম’ বলতে তাঁর সময়কার যে সকল খৃষ্টান ধর্মাবলম্বী পরাশক্তিরা ‘রোম/বনু আসফার’ বলে পরিচিত ছিল, তাদের উত্তরসূরীদের মধ্যে যারা ইমাম মাহদী রা.-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হবে তাদেরকে বোঝানো হয়েছে। الله اعلم بالصواب
# হযরত আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- سَمِعْتُمْ بِمَدِينَةٍ جَانِبٌ مِنْهَا فِي الْبَرِّ وَجَانِبٌ مِنْهَا فِي الْبَحْرِ ” . قَالُوا نَعَمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ . قَالَ ” لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَغْزُوَهَا سَبْعُونَ أَلْفًا مِنْ بَنِي إِسْحَاقَ فَإِذَا جَاءُوهَا نَزَلُوا فَلَمْ يُقَاتِلُوا بِسِلاَحٍ وَلَمْ يَرْمُوا بِسَهْمٍ قَالُوا لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ . فَيَسْقُطُ أَحَدُ جَانِبَيْهَا ” . قَالَ ثَوْرٌ لاَ أَعْلَمُهُ إِلاَّ قَالَ ” الَّذِي فِي الْبَحْرِ ثُمَّ يَقُولُوا الثَّانِيَةَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ . فَيَسْقُطُ جَانِبُهَا الآخَرُ ثُمَّ يَقُولُوا الثَّالِثَةَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ . فَيُفَرَّجُ لَهُمْ فَيَدْخُلُوهَا فَيَغْنَمُوا فَبَيْنَمَا هُمْ يَقْتَسِمُونَ الْمَغَانِمَ إِذْ جَاءَهُمُ الصَّرِيخُ فَقَالَ إِنَّ الدَّجَّالَ قَدْ خَرَجَ . فَيَتْرُكُونَ كُلَّ شَىْءٍ وَيَرْجِعُونَ – ‘তোমরা (হয়তো) এমন শহরের কথা শুনেছো, যার একটি দিক স্থলে অবস্থিত এবং আরেকটি দিক সমূদ্রে অবস্থিত? লোকেরা বললো: হ্যা, ইয়া রাসুলাল্লাহ, (শুনেছি)। রাসুলুল্লাহ সা. এরশাদ করলেন- কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যাবৎ বনু-ইসহাক-এর সত্তর হাজার লোক তা আক্রমন না করে। তাঁরা সেখানে এসে অবতরন করার পর না কোনো অস্ত্রের সাহায্যে যুদ্ধ করবে, আর না কোনো তীর নিক্ষেপ করবে। তাঁরা বলবে: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই এবং আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ’ , এতেই তার একটা দিক ধ্বসে পড়বে। ছাওর বলেন: আমি শুধু এতটুকু জানি যে, তিনি বলেছেন- الَّذِي فِي الْبَحْرِ (যে দিকটি সমূদ্রে অবস্থিত)। এরপর তাঁরা দ্বিতীয়বার বলবে: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ আল্লাহ ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই এবং আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ’, তাতে অপর দিকটি ধ্বসে পড়বে। এরপর তাঁরা তৃতীয়বার বলবে: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই এবং আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ’, এতে তাদের জন্য (গেট) খুলে যাবে এবং তারা সেখানে প্রবেশ করে গণীমত লাভ করবে। তারা যখন নিজেদের মধ্যে গণীমত বন্টন করতে থাকবে এমন সময় একটি বিকট আওয়াজ আসবে; বলবে- إِنَّ الدَّجَّالَ قَدْ خَرَجَ (নিশ্চই দাজ্জাল বের হয়ে গেছে)। তখন তাঁরা (গণীমতের) সবকিছু রেখে দিয়ে (ঘটনা নিরিক্ষনের উদ্দেশ্যে) পুণরায় বেরিয়ে পড়বে। [সহীহ মুসলীম ২৯২০]
ফায়দা: এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, দাজ্জাল বেড় হবার আগে মালহামাহ শুরু হবে। আর হাদিসের উক্ত ঘটনাটি উপরোক্ত সহিহ মুসলীমের ২৮৯৭ নং হাদিসের সাথে সম্পর্কযুক্ত। الله اعلم بالصواب