নামাজে বা সালাতে রফালিয়াদিন বা রাফউল ইয়াদাইন এর দলিল , ব্যাখ্যা ও দলিল বা রেফারেন্স সহ
রাফউল ইয়াদাইন না করার পক্ষে দলিল গুলো দেখতে এখানে বা নিচের লিংক এ ক্লিক করুন।
নামাজে বা সালাতে রফালিয়াদিন বা রাফউল ইয়াদাইন না করার দলিল , ব্যাখ্যা ও রেফারেন্স সহ ]
হাদিসে সাব্যস্ত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাযের চারটি স্থানে হাত উঠাতেন। সে স্থানগুলো হচ্ছে: তাকবীরে তাহরীমার সময়, রুকুকালে, রুকু থেকে উঠার সময় এবং দ্বিতীয় রাকাত তথা প্রথম তাশাহ্হুদ থেকে উঠার সময়।
এর সপক্ষে দলিল হচ্ছে ইমাম বুখারী (৭৩৯) কর্তৃক নাফে (রহঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, “ইবনে উমর (রাঃ) যখন নামাযে প্রবেশ করতে চাইতেন তখন তাকবীর দিতেন এবং হাতদ্বয় উত্তোলন করতেন। যখন রুকুতে যেতেন তখনও হাতদ্বয় উত্তোলন করতেন। যখন سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বলতেন তখনও হাতদ্বয় উত্তোলন করতেন। যখন দুই রাকাত থেকে উঠতেন তখনও হাতদ্বয় উত্তোলন করতেন। এ পদ্ধতিকে ইবনে উমর (রাঃ) আল্লাহ্র নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিকে সম্বোন্ধিত করেছেন।”
শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন:
“হাত উঠানোর স্থান চারটি: তাকবীরে তাহরীমার সময়, রুকুকালে, রুকু থেকে উঠার সময় এবং প্রথম তাশাহ্হুদ থেকে দাঁড়ানোর সময়।”[আল-শারহুল মুমতি’ (৩/২১৪) থেকে সমাপ্ত]
হাত তোলার পদ্ধতি:
এক বর্ণনাতে এসেছে: “কাঁধ বরাবর হাত তুলতে হবে”। অপর এক বর্ণনাতে এসেছে: “কানের উপর পর্যন্ত হাত তুলতে হবে”। আব্দুল্লাহ্বিন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, “আমি রাসূলুল্লাহ্সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখেছি, যখন তিনি নামাযে দাঁড়াতেন তখন তিনি হাতদ্বয় এতটুকু উত্তোলন করতেন; যাতে করে হাতদ্বয় কাঁধদ্বয় বরাবর হত। তিনি এটি করতেন যখন রুকুর জন্য তাকবীর দিতেন, যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন এবং যখন سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বলতেন। তিনি সেজদাকালে এভাবে করতেন না।”[সহিহ বুখারী (৭৩৬) ও সহিহ মুসলিম (৩৯০)]
মালিক বিন আল-হুওয়ারিছ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ্সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন তাকবীর (তাহরীমা) উচ্চারণ করতেন তখন হাতদ্বয় এতটুকু উত্তোলন করতেন যাতে করে হাতদ্বয় কানদ্বয় বরাবর হত। যখন রুকু করতেন তখনও হাতদ্বয় এতটুকু উত্তোলন করতেন যাতে করে সে দুটি কানদ্বয় বরাবর হত। যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন এবং سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বলতেন তখনও এভাবে করতেন।”[সহিহ মুসলিম (৩৯১)]
এর ভিত্তিতে আলেমগণ হাত তোলার পদ্ধতি নিয়ে মতভেদ করেছেন:
কোন কোন আলেমের অভিমত হচ্ছে: কাঁধ পর্যন্ত হাত তোলা। উদ্দেশ্য হচ্ছে— হাতের তালুদ্বয় কাঁধ বরাবর হওয়া। এটি উমর বিন খাত্তাব (রাঃ), তাঁর ছেলে আবদুল্লাহ (রাঃ) ও আবু হুরায়রা (রাঃ) এর অভিমত। এটি “আল-উম্ম” গ্রন্থে ইমাম শাফেয়ির অভিমত। ইমাম শাফেয়ির ছাত্রগণও এই অভিমত পোষণ করেন। ইমাম মালেক, ইমাম আহমাদ, ইসহাক ও ইবনুল মুনযির প্রমুখ আলেমের অভিমতও এটা; যেমনটি উল্লেখ করা হয়েছে আল-মাজমু গ্রন্থে (৩/৩০৭)।
আর ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর মাযহাব হচ্ছে— কান বরাবর হাত তুলতে হবে।
ইমাম আহমাদ থেকে অন্য এক রেওয়ায়েতে এসেছে— দুটো পদ্ধতির মধ্য থেকে যে কোন একটি নির্বাচন করতে পারবে। একটি পদ্ধতির উপর অপর পদ্ধতির বিশেষ কোন মর্যাদা নেই। ইবনুল মুনযির কিছু কিছু আহলে হাদিস থেকেও এ অভিমতটি বর্ণনা করেছেন এবং এ অভিমতের প্রশংসা করেছেন।
আলবানী বলেন: এটাই হক্ব। উভয়টি সুন্নাহ। আমাদের মুহাক্কিক আলেমগণের অনেকে যেমন- আলী আল-ক্বারী, সিন্দি হানাফী প্রমুখ এ অভিমতের প্রতি ঝুঁকেছেন।
[দেখুন: আলবানীর রচিত “আসলু সিফাতি সালাতিন নাবিয়্য সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” (১/২০২)]
দুই:
নামাযে পূর্বোক্ত স্থানগুলোতে হাত তোলা নামাযের সুন্নত।
“আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা” গ্রন্থে (২৭/৯৫) এসেছে: শাফেয়ি মাযহাব ও হাম্বলি মাযহাবের আলেমগণ ঐক্যমত্য পোষণ করেছেন যে, রুকুকালে ও রুকু থেকে উঠার সময় ‘হাত-তোলা’ শরিয়তের বিধান এবং এটি নামাযের একটি সুন্নত। সুয়ূতী বলেন: “রফয়ে ইয়াদাইন (হাত-তোলা) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে পঞ্চাশজন সাহাবীর বর্ণনা দ্বারা সাব্যস্ত।”
[নামাজে বা সালাতে রফালিয়াদিন বা রাফউল ইয়াদাইন করা বা না করা উভয়ের পক্ষেই গ্রহণযোগ্য যথেষ্ট দলিল রয়েছে। এটা হতে পারে যে কারোর পক্ষে দলিল কিছুটা বেশি শক্তিশালী কিন্তু উভয় পক্ষেরই গ্রহণযোগ্য যথেষ্ট দলিল আছে। এজন্য উল্লেখিত বিষয়গুলো নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করবেন না।
রাফউল ইয়াদাইন না করার পক্ষে দলিল গুলো দেখতে এখানে বা নিচের লিংক এ ক্লিক করুন।
নামাজে বা সালাতে রফালিয়াদিন বা রাফউল ইয়াদাইন না করার দলিল , ব্যাখ্যা ও রেফারেন্স সহ ]