জেনে নিই হজ্জ ও উমরা এর বিস্তারিত (পর্ব ২)।

হজ্জ
পর্ব ২ঃ

✅হজের নির্দেশনা, গুরুত্ব ও পুরস্কার
========================

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَأَذِّن فِي ٱلنَّاسِ بِٱلۡحَجِّ يَأۡتُوكَ رِجَالٗا وَعَلَىٰ كُلِّ ضَامِرٖ يَأۡتِينَ مِن كُلِّ فَجٍّ عَمِيقٖ ٢٧﴾ [الحج: ٢٧]
‘‘এবং মানষের মাঝে হজের কথা ঘোষণা করে দাও; তারা পায়ে হেঁটে ও শীর্ণ উটের পিঠে করে তোমার কাছে আসবে, তারা দুর-দুরান্তের পথ অতিক্রম করে আসবে (হজ এর উদ্দেশ্যে)’’। [সুরা আল-হাজ, আয়াত: ২৭]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿فِيهِ ءَايَٰتُۢ بَيِّنَٰتٞ مَّقَامُ إِبۡرَٰهِيمَۖ وَمَن دَخَلَهُۥ كَانَ ءَامِنٗاۗ وَلِلَّهِ عَلَى ٱلنَّاسِ حِجُّ ٱلۡبَيۡتِ مَنِ ٱسۡتَطَاعَ إِلَيۡهِ سَبِيلٗاۚ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٩٧﴾ [ال عمران: ٩٧]
‘‘আর এতে রয়েছে স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ, যে মাকামে ইবরাহীমে প্রবেশ করবে সে নিরাপত্তা লাভ করবে। আর যার সামর্থ্য রয়েছে (শারীরিক ও আর্থিক) তার এ কা‘বায় এসে হজ করা আল্লাহর পক্ষ থেকে ফরয বা অবশ্য কর্তব্য, আর যদি কেউ এ বিধান (হজ) কে অস্বীকার করে তবে; (তার জেনে রাখা উচিত) আল্লাহ সৃষ্টিকুলের কারো মুখাপেক্ষী নন’’। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৯৭]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِنَّ ٱلصَّفَا وَٱلۡمَرۡوَةَ مِن شَعَآئِرِ ٱللَّهِۖ فَمَنۡ حَجَّ ٱلۡبَيۡتَ أَوِ ٱعۡتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيۡهِ أَن يَطَّوَّفَ بِهِمَاۚ وَمَن تَطَوَّعَ خَيۡرٗا فَإِنَّ ٱللَّهَ شَاكِرٌ عَلِيمٌ ١٥٨﴾ [البقرة: ١٥٨]
‘‘নিশ্চয় সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহে‎র অর্ন্তগত। যে ব্যক্তি (এ গৃহে) হজ ও উমরাহ করে তার জন্যে এ উভয় পাহাড়ের মাঝে প্রদক্ষিণ করা দোষণীয় নয় এবং কোনো ব্যক্তি নিষ্ঠার সাথে স্বেচ্ছায় সৎকর্ম করলে আল্লাহ কৃতজ্ঞতাপরায়ণ ও সর্বজ্ঞাত’’। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৫৮]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَأَتِمُّواْ ٱلۡحَجَّ وَٱلۡعُمۡرَةَ لِلَّهِۚ﴾ [البقرة: ١٩٦]
‘‘এবং তোমরা আল্লাহর জন্য হজ ও উমরাহ পালন কর’’। সূরা আল-বাকারা:আয়াত: ১৯৬]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَتَزَوَّدُواْ فَإِنَّ خَيۡرَ ٱلزَّادِ ٱلتَّقۡوَىٰۖ وَٱتَّقُونِ يَٰٓأُوْلِي ٱلۡأَلۡبَٰبِ﴾ [البقرة: ١٩٧]
‘‘আর তোমরা পাথেয় সঞ্চয় করে নাও (হজ যাত্রার জন্য), বস্তুতঃ সর্বোৎকৃষ্ট পাথেয় হচ্ছে তাকওয়া (আল্লাহভীতি) এবং হে জ্ঞানীরা, তোমরা আমারই তাকওয়া অবলম্বন কর’’। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৯৭]

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   জেনে নিই হজ্জ ও উমরা এর বিস্তারিত(পর্ব ৭)।

বিদায় হজে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘হে জনগণ! তোমরা আমার কাছ থেকে হজের নিয়ম-কানুন শিখে নাও’’।[1]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি হজের সংকল্প করে, সে যেন দ্রুত সেটা সম্পাদন করে’’।[2]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘হজ একবার, যে ব্যক্তি একাধিকবার করবে তা (তার জন্য) নফল হবে’’।[3]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তিনটি দল আল্লাহর মেহমান; আল্লাহর পথে জিহাদকারী, হজকারী ও উমরাহ পালনকারী’’।[4]

এক হাদীসে এসেছে, ‘‘উত্তম আমল কী -এ মর্মে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞসা করা হলো। উত্তরে তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান। বলা হলো, ‘‘তারপর কী?’’, তিনি বললেন, আল্লাহ পথে জিহাদ। বলা হলো, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, মাবরুর হজ।[5]

বুরাইদাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘হজ পালনে অর্থ ব্যয় করা আল্লাহর পথে ব্যয় করার সমতুল্য। এক দিরহাম ব্যয় করলে তাকে সাতশত পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়’’।[6]

আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ ও জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আগুন যেভাবে স্বর্ণ, রৌপ্য ও লোহা থেকে খাঁদ দূর করে, তেমনি যদি তোমরা তোমাদের দারিদ্রতা ও পাপ মোচন করতে চাও তাহলে তোমরা পর পর হজ ও উমরাহ পালন কর’’।[7]

আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যদি কেউ হজ, উমরাহ পালন অথবা জিহাদের জন্য যাত্রা করে এবং পথিমধ্যে যদি তার মৃত্যু হয় তাহলে আল্লাহ এর জন্য তাকে পূর্ণ প্রতিদান দিয়ে দেবেন’’।[8]

একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করে আয়েশা বললেন, ‘‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা কি আপনাদের সাথে জিহাদ ও অভিযানে যাব না? তিনি বললেন, তোমাদের জন্য উত্তম জিহাদ হলো হজ (তথা মাবরুর হজ)’’।[9]

হাদীসে আরও এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কারো ইসলাম গ্রহণ পূর্বকৃত সকল পাপকে মুছে দেয়। হিজরত তার পূর্বের সকল গুনাহ মুছে দেয়, ও হজ তার পূর্বের সকল পাপ মুছে দেয়’’।[10]

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   জেনে নিই হজ্জ ও উমরা এর বিস্তারিত(পর্ব ৮)।

আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ পালন করল এবং নিজেকে গর্হিত পাপ কাজ ও সকল ধরনের পাপ কথা থেকে বিরত রাখল তাহলে সে হজ থেকে এমন নিষ্পাপ ও নিষ্কলঙ্ক হয়ে ফিরে আসবে যেমন সে তার জন্মের সময় ছিল’’।[11]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মাবরুর হজের (কবুল হজের) পুরষ্কার বা প্রতিদান জান্নাত ব্যতীত আর কিছুই নয়’’।[12]

[1] সহীহ মুসলিম, নাসাঈ, আবু দাউদ

[2] আবু দাউদ; মিশকাত, হাদীস নং ২৫২৩

[3] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৭২১

[4] নাসাঈ, মিশকাত, হাদীস নং ২৫৩৭

[5] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪২২

[6] আহমদ, বায়হাকী

[7] তিরমিযী, নাসাঈ

[8] মিশকাত, হাদীস নং ২৫৩৯; মুসনাদে আবী ইয়া‘লা, হাদীস নং ৯১৬ (আল-মাকসাদুল ‘আলী); সহীহ আত-তারগীব আত-তারহীব, হাদীস নং ১২৬৭।

[9] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৬১

[10] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭৩

[11] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪২৪

[12] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৭৭৩/১৬৫০

 ❌❌হজ্ব সম্পর্কে ভুল ধারণা ও শাস্তি
=======================

অনেক সাধারণ মানুষই সামর্থ্য হওয়ার পরও মনে করেন -কেন কম বয়সে হজ করবো? হজ করলে তো আমাকে হজ ধরে রাখতে হবে! পূর্ণাঙ্গভাবে ইসলাম অনুসরণ না করা পর্যন্ত তো হজে যাওয়া ঠিক হবে না! হজ করলে তো আর টিভি, গান-বাজনা দেখা যাবে না! সহজ পন্থায় (অবৈধ) অর্থ উপার্জন করতে পারব না! হজ করার পর যদি আমি খারাপ কাজে লিপ্ত হই তাহলে লোকেই বা কী বলবে!.. সুতরাং এখন জীবনকে উপভোগ করি, আর কিছু টাকা পয়সা উপার্জন করে নেই। আর তারপর বৃদ্ধ বয়সে যখন কোনো কিছু করার থাকবে না তখন গিয়ে হজ করে আসব!! তখন আল্লাহ অবশ্যই আমার অতীতের সকল পাপ মাফ করে দেবেন এবং আমি ইনশা-আল্লাহ জান্নাতে যেতে পারবো!! কি যুক্তি আর বুদ্ধিমান আমরা চিন্তা করেছেন!

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   পুরুষের জন্য লাল ও হলুদ রংয়ের পোশাক পরিধান করা কি সত্যিই হারাম? সঠিক তথ্য জেনে নিন

-হে আল্লাহ তুমি আমাদের দয়া ও হিদায়াত দান কর। আমরা যদি মনে করি, আমরা সর্বশক্তিমান আল্লাহর সঙ্গে চালাকি করব, তাহলে মনে রাখবেন এর মাধ্যমে আমরা আসলে আমাদের নিজেদেরকেই বোকা বানাচ্ছি, দোষী করছি এবং ক্ষতিগ্রস্ত হবো।

যারা সামর্থ্য হওয়ার পরও হজকে মুলতবি করে রেখেছেন তাদের জন্য বড় সতর্কবাণী হলো, উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি হজের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ পরিত্যাগ করল, সে ইয়াহূদী হয়ে মরুক অথবা নাসারা হয়ে মরুক -তাতে কিছু যায় আসে না’’।[1]

উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন, ‘‘আমার ইচ্ছা হয় যে, কিছু লোককে রাজ্জ্যের শহরগুলোতে প্রেরণ করি এবং তারা খুঁজে দেখুক ঐ সমস্ত লোককে যাদের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ পালন করে না তাদের ওপর জিযিয়া কর আরোপ করা হোক। কেননা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যারা হজ পালন করে না তারা মুসলিম নয়, তারা মুসলিম নয়’’।

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে হজ পালন করতে চায় সে যেন দ্রুত তা পালন করে। কেননা সে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে অথবা কোনো সমস্যায় জর্জরিত হয়ে হজ করার সুযোগ হারাতে পারে”।[2]

হজের সামর্থ্য হওয়ার সাথে সাথেই হজ পালন করা উচিত। কারণ মৃত্যু কখন চলে আসতে পারে তা জানা নেই। অলসতার কারণে একটি ফরয ইবাদত বাকি রেখে মারা গেলে তো আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।

[1] সুনানুল কুবরা, হাদীস নং ৮৯২৩

[2] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৭৩২

MuslimPoint Organization

About MuslimPoint Organization

MuslimPoint একটি অনলাইন ভিত্তিক ইসলামী প্রশ্নোত্তর, গ্রন্থাগার, ব্লগিং, কুরআন, হাদিস, কুইজ এবং বিষয় ভিত্তিক রেফারেন্স প্ল্যাটফর্ম।

View all posts by MuslimPoint Organization →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *