হিন্দু ধর্মে প্রতিমা বা মূর্তি পূজা নিষিদ্ধ , ব্যাখ্যা এবং দলিল বা রেফারেন্স সহ বিস্তারিত
১) ঈশ্বর মাত্র একজন; দ্বিতীয় কেউ নেই।
ছান্দগ্য উপনিষদের: অধ্যায় ০৬ অনুঃ ২ পরিঃ ০১।
২) সবশক্তিমান ঈশ্বরের কোন বাবা মা নেই। তার কোন প্রভু নেই। তার চেয়ে বড় কেউ নেই।
শ্বেতাসত্র উপনিষদের: অধ্যায় ০৬ অনুঃ ০৯।
৩) তারা অন্ধকারে নিমজ্জিত আছে; যারা প্রাকৃতিক বন্তুর পূঁজা করে। যেমনঃ আগুন, গাছ, সাপ ইত্যাদি।
যযুবেদ অধ্যায় ৪০ অনুঃ ০9
৪) সবশক্তিমান ঈশ্বরের মত কেউ নেই ( তার কোন প্রতিমূর্তি নেই, প্রতিমা নেই, রুপক নেই, ভাস্কর্য নেই)।
শ্বেতাসত্র উপনিষদের: অধ্যায় ০৪ অনুঃ ১৯।
৫) সবশক্তিমান ঈশ্বরকে কেউ দেখতে পাই না।
শ্বেতাসত্র উপনিষদের: অধ্যায় ০৪ অনুঃ ১০ পরিঃ ২০।
৬) যাদের বিচার বুদ্ধি কেড়ে নিয়েছে জাগতিক আকাঙ্খা তারাই অপদেবতার পূজা করে।
ভগবত গীতা : অধ্যায় ০৭ অনুঃ ২০।
৭) লোকে জানে আমি কখনও জন্মাইনি ও উদ্ভূত হয়নি; আমি এই বিশ্বজগতের সবময় প্রভু
ভগবত গীতা : অধ্যায় ১০ অনুঃ ০৩।
৮) সবশক্তিমান ঈশ্বরের কোন মূর্তি নেই।
যযুবেদ অধ্যায়ঃ ৩২ অনুঃ ০৩
৯) তারা আরো বেশি অন্ধকারে নিমজ্জিত আছে; যারা মানুষের তৈরী বস্তুর পূঁজা করে। যেমন- মাটির পতুল, ভাস্কর্য ইত্যাদি।
যযুবেদ অধ্যায় ৪০ অনুঃ ০9
১০) সৃষ্টিকর্তা সুমহান
গ্রন্থঃ ২০ খন্ডঃ ৫৮ মন্ত্রঃ ৩।
১১) সত্য একটাই; ঈশ্বর একজনই, জ্ঞানীরা ইশ্বরকে ডেকে থাকেন অনেক নামে।
ঋগবেদের গ্রন্থঃ ০১ অনুঃ ৬৪ পরিঃ ৪৬।
১২) সবশক্তিমান ঈশ্বর নিরাকার ও পবিত্র।
যযুবেদ অধ্যায় ৪০ অনুঃ ০৮।
১৩) ঈশ্বর বাদে আর কারো উপাসনা কর না; শুধুমাত্র তার উপসনা কর যিনি সুমহান ঈশ্বর।
ঋগবেদ গ্রন্থঃ ০৮ খন্ডঃ ০১ মন্ত্রঃ ০১।
আর ব্রক্ষাসূত্র বলেঃ ঈশ্বর মাত্র একজনই; দ্বিতীয় কউ নেই। কেউ নেই, কেউ নেই আর কেউ কখনও ছিলোও না।
—————————————————–
যজুর্বেদ ৩২/৩, মহর্ষির ভাষ্য সহিত
ন তস্য প্রতিমা অস্তি য়স্য নাম মহদ্ য়শঃ।
হিরণ্যগর্ভ ইত্যেষ মা মা হিংসীদিত্যেষা য়স্মান্ন জাত ইত্যেষঃ।।
অনুবাদ: যাঁর মহান প্রসিদ্ধ যশ রয়েছে সেই পরমাত্মার কোনো প্রতিমা নেই। “হিরণ্যগর্ভ” আদি মন্ত্রে, “মা মা হিংসীত্” এই মন্ত্রে ও “য়স্মান্ন জাত” এই মন্ত্রে সেই পরমাত্মার বর্ণন রয়েছে।
মহর্ষির ভাষ্য “ন নিষেধে তস্য পরমেশ্বরস্য প্রতিমা প্রতিমীয়তে য়য়া তৎপরিমাপকং সদৃশং তোলনসাধকং প্রকৃতিরাকৃতিরবা অস্তি বর্ততে” অর্থাৎ সেই পরমেশ্বরের তুল্য পরিমাণ সদৃশ সাধক প্রতিকৃতি বা মূর্তি কিছুই নেই।
সম্প্রদায়বাদী সেই গোঁড়াদের দাবি এই মন্ত্রে প্রতিমা শব্দ দ্বারা নাকি মূর্তিকে বোঝায় নি, কেবল উপমা বা তুলনা অর্থে বুঝিয়েছে। তাদের দাবি পুরাতন ভাষ্যকাররা নাকি এমন কোনো অর্থ করে যাননি, মহর্ষি দয়ানন্দই কেবল এই অর্থ করেছেন।
বেশ দেখুন তাদের আদরণীয় উবট ও মহিধর কি ভাষ্য করেছে,
যজুর্বেদ ৩২/৩, উবট ও মহিধর ভাষ্য সহিত
“ন তস্য পুরুষস্য প্রতিমা প্রতিমানভূতং কিঞ্চিদ্বিদ্যতে”(উবট)
এবং
“তস্য পুরুষস্য প্রতিমা প্রতিমানমুপমানং কিঞ্চিদ্বস্তু নাস্তি”(মহিধর)
অর্থাৎ সেই পুরুষের প্রতিমা, তুলনা বা উপমা কিছুই নেই।
উভয়েই বলছেন প্রতিমা নেই।
এই মন্ত্র দ্বারা যেমন প্রমাণ হয় ঈশ্বরের তুল্য কিছু নেই, তেমনি তাঁর প্রতিমা বা মূর্তি নেই। প্রতিমা অর্থ যে মূর্তি হয় তা মানতে নারাজ পণ্ডিতম্মন্যরা। মূর্তি শব্দ অবৈদিক দেখে বেদে মূর্তি শব্দ নেই, সে স্থলে আছে প্রতিমা। প্রতিমা অর্থ যে মূর্তি তা বৈদিক কোষেও উল্লেখিত আছে।
দেখা যায় প্রতিমা=উপমা দেখাতে তারা সাধারণ বাংলা অভিধান ইউজ করে৷ অথচ একটি বিখ্যাত প্রাচীন অভিধান অমরকোষ এ প্রতিমার ৮ প্রতিশব্দ আছে যা মূর্তি নির্দেশ করে৷ অমরকোষ ২.১০.৩৫
প্রতিমানং প্রতিবিম্বং প্রতিমা প্রতিয়াতনা প্রতিচ্ছায়া।
প্রতিকৃতিরর্চা পুংসি প্রতিনিধিরুপমোপমানং স্যাত্।।
চলুন বৈদিক ঈশ্বরের সাকার নিরাকার কি আকার সে নিয়ে বেদ উপনিষদ কি বলে তা দেখে নিই:
যজুর্বেদ ৪০/৮ বলছে ঈশ্বর অকায়ম(সর্বপ্রকার শরীররহিত)
আচার্য শঙ্করের ভাষ্য দেখুন, তিনিও বলছেন সেই আত্মা(পরমাত্মা) স্থুল, সূক্ষ্ম শরীর বিবর্জিত
ঈশ উপনিষদ ৮, শঙ্কর ভাষ্য
এবার তাহলে প্রশ্ন রইল, যার কোনো শরীরই নেই তাঁর মূর্তি বা প্রতিমা আপনারা কিভাবে তৈরি করবেন?
শ্বেতাশ্বতর উপনিষদও বলছে, “তাঁর কোনও প্রতিরূপ বা প্রতিমা নেই”(৪/১৯) এবং “সনাতনের কোন রূপ নেই যা চক্ষুর গোচর হয়, দৃষ্টির দ্বারাও তাঁকে কেও দেখে না”(৪/২০)
কঠ উপনিষদেও ১/২/২২ এ বলা হচ্ছে ব্রহ্ম প্রাণীগণের শরীরে থেকেও শরীর রহিত
কঠ উপনিষদের ১/৩/১৫ তে আরও বলা হয়েছে, পরমাত্মা অরূপম বা রূপহীন, কেবল সেই পরমাত্মাকে উপলব্ধি করতে পারলেই মৃত্যুর হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ৩/১০-এও একই কথা বলা হয়েছে।
একই কথা বলছে তৈত্তিরীয় উপনিষদের ব্রহ্মানন্দবল্লীর সপ্তম অনুবাক
১. না তাস্তে প্রাতীমা আস্থি ( যজুর্বেদ ৩২ অধ্যায় ৩ নং অনুচ্ছেদ )
অর্থাৎ ঈশ্বরের কোন প্রতি মূর্তি নেই ।
“যাদের মন ঝড় কামনা বাসনার ধারা বিক্ষিপ্ত/বিকৃত তারা অন্য দেব দেবীর স্মরনাগত হয় এবং তাদের সেই স্বভাব অনুসারে নিয়ম পালন করে দেবতাদের উপাসনা করে।” (গীতার সপ্তম অধ্যের ২০ নাম্বার শ্লোক)
হিন্দু ধর্মে পূজা নিষিদ্ধ :-
রেফারেন্স সহ প্রমান দিলাম :-
১. না তাস্তে প্রাতীমা আস্থি ( যজুর্বেদ ৩২ অধ্যায় ৩ নং অনুচ্ছেদ )
অর্থাৎ ঈশ্বরের কোন প্রতি মূর্তি নেই ।
২. যারা নিজের বিবেক বুদ্ধি হারিয়েছে তাঁরাই মূর্তি পূজা করে ( ভগবৎ গীতা অধ্যায় ৭, অনুচ্ছেদ ২০ নম্বর ) ।
রেফারেন্স সহ দিলাম ।
৩. হিন্দুরা অনেক দেব দেবির পুজা করলেও হিন্দু ধর্ম গ্রন্থ গুলোতে হিন্দুদের কেবল মাত্র এক জন ইশ্বরের উপাসনা করতে বলা হয়েছে॥
বেদের ‘ব্রহ্ম সুত্র’ তে আছে “একম ব্রহ্মা দ্বৈত্য নাস্তি নহিনা নাস্তি কিঞ্চন” অর্থাৎ ইশ্বর এক তার মত কেউ নেই কেউ নেই সামান্যও নেই । আরও আছে “সে একজন তারই উপাসনা কর” (ঋকবেদ ২;৪৫;১৬)।
“একম এবম অদ্বৈত্তম” অর্থাৎ সে একজন তাঁর মত আর দ্বিতীয় কেউ নেই (ঋকবেদ ১;২;৩) ।
“এক জনেই বিশ্বের প্রভু” (ঋকবেদ ১০;১২১;৩) ।
৪. হিন্দু ধর্মে মুর্তি পুজা করতে নিষেধ করা হয়েছে॥
ভগবত গীতা – অধ্যায় ৭ – স্তব ২০ – [ যাদের বোধশক্তি পার্থিব আকাঙক্ষার মাধ্যমে বিলুপ্ত হয়ে গেছে শুধু তারাই উপদেবতার নিকটে উপাসনা করে। ]
৫. ভগবত গীতা – অধ্যায় ১০ – স্তব ৩ –
[ তারা হচ্ছে বস্তুবাদি লোক ,তারা উপদেবতার উপাসনা করে ,তাই তারা সত্যিকার স্রস্টার উপাসনা করে না।]
৬. যজুর্বেদ – অধ্যায় ৪০- অনুচ্ছেদ ৯ –
[ অন্ধতম প্রভিশান্তি ইয়ে অশম্ভুতি মুপাস্তে – যারা অশম্ভুতির পুজা করে তারা অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। তারা অধিকতর অন্ধকারে পতিত হয় শাম মুর্তির পুজা করে । অশম্ভুতি হল – প্রাকৃতিক বস্তু যেমন- বাতাস,পানি,আগুন । শাম মুর্তি হল – মানুষের তৈরী বস্তু যেমন – চেয়ার ,টেবিল ,মূর্তি ইত্যাদি।]
১. ইশ্বর এক বেদে যাকে বলা হয়েছে ব্রহ্ম । কিন্তু পরমেশ্বর এর অনেক রুপ হতে পারে যেমন ইশ্বররের অংশ ধারী বিভিন্ন দেবদেবি
পরমেশ্বর এর অপর নাম পরমব্রহ্ম । এই পরমব্রহ্ম ও ব্রহ্ম কে গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয় ।
যেমন আত্মা ও পরমাত্মা । আত্মা হল জিবের দেহে যে আত্মা আছে বা জৈবিক আত্মা আর পরমআত্মা
হল মৃত্যুর পরের যে আত্মা যে ইশ্বরের অংশ । আরও উদাহরণ যেমন সূর্য ও সুর্যের কিরণ ও তাপ
সূর্যের রুপ আছে কিন্তু তার আলো ও তাপের রুপ নেই । তেমনি পরমব্রহ্ম এর শক্তি রুপে বিরজমান
ব্রহ্ম । পরমব্রহ্মের রুপ আছে কিন্তু ব্রহ্মের রুপ নেই । যেমন দেব দেবির সৃষ্টি হয়েছে সেটা হচ্ছে
পরমব্রহ্ম এবং যে শক্তির মাধ্যমে এই দেবদেবির সৃষ্টি সেটা হল ব্রহ্ম । আমি আগেও বলেছি ইশ্বর মানে
ব্রহ্ম আর আপনিই বলুন যে কিভাবে ব্রহ্মের রুপ থাকতে পারে । কারণ সেটা তো নিরাকার শক্তি । সুতারাং
ইশ্বর বা ব্রহ্ম একজনই কারণ ভিন্ন ভিন্ন শক্তি দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন দেব দেবির সৃষ্টি হতে পারে না ।
সকল দেব দেবি একই ব্রহ্ম বা ইশ্বরের শক্তি প্রকাশক রুপ ।
েএখন আপনি মনে করছেন যে না এটা মিথ্যাও হতে পারে । যদি মিথ্য হত তাহলে বেদে বিভিন্ন দেব দেবির পুজা করার কথা বলা হত না
ঋগবেদে পরিষ্কার ভাবে উল্লেখ আছে যে যজ্ঞের বিকল্প হিসেবে দেব দেবির পুজা করা যাবে । িএবং কিভাবে দেব দেবির বিগ্রহ তৈরি করতে হবে
এবং অনেক কিছু সেখানে বলা আছে দেব দেবি সম্পর্কে । সুতারাং মুখ্য কথা েএই যে সবকিছু না জেনে বেদ পড়ে বেদ এর ভুল ধরতে যাবেন না
সুতারাং আপনার প্রথম কথার জবাব বুঝতে পরেছেন আশা করি যে ইশ্বর বা ব্রহ্ম এক জনই কেউ দ্বিতীয় হতেই পারে না
২. ২য় কথা হল ইশ্বররের কোন বাবা মা নেই তার কোন প্রভু নেই তার চেয়ে বড় কেউ নেই
পরমবহ্মের শক্তি হচ্ছে ব্রহ্ম তাহলে তার কিভাবে বাবা মা থাকতে পারে ? তিনি সর্বশক্তিমান তার
কোন প্রভু থাকতে পারে না । তার চেয়ে বড় কেউ কেন নেই আশা করি বুঝতে পেরেছেন
৩. ৪নং প্রশ্ন হল সবশক্তিমান ঈশ্বরের মত কেউ নেই ( তার কোন প্রতিমূর্তি নেই, প্রতিমা নেই, রুপক নেই, ভাস্কর্য নেই)।
এ কথা টাও ভালো ভাবে বুঝতে পারবেন যদি ১ নং কথাটি ভালো ভাবে পড়ে থাকেন ।
যে ব্রহ্ম কে দেখা যায় না তার মত কেউ নেই । ব্রহ্মের প্রকাশক সে হচ্ছে পরমব্রহ্ম যেমন বিভিন্ন দেব দেবি
৪. ৫নং প্রশ্ন হল সবশক্তিমান ঈশ্বরকে কেউ দেখতে পাই না।
সর্বশক্তিমান ব্রহ্ম বা ইশ্বর কে দেখা যায় না তার কোন রুপ নেই । তিনি শক্তি । কিন্তু পরমব্রহ্মের রুপ
থাকতে পারে ।
৫. ৮ নং প্রশ্ন হল সবশক্তিমান ঈশ্বরের কোন মূর্তি নেই।
সর্বশক্তিমান ব্রহ্মের কোন মুর্তি নেই কারণ তার রুপ নেই কিন্তু তার শক্তির প্রকাশ এর মাধ্যমে
সৃষ্ট বিভিন্ন দেব দেবি তাদের রুপ আছে ।
৬.৯ নং প্রশ্ন তারা আরো বেশি অন্ধকারে নিমজ্জিত আছে;
যারা মানুষের তৈরী বস্তুর পূঁজা করে। যেমন- মাটির পতুল, ভাস্কর্য ইত্যাদি।
েঋগ্বেদ এ যজ্ঞ এর বিকল্প রুপে দেবদেবি পুজা করার কথা উল্লেক আছে সেটা হচ্ছে বৈদিক যুগের
কথা । তখন বিভিন্ন অসুর রাক্ষস প্রভুতি ছিল তারাই তাদের বিভিন্ন দেব দেবি আমারা যাদের অপদেবতা
বলি তাদের পুজা করত । যেমন : রাবণ তিনি যেমন শিব ভক্ত ছিল কিন্তু তা সত্তেও তিনি লঙ্কায় বিভিন্ন
অপদেবতার পুজা করতেন । তখন মানুষেরা বিভিন্ন যাগ যজ্ঞের মাধ্যমে বিভিন্ন দেব দেবির স্মরন করত
এবং ব্রহ্ম এর জন্য আহুতি দিত । তখন তারা মুর্তি পুজা করত না । মুর্তি পুজা চালু হয় পৌরাণিক যুগে ।
৭. ১০নং প্রশ্ন “” সৃষ্টিকর্তা সুমহান “”
হ্যাঁ সত্য কথাই তো সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্ম তো সুমহান । তাতে সমস্যা কোথায় ?
৮. ১১ নং প্রশ্ন” সত্য একটাই; ঈশ্বর একজনই, জ্ঞানীরা ইশ্বরকে ডেকে থাকেন অনেক নামে।
ইশ্বর বা ব্রহ্ম তো একজনই তাকে পরম ব্রহ্ম ভেবে ভুল করা উচিৎ নয় ।
৯. ১২ নং প্রশ্ন “ সর্বশক্তিমান ঈশ্বর নিরাকার ও পবিত্র।
হ্যাঁ সত্য কথাই তো যে সর্বশক্তিমান ব্রহ্ম নিরাকার ও পবিত্র । কিন্তু পরম ব্রহ্ম এর আকার রুপ
রয়েছে ।
১০. ১৩ নং প্রশ্ন “ ১..ঈশ্বর বাদে আর কারো উপাসনা কর না; শুধুমাত্র তার উপসনা কর যিনি সুমহান ঈশ্বর।
্ও
২…ঈশ্বর মাত্র একজনই; দ্বিতীয় কউ নেই। কেউ নেই, কেউ নেই আর কেউ কখনও ছিলোও না।
২য় কথাটির ব্যাখা হল : ব্রহ্ম বা ইশ্বর তো একজনই , তাকে পরমব্রহ্ম ভেবে গুলিয়ে ফেলবেন না
এ কথাটি আমি বারবারই বলেছি ।
১ম কথাটির ব্যাখা হল : বৈদিক যুগে তো সবাই সেটাই করত যাগ যজ্ঞ করত নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা
করত , তারপর পৌরাণিক যুগে দেব দেবির পুজার পদ্ধতি চালু হয় । ঋ্গবেদ এ কিভাবে দেব দেবির মূর্তি তৈরি
করতে হবে সে সম্পের্কে স্পর্ট ধারণা দেওয়া আছে । এবং যজ্ঞের বিকল্প যে দেব দেবির পুজা তা
স্পর্ট ভাবে উল্লেখ আছে । সেজন্যই আমারা দেব দেবি পুজা করি এর আরও অনেক কারণ রয়েছে । আমার যে
দেব দেবির পুজা করি তা তো ব্রহ্ম বা ইশ্বর নয় , তারা তো পরম ব্রহ্ম মানে ব্রহ্মের শক্তি প্রকাশক রুপ ।
এই সব রুপের দেখা পেয়েছে আমাদের বিভিন্ন মুনি ঋষিরা । তার প্রমান স্বরুপ তারা বিভিন্ন বরদান দিয়েছেন ।
তারা সকলেই হল ব্রহ্মের রুপ তাদেরও শক্তি আছে কিন্তু দেব দেবিরা তো ব্রহ্ম নয় তারা পরমব্রহ্ম এবং ব্রহ্মের অংশ ।
িএখন আপনিই বলুন এই ব্রহ্মের অংশ কে আমার কিভাবে অস্বীকার করতে পারি ? তাদের ও পুজা করা উচিৎ কিন্তু
ততটা নয় যেমন ব্রহ্মের করা দরকার । আমরা বিভিন্ন তিথিতে বিভিন্ন দেব দেবির পুজা করি এবং পরবর্তী সময়ে অবশ্যই
ব্রহ্মের আরাধনা করা উচিৎ । অনেকে এটা ভুলে যায় বলেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে মুর্তি পুজার নিন্দা করা হয়েছে ।
১১. ৬নং প্রশ্ন “ যাদের বিচার বুদ্ধি কেড়ে নিয়েছে জাগতিক আকাঙ্খা তারাই অপদেবতার পূজা করে।
ভগবত গীতা : অধ্যায় ০৭ অনুঃ ২০।
সঠিক লেখা টি হল
জড় কামনা-বাসনার দ্বারা যাদের জ্ঞান অপহৃত হয়েছে,
তারা অন্য দেব-দেবীর শরণাগত হয় এবং তাদের স্বীয় স্বভাব
অনুসারে বিশেষ নিয়ম পালন করে দেবতাদের উপাসনা করে।
এই যে কথাটি লেখা আছে এটাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই ।
তার পরবর্তী শ্লেক এ কি লেখা আছে দেখুন :
পরমাত্মারূপে আমি সকলের হৃদয়ে বিরাজ করি।
যখনই কেউ দেবতাদের পূজা করতে ইচ্ছা করে,
তখনই আমি সেই সেই ভক্তের তাতেই অচলা শ্রদ্ধা বিধান করি ।
এর সারাংশ হল যে বিভিন্ন দেব দেবির উপাসনা মানেই এক ব্রহ্মের উপাসনা করা
কারন সকলের মধ্যে পরমআত্মা রুপে ব্রহ্ম বিদ্যমান । কিন্তু আমাদের সবাই কে মুলত ব্রহ্মের উপাসনা প্রধান কর্তব্য যেমন আমরা করে থাকি
অপদেবতা কি জানেন ? অপদেবতা হল রাক্ষস অসুর এদের দ্বারা নিত্য পুজিত দেবতা । অসুর দের দেবতা । এই অসুরদের দেবতা কেও বিভিন্ন মানুষ
শক্তি ও বিভিন্ন আকাঙ্খা পুরনের জন্য পুজা বা আহব্বান করেন ।
১২ . ৩য় প্রশ্ন হল তারা অন্ধকারে নিমজ্জিত আছে যারা প্রাকৃতিক বস্তুর পূজা করে ।
প্রথমে বুঝতে হবে যে বৈদিক যুগ কি এবং পৌরাণিক যুগ কি ? সর্বপ্রথম আদি ধর্ম গ্রন্থ হল বেদ
তার পরবর্তীতে পুরাণ আসে । যখন বেদ ছিল তখন সেই যুগকে বলা হয় বৈদিক যুগ । বৈদিক যুগে
মানুষ এরা তখন বিভিন্ন যজ্ঞ করত তখন তারা বিশেষ উদ্দেশ্য ছাড়া কেউ দেব দেবির পুজা করত না
এর পর পৌরাণিক যুগে পুজা পদ্ধতি চালু হয় তখন যজ্ঞের পদ্ধতির পরিমান কমে যায় ।
বৈদিক যুগে কোন ভাবেই প্রাকৃতিক বস্তুর পুজা করা হত না । যজ্ঞই ছিল প্রধান যার মন্ত্র সামবেদে রয়েছে ।
যুগে যুগে অনেক দেব দেবির প্রকাশ ঘটেছে সৃষ্টি পরিচালনা করার জন্য । বেদ তৈরির পরবর্তী সময় এও দেব দেবির আর্বিভাব ঘটেছে ।
সেজন্য পরবর্তীতে সেই সব দেব দেবির ও পুজা করা হয় ।
আপনি তো দাবি করছেন যে বেদে এসব লেখা আছে কিন্তু আরেকটি কথা পড়েছেন কি যে বৈদিক দেবতা কারা ?
তারা হলেন , বৈদিক প্রথার কয়েকজন প্রধান দেবতা হলেন ইন্দ্র, সূর্য, বায়ু, বরুণ, মিত্র, অদিতি, যম, সোম, সরস্বতী, ও শিব ,ব্রহ্মা, বিষ্ণু , লক্ষী
তাহলে কি বুঝতে পারলেন বায়ু ও বরুন মানে জল তাদের তো উপাসনা করাই যেতে পারে কারণ এটা বেদে উল্লেখ আছে এ বাদে যেসব দেবতা আপনারা মনে করেন
যেমন সর্পরুপী মনসা দেবি এবং শীতলা দেবি এ্ইসব দেবির আর্বিভাব পুরান ও বেদ তৈরির পরে হয়েছে । সেজন্য আমরা বেদে আপনি যেটা বলতে চাইছেন যে নিষেধ
সেটা থাকলেও আমরা পুজা করি । কারন বেদ , পুরান তো আর সংবিধান না যে পরিবর্তন করা যাবে ।
১৩. ৭ম প্রশ্ন হল : লোকে জানে আমি কখনও জন্মাইনি ও উদ্ভূত হয়নি; আমি এই বিশ্বজগতের সবময় প্রভু
ভগবত গীতা : অধ্যায় ১০ অনুঃ ০৩।
আপনি কি পাগল একবার অস্বীকার করছেন যে ইশ্বরের রুপ আছে একবার বলছেন রুপ আছে । এই যে উক্তি টি দিয়েছেন তার মধ্যমে কি বুঝায় জানেন ?
এর মাধ্যমে বুঝায় ভগাবন শ্রী কৃষ্ণের রুপ , শক্তি , তিনিই ব্রহ্ম , সে কখনও জন্মায় নি , তিনিই ইশ্বর বা ব্রহ্ম , তাহলে এতক্ষন ফাউ এতক্ষন তর্কা তর্কি করলেন কেন ?
শ্রীমদভগবত গীতায় তো স্পর্ট ভাবে বলা আছে যে ভগাবন শ্রী কৃষ্ণই হলেন ইশ্বর তিনিই তো ব্রহ্ম এখন আপনি বলবেন যে বেদে তাহলে বলবেন যে বেদে তাহলে ওসব কথা লেখা আছে কেন ?
তার উত্তর হল গীতার এই ১০ম অধ্যায় এর ২ নং শ্লোকে :
ন মে বিদুঃ সুরগণাঃ প্রভবং ন মহর্ষয়ঃ।
অহমাদির্হি দেবানাং মহর্ষীণাং চ সর্বশঃ।।২।।
দেবতারা বা মহর্ষিরাও আমার উৎপত্তি অবগত হতে পারেন না, কেন না, সর্বতোভাবে আমিই দেবতা ও মহর্ষিদের আদি কারণ।
দেবতা ব্রহ্মা ও ব্রহ্ম কিন্তু আলাদা জিনিস । দেবতা ব্রহ্মা নিজেই জানতেন না কৃষ্ণে আসল সত্য সস্পর্কে । ব্রহ্মা একজন ত্রিদেব এর অংশ তিনি শ্রী কৃষ্ণের আসল সত্য জানতে পেরেছেন যখন
শ্রী কৃষ্ণ পৃথিবী তে অবতারণ করছিলেন । বেদ তো তার আগেই সৃষ্টি করা হয়ে গেছে । তাহলে কিভাবে বেদে লেখা থাকবে যে ব্রহ্মের রুপ আছে । কারণ দেবতা ও মর্হষি রা তো সেই ব্রহ্ম এরই সৃষ্টি তারা তার দেখা পায়নি । সে জন্যই নিরাকার
ব্যখা দেওয়া হয়েছে । সেই নিরাকার ব্রহ্মই প্রমানিত হয় দ্বাপর যুগে শ্রী কৃষ্ণের বাণির মাধ্যমে । যে তিনিই ব্রহ্ম ।
শ্রী কৃষ্ণ তার বিশ্বরুপের দর্শন দেন অর্জুন কে । এই বিশ্বরুপ তো ব্রহ্ম তা তো আগে সবাই নিরাকার রুপে জানত সেটা কি তা তো কারোর জানা নেই । প্রথমে অর্জুন দেখতে পাচ্ছিল না তারপর শ্রী কৃষ্ণ দিব্য দৃষ্টি দেওয়ার পর শ্রী কৃষ্ণের
সেই বিশ্ব রুপের দর্শন পান । শ্রীকৃষ্ণের বিশ্বরুপে অর্জুন দেখতে পান তার কোন আদি নেই শেষ নেই তার সাথে যুক্ত আছে সকল দেব দেবি যারা ব্রহ্মের অংশ । তাহলে কি বুঝতে পারলেন যে পূর্বের কথা গুলো ও মিথ্যা নয় ।
তাহলে সব দেব দেবতা ব্রহ্ম অর্থৎ শ্রী কৃষ্ণের অংশ । যেকোন দেব দেবতা কে পুজা করা মানে শ্রী কৃষ্ণের পুজা করা । শ্রী কৃষ্ণ কে পুজা করলে সকল দেব দেবি পুজিত হন । তাহলে অন্য দেব দেবির পুজা করলেও শ্রী কৃষ্ণের
পুজা বা আরাধনা হয় । আমি আগেও বলেছি যে বিভিন্ন দেব দেবির পুজা একটা উদ্দেশ্য নিয়ে করা হয় । যেমন মানুষ দেবি লক্ষীর পুজা করেন ধন সম্পদ প্রাপ্তির জন্য । এই দিক টার নিন্দা করা হয়েছে । করান এর ফলে তারা গোলক অর্থৎ
স্বর্গের উপরের স্থান গোলক অথবা মোক্ষ সেটা প্রাপ্তি হবে না তাদের স্বর্গ পাপ্তি হবে । তারা স্বর্গে যাবেন যারা দেব দেবির পুজা করেন । তাদের চিরমুক্তি অর্থৎ মোক্ষ বা গোলক প্রাপ্তি হবে না । কারন দেব দেবির পুজা মানুষ একটা মনের
আকাঙ্খা নিয়ে করেন তাদের মনে মোহ থাকে যেমন দেবতা গনেশে এর পুজা করা হয় সফলতা পাওয়ার জন্য । এতে মানুষের আসল উদ্দেশ্য মোক্ষলাভ বিঘ্নিত হয় । সে জন্য আমাদের শ্রী কৃষ্ণের উপাসনা করা উচিৎ আবার অন্য দিকে
শ্রী কৃষ্ণের অংশ বা ব্রহ্মের অংশ তাদের কে তো অবজ্ঞা করতে পারি না সেজন্য আমরা কৃষ্ণ নাম ও বিভিন্ন তিথিতে সেই সব দেব দেবির পুজা করি কারণ তারা তো শ্রী কৃষ্ণ বা ব্রহ্মের অংশ । এই পদ্ধতি তে মোক্ষ লাভ হবে যদি মানুষের
উদ্দেশ্য ঠিক থাকে । মোক্ষলাভ কিভাবে হয় তা আমরা প্রায়ই সকলেই জানি । এখন আপনি বলবেন যে যারা কালি ভক্ত শিব ভক্ত তাদের কি মক্ষ হবে না । তাদের ও মক্ষ হবে যদি তারা সন্ন্যাস অথবা তাদের জাগতিক কর্ম ঠিক থাকে ।
সুতারাং আমরা এটা বুঝলাম যে ইশ্বর এক তার প্রাপ্তির পথ অনেক যে কোন পথে তাকে প্রাপ্ত করা যাবে ।
তাহলে আপনারা যে তর্কাতর্কি করছেন তা হল সম্পূর্ণ যুক্তি হীন একদিকে বলছেন ব্রহ্মের আকার নেই আবার অন্যদিকে শ্রীকৃষ্ণ কে উল্লেখ করছেন । সুতারং সম্পূর্ন জেনে বুঝে এইসব কথা বলবেন । শুধু ফাজলামি করবেন না ।