আমাজন রেইন ফরেস্টে মুসলিম উপজাতি। জানুন সুরিনামে বসবাসরত মুসলিমদের অজানা তথ্য। Suriname in Bangla

সুরিনামে বসবাসরত মুসলিম Suriname in Bangla
আমাজন রেইন ফরেস্টে মুসলিম উপজাতি। জানুন সুরিনামে বসবাসরত মুসলিমদের অজানা তথ্য। Suriname in Bangla

আজকে আমরা আলোচনা করবো দক্ষিণ আমেরিকার একটি রাষ্ট্র সুরিনামে বসবাসরত মুসলিম উপজাতি বা জনগোষ্ঠী সম্পর্কে। এখন সুরিনাম সম্পর্কে বিস্তারিত জানার আগে আপনারা এটা জেনে অবাক হবেন যে, সুরিনাম এর দক্ষিণ দিকটা হলো আমাজন রেইন ফরেস্ট এর অংশ। মূলত আমাজন রেইন ফরেস্ট এর উল্লেখযোগ্য অংশ এখানে অবস্থিত।

[আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এই বিষয়ে একটি ভিডিও আছে। চাইলে সেটা এখানে ক্লিক করে দেখে নিতে পারেন।]

প্রথমেই বলে নিই, এই আলোচনার থেকে আমরা জানবো, সুরিনামে মুসলিমদের আগমন ও তাদের জনসংখ্যা, অবস্থা ও ইতিহাস সম্পর্কে, জানবো কেনো ওই এলাকায় মুসলিমদের দেশত্যাগ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবং আরো জানবো সেখানে অবস্থিত মসজিদ, মাদ্রাসা এবং তাদের সাংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে।

এখন আসুন, মূল বিষয়ে যাওয়ার আগে প্রথমে জেনে নেওয়া যাক সুরিনাম সম্পর্কে।

সুরিনাম বা সুরিনাম প্রজাতন্ত্র আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর-পূর্ব অংশে অবস্থিত একটি রাষ্ট্র। ১৯৭৫ সালের আগ পর্যন্ত সুরিনাম নেদারল্যান্ড‌সের একটি উপনিবেশ ছিল এবং তখন এর নাম ছিল ওলন্দাজ গায়ানা। সুরিনামের আয়তন ১,৬৩,২৬৫ বর্গ কিমি। এটি দক্ষিণ আমেরিকার ক্ষুদ্রতম স্বাধীন রাষ্ট্র। সুরিনামের একমাত্র নগর-এলাকা ও রাজধানীর নাম প্যারামারিবো।

ঔপনিবেশিক প্ল্যান্টেশন ব্যবস্থার ফলশ্রুতিতে সুরিনামে বহু জাতির মানুষের বসবাস। যেসব প্ল্যান্টেশনে আখ ও অন্যান্য শস্যের চাষ হত, সেগুলি আফ্রিকা থেকে আনা দাসশ্রমের উপর নির্ভরশীল ছিল। দাসপ্রথার অবসানের পর ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চল থেকে চুক্তিবদ্ধ শ্রমিকদের নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে সুরিনামের অর্ধেক মানুষ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত। এছাড়া এশীয় ও ইউরোপীয়দের মিশ্র জাতি ক্রেওলেরাও সুরিনামের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ গঠন করেছে।

এখন আসুন মূল বিষয়ে আসা যাক। প্রথমে আলোচনা করবো, যেভাবে সুরিনামে মুসলিমদের আগমন হয় সেই ইতিহাস সম্পর্কে।

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   হিন্দু ধর্মের কিছু বৈজ্ঞানিক ভুল ,ব্যাখ্যা এবং দলিল বা রেফারেন্স সহ বিস্তারিত

ধারণা করা হয়, সুরিনামে মানব বসতি গড়ে ওঠে খ্রিস্টপূর্ব তিন হাজার বছর আগে। ১৬৬০ থেকে ১৬৬৭ সালের মধ্যে সুরিনামে ডাচ উপনিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। মূলত ডাচ ঔপনিবেশিক শাসকদের মাধ্যমে সুরিনামে মুসলিম আগমন ঘটে। ডাচ উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার পর সুরিনামে শ্রমিক হিসেবে আফ্রিকান দাসদের নিয়ে আসা হয়, যাদের বিপুলসংখ্যকই ছিল মুসলিম। এখানে বলে রাখা ভালো হবে যে, সে সময়ে দাসদের কোনো ধর্মীয় স্বাধীনতা ছিল না এবং তাদের বড় একটি অংশকে খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করা হতো।

আসুন আরো একটু বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। ১৮৭৩ সালে বন্দি ভারতীয় মুসলিমদের নিয়ে আসা হয় এই উপকূলীয় রাষ্ট্রে। ঔপনিবেশিক শাসনের সূত্র ধরে সুরিনামে বিপুলসংখ্যক ইন্দোনেশিয়ান মুসলমানের আগমন ঘটে। যারা ১৯০২ থেকে ১৯৩৫ সালের মধ্যে সুরিনামে আগমন করে এবং কৃষিকাজে যোগ দেয়।

এজন্য বর্তমান সুরিনামের মুসলিম জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশ ইন্দোনেশিয়ান, ৩০ শতাংশ ভারতীয় এবং অন্য আফ্রিকার ধর্মান্তরিত মুসলিম। এ ছাড়া বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার একাধিক দেশের মুসলিম অভিবাসী শ্রমিক আছে সুরিনামে।

যেহেতু ইন্দোনেশিয়া বা জাভা দ্বীপ এবং দক্ষিণ এশিয়া (অর্থাৎ আজকের ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ) থেকে আগত অভিবাসীদের মাধ্যমেই সুরিনামে ইসলাম পৌঁছেছিল বা তারা তাদের ইসলামের স্থানীয় রূপকে সুরিনামে নিয়ে এসেছিল, তাই এই অঞ্চলগুলি শক্তিশালীভাবে সেটির মাধ্যমে প্রভাবিত হয়েছিল। বংশোদ্ভূত ছাড়াও, বেশিরভাগ সুরিনামি মুসলমান একই সংস্কৃতির এবং একই ভাষায় কথা বলে। সুরিনামে অল্প সংখ্যক আফগান মুসলমান এবং তাদের জন্মগত শিশু রয়েছে।

এখন আসুন সুরিনামে মুসলিমদের জনসংখ্যা সম্পর্কে একটু ধারণা নেওয়া যাক।

আপনারা জেনে অবাক হবেন যে, মুসলিমরা দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় জনগোষ্ঠী। এবং ইন্টারেস্টিং বিষয় হলো দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে সুরিনামেই সবচেয়ে বেশি মুসলমান বসবাস করে।

সরকারী তথ্য অনুসারে, ২০১২ সালের হিসাবমতে সুরিনামের মুসলিম জনসংখ্যা দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৩.৯ শতাংশকে প্রতিনিধিত্ব করে, যা শতকরা হিসাবে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ।

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময়সীমা , ব্যাখ্যা ও দলিল বা রেফারেন্স সহ

এখন আসুন , সুরিনামে অবস্থিত মসজিদ, মাদ্রাসা এবং তাদের সাংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে।

সুরিনামে দেড় শতাধিক সরকার অনুমোদিত মসজিদ ও একাধিক মুসলিম সামাজিক, দাতব্য ও ধর্মীয় সংগঠন আছে। সুরিনামের বেশির ভাগ মুসলিম সুন্নি মতাদর্শী এবং তারা হানাফি ও শাফেয়ি মাজহাবের অনুসারী। মুসলিমরা প্রধান সরকারি ভাষা ডাচের পাশাপাশি দৈনন্দিন জীবনে আরবি ও উর্দু ভাষা ব্যবহার করেন। ১৯৮০ সালে রাজধানী পারমারিবোর প্রাণকেন্দ্রে দেশটির সর্ববৃহৎ মসজিদ উদ্বোধন করা হয়।

সুরিনামে বেশ কয়েকটি মাদ্রাসা রয়েছে। এখানে কোরআন শিক্ষা দেওয়া হয়। সুরিনামের হাফেজরা নেদারল্যান্ডের প্রায় অর্ধেক মসজিদের ইমাম। সুরিনামের ঐতিহ্য অনুসারে প্রতি বছর আয়োজন করা হয় হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতার।

সুরিনাম দেশটির রাষ্ট্র স্বীকৃত সাতটি ধর্মের একটি ইসলাম। ১৯৭০ সাল থেকে ঈদুল ফিতরে মুসলিমরা রাষ্ট্রীয় ছুটি উদ্যাপন করছে। ধর্মীয় স্বাধীনতা থাকলেও সুরিনামের মুসলিমরা ধর্মীয় শিক্ষায় পিছিয়ে। দেশটির মুসলিম জনসংখ্যার মাত্র তিন শতাংশ আরবি বলতে বা পড়তে পারে। সুরিনামে ইসলামী শিক্ষা বিস্তারে পাকিস্তানি ও ইন্দোনেশিয়ান মুসলিমরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

মূলত সুরিনাম ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও সহনশীলতার জন্য বিখ্যাত। দেশটিতে সব ধর্মের লোকেরা স্বাধীনভাবে ধর্মপালন ও সংস্কৃতিচর্চার সুযোগ পায়। তবে দুঃখজনক ব্যাপার হলো দেশটিতে মুসলিম জনসংখ্যা ক্রমহ্রাসমান। ১৯৭৫ সালে নেদারল্যান্ডস থেকে স্বাধীনতা লাভের আগে সুরিনামের মুসলিম জনসংখ্যা ছিল ২৫ শতাংশের বেশি। স্বাধীনতার সময় নেদারল্যান্ডস নাগরিকত্ব গ্রহণের প্রস্তাব দিলে প্রায় দুই লাখ সুরিনামিজ দেশত্যাগ করে। এ সময় বহু মুসলিমও দেশত্যাগ করে। মুসলিমদের দেশত্যাগের ধারা এখনো অব্যাহত আছে। পিউ ফোরামের বর্ণনামতে ২০৫০ সালে সুরিনামের মুসলিম জনসংখ্যা ১১.৮ শতাংশে নেমে যাবে বলে ধারণ করা হয়।

আমরা চাই, ইসলামের এই আলো ছড়িয়ে যাক পুরো আমেরিকায়- বিশ্বের মুসলমানরা এখন সেই প্রত্যাশায়।

MuslimPoint Organization

About MuslimPoint Organization

MuslimPoint একটি অনলাইন ভিত্তিক ইসলামী প্রশ্নোত্তর, গ্রন্থাগার, ব্লগিং, কুরআন, হাদিস, কুইজ এবং বিষয় ভিত্তিক রেফারেন্স প্ল্যাটফর্ম।

View all posts by MuslimPoint Organization →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *