ব্যাখ্যা ও উদাহরণসহ কেয়ামতের আলামত ও ভবিষ্যতবাণী পর্ব-১

কেয়ামতের আলামত ও ভবিষ্যতবাণী
ব্যাখ্যা ও উদাহরণসহ কেয়ামতের আলামত ও ভবিষ্যতবাণী

[প্রথমেই বলে রাখি কিয়ামতের জ্ঞান শুধুমাত্র আল্লাহ’র কাছে আছে ।
‘(হে নবী মুহাম্মাদ!) মানুষ তোমাকে কিয়ামত (কবে হবে, সে) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। তুমি বলো, এর (একেবারে সঠিক) জ্ঞান শুধুমাত্র আল্লাহ’র কাছে আছে। আর (হে নবী !) তুমি কি জানো, কিয়ামত (ঘটার) সম্ভাবনা নিকটে চলে এসেছে !’ [সূরা আহযাব ৬৩]
এখানে শুধুমাত্র হাদিস ও কিছু অনুমানের ভিত্তিতে আমরা কিয়ামতের আলামতগুলো ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি । সুতরাং এখানের সকল বক্তব্য কে আমরা কখনো চূড়ান্ত বলে মনে করি না । এগুলো শুধু উল্লেখ করছি, যাতে এই রেওয়ায়েতসমূহে বর্ণিত কোনো ঘটনা ঘটতে দেখলে তা চিনে নিতে পারেন এবং রেওয়াতের হক্ব আদায় করতে পারেন।
উল্লেখ্য, যেহুতু হয়তো এখানে বর্ণিত অল্প কিছু হাদিসের সনদগত ও অন্যান্য দূর্বলতা থাকতে পারে তাই এখানে উল্লেখিত হাদিসসমূহ কোনো বিজ্ঞ মুহাদ্দেস আলেমের পরামর্শ ব্যাতীত কারো কাছে বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। ]

# হযরত ওমর ফারূক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বর্ণনা করেন- قَالَ : فَأَخْبِرْنِي عَنِ السَّاعَةِ ، قَالَ : مَا الْمَسْئُولُ عَنْهَا بِأَعْلَمَ مِنَ السَّائِلِ قَالَ : فَأَخْبِرْنِي عَنْ أَمَارَتِهَا ، قَالَ : أَنْ تَلِدَ الْأَمَةُ رَبَّتَهَا ، وَأَنْ تَرَى الْحُفَاةَ الْعُرَاةَ الْعَالَةَ رِعَاءَ الشَّاءِ يَتَطَاوَلُونَ فِي الْبُنْيَانِ . رواه مسلم في صحيحه , كِتَابُ الْإِيمَانَ بَابُ معرفة الْإِيمَانِ ، وَالْإِسْلَامِ ، والقَدَرِ وَعَلَامَةِ السَّاعَةِ : ٣٤ ، و غيره ايضا – “(একবার রাসুলুল্লাহ ﷺকে) এক ব্যাক্তি জিজ্ঞেস করলো: ‘কেয়ামত সম্পর্কে আমাকে অবহিত করুন’। রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: ‘এ ব্যাপারে যাকে প্রশ্ন করা হয়েছে সে প্রশ্নকারীর চাইতে বেশি জানে না’। লোকটি বললো: ‘তাহলে আমাকে তার লক্ষনসমূহ সম্পর্কে অবহিত করুন’। রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: (কেয়ামত ঘনিয়ে এসেছে বোঝার বিশেষ লক্ষন হল:) মা তার মনিবাকে প্রসব করবে। আর এও যে, তুমি দেখবে- (সমাজের একসময়কার) পাদুকাহীন, কাপড়হীন, নিঃস্ব-হতদরিদ্র, মেষপালের রাখাল (শ্রেণির গ্রাম্য) লোকগুলি (হঠাৎ যেন অঢেল অর্থ-সম্পদের মালিক হয়ে গেছে এবং টেক্কা দিয়ে) একে অন্যের চাইতে উঁচু উঁচু ইমারত তৈরীতে লেগে গেছে’। [সহিহ মুসলীম, -১/৩১ হাদিস ৮; সহিহ বুখারী, হাদিস ৪৭৭৭; মুসনাদে আহমদ- ১/৩১৯, হাদিস ২৯২৬; সহিহ ইবনে হিব্বান- ১/৩৯৭; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৬৩; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪৬৯৫; আল-মুসান্নাফ, ইবনু আবি শায়বাহ -১৪/১৫৫ হাদিস ৩৮৫৫৪; হিলইয়াতুল আউলিয়া, আবু নুআইম- ৮/৪২৯; সুনানু সুগরা, বাইহাকী- ১/১৪]

ফায়দা: এটি একটি দীর্ঘ হাদিসেরে অংশ বিশেষ। সেখানে আছে যে, খোদ রাসুলুল্লাহ ﷺ-ই হযরত ওমর রা.কে বলেছিলেন যে, প্রশ্নকর্তা ব্যাক্তিটি ছিলেন ওহী বাহক সম্মানীত ফেরেশতা হযরত জিবরীল আ. যিনি মানুষের রূপ ধারন করে উপস্থিত সাহাবীগণকে দ্বীন ইসলামের কিছু ইলম শিখাতে এসেছিলেন।

এই হাদিসের একটি বিশেষত্ব এই যে, এখানে খোদ হযরত জিবরীল আ. এবং বিশ্বনবী ﷺ-এর মাঝে কেয়ামতের আলামত ও লক্ষন নিয়ে কথোপকথন বর্ণিত হয়েছে এবং কেয়ামতের বহু ছোট-বড় আলামত ও লক্ষন থাকা সত্ত্বেও এখানে বিশেষভাবে দুটি আলামতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছে যে, মুসলীম উম্মাহ এ দুটি আলামত দেখতে পেলে তারা মূলতঃ এই সংকেত পেয়ে যাবে যে, তারা শেষ জামানায় উপস্থিত এবং কেয়ামত তাদের একেবারে নিকটে এসে উপনীত হয়ে গেছে; এখন শুধু মালার ছেড়া সুতো থেকে একের পর এক পুঁথি-দানা বেড় হয়ে আসার ন্যায় কেয়ামতের শেষ জামানার আলামতগুলি একটার পর একটা উম্মতের উপর আছড়ে পড়তে থাকবে।

আরবী শব্দ الْحُفَاةُ (পাদুকাহীন’রা) -হল حاف -এর বহুবচন; এমন ব্যাক্তি যে অভাবের কারণে পায়ে পাদুকা/স্যান্ডেল পড়ার মতো সামর্থ রাখে না, হাটে-বাজারে লোকালয়ে খালি-পায়ে চলাচল করে থাকে -এমন গ্রাম্য লোক। আর الْعُرَاةُ (কাপড়হীন) – হল عار -এর বহুবচন; এমন ব্যাক্তি যে অভাবের কারণে কোনো রকম নিম্নমানের লুঙ্গি জাতীয় কোনো কাপড় পদে সমাজে ইজ্জতটুকু রক্ষা করে রাখে বটে, কিন্তু গা (body) ঢাকার মতো কাপড় কেনার তেমন সামর্থ না থাকায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খালি-গা’ থাকে, হাটে-বাজারে লোকালয়ে খালি-গায়ে চলাচল করে থাকে -এমন গ্রাম্য লোক। আর الْعَالَةُ (নিঃস্ব-হতদরিদ্র’রা) – হল عَائِل -এর বহুবচন।

এরা হল অভাবী ও হতদরিদ্র গ্রাম্য লোক; বলা হয়েছে যে, এদের বাল-বাচ্চা সমেত পরিবারের আকার বড় হওয়ায় তারা ওদের খাবার-দাবার জোটাতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খায় এবং খুব কষ্ট করে জীবন চালায়। আর رِعَاءُ الشَّاءِ (মেষপালের রাখাল’রা) – এখানে رِعَاءُ হল راع (রাখাল) -এর বহুবচন। এরা হল এমন সব ব্যাক্তি যারা গ্রামে মেষ বা ভেড়া চড়িয়ে জীবন যাপন করে -এমন রাখাল। (উটের ন্যায় আরবীয় শহুরে অভিজাত শ্রেণির প্রাণির সাথে এদের কোনো সম্পর্ক নেই)। [বিস্তারিত: উমদাতুল ক্বারী, আইনী- ২/২৬১; আল-আরবাইনুন নাবাবিয়্যাহ- ১/১১; কিতাবুল ইমান ওয়াল আউসাত, ইবনে তাইমিয়্যাহ- ১/৭২; ফাতহুল মুনইম- ১/২৩; মিরকাতুল মাফাতিহ, ক্বারী- ১/১২৮]

মুসনাদে আহমদ’ -এ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-এর সূত্রেও একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে, যার অংশ বিশেষ এই- إذا رأيتَ الأَمَةُ ولدتْ رَبَّتَها أو رَبَّها ورأيتَ أصحابَ الشاءِ تَطاولوا بالبنيانِ ورأيتَ الحُفاةَ الجِياعَ العالةَ كانوا رؤوسَ الناسِ فذلك من مَعَالمِ الساعةِ وأَشْراطِها قال : يا رسولَ اللهِ ومن أصحابُ الشاءِ والحُفاةُ الجِياعُ العالةُ قال : العَرَبُ . رواه الإمام أحمد:١/٣١٩ رقم ٢٩٢٦, قال شعيب الأرنؤوط : حديث حسن – ‘তুমি যখন দেখবে যে, মা তার মনিবা বা মনিবকে প্রসব করেছে, এবং (যখন) দেখবে যে, (একসময়) মেষপালের রাখাল (ছিল -এমন গ্রাম্য) লোকগুলি (হঠাৎ যেন অঢেল অর্থ-সম্পদের মালিক হয়ে গেছে এবং টেক্কা দিয়ে) একে অন্যের চাইতে উঁচু উঁচু ইমারত তৈরীতে লেগে গেছে, এবং (যখন) দেখবে যে, পাদুকাহীন, দারিদ্রপিষ্ট-হতদরিদ্র ব্যাক্তিগুলি (অপরাপর) লোকজনের সর্দার/মনিব/নেতা/মাতব্বর হয়ে গেছে, তখন (বুঝবে যে) ওটা কেয়ামতের একটি সংকেত এবং ওর লক্ষনসমূহের একটি। লোকটি বললো: ইয়া রাসুলাল্লাহ! (এই) মেষপালের রাখাল ও পাদুকাহীন, দারিদ্রপিষ্ট-হতদরিদ্র ব্যাক্তিগুলি কারা? রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: আরব (লোকরা)’। [মুসনাদে আহমদ- ১/৩১৯, হাদিস ২৯২৬; সহিহ ইবনে হিব্বান- ১/৩৯৭; মিরকাতুল মাফাতিহ, ক্বারী ১/১২৮]

এ থেকে বোঝা গেল, শেষ জামানায় আরবের গ্রাম্য হতদরিদ্র শ্রেণির লোকগুলির মধ্য থেকে অনেকে অঢেল ধ্বসম্পদের মালিক হয়ে যাবে, যারা একে অন্যকে টেক্কা দিয়ে আরব জাহানের বুকে উঁচু উঁচু ইমারত তৈরীতে তাদের অর্থ ব্যয় করবে। ১৯৩০ সালে আরবদের একটি ভিডিও দেখুন, যা থেকে অবস্থা কিছুটা অনুমিত হবে ইনশা-আল্লাহ।

ভিডিও টি দেখতে এখানে ক্লিক করুন ।

এই ভবিষ্যৎ বাণী আমাদের এ জামানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। আরব জাহানের মধ্যে ইমারত বিল্ডিং-এর প্রসঙ্গ এলেই প্রথমেই মানুষের মাথায় ভাসে দুবাই-এর চিত্র, যেখানে তৈরী হয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু টাওয়ার ‘বুরুজ খলিফা’ সহ চোখ ধাঁধানো সব ইমারত। এছাড়াও কাতার,সৌদি আরব, কুয়েত প্রভৃতি রয়েছে আরব দেশগুলোর কাতারে।

# হযরত আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- لا تقوم الساعة حتى يتطاول الناس في البنيان . رواه البخاري في “الأدب المفرد” , باب التطاول في البنيان, قال الالبانى فى الإرواء: ٣/٣٢/١ – صحيح – ‘কেয়ামত কায়েম হবে না, যাবৎ না মানুষজন উঁচু উঁচু করে অট্টালিকা তৈরীতে লেগে যায়’। [আদাবুল মুফরাদ, ইমাম বুখারী, ১০৯ পৃ:, হাদিস ৪৪৯; মুসনাদে আহমদ- ২/৫৩০]

ফায়দা: এক রেওয়ায়েতে এসেছে, হযরত সালমান ফারেসী রা. বলেছেন – إن من اقتراب الساعة أن يظهر البناء على وجه الأرض – ‘নিশ্চই কেয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে জমিনের বুকে (ব্যাপক আকারে) ইমারত প্রকাশ পাবে’। [আল-মুসান্নাফ, ইবনু আবি শায়বাহ- ১৪/১৫৩, হাদিস ৩৮৫৪৩; আদ-দুররুল মানসুর, সুয়ূতী- ১৩/৩৮০] নিঃসন্দেহে তিনি এই ভবিষ্যৎবাণীটি রাসুলুল্লাহ ﷺ থেকে শুনেই বলেছেন। আর তা আজ এই জামানায় পূর্ণতা লাভ করেছে। একথা সকলে স্বিকার করবে যে, আগেকার জামানাগুলোতেও অট্টালিকা বানানো হয়েছে, কিন্তু আমাদের এ জামানায় দেশে দেশে শহরে শহরে উচু উঁচু আধুনিক অট্টালিকা ও ইমারত তৈরীর যে প্রতিযোগীতার এক মৌসুম চালু হয়ে গেছে, তার সাথে আগেকার যে কোনো জামানার কোনো অট্টালিকার তুলনা হতে পারে না। الله اعلم بالصواب

# হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَتَبَاهَى النَّاسُ فِي الْمَسَاجِدِ . رواه ابن حبان فى صحيحه: ٦٧٦٠, و قال شعيب الأرنؤوط : إسناده صحيح; و أبو داود فى سننه: ٤٤٩ – ‘কেয়ামত কায়েম হবে না, যাবৎ না মানুষজন মসজিদের (নির্মান ও সৌন্দর্য-জৌলুস) নিয়ে পরষ্পরে (প্রতিযোগীতা করে) গৌরব করে’। [সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস ৬৭৬০; সহিহ ইবনে খুযাইমা, হাদিস ১২৫৭; মুসনাদে বাযযার, হাদিস ৬৭৭৮, ৭২৬৩; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪৪৯; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৭৩৯; সুনানুস সুগরা, ইমাম নাসায়ী, হাদিস ৬৮৯; সুনানে দারেমী, হাদিস ১৪০৮; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ১৩৬০৬; সুনানুল কুবরা, বাইহাকী- ২/৪৩৯]

ফায়দা: একসময় মুসলমানদের মসজিদগুলো ছিল এমন, যখন নামাযের জামাআত হত হালাল-খোর মুত্তাকি মুমিনদের সমহ্নয়ে, কান্নার রোল পড়ে যেতো, মুমিনরা আল্লাহর যিকির করতেন, কুরআন তেলাওয়াত করতেন, জিহাদের জন্য তলওয়ার চালোনা শিখতেন, সেখানে শরয়ী বিচার হত, কুরআন-সুন্নাহ’র তা’লিম হত যাতে মুসল্লিগণ সেই ইলমকে মসজিদে ও মসজিদের বাহিরের জীবনে বাস্তবায়ন করতে পারেন। এসব আমলের জন্য মসজিদ সর্বক্ষন খোলা থাকতো। মসজিদের কারুকার্য ও স্টাইলের দিকে তাঁদের ধ্যান যেতো না, স্বভাবিক প্রয়োজনে যতটুকু নির্মান ও মেরামতের প্রয়োজন হত তারা সাধ্যমত তা করে নিতেন।

চমৎকার সুন্দর মসজিদ শেষ জামানা গর্ব পরষ্পরকিন্তু আজ একেকটা মসজিদের মুতাওয়াল্লি (সভাপতি) ও সদস্য হল তারা, যারা নিজেরা ব্যাক্তি জীবনে দাইয়্যুস, পরিবারের পর্দার ধার ধারে না, পর্দাকে উন্নয়নের অন্তরায় মনে করে, যারা প্রকাশ্য হারামখোর (যেমন সূদী ব্যাংক ও জুয়া নির্ভর বিমা-প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির উধ্বতন কর্মকর্তা), যারা আক্বীদাগত ভাবে সেকুলারিজম (ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ), সমাজতন্ত্রবাদ ইত্যাদি নানান কুফরী মতবাদে বিশ্বাসী, যারা এমন মুনাফেক যারা চায় না যে, রাষ্ট্রে আল্লাহ’র দ্বীন কায়েম হোক এবং মসজিদের মিম্বরর থেকে পুরো দ্বীন কায়েমের ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহ’র আলোকে সহিহ তা’লিম দেয়া কোহ। বরং এর বিপরীতে প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে কিভাবে এসকল পথ বন্ধ করা যায় তার চেষ্টা-প্রচেষ্টার প্রকাশ্য নির্লজ্জ মহরা আপনি এযুগের মসজিদের সভাপতি ও সদস্যদের পক্ষ থেকে দেখতে পাবেন। তাদের ধ্যান পড়ে থাকে শুধু মসজিদের আকার বাড়ানো, সৌন্দর্য ও স্টাইল বর্ধন এবং ধ্বনিক শ্রেণির সুবিধার্থে এ.সি লাগানোর দিকে। আমি নিজ চোখে ঢাকার ধনকুবের এলাকা গুলশানের আজাদ মসজিদে লিফট দেখেছি। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে এমন মসজিদও দেখতে পাবেন, দেখে মনে হবে -কোনো প্যালেস কিংবা টুরিষ্ট এলাকায় এলাম। الله اعلم بالصواب

# হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- أُتيَ النَّبيُّ صلَّى اللَّهُ عليهِ وسلَّمَ بقطعةٍ من ذهبٍ كانت أوَّلَ صدقةٍ جاءتْهُ من معدنٍ لنا فقالَ إنَّها ستكونُ معادنُ وسيكونُ فيها شرُّ الخلقِ . أخرجه الطبراني في المعجم الأوسط: رقم ٣٥٣٢ ; و قال الهيثمي في مجمع الزوائد: ٣/٧٨ و رجاله رجال الصحيح – আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর কাছে একটি স্বর্ণ খন্ড নিয়ে এলাম। প্রথমে সেটা সদকাহ (-র মাল ছিল), যা আমরা পেয়েছিলাম খনিজ-সম্পদ থেকে। তখন তিনি বললেন: নিশ্চই অতি শিঘ্রই (বিভিন্ন মূল্যবান) খনিজ-পদার্থ (বেড়) হবে এবং অতি শিঘ্রই সেখানে নিকৃষ্ট সৃষ্টি (কিছু মানুষদেরকে তাতে দখলদারী স্থাপন করার উদ্দেশ্যে উপস্থিত দেখতে) পাবে’। [আল-মু’জামুল আউসাত, ত্বাবরাণী, হাদিস ৩৫৩২; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৩/৭৮]

ফায়দা: আরবী শব্দ مَعدِن -এর বহুবচন হল مَعَادِنُ ; আর مَعدِن -এর অর্থ খনিজ পদার্থ তথা ভূ-গর্ভস্থ মূল্যবান পদার্থ, যা ভুমি থেকে বেড়িয়ে আসে বা মানুষ তা থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য ভূমি খুড়ে বেড় করে। খনিজ পদার্থ কঠিন ও তরল -উভয় রকমেরই হতে পারে। যেমন: সোনা, রূপা, মনি-মুক্তা, কয়লা, তেল, গ্যাস, রাসায়নিক পদার্থ ইত্যাদি।

ইমাম আব্দুর রাজ্জাক বিন হাম্মাম সানআনী রহ. নিজ সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- لَتَظْهَرَنَّ مَعَادِنُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ يَخْرُجُ إِلَيْهِ شِرَارُ النَّاسِ . اخرجه فى المصنف ,كتاب الجامع, باب المعادن: ١١/١٢ رقم ١٩٧٦١ – ‘শেষ জামানায় অবশ্যই খনিজ-পদার্থ সমূহ (ভূ-গর্ভ থেকে) বেড়িয়ে আসবে। (এ খবর জানার পর তাতে দখলদারী স্থাপনের জন্য) নিকৃষ্ট নিকৃষ্ট মানুষগুলো সেদিকে ধাবিত হবে’। [আল-মুসান্নাফ, আব্দুর রাজ্জাক- ১১/১২ হাদিস ১৯৭৬১]

এ থেকে বোঝা যায়, হাদিসে কথিত খনিজ পদার্থগুলো বেড় হবে শেষ জামানায়। আর আমরা ইতিপূর্বে দেখিয়ে এসেছি যে, আমরা ইতিমধ্যে শেষ জামানায় ঢুকে পড়েছি। আর একথা কে না জানে যে, পৃথিবীর মুসলীম-অমুসলীম উভয়েই বিভিন্ন খনিজ সম্পদ লাভ করেছে, যার মধ্যে তেল, সোনা, গ্যাস, কয়লা, রাসায়নীক পদার্থ ইত্যাদি অন্যতম। এছাড়াও বিভিন্ন সম্ভাব্য স্থানে এজাতীয় মূল্যবান খনিজ সম্পদ পাওয়ার আশায় অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে গবেষনা অব্যাহত রয়েছে। যদিও উপরোক্ত হাদিসটিতে ওসব খনিজ সম্পদ মুসলীমরা পাবে নাকি অমুসলীমরা পাবে -সে কথা বিশেষ করে বলা নেই, তবে বাস্তবতার নিরিখে আমার মনে হয়, এই হাদিসে সম্ভবতঃ আরব বিশ্বের মুসলীম প্রধান দেশগুলিতে আবিষ্কৃত খনিজ সম্পদ তেল-এর দিকে ইশারা করা হয়েছে, যাকে আজ ‘কালো সোনা’ বলা হয়ে থাকে।

আরব জাহানের এই তেল সম্পদ-তো নিঃন্দেহে মহা মূল্যবান প্রমাণিত হয়েছে, কিন্তু এই তেলের উপরে কবজা বসানোর মানসে সেখানে এসে হাজির হয়েছে আমেরিকার নিকৃষ্ট লোকগুলি, যাদের পিছনে কলকাঠি নাড়ছে জানোনিষ্ট ইহূদী শয়তান ব্যবসায়ী ও পলিটিশিয়ানগুলি।১৯৩৩ সালে ‘স্টান্ডার্ড ওয়েল কোম্পানি অব ক্যালিফোর্নিয়া’র সঙ্গে প্রথমবারের মতো তেল রফতানি চুক্তি করে সৌদি আরব। এর পাঁচ বছর পর সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলের দাম্মামে বাণিজ্যিক তেলের খনি আবিষ্কৃত হয়। ১৯৪৪ সালে দ্য অ্যারাবিয়ান আমেরিকান ওয়েল কোম্পানির যাত্রা শুরু করে; ১৯৫২ সাল পর্যন্ত এই তেল কোম্পানির প্রধান কার্যালয় ছিল নিউইয়র্কে। সৌদি সরকার ক্রমান্বয়ে এই কোম্পানিতে তাদের শেয়ার বৃদ্ধি করেছে, পরে আরামকো নামে পরিচিতি পাওয়া কোম্পানিটির পুরো মালিকানা সৌদি আরব নিয়ে নেয়। কিন্তু এই তেল’কে কেন্দ্র করে সৌদি-আরব, ইরান, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া ইত্যাদি দেশগুলোতে বসবাসকারী মুসলীম সমাজের কি দশাটাই না তারা করে ছাড়লো…। الله اعلم بالصواب

# আবু হুরায়রাহ রা. বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- تَقِيءُ الأرْضُ أفْلاذَ كَبِدِها، أمْثالَ الأُسْطُوانِ مِنَ الذَّهَبِ والْفِضَّةِ، فَيَجِيءُ القاتِلُ فيَقولُ: في هذا قَتَلْتُ، ويَجِيءُ القاطِعُ فيَقولُ: في هذا قَطَعْتُ رَحِمِي، ويَجِيءُ السَّارِقُ فيَقولُ: في هذا قُطِعَتْ يَدِي، ثُمَّ يَدَعُونَهُ فلا يَأْخُذُونَ منه شيئًا . رواه مسلم في صحيحه , كتاب الزكاة، باب الترغيب في الصدقة قبل أن لا يوجد من يقبلها : رقم ١٠١٣ , والترمذي في سننه : ٢٢٠٨ ; أبو يعلى في مسنده : ٦١٧١ ، ابن حبان في صحيحه : ٦٦٩٧ ; البغوي :٤٢٤١ وقال: هذا حديث صحيح – ‘(সেদিন বেশি দূরে নয়, যখন) জমিন তার কলিজার অংশগুলিকে (ভূমির বাইরে বমি করে) উগলে দিবে; (সেগুলো সংরক্ষনের পাত্র হবে) সোনা-রুপা (রাখা)র উসতুওয়ানাহ (উলম্ব-পাত্র) সমূহের সদৃশ (পাত্র)। (পরে এই খনিজ সম্পদ নিয়েই বিভিন্ন ফিতনা ফ্যাসাদ হবে)। পরে কোনো খুনী এসে বলবে: ‘(হায়!) এরই জন্য আমি (মানুষকে) খুন করেছি’! কোনো সম্পর্ক-ছিন্নকারী এসে বলবে: ‘(হায় রে!) এরই জন্য আমি (আমার আত্বীয়, মুসলমান ভাই-বোন বা আদম-সন্তানদের সাথে আদমী রক্তের) সম্পর্ক ছিন্ন করেছি’! কোনো চোর এসে বলবে: ‘(হায়!) এরই জন্য আমি (চুরি করে) আমার হাত কাটিয়েছি’! অতঃপর তারা তা পরিত্যাগ করবে, পরে তা থেকে তারা আর কিছুই গ্রহন করবে না’। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ১০১৩; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস ৬৬৯৭; সুনানে তিরমিযী, হাদিস ২২০৮; মুসনাদে আবু ইয়া’লা, হাদিস ৬১৭১; শারহুস সুন্নাহ, ইমাম বগভী, হাদিস ৪২৪১]

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   ইসলামিক শাসনতন্ত্র বিষয়ক আয়াত

ফায়দা: হাদিসটিতে বর্ণিত أفْلاذ হল فلذ -এর বহুবচন; الفلذ বলতে মূলত: القطعة من كبد البعير (উটের কলিজার টুকরাংশ)কে বোঝায়। ‘আরবদের কাছে উটের কলিজা’ যেহেতু অতিব প্রিয় খাবার, এজন্য হয়তো উটের কলিজার সাথে উদাহরণ দিয়ে বোঝাতে চাওয়া হচ্ছে যে, জামিন তার ভিতরে সংরাক্ষিত বিভিন্ন মূল্যবান খনিজ পদার্থ সমূহকে ভূমির বাইরে মানুষের সামনে বেড় করে দিবে। এখানে বলা হয়েছে تَقِيءُ الأرْضُ যার অর্থ “জমিন বমি করে দিবে বা উগলে দিবে”। আমাদের আকাবীর মুহাদ্দেস আলেমগণ এর সাধারণ অর্থই নিয়েছেন, অর্থাৎ জমিন এক সময় তার অভ্যন্তর ভাগ থেকে বড় বড়/লম্বা লম্বা স্বর্ণ ও রোৗপ্যের খন্ড প্রচুর পরিমানে বেড় করে দিবে।

তবে এযুগের অনেক আলেমের মতে, এখানে এযুগের ‘খনিজ তেল’ উদ্দেশ্য এবং তা বাস্তবতার সাথে অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ। যেমন, হাদিসটিতে ইশারা করা হয়েছে যে, জমিন যেসব মূল্যবান খনিজ পদার্থ উগলে দিবে, তা أمْثالَ الأُسْطُوانِ مِنَ الذَّهَبِ والْفِضَّةِ – ‘সোনা-রূপার উসতুওয়ানাহ (উলম্ব-পাত্র) সমূহের সদৃশ’ হবে। أُسْطُوَانَة -এর বহুবচন হল أُسْطُواناتٌ বা أَساطِينُ । মূলত: أُسْطُوَانَة বলা হয় ‘নলা’ (cylinder) বা উলম্ব স্তম্ভ (vertical column/pillar) আকৃতির পাত্র’কে (যেমন আপনারা পাশের ছবিতে দেখছেন)। শায়েখ হামযা ইউসূফের মতে, এখানে الأُسْطُوانِ বলতে এযুগের খনিজ তেলের উলম্ব-পাত্র বা ড্রাম সমূহের দিকে ইশারা করা হয়েছে। সহমত।

আজ শেষ জামানায় এসে আমরা দেখতে পাচ্ছি, পৃথিবীর আধুনিক টেকনোলজির মূল রক্ত সদৃশ চালিকা শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘খনিজ তেল’। এই তেল এতদিন পৃথিবীর পেটে খনিজ/গুপ্তধন আকারে ছিল, যা আবিষ্কৃত না হলে হয়তো অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাড়ে সর্বনাশ হয়ে যেতো। পৃথিবীর মানুষ (ভাল মন্দ উভয় উদ্দেশ্যে) এর চাহিদা তীব্র ভাবে অনুভব করছে, আর জমিন তা তার পেটের বিভিন্ন অংশ থেকে ফিটকিরি দিয়ে বমি করে উগলে দিচ্ছে। আমেরিকা, রাশিয়া, ভেনিজুয়েলা, ইরান, সৌদি আরব, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, কাতার, উইনাইটেড আরব আমিরাত, বাহরাইন, তুর্কমেনিস্তান, কুয়েত, ওমান, আলজেরিয়া প্রভৃতি দেশে ‘খনিজ তেল’ আবিষ্কৃত হয়েছে বহু আগে। বিশ্বজুড়ে ‘খনিজ তেল’কে প্রক্রিয়াজাত করে পরিশুদ্ধ আকারে বড় বড় সিলিন্ডার বা ড্রামে ভরে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের বিজনেস হয়েছে। এই ‘খনিজ তেল’ পৃথিবীর মানব জীবনে আজ এতটাই মূল্যবান অনুভূত হয়েছে যে, এর নাম দেয়া হয়েছে ‘কালো স্বর্ণ’। এই সেই ‘খনিজ তেল’ যার উপরে উইরোপ আমেরিকার সাদা চামড়াদের লোভাতুর চোখ পড়েছিল বহু আগে এবং আজ ২০১৯ ইং সালে এসে আমরা দেখতে পাচ্ছি, এই মূল্যবান ‘খনিজ তেল’কে কেন্দ্র করেই ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া, সৌদি আরব, কাতার, আরব আমিরাত, ইরান কিভাবে একে অপরে যুদ্ধে জাড়িয়ে পড়েছে এবং উম্মাহ একে অপরকে খুন করছে !!! এই হাদিসে যেসকল খুনী, চোর, সম্পর্ক-ছিন্নকারীর উদাহরণ দেয়া হয়েছে, তারা সম্ভব: ওই সকল লোক যারা এসব খুনখারাবি পরিবেশে জড়িত হওয়ার পর একসময় তাদের মধ্যে পাপের অনুশোচনা বোধ যাগ্রত হবে, তারপর তওবা করে এসব ছেড়ে চলে যাবে। الله اعلم بالصواب

# হযরত অাবু আহুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَبْنِيَ النَّاسُ بُيُوتًا يُوشُونَهَا وَشْيَ الْمَرَاحِيلِ . رواه البخاري في ” الأدب المفرد , بَابُ الْبِنَاءِ, حديث رقم ٤٠٩, قال الالبانى فى سلسلة الأحاديث الصحيحة : (رقم ٢٧٩) قلت : و هذا سند صحيح رجاله كلهم ثقات رجال البخاري في ” صحيحه ” غير عبد الله بن أبي يحيى ، و هو عبد الله بن محمد بن أبي يحيى الأسلمي و هو ثقة اتفاقا. – ‘কেয়ামত কায়েম হবে না, যাবৎ না মানুষ এমন ঘর নির্মান করে যা মারাহেল (নকশী কাঁথার) সাজে সজ্জিত ’। [আদাবুল মুফরাদ, ইমাম বুখারী, হাদিস ৭৭৭]

ফায়দা: আরেক রেওয়ায়েতে এসেছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- لا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَبْنِيَ النَّاسُ بُيُوتًا ، يُشَبِّهُونَهَا بِالْمَرَاحِلِ ، قَالَ إِبْرَاهِيمُ : يَعْنِي الثِّيَابَ الْمُخَطَّطَةَ . رواه البخاري في “الأدب المفرد: ٤٥٩، وإسناده حسن كذا فى إتحاف الجماعة بما جاء في الفتن والملاحم وأشراط الساعة: ٢/١٦٤ –‘কেয়ামত কায়েম হবে না, যাবৎ না মানুষ এমন ঘর নির্মান করে যা মারাহেল (নকশী কাঁথা)-এর মতো দেখায় । ইব্রাহিম বলেছেন: এর অর্থ নকশা-খোদিত বিভিন্ন কাপড়রাদি (দিয়ে সাজানো ঘর)’। [আদাবুল মুফরাদ, ইমাম বুখারী, হাদিস ৪৫৯]

আরবী শব্দ مَرَاحِلُ (মারাহেল) হল مُرَحَّل -এর বহুবচন, যা দ্বারা মূলতঃ এমন কাপড়কে বুঝায় যা বিভিন্ন জিনিসের ছবি ও নকশা দ্বারা খোদিত থাকে এবং যা দ্বারা কোনো কিছুর শোভা বাড়ানো হয়। [দেখুন: লিসানুল আরব- ১১/৩২৮-৩৩৫] ইমাম বুখারীর উস্তাদ শায়েখ ইব্রাহিম রহ. مَرَاحِلُ -এর ব্যাখ্যায় বলেছেন- يَعْنِي الثِّيَابَ الْمُخَطَّطَةَ – এর অর্থ নকশা-খোদিত বিভিন্ন কাপড়রাদি।

মারাহেল-এর ব্যবহার রাসুলুল্লাহ সা.-এর যুগে ছিল তা বিভিন্ন হাদিস দ্বারা প্রমাণিত এবং তিনি সাহাবীগণকে বোঝানোর জন্য তাঁর যুগের নকশী কাঁথার সাথে তুলনা করে বুঝানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এখানে বোঝা দরকার, খোদ রাসুলুল্লাহ সা.-এর যুগের মতো ১৪০০ বছর আগেকার নকশী কাপড় এখানে উদ্দেশ্য নয়, বরং তা মানুষের সামনে কেয়ামতের আলামত ও লক্ষন হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার জন্য চোখ ধাঁধঁনো নকশী কাপড় দিয়ে সজ্জিত ঘর হওয়া জরুরী, যা একথার স্বাক্ষ্য দিবে যে, মুসলিম উম্মাহ’র মধ্যে একটি ধনকুবেড় শ্রেণি এসব ব্যয়বহুল ফালতু অপচয় ও ভোগবিলাসে কি পরিমান মগ্ন হয়ে পড়েছে, যেন এই দু’দিনের পৃথিবীতে সারা জীবন থেকে যাবে!!!

আমি এখানে নমুনা হিসেবে দুবাই-এর আল-বুরজ আরামিয়াহ হোটেলের একটি রূমের ছবি দিচ্ছি, যার এক রাতের ভাড়া ২০,০০০ ডলার (প্রায় ১৫,৪০,০০০/- টাকা)। যারা এটা তৈরী করেছেন, তারা-তো অবশ্যই ব্যাবসায়ীক উদ্দেশ্যকে সামনে তৈরী করেছেন, কিন্তু আমি চিন্তা করছি, (বিলাশী কাফেরদের কথা না হয় বাদ দিলাম), কিন্তু যে সকল ধ্বনকুবেড় মুসলমান এখানে নিছক বিলাশিতার জন্য এক রাতেই শুধু ঘর ভাড়া বাবদই ২০,০০০ ডলার (প্রায় ১৫,৪০,০০০/- টাকা) ব্যয় করে যায়, তাদের কত আছে, কোথায় তারা ব্যয় করছে?!!! الله اعلم بالصواب

# হযরত আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- لا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَعُودَ أَرْضُ الْعَرَبِ مُرُوجًا وَأَنْهَارًا . اخرجه احمد في مسنده : ج ٢/ ص ٣٧۰ ; و اورده الهيثمي في مجمع الزوائد : ج ٧ ص ٣٣١ – عن أحمد ،وقال رجاله رجال الصحيح ; و مسلم في صحيحه : ج ٢ /ص ٧۰١ ب ٨١ ح ١٥٧; الحاكم في المستدرك : ج ٤ /ص ٤٧٧; و ابن حبان في صحيحه (صحيح ابن حبان بترتيب ابن بلبان): ١٥/٩٣ رقم ٦٧٠٠ – ‘কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যাবৎ না (জাজিরাতুল) আরবের জমিন (আবারো) সবুজ-শ্যামলা ও নহরাদিতে রুপান্তরিত হয়ে যায়’। [মুসনাদে আহমদ- ২/৩৭০; সহিহ মুসলীম, হাদিস ১৫৭; মুসতাদরাকে হাকিম- ৪/৪৭৭; সহিহ ইবনে হিব্বান- ১৫/৯৩ হাদিস ৬৭০০]

(জাজিরাতুল) আরবের জমিন (আবারো) সবুজ-শ্যামলা

ফায়দা: আরবী শব্দ مرج -এর বহুবচন হল المروج (মুরুয)। এর অর্থ ‘প্রচুর লতাপাতা/শাকসবজি জন্মানো প্রসস্থ ভূমি’। আর نَهَر (নাহর)-এর বহুবচন হল أنهار (আনহার)। আর نَهَر (নহর) বলতে-তো আপনারা জানেন যে, তা দ্বারা নদী, নালা, হ্রদ, পানির প্রবাহিত ফোয়ারা বা ঝরনা ইত্যাদি বোঝানো হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞ গণের অনেকের মতে হাদিসটিতে الْعَرَب (আল-আরব) বলতে ‘জাজিরাতুল আরব’ (Arabian Peninsula) বোঝানো হয়েছে। এই হিসেবে এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত রয়েছে একালের সৌদি আরব, বাহরাইন, কুয়েত, ইয়ামেন, ওমান, কাতার এবং ইউনাইটেড আরব আমিরাত।

এই হাদিসের حَتَّى تَعُودَ -‘যাবৎ না (আবারো) রুপান্তরিত হয়ে যায়) – দ্বারা বোঝা যায়, ইতিপূর্বে কোনো এক কালে আরব জাহান ছিল বিভিন্ন নদ-নদী ও নহর বিশিষ্ট এবং ছিল লতাপাতা পাছপালা ও বনবাদারে সবুজ শ্যামলা।আল্লাহ তাআলার লাখো কোটি শোকর যে, আজ এই বিংশ শতাব্দিতে এসে অমুসলীম আর্কিওলজিষ্টদের গবেষনায় বেড়িয়ে আসতে শুরু করেছে যে, ৫০ হাজার বছর আগে আরব জাহান একালের মতো মরুভূমি ও বালুকাময় অঞ্চল ছিল না, বরং তা ছিল বিভিন্ন নদ-নদী ও নহর বিশিষ্ট এবং ছিল লতাপাতা পাছপালা ও বনবাদারে সবুজ শ্যামলা, যেখানে ওই পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যশীল পশু প্রাণি বাস করতো।

Elephas recki সৌদি আরবের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের ফসিল

গত ২০১৪ ইং সালে সৌদি আরবের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি প্রাচীন লেকের কাছে একটি প্রাচীন প্রজাতির পুরুষ হাতির ফোসিল (হাড়-হাড্ডি ইত্যাদি) আবিষ্কার করেছে। প্রাপ্ত ফোসিলের পরিমান হল মূল হাতিটির ৬০%, যা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, তার দৈহিক আকৃতি একালের হাতির চাইতে ৫০% বড়। গবেষকরা বলেছে যে, উক্ত হাতিটি Elephas recki প্রজাতির একটি হাতি, যা ৩ লক্ষ বছর থেকে ৩৫ লক্ষ বছরের মধ্যে আফ্রিকা ও মিডিল-ইষ্টে বসবাস করার প্রমাণ পাওয়া যায়। গবেষকদের মতে, এই আবিষ্কারটি একথার একটি প্রকৃষ্ট প্রমাণ যে, আরবে একসময় এসব প্রাণির বসবাস ছিল এবং সবুজশ্যামলা ও নহর-নদনদীর পরিবেশ ছাড়া তাদের এখানে টিকে থাকা সম্ভব হত না। Oxford University-এর School of Archaeology-এর প্রফেসর Michael Petraglia-এর গবেষনা মতে-তো আরবে প্রায় ১০ হাজার ছোট বড় লেক ছিল, যা থেকে প্রাপ্ত বস্তুতথ্য থেকে প্রমাণিত হয় যে, এসব এলাকায় জলহস্তি, কুমিড়, শামুক ইত্যাদির বসবাস ছিল।

কেয়ামত-আলামত-ভবিষ্যত-বাণী-মহানবী সা জাজিরাতুল আরব

সুতরাং, প্রশ্ন-তো স্বভাবতঃই উঠতে পারে যে, প্রাচিন কালে আরব জাহান ছিল বিভিন্ন নদ-নদী ও নহর বিশিষ্ট এবং ছিল লতাপাতা পাছপালা ও বনবাদারে সবুজ শ্যামলা -একথা ১৪৫০ বছর আগে আরবের এক নিরক্ষর মানুষ যাঁর নাম ‘মুহাম্মাদ’ তিনি কি করে জানলেন, যা আজ বিংশ শতাব্দিতে এসে আবিষ্কৃত হচ্ছে। এটা পরিষ্কার মোজেযা ছাড় আর কি হতে পারে। এই সংবাদ আল্লাহ তাআলাই তাঁর শেস নবী মুহাম্মাদ ﷺ-কে দিয়েছিলেন।

হাদিসটিতে বলা হচ্ছে, কেয়ামতের আগে আগে তথা শেষ জামানায় আবারো আরব জাহানের মরুভূমিতে নহর-নদনদী ও সবুজম্যামলা পরিবেশ জেগে উঠবে। আল-হামদুলিল্লাহ, রাসুলুল্লাহ ﷺ এই ভবিষ্যতবাণী আমাদের এ জামানায় ফলা শুরু হয়ে গেছে এবং ইনশাআল্লাহ নিকট ভবিষ্যতে তেমনটাই হবে যেমনটা রাসুলুল্লাহ ﷺ ভবিষ্যতবাণী করেছেন।

snowing-in-Saudi-Arabia সৌদিতে তুষারপাত

কিছুদিন আগেও কেউ কেউ মনে করতেন যে, সৌদি আরবের কোথাও কোথাও যে কৃত্রিম পদ্ধতিতে প্রজেক্ট আকারে পরিবেশকে সবুজশ্যামল ও পানিযুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে, উপরোক্ত হাদিসের ইংগীত সম্ভবতঃ ওগুলোই। কিন্তু আজ প্রকৃতিবিদদের অনেকেই তাদের গবেষনা ব্যাক্ত করে আসছেন যে, প্রকৃতিগত ও কৃত্রিম উভয়বিদ বিভিন্ন কারণে বিশ্ব জলবায়ু ও পরিবেশ ধিরে ধিরে পরিবর্তিত হয়ে তার শিক্ততা সহ আরব জাহানের দিকে ধেয়ে আসছে। এরই মধ্যে আরবের বিভিন্ন স্থান থেকে পানির নহর বেরিয়ে আসছে এবং আরবকে ছয়লাব করে দিয়েছে। ২০১৮ ইং সালের জানুয়ারী থেকে অক্টোবরের মধ্যেই-তো আরব বিশ্বে বরফ পড়ার ঘটনা ঘটে গেল; বৃষ্টির সাথে সাথে বড় বড় হাসের ডিমের সমান বরফের দলা পড়ে গাড়ি বাড়ির বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। আরবের পরিবেশ পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। ইনশাআল্লাহা নিকট ভবিষ্যতে মানুষ বিশ্বনবী রাসুলুল্লাহ সা.-এর এই ভবিষ্যতবাণীটি পূর্ণ হতে দেখবে।

# হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- صِنفان من أهل النار لم أرهما: قومٌ معهم سياط كأذناب البقر يضربون بها الناس، ونساء كاسيات عاريات، مميلات مائلات، رؤوسهن كأسنمة البخت المائلة، لا يدخُلْن الجنة، ولا يجدن ريحها، وإن ريحها ليوجد من مسيرة كذا وكذا. رواه مسلم في كتاب اللباس والزينة، باب النساء الكاسيات العاريات المائلات المميلات ٣/١٦٨٠ رقم ٢١٢٨ – ‘দোযখবাসীদের মধ্যে এমন দুটি গোষ্ঠি হবে, যাদেরকে আমি (আমার এই জামানায় এখনও) দেখিনি। একটি গোষ্ঠি (হল তারা, যাদে)র কাছে গরুর লেজের মতো চাবুক থাকবে, তারা তা দিয়ে মানুষকে মাড়বে। (আরেকটি গোষ্ঠি হল ওইসমস্ত) নারী, (যারা) পোশাক পড়েও উলঙ্গ থাকবে, (ওরা হবে পুরুষদেরকে নিজেদের কণ্ঠ-ভাষাশৈলী, রূপ-লাবন্য ও সৌন্দর্যের দিকে) আকৃষ্টকারিনী (আবার নিজেরাও হবে) অন্য (পুরুষ)দের প্রতি আকৃষ্ট (মেন্টালিটির নারী), তাদের মাথাগুলোর উপরে বুখতী উটের কুঁজের মতো তির্যক (খোপা ও সাজসজ্জা থাকবে)। তাদের উভয়ের কেউই জান্নাতে যাবে না, যদিও জান্নাতের বাতাস অনেক অনেক দূর থেকে পাওয়া যাবে’। [সহিহ মুসলিম- ৩/১৬৮০, হাদিস ২১২৮]

ফায়দা: হাসিসোক্ত এই দল দুটি অবশ্যই রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর উম্মাহ’র মধ্যে থেকে হবে, কারণ এখানে বলা হয়েছে যে, তারা বেহেশতের গন্ধও পাবে না। দল দুটি অমুসলীম কাফেরদের কেউ হলে-তো বেহেশতের কথাই এখানে আসতো না, কারণ তাদের জন্য বেহেশত হারাম।

গরুর লেজের মতো বেত চাবুক

আবু উমামাহ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ স. এরশাদ করেছেন- يَكُونُ فِي هَذِهِ الأُمَّةِ فِي آخِرِ الزَّمَانِ رِجَالٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَنَّهَا أَذْنَابُ الْبَقَرِ , يَغْدُونَ فِي سَخَطِ اللَّهِ , وَيَرُوحُونَ فِي غَضَبِهِ . رواه أحمد: ٥/٢٥٠ و قال الهيثمي: ٥/٢٣٤: رجال أحمد ثقات ; و الحاكم: ٤/٤٣٦ و قال: “صحيح الإسناد ولم يخرجاه، و وافقه الذهبي في تلخيصه ; و ابن الأعرابي في معجمه: ١/٢١٣; و الطبراني في ” الكبير: ٨/٣٠٨ رقم ٨٠٠٠ ; و الداني في السنن: رقم ٤٣٤; ذكره الالبانى في السلسلة الصحيحة: ٤/٥١٧ رقم ١٨٩٣ – ‘শেষ জামানায় এই উম্মতের মধ্যে এমন লোকজন হবে যাদের হাতে (মানুষকে পিটানোর জন্য) গরুর লেজের মতো বেত/চাবুক থাকবে। তারা সকালেও আল্লাহ’র চরম অসন্তুষ্টির মধ্যে থাকবে, সন্ধাতেও থাকবে আল্লাহ’র গজব/ক্রধের মধ্যে’। [মুসনাদে আহমদ- ৫/২৫০; মুসতাদরাকে হাকিম- ৪/৪৩৬; মু’জামে ইবনুল আরাবী- ১/২১৩; আল-মু’জামুল কাবীর, ত্বাবরাণী- ৮/৩০৮ হাদিস ৮০০০; আস-সুন্নাহ, ইমাম দানী, হাদিস ৪৩৪]

এখানে, গরুর লেজের মতো বেত/চাবুক দিয়ে যারা মানুষজনকে মারবে, তারা এই তিনটি গোষ্ঠির যে কারো অন্তর্ভূক্ত হতে পারে: (১) সরকারী Enforcement Agencies -এর সদস্য, যেমন: পুলিশ/সৈন্য’দের কোনো গোষ্ঠি, অথবা (২) ক্ষমতাসীনদের পোষা বা ভাড়াটে মাস্তান/গুন্ডা’দের কোনো গোষ্ঠি, কিংবা (৩) সাধারণ মাস্তান/গুন্ডা/ উগ্র গোষ্ঠি (যেমনটা আপনারা পাড়া-মহল্লা কিংবা কলেজ-ভার্সিটির পড়ুয়া কিছু কুলাঙ্গার সন্ত্রাসী ছাত্রদেরকে দেখে থাকেন, যারা হকি, খড়ি, রাম-দা, বেল্ট ইত্যাদি দিয়ে প্রতিপক্ষকে পিটায়/চোটায়)। আমার মতে হাদিসের ইংগীত এদের মতো অত্যাচারকারীদের দিকে হতে পারে, যারা সেখানকার অসহায় মুসলমানদেরকে দিন-রাত উঠতে বসতে এজাতীয় চাবুক দিয়ে পিটাইয়ের উপরে রাখে।

আর نساء كاسيات عاريات – ‘(ওইসমস্ত) নারী, (যারা) পোশাক পড়েও উলঙ্গ থাকব’ -এর মধ্যে عاريات- (উলঙ্গ)’ -বলতে বুঝানো হতে পারে- (১) নারীর শরীরের যে অংশগুলোকে প্রাপ্তবয়ষ্ক পুরুষদের থেকে যথাযথ পর্দা করে ঢেকে রাখা শরীয়তে ফরয, সেগুলোর উপর হিজাব/বোরকা ইথ্যাদি জাতীয় পর্দা থাকলেও তার পর্দার মূল উদ্দেশ্য পূরণ না হওয়া, বরং ওগুলোর ভাঁজ ও আকার-আকৃতি প্রকাশ পাওয়া, (যেমনটা আজকাল অনেক নামাজী পর্দাকারী নারীদেরকে দেখা যায়) (২) শরয়ী পর্দার বালাই নাই এমন বেপর্দার নারীদের নির্লজ্জ পোষাক, (যেমনটা আজকালকার শাড়ি, সেলাওয়ার-কামিস, শাট ও জিন্স-প্যান্ট পড়ুয়া নারীদেরকে দেখা যায়), (৩) খাটো পোশাক পরিধানকারী নারী (যেমনটা আজকাল বিভিন্ন দেশে মিনি স্কার্ট, হাফ-প্যান্ট ও টি-শার্ট ইত্যাদি পরিধানকারী নারীদেরকে দেখা যায়), (৩) একদম উলঙ্গ তবে শুধু কোনো শুধু লজ্জাস্থানটুকু ঢাকা।

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   বিবাহ ম্যারেজ বিষয়ক আয়াত

বুখতী উট খোঁপা মহিলা পর্দা

আর رؤوسهن كأسنمة البخت المائلة – (তাদের মাথাগুলো হবে বুখতী উটের কুঁজের মতো তির্যক)’ – এর দ্বারা সম্মাভবত: ‘উটের কুঁচের মতো তির্যক খোঁপা’ বোঝানো হয়েছে -চাই খোঁপাটি কাপড়ে ঢাকা থাক বা না-থাক। ইমাম নববী রহ. লিখেছেন যে, এর অর্থ- يعظمن رؤوسهن بالخمر والعمائم وغيرها مما يلف على الرأس حتى تشبه أسنمة الابل البخت هذا هو المشهور فى تفسيره قال المازرى ويجوز أن يكون معناه يطمحن إلى الرجال ولا يغضضن عنهم ولا ينكسن رؤوسهن – তারা তাদের মাথার উপরে ওড়না, পাগড়ী প্রভৃতি দিয়ে সেটাকে বড় করে (সাজিয়ে) তুলবে, এমনকি তা দেখে মনে হবে যেন ‘বুখতী উটের কুঁজ’। এর ব্যাখ্যায় একথাটিই প্রসিদ্ধ। তবে মাযিরী রহ. বলেছেন, এর অর্থ এও হতে পারে যে, তারা পুরুষদের মতো হতে চাইবে, পুরুষদের থেকে মাথা ঢেকে রাখবে না, মাথা রাখবে খোলা। [শারহু মুসলীম, নববী- ১৪/১১০]

বুখতী উট খোঁপা মহিলা পর্দা

আর مميلات (আকৃষ্টকারিনী)– বলতে এমন নারী উদ্দেশ্য, যাদের স্বেচ্ছায় প্রদর্শিত লাবন্য, রূপ-সৌন্দর্য, কথা বলার মিষ্টি ভঙ্গি, আকর্ষনীয় কন্ঠস্বর, পোশাক-আসাক পরিধানের স্টাইল ইত্যাদি একজন স্বাভাবিক সুস্থ্য পুরুষ মানুষকে আকৃষ্ট করে, আগ্রহী করে তোলে কিংবা নাজায়েয ফিতনা’য় ফেলে ইমান নষ্ট করে দেয়। আর مائلات-(অন্যের প্রতি আকৃষ্ট) – বলতে এমন নারী উদ্দেশ্য নয় যারা শরীয়াহ যথাযথভাবে মেনে চলে কিন্তু মাঝে মধ্যে হঠাৎ হঠাৎ নফসানী ও শয়তানী ধোকায় পড়ে অন্য পুরুষের প্রতি নাজায়েয ভাবে আকৃষ্ট হয়। বরং এখানে এমন নারী উদ্দেশ্য যারা বাস্তব জীবনে শরীয়তের পবিত্র পর্দাব্যাবস্থা পালন করার দ্বীনী চেতনাগত গুরুত্ব হারিয়ে ফেলেছে এবং পুরুষ-ঘ্যাঁষা বেপর্দা পরিবেশ ও সংশ্রব তাদের স্বভাব-চরিত্রে খাপ খেয়ে নিয়েছে -(চাই তার উপলব্ধিজ্ঞান থাকুক চাই না থাকুক)। এদের কাছে না-মাহরাম পুরুষদের সাথে যত্রতত্র ওঠা-বসা, হাসি-ঠাট্টা, ঘোরা-ফেরা, সময় কাটানো বা আড্ডা দেয়া, প্রেম-প্রীতি করে বেড়ানো স্বভাববিক বিষয়। যেমন: বিউটি কটটেষ্ট (সুন্দরী প্রতিযোগীতা)য় অংশগ্রহনকারী নারীরা, স্টাইলী পোশাকের এ্যাড কারী নারীরা, রাস্তাঘাটে বাজার বা মার্কেটে পর-পুরুষকে নিজেদের সৌন্দর্যের দিকে আকৃষ্টকারী নারীরা -চাই (তথাকথিত) বোরকা পড়েই এসব করুক বা বোরকা ছাড়াই। এর ক্রমধারায় যারা এর চেয়েও আরো চারিত্রিক অধঃপতনের দিকে পা বাড়িয়েছে, তারা যে এর মধ্যে আরো বেশি অন্তর্ভূক্ত -তা বলাই বাহুল্য। আমার মতে রাসুলুল্লাহ ﷺ -এর উপরোক্ত ভবিষ্যৎবাণী আমাদের এই জামানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। الله اعلم بالصواب

# হযরত আবু হুরায়রাহ রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- تكون إبل للشياطين وبيوت للشياطين فأما إبل الشياطين فقد رأيتها يخرج أحدكم بجنيبات معه قد أسمنها فلا يعلو بعيرا منها ويمر بأخيه قد انقطع به فلا يحمله وأما بيوت الشياطين فلم أرها كان سعيد يقول لا أراها إلا هذه الأقفاص التي يستر الناس بالديباج – رواه أبو داود في سننه, كتاب الجهاد, باب في الجنائب, رقم ٢٥٦٨ ;عون المعبود: ٧/٢٣٦؛ وقال عنه العدوي : صحيح, “الصحيح المسند: ٤٠٥ – ‘শয়তানদের জন্য উট আছে, শয়তানদের জন্য কিছু ঘরও আছে’। শয়তানদের জন্য উট হল -বস্তুতঃ আমি সেটাকে (আমার জামানাতেই) দেখেছি; তোমাদের কেউ (ঘর থেকে) আরোহিবিহীন উটসমূহকে সাথে নিয়ে বের হয়, (লতাপাতা খাইয়ে) সেটাকে রিস্টপুষ্ট বানায়, কিন্তু ওগুলোর মধ্যে কোনোটাতেও সে নিজে চড়ে না, তার না (তার কোনো দ্বীনী) ভাইকে (চড়তে) দেয়। (বরং সে সর্বোক্ষন) ওটাকে ওভাবেই রাখে, তারপরও ওটার উপর (কারো) বোঝা চাপায় না। আর শয়তানের ঘরসমূহ সম্পর্কে কথা হল -আমি (আমার জামানায় সেগুলোকে এখনো পর্যন্ত) দেখিনি’। (বর্ণনাকারী) সাঈদ বলেছেন: আমিও (আমার এ জামানায়) তা দেখিনি, তবে (যা) দেখেছি (সেটা হল), এইসব খাঁচা যা ‘দিবাজ’ (রেশমী কাপড়ের এক প্রকার চাদর) দিয়ে মানুষকে পর্দা করা হয়। [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ২৫৬৮]

ফায়দা: এখানে বর্ণনাকারী সাঈদ হলেন বিশিষ্ট তাবেয়ী সাঈদ বিন আবি হিন্দ রহ.। তিনি বলেছেন যে, হাদিসে বর্ণিত শয়তানদের ঘরগুলিকে তিনি তাঁর যুগেও কোথাও দেখেন নি, তবে ধারনা করেছেন যে, তাঁর যুগে ব্যবহৃত বাহনের আসন الأقفاص (আকফাস) -যা الديباج (দিবাজ) দিয়ে ঘেরাও করে ছোট ঘরের মতো করে স্থাপন করা হত -সেটা শয়তানদের উল্লেখীত ঘরগুলোর একটি হতে পারে। الديباج (দিবাজ)-এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, এটি রেশমের তৈরী এক প্রকার কাপড়। আর الأقفاص (আকফাস) -এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, এটি উটের পিঠে নারীদের বসার জন্য চতুর্দিকে পর্দা দিয়ে ঘেরাও করা যে الهوادج (হাওদায) ব্যবহৃত হত ওরকম একটি আসন, যা ধ্বনিক শ্রেণির লোকেরা বিভিন্ন সফর কালে ব্যবহার করতো। বাহনের এসব ঘর মূল্যবান রেশমী কাপড় ইত্যাদি দিয়ে সাজানো থাকতো। বলা বাহুল্য, এখানে বাহনের সিট-স্বরূপ ঘরটি মূল উদ্দেশ্য নয়, বরং উদ্দেশ্য হল ঘরটিকে রেশমী কাপড় ইত্যাদি মূলবান জিনিস দিয়ে সাজানোর পিছনে অপচয়, এসবে চড়ে নিজকে সমাজের চোখে অভিজাত শ্রেণি হিসেবে প্রকাশ করা, অহংকার করা ইত্যাদি উদ্দেশ্য। [আউনুল মা’বুদ- -৭/২৩৬, মিরকাত] সম্ভবত: এদিকটি মাথায় রেখে শায়েখ নাসিরুদ্দিন আলবানী রহ. সহ অনেকে মত প্রকাশ করেছেন যে, হাদিসটিতে বর্ণিত শয়তানদের ঘরসমূহের মধ্যে একটি ঘর হতে পারে এযুগের ওই সকল গাড়ি, যা গাড়ির মালিকরা অহংকার ও বড়লোকি ভাব বা ফুটানী দেখানোর জন্য কিনে থাকে।

তবে আমার মতে হাদিসের ইশারা এমন ঘরের দিকেও হতে পারে যা, উপরে আবু হুরায়রাহ রা. থেকে ‘মারাহেল (নকশী কাঁথার) সাজে সজ্জিত ঘর’ -এর সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে, যেমনটা আজকাল উম্মাহ’র অপচয়কারী মহল বিভিন্ন দেশে বাড়ি বা বাংলো কিনে থাকে এবং তার ঘরগুলিকে বিভিন্ন সাজসজ্জা দিয়ে সুন্দর থেকে সুন্দরতর করে সাজানোর ব্যাবস্থা করে থাকে। অথচ, এসব ঘর-বাড়ির অবস্থা এই যে, তাতে বসবাস করার মানুষ নেই; কেয়ারটেকার রেখে ওসবের দেখাশোনা করা হয়; হয়-তো বছরে কখনো সে স্থানে বেড়াতে গেলে কয়েক দিন থেকে আবার তা লোকজন শুন্য ও পরিত্যাক্ত অবস্থায় কেয়ারটেকারের তত্বাবধানে রয়ে যায়। الله اعلم بالصواب

# আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- سَيَكُونُ فِي آخِرِ أُمَّتِي رِجَالٌ يَرْكَبُونَ عَلَى السُّرُوجِ ، كَأَشْبَاهِ الرّحالِ يَنْزِلُونَ عَلَى أَبْوَابِ الْمَسْجِدِ ، نِسَاؤُهُمْ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ ، عَلَى رُءُوسِهِمْ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْعِجَافِ ، الْعَنُوهُنَّ ، فَإِنَّهُنَّ مَلْعُونَاتٌ . أخرجه احمد فى المسند: رقم ٧٠٨٣ و قال احمد شاكر:٦/٤٩٠ اسناده صحيح , و ابن حبان في صحيحه: رقم ١٤٥٤; و الطبراني في ” الصغير: رقم ٢٣٢; و الأوسط: رقم ٩٤٨٥; و صححه الألباني في السلسلة الصحيحة: رقم ٢٦٨٣ – ‘আমার আখেরী উম্মতের মধ্যে এমন লোকজন হবে, যারা (উটের পিঠে বসার) রেহাল সদৃশ জিনের (সিট-এর) উপর আরোহন করে মসজিদের দরজাসমূহে গিয়ে উপনীত হবে। তাদের স্ত্রীরা/নারীরা কাপড় পড়েও (যেন) উলঙ্গ থাকবে, তাদের মাথাগুলোর উপরে বুখতী উটের কুঁজের মতো তির্যক (খোপা ও সাজসজ্জা থাকবে)। তোমরা তাদের লা’নত করো, কারণ তারা লা’নত পাওয়ার যোগ্য। [মুসনাদে আহমদ- ৬/৪৯, হাদিস ৭০৮৩; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস ১৪৫৪; মু’জামুস সগীর, ত্বাবরাণী ২৩২; মু’জামুল আউসাত, ত্বাবরাণী ৯৪৮৫]
السُّرُوجِ كَأَشْبَاهِ الرّحالِ বাহন السيارات (গাড়ি)
ফায়দা: আরবী শব্দ سَرْجُ -অর্থ হল জিন (saddle), যা উট, ঘোড়া বা গাধার পিঠে সিট হিসেবে সাজিয়ে তার উপর মানুষ বসে। سَرْجُ এর বহুবচন হল سُرُوج । আর আরবী শব্দ رحل (রাহল) এর বহুবচন হল رحال (রিহাল) , আর رحل -এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, এর দ্বারা এমন জিন (saddle) উদ্দেশ্য, যা উটের পিঠে আসন হিসেবে সাজিয়ে তার উপর মানুষ বসে। হাদিসটিতে السُّرُوجِ كَأَشْبَاهِ الرّحالِ –(অনেকটা রেহাল সদৃশ জিন/সিট)– বলা হয়েছে, যা থেকে বোঝা যাচ্ছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ- এর যুগে ওরকম বাহন বিদ্যমান ছিল না, এজন্য তিনি তাঁর জামানার বাহনের رحال (রিহাল)-কে উদাহরণ হিসেবে টেনে আখেরী জামানার বাহনের رحال (রিহাল)-কে সাহাবীগণের সামনে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন।

এযুগের অনেক গবেষক আলেম বলেছেন, এই হাদিসে আধুনিক কালের বাহন السيارات (গাড়ি)-র দিকে ইশারা করা হয়েছে। অামার আনিজেরও অভিজ্ঞতা আছে, তাছাড়া দেশ-বিদেশের বহু মুসলমান তাদের অভিজ্ঞতা ব্যাক্ত করেছেন যে, এমন বেশ কিছু ধ্বনিক শ্রেণির মুসলমি পুরুষদের দেখা যায়, তারা বিশেষ করে জুমআর দিন গাড়ি করে মসজিদে নামাযে শরিক হতে যায়, যাদের অনেকেই ৫ ওয়াক্ত নামায পড়ে না, পড়লেও বাড়িতে পড়ে নেয়, কিংবা শুধু জুমআ ও দুই ঈদের জামাআতে নামাজে শরিক হয়। এদের বেশিরভাগের স্ত্রী, মেয়ে, বোন, নাতনি, বা নিকতাত্বীয়া’দের মাঝে শরয়ী পর্দা সম্পর্কে কুরআন-সুন্নাহ’র কমপক্ষে ফরয হিযাব পালন করা-তো অনেক দূরের, খোদ নাম-কা-ওয়াস্তে শালিন পোষাক সহ মাথায় কাপড় দেয়ার যে রেওয়াজটুকু কয়েক দশক আগে কোনো রকম বেঁচে ছিল, তা আজ তাদের মাঝে শুধু মড়েই যায়নি, বরং তা আজ অনেক ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। এদের নারীদের মধ্যে অনেকেই শরয়ী পর্দাকে দেশ ও নারী-উন্নয়নের (!) পথে বাঁধা হিসেবে আক্বিদা পেষন করে এবং বাস্তব জীবনে যেভাবে শাড়ি, সেলাওয়ার-কামিস বা শার্ট-প্যান্ট পড়ে মার্কেটে পথে ঘাটে ঘুড়ে বেড়ায়, তাতে মনে হয় -তারা শালীনতার মাথা খেয়ে ফেলেছে। এদের অনেকে নাইট-ক্লাব, ডান্সপার্টি, মদের অসোর, এমনকি যৌনচর্চার সাথে সম্পর্ক রাখে। আমার মতে, উপরোক্ত হাদিসের ভবিষ্যৎ বাণী আমাদের এই জামানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। الله اعلم بالصواب

# হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- كَيْفَ أَنْتُمْ إِذَا هَدَمْتُمَ الْبَيْتَ ، فَلَمْ تَدَعُوا حَجَرًا عَلَى حَجَرٍ ، قَالُوا : وَنَحْنُ عَلَى الإِسْلاَم ؟ قَالَ : وَأَنْتُمْ عَلَى الإِسْلاَم ، قلت : ثُمَّ مَاذَا ؟ قَالَ : ثُمَّ يُبْنَى أَحْسَنَ مَا كَانَ ، فَإِذَا رَأَيْت مَكَّةَ قَدْ بُعجَتْ كَظَائِمَ , وَرَأَيْت الْبِنَاءَ يَعْلُو رُؤُوسَ الْجِبَالِ فَاعْلَمْ ، أَنَّ الأَمْرَ قَدْ أَظَلَّك. أخرجه ابن أبي شيبة في المصنف : رقم ١٤٣٠٦ و ٣٨٣٨٧; قال محمد عوامة: و الاسناد حسن : ٨/٣٨٢ – ‘তখন তোমাদের কেমন অবস্থা হবে, যখন তোমরা (আল্লাহ’র) ঘর’কে ভেঙ্গে ফেলবে পরে পাথরের উপর পাথর স্থাপন করতে দিবে না। লোকেরা জিজ্ঞেস করলো: (তখন) আমারা (মুসলমানরা) কি ইসলামের উপর থাকবো? তিনি বললেন: হ্যা, তোমরা ইসলামের উপর থাকবে। আমরা জিজ্ঞেস করলাম: তারপর কি হবে? তিনি বললেন: তারপর সেটাকে যে রকম ছিল তার চেয়ে সুন্দর করে বানানো হবে। এরপর যখন মক্কাকে দেখবে যে, (ভূ-গর্ভ, পাহাড় ইত্যাদি) খোদাই করে সুরংপথ বানানো হয়েছে এবং (যখন) দেখবে ইমারতটি পাহাড়সমূহের চুড়ার উপরে উঠে গেছে, তখন জেনে নিও যে, (কেয়ামত কায়েমের) নির্দেশ (এত নিকটতর হয়ে গেছে যে, সেটা যেন) তোমাকে ছাঁয়া দিচ্ছে’। [আল-মুসান্নাফ, ইবনু আবি শায়বাহ- ৮/৩৮২, হাদিস ১৪৩০৬, ৩৮৩৮৭]

ফায়দা: ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেছেন যে, যদিও এই রেওয়ায়েতটি হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর রা.-এর বাণী হিসেবে বর্ণিত, কিন্তু এজাতীয় ভবিষ্যতবাণীর ক্ষেত্রে (রাসুলুল্লাহ সা.-এর কাছে না শুনে) তিনি নিছক নিজ থেকে অনুমান বা ধারনা করে বলতে পানেন না। [ফাতহুল বারী- ৩/৫০৭] ইবনে হাজারের কথা একদম সঠিক। এটা মূলত: রাসুলুল্লাহ সা.-এর কাছ থেকে শোনা একটি ভবিষ্যতবাণী যা তিনি রাসুলুল্লাহ সা-এর নাম উল্লেখ না করে নিজ ভাষায় বিষয়টি জানিয়ে গেছেন। ্এবং আমার মতে এই হাদিসে বর্ণিত সকল ভবিষ্যত বাণী আমাদের এজামানায় পূর্ণ হয়ে গেছে।

এখানে যে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ’র ঘর ভেঙ্গে ফেলা হবে, এর অর্থ মূল ক্বাবা ঘরটি গুড়িয়ে দেয়া নয়, বরং আশে পাশের বায়তুল হারামের অংশগুলোকে ভাঙ্গা-গড়া বোঝানো হয়েছে। একটি রেওয়াতে এসেছে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর রা. বলেছেন- إذَا رَأَيْتُمْ قُرَيْشًا قَدْ هَدَمُوا الْبَيْتَ ، ثُمَّ بَنُوهُ فَزَوَّقُوهُ ، فَإِنَ اسْتَطَعْتَ أَنْ تَمُوتَ فَمُتْ – ‘যখন তোমরা দেখবে যে, কুরায়শ’রা (আল্লাহ’র) ঘর’কে ভেঙ্গে ফেলছে, পরে আবার নির্মান করছে এবং সৌন্দযমন্ডিত করে তুলছে, তখন (যে ফিতনা দেখা দিবে, তাতে তোমাদের জন্য এটাই ভাল যে,) তোমাদের যদি (আল্লাহ’র পথে) মড়া সম্ভব হয়, তবে মড়ে যেও’। [আল-মুসান্নাফ, ইবনু আবি শায়বাহ- ৩/৬৯৮, হাদিস ১৪৩০৫]

আমরা-তো কেউ রাসুলুল্লাহ সা.-এর জামানার ক্বাবা শরিফ ও বায়তুল হারামকে দেখিনি যে তা কী অবস্থায় বিদ্যমান ছিল। কমপক্ষে ১৯৪০ ইং সালের পর থেকে আল্লাহ ঘরকে ভেঙ্গে সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্যমন্ডিত করার যে ধারা সৌদি সরকার শুরু করেছে এবং ২০২০ ইং বা তার পরবর্তীতে বায়তুল্লাহ’র যে রূপ দান করার আভাস আমরা জানতে পাচ্ছি তাতে অবস্থা মাথা খারাপ হওয়ার মতো। যদি তা বাস্তবায়িত হয়, তাহলে রয়েল ক্লোক টাওয়ার- এর উপর থেকে তাকালে হয়-তো তা বায়তুল্লাহ মনে না হয়ে একটি চোখ ধাঁধানো স্টেডিয়াম মনে হবে। (আল্লাহ’র পানাহ)

এই রেওয়ায়েতের আরেকটি বিষয় হল, পাথরের উপর পাথর স্থাপন না হওয়া। এর দ্বারা সম্ভবতঃ নিরেট পাথরের পাথুনি নির্মিত ভিত্তি, পিলার বা দেয়ালের প্রচলন বিলুপ্ত হয়ে তদস্থলে আধুনিক স্টিল, রড সিমেন্ট ইত্যাদির ব্যবহারের দিকে ইশারা করা হয়েছে।

মক্কার টানেল কেয়ামতের আলামত মহানবী সা.-এর ভবিষ্যতবাণী

হাদিসটিতে বলা হয়েছে: فَإِذَا رَأَيْت مَكَّةَ قَدْ بُعجَتْ كَظَائِمَ – (এরপর যখন মক্কাকে দেখবে যে, (ভূ-গর্ভ, পাহাড় ইত্যাদি) খোদাই করে সুরংপথ বানানো হয়েছে)। এখানে আরবী শব্দ بُعجَتْ-এর মূল ক্রিয়া হল بَعَج যার একটি অর্থ হল- কিছু খুঁরে ছিদ্র/গর্ত করা বা ফুটো তৈরী করা। আর আরবী শব্দ كَظَائِم হল كَظَامة -এর বহুবচন। এর একটি অর্থ القناة– অর্থাৎ চোঙা, প্রণালী, পিপা, ভূগর্ভস্থ গোলাকার সরু পথ ইত্যাদি। আন-নিহায়া’য় বলা হয়েছে: كَظَائِم – آبار تحفر فى الارض متناسقة , و يخرق بعضها الى بعض تحت الارض, فتجتمع مياهها جارية ثم تخرج عند منتهاها فتسيح على وجه الارض –অর্থাৎ كَظَائِم হল ভূমি খুঁরে বানানো -দুই দিকে যোগসূত্রওয়ালা- এক প্রকার কূপ (কুয়া/ইন্দারা সদৃশ গর্তপথ), যা ভূমির নিচে একদিক থেকে নিয়ে আরেক দিক পর্যন্ত সুরং করে বানানো হয়ে থাকে। সেখানে (এক দিক দিয়ে) প্রবাহিত পানি এসে একত্রিত হয়, এরপর অন্য দিক দিয়ে তা অদূরে চলে গিয়ে (অপর গর্তমুখ দিয়ে বেড় হয়ে) জমিনের বুকে ছড়িয়ে পড়ে। [বিস্তারিত: আন-নিহায়া- ৪/১৭৮; তাজুল উরুস মিন জাওয়াহিরিল কামুস-৩৩/৩৬৩; লিসানুল আরাব-১২/৫১৯]

মক্কা টানেল makkah tunnels

এই ভবিষ্যতবাণীটি আজ আমাদের এই শেষ জামানার মক্কায় অক্ষরে অক্ষরে পূরণ হয়ে গেছে। বহু বিশেষজ্ঞ আলেমগণের মতে হাদিসের قَدْ بُعجَتْ كَظَائِمَ – (খোদাই করে সুরংপথ বানানো হয়েছে)- বলতে অত্যাধুনিক টেকনোলজি ব্যবহার করে মক্কার পাহাড় খোঁদাই করে করে যেসকল টানেল বা রাস্তাপথ বানানো হয়েছে ও হচ্ছে -দিকেই ইশারা করা হয়েছে। এর সাথে সাথে মক্কায় যে সকল আন্ডারগ্রাউন্ড পথ বা মার্কেট ইত্যাদি বানানো হয়েছে, হচ্ছে বা হবে -সেগুলোও এর অন্তুর্ভূক্ত হতে পারে। الله اعلم

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   আল্লাহ বিষয়ক আয়াত

এরপর হাদিসটিতে বলা হয়েছে- وَرَأَيْت الْبِنَاءَ يَعْلُو رُؤُوسَ الْجِبَالِ -‘আর (যখন) দেখবে ইমারতটি পাহাড়সমূহের চুড়ার উপরে উঠে গেছে) – এখানে الْبِنَاءَ একবচন এবংبناء-র সাথে ال (টি/The) যুক্ত হয়ে ইশারা করা হচ্ছে একটি বিশেষ ইমারতের দিকে, যে ইমারতটি মক্কায় যতগুলো পাহাড় শেষ জামানায় থাকবে তাদের সবগুলোর চুড়াকে পিছে ফেলে ওই বিশেষ ইমারতটি মাথা উঁচু করে মক্কায় দাড়িয়ে থাকবে। আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, মক্কার ১২০ তলা বিশিষ্ট ‘রয়েল ক্লোক টাওয়ার’ এই ভবিষ্যত বাণীটিকে অক্ষরে অক্ষরে পূরণ করে দিলো।

‘রয়েল ক্লোক টাওয়ার’-এর উচ্চতা ১৯৭২ ফুট বা ৬০১ মিটার, যা পৃথিবীর ৩য় উঁচুতর টাওয়ারের মর্যাদা লাভ করেছে। এটি মক্কার বায়তুল হারামের দক্ষিন দিকস্থ গেটের কাছাকাছি অবস্থিত ‘আবরাজ-আল-বাইত কমপ্লেক্স’-এর ৭টি টাওয়ারের একটি। এ টাওয়ারের মধ্যে বসানো হয়েছে ৪৩ মিটার ডায়াল বিশিষ্ট পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কাটা-ঘড়ি, যা প্রায় ১৭ কি:মি: দূরত্ব থেকেও সময় গণনা করা যায়। চতুর্মুখী ঘড়িটির এক মুখে লাগানো হয়েছে ৯ কোটি ৮০ লক্ষ পিস গ্লাস মোজাইক। প্রতিটি মুখে লেখা আছে -‘আল্লাহু আকবার’ যা ২১০০০ রঙ্গিন বিজলী বাতি দ্বারা আলোকপ্রাপ্ত হয়। এর পিছনে ব্যয় হয়েছে ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার। এর মধ্যে রয়েছে শপিং মল, হোটেল, কনফারেন্স রূম, প্রায় ১০ হাজার লোকের নামায আদায় করার মতো স্থান, চাঁদ পর্যবেক্ষন কেন্দ্র ইত্যাদি। ২০০৪ ইং সালে এই টাওয়ারের নির্মান কাজ আরম্ভ হয় এবং ২০১১ ইং সালে পূর্ণতা লাভ করে। হাদিসের وَرَأَيْت الْبِنَاءَ -‘আর (যখন) দেখবে ইমারতটি…. – যে একটি বিশেষ ইমারতের কথা বলা হয়েছে, তা আমার মতে ‘রয়েল ক্লোক টাওয়ার’ই উদ্দেশ্য। الله اعلم بالصواب

# হযরত আবু হুরায়রাহ রা. থেকে সহিহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে , তিনি বর্ণনা করেন- جَاءَ ذِئْبٌ إِلَى رَاعِي غَنَمٍ فَأَخَذَ مِنْهَا شَاةً ، فَطَلَبَهُ الرَّاعِي حَتَّى انْتَزَعَهَا مِنْهُ ، قَالَ : فَصَعِدَ الذِّئْبُ عَلَى تَلٍّ ، فَأَقْعَى وَاسْتَذْفَرَ ، وَقَالَ : عَمَدْتَ إِلَى رِزْقٍ رَزَقَنِيهِ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ انْتَزَعْتَهُ مِنِّي . فَقَالَ الرَّجُلُ : تَالَلَّهِ إِنْ رَأَيْتُ كَالْيَوْمِ ذِئْبًا يَتَكَلَّمُ ! فقَالَ الذِّئْبُ : أَعْجَبُ مِنْ هَذَا رَجُلٌ فِي النَّخَلَاتِ بَيْنَ الْحَرَّتَيْنِ ، يُخْبِرُكُمْ بِمَا مَضَى وَبِمَا هُوَ كَائِنٌ بَعْدَكُمْ ، وَكَانَ الرَّجُلُ يَهُودِيًّا ، فَجَاءَ الرَّجُلُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَسْلَمَ وَخَبَّرَهُ ، وصَدَّقَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، ثُمَّ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” إِنَّهَا أَمَارَةٌ مِنْ أَمَارَاتٍ بَيْنَ يَدَيْ السَّاعَةِ ، قَدْ أَوْشَكَ الرَّجُلُ أَنْ يَخْرُجَ فَلَا يَرْجِعَ حَتَّى تُحَدِّثَهُ نَعْلَاهُ وَسَوْطُهُ مَا أَحْدَثَ أَهْلُهُ بَعْدَهُ . رواه أحمد في المسند: ٢/٣٠٦ وقال الشيخ أحمد شاكر : اسناده صحيح – ‘(একবার) একটি নেকড়ে এক রাখালের ভেড়ার-পালের কাছে এসে সেখান থেকে একটি ভেড়া ধরে নিয়ে গেল। তখন রাখালটি সেটার খোঁজে বের হলো, এমনকি (খুঁজতে খুঁজতে একসময়) নেকড়ের কাছ থেকে সেটা উদ্ধারও করে আনলো। তখন নেকড়েটি একটি টিলার উপর উঠে উবু হয়ে (রাখালকে উদ্দেশ্য করে) জোরে জোরে বকতে লাগলো। সে বললো: আল্লাহ তাআলা যে বিযক আমাকে দিয়েছিলেন, তুমি সেই রিযেকের কাছে এলে, আর আমার থেকে তা ছিনিয়ে নিলে। এতে সেই ব্যাক্তি বললো: ও আল্লাহ !!! (এ কেমন কথা) আজ যেন আমি এক নেকড়ে’কে কথা বলতে দেখলাম! তখন নেকড়েটি বললো: আমার কাছে এর থেকেও আশ্চর্যকর হল, এক ব্যাক্তি হাররাতাইনের মাঝে অবস্থিত এক খেজুর বাগানে রয়েছেন, যিনি তোমাদের (কিছু মানুষ)কে ঘটনা শুনাচ্ছেন পূর্বে যা ঘটেছে এবং তোমাদের পরে যা ঘটবে (এমন কিছু ঘটনা)। (নেকড়ের সাথে কথোপকথনকারী) সেই লোকটি ছিল একজন ইহূদী। এরপর সে নবী ﷺ -এর কাছে আসলো এবং ইসলাম গ্রহন করলো ও ঘটনাটি শুনালো। নবী ﷺ তার কথার সত্ত্বায়ন করে বললেন: ‘নিশ্চই এটা হল কেয়ামতের পূর্বের লক্ষনসমূহের মধ্যে একটি লক্ষন। সেদিন বেশি দূরে নয়, যখন মানুষ (ঘর) থেকে বেড় হবে, এরপর ততক্ষন পর্যন্ত ফিরে আসবে না, যাবৎ না -তার (ঘর থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার) পর তার পরিবার কী করেছে -তা তার পাদুকা (জুতা/সেন্ডেল) ও তার বেত (Whip) তাকে বলে না দেয়’। [মুসনাদে আহমদ– ২/৩০৬]

স্যান্ডেল Sandal বা জুতা Shoe কেয়ামতের আলামত ও লক্ষনসমূহ মহানবী-ﷺ-এর ভবিষ্যতবাণী

ফায়দা: আরবী শব্দ نَعْل অর্থ স্যান্ডেল (Sandal) বা জুতা (Shoe)। আমি বাংলা অর্থ করেছি ‘পাদুকা’ -যা স্যান্ডেল ও জুতা -উভয় অর্থকেই শামিল করে নেয়।

তবে نَعْل অর্থ স্যান্ডেল নিন বা জুতা নিন -দুই দিক থেকেই এর কথা বলা সম্পর্কিত বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ-এর ভবিষ্যতবাণীটি আমাদের এই অত্যাধুনিক যুগে অক্ষরে অক্ষরে পূরণ হয়ে গেছে। বাম পার্শ্বের ছবিতে দেখছেন Google কোম্পানী কর্তৃক (২০১৩ ইং সালের দিকে) প্রস্তুতকৃত এক অত্যাধুনিক জুতা ও স্যান্ডেল, যা Talking Shoe (টকিং-শু) নামে সমোধিক পরিচিত। এই পাদুকাগুলি ইলেকট্রিনিক্যালি কথা বলে এবং পরিধানকারীকে বিভিন্ন অবস্থা জানিয়ে দেয়। একে কম্পিউটার ও মোবাইল ফোনের সাথে সংযুক্ত করে -এই জুতা পড়ে দুনিয়ার কোথায় কোথায় গেছেন তা -Track করা যায়।

نَعْل অর্থ স্যান্ডেল (Sandal) বা জুতা (Shoe) কেয়ামতের আলামত ও লক্ষনসমূহ – মহানবী ﷺ-এর ভবিষ্যতবাণী আরেকটি সহিহ হাদিসে হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেছেন – وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يُكَلِّمَ السِّبَاعُ الْإِنْسَ وَيُكَلِّمَ الرَّجُلَ عَذَبَةُ سَوْطِهِ وَشِرَاكُ نَعْلِهِ وَيُخْبِرَهُ فَخِذُهُ بِمَا أَحْدَثَ أَهْلُهُ بَعْدَهُ . رواه أحمد في مسنده : ٣/٨٣ رقم ١١٨٠٩ وقال الارناؤوط : رجاله ثقات رجال الصحيح , قال ابن كثير فى البداية والنهاية: وهذا إسناد على شرط الصحيح : ٦/١٥٨, صحيح ابن حبان: ١٤/٤١٨ رقم ٦٤٩٤, قال شعيب الأرنؤوط: إسناده صحيح على شرط مسلم ; و أحمد فى المسند: ٣/٨٣ رقم ١١٨٠٩ ; و الحاكم في المستدرك : ٤/٥١٤ رقم ٨٤٤٢ , وقال صحيح على شرط مسلم ولم يخرجاه ووافقه الذهبي ; والترمذي رقم ٢١٨١ ; و البيهقي في الدلائل: ٦/٤١ رقم ٢٢٨٩; ابن أبي شيبة فى المصنف: ٨/٦٦٤ رقم ٣٧٥٥٥; وحلية الأولياء لأبو نعيم: ٨/٣٧٧ ; مشكل الآثار للطحاوي رقم ٥٤٥٠ ; الطبقات الكبرى لابن سعد: ١/٨٢ رقم ٤٢٤ – ‘ওই সত্ত্বার কসম যার হাতে আমার জীবন, কেয়ামত কায়েম হবে না -যাবৎ না জানোয়ার মানুষের সাথে কথা বলে এবং (যাবৎ না) বেতের থোবা’ ও পাদুকা-বন্ধনী ব্যাক্তির সাথে কথা বলে এবং (যাবৎ না) তার চরু/রান তাকে খবর দেয় তার (বাড়ি থেকে বেড় হয়ে যাওয়ার) পর তার পরিবার কী করেছে। [মুসনাদে আহমদ– ৩/৮৩, হাদিস ১১৮০৯; সহিহ ইবনে হিব্বান-১৪/৪১৮, হাদিস ৬৪৯৪; মুসতাদরাকে হাকিম- ৪/৫১৪, হাদিস ৮৪৪৬; জামে তিরমিযী, হাদিস ২১৮১; আদ-দালায়েলুন নাবুয়াত, বাইহাকী- ৬/৪১, হাদিস ২২৮৯; আল-মুসান্নাফ, ইবনু আবি শায়বাহ- ৮/৬৬৪, হাদিস ৩৭৫৫৫; হিলইয়াতুল আউলিয়াহ, আবু নুআইম- ৮/৩৭৭; শারহু মুশকিলিল আছার, ত্বাহাবী, হাদিস ৫৪৫০; আত-ত্ববাকাত, ইবনে সা’দ- ১/৮৬, হাদিস ৪৬৪]

modern shoes আধুনিক জুতা ও কেয়ামতের আলামত

স্যান্ডেল (Sandal) বা জুতা (Shoe) কেয়ামতের আলামত ও লক্ষনসমূহ – মহানবী ﷺ-এর ভবিষ্যতবাণী
এই হাদিসে শুধু نَعْل (পাদুকা) নয় বরং شِرَاكُ نَعْلِ (পাদুকা-বন্ধনী) কথাটি এসেছে। شِرَاكُ শব্দের অর্থ (পাদুকার ফিতা বা বন্ধনী) যেটাকে ইংরেজীতে বলতে পারেন shoelace বা shoestring। পরের দু’টো ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন, ঠিক জুতার ফিতা বাাঁধার স্থানে অত্যাধুনিক কিছু ইলেক্ট্রনিক সরঞ্জাম সেট করা করেয়েছে এবং তার একটু খানিক উপরে রয়েছে স্পিকার, যার মাধ্যমে জুতা থেকে কথা বেড় হয়। জনাবে মুহাম্মাদ ﷺ যে আল্লাহ তাআলা’র একজন সত্যবাদী নবী ও রাসুল, তা প্রমাণের জন্য এই একটি মাত্র হাদিসই যথেষ্ট।

ভেবে অবাক হতে হয় যে, যেখানে আমরা কারো সামান্য নাম বা কোনো কিছুর ছোট বিবরণ পর্যন্ত ভাল করে মনে রাখতে পারি না, যতটুকু রাখি তাতেও ভুল-ভ্রান্তির শেস নেই, সেখানে আল্লাহ তাআলা তাঁর সর্বশেষ রাসুল প্রিয় নবী মুহাম্মাদ ﷺ-এর হাদিসগুলোকে হিফাজত করে রাখার জন্য এই উম্মাতের মধ্যে এমন এক সম্মানীত মুহাদ্দেসগণের জামাত সৃষ্টি করেছিলেন, যারা হাজার হাজার শুধু নয় লক্ষ লক্ষ হাদিসকে তার বর্ণনাকারীরেদ নাম ও সনদ সহকারে একবার মাত্র শুনেই বছরের পর বছর মস্তিষ্কে মুখস্ত রাখতে পারতেন এবং অন্যের কাছে হুবহু সনদ সহই মুখস্ত বলে দিতে পারতেন। যারা হাদিসের উপর অভিযোগ তুলে বলে থাকে যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর ইন্তেকালের পর দু’শ, তিন’শ এমনকি চার’শ বছর পর সংকলিত ও লিপিবদ্ধকৃত হাদিসগুলোকে কি করে মেনে নেয়া যায় যে, তা রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর বরকতময় বাণী সংকোলন, তারা আজ শুধু তার প্রমাণই পেলেন না, বরং একেবারে অত্যাধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির আলোকে প্রমাণ পেলেন যে, আমাদের সম্মানীত মুহাদ্দেসগণ রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর শুধু نَعْل (পাদুকা) কথাটি স্মরণ রাখেননি বরং شِرَاكُ نَعْلِ (পাদুকা-বন্ধনী) কথাটি পর্যন্ত স্মরণ রেখেছেন ও তাদের কিতাবে সংকোলন করে গেছেন। উপরের দু’টো হাদিসই ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ.-এর হাদিসের বিখ্যাত কিতাব ‘আল-মুসনাদ’-এ সহিহ সনদে সংকলিত রয়েছে, যাঁর জন্ম ১৬৪ হিজরী এবং মৃত্যু ২৪১ হিজরী সালে। উপরে ২য় হাদিসটিতে মুসলাদে আহমদের পাশাপাশি আরো কিছু হাদিসের কিতাবের রেফারেন্স দিয়েছি, যেগুলোর প্রতিটির সংকোলক মুহাদ্দেসেবৃন্দ তাঁদের বর্ণিত ওই একই হাদিসে شِرَاكُ نَعْلِ (পাদুকা-বন্ধনী) কথাটি সহ সংকোলন করেছেন, যাঁদের মধ্যে সবচেয়ে পরের মুহাদ্দেস হলেন ইমাম বাইহাকী (মৃত্য ৪৫৮ হিজরী)। আরেকজন বরেন্য ঐতিহাসিক ও মুহাদ্দেস (যার কিতাবের রেফারেন্স আমি এখানে দেইনি, তিনি) হলেন ইবনু আসাকীর (মৃত্য ৫৭১ হিজরী), যিনি তার ‘তারিখে দামেশক’-এ এই হাদিসটি বর্ণ না করেছেন এবং হতবাক করার মতো ব্যাপার হল আল্লাহ’র ফজলে সেখানেও হাদিসের এই شِرَاكُ نَعْلِ (পাদুকা-বন্ধনী) শব্দটি বাদ পড়েনি। (আল্লাহু আকবার !!!!!) الله اعلم بالصواب

# হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- إن بين يدي الساعة تسليم الخاصة، وفشو التجارة حتى تعين المرأة زوجها على التجارة، وقطع الأرحام، وشهادة الزور، وكتمان شهادة الحق، وظهور القلم . أخرجه أحمد: ١/٤٠٧ ، وصحح إسناده أحمد شاكر. – ‘নিশ্চই কেয়ামতের আগে আগে (মুসলীম সমাজগুলোর হালত এমন হবে যে, শুধু) বিশেষ বিশেষ ব্যাক্তিকে সালাম দেয়া হবে, (দেশে বিদেশে) ব্যবসা-বানিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটবে, এমন কি স্ত্রী তার স্বামীকে ব্যবসা-বানিজ্যে সাহায্য-সহযোগীতা করবে, আত্বীয়তার বন্ধন কর্তন করা হবে, (দুনিয়ার স্বার্থে বা মানুষের ভয়ে) মিথ্যা সাক্ষ্য দান করা হবে আর সত্য-ন্যায় সাক্ষ্যকে গোপন করা হবে, এবং কলম (-এর ব্যবহার ব্যাপক হারে) প্রকাশ পাবে’। [মুসনাদে আহমদ- ১/৪০৭]

ফায়দা: এই হাদিসে কেয়ামতের আগে আগে তথা শেষ জামানার কিছু ছোট ছোট আলামতের কথা বলা হচ্ছে, যেগুলো উম্মতের মধ্যে ব্যাপক হারে দেখা যাবে। আর আমরা ইতিপূর্বে দেখিয়ে এসেছি যে, আমরা শেস জামানায় ঢুকে পড়েছি।

আমাদের এ যুগে মুসলমানদের পরষ্পরে ‘সালাম’ বিনিময়ের মতো এত সুন্দর ইবাদত ও শরয়ী কালচারটিই মড়ে যেতে বসেছে। হাতে গোণা কিছু মর্দে মুমিন এই সুন্নাহটিতে জীবিত রাখার চেষ্টা করছেন। বাদ বাকিরা কেউ সামাজিক মান-সম্মান রক্ষার খাতিরে, কেউ অন্যের ক্ষতির ভয়ে ‘সালাম’কে একটা রেওয়াজ হিসেবে নিয়েছে। আর অনেকে-তো সালাম কালামকে বিরক্তিকর একটা জিনিস মনে করে থাকে। আমি এক স্কুল শিক্ষকের কথা জানি, যাকে তার ছোট্ট এক ছাত্রী ক্লাসে ঢোকার সময় ‘গুড মর্নিং’ না বলে ‘সালাম’ দেয়ায় সেই শিক্ষক তাকে শাষিয়ে বলেছিল ‘খালি-তো এগুলোই শিখেছো !’

এযুগে বহু আধুনিক শিক্ষিত স্ত্রী’রা তাদের স্বামীর ব্যাবসা বানিজ্যকে পুরোপুরি বা আংশিক পরিচালনা/দেখভাল করার জন্য অংশ নিয়েছে। এটা নাজায়েয নয়। না-জায়েয হল পরপুরুষের সাথে শরয়ী পর্দা রক্ষা না করে চলা এবং স্বামীর নাজায়েয ব্যবসা ও লোনদেনে সাহায্য সহযোগীতা করা। আল্লাহকে খুশি করার জন্য শরয়ী সীমা রক্ষা করে স্বামী, সন্তান সন্ততি ও পরিবার পরিজনের নানাবিধ প্রয়োজনে ছোট বড় যে কোনো ব্যবসায় অবদান রাখলে ইনশাআল্লাহ সওয়াব পাওয়া যাবে। যেমন: সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. দ্বীনের বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকায় আয় রোজগারের দিকে তেমন সময় দিতে পারতে না। আর বলা বাহুল্য, এতে স্বভাবতই সংসারের টানাপোড়ন চলতো। এজন্য তাঁর স্ত্রী শেলাইয়ের কাজ করে আয় রোজগার করতেন ও সংসারের খরচ চালাতেন।

কিন্তু এই হাদিসের ইংগিত সম্ভবতঃ এযুগের ওইসকল নারীবাদী স্ত্রীদের দিকে ইশারা করা হয়েছে, যারা কুরআন সুন্নাহ’র পর্দা ব্যাস্থাকে ‘নারীর অধিকার হনন’ বলে মনে করে এবং ‘চাকুরী ও ব্যবসা বানিজ্যে’র খোলা ময়দানে খোলামেলা ভাবে শরীক হয়ে দেখাতে চায় যে- (১) তারা তাদের ‘ন্যায্য অধিকার’কে কিছুটা হলেও পূণরুদ্ধার করতে পেরেছে, (২) তারা সমাজের সামনে নমুনা হতে চায়, যাতে বাকি নারীরাও শরয়ী পর্দার অনধিকার চর্চা’কে (!) ছিন্ন করে বাড়ির বাইরে ব্যাপক হারে বেড়িয়ে এসে পুরুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নারী-পুরুষের সম-অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। আবু উমামা বাহেলী রা. থেকে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- كَيْفَ أَنْتُمْ إِذَا طَغَى نِسَاؤُكُمْ ، وَفَسَقَ شَبَابُكُمْ . أخرجه ابن أبي الدنيا في الأمر بالمعروف و النهي عن المنكر , رقم الحديث : ٣٢ . الحافظ العراقي قال عنه إنه ضعيف الإسناد كما جاء في تخريجه لأحاديث الإحياء برقم ٢/٣٨٠ – ‘তখন তোমাদের (মুমিন মুসলমানদের) কেমন অবস্থা হবে, যখন নারীরা ত্বাগুতীপনা (আল্লাদ্রোহিতা) করবে…?! [আমর বিল মা’রুফ ওয়ান নাহি আনিল মুনকার, ইবনে আবিদ্দুনিয়া, হাদিস ৩৩]

এখানে ظهور القلم – কলম (-এর ব্যবহার ব্যাপক হারে) প্রকাশ পাবে’ -কথাটিকে একটু বুঝিয়ে দেয়া দরকার। কলম শুনতেই আমাদের মাথায় প্রথমেই যে ছবিগুলো ভেসে ওঠে সেগুলো হল: সাধারণ কলম, পেনসিল বা পূর্ব যুগের দোয়াতের তুলি বা কাষ্ঠফলক যা সেকালে কলম হিসেবে ব্যবহৃত হত। কিন্তু এযুগে বেশ কিছু অত্যাধুনিক ভিন্ন ধরনের কলম আবিষ্কিৃত হয়েছে। যেমন: কম্পিউটারের কিবোর্ড যা দিয়ে ডেস্কটপের স্ক্রিনে লিখা যায়, আবার লেখাটা প্রিন্টারের সাহায্যে প্রিন্ট করে বেড়ও করে আনা যায়। এছাড়াও ডিজিটাল কিবোর্ড ব্যবহার করে ইন্টারনেট ওয়েবপেজে লেখা যায়। এমনিভাবে এযুগে অত্যাধুনিক ডিজিটাল টাইপিং সিস্টেম ব্যবহার করে অফিস-আদালত, ব্যবসা-বানিজ্য, সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, মিডিয়া, ওয়েবপেজ, প্রগ্রামিং থেকে নিয়ে মোবাইল, গাড়ি, প্লেন, ফাইটারপ্লেন-হেলিকপ্টার-রকেট, মিসাইল, স্যাটেলাইট, মেডিকেল ইন্সট্রুমেন্ট , কলকারকাখানার সরঞ্জামাদি ইত্যাদি -এমন কিছু নেই যা চালনা করা হচ্ছেনা। সুতরাং, পৃথিবীর মানুষ আজ অত্যাধুনিক কলম-এর ব্যবহারে প্রতিটি সেকেন্ড ঘিরে রয়েছে । এজন্য আমার মতে এই হাদিসের প্রতিটি ভবিষ্যতবাণী আমাদের এযুগে পূর্ণ হয়ে গেছে। الله اعلم بالصواب

MuslimPoint Organization

About MuslimPoint Organization

MuslimPoint একটি অনলাইন ভিত্তিক ইসলামী প্রশ্নোত্তর, গ্রন্থাগার, ব্লগিং, কুরআন, হাদিস, কুইজ এবং বিষয় ভিত্তিক রেফারেন্স প্ল্যাটফর্ম।

View all posts by MuslimPoint Organization →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *