ব্যাখ্যা ও উদাহরণসহ কেয়ামতের আলামত ও ভবিষ্যতবাণী পর্ব-৫

কিয়ামতের আলামত ও ভবিষ্যতবাণী মোহাম্মদ (স)
ব্যাখ্যা ও উদাহরণসহ কেয়ামতের আলামত ও ভবিষ্যতবাণী

[প্রথমেই বলে রাখি কিয়ামতের জ্ঞান শুধুমাত্র আল্লাহ’র কাছে আছে ।
‘(হে নবী মুহাম্মাদ!) মানুষ তোমাকে কিয়ামত (কবে হবে, সে) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। তুমি বলো, এর (একেবারে সঠিক) জ্ঞান শুধুমাত্র আল্লাহ’র কাছে আছে। আর (হে নবী !) তুমি কি জানো, কিয়ামত (ঘটার) সম্ভাবনা নিকটে চলে এসেছে !’ [সূরা আহযাব ৬৩]
এখানে শুধুমাত্র হাদিস ও কিছু অনুমানের ভিত্তিতে আমরা কিয়ামতের আলামতগুলো ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি । সুতরাং এখানের সকল বক্তব্য কে আমরা কখনো চূড়ান্ত বলে মনে করি না । এগুলো শুধু উল্লেখ করছি, যাতে এই রেওয়ায়েতসমূহে বর্ণিত কোনো ঘটনা ঘটতে দেখলে তা চিনে নিতে পারেন এবং রেওয়াতের হক্ব আদায় করতে পারেন।
উল্লেখ্য, যেহুতু হয়তো এখানে বর্ণিত অল্প কিছু হাদিসের সনদগত ও অন্যান্য দূর্বলতা থাকতে পারে তাই এখানে উল্লেখিত হাদিসসমূহ কোনো বিজ্ঞ মুহাদ্দেস আলেমের পরামর্শ ব্যাতীত কারো কাছে বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছি।]

# আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন– لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَأْخُذَ أُمَّتِي بِأَخْذِ القُرُونِ قَبْلَهَا، شِبْرًا بِشِبْرٍ وَذِرَاعًا بِذِرَاعٍ، فَقِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، كَفَارِسَ وَالرُّومِ؟ فَقَالَ: وَمَنِ النَّاسُ إِلَّا أُولَئِكَ ؟ – ‘কেয়ামত কায়েম হবে না, যাবৎ না আমার উম্মত তার পূর্বের জামানাসমূহ’কে বিঘতে বিঘতে হাতে হাতে আঁকড়িয়ে ধরে। জিজ্ঞেস করা হল: ইয়া রাসুলাল্লাহ! (আপনি কি) পারোস্য ও রোম (জাতির কথা বুঝাতে চাইছেন)? তিনি বললেন: ওসব লোকজন ছাড়া আর কারা?’। [সহিহ বুখারী, হাদিস ৭৩১৯]
ফায়দা: আরেক হাদিসে হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- لَتَتْبَعُنَّ سَنَنَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ شِبْرًا شِبْرًا وَذِرَاعًا بِذِرَاعٍ، حَتَّى لَوْ دَخَلُوا جُحْرَ ضَبٍّ تَبِعْتُمُوهُمْ ‏”‏‏.‏ قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى قَالَ ‏”‏ فَمَنْ – ‘(নিকট ভবিষ্যতে) তোমরা (মুসলমানরা) নির্ঘাৎ তোমাদের পূর্বে যারা ছিল তাদের রীতি-নীতি বিঘতে-বিঘতে হাতে-হাতে অনুসরণ করবে। এমনকি তারা যদি কোনো দাব্ব (মরু গিরগিটি)-এর গর্তে প্রবেশ করে, (তাহলে দেখা যাবে যে) তোমরাও তাদের (পিছু পিছু) অনুসরণ (করে তাতে প্রবেশ) করেছো। আমরা জিজ্ঞেস করলাম: ইয়া রাসুলাল্লাহ! (আপনি কি) ইহূদী ও খৃষ্টান (জাতির কথা বুঝাতে চাইছেন)? তিনি বললেন: তবে আর কারা?’। [সহিহ বুখারী, হাদিস ৭৩২০; সহিহ মুসলীম, হাদিস ২৬৬৯]
আবুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- لَتَرْكَبُنَّ سُنَنَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ شِبْرًا بِشِبْرٍ وَذِرَاعًا بِذِرَاعٍ وَبَاعًا بِبَاعٍ ، حَتَّى لَوْ أَنَّ أَحَدَهُمْ دَخَلَ جُحْرَ ضَبٍّ لَدَخَلْتُمْ ، وَحَتَّى لَوْ أَنَّ أَحَدَهُمْ جَامَعَ أُمَّهُ لَفَعَلْتُمْ . رواه البزار في كشف الأستار: رقم ٣٢٨٥ ; قال الهيثمي في مجمع الزوائد ومنبع الفوائد : ٧/٢٦١ : رواه البزار ، ورجاله ثقات ; المروزي في السنة : رقم ٤٤; الدولابي في الكنى : ٢/٣٠ و الحاكم : ٤/٤٥٥ ; و صححه الألباني في السلسلة الصحيحة : ٣/٣٣٤ رقم ١٣٤٨ – ‘ (নিকট ভবিষ্যতে) অবশ্যই (এমন হবে যে,) তোমরা (মুসলমানরা কুরআন সুন্নাহ’র পথনির্দেশিকা পরিত্যাগ করে) তোমাদের পূর্বে যারা ছিল তাদের সুন্নাহ (আদর্শ ও রীতি-নীতি)গুলিকে বিঘতে-বিঘতে গজে-গজে টাক্কোরে টাক্কোরে অনুসরণ করবে। এমনকি তাদের কেউ যদি কোনো ‘দাব্ব’ (মরু গিরগিটি)-এর গর্তে প্রবেশ করে, (তাহলে দেখা যাবে যে) তোমরাও (তাদের দেখাদেখি সেখানে গিয়ে) অবশ্যই প্রবেশ করবে। এমনকি তাদের কেউ যদি তার মাতা’র সাথে মিলিত হয়, তাহলে তোমরাও অবশ্যই তা করে বসবে’। [মুসনাদে বাযযার, হাদিস ৩২৮৫; আস-সুনান, ইমাম দানী, হাদিস ৪৪; মুসতাদরাকে হাকিম- ৪/৪৫৫; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৭/২৬১]
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন- أنتم أشبه الناس سمتا وهدياً ببني إسرائيل , لتسلكن طريقهم حذو القذة بالقذة , والنعل بالنعل . اخرجه ابن ابي شيبة في المصنف : ١٥/١٠٢ رقم ١٩٢٢٥ ، اسناده صحيح كما في سلسلة الأحاديث الصحيحة : ٧/٩١٥ – ‘(অবশ্যই এমন হবে যে,) তোমরা (মুসলমানরা এক সময় কুরআন সুন্নাহ’র পথনির্দেশিকা পরিত্যাগ করে) বনী ইসরাঈলের লোকদের পথ ও দিকনির্দেশিকার (সাথে তোমাদের নিজেদের চিন্তা-চেতনা ও জীবনধারাকে) সাদৃশ্য করে তুলবে। তোমরা (পথভ্রষ্ঠ হয়ে) অবশ্যই তাদের পথ ধরে চলতে থাকবে -(ঠিক যেমন কোনো পাখির একটি) পাখা (আরেকটি) পাখার এবং (পায়ের একটি) জুতা (আরেকটি) জুতার সমান হয়’। [আল-মুসান্নাফ, ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ- ১৫/১০২ হাদিস ১৯২২৫]
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন- ليحْملَنّ شرار هذه الأمّة على سَنَنِ الذين خلَوا من قبلهم- أهل الكتاب- حذو القُذَّةِ بالقُذَّة . اخرجه احمد في المسند : ٤/١٢٥ ، الطبراني في الكبير : ٧/٣٣٨ رقم ٧١٤٠, و حسنه الالباني في سلسلة الأحاديث الصحيحة : رقم ٣٣١٢ – ‘অবশ্যই (অবশ্যই এমন হবে যে,) এই উম্মতের নিকৃষ্ট লোকজন তাদের পূর্বে যারা গত হয়েছিল -(তথা) আহলে কিতাবদের সুন্নাহ (আদর্শ ও রীতি-নীতি)গুলিকে গ্রহন করে নিবে। (কোনো পাখির একটি) পাখা (যেমন আরেকটি) পাখার সমান হয় (তেমনি মুসলীম উম্মাহও আহলে কিতাবদের গ্রহনকৃত আদর্শ ও রীতি-নীতিতে মিশে একাকার হয়ে যাবে)’। [মুসনাদে আহমদ- ৪/১২৫ ; আল-মু’জামুল কাবীর, ত্বাবরাণী- ৭/৩৩৮ হাদিস ৭১৪০]
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন- أَنْتُمْ أَشْبَهُ الْأُمَمِ بِبَنِي إِسْرَائِيلَ ، لَتَرْكَبُنَّ طَرِيقَهُمْ حَذْوَ الْقُذَّةِ بِالْقُذَّةِ ، حَتَّى لَا يَكُونَ فِيهِمْ شَيْءٌ إِلَّا كَانَ فِيكُمْ مِثْلُهُ ، حَتَّى أَنَّ الْقَوْمَ لَتَمُرُّ عَلَيْهِمُ الْمَرْأَةُ فَيَقُومُ إِلَيْهَا بَعْضُهُمْ فَيُجَامِعُهَا ثُمَّ يَرْجِعُ إِلَى أَصْحَابِهِ يَضْحَكُ إلَيهِمْ وَيَضْحَكُونَ إِلَيْهِ . رواه الطبراني في الكبير : رقم ٩٨٨٢ ، سنده ضعيف ; و اورده الهيثمي في مجمع الزوائد : ٧/٥١٦ – ‘(অবশ্যই এমন হবে যে,) তোমরা (মুসলমানরা একসময় কুরআন সুন্নাহ’র পথ-নির্দেশিকা পরিত্যাগ করে) বনী ইসরাঈলের (বিভিন্ন) জাতি সমূহের (চিন্তা-চেতনা ও জীবনধারার সাথে তোমাদের নিজেদের চিন্তাচেতনা ও জীবনধারাকে) সাদৃশ্য করে তুলবে। তোমরা অবশ্যই তাদের পথ ধরে চলতে থাকবে -(ঠিক যেমন কোনো পাখির একটি) পাখা (আরেকটি) পাখার সমান হয়। এমনকি (শেষ পর্যন্ত দেখা যাবে যে,) তাদের মধ্যে এমন কোনো কিছু (অবশিষ্ট) নেই, যার অনুরূপ কিছু তোমাদের (মুসলমানদের) মধ্যে (বিদ্যমান) না থাকবে। এমনকি (এর ক্রমধারায় এমন ঘটনাও ঘটবে যে,) কিছু লোকের কাছে এক নারী আসবে, তখন তাদের কয়েকজন উঠে তার কাছে গিয়ে (সবাই মিলে) তার সাথে মেলামেশা করবে। এরপর তারা তাদের সাথিদের কাছে ফিরে আসবে, (এবং ওই নারীর সাথে কৃত নির্লজ্জ যৌনচর্চা ও যৌন মহোরাগুলো নিয়ে) তাদের কাছে হাসাহাসি করবে, তারাও তাদের সাথে হাসাহাসি করবে’। [আল-মু’জামুল কাবীর, ত্বাবরাণী- ১০/৩৯ হাদিস ৯৮৮২; মুসনাদে বাযযার– ১০/৪১৫ হাদিস ২০৪৮; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৭/৫১৬; ১০/৭০]
এখানে ‘মুসলীম উম্মাহ’র মধ্যে যারা ইহূদী-খৃষ্টানদের অনুসরণ করবে তাদের দ্বারা উম্মাহ’র ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ’র অন্তর্ভূক্ত মুমিনগণ বাদে বাকি সকল নিকৃষ্ট উম্মাহ উদ্দেশ্য। (অর্থাৎ উম্মাহ’র ৭৩ ফিরকার মধ্যে নিকৃষ্ট ৭২ ফিরকা’ই ইহূদী-খৃষ্টানদের অনুসরণ করবে, আর বাকি ১টি দল হবে ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ’র অন্তর্ভূক্ত মুমিন নর-নারীগণ, যারা ইসলামী শরীয়তের যথাসাধ্য অনুসারী হবে, যার বর্ণনা নিচের কিছু হাদিসে আসছে)।
এই ভষ্যিৎবাণী আমাদের এই শেষ জামানায় এসে শুধু পূর্ণতার মুখই দেখেনি, বরং বলবো, পূর্ণ হয়ে রং একেবারে পেঁকে গেছে। এমন কোনো ক্ষেত্র নেই, যেক্ষেত্রে এই উম্মাহ আল্লাহ তাআলার কুরআন ও তাঁর রাসুল সা.-এর আদর্শকে পিঠের পিছনে ফেলে দিয়ে ইহূদী-খৃষ্টানদেরকে গ্রহন করেনি।
(ক) বিশ্বাস/চেতনা/মতবাদ : উম্মাহ’র প্রায় সবাই কুরআন-সুন্নাহ’কে পিঠের পিছনে ফেলে দিয়ে তদস্থলে ইহূদী-খৃষ্টানদের পেশকৃত সেকুলারিজম (ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ), সোসালিজম (সমাজতন্ত্র), ডেমোক্রেসি (গণতন্ত্র) ইত্যাদি পথভ্রষ্ঠ বিশ্বাস/চেতনা/মতবাদ গুলোকে নিজেদের মৌলিক বিশ্বাস/চেতনা/মতবাদ হিসেবে গ্রহন করে নিয়েছে। ইহূদী-খৃষ্টানরা যেভাবে এসবকে বিশ্বাস করতে শিখিয়েছে, উম্মাহও তাদের ফটোকটি হওয়ার প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছে।
(খ) রাষ্ট্রযন্ত্র : উম্মাহ’র প্রায় সবাই কুরআন-সুন্নাহ’কে পিঠের পিছনে ফেলে দিয়ে তদস্থলে ইহূদী-খৃষ্টানদের পেশকৃত ওসব পথভ্রষ্ঠ থিওরী (যেমন: সেকুলারিজম (ধর্মনিরপেক্ষবাদ), ডেমোক্রেসি/গণতন্ত্র, সোসালিজম/সমাজতন্ত্র, ফেমিনিজম/নারীত্ববাদ ইত্যাদি থিওরী) গুলোর আদোলে নিজ নিজ দেশের পার্লামেন্ট, রাষ্ট্রীয় সংবিধান, রাষ্ট্রীয় নির্বাহি ব্যবস্থা, রাষ্ট্রীয় বিচারব্যবস্থা, প্রশাসন -সবকিছুকেই সাজানোর প্রশ্নে তারা প্রমাণ দিয়েছে যে, ইহূদী-খৃষ্টানদের ফটোকপি হল এই উম্মাহ।
(গ) অর্থনীতি : উম্মাহ’র প্রায় সবাই কুরআন-সুন্নাহ’কে পিঠের পিছনে ফেলে দিয়ে তদস্থলে ইহূদী-খৃষ্টানদের পেশকৃত সূদ, জুয়া, প্রতারণা ও ধোকাবাজি মূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে গ্রহন করে নিয়েছে। ব্যাংক, বীমা, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, মার্কেট, বাজার-ঘাট সহ যেখানেই লোনদেনের প্রশ্ন আসে সেখানেই ইহূদী-খৃষ্টানদের পেশকৃত অর্থনীতি ও লেনদেন কায়দার ফটোকপি হল এই উম্মাহ।
(ঘ) সংস্কৃতি : উম্মাহ’র প্রায় সবাই কুরআন-সুন্নাহ’কে পিঠের পিছনে ফেলে দিয়ে তদস্থলে ইহূদী-খৃষ্টানদের পেশকৃত সংস্কৃতি গুলোকে গ্রহন করে নিয়েছে। পোষাক-আশাক, খানা-পিনা, চলা-ফেরা, উৎসব উৎযাপন, সামাজিকতা -সর্বক্ষেত্রে ইহূদী-খৃষ্টানদের পেশকৃত সংস্কৃতির ফটোকপি হল এই উম্মাহ।
(ঙ) শিক্ষা : উম্মাহ’র প্রায় সবাই কুরআন-সুন্নাহ’র শিক্ষাকে পিঠের পিছনে ফেলে দিয়ে তদস্থলে নিজেদের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ইহূদী-খৃষ্টানদের পেশকৃত গোটা সেকুলার/ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা ব্যবস্থার আদোলে গড়ে নিয়েছে। ফলে উম্মাহ’র প্রায় সবাই সেকুলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সেকুলার বিশ্বাস ও চেতনার দুর্গন্ধ নিয়ে বেড় হয় এবং নিজ নিজ পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র জীবনের সকল ক্ষেত্রে সেকুলারিজম/ধর্মনিরপেক্ষতার দুর্গন্ধময় ফিতনাগুলোকে প্রয়োগ করে এবং ওসব ক্ষেত্রে কুরআন-সুন্নাহ’র প্রয়োগকে ভুল কিংবা অন্যায্য বলে মনে করে ! উম্মাহর কুরআনী বিশ্বাস ও চেতনাকে নষ্ট করে দেয়ার ক্ষেত্রে ইহূদী-খৃষ্টানদের পেশকৃত আধুনিক সেকুলার শিক্ষা ব্যবস্থার জুড়ি আমি খুজে পাইনি। ভাল হত, যদি যদি কুরআন-সুন্নাহ’র ইলম অর্জনকে যথা স্থানে ঠিক রেখে ইহূদী-খৃষ্টানদের পেশকৃত পার্থিব শিক্ষা-দিক্ষা গুলোও প্রয়োজনে শিখে নিতো। তাহলে এরা দ্বীন হারা শরীয়ত হারা হয়ে জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইহূদী-খৃষ্টানদের ফটোকপি হয়ে যেতো না।
রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ . سنن أبي داود برقم ٣٥١٢ وصححه الشيخ الألباني في صحيح سنن أبي داود و في صحيح الجامع – ‘যে ব্যাক্তি কোনো কওমের সাদৃশ্যতা এখতিয়ার করে নেয়, সে তাদেরই একজন’। [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৩৫১২] মুসলীম উম্মাহ এই শেষ জামানায় এসে তাদের বিশ্বাস ও আমল/কাজ-কারবার দ্বারা সাক্ষ্য দিল যে, তারা নিজেদেরকে ইহূদী-খৃষ্টানদের বন্ধু হওয়াকেই এখতিয়ার করে নিয়েছে; হাশরও তাদের ওদের সাথেই হবে (ইল্লা মা শাআল্লাহ)। الله اعلم بالصواب
# হযরত মুয়াবিয়া রা.-এর থেকে বণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন- إن أهل الكتابين افترقوا في دينهم على ثنتين وسبعين ملة وإن هذه الأمة ستفترق على ثلاث وسبعين ملة يعني الأهواء كلها في النار إلا واحدة وهي الجماعة وأنه سيخرج من أمتي أقوام تجاري بهم تلك الأهواء كما يتجارى الكلب بصاحبه لا يبقى منه عرق ولا مفصل إلا دخله والله يا معشر العرب لئن لم تقوموا بما جاء به نبيكم صلى الله عليه وسلم لغيركم من الناس أحرى أن لا يقوم به – أخرجه أحمد في المسند: ١٣/٢٠٥ قم ١٦٨٧٦, اسناده حسن ، و رواه أبو داود: ٤٥٩٧ والدارمي ٢٥٦٠, والحاكم في “مستدركه ١/١٢٨, ابن أبي عاصم في “السنة: رقم ١٥; المعجم الكبير للطبراني:١٩/٣٧٧ رقم ٨٨٥ – ‘নিশ্চই আহলে কিতাবদ্বয় (ইহূদী ও খৃষ্টানরা) তাদের দ্বীনের মধ্যে (মনচাহি মতাদর্শ ও মতবাদ যুক্ত করে) বাহাত্তরটি পৃথক পৃথক মিল্লাত (sects) বানিয়ে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। আর অবশ্যই (আমার) এই উম্মত শিঘ্রই তিহাত্তর মিল্লাতে বিভক্ত হয়ে যাবে। অর্থাৎ (তারা সবাই হবে) প্রবৃত্তির দাস (এবং) তাদের সবাই দোযখে যাবে শুধুমাত্র একটি (মিল্লাত) ছাড়া, আর সেটা হল আল-জামাআত (তারা হবে জান্নাতী)। আর নিশ্চই আমার উম্মাতের মধ্য থেকে এমন এমন জাতি/গোষ্ঠিসমূহের আবির্ভাব হবে, যারাদেরকে কুপ্রবৃত্তি এমনভাবে প্রভাবিত/আচ্ছন্ন করে ফেলবে যেভাবে কুকুর (তার কামড়ের দ্বারা) কাউকে (জলাতঙ্ক রোগে) আক্রান্ত করে ফেলে, (যে রোগ ওই আক্রান্ত ব্যাক্তির) রগ-রেশা ও (হাড়ের) জোরা -কোনো কিছুকেই আক্রান্ত না করে ছাড়ে না। [মুসনাদে আহমাদ– ১৩/২০৫, হাদিস ১৬৮৭৬; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪৫৯৭; সুনানে দারেমী, হাদিস ২৫৬০; মুসতাদরাকে হাকিম- ১/১২৮, হাদিস ৪০৬; আস-সুন্নাহ, ইবনু আবি আসেম, হাদিস ১৫; আল-মু’জামুল কাবীর, ত্বাবরানী- ১৯/৩৭৭, হাদিস ৮৮৪]
ফায়দা: আরেক হাদিসে আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে , রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- لَيَأْتِيَنَّ عَلَى أُمَّتِي مَا أَتَى عَلَى بني إسرائيل حَذْوَ النَّعْلِ بِالنَّعْلِ، حَتَّى إِنْ كَانَ مِنْهُمْ مَنْ أَتَى أُمَّهُ عَلَانِيَةً لَكَانَ فِي أُمَّتِي مَنْ يَصْنَعُ ذَلِكَ، وَإِنَّ بني إسرائيل تَفَرَّقَتْ عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ مِلَّةً، وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى ثَلَاثٍ وَسَبْعِينَ مِلَّةً، كُلُّهُمْ فِي النَّارِ إِلَّا مِلَّةً وَاحِدَةً»، قَالُوا: وَمَنْ هِيَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِي»: «هَذَا حَدِيثٌ مُفَسَّرٌ غَرِيبٌ لَا نَعْرِفُهُ مِثْلَ هَذَا إِلَّا مِنْ هَذَا الْوَجْهِ . رواه الترمذي فى سننه, أبواب الإيمان, ما جاء في افتراق هذه الأمة: حديث رقم ٢٦٤١, حكم الالبانى: حسن، المشكاة (١٧١ التحقيق الثاني) ، الصحيحة (١٣٤٨) , الحديث بهذه الزيادة حسَّنه العراقي في تخريج الإحياء: ٣/٢٣٠ ; و الحاكم فى المستدرك: ١/٢٠٨ رقم ٤٤٤ – ‘ বনী ইসরাঈলের উপর যা ঘটেছিল আমার উম্মতের উপরও তা অবশ্যই ঘটবে; (যেমনি ভাবে এক পায়ের) জুতা (আরেক পায়ের) জুতার (সাথে) মিলে যায়। এমনকি তাদের কেউ যদি তার মা’র সাথে প্রকাশ্যে কু-কাজ করে থাকে, তাহলে আমার উম্মতের মধ্যেও কেউ অবশ্যই সেরকম কাজ করবে। নিশ্চয় বনী ইসরায়েল বাহাত্তর মিল্লাতে (ফেরকা’য়) বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। আর আমার উম্মত তিহাত্তর মিল্লাতে বিভক্ত হয়ে যাবে। তাদের একটি বাদে সবাই দোযখে যাবে। জিজ্ঞেস করা হল: (নাজাতপ্রাপ্ত হবে) তারা কারা -ইয়া রাসুলাল্লাহ? তিনি বললেন: (তারা হচ্ছে ওই আক্বিদা ও আদর্শভুক্ত জামাআত) যার উপর আমি ও আমার সাহাবীগণ রয়েছে’। [সুনানে তিরমিযী, হাদিস ২৬৪১, মুসতাদরাকে হাকিম– ১/২০৮, হাদিস ৪৪৪]
উপরোক্ত ৭৩ ফিরকা’র মধ্যে মাত্র ১টি বেহেশতী ফিরকা হল ওই খাঁটি আক্বিদা-বিশ্বাস ও আদর্শভুক্ত মুসলীম জামাআত, যার সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেছেন- مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِي – ‘যার উপর আমি ও আমার সাহাবীগণ রয়েছে’। এই বেহেশতী ধারাটি রাসুলুল্লাহ ﷺ ও তাঁর সাহাবায়ে কেরাম থেকে শুরু হয়েছে এবং তা কেয়ামতের আগে ঈসা ইবনে মারইয়াম আ.-এর পর্যন্ত বাকি থাকবে -ইনশাআল্লাহ। এ সম্পর্কেই রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- لَا تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي ظَاهِرِينَ عَلَى الْحَقِّ لَا يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ حَتَّى يَأْتِيَ أَمْرُ اللَّهِ وَهُمْ كَذَلِكَ . أخرجه مسلم: رقم ١٩٢٠ – ‘আমার উম্মতের একটি গোষ্ঠি সর্বদা সত্যের উপর জাহের (প্রকাশমান) হয়ে থাকবে। যারা তাঁদেরকে দমন করতে যাবে, তারা তাঁদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। এমন কি তাঁদের কাছে আল্লাহ’র হুকুম না এসে পৌছা পর্যন্ত তারা ওভাবেই (সত্যের উপর প্রকাশমান হয়ে) থাকবে’। [সহীহ মুসলীম- ২/১৪৩, হাদিস ১৯২০]
আর উম্মাহ’র উপরোক্ত ৭৩ ফিরকা’র মধ্যে বাকি ৭২ ফিরকার সবগুলোই হবে পথভ্রষ্ঠ ইহূদী-খৃষ্টানদের অনুসারী, যারা আক্বীদা-বিশ্বাস, চিন্তা-চেতনা, আদর্শ-মতবাদ থেকে নিয়ে ব্যাক্তি জীবন, সমাজ জীবন এবং রাষ্ট্রীয় ও আন্তার্জাতিক জীবনের সব ক্ষেত্রে মৌলিক ভাবে পথভ্রষ্ঠ ইহূদী-খৃষ্টানদের ফটোকপি হবে, যেন شِبْرًا بِشِبْرٍ وَذِرَاعًا بِذِرَاعٍ – ‘(ওদেরকে) বিঘতে বিঘতে হাতে হাতে (আঁকড়ে ধারনকারী)’ অথবা حَذْوَ النَّعْلِ بِالنَّعْلِ – (এক পায়ের) জুতা (আরেক পায়ের) জুতার (সাথে) মিলে যায় (তেমনি এরাও ওদের সাথে মিলে যাবে)’।
এই ৭২ ফিরকা’ এক দিনে সৃষ্টি হয়নি। এসব ফিরকার একেকটির শুরুর সঠিক সময়-তো শুধু আল্লাহ তাআলাই জানেন। তবে ইতিহাস ঘাটলে বোঝা যায়, রাসুলুল্লাহ ﷺ -এর পর তাঁর রেখে যাওয়া একতাবদ্ধ ‘উম্মাহ’ সর্বপ্রথম দু’ টুকরো হয় ‘খারেযী গোষ্ঠি’টির দ্বারা। এরপর ‘শিয়া’ গোষ্ঠি জন্ম নেয়। এরপর এদের থেকে আরো শাখা-প্রশাখা বিস্তার হতে থাকে। একসময় মুতাজিলা, জাহামিয়া, ক্বাদরিয়্যা ইত্যাদি বিভিন্ন ফিরকাহ অস্তিত্বে আসতে থাকে এবং এদের মাঝে থেকে আরো শাখা-প্রশাখা প্রসারিত হতে থাকে। এভাবে ইসলামী-শরীয়ত বহির্ভূত বিভিন্ন আক্বীদা-বিশ্বাস নিয়ে বিভিন্ন জামানা পাড়ি দিয়ে এই শেষ জামানায় এসে মোট ৭২টি ফিরকা পরিপূর্ণ ভাবে তাদের নিজ নিজ রং ধারন করে নিয়ে একেবারে পেঁকে গেছে। নিকট ভবিষ্যতে কানা-দাজ্জালের অনুসারী হবে এরাই। الله اعلم بالصواب
# হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি এরশাদ করেন- أَوَّلُ مَا تَفْقِدُونَ مِنْ دِينِكُمُ الْخُشُوعُ ، وَآخِرُ مَا تَفْقِدُونَ مِنْ دِينِكُمُ الصَّلَاةُ ، وَلَتُنْقَضَنَّ عُرَى الْإِسْلَامِ عُرْوَةً عُرْوَةً ، وَلَيُصَلِّيَنَّ النِّسَاءُ وَهُنَّ حُيَّضٌ ، وَلَتَسْلُكُنَّ طَرِيقَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ حَذْوَ الْقُذَّةِ بِالْقُذَّةِ ، وَحَذْوَ النَّعْلِ بِالنَّعْلِ ، لَا تُخْطِئُونَ طَرِيقَهُمْ ، وَلَا يُخْطِأُنَّكُمْ حَتَّى تَبْقَى فِرْقَتَانِ مِنْ فِرَقٍ كَثِيرَةٍ فَتَقُولُ إِحْدَاهُمَا : مَا بَالُ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ ، لَقَدْ ضَلَّ مَنْ كَانَ قَبْلَنَا إِنَّمَا قَالَ اللَّهُ – تَبَارَكَ وَتَعَالَى – : وَأَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِنَ اللَّيْلِ لَا تُصَلُّوا إِلَّا ثَلَاثًا ، وَتَقُولُ الْأُخْرَى : إِيمَانُ الْمُؤْمِنِينَ بِاللَّهِ كَإِيمَانِ الْمَلَائِكَةِ مَا فِينَا كَافِرٌ وَلَا مُنَافِقٌ ، حَقٌّ عَلَى اللَّهِ أَنْ يَحْشُرَهُمَا مَعَ الدَّجَّالِ . رواه الحاكم في مستدركه , كتاب الفتن والملاحم , باب أول ما تفقدون من دينكم الخشوع : ٤/٤٦٩ و قال الحاكم: صحيح الإسناد ولم يخرجاه ، ووافقه الذهبي في تلخيصه ; و ابن وضاح في البدع , بَابٌ فِي نَقْضِ عُرَى الإِسْلامِ وَدَفْنِ الدِّينِ : ١/١٦٥ رقم ١٥١ ; و الطبري في تهذيب الآثار: ٢/١٩٩ رقم ٢٩٣٩ ; و ابن بطة في كتاب الإبانة مختصرا ; و ألداني في السنن الواردة في الفتن , باب ما جاء في فقد الأمانة والصلاة : رقم ٢٧١ – ‘তোমরা (মুসলমানরা) তোমাদের দ্বীনের মধ্যে থেকে প্রথমে যে জিনিসটিকে খুইয়ে বসবে, (সেটা) হল الْخُشُوعُ (খুশু/ আল্লাহ’র ভয়)’ এবং তোমরা তোমাদের দ্বীনের মধ্যে থেকে শেষে যে জিনিসটিকে খুইয়ে বসবে, (সেটা) হল, الصَّلَاةُ (নামায)। অবশ্য-অবশ্যই ইসলামের হাতল’কে একটা একটা করে নষ্ট/অকেযো/অকার্যকর/রদ/বাতিল/অপসারিত করে ফেলা হবে’। অবশ্যই (এমনও হবে যে, মুসলীম) নারী(দের অনেকেই ইলমী মুর্খ ও দ্বীনী অবহেলার কারণে) হায়েয রত অবস্থায় নামায পড়ে নিবে। এবং অবশ্যই (এমনও হবে যে,) তোমরা (মুসলমানরা কুরআন সুন্নাহ’র পথনির্দেশিকা পরিত্যাগ করে) যারা তোমাদের পূর্বে ছিল তাদের পথের সাথে (তোমরা) মিলে (একাকার হয়ে) যাবে, (এমনকি তাদের সাথে তোমাদের এতটা সাদৃশ্যতা হবে, যেমনটা কোনো পাখির এক) পাখা (আরেক) পাখার সমান হয় এবং (এক পায়ের) জুতো (আরেক পায়ের) জুতার সমান হয়। তোমরা তাদের পথ (কে আঁড়িয়ে ধরার প্রশ্নে একটুও) পিছুপা হবে না, আর না (এতে) তোমাদের কোনো ভুল হবে। এমনকি (এর ক্রমধারায় সৃষ্ট) বহু ফিরকাহর মধ্য থেকে দুটি ফিরকাহ এমনও হবে; (যে) দুটির (মধ্যে) একটি (ফিরকাহ) বলবে: “পাঁচ ওয়াক্ত নামায আবার কী! আমাদের পূর্বে যারা (পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে) ছিল তা ছিল (একেকটা মুর্খ) পথভ্রষ্ঠ লোক। আল্লাহ তাবারক ওয়া তাআলা-তো বলেছেনই যে- وَأَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِنَ اللَّيْلِ – ‘আর তোমরা নামায কায়েম করো দিবসের দুই প্রান্তে এবং রাতের একাংশে’ (সূরা হুদ: ১১৪)। (কাজেই) তোমরা তিন (ওয়াক্ত) ছাড়া নামায পড়ো না”। আর অপর (ফিরকাহ)টি বলবে: “আল্লাহ’র প্রতি -(সকল কালেমা পড়া) মুমিনদের ইমান ফেরেশতাদের ইমানের মতো। আমাদের মাঝে কোনো কাফের নেই, কোনো মুনাফেক নেই। (আমরা সবাই ইমানদার; সবাই বেহেশতে যাবো)। আল্লাহ’র উপরে হক্ব হয়ে যায়, এদের (মাতো পথভ্রষ্ঠ) উভয় (ফেরকাহ)কে দাজ্জালের সাথে একত্রিত করানো”। [মুসতাদরাকে হাকিম– ৪/৫১৬ হাদিস ৮৪৪৮; আল-বাদউ, ইমাম ইবনে ওযায়হ, হাদিস ১৫১; তাহযিবুল আছার, ইমাম ত্বাবারী- ২/১৯৯ হাদিস ২৯৩৯]
ফায়দা: শেষ জামানায় যখন ৭৩টির মধ্যে ৭২টি দোযখী পথভ্রষ্ঠ ফিরকাহ তাদের নিজ নিজ পথভ্রষ্ঠ চিন্তাধারার পাকাপোক্ত রং নিয়ে সমাজে বিরাজমান থাকবে, তখন দুটি মারাত্মক পথভ্রষ্ঠ ফিরকাহ কেমন ধরনের পথভ্রষ্ঠ হবে, তার পরিচয় এই হাদিসে দেয়া হয়েছে।
ওই দুটির মধ্যে একটি ফিরকাহ ‘দৈনিক ৩ ওয়াক্ত নামায ফরয হওয়ার প্রবক্তা হবে এবং তাদের মতের লোকেরা নামায পড়লে দৈনিক ৩ ওয়াক্ত নামায পড়বে’। এমনকি তারা তাদের পথভ্রষ্ঠ মতের স্বপক্ষে দলিল পেশ করবে কুরআন থেকেই। তাদের দলিল হল, সূরা হূদের ১১৪ নং আয়াত, যেখানে আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন: وَأَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِنَ اللَّيْلِ – ‘আর তোমরা নামায কায়েম করো দিবসের দুই প্রান্তে এবং রাতের একাংশে’ [সূরা হুদ: ১১৪]। এখানে ‘দিনের দুই প্রান্তের নামায’ বলতে ‘ফজর ও মাগরীবের নামায’ উদ্দেশ্য এবং ‘রাতের একাংশে’ বলতে ‘এশার নাময’ উদ্দেশ্য। এই হল তাদের ৩ ওয়াক্ত নামাযের দলিল !!!!!!!!!! উল্লেখ্য যে, ইহূদীরা দৈনিক ৩ ওয়াক্ত নামাযের প্রবক্তা; ইহূদী ও শেষ জামানার এই ফিরকাহ’র মাঝে কতটা সাদৃশ্যতা সৃষ্টি হবে -দেখেছেন?
অথচ পাঁচ ওয়াক্ত নামায সমূহের আরো বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে সূরা বনী ইসরাঈলে ৭৮ নং আয়াতে, সূরা ত্বাহা’র ১৩০ নং আয়াতে এবং সূরা রূমের ১৭ ও ১৮ নং আয়াতে। তাছাড়াও রাসুলুল্লাহ ﷺ ও সাহাবায়ে কেরাম থেকে বহু নির্ভরযোগ্য হাদিস ও আছারের ভান্ডার রয়েছে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের স্বপক্ষে। তদুপরি রাসুলুল্লাহ ﷺ -এর জামানা থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে মুসলীম উম্মাহ’র আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ’র মুতাওয়াতির ইজমা চলে আসছে এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাযই ফরয মর্মে ওয়াক্ত সহকারে কায়েম করে আসা হচ্ছে, যা অস্বীকার করা মানে কুরআন, সুন্নাহ ও ১৪৫০ বছরের শক্তীশালী ইজমায়ী আমলকে পরিষ্কার অস্বীকার করা বৈধ নয়। পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামায থেকে কম বা বেশি ওয়াক্তের উপরে বিশ্বাসকারী ব্যাক্তি পরিষ্কার মুরতাদ/কাফের। এরা দাজ্জালের সাথে যুক্ত হবে।
দ্বিতীয় ফিরকাহটি বলবে যে, যারা একবার কালেমা পাঠ করেছে তারা সবাই মুসলমান, তারা বেহেশতে যাবে; তাদের মাঝে কোনো কাফের নেই, কোনো মুনাফেকও নেই। অথচ, উপরের ৩ ওয়াক্ত নামাযে বিশ্বাসীরাও কাফের। তাছাড়া যারা সেকুলারিজম (ধর্মনিরপেক্ষবাদ), সোসালিজম/সমাজতন্ত্র, কমিউনিজমের মতো কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী তারাও কাফের/মুরতাদ। যারা খোদ কাদিয়ানী ফিরকাও এই উম্মাহ থেকেই পৃথক হওয়া একটি মুরতাদ/কাফের ফিরকাহ, যারা তাদের প্রতিষ্ঠাতা আহমদ কাদিয়ানীকে নবী বলে বিশ্বাস করে। আলীয়াতি শিয়া’রা এই শিরকী ও কুফরী বিশ্বাসে বিশ্বাসী যে, আল্লাহ তাআলাই আলী বিন আবি তালেব রা.-এর চেহারা নিয়ে দুনিয়াতে এসেছেন, (নাউযুবিল্লাহ)। এছাড়াও আল্লাহ তাআলা, তাঁর শেষ নবী মুহাম্মাদ ﷺ, কুরআন কিংবা শরীয়তের কোনো প্রমাণিত অংশকে নিয়ে এই উম্মাহ’র যারা কটুক্তি করে, প্রকাশ্য অবজ্ঞা-অপমান করে, অস্বীকার করে, বিরোধীতা করে, বাধা দান বা দমনের প্রকাশ্য তৎপরতা দেখায় -এরা সবাই সর্বসম্মতিক্রমে মুরতাদ/কাফের। এজাতীয় কুফরী আক্বীদাগুলোতে যারা বাস্তবেই বিশ্বাসী কিন্তু তা প্রকাশ না করে বাহ্যত মুসলীম হিসেবে জীবনযাপন করে তারা মুনাফেক। আপর শেষ জামানায়-তো মুনাফেক দিয়ে গোটা পৃথিবী ভরা থাকবে, আর মুমিনদের সংখ্যা হবে খুবই কম। এই ফিরকাটি হল উদারপন্থি/লিবারেল কিসিমের মুর্খদের একটি ফিরকাহ, যারা দাজ্জালের সাথে যুক্ত হবে। الله اعلم بالصواب
# আওফ বিন মালেক রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেছেন- سَتَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى بِضْعٍ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً ، أَعْظَمُهَا فتنة على أمتي قَوْم يَقِيسُونَ الْأُمُورَ بِرَأْيِهِمْ يُحَرِّمُونَ الْحَلَالَ وَيحلونَ الْحَرَامَ . رواه البزار في مسنده البحر الزخار: ٧/١٨٦ رقم ٢٧٥٥; و الطبراني في مسند الشاميين: ٢/١٤٣ رقم ١٠٧٢ و في المعجم الكبير: ١٨/٥٠ , و قال الهيثمي:١/١٧٩ رواه الطبراني في الكبير والبزار ورجاله رجال الصحيح ; و رواه ايضا الحاكم في المستدرك في معرفة الصحابة : ٣/٥٤٧ و في كتاب الفتن والملاحم : ٤/٤٣٠ و قال: هذا حديث صحيح على شرط الشيخين ; والبيهقي في المدخل إلى السنن الكبرى: ٢٠٧ ; و ابن بطة في الإبانة الكبرى: ٢٠٥ و ٤١١; ابن حزم في المحلى بالآثار: ١/٨٢; الخطيب البغدادي في تاريخه:٤٢٠ -١٥/٤٢٥; ابن عبد البر في جامع بيان العلم وفضله : ١٩٩٧; و بن عدي في الكامل : ٤/٤٩٧ – ‘অচিরেই আমার উম্মত প্রায় সত্তরটি ফিরকা’য় বিভক্ত হয়ে যাবে। তার মধ্যে আমার উম্মতের উপরে সবচাইতে বড়/সুকঠিন ফিতনা হবে ওই গোষ্ঠিটি, যারা (কুরআন ও সুন্নাহ’র শরয়ী বিধিবিধান গুলোকে পিঠের পিছনে ফেলে দিয়ে) তাদের (ব্যাক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক বা রাষ্ট্রিয়) বিষয়গুলোকে নিজেদের (নিছক বিবেকপ্রসূত যুক্তি-নির্ভর) মতামতের আলোকে সিদ্ধান্ত দিবে। (ফলে) তারা (এর দ্বারা আল্লাহ’র কৃত) হালাল’কে হারাম বানাবে এবং হারামকে বানাবে হালাল’। [মুসনাদে বাযযার– ৭/১৮৬ হাদিস ২৭৫৫; আল-মু’জামুল কাবীর, ত্বাবরাণী- ১৮/৫০; মুসনাদে শামেয়ীন, ত্বাবরাণী– ২/১৪৩ হাদিস ১০৭২; মুসতাদরাকে হাকিম– ৩/৫৪৭, ৪/৪৩০; আল-মাদখাল, বাইহাকী, হাদিস ২০৭; আল ইবাহাতুল কুবরা, ইবনুল বাত্তাহ- ২০৫, ৪১১; আল মুহাল্লা, ইবনে হাযাম- ১/৮২; তারীখে বাগদাদ- ১৫/৪২০-৪২৫; জামেউল বয়ান, ইবনু আব্দিল বার- ১৯৯৭; তারিখে দামেশক, ইবনুল আসীর- ৬২/১৫৬ হাদিস ১২৭৫৫; আল-কামেল, ইবনুল আদী- ৪/৪৯৭]
ফায়দা: এই হাদিসে ‘প্রায় সত্তরটি ফিরকাহ’ বলতে এর আগের হাদিসের ‘৭৩ ফিরকা’ই উদ্দেশ্য, যার ৭২ টিই পথভ্রষ্ঠ ও দোযখী হবে। এই বাহাত্তরটির মধ্যে যে ফিরকা’র লোকসংখ্যা ও ফিতনার প্রভাব সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী হবে, তাদের বিশেষ বৈশিষ্ট সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন যে- يَقِيسُونَ الْأُمُورَ بِرَأْيِهِمْ – ‘তারা তাদের (পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রিয়) বিষয়গুলোকে (কুরআন ও সুন্নাহ’র শরয়ী বিধিবিধান বাদ দিয়ে) নিজেদের (নিছক বিবেকপ্রসূত যুক্তিগ্রাহ্য) রায়/মতামতের আলোকে সিদ্ধান্ত দিবে’। এর দ্বারা মূলতঃ পার্লামেন্টে রাষ্ট্রীয় সংবিধান ও আইন-কানুন তৈরীর প্রশ্নে কুরআন-সুন্নাহ’কে সরিয়ে রেখে তদস্থলে পথভ্রষ্ট কর্ণধারদের নিজেদের বুদ্ধি-বিবেক খাটিয়ে আইন-কানুন রচনা করার দিকে ইশারা করা হয়েছে। এরপর বলা হয়েছে যে- يُحَرِّمُونَ الْحَلَالَ وَيحلونَ الْحَرَامَ – ‘(ফলে) তারা (এর দ্বারা আল্লাহ’র কৃত) হালাল’কে হারাম বানাবে এবং হারামকে বানাবে হালাল’। এর অর্থ হল, রাষ্ট্রে কী কী বৈধ (হালাল) থাকবে, আর কী কী অবৈধ (হারাম) থাকবে, সে বিষয়ক আইন রচনার ক্ষেত্রে তারা এমন সব আইন পাশ করবে যে, কুরআন-সুন্নাহ সংশ্লিষ্ট বিষয়কে বৈধ (হালাল) বললেও তারা সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে তা অবৈধ (হারাম) হওয়া যুক্তিসঙ্গত মনে করলে বিনা দ্বিধায় তা অবৈধ (হারাম) হিসেবেই আইন পাশ করবে, আবার এমন হবে যে, কুরআন-সুন্নাহ কোনো বিষয়কে অবৈধ (হারাম) বললেও তারা সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে তারা তা বৈধ (হালাল) হওয়াকে যুক্তিসঙ্গত মনে করলে বিনা দ্বিধায় তা বৈধ (হালাল) হিসেবেই আইন পাশ করবে। এই গোষ্ঠিটির সকলের মৌলিক আক্বীদা ও বিশ্বাস এইরকম চেতনার আদোলেই গঠিত থাকবে।
এই ফিরকাহটি হল আমাদের এ জামানার সেকুলারিজম (ধর্মনিরপেক্ষবাদ)-এ বিশ্বাসী ফিরকাটি (যাদের কেউ কেউ এর সাথে গণতন্ত্রকে আবার কেউ কেউ সোসালিজম’ কে যুক্ত করে নিয়েছে)। এই শেষ জামানায় পৃথিবীর সকল ইহূদী-খৃষ্টানরা সেকুলার চেতনাধারী; (এদের একেবারে অনুল্লেখযোগ্য নগণ্য অংশ তাদের বাইবেলের আইন বাস্তবায়নে বিশ্বাসী)। একই ভাবে এই শেষ জামানাতেই পৃথিবীতে প্রায় ১৭০ কোটির মতো উম্মাহ’র প্রায় সকলেই ইহূদী-খৃষ্টানদের পেশকৃত এই সেকুলারিজমকে নিজেদের মৌলিক চেতনা ও বিশ্বাস হিসেবে গ্রহন করে নিয়েছে; (এদের মধ্যে একেবারেই অনুল্লেখযোগ্য নগণ্য অংশই কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও শরীয়াহ বাস্তবায়নে বিশ্বাসী)। এ থেকে প্রমাণিত হয়, এই সেকুলারিজম (ধর্মনিরপেক্ষবাদ)-ই উম্মাহ’র সবচেয়ে বেশি সংখ্যক নারী-পুরুষকে (কুরআন-সন্নাহ থেকে সরিয়ে নিয়ে) নিজের দিকে আকৃষ্ট করে ইমান নষ্ট করতে সবচাইতে শক্তিশালী ভুমিকা রেখেছে এবং রেখে যাচ্ছে। ইমাম আবু আহমদ বিন আদী রহ.-এর রেওয়ায়েতে এই ফিরকাহটিকে নিকৃষ্ট ফিরকাহ বলা হয়েছে। সেখানে আছে- شرها فرقة قوم يقيسون الرأي يستحلون به الحرام ويحرمون به الحلال – “(….ওগুলোর মধ্যে) নিকৃষ্ট ফিরকাহ’টি হবে (এমন) গোষ্ঠি (যারা) তাদের (পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রিয় বিষয়গুলোকে কুরআন ও সুন্নাহ’র শরয়ী বিধিবিধান বাদ দিয়ে) নিজেদের (নিছক বিবেকপ্রসূত যুক্তিগ্রাহ্য) রায়/মতামতের আলোকে সিদ্ধান্ত দিবে। তারা তা(দের ওসব মত) দিয়ে হারামকে হালাল বানাবে এবং হালালকে বানাবে হারাম”। আল-কামেল, ইবনুল আদী- ৪/৪৯৭]
সেদিন হয়-তো বেশি দূরে নয়, যখন ইমাম মাহদী রা. ‘ইসলামী খিলাফত’ ব্যবস্থাকে পূণরায় কায়েম করার জন্য কাফের ও দাজ্জালের সাথে লড়বেন, আর দেখা যাবে যে, এই গোষ্ঠিটি কাফের ও দাজ্জালের সাথে যুক্ত হয়ে হয়ে ইমাম মাহদী রা.-এর বিরুদ্ধে কোমড় বেঁধে নেমেছে। কারণ উম্মাহ’র সেকুলারপন্থীরা চাইবে না যে, ইমাম মাহদী রা. এসে ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে তাদের কলিজার টুকরা সেকুলারিজম (ধর্মনিরপেক্ষবাদ)কে বিদায় করে দিক। ‘সেকুলারিজম/ধর্মনিরপেক্ষবাদ কেনো ইসলাম বিরোধী পথভ্রষ্ঠ কুফরী মতোবাদ’ -তা বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। الله اعلم بالصواب
# ইয়াযীদ বিন মাছরাদ রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত, হযরত মুআয বিন জাবাল রা. বলেছেন- سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ : خُذُوا الْعَطَاءَ مَا دَامَ عَطَاءً ، فَإِذَا صَارَ رِشْوَةً فِي الدِّينِ فَلَا تَأْخُذُوهُ ، وَلَسْتُمْ بِتَارِكِيهِ ؛ يَمْنَعْكُمُ الْفَقْرَ وَالْحَاجَةَ ، أَلَا إِنَّ رَحَى الْإِسْلَامِ دَائِرَةٌ ، فَدُورُوا مَعَ الْكِتَابِ حَيْثُ دَارَ ، أَلَا إِنَّ الْكِتَابَ وَالسُّلْطَانَ سَيَفْتَرِقَانِ ، فَلَا تُفَارِقُوا الْكِتَابَ ، أَلَا إِنَّهُ سَيَكُونُ عَلَيْكُمْ أُمَرَاءُ يَقْضُونَ لِأَنْفُسِهِمْ مَا لَا يَقْضُونَ لَكُمْ ، إِنْ عَصَيْتُمُوهُمْ قَتَلُوكُمْ ، وَإِنْ أَطَعْتُمُوهُمْ أَضَلُّوكُمْ . قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ ، كَيْفَ نَصْنَعُ ؟ قَالَ: كَمَا صَنَعَ أَصْحَابُ عِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ ، نُشِرُوا بِالْمَنَاشِيرَ ، وَحُمِلُوا عَلَى الْخَشَبِ ، مَوْتٌ فِي طَاعَةِ اللهِ خَيْرٌ مِنْ حَيَاةٍ فِي مَعْصِيَةِ اللهِ . اخرجه الطبراني في ” المعجم الكبير”: ٢٠/٩٠، و” المعجم الصغير”: ٢/٤٢، و مسند الشاميين : ١/٣٧٩, أبو نعيم في ” حلية الأولياء: ٥/١٦٦, قال الهيثمي : ” رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ ، وَيَزِيدُ بْنُ مَرْثَدٍ لَمْ يَسْمَعْ مِنْ مُعَاذٍ ، وَالْوَضِينُ بْنُ عَطَاءٍ وَثَّقَهُ ابْنُ حِبَّانَ وَغَيْرُهُ ، وَضَعَّفَهُ جَمَاعَةٌ ، وَبَقِيَّةُ رِجَالِهِ ثِقَاتٌ : مجمع الزوائد: ٥/٢٢٨; الوضين بن عطاء الشامي ، مختلف في توثيقه, قال يحيى بن معين: ” الوضين بن عطاء لا بأس به, قال الإمام أحمد: ” الوضين بن عطاء ثقة ، ليس به بأس, قال ابن أبي حاتم : سألت أبي عن الوضين بن عطاء فقال: ” تعرف وتنكر- ‘আমি রাসুলুল্লাহ সা.-কে একথা বলতে শুনেছি: (খলিফা/প্রশাসকের) উপহার গ্রহন করতে পারো যতক্ষন তা উপহার হিসেবে থাকে। তবে সেটা যদি দ্বীনের দৃষ্টিতে ঘুষ হয়ে যায়, তখন তা গ্রহন করো না। কিন্তু (আক্ষেপ হল) তোমরা (মুসলমানরা ভবিষ্যতে) তা পরিহার করে চলবে না। অভাব ও প্রয়োজন -তোমাদের জন্য (আমার এই নির্দেশ পালনে) বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে। ভাল করে শুনে রাখো, (কুরআনের মাধ্যমে দ্বীন) ইসলামের পরিধি সচল হয়ে গেছে। সুতরাং তোমরা আল-কিতাব (কুরআন)-এর সাথে থাকবে তা যেখানেেই যাক না কোনো, (কোনো অবস্থাতেই কুরআনকে ছাড়বে না)। ভাল করে শুনে রাখো, নিশ্চয় আল-কিতাব ও রাষ্ট্র ক্ষমতা অতিশিঘ্রই (একটি অপরটি থেকে) আলাদা হয়ে যাবে, (আল্লাহ’র কিতাব অনুযায়ী রাষ্ট্র-ব্যবস্থা চলবে না; চলবে মানুষের বানানো আইন দিয়ে)। তখনও তোমরা আল-কিতাব থেকে আলাদা হয়ো না। ভাল করে শুনে রাখো, অতি শিঘ্রই তোমাদের উপর এমনসব শাসক’রা আসবে, যারা তাদের নিজেদের জন্য (সুবিধা মতো) যে বিচার-ফয়সালা করবে, সে বিচার-ফয়সালা তারা তোমাদের জন্য করবে না। তোমরা যদি তাদের অবাধ্যতা প্রদর্শন করো তাহলে তারা তোমাদেরকে (বিভিন্ন অযুহাতে) মেড়ে ফেলবে। আর তোমরা যদি তাদের অনুগত্য করো, তাহলে তারা তোমাদেরকে (আল্লাহ’র দ্বীন থেকে) পথভ্রষ্ঠ করে দিবে। লোকেরা বললো: ইয়া রাসুলাল্লাহ! (এমতাবস্থায়) আমরা কি করবো? তিনি বললেন: (তোমরাও তা-ই করবে) যেমনটা ঈসা ইবনে মারইয়াম আ.-এর সাহাবীগণ করেছিলেন। তাদেরকে করাত দিয়ে চিড়ে ফেলা হয়েছিল, শুলিতে চড়ানো হয়েছিল (কিন্তু তারা আল্লাহ’র দ্বীন ছাড়েনি)। আল্লাহ’র নাফরমানীর জীবনের চাইতে আল্লাহ’র অনুগত্যের পথে মৃত্যুও শ্রেয়। [আল-মু’জামুল কাবীর, ত্বাবরাণী- ২০/৯০; আল-মু’জামুস সগীর, ত্বাবরাণী- ২/৪২; মুসনাদে শামেয়ীন, ত্বাবরাণী- ১/৩৭৯; হিলইয়াতুল আউলিয়াহ, আবু নুআইম- ৫/১৬৬; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৫/২২৮]
ফায়দা: এই হাদিসটি এই শেষ জামানার সেকুলারিজম (ধর্মনিরপেক্ষবাদ)-এ বিশ্বাসী ফিরকা’র লোকজনের চোখ খুলে দেয়ার মতো একটি হাদিস। যে কুরআনকে নাজিলই করা হয়েছে মুসলমানদের ব্যাক্তি-পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন পরিচালনা করার জন্য, যে কুরআন দিয়ে মুসলমানদের খিলাফত ও বিচারব্যবস্থা পরিচালিত হওয়ার কথা, সেই সেকুলার/ধর্মনিরপেক্ষবাদী’রা কুরআনকেই রাষ্ট্র থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে দেয়ায় মতো কুফরী বিশ্বাসে বিশ্বাসী। এদের দ্বারাই এই হাদিসের ভবিষ্যৎবাণীটি এই শেষ জামানায় এসে পূর্ণতা লাভ করেছে। এক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ ﷺ নির্দেশ দিয়েছেন যে, এরা যদি বর্বর শান্তি দিয়ে মেড়েও ফেলে তবুও তাদের অনুগত্য করা যাবে না, বরং যথাসাধ্য কুরআন মেনে চলতে হেব। এটাই কুরআনের সাথে থাকার অর্থ। الله اعلم بالصواب
# আবু উমামা বাহেলী রা. থেকে সহিহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- لَتُنْتَقَضَنَّ عُرَى الإِِسْلامِ عُرْوَة عُرْوَة ، فَكُلَّمَا انْتُقِضَتْ عُرْوَةٌ تَشَبَّثَ النَّاسُ بِالَّتِي تَلِيهَا ، فَأَوَّلُهُنَّ نَقْضًا الْحُكْمُ ، وَآخِرُهُنَّ : الصَّلاةُ . أخرجه ابن حبان في صحيحه: ١٥/١١١ رقم ٦٧١٥ و قال شعيب الأرنؤوط : إسناده قوي , و صححه الألباني في صحيح الترغيب والترهيب: رقم ٥٧٢ و في صحيح الجامع: ٥/١٥ رقم ٤٩٥١ ; و أحمد في مسنده: ٥/٢٥١ برقم ٢١١٣٩ و قال شعيب الأرنؤوط : إسناده جيد; و الطبراني في المعجم الكبير: رقم ٧٤٨٦ و في مسند الشاميين: ٨/٩٨ رقم ١٦٠٢ و قال الهيثمي في مجمع الزوائد: ٧/٢٨١ رواه أحمد والطبراني ورجالهما رجال الصحيح; و الحاكم في المستدرك : ٤/٩٢; و الخلال في السنة: ١٣٣٠; و أبو نعيم في “معرفة الصحابة: ٣/١٥٢٦ – ‘(ওই দিন বেশি দূরে নয়, যখন) অবশ্য-অবশ্যই ইসলামের হাতল’কে একটা একটা করে নষ্ট/অকেযো/অকার্যকর/রদ/বাতিল/অপসারিত করে ফেলা হবে। (প্রত্যেক বার) যখনই কোনো একটি হাতলকে নষ্ট/অকেযো/অকার্যকর/রদ/বাতিল/অপসারিত করা হবে, তখন লোকেরা তার পরের (রয়ে যাওয়া হাতল)’টিকে ধরে (ঝুলে) থাকবে। (ইসলামের) ওসব (হাতল)-এর মধ্যে প্রথমে (যে হাতল’টি) নষ্ট/অকেযো/অকার্যকর/রদ/বাতিল/অপসারিত করা হবে (সেটি হল আল্লাহ’র নাজিলকৃত) الْحُكْمُ (হুকম/বিধান) এবং সর্বশেষে (যে হাতল’টিকে -নষ্ট/অকেযো/অকার্যকর/রদ/বাতিল/অপসারিত করে ফেলা হবে, সেটি হবে) الصَّلاةُ নামায’। [সহিহ ইবনে হিব্বান-১৫/১১১ হাদিস ৬৭১৫; মুসনাদে আহমদ– ৫/২৫১ হাদিস ২১১৩৯; আল-মু’জামুল কাবীর, ত্বাবরাণী-৭৪৮৬; মুসনাদে শামেয়ীন, ত্বাবরাণী- ৮/৯৮ হাদিস ১৬০২; মুসতাদরাকে হাকিম- ৪/৯২; আস-সুন্নাহ, ইবনু খাল্লাল -১৩৩০; মাআরেফাতুস সাহাবা, আবু নুআইম- ৩/ ; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৭/২৭১]
ফায়দা: আরবী ভাষা এমনিতেই এমন একটি সমৃদ্ধ ভাষা যার কিছু কিছু ক্ষুদ্র শব্দ দিয়ে কম করে হলেও পঞ্চাশ থেকে একশ’টি অর্থে ব্যবহৃত হতে পারে, সেখানে আবার আমাদের বিশ্বনবী ﷺ বলেছেন: بعثت بجوامع الكلم -‘আমাকে ব্যাপক অর্থবোধক কথা সহকারে পাঠানো হয়েছে’। [সহিহ বুখারী, হাদিস ২৯৭৭] সুতরাং, তাঁর একেকটি ক্ষুদ্র বাণীর সুগভীর ও ব্যাপক অর্থবোধক বহু মানে ও মতলব হতে পারে। উপরের হাদিসটিও তেমনি। হাদিসটিতে تُنْتَقَضَنَّ শব্দটি এসেছে যার মূল ক্রিয়া হল اِنْتَقَضَ -যার বহু অর্থ রয়েছে, যেমন: টুকড়ো করা, ভেঙ্গে ফেলা, গুড়িয়ে দেয়া, বরবাদ করা, নষ্ট করা, অপসারিক করা, রদ করা, বাতিল করা, অকেযো করা, অকার্যকর করা, ক্ষত/যখম (injury) করা ইত্যাদি।
হাদিসটিতে বলা হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ দ্বীন ইসলামের বাঁধন/হাতল/কড়া’গুলোর মধ্যে প্রথমে যেটিকে টুকড়ো করা হবে/ভেঙ্গে ফেলা হবে/গুড়িয়ে দেয়া হবে/বরবাদ করা হবে/নষ্ট করা হবে/অপসারিক করা হবে/রদ করা হবে/বাতিল করা হবে/অকেযো করা হবে/ অকার্যকর করা হবে/ক্ষত-বিক্ষত ও যখমী করা হবে -সেটি হল الْحُكْمُ (আইন/বিচার) অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলার নাজিলকৃত শরীয়ত (আইন-কানুন) যা সর্বশেষ নবী ও রাসুল মুহাম্মাদ সা.-এর উপর নাজিল হয়েছে -কেয়ামত পর্যন্ত আনেওয়ালা মুসলমানদের মাঝে কার্যকর করার জন্য।
যেমন আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন- إِنَّا أَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِتَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ بِمَا أَرَاكَ اللَّهُ ۚ وَلَا تَكُنْ لِلْخَائِنِينَ خَصِيمًا – (হে নবী মুহাম্মাদ!) আমি তোমার প্রতি সত্যসহকারে আল-কিতাব (কুরআন) নাজিল করেছি যাতে তুমি মানুষের মাঝে (সৃষ্ট বিবাদ বিসম্বাদের) বিচার-ফয়সালা ওইভাবে করতে পারো, যেভাবে আল্লাহ তোমাকে দেখিয়ে দিয়েছেন। আর তুমি (বিশ্বাসঘাতক) খিয়ানতকারীদের পক্ষ নিয়ে (আমার বিপক্ষে) বিতর্ককারী হয়ে বসো না’। [সূর নিসা ১০৫] আল্লাহ তাআলা আরো এরশাদ করেছেন- فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا – ‘আপনার রবের শপথ, কখনো নয়! যতক্ষন পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের মাঝে সৃষ্ট বিবাদ-বিসম্বাদগুলোর জন্য (হে নবী মুহাম্মাদ!) তোমাকে বিচারক না মানবে, অতঃপর তুমি যে ফয়সালা করে দিয়েছ সে ব্যপারে (যতক্ষন পর্যন্ত) তাদের মনে দ্বিধামুক্ততা অনুভূত না হবে এবং (যতক্ষন পর্যন্ত) তারা (তোমার ফয়সালাকে) ঐকান্তিকভাবে গ্রহন করে না নিবে, ততক্ষন পর্যন্ত তারা (মূলতঃ তোমার উপর) ইমানআনায়নকারী (বিবেচিতই হবার) নয়, (বরং বিবেচিত হবে সন্দেহপোষনকারী মোনাফেক বেইমান হিসেবে)।[নিসা ৬৫]
বলা বাহুল্য, আল্লাহ’র নাজিলকৃত আইন-কানুন দিয়ে বিচার-ফয়সালা করা সম্ভব তখন যখন মুসলমানদের উপর তা কার্যকর করার জন্য মুসলীম হাকিম (খলিফা/আমীর/কাযী) নিযুক্ত থাকেন। সুতরাং, হাদিসের দুটি অর্থ হতে পারে:-
(১) ইসলামী খিলাফত / মুসলীম বাদশাহী ব্যবস্থার অধিনে আল্লাহ’র নাজিলকৃত আইন ও বিচার কার্যের দূর্গতি হওয়া, অর্থাৎ আল্লাহ’র আইন দিয়ে বিচার করার শরয়ী কোর্ট ছিল ও কিন্তু বিচার করার ক্ষেত্রে সবার সাথে ইনসাফ না করে বরং অসততার আশ্রয়ে আল্লাহ’র আইনের অপব্যবহার করে অন্যের সাথে জুলুম ও অন্যায় অবিচার করা। এটাও আল্লাহ’র নাজিলকৃত শরয়ী الْحُكْمُ (আইন/বিচার)-কে নিজ বৈশিষ্ট অনুযায়ী কার্যকর হতে না দিয়ে তা টুকড়ো টুকড়ো করা/ক্ষত-বিক্ষত করা/নষ্ট করা/রদ করা, অকার্যকর করা/ বরবাদ করার নামান্তর। আল্লাহ’র আইনের এসব দূর্গতি ও অপব্যবহারের শুরু বহু আগেই এজিদ, হাজ্জাজ বিন ইউসুফ, মারওয়ান প্রমুখ মুসলীম শাসকদের জামানায় হয়েছে -মর্মে ইতিহাসে দেখতে পাই।
(২) রাষ্ট্র থেকে গোটা ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থা’কে বিলুপ্ত করা কিংবা কমপক্ষে আল্লাহ’র নাজিলকৃত আইন দ্বারা বিচার-ব্যবস্থা পরিচালিত হওয়ার গোটা সিষ্টেমকে বিলুপ্ত করা। এই ন্যাক্কারজনক কুফরী’টি হাজ্জাজ বিন ইউসুফের মতো অসৎ ও জালেম শাসকও কখনো করার সাহস করেনি। এই কুফরী’টি হালে পানি পেয়েছে ও পরে পাকাপোক্ত হয়েছে এমন সব মুনাফেক লিডার/রাষ্ট্রপ্রধান’দের দ্বারা, যারা হয়-তো মুসলীম পরিবারে জন্মগ্রহন করার সুবাদে মুসলীম ভাবধারার নামটুকু নিয়ে সমাজে চলেছে, কিন্তু অন্তরগুলো ছিল তথাকথিত ইহুদী-খৃষ্টানদের শেখানো ধর্মনিরপেক্ষ (Secular) চিন্তাধারার রঙ দিয়ে টইটুম্বুর, যারা আইন বলে রাষ্ট্র থেকে শুধু নাম-কে-ওয়াস্তে মুমূর্ষ অবস্থায় বেঁচে থাকা ইসলামী খিলাফত-এর শুধু বিলুপ্ত করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি, বরং তদস্থলে তারা ‘ধর্মনিরপেক্ষবাদ (Secularism)’-কে মুসলীম-অমুসলীম সকল নাগরীকের জন্য একমাত্র রাষ্ট্রব্যবস্থা হিসেবে ঘোষনা দিয়েছে, এমনকি তারা মুসলমানদের জন্য হিসেবে শরয়ী আদালত ও আল্লাহ’র নাজিলকৃত আইন অনুযায়ী বিচার কার্যকর করার -যা মুসলমানদের ধর্মীয় অধিকার- কোনো ব্যবস্থার নাম-নিশানা পর্যন্ত রাখেনি, উল্টো তাদের ধর্মনিরপেক্ষ আইন ও আদালত বাদ দিয়ে মুসলমানদের দ্বারা শরয়ী বিচার সিস্টেম কার্যকর করাকে আইন বলে নিষিদ্ধ (হারাম) করে দিয়েছে এবং রাষ্ট্রীয় অপরাধ (পাপ) বলে অবিহিত করেছে !!!
তাদের এই ন্যাক্কারজনক কুফরী’টি উপরের হাদিসে বর্ণিত -আল্লাহ’র নাজিলকৃত শরয়ী الْحُكْمُ (আইন/বিচার)-কে টুকড়ো টুকড়ো করা/ক্ষত-বিক্ষত করা/নষ্ট করা/গুড়িয়ে দেয়া/বরবাদ করা/অপসারিক করা/রদ করা/বাতিল করা/অকেযো করা/ অকার্যকর করা – এজাতীয় সকল অর্থের সাথে ১০০% খাপ খায়। কমপক্ষে আমি এব্যাপারে নিঃসন্দেহ।
রাসুলুল্লাহ সা.-এর এই ভবিষ্যৎবাণী আজ এই শেষ জামানায় পূর্ণরূপে বাস্তবতার মুখ দেখেছে। আজ আমাকে একটি দেশ দেখান যেখানে দ্বীন ইসলামের বাঁধন/কড়া/হাতল’গুলোকে এক এক করে চুর্নবিচুর্ন করে দেয়া হয়নি।
সব শেষের হাতল’টি ছিল الصَّلاةُ (নামায) -সেটাকেও আজ বিশ্বের প্রায় ১৬০ কোটির উপরে মুসলীম উম্মাহ’র মধ্যে সামান্য অংশ ছাড়া বাকি প্রায় সবাই- (১) হয় মূল ৫ ওয়াক্ত ফরয নামাযকেই গোড়া থেকে ছেড়ে দিয়েছে, (২) না হয় শুধু দুই ঈদ বা জুমআর নামাযে নিজেদের উপস্থিতিটি লিখিয়ে রাখছে, (৩) আর যারাও-বা ৫ ওয়াক্ত নামায আদায় ধোরে রেখেছে, নামাযের সাথে তারা যে কী মাত্রার অত্যাচার করছে তা এ ব্যাপারে পর্যাপ্ত ইলম ও উপলোব্ধি না থাকলে বোঝানো সম্ভব নয়। এমন লোকের দেখাও মিলেছে, যে প্রায় ৭০ বছর বয়সেও জানতো না ‘ফরয গোসল’ কী; আবার এমন লোকের দেখাও মিলেছে, যিনি নামাযরত অবস্থাতেই ‘মসজিদের দেয়াল ঘড়িতে কয়টা বাজে তা দেখে’ জবাব দিতো। নামাযে ইমাম সাহেবের রাকাআত সংখ্যা নিয়ে কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব হলে পিছনের প্রায় ১৫০/২০০ জন অমনোযোগী মুক্তাদির মধ্যে একজনও দৃঢ়তার সাথে বলতে পারে না যে, ইমাম সাহেব বাস্তবেই কত রাকাত নামায পড়িয়েছেন, কিংবা তাদের কেউই লুকমা দানের মাসআলাহ শুদ্ধরূপে জানে না। (৪) তাছাড়া এই শেষ জামানার নামাজীদের মধ্যে কতজন হালাল খায়? (৫) কিংবা এই শেষ জামানার নামাজীদের মধ্যে কতজন জানে যে, তার ইমান নষ্ট হয়ে গেছে এবং প্রকৃত তওবা ও ইমানের নবায়ন ছাড়া নামায কবুল হবে না। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত এক রেওয়ায়েতে আছে- يأتي على الناس زمان يجتمعون في المساجد ليس فيهم مؤمن ” . أخرجه الحاكم في المستدرك: ٤/٤٨٩ و قال هذا حديث صحيح الإسناد على شرط الشيخين ولم يخرجاه . و وافقه الذهبي. والطحاوي في “مشكل الآثار”- ٥٩٠ , ابن أبي شيبة في “المصنف: ٣٠٣٥٥, ٣٧٥٨٦ , ابن عدي في “الكامل: ٢/٢١٤, والفريابي في “صفة المنافق”: ١٠٨, ١٠٩, ١١٠, الخلال في السُّنَّة: ٥/٥٩, رقم ١٦٠٩ – ‘মানুষের উপর এমন জামানা আসবে, যখন (লোকজন) মসজিদে একত্রিত হবে, (কিন্তু) তাদের মধ্যে কোনো মু’মিন ব্যাক্তি থাকবে না। [মুসতাদরাকে হাকিম- ৪/৪৮৯; শারহু মুশকিলিল আছার, ত্বাহাবী- ৫৯০; আল-মুসান্নাফ, ইবনু আবি শায়বা, আছার ৩০৩৫৫, ৩৭৫৮৬; আল-কামেল, ইবনুল আদী- ২/২১৪; সিফাতুল মুনাফেক, ফারইয়াবী- ১০৮, ১০৯, ১১০; আস-সুন্নাহ, ইমাম খাল্লাল- ৫/৫৯, আছার ১৬০৯] সেকুলারিজস (ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ), ডেমোক্রেসি (গণতন্ত্র), সোসালিজম (সমাজতন্ত্র), কমিউনিজম ইত্যাদির কুফরী দিকগুলোয় বিশ্বাসী হলে কারো ইমান থাকে?! এ ধরনের লোক দিয়েই-তো এই শেষ জামানার মসজিদগুলো ভরা থাকে। الله اعلم بالصواب
# যাবির বিন আব্দুল্লাহ রা. থেকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেছেন- أعاذك الله من إمارة السفهاء. قال: وما إمارة السفهاء؟ قال: “أمراء يكونون بعدي لا يهتدون بهديي ولا يستنون بسنتي، فمن صدقهم بكذبهم وأعانهم على ظلمهم؛ فأولئك ليسوا مني ولست منهم، ولا يردون علي حوضي، ومن لم يصدقهم بكذبهم ولم يعنهم على ظلمهم؛ فأولئك مني وأنا منهم، وسيردون علي حوضي . رواه: الإمام أحمد: ١١/٤٤٩رقم ١٤٣٧٨ إسناده صحيح, تحقيق: حمزة أحمد الزين ، والبزار: ٢/٢٤١ رقم ١٦٠٩, و قال الهيثمي في مجمع الزوائد: ٥/٢٤٧ رجالهما رجال الصحيح; عبد الرزاق في مصنفه: ١١/٣٤٥; ابن حبان في صحيحه: ٥/٩ رقم ١٧٢٣ و قال الأرنؤوط: صحيح على شرط مسلم ; الحاكم في المستدرك: ٣/٣٧٩ و صححه و وافقه الذهبي; وصححه أحمد شاكر في تعليقه على سنن الترمذي: ٢/٥١٤ – ‘(হে কা’ব!) তুমি নির্বোধ শাসক থেকে আল্লাহ’র আশ্রয় চেও। তিনি জিজ্ঞেস করলেন: নির্বোধ আমীর কে? রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: (ওরা হল) এমন সব আমীর যারা আমার পরে আসবে। তারা না আমার দেখানো পথে চলবে, আর না আমার আদর্শ মাফিক রীতি-নীতি চালু করবে। কাজেই যে ব্যাক্তি তাদের মিথ্যাকে সত্ত্বায়ন করবে এবং তাদের জুলুম-অন্যায়-অবিচার -এর সহায়তা করবে, ওরা আমার (কেউ) নয়, আমিও তাদের (কেউ) নই এবং তারা (কেয়ামতের দিন আমার) হাউজ (-ই-কাউসার)-এর নিকটে আসতে পারবে না। আর যে ব্যাক্তি তাদের মিথ্যাকে সত্ত্বায়ন করবে না এবং তাদের জুলুম-অন্যায়-অবিচার -এর সহায়তা করবে না, ওরা আমার , আমিও তার এবং (কেয়ামতের দিন) তারা আমার হাউজ (-ই-কাউসার)-এর নিকটে সহজে আসতে পারবে’ – [মুসনাদে আহমদ, ৩/৩২১ ; সহিহ ইবনে হিব্বান– ৫/৯ হাদিস ১৭২৩; মুসনাদে বাযযার- ২/২৪১ হাদিস ১৬০৯; মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক- ১১/৩৪৫; মুসতাদরাকে হাকিম- ৩/৩৭৯; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৫/২৪৭]
# আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে এরশাদ করেছেন- لا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَسُودَ كُلَّ قَبِيلَةٍ مُنَافِقُوهَا . رواه الداني في السنن الواردة في الفتن : رقم ٤٠٦ و قال ابو عبد الله العافعي: حسن : ص ٤٣٧; و ابو نعيم في صفة النفاق ونعت المنافقين : ١/١٣٢ رقم ١٠٦ ; ; البزار في البحر الزخار: رقم ١٤٣٤ و الطبراني في المعجم الكبير: رقم ٩٧٧١ عن عبد الله بن عمر وفي المعجم الأوسط : رقم ٧٧١٥ عن نفيع بن الحارث; ابن أبي الدنيا في المتمنين : رقم ١٤٨ – ‘কেয়ামত কায়েম হবেনা, যাবৎ না সকল কবিলাহ’র প্রধানরা হয় তাদের (মধ্যকার) মুনাফেকরা’। [আস-সুনানুল ওয়ারিদাহ, ইমাম দানী, হাদিস ৪০৬; সিফাতুন নিফাক, ইমাম আবু নুআইম- ১/১৩২ হাদিস ১০৬; আল-মু’জামুল কাবির, ত্বাবরাণী- ৯৭৭১; আল-মু’জামুল আউসাত, ত্বাবরাণী- ৭৭১৫]
ফায়দা: আরবে সেকালে ‘কবিলাহ’ বলতে ছোট বা বড় কোনো গোত্র কিংবা কোনো এলাকার জনবসতিকে উদ্দেশ্য করা হত। এসব কবিলাহ’র নেতা, মাতব্বর, মুরুব্বিরাও থাকতো। ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন- خَرِبَتِ الْعَرَبُ وَهِيَ عَامِرَةٌ , قَالُوا : وَلِمَ ذَلِكَ يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ ؟ قَالَ : ” إِذَا ظَهَرَ فُجَّارُهَا عَلَى أَبْرَارِهَا , وَسَادَ الْقَبِيلَ الْعَظِيمَ مُنَافِقُوهُ . رواه الداني في السنن الواردة , باب ما جاء من أشراط الساعة رفع الأشرار ووضع الأخيار , رقم ٤٠٢, بسند فيه مجهولان – ‘(এমন এক জামানা আসবে যখন) আরবরা (ইমানে আমলে) ধ্বংস-বরবাদ হয়ে যাবে, আর তা হবে শাসক/সরকার (-এর দ্বারা)। লোকেরা জিজ্ঞেস করলো: ‘হে আমিরুল মু’মিনিন! সেটা কেনো হবে’? তিনি বললেন: ‘যখন (আরব জাহানে) তাদের ভাল/নেককার’দের উপরে ফুজ্জার (পাপে অভ্যস্ত লোক)রা (প্রবল আকারে সমাজে) প্রকাশ পাবে, (এবং) বিরাট গোষ্ঠির প্রধান হবে তাদের মুনাফেকদের কেউ’। [আস-সুনানুল ওয়ারিদাহ, ইমাম দানী, হাদিস ৪০২]
আরব বিশ্বে আজ এসব গোত্র প্রথা উঠে গেছে। আজ এই আধুনিক যুগে আরব-অনারব দেশগুলি তাদের নিজ নিজ দেশের বিভিন্ন এলাকার জনবসতিকে বিভিন্ন নামে চিহ্নিত করে থাকে। যেমন, বাংলাদেশের মানুষ জনবসতির প্রকৃতি ও পরিধির উপর ভিত্তি করে গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, বিভাগ, সিটি করপোরেশন ইত্যাদি বিভিন্ন নামে চিহ্নিত করে থাকে। যেমন, ভারতে এজাতীয় এলাকা করণের পাশাপাশি রাজ্য (স্টেট) এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল নামেও এলাকাকরণ করা রয়েছে। এজন্য হাদিসের ‘কবিলাহ’ শব্দটি দেখে মস্তিষ্কে শুধুমাত্র আরবের গোত্র বা জনবসতি চিন্তা করার কোনো কারণ নেই, কারণ হাদিসটিতে আরবের তৎকালীন প্রচলিত পরিভাষা ‘কবিলাহ’ শব্দটি ব্যবহার করে মূল বিষয়বস্তুটিকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে।আমার মতে, এই ভবিষ্যৎবাণী আমাদের এই শেষ জামানায় পূর্ণ হয়ে গেছে এবং আজ পৃথিবীর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দেখলে আপনি এমন কোনো গ্রাম বা শহর এলাকা কিংবা কোনো দেশ পাবেন না, যার দায়িত্বশীল-প্রধান মুসলীম নামধারী কেউ অথচ সে মুনাফেক নয়। মুনাফেক মানে, যে দাবী করে যে সে মুসলীম, অথচ বাস্তবে সে পূর্ণাঙ্গ দ্বীন ইসলাম ও শরীয়ত কায়েমে বিশ্বাসী নয়, চায়ও না যে তা মুসলমানদের ব্যাক্তি-জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক-জীবন এবং রাষ্ট্রীয় ও বহিঃরাষ্ট্রীয় জীবনে বায়েম হোক। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন- إن من أشراط الساعة أن يوضع الأخيار ويرفع الأشرار ويسود كل قبيلة منافقوها . رواه الداني في السنن الواردة , باب ما جاء من أشراط الساعة رفع الأشرار ووضع الأخيار , رقم ٤٠٣, قال ابو عبد الله العافعي: حسن : ص ١٣٧ – ‘কেয়ামতের লক্ষন সমূহের মধ্যে এও রয়েছে যে, ভাল( মানুষ ও বিষয়)গুলিকে (কৌশলে) নষ্ট/বরবাদ করে ফেলা হবে এবং খারাপ-মন্দ( মানুষ ও বিষয়)গুলিকে উচ্চে তুলে ধরা হবে এবং সকল কবিলাহ’র প্রধান হবে তাদের মুনাফেকরাই ’। [আস-সুনানুল ওয়ারিদাহ, ইমাম দানী, হাদিস ৪০৩]
যেমন জনতা, তেমন তাদের প্রধানরা; সব মুনাফেক ও খবিস কিসিমের মানুষজন দিয়ে পৃথিবীটা ভরা, যার মাঝে সামান্য কিছু মুমিন নর-নারী তাদের মাঝে ভয় নিয়ে চলাচল করে থাকে। এমনটাই হবে ইমাম মাহদী রা. আসার আগে আগে সৃষ্ট পৃথিবীর মানুষজনের অবস্থা। ইমাম মাহদী রা.-এর আগমন অতীব নিকটে চলে এসেছে। الله اعلم بالصواب
# হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রা. বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে এরশাদ করতে শুনেছি- يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ يَسْتَخْفِي الْمُؤْمِنُ فِيهِمْ ، كَمَا يَسْتَخْفِي الْمُنَافِقُ فِيكُمُ الْيَوْمَ . اخرجه ابو نعيم فى صفة النفاق ونعت المنافقين, رقم الحديث ١٠٨; الداني في السنن الواردة: رقم ٤٠١; أخرجه أيضًا الطبرانى فى الشاميين: ١/١٤٨ رقم ٢٣٨ ، والديلمى ٥/٤٤١ رقم ٨٦٧٩ . ; و وقره جلال الدين السيوطي في جامع الأحاديث: ٢٣/٤٦٢ رقم ٢٦٤٣٤ ; و المتقي في كنز العمال: ١١/٣١١١١– ‘মানুষের উপর এমন একটি জামানা আসবে, যখন মু’মিন ব্যাক্তি তাদের মাঝে এমনভাবে লুকিয়ে চলতে চাইবে, যেভাবে আজ মুনাফেক ব্যাক্তি তোমাদের মাঝে (নিজের প্রকৃত পরিচয় গোপন করে) লুকিয়ে চলতে চায়’। [সিফাতুন নিফাক, আবু নুআইম, হাদিস ১০৮; আস-সুনানুল ওয়ারিদাহ, ইমাম দানী, হাদিস ৪০১; মুসনাদে শামেঈন, ত্বাবরাণী- ১/১৪৮ হাদিস ২৩৮; মুসনাদে দাইলামী- ৫/৪৪১ হাদিস ৮৬৭৯; জামেউল হাদিস, সুয়ূতী- ২৩/৪৬২ হাদিস ২৬৪৩৪; কানজুল উম্মাল- ১১/৪১১১১]
ফায়দা: এর কারণ হল, সেই জামানায় সমাজে সমাজে কাফের ও মুনাফেকদের রাজত্ব, দাপট, ক্ষমতা ও প্রভাব ব্যাপক আকার ধারন করবে এবং তারা ইসলাম বিরোধী যে সমাজ ও পরিবেশ তৈরী করবে তাতে মু’মিনদের জন্য ইমানী পরিচয় নিয়ে সমাজে চলাফেরা করাটা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। হাসসান বিন আতিয়াহ’র সূত্রে হাদিসটি এভাবে এসেছে: سَيَظْهَرُ شِرَارُ أُمَّتِي عَلَى خِيَارِهِمْ حَتَّى يَسْتَخْفِيَ فِيهِمُ الْمُؤْمِنُ كَمَا يَسْتَخْفِيَ فِينَا الْمُنَافِقُ . رواه الداني في السنن الواردة: رقم ٤٠١ – শিঘ্রই আমার উম্মতের নিকৃষ্টরা তাদের উৎকৃষ্টদের উপরে প্রাধান্য বিস্তার করে নিবে। এমনকি তাদের মাঝে মু’মিন ব্যাক্তি এমনভাবে লুকিয়ে চলতে চাইবে, যেভাবে (আজ) আমাদের মাঝে মুনাফেক ব্যাক্তি (নিজের প্রকৃত পরিচয় গোপন করে) লুকিয়ে চলতে চায়’। [আস-সুনানুল ওয়ারিদাহ, ইমাম দানী, হাদিস ৪০১] এখানে আমাদের এই শেষ জামানার মুমিনদের কথা বলা হচ্ছে।
কারণ, প্রথম শ্রেণির মুমিন পরিচয় দিতে হলে-তো শরয়ী চাহিদা ও শক্তি-সামর্থ অনুপাতে তাকে হাত/ক্ষমতা দিয়ে মুনকার (নাজায়েয বিষয়গুলি)কে পরিবর্তন করার চেষ্টা করতে হবে, কিংবা দ্বিতীয় শ্রেণির মুমিন পরিচয় দিতে হলে-তো শরয়ী চাহিদা ও শক্তি-সামর্থ অনুপাতে তাকে কমপক্ষে মুখ দিয়ে সমাজের মুনকার (নাজায়েয বিষয়গুলি)কে পরিবর্তন করার চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু সে সময় পৃথিবীতে সমাজে সমাজে কাফের-মুনাফেকদের সংখ্যা ও প্রভাব প্রতিপত্তির তুলনায় মুমিনদের সংখ্যা ও প্রভাব প্রতিপত্তি এতটাই কম থাকবে যে, তখন সমাজের মুনকার (নাজায়েয বিষয়গুলি)কে পরিবর্তনের জন্য হাত বা মুখ ব্যবহার করাটা মুমিনের জান-মালের নিরাপত্তার জন্য হুমকী হিসেবে বিবেচিত হবে। ফলে মুমিনদের বেশিরভাগকেই তৃতীয় শ্রেণির মুমিনের মতো সমাজের মুনকার (নাজায়েয বিষয়গুলি)র প্রতি অন্তরে শুধু ঘৃনাবোধ ও অন্তর্জ্বালা নিয়েই থাকতে হবে, পরিবর্তন করার মতো কোনো পথ তারা দেখবে না। যেমন, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি- حَدَّثَنَا أَزْهَرُ بْنُ مَرْوَانَ الرَّقَاشِيُّ ، قَالَ : حَدَّثَنَا جَعْفَرُ بْنُ سُلَيْمَانَ ، قَالَ : حَدَّثَنَا أَشْرَسُ أَبُو شَيْبَانَ ، عَنْ عَطَاءٍ الْخُرَاسَانِيِّ ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، قَالَ : ” يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ يَذُوبُ فِيهِ قَلْبُ الْمُؤْمِنِ ، كَمَا يَذُوبُ الْمِلْحُ فِي الْمَاءِ ” ، قِيلَ : مِمَّ ذَاكَ ؟ ، قَالَ : ” مِمَّا يَرَى مِنَ الْمُنْكَرِ لا يَسْتَطِيعُ أَنْ يُغَيِّرَهُ . أخرجه ابن أبي الدنيا في الأمر بالمعروف و النهي عن المنكر : ١/٢١٩ رقم : ٢٧, ١٠٤ ; وفي العقوبات : رقم ٤٦ ; لهذا الحديث علتان : فيه عطاء الخرساني لم يسمع من ابن عباس , و أشرس أبو شيبان شك في هذا الحديث ولم يجزم برفعه حيث قال أحسبه عن ابن عباس عن رسول الله صلي الله عليه وسلم ; أخرجه ابن وضاح ايضا في البدع : رقم ٢٧٥ – ‘মানুষের উপর এমন এক জামানা আসবে, যে জামানায় মুমিনদের অন্তর এমনভাবে গলে যাবে, যেভাবে লবন পানিতে গলে যায়’। জিজ্ঞেস করা হল: ‘এমনটা কেনো হবে – ইয়া রাসুলাল্লাহ’ ? তিনি বললেন: ‘এজন্য হবে যে, তারা (তখনকার সমাজে) মুনকার (শরীয়ত বিরোধি পাপগুলো) দেখতে পাবে, কিন্তু তা পরিবর্তন করতে সমর্থ হবে না’। [আল-উকুবাত, বনে আবিদ্দুনিয়া, হাদিস ৪৬; আমর বিল মা’রুফ ওয়ান নাহি আনিল মুনকার, ইবনে আবিদ্দুনিয়া, হাদিস ২৭, ১০৪; আল-বাদউ, ইবনে ওযাইহ, হাদিস ২৭৫; মুসনাদে ফিরদাউস, দাইলামী- ৫/৪৪০ হাদিস ৮৬৭৭] এটা আমাদের এই শেষ জামানার জামানার মুমিনদের অবস্থার দিকে ইশারা করা হচ্ছে। الله اعلم بالصواب
# আবু হুরায়রাহ রা. থেকে সহিহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- بَدَأَ الإِسْلامُ غَرِيبًا ، وَسَيَعُودُ كَمَا بَدَأَ غَرِيبًا ، فَطُوبَى لِلْغُرَبَاءِ . رواه مسلم , كتاب الإيمان، باب بيان أن الإسلام بدأ غريبًا وسيعود غريبًا وأنه يأرز بين المسجدين: ١/١٣١ رقم ١٤٥ ; و ابن ماجة في سننه , أبواب الإيمان , باب ما جاء أن الإسلام بدأ غريبا وسيعود غريبا: رقم ٢٦٢٩ ; و الداني في السنن الواردة في الفتن : ١/٢٥ ; وصححه الألباني في الصحيحة : ٣/٢٦٧ – ‘ইসলাম শুরু হয়েছিল অপরিচিত অবস্থায়। অচিরেই তা (আবারো) পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবে, যেমনি ভাবে তা অপরিচিত অবস্থায় শুরু হয়েছিল। সুতরাং, সুসংবাদ (রইলো সেই সময়কার আহলে-ইসলাম তথা দ্বীনের ধারক বাহক) অপরিচিতদের জন্য’। [সহিহ মুসলীম- ১/১৩১ হাদিস ১৪৫; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ২৬২৯; আস-সুনান, ইমাম দানী- ১/২৫; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৭/২৭৮]
ফায়দা: রাসুলুল্লাহ ﷺ নবুওত লাভের পর মক্কাবাসীকে দ্বীন ইসলামের দিকে দাওয়াত দিতে আরম্ভ করলে ম্ক্কার যৎসামান্য কিছু মানুষ ইসলাম কবুল করেন, বাকি কাফের-মুশরেকরা ইসলামকে-তো গ্রহন করেইনি, উল্টো তাদের সমাজপতি, নেতা-পাতিনেতা ও সাধারণ জনগণ অসহায় মুসলমানদের উপরে অমানবিক ভাবে দৈহিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতে থাকে। এমতাবস্থায় মুসলমারা যতটা সম্ভব নিজেদের ইসলামকে গোপনে গোপনে মেনে চলতে এবং গোপনে গোপনে দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার চেষ্টা করতেন; জনসম্মুখে ইসলামকে প্রকাশ করার সাহস দেখানোর মতো পরিবেশ পরিস্থিতি ওটা ছিল না। কেউ পূর্বপুরুষদের রেখে যাওয়া দ্বীন পরিত্যাগ করে দ্বীন-ইসলাম গ্রহন করেছে জানতে পেলেই শুরু হয়ে যেতো নির্যাতনের ষ্টিমরোলার। সেসময় কাফের-মুশরেকদের পক্ষ থেকে গালিগালাজ, হাত/পা/লাঠি/চাবুক দিয়ে পিটানো, মরুভূমির উত্তপ্ত বালুর উপরে শুইয়ে দিয়ে বুকের উপরে ভারী পাথড় চাপা দান, জ্বলন্ত কয়লার উপরে শুইয়ে দিয়ে বুকের উপরে পা দিয়ে চেঁপে ধরা, গলা চেঁপে ধরে শ্বাসরুদ্ধ করার চেষ্টা করা, গলায় রশি বেঁধে এদিক সেদিক টেনে-হেঁচড়ে বেড়ানো, বুক পর্যন্ত মাটির নিচে চাঁপা দিয়ে রাখা, লজ্জাস্থানে বল্লম মেড়ে শহিদ করে দেয়া, দুই পা’কে দুই দিকে মুখকারী দু’টি উটের সাথে বেঁধে উটদুটিকে তাদের মুখ বরাবর তাড়িয়ে নিয়ে গিয়ে শরীর থেকে পা’কে ছিড়ে ফেলা, পা’কে উটের সাথে বেঁধে ছেঁচড়িয়ে নিয়ে বেড়ানো -কোন নির্যাতনটা বাদ গেছে। এসব করেও তারা ক্ষ্যান্ত হয়নি, তারা মুসলমানদেরকে প্রায় তিন বছরের জন্য সামাজিক ভাবে বয়কট করে “শে’বে আবু তালেবে” অবরুদ্ধ জীবনযাপনে বাধ্য করেছিল, ক্ষুধার যন্ত্রনায় বাচ্চাদের ক্রন্দনের রোল পড়ে যেতো, কেউ কেউ দুই-তিন দিন পর মুখে কিছু দেয়ার সুযোগ পেতো, এমনকি তারা বাবলা গাছের পাতা খেয়ে কোনো মতে জীবন ধারণের চেষ্টা করেছেন। [তবাকাত, ইবনে সাদ- ১/১৩৯; ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার- ৭/১৪৭]
তখন মুসলমানরা ছিল সংখ্যায় নগণ্য এবং একেবারে অসহায় ও দূর্বল একটি গোষ্ঠি, যে পরিস্তিতিকে বদলানোর মতো বাহ্যিক কোনো উপকরণ ও শক্তি-সামর্থ বা কর্তৃত্ব তাদের হাতে ছিল না। ইসলাম ও মুসলমানদের এই শুরুর অবস্থাটির দিকে ইশারা করেই উপরোক্ত হাদিসে বলা হয়েছে- بَدَأَ الإِسْلامُ غَرِيبًا – ‘ইসলাম শুরু হয়েছিল অপরিচিত অবস্থায়’।
হাদিসটিতে আরো ইংগীত করা হয়েছে যে, ভবিষ্যতেও এমন এক জামানা আসবে, যখন পৃথিবীতে দ্বীন-ইসলামের প্রকৃত ধারক-বাহকরা সংখ্যায় হবে অতীব নগণ্য এবং পৃথিবীর বিরাজমান সমাজ ও শক্তির দাপটের সামনে তারা থাকবে অতীব অসহায় ও দূর্বল। পৃথিবীর কাফের মুশরেকদের কাছে মার খেয়ে ফিরবে, অমানবিক নির্যাতন ও ষড়যন্ত্রের স্বীকার হবে। কেউ পূর্ণাঙ্গ দ্বীন-ইসলাম নিয়ে দাঁড়াতে চাইলে, তার উপরে নানাবিধ অমানবিক নির্যাতন ও ষঢ়যন্ত্র আছাড় খেয়ে পড়বে, ফলে তাদের মধ্যে বেশির ভাগে মুমিন নর-নারীরা পূর্ণাঙ্গ দ্বীন-ইসলামের আহবান প্রকাশ্যে জানানোর স্থলে যতটা সম্ভব গোপনে গোপনে জানাতে চাইবে; এর মধ্যে থারা কিছুটা নিরাপত্তা বোধ করবে। সে জামানায় ইসলাম ও মুসলমানদের এধরনের পরিস্থিতির দিকে ইশারা করেই উপরোক্ত হাদিসে বলা হয়েছে- سَيَعُودُ كَمَا بَدَأَ غَرِيبًا– ‘অচিরেই তা (আবারো) পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবে, যেমনি ভাবে তা অপরিচিত অবস্থায় শুরু হয়েছিল’। সম্ভবতঃ এই জামানার দিকে ইংগীত করেই আবু হুরায়রাহ রা. থেকে এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- يأتي على الناس زمان يخير فيه الرجل بين العجز والفجور ، فمن أدرك ذلك الزمان فليختر العجز على الفجور . أخرجه الحاكم: ٤/٤٣٨ , إسناده ضعيف ; وأحمد : ٢/٢٧٨ و ٤٤٧ ، وأبو يعلى : ٤/١٥١٦ ; و البيهقي في الزهد الكبير: ٢/٢٩ ; اورده الألباني في السلسلة الضعيفة والموضوعة : ٨/١٩٠ – ‘মানুষের উপরে এমন এক জামানা আসবে, যে জামানায় ব্যাক্তিকে অপারগতা এবং নাফরমানীর মাঝে (যে কোনো একটিকে বেঁছে নিতে) এখতিয়ার দেয়া হবে। সুতরাং, যে ব্যাক্তি সেই জামানা পাবে, সে যেন অবশ্যই পাপের স্থলে অপারগতাকেই বেঁছে নেয়’। [মুসতাদরাকে হাকিম- ৪/৪৩৮; মুসনাদে আহমদ- ২/২৭৮; মুসনাদে আবু ইয়া’লা- ৪/১৫১৬; আয-যহদ, বাইহাকী- ২/২৯] আলী রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বর্ণনা করেন- يُوشِكُ أَنْ يَأْتِيَ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ لا يَبْقَى مِنَ الإِسْلامِ إِلا اسْمُهُ , وَلا يَبْقَى مِنَ الْقُرْآنِ إِلا رَسْمُهُ , مَسَاجِدُهُمْ يَوْمَئِذٍ عَامِرَةٌ , وَهِيَ خَرَابٌ مِنَ الْهُدَى . رواه الداني في السنن الواردة في الفتن , بَابُ مَا جَاءَ فِي شِدَّةِ الزَّمَانِ وَفَسَادِ الدِّينِ : رقم ٢٣٩ موقوفا ; ابن عدي في الكامل : ٤/٢٢٧ ، والبيهقي في شعب الإيمان : ٣/٣١٧ مرفوعا ; الديلمي في مسنده : ١/١٠٧ ; اسناده منقطع و ضعيف جدا – ‘অচিরেই মানুষের উপরে এমন জামানা আসবে, যখন ইসলামের নামটুকু ছাড়া কিছু বাকি থাকবে না, কুরআনের রসমটুকু ছাড়া কিছু বাকি থাকবে না, সেদিন তাদের মসজিদগুলো (মুসুল্লিদের দ্বারা বাহ্যতঃ) আবাদ থাকবে, কিন্তু তা থাকবে হেদায়েত থেকে খালি’। [আস-সুনানুল ওয়ারিদাহ, ইমাম দানী- ২৩৯; আল-কামেল, ইবনু আদী- ৪/২২৭; শুয়াবুল ইমান, বাইহাকী- ৩/৩১৭; মুসনাদে দাইলামী- ১/১০৭]
ইসলামের সুদীর্ঘ প্রায় ১৪৫০ বছরের ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, রাসুলুল্লাহ ﷺ -এর সময় থেকে নিয়ে বিগত ১৯২০ ইং সালে ‘উসমানী খিলাফত’ ধ্বংসের আগ পর্যন্ত মুসলমানদের উপরে এরকম ব্যাপক দূর্দশাগস্থ অবস্থা কখনো দেখা যায়নি। ১৯২২ ইং সালে ‘উসমানী খিলাফত’ ধ্বংসের পর মুসলমানরা দেশে দেশে টুকড়ো হতে থাকে এবং মুসলীম নামধারী লিডার/রাষ্ট্রপ্রধানরা দ্বীন-ইসলামের পরিবর্তে ইহূদী-খৃষ্টানদের শেখানো পথভ্রষ্ঠ ও কুফরী মতবাদ সেকুলারিজম (ধর্মনিরপেক্ষবাদ)-কে তাদের রাষ্ট্রীয় চেতনা/মতবাদ হিসেবে গ্রহন করে নেয়। তখন এই কুফরী মতবাদটি উম্মাহ’র কিছু পথভ্রষ্ঠ লিডারদের হাত ধরে মুসলীম উম্মাহ’র সামনে এমন এক জাদুময় আকর্ষনী প্রভাব নিয়ে আবির্ভূত হয় যে, উম্মাহ’র বেশিরভাগ অংশ এই ঘনকালো অন্ধকারময় ফিতনার অতল গভীরে হারিয়ে যেতে থাকে। আজ ‘উসমানী খিলাফত’ ধ্বংসের প্রায় ১০০ বছর পর ২০১৯ সালে এসে আমরা যখন পৃথিবীর মুসলীম উম্মাহ’র দিকে তাকাই, তখন দেখতে পাই যে, উম্মাহ’র সিংহভাগই আজ ইহূদী-খৃষ্টানদের মতো ‘ধর্মনিরপেক্ষ’; অর্থাৎ গোটা রাষ্ট্র-ব্যবস্থা, সংবিধান ও বিচার ব্যবস্থা থেকে দ্বীন ইসলামকে পাকছাফ রাখায় বিশ্বাসী। বাদ বাকি যে সকল মুসলমান নর-নারী ব্যাক্তি-পারিবারিক জীবন থেকে নিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবন সর্বক্ষেত্রে দ্বীন ইসলামকে বুক-টান করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চোখ জুড়াতে চায়, তারা আজ পৃথিবীর প্রতিটি মুসলীম-অমুসলীম প্রধান দেশে ঠিক ওই অবস্থার স্বীকার যে অবস্থাটি ইসলামের শুরুর যুগে মক্কার কাফের-মুশরেকদের দ্বারা সৃষ্টি হয়েছিল।
এই হাদিসটিতে মূলত: আমাদের এই ‘শেষ জামানা’র ইসলাম ও মুমিন-মুসলমানদের দূরাবস্থার দিকে ইশারা করা হয়েছে, যে মুমিন নর-নারীরা এই দূর্দশার মাঝেও দ্বীনকে পূণরায় জীবিত করার লক্ষ্যে সাধ্য মতো মুজাহাদাহ চালাতে থাকবে। এদের দিকে ইশারা করেই হাদিসটিতে সুসংবাদ দিয়ে বলা হয়েছে- فَطُوبَى لِلْغُرَبَاءِ – ‘সুতরাং, সুসংবাদ (রইলো সেই সময়কার আহলে-ইসলাম তথা দ্বীনের ধারক বাহক) অপরিচিতদের জন্য’। যেমন, সুহাইল বিন সা’দ রা. থেকে বর্ণিত হাদিসটিতে এও রয়েছে যে- قالوا يا رسول الله ومن الغرباء قال الذين يصلحون عند فساد الناس. أورده الهيثمي في: مجمع الزوائد : ٧/٢٧٨ وقال: رواه الطبراني في الثلاثة ورجاله رجال الصحيح غير بكر بن سليم وهو ثقة – ‘…লোকেরা জিজ্ঞেস করলো: ইয়া রাসুলাল্লাহ ! অপরিচিত কারা? তিনি বললেন: ‘যারা -মানুষজন (ইমান আমলে) নষ্ট হয়ে যাওয়ার সময় (তাদেরকে পূণরায় দ্বীনের উপরে দাঁড় করিয়ে দেয়ার জন্য) সংশোধনকর্ম চালাবে’। [ত্বাবরাণী:মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৭/২৭৮] এই হাদিসটি আমাদের এই শেষ জামানায় পূর্ণ হয়ে গেছে, যার ইংগীত নিম্নের হাদিসটিতেও রয়েছে। الله اعلم بالصواب
# আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- إِنَّكُمْ فِي زَمَانٍ مَنْ تَرَكَ مِنْكُمْ عُشْرَ مَا أُمِرَ بِهِ هَلَكَ، ثُمَّ يَأْتِي زَمَانٌ مَنْ عَمِلَ مِنْكُمْ بِعُشْرِ مَا أُمِرَ بِهِ نَجَا . أخرجه الترمذي : ٤/٥٣٠ رقم ٢٢٦٧ ; والطبراني في المعجم الصغير: رقم ١١٥٦ ، وأبو نعيم في الحلية : ٧/٣١٦ ; وابن عدي : ٧/١٨ ، ترجمة ١٩٥٩ نعيم بن حماد. ; قال ابن حجر في الأمالي المطلقة : ص ١٣٦: هذا حديث حسن غريب كما في موسوعة الحافظ ابن حجر الحديثية : ٦/٣٤٦ ; وله شاهد في المسند لأحمد : ٥/١٥٥ – ‘নিশ্চই তোমরা (আজ এমন এক) জামানায় রয়েছো, (তোমাদেরকে আল্লাহ’র তরফ থেকে) যে হুকুম দেয়া হয়েছে, (তা থেকে) তোমাদের যে কেউ এক-দশমাংশ ছেড়ে দিবে, সে (আখেরাতে) ধ্বংস হয়ে যাবে। এরপর (এমন এক) জামানা আসবে, (যে জামানায় তোমাদের মুসলমানদের অবস্থা এত নাজুক হবে যে, তোমাদেরকে আল্লাহ’র তরফ থেকে) যে হুকুম দেয়া হয়েছে, তোমাদের যে ব্যাক্তি (তার) এক-দশমাংশর উপর আমল করবে, সে নাজাত পাবে’। [সুনানে তিরমিযী- ৩/৫৩০ হাদিস ২২৬৭; আল-মু’জামুস সাগীর, ত্বাবরাণী, হাদিস ১১৫৬; আল-কামেল, ইবনু আদী- ৭/১৮; ফাইযুল কাদীর, মুনাভী- ২/৬৯০ হাদিস ২৫৪২; কানজুল উম্মাল- ১৪/২৫৪ হাদিস ৩৮৬২৬]
ফায়দা: আবু যর রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- إِنَّكُمْ فِي زَمَانٍ عُلَمَاؤُهُ كَثِيرٌ، خُطَبَاؤُهُ قَلِيلٌ، مَنْ تَرَكَ فِيهِ عُشَيْرَ مَا يَعْلَمُ هَوَى، أَوْ قَالَ: هَلَكَ، وَسَيَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ يَقِلُّ عُلَمَاؤُهُ وَيَكْثُرُ خُطَبَاؤُهُ، مَنْ تَمَسَّكَ فِيهِ بِعُشَيْرِ مَا يَعْلَمُ نَجَا . رواه الإمام أحمد : ٥/١٥٥ , اسناده ضعيف – ‘তোমরা (আজ এমন এক) জামানায় রয়েছো, (যখন তোমাদের মাঝে কুরআন সুন্নাহ’র গভীর জ্ঞানী) ওলামা রয়েছে অনেক, আর বক্তা রয়েছে কম। (এমতাবস্থায় তোমাদের মধ্যে) যে ব্যাক্তি তাতে জেনেশুনে (তার উপরে আদিষ্ট হুকুমের) এক-দশমাংশ ছেড়ে দিবে, সে কুপ্রবৃত্তিগ্রস্থ হয়ে যাবে’, অথবা বলেছেন: ‘সে ধ্বংস হয়ে যাবে’। অচিরেই (এমন এক) জামানা আসবে, (যখন কুরআন সুন্নাহ’র গভীর জ্ঞানী) ওলামা হবে কম, আর (ইলমে অপরিপক্ক) বক্তা হবে বেশি। (সে জামানায় অবস্থা এত সোচনীয় হবে যে,) যে (মুমিন) ব্যাক্তি জানা জিনিসের এক-দশমাংশ আকড়িয়ে ধরবে, সে নাজাত পাবে’। [মুসনাদে আহমদ- ৫/১৫৫; কানজুল উম্মাল– ১৪/২৫৫ হাদিস ৩৮৬২৯]
শেষ জামানায় পৃথিবী জুড়ে কাফের ও মুনাফেক শাসকরা তাদের অনুসারীদেরকে সহ প্রবল হয়ে উঠবে এবং তারা সমাজে মুমিনদেরকে একেবারে কোণঠাসা করে দিবে, শরীয়তের অত্যাবশ্যক অনেক কিছুই জোর করে মানতে দিবে না বা মানতে বাঁধার সৃষ্টি করবে, বিভিন্ন ভাবে হেনস্ত করবে, অন্যায় অবিচার করবে, জুলুম অত্যাচার চালাবে, এমনকি বিভিন্ন অযুহাতে হত্যাও করে ফেলবে। এমতাবস্থায় কোনো মুনিনের জন্য যদি এক-দশমাংশেষ বেশি শরীয়ত মানা দূঃসাধ্য হয়ে যায়, তাহলে সে ততটুকু মেনেই আল্লাহ কাছে ইস্তেগফার করতে থাকবে। উদাহরণ স্বরূপ, আজ চীনে লক্ষাধিক মুসলমানকে বন্দি-শিবিরে আটক করে রাখা হয়েছে এবং তাদেরকে জোর করে দ্বীন-ইসলাম ত্যাগ করানোর জন্য মানসিক ও শারীরীক অত্যাচার চালানো হচ্ছে, কেউ রোযা রাখতে চাইলে তাকে পুলিশ ধরে জোর করে রোযা ভাঙ্গাচ্ছে। বিভিন্ন দেশে মুসলীম নারী মাথা কাপড়ে ঢেকে বাড়ি থেকে বেড় হলে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে, জোর করে মাথার স্কার্প খোলানো হচ্ছে, স্কার্প পরিহিত অবস্থায় বিচারক তার সাথে কথা পর্যন্ত বলছে না, আইন করে ছেলে মেয়ে একসাথে সাতার ও গোসল করানো হচ্ছে ইত্যাদি। আমর বিল মা’রুফ ও নাহি আনিল মুনকার পালন-তো আরো দূরের কথা; এটা করতে গেলেইতো ‘সন্ত্রাসী’ লেভেল লাগিয়ে জীবনের বোরোটা বাজিয়ে দেয়া হচ্ছে। উপরোক্ত হাদিসটি বোঝার ক্ষেত্রে এসব পরিস্থিতি সামনে রাখতে হবে। পাইকারী হারে সকল মুমিনের জন্য এই হাদিসের মর্মার্থ প্রযোজ্য হবে না। স্থান কাল পাত্র ভেদে প্রযোজ্য হবে। الله اعلم بالصواب
# উৎবাহ বিন গাযওয়ান রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেছেন- إن من ورائكم أيام الصبر ، للمتمسك فيهن يومئذ بما أنتم عليه أجر خمسين منكم . قال : يا نبي الله ! أو منهم ؟ قال : بل منكم . ثلاث مرات أو أربعًا . أخرجه ابن نصر المروزي في السنة : رقم ٣٣ ; و إسناده صحيح رجاله كلهم ثقات لولا أن إبراهيم بن أبي عبلة عن عتبة ابن غزوان مرسل , لكن له شواهد يقوّيه من حديث عبد الله بن مسعود و أبي ثعلبة الخشني و أنس بن مالك و أبي هريرة , كما أخرجه الطبراني في المعجم الكبير: ١٧/١١٧ ، وفي الأوسط : ٣/٢٧٢ ، وفي مسند الشاميين : ١/١٧; أبو داود : ٤٣٤١ ، والترمذي : ٢٢٦٠ قال : حديث حسن غريب، وابن ماجه : ٤٠١٤ ; البزار في مسنده : ٥/١٧٨ رقم ١٧٧٦ ; الدارقطني في المزكيات : ٨٨ ; وابن حبان : ١٨٥٠ ، والحاكم : ٧٩١٢ ; و ابن أبي الدنيا في الصبر: ١/٤٢ ; و صححه الألباني بمجموع طرقه في السلسلة الصحيحة : رقم ٤٩٤ – “নিশ্চই তোমাদের পরে সবর/ধৈর্যের দিনসমূহ (আসবে, যখন তোমাদেরকে বিভিন্ন ফিতনায় ধৈর্যধারন করে থাকতে হবে, তবে তাতে ধৈর্য ধরা যেন হাতের মুঠোয় আঙ্গার ধারনের মতো কঠিন হবে)। তোমরা আজ (আল্লাহ’র নির্দেশিত বিধানের) যা কিছুর উপরে (আমলরত) রয়েছো, সেই দিনগুলোতে তা নিয়ে আকড়ে ধারনকারী ব্যাক্তি তোমাদের পঞ্চাশজনের সওয়াব (একাই) লাভ করবে’। তিনি জিজ্ঞেস করলেন: ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ ! (আমাদের মধ্যকার পঞ্চাশজন), নাকি তাদের মধ্যকার? তিনি বললেন: ‘(না..) বরং তোমাদের মধ্যকার (পঞ্চাশজন)’। তিনি একথাটি তিনবার কিংবা চারবার বললেন”। [আস-সুন্নাহ, ইমাম ইবনু নছর, হাদিস ৩৩; আল-মু’জামুল কাবির, ত্বাবরাণী- ১৭/১১৭; আল-মু’জামুল আউসাত, ত্বাবরাণী- ৩/২৭২; মুসনাদে শামেয়ীন, ত্বাবরাণী- ১/১৭; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪৩৪১; সুনানে তিরমিযী, হাদিস ২২৬০; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৪০১৪; মুসনাদে বাযযার- ৫/১৭৮ হাদিস ১৭৭৬; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস ১৮৫; মুসতাদরাকে হাকিম, হাদিস ৭৯১২; আস-সাবর, ইবনু আবিদ্দুনিয়া- ১/৪২]
ফায়দা: আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- إنَّ مِنْ ورائِكُمْ أيامَ الصبرِ الصبرُ فيهِنَّ كَقَبْضٍ علَى الجمْرِ لِلْعَامِلِ فِيهَا أَجْرُ خَمْسِينَ قالوا يا رسولَ اللهِ أجْرُ خمسينَ منهم أَوْ خمسينَ مِنَّا قال خمسينَ مِنْكُمْ . رواه البزار في البحر الزخار : رقم ١٧٧٦ . اورده الهيثمي في كشف الأستار عن زوائد البزار: ٤/١٣١ رقم ٣٣٧٠ و قال في مجمع الزوائد : ٧/٢٨٢ : ورجال البزار رجال الصحيح غير سهيل بن عامر البجلي وثقه ابن حبان ; و ألطبراني في المعجم الكبير : ١٠/٢٢٥ رقم ١٠٣٩٤ – ‘নিশ্চই তোমাদের পরে সবর/ধৈর্যের দিনসমূহ রয়েছে, সে সময়ে সবর করা হাতের মুঠোয় আঙ্গার ধারনের মতো অবস্থা হবে। সে সময়ে (আল্লাহ’র নির্দেশিত বিধানের উপরে) আমলকারীর সওয়াব হবে তেমন, যেমনটা তোমাদের পঞ্চাশ জন ব্যাক্তি আমল করলে যেমন হয় তেমন। আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. বলেছেন: আমার কাছে উতবাহ ছাড়া অন্য একজন অতিরিক্ত একথাও বলেছে যে: জিজ্ঞেস করা হল: ইয়া রাসুলাল্লাহ ! আমাদের মধ্যকার পঞ্চাশজন, নাকি তাদের মধ্যকার? তিনি বললেন: বরং তোমাদের মধ্যকার পঞ্চাশজন’। [মুসনাদে বাযযার, হাদিস ১৭৭৬; আল-মু’জামুল কাবীর, ত্বাবরানী- ১০/ ২২৫ হাদিস ১০৩৯৪; কাশফুল আছতার, হাদিস ৩৩৭০; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ– ৭/২৮২]

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   গাজওয়াতুল হিন্দ বা ভারতের যুদ্ধ ও ইমাম মাহদীর নেতৃত্ব সম্পর্কে ব্যাখ্যা ও উদাহরণসহ কেয়ামতের আলামত ও ভবিষ্যতবাণী
MuslimPoint Organization

About MuslimPoint Organization

MuslimPoint একটি অনলাইন ভিত্তিক ইসলামী প্রশ্নোত্তর, গ্রন্থাগার, ব্লগিং, কুরআন, হাদিস, কুইজ এবং বিষয় ভিত্তিক রেফারেন্স প্ল্যাটফর্ম।

View all posts by MuslimPoint Organization →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *