ব্যাখ্যা ও উদাহরণসহ কেয়ামতের আলামত ও ভবিষ্যতবাণী পর্ব-৭

কিয়ামতের আলামত ও ভবিষ্যতবাণী মোহাম্মদ (স) muslimpoint
ব্যাখ্যা ও উদাহরণসহ কেয়ামতের আলামত ও ভবিষ্যতবাণী

[প্রথমেই বলে রাখি কিয়ামতের জ্ঞান শুধুমাত্র আল্লাহ’র কাছে আছে ।
‘(হে নবী মুহাম্মাদ!) মানুষ তোমাকে কিয়ামত (কবে হবে, সে) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। তুমি বলো, এর (একেবারে সঠিক) জ্ঞান শুধুমাত্র আল্লাহ’র কাছে আছে। আর (হে নবী !) তুমি কি জানো, কিয়ামত (ঘটার) সম্ভাবনা নিকটে চলে এসেছে !’ [সূরা আহযাব ৬৩]
এখানে শুধুমাত্র হাদিস ও কিছু অনুমানের ভিত্তিতে আমরা কিয়ামতের আলামতগুলো ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি । সুতরাং এখানের সকল বক্তব্য কে আমরা কখনো চূড়ান্ত বলে মনে করি না । এগুলো শুধু উল্লেখ করছি, যাতে এই রেওয়ায়েতসমূহে বর্ণিত কোনো ঘটনা ঘটতে দেখলে তা চিনে নিতে পারেন এবং রেওয়াতের হক্ব আদায় করতে পারেন।
উল্লেখ্য, যেহুতু হয়তো এখানে বর্ণিত অল্প কিছু হাদিসের সনদগত ও অন্যান্য দূর্বলতা থাকতে পারে তাই এখানে উল্লেখিত হাদিসসমূহ কোনো বিজ্ঞ মুহাদ্দেস আলেমের পরামর্শ ব্যাতীত কারো কাছে বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছি।]

# মুহাম্মাদ ইবনে হানাফিয়াহ রহ. থেকে সহিহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন- كنا عند علي رضي الله عنه فسأله رجل عن المهدي فقال علي رضي الله عنه : هيهات ثم عقد بيده سبعا فقال : ذاك يخرج في آخر الزمان إذا قال الرجل الله الله قتل فيجمع الله تعالى له قوما قزع كقزع السحاب يؤلف الله بين قلوبهم لا يستوحشون إلى أحد ولا يفرحون بأحد يدخل فيهم على عدة أصحاب بدر لم يسبقهم الأولون ولا يدركهم الآخرون وعلى عدد أصحاب طالوت الذين جاوزا معه النهر قال أبو الطفيل : قال ابن الحنفية : أتريده ؟ قلت : نعم قال : إنه يخرج من بين هذين الخشبتين قلت : لا جرم والله لا أريهما حتى أموت فمات بها يعني مكة حرسها الله تعالى . اخرجه الحاكم : ٤/٥٩٦ رقم ٨٦٥٩ و قال : هذا حديث صحيح على شرط الشيخين و لم يخرجاه , ووافقه الذهبي في تلخيصه كما جاء في إتحاف الجماعة بما جاء في الفتن والملاحم وأشراط الساعة : ٢/٢٨٠ – ‘আমরা আলী রা.-এর কাছেই ছিলাম, এমন সময় এক ব্যাক্তি তাঁকে আল-মাহদী’র ব্যাপারে প্রশ্ন করলো। আলী রা. বললেন: (ওনার দেখা পাওয়া তোমাদের জন্য) অসম্ভব! অতঃপর তিনি তার হাতে(-র আঙ্গুলে) সাত (পর্যন্ত) গণনা করে বললেন: ‘তিনি শেষ জাামানায় বেড় হবেন (এমন এক বিশ্ব পরিস্থিতিতে), যখন কোনো (মুমিন) ব্যাক্তি বলবে: ‘(আমার একমাত্র রব হলেন) আল্লাহ ! আল্লাহ ! (আর তাকে এই দোষেই) কতল করে ফেলা হবে। তখন আকাশের বিক্ষিপ্ত সাদা মেঘপুঞ্জের মতো বিক্ষিপ্ত একটি জামাআতকে আল্লাহ তাআলা তার পক্ষে একত্রিত করে দিবেন। আল্লাহ তাদের অন্তরগুলোর মাঝে ভালবাসা সৃষ্টি করে দিবেন। তারা না কারো প্রতি (অযাচিত) আশক্ত হবে, আর না কারো প্রতি (অযাচিত) আনন্দিত হবে। তাদের মাঝে বদরী সাহাবীদের সম-সংখ্যক (মুমিন এসে) শামিল হবে। (তাদের মর্যাদা এমন হবে যে,) না আগের লোকরা তাদেরকে পিছনে ফেলে অগ্রসর হতে পারবে, আর না পরবর্তীরা তাদের পর্যন্ত পৌছতে পারবে। তারা হবে তালুতের সাথিদের সমসংখ্যক যারা তার সাথে (জর্ডান) নদী অতিক্রম করেছিল’।
আবু তুফাইল বলেন: ইবনুল হানাফিয়্যাহ (আমাকে) জিজ্ঞেস করলেন: ‘তুমি কি তাঁকে (দেখতে) চাও’? আমি বললাম: ‘জি হ্যাঁ’ (সম্ভব হলে কেনো নয়!)। তিনি বললেন: ‘নিশ্চই তিনি এই দুই পিলারের মাঝখান থেকে আবির্ভূত হবেন’। আমি বললাম: ‘কোনো সমস্যা নেই। আল্লাহ’র শপথ, আমি না মড়া পর্যন্ত এই দুটিকে ছাড়বো না’। এরপর তিনি সেখানেই অর্থাৎ মক্কায় মাড়া যান। আল্লাহ তাআলা ওটির হিফাজত করুন’। [মুসতাদরাকে হাকিম– ৪/৫৯৬ হাদিস ৮৬৫৯]
ফায়দা: এই রেওয়ায়েতে ‘শেষ জামানা’য় ইমাম মাহদী রা.-এর আগমন, তাঁর উচ্চ মর্যাদাশীল সঙ্গিসাথীগণের সংখ্যা এবং তাঁর আগমনের পূর্বের পৃথিবীর অবস্থা সম্পর্কে কিছু বিষয় বর্ণিত হয়েছে -আলী রা.-এর মুখ থেকে। আর বলাই বাহুল্য, ভবিষ্যৎবাণীর মতো একটি গায়েবী বিষয় রাসুলুল্লাহ ﷺ থেকে না শুনে তা আলী রা.-এর নিজ থেকে বলার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। আর বর্ণনাটির সনদও সহিহ। সুতরাং, বিনা দ্বিধায় বলা যায়, ভবিষ্যৎবাণীটি রাসুলুল্লাহ ﷺ থেকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে আমাদের পর্যন্ত পৌছেছে। আর আমরা ইতিপূর্বে বহুবার প্রমাণ করে এসেছি যে, আমরা ইতিমধ্যে বহু আগেই ‘শেষ জামানা’য় ঢুকে পড়েছি। সুতরাং, আমাদের এই শেষ জামানারই অতি নিকট ভবিষ্যতের কোনো এক অংশে ইমাম মাহদী রা. আবির্ভূত হবেন।
ইমাম মাহদী রা. সম্পর্কিত বেশ কিছু বর্ণনা আমরা (এখানে) উদ্ধৃত করেছি। এই রেওয়ায়েতে ‘শেষ জামানা’য় ইমাম মাহদী’র আগমণের আগে আগে তখনকার পৃথিবীর পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি লোমহর্ষক ধারনা দেয়া হয়েছে। আর সেটা হল- ذاك يخرج في آخر الزمان إذا قال الرجل الله الله قتل – ‘তিনি শেষ জাামানায় বেড় হবেন (এমন এক বিশ্ব পরিস্থিতিতে), যখন কোনো (মুমিন) ব্যাক্তি বলবে: ‘(আমার একমাত্র রব হলেন) আল্লাহ ! আল্লাহ ! (আর তাকে এই দোষেই) কতল করে ফেলা হবে’।
আমি বলতে পারি, আমাদের এই শেষ জামানায় পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে এই ভবিষ্যৎবাণী ইতিমধ্যে পূর্ণ হয়ে গেছে এবং এই ধারা জারি আছে। শুধু কাফেররা নয়, এই জামানার মুনাফেকরাও ব্যাপক হারে মুমিনদেরকে বিভিন্ন রাজনৈতিক অযুহাতে বা বিনাঅযুহাতে হত্যা করছে; দোষ একটাই, আর সেটা হল ‘ওই মুমিনরা শুধু আল্লাহ তাআলাকে তাদের রব বলে স্বীকার করতে চায় এবং শুধু আল্লাহরই আইন অনুযায়ী জীবন চালাতে চায়, তারা আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মানুষকে নিজেদের রব মানতে চায়না এবং তাদের বানানো আইনের গোলামীও করতে চায়না’।  আমি এখানে ভিডিও লিংক দিচ্ছি, যেখানে দেখতে পাবেন (যাবৎ ইউটিউব ডিলিট করে না দেয়) যে, আলীয়াতী শিয়া বাশার আল-আসাদের সৈন্যরা এক সুন্নি মুমিনকে নির্যাতনের পর গলা পর্যন্ত মাটির নিচে চাপা দিয়ে বারংবার বলতে বলছে- “বল্, বাশার আল-আসাদ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই !” আর সেই মুমিন বলছে “লাা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই)”। এরপর ওই মুরতাদরা সেই মুমিনকে প্রকাশ্যে মাটি চাপা দিয়ে শহিদ করে দেয়। এটা উপরোক্ত ভবিষ্যৎবাণীটির একটি জ্বলজ্যান্ত নমুনা। الله اعلم بالصواب
# ইমাম নুয়াইম বিন হাম্মাদ রহ. (মৃ: ২২৮ হি:) তাঁর কিতাব ‘আল-ফিতান’-এ নিজ সনদে তুবায় রহ. ও ইমাম মুজাহিদ রহ.-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন- حدثنا الوليد بن مسلم عن صدقة بن خالد عن عبد الرحمن بن حميد عن مجاهد عن تبيع قال سيعوذ بمكة عائذ فيقتل ثم يمكث الناس برهة من دهرهم ثم يعوذ آخر فإن أدركته فلا تغزونه فإنه جيش الخسف . اخرجه نعيم بن حماد المروزي في الفتن , باب : الخسف بجيش السفياني الذي يبعثه إلى المهدي : ١/٣٢٧ رقم ٩٣٥ ; و قال مجدي بن منصور : ص ٢٢٦ : اسناده حسن – ‘অচিরেই এক আশ্রয়প্রার্থী মক্কায় (হেরেমে-ক্বাবায়) আশ্রয় নিবে, তখন তাকে হত্যা করা হবে। এরপর মানুষ তাদের জীবনের (এক) বুরহাহ (বেশ কিছু কাল সময়) বসাবাস করে নিবে। এরপর অন্য আরেকজন (মক্কার হেরেমে-ক্বাবায়) আশ্রয় প্রার্থী হবে। সুতরাং, তুমি যদি তাঁকে পেয়ে যাও, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে তোমরা যুদ্ধ করতে যেওনা না। কারণ উনিই হবেন যাইশুল-খাসফ’। [আল ফিতান, নুআইম বিন হাম্মাদ- ১/৩২৭ ক্র:নং ৯৩৫]
জুহাইমান আল উতাইবী ১৯৭৯ সাল ১৪০০ হিজরী
ফায়দা: এই রেওয়ায়েতটির সনদে যদিও কিছুটা কালাম রয়েছে এবং তা রাসুলুল্লাহ ﷺ থেকে মারফু কিংবা তাঁর কোনো সাহাবী রা. থেকে মাওকুফ রেওয়ায়েতও নয়, বরং একজন তাবেয়ীর দেয়া খবর, তাই এই রেওয়ায়েতটি আলেমগণ বর্ণনা করতেন না। কিন্তু আমাদের এই শেষ জামানায় গত ১৯৭৯ ইং সালে মক্কার মসহিজ আল-হারামে এমন একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে গেছে, যা অনেকের মতে এই রেওয়ায়েতেরই বাস্তব রূপ।
ঘটনাটি ছিল ইমাম আল-মাহদী দাবী নিয়ে। যেমন বহু রেওয়ায়েতে এসেছে যে, প্রতিক্ষিত ইমাম আল-মাহদী আসবেন শেষ জামানায় কোনো শতাব্দির শুরুতে মুজাদ্দেদ হিসেবে যখন গোটা পৃথিবী জুলুম ও অন্যায়-অবিচার দিয়ে ভরা থাকবে, তিনি এসে পৃথিবীকে ইনসাফ দিয়ে ভরিয়ে দিবেন, তাঁর নাম হবে রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর নামে নাম এবং তার পিতার নাম হবে রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর পিতার নামে নাম, তিনি হবেন কুরাইশ বংশের এবং ফাতেমা রা.-এর বংশধর, তার নাকটা লম্বা ও কপালটা প্রসস্থ হবে, তার হাতে হজ্জের মৌসুমে ক্বাবা শরিফের রোকন ও মাক্বামের মাঝখানে মুসলমানরা বায়াত গ্রহন করবে এবং তিনি হবেন গোটা মুসলীম জাহানের আমীরুল মু’মিনীন ও খলিফা…ইত্যাদি ইত্যাদি…।
মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ আল কাহতানী ১৯৭৯ সাল-১৪০০ হিজরী
গত ১৯৭৯ ইং সালের ২০ নভেম্বর (১৪০০ হিজরী সালের ১লা মহররম -যা ছিল উক্ত শতাব্দির প্রথম দিন) তারিখে জুহাইমান আল-উতাইবী নামক এক নজদী শায়েখ তার ভগ্নীপতি মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ আল-কাহতানীকে ইমাম আল-মাহদী দাবী করে প্রায় তিন’শ জনের একটি দল সহ ফজরের নামাযের সময়ে মক্কা’র মসজিদুল হারাম অবরোধ করে ফেলে এবং মসজিদে সমবেত সকলকে নির্দেশ দেয় কথিত মাহদী (!) মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ আল-কাহতানী’র হাতে বায়আত হতে। পরে সৌদি পুলিশ সেখানে এলে উভয় পক্ষের মাঝে গোলাগুলি হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে সৌদি কর্তৃপক্ষ পাকিস্তানের স্পেশাল ফোর্সের সহায়তা চায়। স্পেশাল ফোর্সের সাথে তাদের গোলাগুলি হয়। এ ঘটনায় সেদিন মোট প্রায় ২৫০ জন নিহত হয় এবং প্রায় ৫৫০ জন আহত হয়। অবশেষে, তাদেরকে হেরেমের ভিতরেই পানি ও ইলেক্ট্রিক শক দিয়ে কাবু করে ধরে ফেলা হয়। তাদের কথিত মাহদি মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ আল-কাহতানী ঘটনাস্থলেই মরে যায় এবং জুহাইমান আল-উতাইবী সহ তাদের ৬৭ জন অনুসারী গ্রেফতার হয়। সৌদি সরকার পরবর্তীতে তাদেরকে মৃত্যুদন্ড দান করে। এযুগের অনেক গবেষক আলেম মনে করেন যে, উপরোক্ত রেওয়ায়েতে এই ঘটনার দিকেই ইংগীত করা হয়েছে।
এর সমর্থন হয় আরেকটি রেওয়ায়েত দ্বারাও, যদিও তা অনেক দূর্বল সনদে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম নুয়াইম বিন হাম্মাদ রহ. (মৃ: ২২৮ হি:) ‘আল-ফিতান’-এ নিজ সনদে আম্মার বিন মুহাম্মাদ-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত আলী রা. এরশাদ করেছেন- تَكُونُ فِتَنٌ ، ثُمَّ تَكُونُ جَمَاعَةٌ عَلَى رَأْسِ رَجُلٍ مِنْ أَهْلِ بَيْتِي ، لَيْسَ لَهُ عِنْدَ اللَّهِ خَلاقٌ ، فَيُقْتَلُ أَوْ يَمُوتُ فَيَقُومُ الْمَهْدِيُّ . اخرجه نعيم بن حماد المروزي في الفتن , باب : الخسف بجيش السفياني الذي يبعثه إلى المهدي : رقم ٩٣٥ ; قال محقق الاحاديث الوارده في المهدي في ميزان الجرح والتعديل ٢/١٣٩ فيه شيخ المعتمر بن سليمان لايدرى من هو ؟ وعمار بن محمد ان كان الثوري ابن اخت سفيان الثوري فهو صدوق يخطىء وكان عابدا وان كان غيره فلا ادري من هو ؟ ثم قال اسناده ضعيف – ‘(শেষ জামানায়) বিভিন্ন ফিতনা হবে। এরপর (একসময়) আমার ‘আহলে-বাইত’-এর এক ব্যাক্তিকে কেন্দ্র করে একটি দল গঠিত হবে। (কিন্তু বাস্তবে) আল্লাহ’র কাছে তার জন্য কোনো অংশ থাকবে না। তাকে মেরে ফেলা হবে কিংবা সে মরে যাবে। (এর কিছুকাল পর ওয়াদাকৃত) আল-মাহদী (ইকামতে দ্বীনের দায়িত্ব নিয়ে) দাঁড়িয়ে যাবেন’। [আল ফিতান, নুআইম বিন হাম্মাদ- ৯৬৬]
আমার মতে, এই মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ আল-কাহতানীই হল উপরোক্ত রেওয়ায়েত দুটিতে ইংগীত করা ‘আহলে-বাইত’-এর সেই ব্যাক্তি, যে মক্কার ভিতরে আশ্রয় নিবে ও তাকে হত্যা করা হবে। আল্লাহই ভাল জানেন।
বলা হয়েছে যে, এই ঘটনার বুরহাহ (কিছুকাল) অতিবাহিত হওয়ার পর আরেকজন মক্কায় আশ্রয় নিবে, তিনিই হবেন প্রতিক্ষিত আসল ইমাম আল-মাহদী রা.। ইমাম আল-মাহদীকে ‘জাইশুল খাসফ (ভূ-ধ্বসিত সৈন্যবাহিনি ওয়ালা ব্যাক্তি)’ বলা হয়েছে, কারণ সহিহ রেওয়ায়েতে এসেছে যে, ক্বাবা শরিফের রোকন ও মাক্বামের মাঝখানে মুসলমানরা তাঁর হাতে বায়াত হওয়ার পর শাম থেকে একটি সৈন্যবাহিনি তাঁকে প্রতিহত করার জন্য আসবে এবং মক্কা-মদিনার মাঝামাধি স্থানে অবস্থিত বাইদাহ নাম স্থানে তারা ভূ-গর্ভে তলিয়ে যাবে। এটাই হবে প্রকৃত ইমাম মাহদী রা. যে এসে গেছেন তারই জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ। الله اعلم بالصواب
# উম্মে সালমাহ রা. বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- يكُونُ اخْتِلافٌ عِنْدَ مَوْتِ خَلِيفَةٍ، فَيَخْرُجُ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْمَدِينَةِ هَارِبًا إِلَى مَكَّةَ، فَيَأْتِيهِ نَاسٌ مِنْ أَهْلِ مَكَّةَ فَيُخْرِجُونَهُ وَهُوَ كَارِهٌ. فَيُبَايِعُونَهُ بَيْنَ الرُّكْنِ وَالْمَقَامِ. وَيُبْعَثُ إِلَيْهِ بَعْثٌ مِنْ أَهْلِ الشَّامِ، فَيُخْسَفُ بِهِمْ بِالْبَيْدَاءِ بَيْنَ مَكَّةَ وَالْمَدِينَةِ. فَإِذَا رَأَى النَّاسُ ذَلِكَ أَتَاهُ أَبْدَالُ الشَّامِ وَعَصَائِبُ أَهْلِ الْعِرَاقِ فَيُبَايِعُونَهُ بَيْنَ الرُّكْنِ وَالْمَقَامِ. ثُمَّ يَنْشَأُ رَجُلٌ مِنْ قُرَيْشٍ أَخْوَالُهُ كَلْبٌ فَيَبْعَثُ إِلَيْهِمْ بَعْثًا فَيَظْهَرُونَ عَلَيْهِمْ وَذَلِكَ بَعْثُ كَلْبٍ، وَالْخَيْبَةُ لِمَنْ لَمْ يَشْهَدْ غَنِيمَةَ كَلْبٍ. فَيَقْسِمُ الْمَالَ وَيَعْمَلُ فِي النَّاسِ بِسُنَّةِ نَبِيِّهِمْ صَلَّى اللَّهم عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَيُلْقِي الْإِسْلامُ بِجِرَانِهِ فِي الْأَرْضِ. فَيَلْبَثُ سَبْعَ سِنِينَ ثُمَّ يُتَوَفَّى وَيُصَلِّي عَلَيْهِ الْمُسْلِمُونَ -قَالَ أَبُو دَاوُدَ قَالَ بَعْضُهُمْ عَنْ هِشَامٍ ‏”‏ تِسْعَ سِنِينَ ‏”‏ ‏.‏ وَقَالَ بَعْضُهُمْ ‏”‏ سَبْعَ سِنِينَ- أخرجه أبو داود: ٤/١٠٧ رقم ٤٢٣٧ ,أحمد رقم ٢٥٤٦٧ , الطبراني في الكبير: ٢٣/٢٩٠, ابن أبي شيبة :٨/٦٠٩ , والحاكم : ٤/٤٧٨, – ‘একজন খলিফা (শাসক/বাদশাহ)র মৃত্যুতে (পরবর্তি উত্তরসুরী নিয়ে) দ্বন্দ্ব দেখা দিবে। এর পর মদিনাবাসী এক ব্যাক্তি বের হয়ে মক্কার দিকে পালিয়ে যাবেন। এরপর মক্কাবাসী কিছু লোক তাঁর কাছে এসে -তিনি তা অপছন্দ করা সত্ত্বেও -তারা তাঁকে (এক বাড়ি থেকে) বের করে আনবে। এরপর তারা (ক্বাবা ঘরের কাছে) রুকন ও মাকাম (-ই-ইবরাহীম) -এর মাঝখানে তাঁর কাছে বাইয়্যাত হবে এবং (এ খবর শুনতে পেয়ে তাঁকে আটকানোর জন্য) শামের একটি সেন্যবাহিনীকে তাঁর দিকে প্রেরণ করা হবে। তখন তারা মক্কা ও মদিনার মাঝামাঝি একটি অনুর্বর মরু-উপত্যকায় ভূ-গর্ভে ধ্বসে যাবে। মানুষ যখন এটা দেখবে, তখন শামের আবদালগণ এবং ইরাকের আসাবাগণ তাঁর কাছে আসবে এবং রুকন ও মাকাম (-ই-ইবরাহীম) -এর মাঝখানে তাঁর কাছে বাইয়্যাত হবে। এরপর কুরাইশদের এক ব্যাক্তি -যার মামা হল কালব গোত্রের- দাঁড়াবে এবং তাদের দিকে একটি সৈন্যদল প্রেরন করবে এবং তারা ওইসব সৈন্যদের উপর বিজয়ী হবে। আফসোস তাদের জন্য যারা কালব’দের (থেকে প্রাপ্ত) গণীমত (বন্টনের সময় সেখানে) উপস্থিত থাকবে না। এরপর (ইমাম মাহদী) সম্পদসমূহ বন্টন করে দিবে এবং মানুষের মাঝে তাদের নবীর সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করবে এবং দুনিয়ার দিকে দিকে ইসলামকে শানশওকতের সাথে ছড়িয়ে দিবেন। এরপর তিনি সাত বছর জীবিত থাকার পর ইন্তেকাল করবেন এবং মুসলমানরা তার (জানাযা’র) নামায পড়বে। [সুনানে আবু দাউদ-৪/১০৫, হাদিস ৪২৩৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস ২৫৪৬৭; আল-মু’জামুল কাবীর, ত্বাবরানী-২৩/২৯০; আল-মুসান্নাফ, ইবনু আবি শায়বা- ৮/৬০৯; মুসতাদরাকে হাকিম-৪/৪৭৮]
ফায়দা: এই রেওয়ায়েতে খলিফা বলতে একজন মুসলীম বাদশাহ বোঝানো হয়েছে। বিভিন্ন হাদিস ও আছার থেকে বোঝা যায়, খলিফা আলা মিনহাজিন নবুওত অর্থাৎ নববী সুন্নাহ’র ভিত্তিতে নিযুক্ত খলিফা শেষ জামানায় ইমাম মাহদীর আগে আর কেউ হবে না। আর উপরোক্ত রেওয়ায়েতে যাঁর হাতে মক্কা, শাম ও ইরাকের মুসলমানদের বায়াতের কথা বলা হয়েছে তিনি হলেন ইমাম মাহদী, যা অপরাপর হাদিস ও আছার থেকে প্রমাণিত হয়। সুতরাং, ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের পূর্বে এক খলিফার মৃত্য বলতে মূলতঃ একজন মুসলীম বাদশাহ/সুলতান-এর মৃত্যু বুঝানো হয়েছে।
এরপর বলা হয়েছে- فَيَخْرُجُ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْمَدِينَةِ هَارِبًا إِلَى مَكَّةَ – ‘এর পর মদিনাবাসী এক ব্যাক্তি বের হয়ে মক্কার দিকে পালিয়ে যাবেন’ – এর দ্বারা ইমাম মাহদী রা. উদ্দেশ্য। তিনি সম্ভবত: তখনকার মদিনাতে বিপদজনক পরিস্থিতির সম্মুখিন হয়ে নিজের জীবন বাঁচানোর তাগিদে মদিনা থেকে মক্কার দিকে পালিয়ে আসবেন। পরে কোনো এক সময় ক্বাবা ঘরের রোকন ও মাকামের মাঝখানে মুসলমানরা তাঁর হাতে খিলাফতের বায়াত হবে।
# উবাদাহ বিন সামেত রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- حدثنا أحمد بن رشدين ، قال : نا زيد بن بشر الحضرمي ، قال : نا بشر بن بكر ، قال : حدثتني أم عبد الله ابنة خالد بن معدان ، عن أبيها ، عن عبادة بن الصامت ، قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : إِذَا رَأَيْتُمْ عَمُودًا أَحْمَرَ قِبَلَ الْمَشْرِقِ فِي رَمَضَانَ ، فادَّخِرُوا طَعَامَ سَنَتِكُمْ ، فَإِنَّهَا سَنَةُ جُوعٍ . أخرجه الطبراني في المعجم الأوسط , بَابُ الْأَلِفِ : رقم ٣٧١ ; قال الهيتمي في مجمع الزوائد : ٥/٣٥ :رواه الطبراني في الكبير والأوسط وفيه أم عبد الله ابنة خالد بن معدان ولم أعرفها، وبقية رجاله ثقات ؛ اقول : أم عبد الله , هي عَبْدَةُ بنت خالد بن معدان , عَبْدَةُ بنت خالد وأم الضحاك بنت راشد مولاة خالد بن معدان كما و في تاريخ مدينة دمشق لابن عساكر : ١٦/١٩٣ رقم ١٩١٦ و في تهذيب الكمال في أسماء الرجال : ٨/١٧٠ رقم ١٦٥٣ و في في سير أعلام النبلاء , ترجمة خالد بن معدان : ٤/٥٣٨ ; قال الماوردي في فيض القدير : ١/٣٦١ : وله شواهد؛ منها ما أخرجه نعيم بن حماد ؛ في كتاب الفتن؛ من حديث خالد بن معدان…انتهى – ‘তোমরা যখন (কোনো এক) রমযান মাসে পূর্ব দিকে(র আকাশে আগুনের) লাল পিলার দেখতে পাবে, তখন তোমরা (সাধ্য মতো) বছরের খাবার-দাবার যোগার করে রেখো। কারণ, সেই বছরটি হবে দূর্ভিক্ষের (বছর)’। [আল-মু’জামুল আউসাত, ইমাম তাবরাণী- ১/১১৯ হাদিস ৩৭১; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৫/৩৫; ফাইযুল কাদির, মুনাভী- ১/৩৬১ হাদিস ৬৪৫; কানজুল উম্মাল- ২১৫৯৬]
ফায়দা: উপরের ত্বাবরাণীর এই রেওয়ায়েতটি উম্মে আব্দুল্লাহ (আবদাহ) তাঁর মনিব বিশিষ্ট তাবেয়ী খালেদ বিন মা’দান রহ-এর সূত্রে সাহাবী ইবাদাহ বিন সামেত রা. থেকে বর্ণনা করেছেন। ইমাম নুয়াইম বিন হাম্মাদ রহ. (মৃ: ২২৮ হি:) তাঁর কিতাব ‘আল-ফিতান’-এ নিজ সনদে আবদাহ (উম্মে আব্দুল্লাহ)’র সূত্রেই তাবেয়ী খালেদ বিন মা’দান রহ. থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন- حدثنا عبد القدوس ، عن عبدة بنت خالد بن معدان ، عن أبيها خالد بن معدان ، قال : إِذَا رَأَيْتُمْ عَمُودًا مِنْ نَارٍ مِنْ قِبَلِ الْمَشْرِقِ فِي شَهْرِ رَمَضَانَ فِي السَّمَاءِ فَأَعِدُّوا مِنَ الطَّعَامِ مَا اسْتَطَعْتُمْ ، فَإِنَّهَا سَنَةُ جُوعٍ . اخرجه نعيم بن حماد المروزي في الفتن : – ‘তোমরা যখন (কোনো এক) রমযান মাসে পূর্ব দিকের আকাশে আগুনের পিলার দেখতে পাবে, তখন তোমরা সাধ্য মতো খাবার-দাবার যোগার করে রেখো। কারণ, সেই বছরটি হবে দূর্ভিক্ষের (বছর)’। [আল-ফিতান, নুআইম বিন হাম্মাদ] ইমাম নুয়াইম বিন হাম্মাদ রহ. ‘আল-ফিতান’-এ নিজ সনদে ছাওর বিন ইয়াযীদের সূত্রে তাবেয়ী খালেদ বিন মা’দান রহ. থেকে আরো বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন- حَدَّثَنَا عِيسَى بْنُ يُونُسَ ، وَالْوَلِيدُ بْنُ مُسْلِمٍ ، عَنْ ثَوْرِ بْنِ يَزِيدَ ، عَنْ خَالِدِ بْنِ مَعْدَانَ ، قَالَ : إِنَّهُ سَتَبْدُو آيَةٌ عَمُودًا مِنْ نَارٍ ، يَطْلُعُ مِنْ قِبَلِ الْمَشْرِقِ ، يَرَاهُ أَهْلُ الأَرْضِ كُلُّهُمْ ، فَمَنْ أَدْرَكَ ذَلِكَ فَلْيُعِدَّ لأَهْلِهِ طَعَامَ سَنَةٍ . رواه نعيم بن حماد في الفتن : ١٠٥ – “নিশ্চই অচিরেই আগুনের পিলারের একটি আলামত প্রকাশ পাবে, তা উত্থিত হবে পূর্ব দিকে, যা (দেখতে চাইলে) পৃথিবীব সকলে দেখতে পাবে। যে ব্যাক্তি এটা পাবে, সে যেন তার পরিবারের জন্য এক বছরের খাবার যোগার করে রাখে’। [আল-ফিতান, নুআইম বিন হাম্মাদ- ১/২২৭]
ইমাম ইয়াহইয়া বিন হুসাইন আল-জুরযানী রহ. (জ: ৪১২ হি:, মৃ: ৪৯৯ হি:) তাঁর কিতাব ‘আল-আমালী’-এ নিজ সনদে খালেদ বিন মা’দান রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন- أخبرنا ابن قاذويه، قال حدثنا عبد الله، قال حدثنا عبد الله بن عبد السلام، قال حدثنا بحر بن نصر، قال حدثنا بشر بن بكر، قال حدثتني أم معبد عن أخيها خالد بن معدان، قال إذا رأيتم عمودا من قبل المشرق في السماء مثل النار في رمضان فأعدوا طعام سنتكم فإنها تكون سنة جوع . اخرجه يحي ابن الحسين الشجري في أمالي : ٢/٣٧ رقم ١٤٩٣ – ‘তোমরা যখন (কোনো এক) রমযান মাসে পূর্ব দিকস্থ আকাশে আগুনের অনূরূপ পিলার দেখতে পাবে, তখন তোমরা সাধ্য মতো খাবার-দাবার যোগার করে রেখো। কারণ, সেই বছরটি হবে দূর্ভিক্ষের (বছর)’। [আল-আমালী, ইমাম ইয়াহইয়া- ২/৩৭ ক্রঃনং ১৪৯৩]
‘পূর্ব দিকের আকশে’ বলতে ‘মদিনা থেকে পূর্ব দিকস্থ আকাশ’ উদ্দেশ্য। ‘লাল কলাম’ বা ‘আগুনের কলাম’ বলতে আসলে কী বোঝানো হয়েছে -তা নিয়ে একেবারে তাবেয়ীগণের যুগ থেকেই অনেক রকম ধারনা করে আসা হচ্ছে। মূল আলামতটি প্রকাশ না পাওয়া পর্যন্ত নিঃসন্দেহ হয়ে কিছু বলা কঠিন।
কেউ কেউ মনে করেন, হতে পারে কোনো আগুনের লেজধারী উল্কা বা গ্রহ/উপগ্রহ খন্ড মদিনা থেকে পূর্ব দিকের কোনো দেশে গিয়ে আঘাত করতে পারে। আবার আনেকে মনে করেন যে, এই রেওয়ায়েতে মদিনা থেকে পূর্ব দিকের কোনো দেশে নিউক্লিয়ার বোমা বিষ্ফোরনের কোনো ঘটনা ঘটার দিকে ইশারা করা হয়েছে, যা বিষ্ফোরিত হওয়ার পর বিরাট আকারের অগ্নী শিখার বলয় হয়ে মেঘের উপরে পর্যন্ত চলে যায়, যা দেখতে লালচে আগুনের বিরাট পিলারের মতো মনে হয়। আমার কাছে এই মতটিই বেশি সম্ভাব্য বলে মনে হয়।
শেষ জামানার বিভিন্ন রেওয়ায়েত সমূহ এবং বর্তমান জামানার বিশ্ব রাজনৈতিক অবস্থার উপরে যতটুকু নজর রাখছি, তাতে আমার কাছে মনে হয়েছে যে, এ ঘটনাটি ‘মালহামাহ’ শুরুর সময় থেকে নিয়ে ইয়াজুজ মাজুজদের দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার সময়ের মধ্যে কোনো এক সময় ঘটতে পারে। বিশেষ করে দাজ্জাল বের হওয়ার আগে আগে যে চরম দুর্ভিক্ষের ইংগীত বিভিন্ন রেওয়ায়েতে বর্ণিত রয়েছে, এই ঘটনার সাথে সেই দুর্ভিক্ষেরও যোগসূত্র থাকতে পারে। মালহামাহ’র সূত্র ধরে ইমাম মাহদী রা. আবির্ভূত হবেন এবং তাঁর আবির্ভাবের ৬ষ্ঠ বা ৭ম বছরে দাজ্জাল বড়ে হবে। এমনও হতে পারে যে, এই ঘটনা ঘটার পর ইমাম মাহদী রা. আবির্ভূত হবেন অথবা তিনি আবির্ভূত হওয়ার পরও এই ঘটনাটি ঘটতে পারে।
যদি এখানে ‘আগুনের পিলার’ বলতে এটোম বোমা বিষ্ফোরনই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাহলে আমার ধারনা আমেরিকা কিংবা ইসরাঈল এই ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি ঘটাতে পারে বলে মনে হয়। আর মদিনার পূর্ব দিকে অবস্থিত যে দেশগুলোর বুকে তা ফেলার সম্ভাবনা রয়েছে, তা আমার মতে দুটি দেশের যে কোনো একটি বা উভয়টিই টার্গেট হতে পারে: (১) ইরান এবং (২) পাকিস্তান। الله اعلم بالصواب
# হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- يكون في آخر هذه الأمة خسف ومسخ وقذف . قالت: قلت: يا رسول الله، أنهلك وفينا الصالحون؟ قال: ” نعم، إذا ظهر الخبث. أخرجه الترمذي: كتاب الفتن – باب ما جاء في الخسف: ٤/٤٧٩ وقال: هذا حديث غريب، والحديث صححه الألباني. صحيح الجامع: ٢/١٣٥٥ – ‘এই উম্মতের শেষভাগে খাসফ (ভূমিধ্বস), মাসখ (আকৃতি-বিকৃতি) এবং ক্বাযফ হবে’। তিনি বলেন: আমি বললাম – ইয়া রাসুলুল্লাহ ! আমাদের মধ্যে নেককার লোক থাকা সত্ত্বেও কি আমারা (মুসলমানরা এসকল আযাবে) ধ্বংস হয়ে যাবো? রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: ‘হ্যাঁ, (এমন ঘটবে তখন) যখন (কোনো গোষ্ঠির মধ্যে) খাবাসাত ব্যাপক আকার ধারন করবে।’ [সুনানে তিরমিযী- ৪/৪৭৯]
ফায়দা: خسف (খাসফ) বলা হয় ভুমিধ্বস’কে। যেমন: ভুমি বা জমি’র কোনো ছোট বা বড় অংশ তার উপরের ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট ইত্যাদি সহ ডেবে ধ্বসে যাওয়া, পাহাড়ের কোনো অংশ ধ্বসে গিয়ে তার গাত্রস্থ জনবসতি নিচে চাপা পড়া ইত্যাদি। ভূমি ধ্বসের মৌসুম এই আখেরী জামানায় শুরু হয়ে গেছে এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ব্যাপক আকারে এসব ঘটছে। আবার নিকট ভবিষ্যতেও আরো কিছু বড় বড় ভূমিধ্বস ঘটার ইংগীত হাদিসে এসেছে। যেমন: আবু উমামাহ রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- سيكون بعدى خسف بالمشرق وخسف بالمغرب وخسف فى جزيرة العرب قيل يخسف بالأرض وفيهم الصالحون قال نعم إذا كان أكثر أهلها الخبث . أخرجه الطبرانى فى الكبير : ٢٣/٢٧١ رقم ٥٨٠، و أخرجه أيضًا: فى الأوسط : ٤/٧٤ رقم ٣٦٤٧، قال الهيثمى في مجمع الزوائد : ٨/١١ : فيه حكيم بن نافع، وثقه ابن معين، وضعفه غيره، وبقية رجاله ثقات، اورده المتقي الهندي في كنز العمال : ١٤ /٢٨٠ رقم ٣٨٧٢٨ – “আমার পরে অচিরেই (একটি উল্লেখযোগ্য) ভূমিধ্বস সংঘটিত হবে পূর্বাঞ্চলে, (একটি) ভূমিধ্বস হবে পশ্চিমাঞ্চলে এবং (একটি) ভূমিধ্বস হবে জাজিরাতুল আরবে। জিজ্ঞেস করা হল: ‘তাদের মধ্যে নেককাররা থাকা সত্ত্বেও (তারা) জমিনে ধ্বসে যাবে? তিনি বললেন: ‘হ্যাঁ, যখন সেখানকার অধিকাংশ মানুষ খবীস হয়ে যাবে”। [আল-মু’জামুল কাবীর, ত্বাবরাণী- ২৩/২৭১ হাদিস ৫৮০; আল-মু’জামুল আউসাত, ত্বাবরাণী- ৪/৭৪ হাদিস ৩৬৪৭; কানজুল উম্মাল, আলী মুত্তাকী- ১৪/২৮০ হাদিস ৩৮৭২৮]
যুহরী রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন- لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يُخْسَفَ بِقَوْمٍ فِي مَرَاتِعِ الْغَنَمِ، وَلاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يُخْسَفَ بِرَجُلٍ كَثِيرِ الْمَالِ وَالْوَلَدِ ‏‏ . رواه عبد الرزاق في مصنفه : ١١/٣٧٥ رقم ٢٠٧٨٤، و نعيم بن حماد في الفتن : ١/٣٧٥، اسناده مرسل راوياه ثقتان – “কেয়ামত কায়েম হবে না, যাবৎ না একটি গোষ্ঠি গবাদীপশুর চারণভূমিতে ধ্বসে যায়। আর কেয়ামত কায়েম হবে না, যাবৎ না প্রচুর ধ্বনসম্পদ ও সন্তানাদিওয়ালা এক ব্যাক্তি (ভূগর্ভে) ধ্বসে যায়”। [আল-মুসান্নাফ, ইমাম আব্দুর রাজ্জাক- ১১/৩৭৫ হাদিস ২০৭৮৪; আল-ফিতান, নুআইম বিন হাম্মাদ- ১/৩৭৫]
আর مسخ (মাসখ) বলা হয় ‘আকৃতির বিকৃতি’কে। এখানে সম্ভবত: মুসলীম উম্মাহ’র ওই সকল খবীস স্বভাবের লোকজনের দিকে ইংগীত করা হয়েছে, আল্লাহ যাদেরকে শুয়র ও বানর বানিয়ে দিবেন। যেমন আবু মালেক আশআরী রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- لَيَشْرَبَنَّ نَاسٌ مِنْ أُمَّتِي الْخَمْرَ ، يُسَمُّونَهَا بِغَيْرِ اسْمِهَا ، يُعْزَفُ عَلَى رُءُوسِهِمْ بِالْمَعَازِفِ وَالْمُغَنِّيَاتِ ، يَخْسِفُ اللَّهُ بِهِمْ الْأَرْضَ ، وَيَجْعَلُ مِنْهُمْ الْقِرَدَةَ وَالْخَنَازِيرَ . ورواه ابن ماجه : رقم ٤٠٢٠ , وصححه الألباني في صحيح ابن ماجه ; وأخرجه ايضا أحمد : ٥/٣١٨ ; وابن أبي الدنيا في ذم المسكر: ٤/٢; و ابن عساكر في تاريخ مدينة دمشق : ٥٦/٤٩٦ رقم ١١٨٨٦ ; و صححه الألباني في سلسلة الأحاديث الصحيحة : رقم ٩٠ – ‘অবশ্যই আমার উম্মতের মধ্যে (এমনসব) লোক (হবে, যারা) খামরুন (মদ ও মাদক) সেবন করবে এবং তারা তার নাম ভিন্ন অন্য নামে ডাকবে। তাদের মাথার কাছে বাদ্যযন্ত্র বাজবে এবং গাইকা (নারী)রা (গান গাবে)। আল্লাহ তাদেরকে জমিনে ধ্বসিয়ে দিবেন এবং তাদের মধ্য থেকে (কাউকে কাউকে) বাঁদর ও শুয়োরা বানিয়ে দিবেন’। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৪০২০; মুসনাদে আহমদ- ৫/৩১৮; তারিখে দামেশক, ইবনু আসাকীর- ৫৬/৪৯৬ হাদিস ১১৮৮৬; সুনানুল কুবরা, বাইহাকী- ৮/২৯৫, ১০/২২১; আল-মুসান্নাফ, ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ- ৫/৬৮; আল-মু’জামুল কাবির, ত্বাবরাণী- ৩৪১৯; মু’জামে ইবনুল আরাবী, হাদিস ১৬৪৬]
সেসময় কারো কারো চেহারা বা শরীর বাস্তবেই কি বানোর বা শুয়োরের মতো হয়ে যাবে, নাকি কথাটি তাদের চারিত্রিক অধপতনের দিকে ইশারা করে রূপকার্থে বলা হয়েছে -এ ব্যাপারে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। তবে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. সহ অনেক আইম্মা মুহাদ্দেসীন ও মুফাসসিরীনে কেরাম এখানে বাস্তবিক আকৃতির বিকৃতি হওয়ার অর্থকে সঠিক বলে মনে করেন। যেমন আল্লাহ তাআলা আহলে কিতাবদের কতিপয় লোক সম্পর্কে এরশাদ করেন: وَلَقَدْ عَلِمْتُمُ الَّذِينَ اعْتَدَواْ مِنكُمْ فِي السَّبْتِ فَقُلْنَا لَهُمْ كُونُواْ قِرَدَةً خَاسِئِينَ – তোমাদের-তো তাদের সম্পর্কে জানাই আছে, যারা তোমাদের মধ্যে সাবাতে’র ব্যাপারে (আল্লাহ’র নির্দেশ) লঙ্ঘন করেছিল। তখন আমি তাদেরকে (উদ্দেশ্য করে) বলেছিলাম: তোমরা লাঞ্চিত বানর হয়ে যাও। [সুরা বাকারাহ ৬৫] বিস্তারিত দেখুন- [তাফসিরে তাবারী- ২/১৭০, তাফসিরে মাওয়ার্দী- ১/১৩৫, তাফসিরে ইবনে কাসির- ১/১৫০, ফাতহুল বারী- ১০/৫৬]
আব্দুর রহমান বিন সুহার থেকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يُخْسَفَ بِقَبَائِلَ ، حَتَّى يُقَالَ لِلرَّجُلِ : مِنْ بَنِي فُلَانٍ ؟ قَالَ : فَعَرَفْتُ أَنَّ الْعَرَبَ تُدْعَى إِلَى قَبَائِلِهَا , وَأَنَّ الْعَجَمَ تُدْعَى إِلَى قُرَاهَا . رواه ابن أبي شيبة في ” المسند: ٢/٢٤٩ و في ” المصنف: ٧/٤٥٩ و سنده صحيح على شرط الشيخين ; أحمد فى المسند: ١٢/٣٨٨ رقم ١٥٨٩٨ واسناده صحيح: وتحقيق :حمزة احمد الزين; والحاكم في “مستدركه: ٤/٦١١ رقم٨٤٤٢ وقال: صحيح الإسناد ولم يخرجاه”، ووافقه الذهبي في تلخيصه; و الطبراني في ” الكبير: ٨/٧٣; قال الهيثمي فى المجمع الزوائد: رواه احمد و الطبراني و ابو يعلي و البزار و ورجاله ثقات: ٨/١٨ ; و ابن أبي عاصم في الآحاد والمثاني: ٣/٢٧١; أبو يعلى في المسند: ١٢/٢١٩; والطحاوي في شرح مشكل الآثار:٦/١٩٥; الداني في السنن الواردة في الفتن: ٣/٧١١ و سنده صحيح رجاله ثقات بعضهم رجال الصحيح – ‘কেয়ামত কায়েম হবে না, যাবৎ কবিলাহ (এলাকা/অঞ্চল) সমূহ ভূমিধ্বসের সম্মুখিন না হয়। এমনকি (আমি দেখতে পেলাম, তখন) এক ব্যাক্তিকে জিজ্ঞেস করা হবে: কোন্ বনী ফুলান (কোন কবিলা’র লোকেরা -ধ্বসে গেল)? রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: তখন আমি বুঝতে পেলাম, (ধ্বসে যাওয়া ওই কবিলাহ’গুলো হল) আরব (কবিলাহ। কারণ) আরব’দেরকে তাদের কবিলাহ’র দিকে (সম্মোধন করে) ডাকা হয়, আর অনারব’দেরকে ডাকা হয় তাদের শহরের দিকে (সম্মোধন করে)’। [আল-মুসান্নাফ, ইবনু আবি শায়বাহ– ৮/৪৫৯; মুসনাদে আহমদ -১২/৩৮৮ হাদিস ১৫৮৯৮; মুসতাদরাকে হাকিম– ৪/৬১১ হাদিস ৮৪৪২; মুসনাদে আবু ইয়া’লা- ১২/২১৯; শারহু মুশকিলিল আছার, ত্বহাবী- ৬/১৯৫; আস-সুনান , ইমাম দানী: ৩/৭১১; আল-মু’জামুল কাবীর, ত্বাবরাণী- ৮/৭৩; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৮/১৮]
উপরের মূল হাদিসটিতে বলা হয়েছে:- إذا ظهر الخبث – “যখন (সমাজে) খাবাসাত ব্যাপক আকার ধারন করবে” -এ বর্ণিত ‘খাবাসাত’ -কী কী তার ইংগীত রয়েছে বিভিন্ন রেওয়ায়েতে। যেমন: মদ পান, জেনা ব্যাভিচার, সমকামীতা, গাইকা নারীদের গান বাজনা, রেশমী কাপড় ইত্যাদি অশ্লীলতা, নোংরামী, বদ স্বভাব গুলো ও এসবের উপকরনাদি, যা মুসলমানদের সমাজে ব্যাপক আকারে মাঝে প্রকাশ পাবে।
ইমরান রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- فِي هَذِهِ الْأُمَّةِ خَسْفٌ وَمَسْخٌ وَقَذْفٌ . فَقَالَ رَجُلٌ مِنْ الْمُسْلِمِينَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ ، وَمَتَى ذَاكَ ؟ قَالَ : إِذَا ظَهَرَتْ الْقَيْنَاتُ وَالْمَعَازِفُ وَشُرِبَتْ الْخُمُورُ . رواه الترمذي: ٢١٣٨ , وصححه الألباني في صحيح الترمذي – ‘এই উম্মতের মধ্যে খাসফ (ভূমিধ্বস), মাসখ (চেহারা-বিকৃতি) এবং ক্বাযফ (বর্ষন) হবে’। তখন মুসলমানদের মধ্যে এক ব্যাক্তি জিজ্ঞেস করলো: ইয়া রাসুলুল্লাহ ! সেটা কখন হবে? রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: যখন (আমার উম্মতের মধ্যে অপ-সংস্কৃতির অংগ হিসেবে বেপর্দা ও বেহায়াপনামূলক আসোরে) গাইকা-রমণীগণ ও বাদ্যযন্ত্রাদি (-র পরিবেশ) ব্যাপক আকার ধারন করবে এবং মদ সমূহ পান করা হবে’। [সুনানে তিরমিযী, হাদিস ২২১২]
হযরত ইবনে ছাবেত রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন- إِنَّ فِي أُمَّتِي خَسْفًا وَمَسْخًا وَقَذْفًا ، قَالُوا : يَا رَسُولَ اللهِ ، وَهُمْ يَشْهَدُونَ أَنْ لاَ إلَهَ إِلاَّ اللَّهُ ؟ فَقَالَ : نَعَمْ ، إِذَا ظَهَرَتِ الْمَعَازِفُ وَالْخُمُورُ وَلُبِسَ الْحَرِيرُ . اخرجه ابن أبي شيبة في “المصنف, كتاب الفتن, ما ذكر في فتنة الدجال: , قال محمد عوامة في مصنف ابن أبي شيبة: مرسل بإسناد حسن – ‘নিশ্চই আমার উম্মাতের মধ্যে খাসফ, মাসখ এবং ক্বাযফ হবে। লোকেরা জিজ্ঞেস করলো: ইয়া রাসুলাল্লাহ ! তারা কি لا إله إلا الله (লাা ইলাাহা ইল্লাল্লহু) সাক্ষ্য দিবে? তিনি বললেন: হ্যাঁ, যখন বাদ্যযন্ত্র ও মদ সমূহ (আমার উম্মতের মধ্যে ব্যাপক আকারে) প্রকাশ পাবে, এবং রেশমী কাপড় পরিধান করা হবে’। [আল-মুসান্নাফ, ইবনু আবি শায়বাহ- ৮/৬৬৩]
হযরত আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- وَالَّذِي بَعَثَنِي بِالْحَقِّ ، لَا تَنْقَضِي هَذِهِ الدُّنْيَا حَتَّى يَقَعَ بِهُمُ الْخَسْفُ وَالْمَسْخُ وَالْقَذْفُ ” قَالُوا : وَمَتَى ذَلِكَ يَا نَبِيَّ اللَّهِ بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي ؟ قَالَ : ” إِذَا رَأَيْتَ النِّسَاءَ قَدْ رَكِبْنَ السُّرُوجَ ، وَكَثُرَتِ الْقَيْنَاتُ ، وَشُهِدَ شَهَادَاتُ الزُّورِ ، وَشَرِبَ الْمُسْلِمُونَ فِي آنِيَةِ أَهْلِ الشِّرْكِ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ ، وَاسْتَغْنَى الرِّجَالُ بِالرِّجَالِ ، وَالنِّسَاءُ بِالنِّسَاءِ فَاسْتَدْفِرُوا وَاسْتَعِدُّوا ” وَقَالَ : هَكَذَا بِيَدِهِ وَسَتَرَ وَجْهَهُ . رواه الحاكم في المستدرك , كتاب الفتن والملاحم: ٤/٤٨٣ رقم ٨٣٤٩ و اسناده ضعيف جدا , قال الذهبي في التلخيص: سليمان هو اليمامي ضعفوه، والخبر منكر; رواه الطبراني في المعجم الأوسط و قال الهيثمي وفيه سليمان بن داود اليمامي وهو متروك; و ذكره المتقي في كنز العمال : ١٤/٢٨٠ رقم ٣٨٧٣٠; قال السيوطي في الدر المنثور: ٧/٤٧٨: أخرج البزار والحاكم بسند ضعيف – ‘ওই সত্ত্বার কসম, যিনি আমাকে সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন, দুনিয়া (ততদিন পর্যন্ত) ধ্বংস হবে না -যাবৎ না তাদের মধ্যে খাসফ (ভূমিধ্বস), মাসখ (বর্ষন) এবং ক্বাযফ (চেহারা/আকারের বিকৃতি) ঘটে। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন: এমনটা কখন ঘটবে -হে আল্লাহ’র নবী? তিনি বললেন: ‘যখন (আমার উম্মতের) নারীকে দেখবে যে, সে (বাহনের) জিন/সিটে চেঁপে বসেছে, (সমাজে) প্রচুর সংখ্যক গাইকা (রমণী) হয়ে গেছে, ভুয়া/মিথ্যা সাক্ষ্যদানের ক্ষেত্রগুলোতে (আল্লাহ’র ভয়-ডর ছাড়াই নির্বিকারভাবে) সাক্ষ্য দেয়া হচ্ছে, (খোদ) নামাযী ব্যাক্তিরা (পর্যন্ত) আহলে-শিরক (অংশীবাদী)দের স্বর্ণ ও রৌপ্যের পাত্রে পান করছে, পুরুষ পুরুষকে এবং নারী নারীকে (যৌনচর্চার জন্য) যথেষ্ট মনে করছে, তখন তোমরা পূতিগন্ধময়/নোংরা/অপ্রিতীকর অবস্থার অপেক্ষায় প্রস্তুত হয়ে থেকো। রাবী বলেন: (একথা বলে) তিনি তাঁর হাত দিয়ে এভাবে মুখকে ঢেকে নিলেন’। [মুসতাদরাকে হাকিম– ৪/৪৮৪ হাদিস ৭৩৩৯; আল-মু’জামুল আউসাত, ত্বাবরাণী- ৫/১৯৫, হাদিস ৫০৬১; আদ-দুররুল মানসুর, সুয়ূতী- ৭/৪৭৮]
নারীদের জন্য বাহনে চড়া অবশ্যই জায়েয এবং হাদিসে নারীদের উটের পিঠে আরোহন করে বিভিন্ন স্থানে যাওয়ার প্রমাণ রয়েছে। তবে নারী চড়তেন শরয়ী পর্দার সীমা রক্ষা করে। উটের পিঠে পর্দা ঘেরা ছোট আসন পেতে দেয়া হত, নারীরা তার ভিতরে বসে থাকতেন আর উট এগিয়ে চলতো। নারী’রা বসতেনও ওইরকম মার্জিত ভাবে যে ভাবে বসলে নারীর বসার সাথে মানানসই হয়; পুরুষের মতো বসতেন না। (অনন্যপায় হলে ভিন্ন কথা)।
নারী মটোরসাইকেল শেষ জামানা ড্রাইভিং
কিন্তু উপরের হাদিসে যে বলা হয়েছে- إِذَا رَأَيْتَ النِّسَاءَ قَدْ رَكِبْنَ السُّرُوجَ – ‘যখন (আমার উম্মতের) নারীকে দেখবে যে, সে (বাহনের) জিন/সিটে চেঁপে বসেছে, – এর দ্বারা উদ্দেশ্য নারীদের বাহনে আরোহনকে অপছন্দ করা নয়। বরং, উদ্দেশ্য হল সেই জামানা সম্পর্কে সতর্ক করা, যে জামানায় এমনসব নারীদের ঢল নামবে, যারা আল্লাহ’র সৃষ্টিকৃত ও শরয়ী নির্দেশিত পুরুষ ও নারী’র পার্থক্যের ধারনাটিকে উঠিয়ে দিতে চাইবে এবং এরই ক্রমধারায় নারীরা পুরুষদের কর্মক্ষেত্রগুলোতে জায়গা করে নিবে। এদেরই মধ্যে এমন নারীরাও হবে, যারা নারীদের শালীন কায়দা বর্জন করে পুরুষদের কায়দায় বাহনের সিটে বসবে। আপনারা কি এ জামানায় স্কুল/কলেজ/ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া বহু যুবতী মেয়ে/নারী’কে দেখেন নি তার কিভাবে বন্ধু/প্রেমিকের পিছনে পুরুষদের মতো করে বসে ভোঁ করে মটরসাইকেল উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে!? ২০/২৫ বছর আগেও নারী এনজিও কর্মিদের মধ্যে হঠাৎ ২/১ জনকে চোখে পড়তো। আর আজ নারীদের বেপর্দায় সাইকেল/মনোটরসাইকেল চালানোর হিরিক পড়েছে, তাও আবার পুরুষদের কায়দায় বসে। অধিকারের নামে নারীদের সাইকেল বহর/রেলিও বেড় হতে দেখা যাচ্ছে। আল্লাহই জানে, এদের জন্য খাসফ (ভূমিধ্বস), মাসখ (বর্ষন) এবং ক্বাযফ (চেহারা/আকারের বিকৃতি)-এর মধ্যে কোনটা কার জন্য অপেক্ষা করছে! الله اعلم بالصواب
# আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- إنه سيكون في أمتي مسخ وقذف، وهو في الزندقية والقدرية . رواه أحمد في مسنده : ٢/١٣٦ رقم ٦٢٠٨ ، و قال الهيثمي في مجمع الزوائد: ٧/٢٠٦ : رواه أحمد ورجاله رجال الصحيح، و صحح إسناده السيوطي في الخصائص الكبرى : ٢/١٤٨ ، و أحمد شاكر في تحقيقه للمسند : ٩/٧٤ – “নিশ্চই এই উম্মতের মধ্যে (আখেরী জামানায়) মাসখ (আকৃতি-বিকৃতি) এবং ক্বাযফ (প্রস্তর বর্ষন) হবে। আর সেটা (হবে) জিন্দিক ও কাদরিয়া (গোষ্ঠি)র মধ্যে”। [মুসনাদে আহমদ– ২/১৩৬ হাদিস ৬২০৮; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৭/২০৬]
# হযরত আমের বিন আস বিন আবি ওয়াক্কাস থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- كَتَبْتُ إِلَى جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ مَعَ غُلَامِي نَافِعٍ ، أَنْ أَخْبِرْنِي بِشَيْءٍ سَمِعْتَهُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، قَالَ : فَكَتَبَ إِلَيَّ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ جُمُعَةٍ عَشِيَّةَ رُجِمَ الْأَسْلَمِيُّ ، يَقُولُ : ” لَا يَزَالُ الدِّينُ قَائِمًا حَتَّى تَقُومَ السَّاعَةُ أَوْ يَكُونَ عَلَيْكُمُ اثْنَا عَشَرَ خَلِيفَةً كُلُّهُمْ مِنْ قُرَيْشٍ . رواه مسلم فى الصحيح , كتاب الإمارة , باب الناس تبع لقريش والخلافة في قريش, رقم ١٨٢٢; أبو عوانة في مسنده: ٤/٣٧٣ رقم ٦٩٩٦ – ‘আমি যাবের বিন সামুরাহ’র কাছে চিঠি লিখে (তা) আমার গোলাম নাফেহ’কে দিয়ে পাঠালাম (এই বলে) যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ থেকে আপনি শুনেছেন -এমন কিছু আমাকে জানান। তিনি আমার কাছে লিখে পাঠালেন: ‘আমি জুমআর দিন বিকেলে আল-আসলামীকে রজমের সময় রাসুলুল্লাহ ﷺ -কে বলতে শুনেছি: এই দ্বীন সর্বদা কায়েম হয়ে থাকবে, যাবৎ না কেয়ামত ঘটে যায় কিংবা (যাবৎ না) তোমাদের (মুসলমানদের) উপরে বার জন খলিফাহ হয়, যাদের সকলে কুরায়শ (বংশ) থেকে (হবে)’।[সহিহ মুসলীম, হাদিস ১৮২২; মুসনাদে আবু আউয়ানাহ– ৪/৩৭৩ হাদিস ৬৯৯৬]
ফায়দা: আরেকটি সহিহ হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- لَا يَزَالُ هَذَا الدِّينُ عَزِيزًا مَنِيعًا إِلَى اثْنَيْ عَشَرَ خَلِيفَةً . اخرجه مسلم فى الصحيح: ٣/١٤٥٣ رقم ١٨٢١; و البخاري فى الصحيح, كتاب الأحكام، باب الاستخلاف: رقم الحديث ٧٢٢٢; – ‘এই দ্বীন (ইসলাম আমার উম্মাতের) বার জন খলিফার হাতে (তাদের নিজ নিজ জামানায় তার স্ব-বৈশিষ্টে পূণর্জ্জীবিত হয়ে অপরাপর দ্বীনের উপর) প্রবল ও দুর্বেদ্ধ-মজবুত হওয়া থেকে খালি থাকবে না’। [সহিহ মুসলীম– ৩/১৪৫৩ হাদিস ১৮২১; সহিহ বুখারী, হাদিস ৭২২২]
ইসলামের বিগত বহু খলিফার মাধ্যমে, যেমন: প্রথম খলীফা হযরত আবুবকর সিদ্দিক রা., দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর ফারুক রা., তৃতীয় খলীফা হযরত ওসমান গণী রা, চতুর্থ খলীফা হযরত আলী রা. এবং পঞ্চম খলীফা হযরত হাসান বিন আলী রা., ওমর বিন আব্দুল আজিজ রাহ. প্রমুখের মাধ্যমে এই ভবিষ্যৎবাণীর সিংহভাগেই ইতিমধ্যে পূর্ণ হয়ে গেছে। আমাদের এই শেষ জামানায় আমরা একজন বিশেষ খলিফায়ে রাশেদের আগমনের অপেক্ষায় দিন গুণছি, আর তিনি হলেন ইমাম মাহদী রা., যাঁর দ্বারা মুমূর্ষ ইসলাম আবারো পূণরুজ্জীবিত হয়ে গোটা পৃথিবীর অপরাপর দ্বীনের উপরে প্রবল ও দুর্বেদ্ধ-মজবুত আকার ধারণ করবে, ইনশাআল্লাহ। الله اعلم بالصواب
# আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- إذا سمعتم بجيش قد خسف به قريباً فقد أظلت الساعة . رواه أحمد : في مسنده : ٦/٣٧٨ رقم ٢٧١٧٣ ، و قال الهيثمي في مجمع الزوائد : ٨/١٢ : رواه أحمد والطبراني وفيه ابن إسحاق و هو مدلس و بقية رجال أحد إسنادي أحمد رجال الصحيح، و حسنه الألباني في صحيح الجامع : رقم ٦١٨ – “তোমরা যখন (আরবের মদিনার) নিকটে (বায়দা নামক এলাকায় কোনো) সৈন্যবাহিনীর ভূমিতে ধ্বসে (তলিয়ে) যাওয়ার কথা শুনবে, (তখন বুঝে নিও) কেয়ামত মূলত: ছায়া দিচ্ছে”। [মুসনাদে আহমদ– ৬/৩৭৮ হাদিস ২৭১৭৩; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৮/১২]
ফায়দা: এই ঘটনা ঘটবে আখেরী জামানায় ইমাম মাহদী রা.-এর হাতে খিলাফতের বায়াত গ্রহনের পর। শাম থেকে একটি সৈন্যদল ইমাম মাহদী রা.-কে আক্রমন করার জন্য আরব ভূমিতে আসবে এবং আল্লাহ তাআলা তাদেরকে মক্কা ও মদিনার মাঝামাঝি ‘বায়দা’ এলাকায় জমিনের নিচে ধ্বসিয়ে দিবেন। الله اعلم بالصواب

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   জামাতের চেয়ে আউয়াল ওয়াক্তে সলাত আদায়ের গুরুত্ব বেশি , ব্যাখ্যা ও দলিল বা রেফারেন্স সহ
MuslimPoint Organization

About MuslimPoint Organization

MuslimPoint একটি অনলাইন ভিত্তিক ইসলামী প্রশ্নোত্তর, গ্রন্থাগার, ব্লগিং, কুরআন, হাদিস, কুইজ এবং বিষয় ভিত্তিক রেফারেন্স প্ল্যাটফর্ম।

View all posts by MuslimPoint Organization →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *