জেনে নিই হজ্জ ও উমরা এর বিস্তারিত(পর্ব 3)।

হজ্জ-হাজী-muslimpoint
পর্ব ৩ঃ

 ✅✅হজের শর্তাবলী ও যার ওপর হজ ওয়াজিব
=======================

হজ একটি অবশ্য পালনীয় ইবাদত, তবে কিছু শর্ত সাপেক্ষে।

নিম্নোক্ত ৭/৮টি মৌলিক শর্ত পূরণ সাপেক্ষে হজ প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য ফরয, যা জীবনে অন্তত একবার পালন করতে হবে।

শর্তগুলো হলো:

মুসলিম হওয়া।

প্রাপ্তবয়স্ক/বালিগ হওয়া (১৫ বছর)।

স্বাধীন বা মুক্ত হওয়া (কৃতদাস না হওয়া)।

শারীরিকভাবে সুস্থ ও মানসিক ভারসাম্য থাকা।

হজে গমনের ও সম্পূর্ণ খরচ বহনের সামর্থ্য থাকা।

হজ পালনের জন্য যাত্রাপথের নিরাপত্তা থাকা।

মহিলার সঙ্গে মাহরাম থাকা।

* হজে থাকাকালীন সময়কাল পরিবারের ভরণপোষণের নিশ্চয়তা করা।

একজন মহিলার মাহরাম হলেন তার স্বামী অথবা তার পরিবার ও আত্মীয়ের মধ্যে এমন একজন পুরুষ যার সাথে ইসলামী শরী‘আহ্ মোতাবেক বিবাহ বৈধ নয়। (যথা -পিতা, ভাই, ছেলে, চাচা, মামা, ভাইয়ের/বোনের ছেলে)

যদি কেউ আপনাকে হজ করার জন্য খরচ বা অর্থ (হালাল অর্থ) প্রদান করেন তবে তা বৈধ। আপনি যদি এ টাকায় হজ পালন করেন তাহলে পরবর্তীতে আপনার ওপর হজ আর বাধ্যতামূলক হবে না; এমনকি পরবর্তীতে আপনি যদি আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান হনও।

আপনি যদি আপনার সন্তানকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই হজে নিয়ে যান তাহলে সেই হজ সেবামূলক হজ হিসেবে গণ্য হবে ও এ হজের সাওয়াব আপনি লাভ করবেন এবং প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর যদি সে আর্থিক সামর্থ্যবান হয়, তবে আপনার সন্তানের ওপর পুনরায় হজ ফরয হবে।

যে নারীর হজ সফর সম্পন্ন করার অর্থমূল্যের নিজস্ব অলঙ্কার রয়েছে তার ওপর হজ ফরয। সে এ অলঙ্কার বিক্রি করেই হজে যেতে পারবে তবে অবশ্যই মাহরাম সঙ্গে নিতে হবে। কোনো মহিলার যদি মাহরাম না থাকে তবে হজ তার জন্য প্রযোজ্য নয়। সে কাউকে দিয়ে তার বদলি হজ করিয়ে নিবে। যদি কোনো মহিলা মাহরাম ছাড়াই হজে যায় তাহলে বড় ধরনের গোনাহে লিপ্ত হলো বলে আলেমগণ মত প্রকাশ করেছেন।

একজন ব্যক্তি টাকা ধার/কর্জ করেও হজ পালন করতে পারবেন, যদি তিনি এ টাকা ভবিষ্যতে পরিশোধ করার সামর্থ্য রাখেন, তবে এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, ধার করে হজ করা জরুরি নয়।

যদি কোনো ব্যক্তি সামর্থ্য থাকার পরও হজ পালন না করেই মারা যায়, তাহলে অন্য কেউ তার পক্ষে বদলী হজ করতে পারবেন। তবে একটি জিনিস মনে রাখতে হবে, তা হচ্ছে, বদলী হজকারীকে সর্বপ্রথম তার নিজের হজ পালন করেছেন এমন হতে হবে।

অনেক লোক ভুল করে প্রচার করে থাকেন যে, যিনি উমরাহ করেছেন তার ওপর হজ ফরয হয়ে যায়। হজ তার ওপর ফরয নয় যার এটা পালন করার মতো যথেষ্ট সামর্থ্য নেই, এমনকি সে যদি হজের মাসেও উমরাহ পালন করে।

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   উছিলা বা ওয়াসীলাহ কী ও এর প্রকারভেদ এবং ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ(জায়েজ) বা অবৈধ(নাজায়েজ) উছিলার ব্যাখ্যাসহ বিস্তারিত বিবরণ

একটি ধারণা প্রচলিত আছে, যার ঘরে অবিবাহিত কন্যা রয়েছে সেই কন্যার বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত তার ওপর হজ ফরয নয়। এটা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত কথা।

 ✅হজের জন্য নিজকে প্রস্তুত করুন
=======================

প্রথমেই ঈমানকে নবায়ন ও আকীদাকে শুদ্ধ করুন। যত দ্রুত সম্ভব সুস্থ ও বলিষ্ঠ থাকা অবস্থায় হজ পালন করুন, হজ পালনে বিলম্ব করা উচিৎ নয়।

অন্তরের নিয়তকে পরিশুদ্ধ করুন, কারণ ‘‘নিয়তের ওপর আমল নির্ভরশীল’’। সকল প্রকার শির্ক ও বিদ‘আত সম্পর্কে জানুন ও তা থেকে মুক্ত হয়ে চলুন।

হজের যাত্রা জীবনে একবারই মনে করুন। সুতরাং এ যাত্রাকে নিজের জীবনের ইতিবাচক পরিবর্তনে কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন।

সুখ্যাতি, ব্যবসা, ভ্রমণ বা শুধু মাহরাম হওয়ার উদ্দেশ্যে হজ করবেন না।

আন্তরিকভাবে অতীতের সকল পাপের জন্য আল্লাহর কাছে তাওবা করুন ও ক্ষমা চান এবং ভবিষ্যতে পাপ কাজ না করার দৃঢ় সংকল্প নিন।

দেনমাহরসহ আপনার অন্যান্য সকল পাওনা ও ক্ষতিপুরণ পরিশোধ করুন।

আপনার হজের জন্য অর্থ সংগ্রহ করুন এবং নিশ্চিত করুন তা হালাল পথে উপার্জিত হয়েছে। অবৈধ বা সুদ মিশ্রিত টাকা হজ কবুল হওয়ার অন্তরায়।

ভবিষ্যতে সমস্যা হতে পারে এমন গুরুত্বপূর্ণ অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করুন।

বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতজনদের কাছে মিথ্যা বলা, খারাপ আচরণ, হক নষ্ট করা ও তাদের কষ্ট দেওয়ার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিন।

এটিই আপনার জীবনের সর্বশেষ যাত্রা হতে পারে, সুতরাং আপনার পরিবারের জন্য একটি উইল বা অসীয়তনামা করে রেখে যান।

হজ ও উমরাহ সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য ও সহীহ বই থেকে জানুন এবং হজের কিছু দো‘আ মুখস্থ করুন।

আগে হজ করেছেন এমন ব্যক্তির কাছ থেকে হজ সম্পর্কে জানুন।

নিজেকে শারীরিকভাবে সুস্থ রাখুন। (পাঁচ ওয়াক্ত সালাত মসজিদে গিয়ে আদায় করুন, বেশি বেশি হাটাহাটি করুন, ব্যায়াম করুন ও নিয়মিত চিকিৎসা নিন)

মানসিকভাবে প্রস্তুত হোন। (ধৈর্যশীল হতে শিখুন, নিজেকে মানিয়ে নিতে, রাগকে দমন করতে ও ত্যাগ শিকার করতে শিখুন)

আপনার মাঝে পরিবর্তন আনুন -আপনার মুখ, চোখ, হাত, পা ও কান নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করুন। নিজকে সংযত করুন।

ধার্মিক, সহায়ক ও বিশ্বস্ত এরকম ২/১ জনকে সঙ্গী হিসেবে হজ যাত্রার জন্য খুঁজে নিন এবং তাদের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখুন।

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   হজ্জ ও ওমরাহ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ লেখা ।

সম্ভব হলে দরকারী কিছু ইংরেজী, আরবী ও হিন্দি শব্দের অর্থ শিখে নিন।

আপনার হজের যাত্রার পরিকল্পনা করুন, প্রথমে মক্কা না মদীনা গেলে উত্তম হয় -তা ভেবে দেখুন।

দাঁড়ি রেখে দেওয়ার ব্যাপারে ভাবুন; কারণ তা রাখা ওয়াজিব, কাটা হরাম, দাঁড়ি না রাখলে কবিরা গুনাহ হয় এবং ধুমপান, জর্দা ও গুল-এর মতো হারাম অভ্যাসগুলো পরিহার করুন।

সদা আল্লাহর যিকিরের মাধ্যমে আন্তরকে আন্দোলিত রাখার অভ্যাস করুন।

হজ সফরে আবেগ তাড়িত হয়ে কোনো কিছু না করার বিষয়ে সজাগ থাকুন।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো হজে যাওয়ার পূর্বে আপনার মনে তাকওয়া অর্থাৎ আল্লাহভীতি ও ধর্মনিষ্ঠা আনতে হবে। আপনার তাকওয়াকে জাগ্রত করুন।

 ✅হজের পূর্ব প্রস্তুতি
=============

হজে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া মাত্রই মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট করে নিন।

হজ সংক্রান্ত সরকারের বিভিন্ন সার্কুলার ও নির্দেশনার খোঁজ খবর রাখুন এ ওয়েব সাইট থেকে www.hajj.gov.bd

বিগত হাজীদের কাছ থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনা ও বেসরকারি হজ এজেন্সির সেবা সম্পর্কে মতামত নিন (ঢাকায় হজ মেলায় যেতে পারেন)।

বেসরকারি বিভিন্ন হজ এজেন্সির খোঁজ নিন এবং প্যাকেজ সম্পর্কে জানুন।

নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর পরিবার থেকে যারা হজে যাবেন তারা কম দামি হজ প্যাকেজে প্রলুব্ধ হবেন না, কারণ সস্তার তিন অবস্থা।

আর ধনীরাও ৫/৪ তারকা হোটেলের হজ প্যাকেজে প্রলুব্ধ হবেন না। কারণ, এটা হলিডে ট্যুর নয়।

অঅনুমোদিত হজ এজেন্সি থেকে সতর্ক থাকুন। কারণ, এতে আপনি প্রতারিত হতে পারেন।

সরকারি ব্যবস্থাপনা অথবা সরকার অনুমোদিত কোনো একটি বেসরকারি হজ এজেন্সি যারা গোড়ামি ও ভ্রান্ত আকীদা মুক্ত বিজ্ঞ হকপন্থী আলেম দ্বারা পরিচালিত তাদের হজ প্যাকেজ বেছে নিন। আপনার হজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য এ বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তাদের হজ সেবা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন ও সেবার লিখিত বিবরণ রাখুন এবং তাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলুন।

সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে ১৫ কপি পাসপোর্ট সাইজ ও ১০ কপি স্ট্যাম্প সাইজের রঙ্গিন ছবি করুন।

হজ ফরম পূরণ করুন এবং হজ চুক্তি স্বাক্ষর করে এর মূল কপি ও একটি করে ফটোকপি রেখে দিন।

সরকারি অথবা বেসরকারি হজ এজেন্সির ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা দিয়ে এজেন্সির অফিস থেকে পাকা জমা রশিদ সংগ্রহ করুন।

সবচেয়ে ভালো হয় আগেভাগেই কম দামে কিছু সৌদি রিয়াল কিনে নেওয়া।

জানাযা সালাত কিভাবে পড়তে হয় ও জানাযার সালাত-এর দো‘আ শিখে নিন।

হজে যাওয়ার আগে মহিলাদের মসজিদে সালাত আদায়ের নিয়ম-কানুন শিখে নেওয়া ভালো।

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   রমাদান মাসে শয়তান শিকল বন্দী থাকে তবুও কেন মানুষ পাপ কাজ করে? বিস্তারিত জেনে নিন

আপনি যদি চাকুরিজীবি হন, তাহলে আপনার প্রতিষ্ঠান থেকে অনাপত্তিপত্র সংগ্রহ করুন।

লিফট ও এস্কেলেটরে চড়ার অভ্যাস করুন।

হজে যাওয়ার জন্য প্রত্যেককে অবশ্যই জেলা পর্যায়ে সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে মেডিকেল বোর্ডে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে।

মনিংজাইটিস টিকা নিতে হবে, ঢাকার হজ ক্যাম্প থেকেও নেওয়া যাবে।

বয়স ৪০/৪৫ এর নিচে হলে পুলিশ ভেরিফিকেশন হয়ে থাকে সাধারণত।

কিছু হজ প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নিন এবং হজ প্রশিক্ষণ ভিডিও দেখুন।

ভালো হজ এজেন্সি পছন্দ করার জন্য টিপস: নন-হিলটপ বাড়ি (পাহাড়ের উপর বাড়ি না), মসজিদের নিকটবর্তী বাড়ী, তিন বেলা খাবার ব্যবস্থা, আরাফা ও মিনায় খাবারের ব্যবস্থা, হাদীর ব্যবস্থা, ভালো বাস সার্ভিস, দর্শনীয় স্থানসমূহ যিয়ারত সুবিধা ইত্যাদি।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলো হজের সময় হাজীদের কেমন সেবা দেন। তাদের কাছে প্রত্যাশা কম করবেন। তাদেরকে সত্য বলার পরামর্শ দেবেন। তারা ন্যূনতম কী কী সেবা দিতে পারবে আর কী কী পারবেন না, তা যেন তারা পরিষ্কার লিখিত ভাবে জানিয়ে দেন। কোনো লুকোচুরি যেন না থাকে। তারা যেন এমন কোনো বিষয় গোপন না করেন যা হজের সময় আপনার কষ্ট বা ক্ষতির কারণ হতে পারে। বিভিন্ন অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির কারণে অনেক সময় আপনার হজ এজেন্সি প্রত্যাশিত কিছু সেবা নাও দিতে পারেন, সেক্ষেত্রে এজেন্সির লোকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। এক্ষেত্রে ধৈর্যের পরিচয় দিন।

✅ কিছু তথ্য জেনে রাখুন
================

এক জায়গা হতে
অন্য জায়গা পর্যন্ত
দূরত্ব (আনুমানিক)
সময় (আনুমানিক)
ঢাকা বিমানবন্দর
জেদ্দা বিমানবন্দর
৩২৫৩ মাইল/৫২৩৪ কি.মি
৬-৭ ঘণ্টা (বিমানে)
জেদ্দা বিমান বন্দর
মক্কা
৫৫ মাইল/৯০ কি.মি
১-২ ঘণ্টা (বাসে)
জেদ্দা বিমানবন্দর
মদীনা
২৮০ মাইল/৪৫০ কি.মি
৬-৭ ঘণ্টা (বাসে)
মক্কা
মদীনা
৩০৫ মাইল/৪৯০ কি.মি
৭-৮ ঘণ্টা (বাসে)
মক্কা
আরাফা
১৪ মাইল/২২ কি.মি

মক্কা
মিনা
৫ মাইল/৮কি.মি
১-২ ঘণ্টা (বাসে)
মিনা
আরাফা
৯ মাইল/১৪ কি.মি
২-৩ ঘণ্টা (বাসে)
আরাফা
মুযদালিফা
৮ মাইল/১৩ কি.মি
২-৩ ঘণ্টা (বাসে)
মুযদালিফা
মিনা
১.৬ মাইল/২.৫ কি.মি
১-২ ঘণ্টা (বাসে)

ভ্রমণের রুট: ভারত, আরব সাগর, মাস্কট/দুবাই হয়ে সৌদি আরব।

আবহাওয়া: মক্কা (২২-৪০ ডিগ্রি), মদীনা (২০-৪২ ডিগ্রি)।

আদ্রতা: মক্কা (৬০-৭২%), মদীনা (২০-৪৩%)।

সময়ের ব্যবধান: তিন ঘণ্টা (ঢাকায় সকাল ৯টা, মক্কায় তখন সকাল ৬টা)

সৌদি রিয়াল রেট: ১ সৌদি রিয়াল=২১-২২টাকা। (বাজার দর সাপেক্ষে)

বিদ্যুৎ: ১১০/২২০ ভোল্ট

সৌদি ফোন কোড: +৯৬৬ XXXXXXXXX

MuslimPoint Organization

About MuslimPoint Organization

MuslimPoint একটি অনলাইন ভিত্তিক ইসলামী প্রশ্নোত্তর, গ্রন্থাগার, ব্লগিং, কুরআন, হাদিস, কুইজ এবং বিষয় ভিত্তিক রেফারেন্স প্ল্যাটফর্ম।

View all posts by MuslimPoint Organization →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *