দাজ্জালের আগমন ও ফিতনা সম্পর্কে ব্যাখ্যা ও উদাহরণসহ কেয়ামতের আলামত ও ভবিষ্যতবাণী পর্ব-২

আখেরী আলামত উদাহরণ কেয়ামত ফিতনা ফ্যাসাদ ব্যাখ্যা ভবিষ্যতবাণী মোহাম্মদ(স) শেষ-জামানা মালাহেম মালহামা মহাযুদ্ধ
দাজ্জালের আগমন ও ফিতনা সম্পর্কে ব্যাখ্যা ও উদাহরণসহ কেয়ামতের আলামত ও ভবিষ্যতবাণী

[আমরা ইতিপূর্বে কেয়ামতের আলামত ও ভবিষ্যতবাণী সম্পর্কে পর্ব ভিত্তিক অনেকগুলো হাদিস ও আছার পেশ করেছি। সেগুলো দেখতে এখানে ক্লিক করুন ।]
[প্রথমেই বলে রাখি কিয়ামতের জ্ঞান শুধুমাত্র আল্লাহ’র কাছে আছে ।
‘(হে নবী মুহাম্মাদ!) মানুষ তোমাকে কিয়ামত (কবে হবে, সে) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। তুমি বলো, এর (একেবারে সঠিক) জ্ঞান শুধুমাত্র আল্লাহ’র কাছে আছে। আর (হে নবী !) তুমি কি জানো, কিয়ামত (ঘটার) সম্ভাবনা নিকটে চলে এসেছে !’ [সূরা আহযাব ৬৩]
এখানে শুধুমাত্র হাদিস ও কিছু অনুমানের ভিত্তিতে আমরা কিয়ামতের আলামতগুলো ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি । সুতরাং এখানের সকল বক্তব্য কে আমরা কখনো চূড়ান্ত বলে মনে করি না । এগুলো শুধু উল্লেখ করছি, যাতে এই রেওয়ায়েতসমূহে বর্ণিত কোনো ঘটনা ঘটতে দেখলে তা চিনে নিতে পারেন এবং রেওয়াতের হক্ব আদায় করতে পারেন।
উল্লেখ্য, যেহুতু হয়তো এখানে বর্ণিত অল্প কিছু হাদিসের সনদগত ও অন্যান্য দূর্বলতা থাকতে পারে তাই এখানে উল্লেখিত হাদিসসমূহ কোনো বিজ্ঞ মুহাদ্দেস আলেমের পরামর্শ ব্যাতীত কারো কাছে বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছি।]

ইমাম মাহদী’র আবির্ভাবের প্রায় ৬/৭ বছর পরে বের হবে দাজ্জাল


# হযরত মুয়ায বিন যাবাল রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- عمران بيت المقدس خراب يثرب، وخراب يثرب خروج الملحمة، وخروج الملحمة فتح القسطنطينية، وفتح القسطنطينية خروج الدجال. أخرجه أبو داود في “السنن: ٤٢٩٤ و حسّنه الألباني في صحيح أبي داود: رقم ٤٢٩٤ ; وأحمد في “مسنده: ٥/٢٤٥ رقم ٢٢١٢١; الطحاوي في “شرح مشكل الآثار: ٥١٩, ; ابن أبي شيبة في “المصنف:١٥/١٣٥ رقم ٣٨٤٧٣ ;;الطبراني في “المعجم الكبير: ٢٠/١٠٨;الحاكم في “المستدرك:٨٢٩٧ ; الديلمي في “الفردوس: ٤١٢٧; قال الحافظ ابن كثير في النهاية:١/٥٩ : وهذا إسناد جيد وحديث حسن، وعليه نور الصدق وجلالة النبوة – ‘বায়তুল-মাকদিস’-এর গড়ন (হলে ঘটনার ক্রমধারায়) ইয়াসরিব’-এর খারাবী (হবে)। ইয়াসরিব’-এর খারাবী (হলে ঘটনার ক্রমধারায়) মালহামাহ’র সূত্রপাত (হবে)। মালহামাহ’র সূত্রপাত (হলে এর ক্রমধারায় মুসলমানদের হাতে) কুসতুনতুনিয়া (তথা কনসটেন্টিনোপল, তুরষ্ক)’র বিজয় (সংঘটিত হবে), আর কুসতুনতুনিয়া’র বিজয় (সংঘটিত হলে তার কিছু কাল পর) দাজ্জালের আবির্ভাব (হবে)। [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪২৯৪; মুসনাদে আহমদ-৫/২৪৫, হাদিস ২২১২১; শারহু মুশকিলিল আছার, ত্বাহাবী, হাদিস ৫১৯; আল-মুসান্নাফ, ইবনু আবি শায়বাহ- ১৫/১৩৫, হাদিস ৩৮৪৭৩; আল-মু’জামুল কাবীর, ত্বাবরাণী- ২০/১০৮; মুসতাদরাকে হাকিম, হাদিস ৮২৯৭; মুসনাদে ফিদোউস, দাইলামী, হাদিস ৪১২৭]

ফায়দা: আরব’রা তৎকালীন তুর্কি/তুরষ্কের রোমান বাইজেন্টাইন স্রাম্রাজ্যের রাজধানী কনসটেন্টিনোপল’কে বলতো কুসতুনতুনিয়া, যেটা আজ ইস্তাম্বুল নামে পরিচিত। আমি যখন এটি লিখছি, তখন তুরষ্কের প্রেসিডেন্ড আছেন মুসলীম শাসক রিসেপ তায়েপ এরদোগান। খুব সম্ভব মালহামাহ (মহাযুদ্ধ)-র শুরুর দিকে গোটা তুরষ্ক কিংবা তুরষ্কের ইস্তাম্বুল কাফেরদের দখলে চলে যাবে এবং (নিম্নের আব্দুল্লাহ বিন বুসর ও মুয়ায বিন যাবাল রা. বর্ণিত হাদিস থেকে বোঝা যায়) মালহামার (মহাযুদ্ধ) একটানা ছয় বছর চলার পর মুসলমানরা তা পূণরায় কাফেরদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিবে। অন্য হাদিস থেকে বোঝা যায়, তখন ইমাম মাহদী রা. নেতৃত্বে এই জিহাদটি পরিচালিত হবে। কুসতুনতুনিয়া জয়ের পর দাজ্জাল বেড় হবে, যার বর্ণনা ঠিক নিম্নের হাদিস দুটিতে রয়েছে। الله اعلم بالصواب

# হযরত আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَنْزِلَ الرُّومُ بِالأَعْمَاقِ أَوْ بِدَابِقَ فَيَخْرُجُ إِلَيْهِمْ جَيْشٌ مِنَ الْمَدِينَةِ مِنْ خِيَارِ أَهْلِ الأَرْضِ يَوْمَئِذٍ فَإِذَا تَصَافُّوا قَالَتِ الرُّومُ خَلُّوا بَيْنَنَا وَبَيْنَ الَّذِينَ سَبَوْا مِنَّا نُقَاتِلْهُمْ ‏.‏ فَيَقُولُ الْمُسْلِمُونَ لاَ وَاللَّهِ لاَ نُخَلِّي بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ إِخْوَانِنَا ‏.‏ فَيُقَاتِلُونَهُمْ فَيَنْهَزِمُ ثُلُثٌ لاَ يَتُوبُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ أَبَدًا وَيُقْتَلُ ثُلُثُهُمْ أَفْضَلُ الشُّهَدَاءِ عِنْدَ اللَّهِ وَيَفْتَتِحُ الثُّلُثُ لاَ يُفْتَنُونَ أَبَدًا فَيَفْتَتِحُونَ قُسْطُنْطِينِيَّةَ فَبَيْنَمَا هُمْ يَقْتَسِمُونَ الْغَنَائِمَ قَدْ عَلَّقُوا سُيُوفَهُمْ بِالزَّيْتُونِ إِذْ صَاحَ فِيهِمُ الشَّيْطَانُ إِنَّ الْمَسِيحَ قَدْ خَلَفَكُمْ فِي أَهْلِيكُمْ ‏.‏ فَيَخْرُجُونَ وَذَلِكَ بَاطِلٌ فَإِذَا جَاءُوا الشَّأْمَ خَرَجَ فَبَيْنَمَا هُمْ يُعِدُّونَ لِلْقِتَالِ يُسَوُّونَ الصُّفُوفَ إِذْ أُقِيمَتِ الصَّلاَةُ فَيَنْزِلُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ فَأَمَّهُمْ فَإِذَا رَآهُ عَدُوُّ اللَّهِ ذَابَ كَمَا يَذُوبُ الْمِلْحُ فِي الْمَاءِ فَلَوْ تَرَكَهُ لاَنْذَابَ حَتَّى يَهْلِكَ وَلَكِنْ يَقْتُلُهُ اللَّهُ بِيَدِهِ فَيُرِيهِمْ دَمَهُ فِي حَرْبَتِهِ – ‘কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যাবৎ রোম’রা আ’মাক অথবা দাবিক-এ অবতরণ না করে। সেসময় পৃথিবীবাসীর মধ্য থেকে (মুমিনদের) সর্বোত্তম একটি সৈন্যদল মদিনা হতে (বের হয়ে) তাদের দিকে ধাবিত হবে। তারা পরষ্পরে যখন সারিবদ্ধ হয়ে (মালহামাতুল কুবরা তথা মহাযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হবে, তখন) রোম’রা বলবে: আমাদের এবং যারা আমাদের লোকদেরকে আটকিয়ে রেখেছে তাদের মাঝ থেকে তোমরা সরে যাও, আমরা ওদের সাথে যুদ্ধ করবো। তখন মুসলমানরা বলবে: (এটা কখনই হতে পারে) না, আল্লাহ’র শপথ, আমারা তোমাদের এবং আমাদের (মুসলমান) ভাইদের মাঝ থেকে সরে দাঁড়াবো না। এরপর তাঁরা তাদের (তথা রোম বাহিনীর) সাথে যুদ্ধ করবে। তখন (যদ্ধের ভয়াবহতা দেখে মুসলমানদের মধ্যে) তিন ভাগের এক ভাগ (ভয়ে) পালিয়ে যাবে, আল্লাহ তাদের তওবা আর কখনই কবুল করবেন না। আর এক তৃতীয়াংশ শহীদ হয়ে যাবে; তাঁরা হবে আল্লাহ’র কাছে (সেই জিহাদের) সর্বোত্তম শহীদ। আর (অবশিষ্ট) এক তৃতীয়াংশ (যাঁরা বেঁচে যাবে তাঁরা ওই জিহাদে রোমদের উপর) বিজয় লাভ করবে; (পরে) তাঁরা আর কখনই ফিতনায় পতিত হবে না। এরপর তাঁরা (সামনে অগ্রসর হয়ে) কুস্তুনতুনিয়া (কন্সট্যান্টিনোপোল/ ইস্তাম্বুল, তুরষ্ক) জয় করবে। তারা যখন তাদের তরবারী জয়তুন গাছে ঝুলিয়ে গণীমতের মাল বন্টন করতে থাকবে, এমন সময় শয়তান তাদের মাঝে চিৎকার দিয়ে বলবে: নিশ্চই মাসিহ (দাজ্জাল) তোমাদের পরিবারের পিছনে লেগেছে। তখন তাঁরা (অবস্থার সত্যতা যাঁচাইয়ের জন্য) বেরিয়ে পড়বে, কিন্তু (বাস্তবে) খবরটি ছিল মিথ্যা। তাঁরা যখন শাম-এ গিয়ে পৌছবে, (তখন) দাজ্জাল বের হবে। তাঁরা জিহাদের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে সারিবদ্ধ হতে হতেই (আযান ও) নামাযের আকামত দেয়া হবে। তখন ঈসা ইবনু মারইয়াম (আ.) নাজিল হবেন। এরপর (নামায আদায় করা হবে ইমাম মাহদীর ইমামতীতে এবং নামাযের পর দাজ্জালের মুকাবেলায় মুসলীম উম্মাহ’র) তিনি নেতৃত্ব দিবেন। আল্লাহ’র দুশমন (দাজ্জাল) যখন তাঁকে দেখবে, তখন সে এমনভাবে গলে যাবে যেভাবে লবন পানিতে গলে যায়। তিনি যদি তাকে (ওভাবেই) ছেড়ে দিতেন, তাহলে (সে গলতে গলতে) একসময় (পুরাপুরি) ধ্বংস হয়ে যেতো। কিন্তু আল্লাহ ঈসা আ.-এর হাত দ্বারা তাকে হত্যা করবেন। তাই (শেষ পর্যন্ত ) ঈসা আ.-এর বর্শার মধ্যে তার রক্ত তারা দেখতে পাবে। [সহিহ মুসলীম ২৮৯৭]

#হযরত আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- سَمِعْتُمْ بِمَدِينَةٍ جَانِبٌ مِنْهَا فِي الْبَرِّ وَجَانِبٌ مِنْهَا فِي الْبَحْرِ ‏”‏ ‏.‏ قَالُوا نَعَمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ ‏.‏ قَالَ ‏”‏ لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَغْزُوَهَا سَبْعُونَ أَلْفًا مِنْ بَنِي إِسْحَاقَ فَإِذَا جَاءُوهَا نَزَلُوا فَلَمْ يُقَاتِلُوا بِسِلاَحٍ وَلَمْ يَرْمُوا بِسَهْمٍ قَالُوا لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ ‏.‏ فَيَسْقُطُ أَحَدُ جَانِبَيْهَا ‏”‏ ‏.‏ قَالَ ثَوْرٌ لاَ أَعْلَمُهُ إِلاَّ قَالَ ‏”‏ الَّذِي فِي الْبَحْرِ ثُمَّ يَقُولُوا الثَّانِيَةَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ ‏.‏ فَيَسْقُطُ جَانِبُهَا الآخَرُ ثُمَّ يَقُولُوا الثَّالِثَةَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ ‏.‏ فَيُفَرَّجُ لَهُمْ فَيَدْخُلُوهَا فَيَغْنَمُوا فَبَيْنَمَا هُمْ يَقْتَسِمُونَ الْمَغَانِمَ إِذْ جَاءَهُمُ الصَّرِيخُ فَقَالَ إِنَّ الدَّجَّالَ قَدْ خَرَجَ ‏.‏ فَيَتْرُكُونَ كُلَّ شَىْءٍ وَيَرْجِعُونَ – ‘তোমরা (হয়তো) এমন শহরের কথা শুনেছো, যার একটি দিক স্থলে অবস্থিত এবং আরেকটি দিক সমূদ্রে অবস্থিত? লোকেরা বললো: হ্যা, ইয়া রাসুলাল্লাহ, (শুনেছি)। রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করলেন- কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যাবৎ বনু-ইসহাক-এর সত্তর হাজার লোক তা আক্রমন না করে। তাঁরা সেখানে এসে অবতরন করার পর না কোনো অস্ত্রের সাহায্যে যুদ্ধ করবে, আর না কোনো তীর নিক্ষেপ করবে। তাঁরা বলবে: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই এবং আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ’ , এতেই তার একটা দিক ধ্বসে পড়বে। ছাওর বলেন: আমি শুধু এতটুকু জানি যে, তিনি বলেছেন- الَّذِي فِي الْبَحْرِ (যে দিকটি সমূদ্রে অবস্থিত)। এরপর তাঁরা দ্বিতীয়বার বলবে: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ আল্লাহ ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই এবং আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ’, তাতে অপর দিকটি ধ্বসে পড়বে। এরপর তাঁরা তৃতীয়বার বলবে: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই এবং আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ’, এতে তাদের জন্য (গেট) খুলে যাবে এবং তারা সেখানে প্রবেশ করে গণীমত লাভ করবে। তারা যখন নিজেদের মধ্যে গণীমত বন্টন করতে থাকবে এমন সময় একটি বিকট আওয়াজ আসবে; বলবে-إِنَّ الدَّجَّالَ قَدْ خَرَجَ (নিশ্চই দাজ্জাল বের হয়ে গেছে)। তখন তাঁরা (গণীমতের) সবকিছু রেখে দিয়ে (ঘটনা নিরিক্ষনের উদ্দেশ্যে) পুণরায় বেরিয়ে পড়বে। [সহীহ মুসলীম ২৯২০]

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   গাজওয়াতুল হিন্দ বা ভারতের যুদ্ধ ও ইমাম মাহদীর নেতৃত্ব সম্পর্কে ব্যাখ্যা ও উদাহরণসহ কেয়ামতের আলামত ও ভবিষ্যতবাণী

ফায়দা: এই হাদিসে মালহামাহ (মহাযদ্ধ)’র শেষের দিকে ইমাম মাহদী রা. ও মুসলমানদের দ্বারা তুরষ্কের ইস্তাম্বুল / কুসতুনতুনিয়া বিজয়ের বিষয়টিকেই আরো কিছু বর্ণনা সহকারে পেশ করা হয়েছে, যার এর উপরের হাদিসের সাথে সম্পর্ক যুক্ত।

‘বনু ইসহাক’ বলতে নবী ইব্রাহিম আ.-এর পুত্র নবী ইসহাক আ.-এর বংশধর উদ্দেশ্য। নবী ইসহাক আ.-এর পুত্র ছিলেন নবী ইয়াকুব আ., যাঁকে বাইবেলে বিশেস ভাবে ‘ইসরাঈল’ নামেও ডাকা হয়েছে, আর ‘বনী ইসরাঈল’ বলতে তাঁর ১২ সন্তান (মানে নবী ইউসূফ আ. ও তাঁর ১১ ভাই) এবং তাদের বংশধর’কে ধরা হয়ে থাকে। এ থেকে বোঝা গেল, হাদিসে বর্ণিত বনু-ইসহাকের সত্তর হাজার মুসলীম মুজাহিদগণ যারা তুরষ্কের ইস্তাম্বুল আক্রমন করবেন, তারা হবেন বনী-ইসরাঈলের মুসলীম বংশধর।

আর আরবী ভাষায় তৎকালে ৭০, ৪০ ইত্যাদি শব্দ’গুলি ‘বহু, অসংখ্য, অগণিত’ ইত্যাদি অর্থ বোঝাতেও ব্যবহৃত হত, ঠিক যেমনটা আমাদের বাংলা ভাষায় অনেক ক্ষেত্রে ‘বহু’ বোঝাতে ‘একশ’ কথাটি উল্লেখ করা হয়ে থাকে, যেমন বলা হয়: ‘আমি তোমাকে একশ’বার নিষেধ করলাম, তাও আমার কথা শুনলে না’। এর উদ্দেশ্য, বহুবার করে বলার পরেও শুনলে না। সুতরাং, হাদিসে বনু-ইসহাকের সত্তর হাজার মুজাহিদ বলতে প্রায় সত্তর হাজারও হতে পারে, বা তার থেকেও অনেক বেশি বা অগণিতও উদ্দেশ্য হতে পারে। الله اعلم بالصواب

# হযরত আব্দুল্লাহ বিন বুসর রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- بَيْنَ الْمَلْحَمَةِ وَفَتْحِ الْمَدِينَةِ سِتُّ سِنِينَ، وَيَخْرُجُ الْمَسِيحُ الدَّجَّالُ فِي السَّابِعَةِ. رواه أبو داود فى سننه, كتاب الملاحم , باب في تواتر الملاحم : رقم ٥٤٩٦ و قَالَ أَبُو دَاوُدَ: هَذَا أَصَحُّ مِنْ حَدِيثِ عِيسَى; قال الحافظ ابن حجر في فتح الباري: (٦/٣٢١) وإسناده أصح من إسناد حديث معاذ; سنن ابن ماجه: ٤٠٩٣; مسند أحمد: ١٧٢٣٨; البحر الزخار بمسند البزار: ٣٥٠٥; السنن الواردة في الفتن للداني:٤٨٩ و٦١٤ و٦٥٩; الفتن لنعيم بن حماد: ١٤٥٤ و ١٤٦٩ – ‘মালহামাহ (-ই-কুবরা তথা মহাযুদ্ধ শুরু হওয়া) এবং (কুস্তুনতুনিয়া) শহরটির বিজয় (হতে সময় লাগবে) ছয় বছর এবং মাসিহ-দাজ্জাল বেড় হবে সপ্তম বছরে’। [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৫৪৯৬; মুসনাদে আহমদ- ১৭২৩৮; মুসনাদে বাযযার, হাদিস ৩৫০৫; আস-সুন্নাহ, দানী- ৪৮৯, ৬১৪, ৬৫৯; আল-ফিতান, নুআইম বিন হাম্মাদ- ১৪৫৪, ১৪৬৯]

ফায়দা: হযরত মুয়ায বিন জাবাল রা. থেকে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- الْمَلْحَمَةُ الْكُبْرَى ، وَفَتْحُ الْقُسْطَنْطِينِيَّةِ ، وَخُرُوجُ الدَّجَّالِ فِي سَبْعَةِ أَشْهُرٍ . رواه أحمد: ٣٦/٣٧١، وأبوداود: ٤٢٩٥، والترمذي: ٢٢٣٨، وابن ماجه: ٤٠٩٢; وضعفه الألباني في ” ضعيف الترمذي ‘মালহামায়ে-কুবরা (মহাযুদ্ধ), কুস্তুনতুনিয়া বিজয় এবং দাজ্জালের বেড় হওয়া -সাত মাসের মধ্যে ঘটবে’। [জামে তিরমিযী, হাদিস ২২৩৮; মুসনাদে আহমদ- ৩৬/৩৭১; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪২৯৫; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৪০৯২]

এই হাদিসটি উপরের হাদিসের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। এখানে মূলতঃ মালহামায়ে-কুবরা (মহাযুদ্ধ)-এর প্রথম ৫টি বছরের কথা বলা হচ্ছে না, বরং তার ৬ষ্ঠ বছরের শেষ দিককার কিছু সময়, তারপর কুস্তুনতুনিয়া বিজয়, তারপর সপ্তম বছরের শুরু বা মাঝামাঝি কোনো এক সময়ে দাজ্জালের আবির্ভাব -এসব মোট সাত মাসের মধ্যে ঘটবে বলে ইংগীত করা হয়েছে। الله اعلم بالصواب


দাজ্জাল বের হওয়ার আগের বৈশ্বিক পরিবেশ পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপট


# হযরত আওফ বিন মালেক আশযায়ী রা.-এর বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- إِنَّ أَمَامَ الدَّجَّالِ سِنِينَ خَوَادِعَ يَكْثُرُ فِيهَا الْمَطَرُ ، وَيَقِلُّ فِيهَا النَّبْتُ ، وَيُصَدَّقُ فِيهَا الْكَاذِبُ ، وَيُكَذَّبُ فِيهَا الصَّادِقُ ، وَيُؤْتَمَنُ فِيهَا الْخَائِنُ ، وَيُخَوَّنُ فِيهَا الأَمِينُ ، وَيَنْطِقُ فِيهَا الرُّوَيْبِضَةُ ” , قِيلَ وَمَا الرُّوَيْبِضَةُ يَا رَسُولَ اللَّهِ ؟ قَالَ : ” مَنْ لا يُؤْبَهُ لَهُ ” . وَبِهِ عَنِ ابْنِ إِسْحَاقَ ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ دِينَارٍ ، عَنْ أَنَسٍ ، مِثْلَهُ , غَيْرَ أَنَّهُ قَالَ : ” قِيلَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، وَمَا الرُّوَيْبِضَةُ ؟ قَالَ : الْفُوَيْسِقُ يَتَكَلَّمُ فِي أَمْرِ الْعَامَّةِ . أخرجه الطحاوى في “مشكل الآثار : ١/٤٠٥, والبزار ٢٧٤٠ , و الطبراني في “معجمه الكبير”١٢٥/٦٨/١٨ , وفي مسند الشاميين ٤٨ , و الروياني ٥٨٨ -‘নিশ্চই দাজ্জালে (আগমনের) আগে কিছু প্রতারনাপূর্ণ বছর এমন হবে, যখন তাতে অনেক বৃষ্টিপাত হবে, কিন্তু তাতে শস্য-ফলন হবে কম। তখনকার মিথ্যুককে সত্যবাদি বলে গণ্য করা হবে এবং সত্যবাদিকে গণ্য করা হবে মিথ্যুক রূপে। এমনিভাবে তখনকার খেয়ানতকারীকে আমানতদার হিসেবে গণ্য করা হবে, আর আমানতদারকে গণ্য করা হবে খেয়ানতকারী রূপে। সেসময় রুওয়াইবাজাহ’কে কথা বলতে দেয়া হবে। জিজ্ঞেস করা হল: রুওয়াইবাজাহ কি – ইয়া রাসুলাল্লাহ? তিনি বললেন- مَنْ لا يُؤْبَهُ لَهُ -‘‘এমন ব্যাক্তি যার (বাস্তবে আল্লাহ’র দৃষ্টিতে) মূল্য নেই, (যে তার উপযুক্তই নয়)’। আর হযরত আনাস রা.-এর বর্ণনায় আছে: জিজ্ঞেস করা হল: রুওয়াইবাজাহ কি – ইয়া রাসুলাল্লাহ? তিনি বললেন: الْفُوَيْسِقُ يَتَكَلَّمُ فِي أَمْرِ الْعَامَّةِ – ফাসেক (পাপাবিষ্ঠ ও মনুষ্যত্বে পচনধরা সব) ব্যাক্তিরা, যারা সর্বসাধারণ মানুষের বিষয়-আসয়ে কথা বলবে। [শারহু মুশকিলিল আছার, ত্বাহাবী-১/৪০৫; মুসনাদে বাযযার, হাদিস ২৭৪০; আল-মু’জামুল কাবির, ত্বাবরানী-১৮/৬৮/১২৫; মুসনাদে শামেয়ীন, ত্বাবরানী ৪৮; মুসনাদে রুইয়ানী, হাদিস ৫৮৮; মুসনাদে আবু ইয়া’লা ৩৮১৫]

# আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- إِنَّ الأَعْوَرَ الدَّجَّالَ مَسِيحَ الضَّلاَلَةِ يَخْرُجُ مِنْ قِبَلِ الْمَشْرِقِ فِي زَمَانِ اخْتِلاَفٍ مِنَ النَّاسِ وَفُرْقَةٍ ، فَيَبْلُغُ مَا شَاءَ اللَّهُ مِنَ الأَرْضِ فِي أَرْبَعِينَ يَوْمًا ، اللَّهُ أَعْلَمُ مَا مِقْدَارُهَا ، اللَّهُ أَعْلَمُ مَا مِقْدَارُهَا – مَرَّتَيْنِ . رواه ابن حبان في صحيحه:١٥/٢٢٣ رقم ٦٨١٢ و قال شعيب الأرنؤوط : اسناده قوي رجاله ثقات رجال الصحيح غير كليب بن شهاب, والد عاصم, فقد روي له اصحاب السنن و البخاري في رفع يدين, وهو صدوق; و رواه البزار في كشف الأستار, كِتَابُ الْفِتَنِ, بَابُ مَا جَاءَ فِي الدَّجَّالِ: ٥/٢٢١ و قال الحافظ ابن حجر في فتح الباري: أخرجه البزار بسند جيد … انتهى, قال الهيثمي :٧/٣٤٩ رجاله رجال الصحيح غير علي بن المنذر وهو ثقة; و صححه الألباني في ” صحيح الموارد: رقم ١٥٩٨ – ‘নিশ্চই পথভ্রষ্ঠ কানা মাসিহ দাজ্জাল পূর্বদিক থেকে বের হবে এমন এক জামানায় যখন মানুষজনের মাঝে বিরোধ-দ্বন্দ্ব ও দলাদলি (প্রকট মাত্রায়) থাকবে। এরপর -আল্লাহ যেমনটা চান- সে পৃথিবীতে থাকবে চল্লিশ দিন। ‘(আর) আল্লাহ’ই ভাল জানেন যে, তার (চল্লিশ দিনের) পরিমানটা কত! আল্লাহ’ই ভাল জানেন যে, তার (চল্লিশ দিনের) পরিমানটা কত! (একথা দুবার বললেন)’। [সহিহ ইবনে হিব্বান– ১৫/২২৩ হাদিস ৬৮১২; মুসনাদে বাযযার– ৫/২২১; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৭/৩৪৯]

# হযরত আব্দুল্লাহ বিন বুসর রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- لا يَخْرُجُ الدَّجَّالُ حَتَّى يَذْهَلَ النَّاسُ عَنْ ذِكْرِهِ ، وَحَتَّى تَتْرُكَ الأَئِمَّةُ ذِكْرَهُ عَلَى الْمَنَابِرِ . رواه أحمد: ١٦٢٣١ ، وابن أبي عاصم في الآحاد والمثاني: ٨٣٠ ، والطبراني في مسند الشاميين: ٩٦٧ ، و ابن قانع في معجم الصحابة: ٦٨٦ ، وقال في معجم الزوائد: ٣/٣٤٥ : رواه عبد الله بن أحمد من رواية بقية عن صفوان ابن عمرو وهي صحيحة كما قال ابن معين، وبقية رجاله ثقات، وقال الزين في المسند: ١٣/١١٢ : إسناده صحيح وهو من زوائد عبدالله . – ‘দাজ্জাল বেড় হবে না, যাবৎ না (অধিকাংশ) মানুষজন তার কথা উল্লেখ করা থেকে অন্যমনষ্ক হয়ে যায় এবং যাবৎ না ইমামগণ মিম্বরগুলোতে তার কথা উল্লেখ করা ছেড়ে দেয়’। [মুসনাদে আহমদ, হাদিস ১৬২৩১; মুসনাদে শামেইন, ত্বাবরাণী- ৯৬৭; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৩/৩৪৫]

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   ইসলামিক শাসনতন্ত্র বিষয়ক আয়াত

# যাবের বিন আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- َ يَخْرُجُ الدَّجَّالُ فِي خَفْقَةٍ مِنَ الدِّينِ ، وَإِدْبَارٍ مِنَ الْعِلْمِ ، . رواه احمد في المسند : ٣/٣٦٧ , و قال الشيخ شعيب الأرناؤوط: إسناده صحيح – “দাজ্জাল বেড় হবে দ্বীনের খলৎমলৎ অবস্থায় এবং (কুরআন সুন্নাহ’র) ইলম থেকে (উম্মাহ’র পাইকারী হারে লেজগুটিয়ে) পিছুটান কালে”। [মুসনাদে আহমদ- ৩/৩৬৭; শারহু মুশকিলিল আছার, ত্বাহাবী, হাদিস ৫৬৯৪; আত-তাউহীদ, ইবনে খুযাইমাহ- ১/১০২; মুসতাদরাকে হাকিম- ৩/৫৩০]

ফায়দা: আরবী শব্দ خَفْقَة -এর বিভিন্ন অর্থ রয়েছে, যেমন: হৃৎপিন্ড অধিক পরিমানে ধক ধক আওয়াজ সহ স্পন্দন করা বা নড়াচড়া করা, গোজামিল বা খলৎমলৎ হওয়া, বেশি আন্দোলীত হওয়া, বেশির ভাগ অংশ পিছু-পা হওয়া ইত্যাদি। এই হাদিসে يَخْرُجُ الدَّجَّالُ فِي خَفْقَةٍ مِنَ الدِّينِ – ‘দাজ্জাল বেড় হবে দ্বীনের খলৎমলৎ অবস্থায়’ -বলতে বোঝানো হয়েছে, দাজ্জাল যে জামানায় বের হবে, সেই জামানার মানুষজনের ইমান আমল ও স্বভাব চরিত্র ব্যাপক হারে খলৎমলত ও গোজামিলযুক্ত হয়ে যাবে, তারাদের হাতে দ্বীন ইসলাম ও শরীয়ত মুমূর্ষ অবস্থায় পরিনত হবে, যার ওই দূর্দশাকে সারিয়ে তোলার মতো দ্বীনের আহাল (প্রকৃত ধারক বাহক ওলামায়ে কেরাম)-এর সংখ্যা হবে এত অল্প যে, তাদের তা করার শক্তি সামর্থ কিছুই থাকবে না। এদিকে ইংগীত করে ইবনুল আসীর রহ. এই অংশের ব্যাখ্যায় কথাটি এভাবে বলেছেন- خَفْقَة مِنَ الدِّينِ اى في حال ضعيف من الدين و قلة اهله – “দ্বীনের খলৎমলৎ অবস্থায়, অর্থ দ্বীনের দূর্বলতা এবং দ্বীনের আহালের পরিমান খুবই অল্প থাকাবস্থায়”। [আন-নিহায়াহ- ২/৫৫]

# আবু তুফায়েল রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বর্ণনা করেন- إِنَّ الدَّجَّالَ لَوْ خَرَجَ فِي زَمَانِكُمْ لَرَمَتْهُ الصِّبْيَانُ بِالْخَذْفِ، وَلَكِنَّ الدَّجَّالَ يَخْرُجُ فِي بُغْضٍ مِنَ النَّاسِ، وَخِفَّةٍ مِنَ الدِّينِ، وَسُوءِ ذَاتِ بَيْنٍ . أحرجه الحاكم في المستدرك : ٤/٥٢٩ رقم ٨٦١٢ و قال: هذا حديث صحيح الإسناد و لم يخرجاه و قال الذهبي في التلخيصه : علي شرط البخاري و المسلم ، و عبد الرزاق في مصنفه : ١١/٣٩٤ رقم ٢٠٨٢٧، وصححه الألباني في كتاب قصة المسيح الدجال ص ١٠٦ – “যদি দাজ্জাল তোমাদের (এই) জামানায় বের হত, তাহলে নির্ঘাৎ কিশোররাই ওকে ঢেলা দিয়ে ঢিল মাড়তো’। অবশ্য দাজ্জাল বের হবে (এমন এক পঁচনধরা জামানায়) যখন মানুষজনের মাঝে (ব্যাপক মাত্রায় পারষ্পরিক) বুগ্জ (ঘৃনাভরা-ক্রধ) থাকবে, (মানুষজনের দ্বারা) দ্বীনের মধ্যে খলৎমলৎ হয়ে যাবে, (উম্মতের) নিজেদের মাঝে সম্পর্ক থাকবে মন্দ”। [মুসতাদরাকে হাকিম- ৪/৫২৯ হাদিস ৮৬১২]

# হুযাইফা রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বর্ণনা করেন- يَخْرُجُ فِي قِلَّةٍ مِنَ النَّاسِ وَ نَقْصٍ مِنَ الطَّعَامِ ، وَ سُوءِ ذَاتِ بَيْنٍ، وَ خَفْقَة مِنَ الدِّينِ . رواه عبد الرزاق في مصنفه : ١١/٣٩٤ رقم ٢٠٨٢٧ – “সে(ই খবীস দাজ্জাল) বের হবে –(পৃথিবীতে) মানুষের স্বল্পতা, খ্যাদের সংকট, (উম্মতের) নিজেদের মাঝে মন্দ সম্পর্ক এবং দ্বীনের খলৎমলৎ অবস্থায়”। [আল-মুসান্নাফ, ইমাম আব্দুর রাজ্জাক- ১১/৩৯৪ হাদিস ২০৮৬৭]

# আনাস বিন মালেক রা. -এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেছেন- الدجال مكتوب بين عينيه ك ف ر . قال : وذكر قتادة : أنه يقرؤه كل مؤمن أمي وكاتب ، يخرج في قلة من الناس ونقص من الطعام ، يدخل أمصار العرب كلها غير طيبة ، وهي المدينة . قال قائل : يا نبي الله ، أما يريد المدينة ؟ قال : بلى ، ولكن الملائكة صافون بنقابها وأبوابها يحرسونها . رواه الإمام أبو يعلى في مسنده : ٥/٣٦٨ رقم ٣٠١٦، و صححه الأستاذ حسين سليم أسد في مسند الإمام أبي يعلى – “দাজ্জালের দুই চোখের মাঝখানে (কপালের কাছে) লিখা থাকবে- ك ف ر (কাফ-ফা-রা তথা কাফের)’। রাবী বলেন: ‘ক্বাতাদাহ (তাঁর বর্ণিত হাদিসে আরো) উল্লেখ করেছেন: ‘সে(ই লেখা)টাকে প্রত্যেক নিরক্ষর ও শিক্ষিত মুমিন (উভয়ই) পড়তে পারবে। (পৃথিবীতে) মানুষের স্বল্পতা এবং খ্যাদের সংকটের সময়ে সে বের হবে। সে আরবের ‘তৈয়্যেবাহ’ ব্যতীত সকল শহরে প্রবেশ করবে -আর সে(ই তৈয়্যেবাহ)টা হল ‘মদিনা’। (তখন) কেউ জিজ্ঞেস করলো: ‘হে আল্লাহ’র-নবী! ‘আল-মদিনা’(র লোকদেরকে ফিতনাগ্রস্থ করাও) তার উদ্দেশ্য হবে’? তিনি বললেন: ‘হ্যাঁ। তবে ফেরেশতাগণ তার অলিগলি ও প্রবেশপথে (তরবারী হাতে) সারিবদ্ধ হয়ে পাহারায় থাকবে”। [মুসনাদে আবু ইয়া’লা– ৫/৩৬৮ হাদিস ৩০১৬]

ফায়দা: ইমাম মাহদী, মালহামাহ ও দাজ্জাল বিষয়ক হাদিসগুলো পর্যালোচনা করে দেখলে অনুমিত হয় যে, ইমাম মাহদী রা.-এর খিলাফতের অধীনে তাঁর সাহায্যকারী মুমিনগণের সাথে দফায় দফায় কাফেরদের সাথে প্রায় ৬/৭ বছর ধরে যুদ্ধ চলবে, যার শেষ অংশে হবে ‘মালহামাতুল কুবরা’ (অন্য কথায় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ), যে যুদ্ধে কাফেরদের ৮০টি পতাকার প্রতিটির তলে থাকা প্রায় ১২ হাজার করে (প্রায় ৯ লক্ষ্য ৬০ হাজার) সৈন্যের সাথে মুসলমানদের মোকাবেলা হবে। শেষে মুসলমানদেরই বিজয় হবে। তবে ৬/৭ বছর ধরে চলা এসব যুদ্ধের কারণে গোটা পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা অভাবনীয় ভাবে কমে যাবে এবং সবখানে খাদ্য-পানীয়ের সংকট/দূর্ভিক্ষ লেগে যাবে। একটি যুদ্ধপরবর্তী পৃথিবীর চোখ যখন খাদ্য, পানি, চিকিৎসা ইত্যাদির জন্য হাহাকার করতে থাকবে, তখন এক সময় দাজ্জাল বের হবে তার খাদ্যের পাহাড় ও পানীর নহর সহকারে। কাফের, মুনাফেক ও দূর্বল ইমানেরে নারী পুরুষরা তাদের দ্বীন ও ইমান ছেড়ে দিয়ে দাজ্জালের প্রলোভনী ফিতনায় জড়িয়ে পড়বে। الله اعلم بالصواب

 

দাজ্জাল বের হওয়ার বিভিন্ন স্থানসমূহ


মুহাক্কেক আলেমগণের মতে, নিম্নোক্ত হাদিস ও আছার সমূহে ‘দাজ্জাল অমুক স্থানে আছে এবং অমুক অমুক স্তান থেকে বের হবে’ মর্মে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে, তা দ্বারা তার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থান থেকে বের হওয়া উদ্দেশ্য।

# ফাতেমা বিনতে কায়েস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- أَلاَ إِنَّهُ فِي بَحْرِ الشَّامِ أَوْ بَحْرِ الْيَمَنِ لاَ بَلْ مِنْ قِبَلِ الْمَشْرِقِ ما هُوَ مِنْ قِبَلِ الْمَشْرِقِ مَا هُوَ مِنْ قِبَلِ الْمَشْرِقِ مَا هُوَ‏ ‏.‏ وَأَوْمَأَ بِيَدِهِ إِلَى الْمَشْرِقِ ‏‏. رواه مسلم في صحيحه, كتاب الفتن وأشراط الساعة, باب قصة الجساسة: رقم ٢٩٤٢ – “শুনে রাখো, সে(ই মিথ্যক খবীস দাজ্জাল) শামের সমূদ্রে বা ইয়ামেনের সমূদ্রে রয়েছে। না, বরং পূর্ব দিকস্থ (সমূদ্রে)। সে রয়েছে পূর্ব দিকস্থ (সমূদ্রে), সে রয়েছে পূর্ব দিকস্থ (সমূদ্রে)’। আর (একথা বলার সময়) তিনি তার হাত দ্বারা পূর্ব দিকে ইশারা করছিলেন”। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ২৯৪২; আস-সুন্নাহ, ইমাম দানী-১/১১৪৮ হাদিস ৬২৬; সুনানে তিনমিযী, হাদিস ২২৫৩; আল-মু’জামুল কাবীর, তাবরাণী- ২৪/৩৮৬-৪০৫ হাদিস ৯৫৭-৯৮৩]

# আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- إِنَّ الأَعْوَرَ الدَّجَّالَ مَسِيحَ الضَّلاَلَةِ يَخْرُجُ مِنْ قِبَلِ الْمَشْرِقِ فِي زَمَانِ اخْتِلاَفٍ مِنَ النَّاسِ وَفُرْقَةٍ ، فَيَبْلُغُ مَا شَاءَ اللَّهُ مِنَ الأَرْضِ فِي أَرْبَعِينَ يَوْمًا ، اللَّهُ أَعْلَمُ مَا مِقْدَارُهَا ، اللَّهُ أَعْلَمُ مَا مِقْدَارُهَا – مَرَّتَيْنِ . رواه ابن حبان في صحيحه:١٥/٢٢٣ رقم ٦٨١٢ و قال شعيب الأرنؤوط : اسناده قوي رجاله ثقات رجال الصحيح غير كليب بن شهاب, والد عاصم, فقد روي له اصحاب السنن و البخاري في رفع يدين, وهو صدوق; و رواه البزار في كشف الأستار, كِتَابُ الْفِتَنِ, بَابُ مَا جَاءَ فِي الدَّجَّالِ: ٥/٢٢١ و قال الحافظ ابن حجر في فتح الباري: أخرجه البزار بسند جيد … انتهى, قال الهيثمي :٧/٣٤٩ رجاله رجال الصحيح غير علي بن المنذر وهو ثقة; و صححه الألباني في ” صحيح الموارد: رقم ١٥٩٨ – ‘নিশ্চই পথভ্রষ্ঠ কানা মাসিহ দাজ্জাল পূর্বদিক থেকে বের হবে এমন এক জামানায় যখন মানুষজনের মাঝে বিরোধ-দ্বন্দ্ব ও দলাদলি (প্রকট মাত্রায়) থাকবে। এরপর -আল্লাহ যেমনটা চান- সে পৃথিবীতে থাকবে চল্লিশ দিন। ‘(আর) আল্লাহ’ই ভাল জানেন যে, তার (চল্লিশ দিনের) পরিমানটা কত! আল্লাহ’ই ভাল জানেন যে, তার (চল্লিশ দিনের) পরিমানটা কত! (একথা দুবার বললেন)’। [সহিহ ইবনে হিব্বান– ১৫/২২৩ হাদিস ৬৮১২; মুসনাদে বাযযার– ৫/২২১; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৭/৩৪৯]

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   ব্যাখ্যা ও উদাহরণসহ কেয়ামতের আলামত ও ভবিষ্যতবাণী পর্ব-৬

ফায়দা: সহিহ ইবনে হিব্বানের আরেক হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- خرج الدجال من هاهنا. و أشار نحو المشرق . رواه ابن حبان في صحيحه: ١٥/٢٠٢ رقم ٦٧٩٢, تحقيق : شعيب الأرنؤوط – ‘দাজ্জাল বের হবে ওখান থেকে এবং (একথা বলার সময়) তিনি পূর্ব দিকে ইশারা করলেন’। [সহিহ ইবনে হিব্বান– ১৫/২০২ হাদিস ৬৭৯২]

# নওয়াস বিন সামআন রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলে- রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- إنَّه خَارِجٌ خَلَّةً بيْنَ الشَّأْمِ وَالْعِرَاقِ، فَعَاثَ يَمِينًا وَعَاثَ شِمَالًا، يا عِبَادَ اللهِ فَاثْبُتُوا، قُلْنَا: يا رَسُولَ اللهِ، وَما لَبْثُهُ في الأرْضِ؟ قالَ: أَرْبَعُونَ يَوْمًا، يَوْمٌ كَسَنَةٍ، وَيَوْمٌ كَشَهْرٍ، وَيَوْمٌ كَجُمُعَةٍ، وَسَائِرُ أَيَّامِهِ كَأَيَّامِكُمْ . أخرجه مسلم في الصحيح , كتاب الفتن وأشراط الساعة : رقم ٢٩٣٧ ; و الترمذي في سننه , كتاب الفتن عن رسول الله ﷺ , باب ما جاء في فتنة الدجال : رقم ٢٢٤٠ دون السؤال ، و أحمد في مسنده : رقم ١٧٦٢٩ – “সে(ই খবীস মিথ্যুক দাজ্জাল) বের হবে ইরাক এবং শামের মাঝামাঝি (একটি) সংযোগস্থল (এলাকা) থেকে। পরে সে ফ্যাসাদ/দূর্যোগ সৃষ্টি করবে ডানে ও বামে। ওহে আল্লাহ’র বান্দাগণ, তোমরা (তার ফিতনার সময়ও দ্বীনের উপরে) দৃঢ়পদে থেকো, (কোনো মতেই ইমান ছাড়বে না)’। আমরা জিজ্ঞেস করলাম: ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! পৃথিবীতে তার স্থায়ীত্ব কত (দিন) হবে’ ? তিনি বললেন: ‘চল্লিশ দিন (থাকবে, যার) একটি দিন হবে এক বছরের মতো (দীর্ঘ), একটি দিন হবে এক মাসের মতো (দীর্ঘ), একটি দিন হবে এক সপ্তাহের মতো (দীর্ঘ) এবং তার বাদবাকি দিনগুলো হবে তোমাদের (স্বাভাবিক) দিনগুলোর মতো”। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ২৯৩৭; সুনানে তিরমিযী, হাদিস ২২৪০; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ১৭৬২৯; মুসতাদরাকে হাকিম– ৪/৬৬১ হাদিস ৮৫৭৩; আল-ইমান, ইমাম ইবনু মানদাহ- ২/৯৩৩ হাদিস ১০২৭]

# আবু বকর সিদ্দিক রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- الدَّجَّالُ يَخْرُجُ مِنْ أَرْضٍ بِالْمَشْرِقِ يُقَالُ لَهَا خُرَاسَانُ ، يَتْبَعُهُ أَقْوَامٌ كَأَنَّ وُجُوهَهُمْ الْمَجَانُّ الْمُطْرَقَةُ . رواه الترمذي, أبواب الفتن, باب ما جاء من أين يخرج الدجال: حديث رقم ٢٢٣٧, و أحمد: ١/٤ رقم ١٢; و ابن ماجه: ٤٠٧٢, و الحاكم: ٤/٥٧٣ و قال : صحيح الإسناد و وافقه الذهبي . حسنه الألباني في سلسلة الأحاديث الصحيحة: رقم ١٥٩١ و في صحيح الجامع الصغير: حديث رقم ٣٣٩٨ – ‘দাজ্জাল পূর্বদিকে (অবস্থিত) খুরাসান নামক (একটি) অঞ্চল থেকে বেড় হবে। (তখন এমন) গোষ্ঠিসমূহ অনুসরণ করবে, যাদের মুখগুলো হবে হাতুরী পিটানো ঢালের মতো (দেখতে)’। [সুনানে তিরমিযী, হাদিস ২১৬৩; মুসনাদে আহমদ- ১/৪ হাদিস ১২; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৪০৭২; মুসতাদরাকে হাকিম- ৪/৫৭৩]

# আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- يَتْبَعُ الدَّجَّالَ مِنْ يَهُودِ أَصْبَهَانَ، سَبْعُونَ أَلْفًا عَلَيْهِمُ الطَّيَالِسَةُ . روى الإمام مسلم في صحيحه, كتاب الفتن وأشراط الساعة, باب في بقية من أحاديث الدجال: حديث رقم ٢٩٤٤ – ‘দাজ্জালকে ‘আসবাহান (ইসফাহান)’-এর সত্তর হাজার ইহূদী অনুসরণ করবে, তাদের (মাথা/গায়ের) উপরে থাকবে তায়ালিসাহ (নামক এক ধরনের পোষাক)’। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ২৯৪৪]

# আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- يَخْرُجُ الدَّجَّالُ مِنْ يَهُودِيَّةِ أَصْبَهَانَ مَعَهُ سَبْعُونَ أَلْفًا مِنْ الْيَهُودِ عَلَيْهِمْ التِّيجَانُ . رواه أحمد برقم ١٢٨٦٥ – ‘দাজ্জাল ইহূদীদের-আবাস ‘আসবাহান (ইসফাহান)’ থেকে বের হবে। তার সাথে থাকবে সত্তর হাজার ইহূদী, তাদের (মাথা/গায়ের) উপরে থাকবে তায়যান’। [মুসনাদে আহমদ, হাদিস ১২৮৬৫]

# আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- لَيَنْزِلَنَّ الدَّجَّالُ خُوزَ وَكَرْمَانَ فِي سَبْعِينَ أَلْفًا ، وُجُوهُهُمْ كَالْمَجَانِّ الْمُطْرَقَةِ . رواه الإمام أحمد: ٢/٣٣٧، و إسناده حسن كما جاء في إتحاف الجماعة بما جاء في الفتن والملاحم وأشراط الساعة: ٢/٤٠٦ – ‘দাজ্জাল অবতরণ করবে ‘খুজ’ এবং ‘কিরমান’ (এলাকা)-এর সত্তর হাজার লোকের মাঝে, যাদের মুখগুলো হবে হাতুরী পিটানো ঢালের মতো (দেখতে)’। [মুসনাদে আহমদ- ২/৩৩৭]

# সাঈদ বিন মুসাইয়্যেব রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- قَالَ أَبُو بَكْرٍ : هَلْ بِالْعِرَاقِ أَرْضٌ يُقَالُ لَهَا خُرَاسَانُ ، قَالُوا : نَعَمْ ، قَالَ : فَإِنَّ الدَّجَّالَ يَخْرُجُ مِنْهَا . رواه ابن أبي شيبة في المصنف, كتاب الفتن, ما ذكر في فتنة الدجال: ١٤/١٣٤ رقم ٣٩٤٨٥ تحقيق: محمد بن ابراهيم ; و ذكر المتقي الهندي في كنز العمال: ١٤/٦٨٥ رقم ٣٩٦٨٣ – ‘আবু বকর (সিদ্দিক) রা. জিজ্ঞেস করলেন: ইরাকে কি খুরাসান নামে কোনো এলাকা আছে? লোকেরা বললো: ‘জি (আছে)’। তিনি বললেন: ‘তাহলে দাজ্জাল সেখান থেকেই বের হবে’। [আল-মুসান্নাফ, ইবনু আবি শায়বাহ– ১৪/১৩৪ আছার ৩৯৪৮৫; কাঞ্জুল উম্মাল- ১৪/৬৮৫ আছার ৩৯৬৮৩]

# ইবনুল হাইছাম রহ. থেকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন- ثم قال لي: ممن أنت؟ قال: قلت: من أهل العراق أو قال: من أهل الكوفة . قال: تعرف كوثا؟ قال: قلت: نعم. قال: منها يخرج الدجال . رواه عبد الرزاق في مصنفه: ١١/٣٩٥ رقم ٢٠٨٢٩ تحقيق: حبيب الرحمان ألأعظمي, رجاله كلهم ثقات كما جاء في إتحاف الجماعة بما جاء في الفتن والملاحم وأشراط الساعة: ٢/٤٠٩ – ‘…অতঃপর (আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা.) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন: ‘তুমি কোথাকার লোক’? তিনি বলেন: ‘আমি বললাম: আমি ইরাকের লোক’, (রাবী বলেন:) অথবা বলেছেন: ‘আমি (ইরাকের) কুফা’র লোক’। তিনি জিজ্ঞেস করলেন: ‘তুমি কি কুছ (নামক স্থানটি) চেনো’? তিনি বলেন: ‘আমি বললাম: জি (চিনি)’। তিনি বললেন: ‘ওখান থেকে দাজ্জাল বের হবে’। [আল-মুসান্নাফ, ইমাম আব্দুর রাজ্জাক– ১১/৩৯০ আছার ২০৮২৯]
কেয়ামতের আলামত ও ভবিষ্যতবাণী মোহাম্মাদ (স) future আখেরী বা শেষ জামানার ফিতনা ফ্যাসাদ (الروم) রোম সম্রাজ্য ও মুসলীম উম্মাহ গাজওয়াতুল হিন্দ বা ভারতের যুদ্ধ ও ইমাম মাহদীর নেতৃত্ব দাজ্জালের আগমন ও ফিতনা দাজ্জাল মাসীহুদ-দাজ্জাল মাসীহ
ফায়দা: মুহাক্কিকগণের অনেকের মতে, উপরোক্ত বিভিন্ন রেওয়ায়েতে যে বলা হয়েছে যে, ‘দাজ্জাল’ অমুক অমুক এলাকা/অঞ্চল থেকে বের হবে, মুহাক্কিক আলেমগণের মতে, ওগুলোর দ্বারা দাজ্জাদের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থান থেকে বের হওয়ার দিকে ইশারা করা হয়েছে, অথবা তার সফরের মধ্যে কোনো একই এলাকাকে ইংগীত করতে ওই এলাকাটি যে দেশ বা শহর কিংবা গ্রামের সাথে সম্পর্কযুক্ত তার দিকে ইশারা করে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ, যখন সে আত্বপ্রকাশ করবে, তখন এক এলাকায় অবতরন করবে, তারপর সেখানকার কাজ শেষ হলে আবার সেখান থেকে অন্য কোথাও যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হবে, আবার সে অঞ্চলের কাজ শেষ হলে সেখান থেকে অন্য কোথাও যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হবে। এভাবে সে পৃথিবীর যেখানে যেখানে যাওয়ার যাবে।

উপরোক্ত হাদিস ও আছার গুলোতে বর্ণিত জায়গাগুলো চোদ্দ’শ বছর আগের ভূমি সীমানা হিসেবে যা ইরাকের মধ্যে পড়েছে, ঘটনার ক্রমধারায় সেই জায়গাগুলোর মধ্যে অনেকগুলোর সীমানা বর্তমান যুগের ইরানের ভিতরেও পড়েছে। [আশরাতুস সা’আহ, ড. ইউসুফ ওয়াবিল: ৩১১ পৃ:] الله اعلم بالصواب

 

MuslimPoint Organization

About MuslimPoint Organization

MuslimPoint একটি অনলাইন ভিত্তিক ইসলামী প্রশ্নোত্তর, গ্রন্থাগার, ব্লগিং, কুরআন, হাদিস, কুইজ এবং বিষয় ভিত্তিক রেফারেন্স প্ল্যাটফর্ম।

View all posts by MuslimPoint Organization →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *