দাজ্জালের আগমন ও ফিতনা সম্পর্কে ব্যাখ্যা ও উদাহরণসহ কেয়ামতের আলামত ও ভবিষ্যতবাণী পর্ব-১

মাম মাহদীর নেতৃত্ব দাজ্জালের আগমন ও ফিতনা দাজ্জাল মাসীহুদ-দাজ্জাল মাসীহ
দাজ্জালের আগমন ও ফিতনা সম্পর্কে ব্যাখ্যা ও উদাহরণসহ কেয়ামতের আলামত ও ভবিষ্যতবাণী

[আমরা ইতিপূর্বে কেয়ামতের আলামত ও ভবিষ্যতবাণী সম্পর্কে পর্ব ভিত্তিক অনেকগুলো হাদিস ও আছার পেশ করেছি। সেগুলো দেখতে এখানে ক্লিক করুন ।]
[প্রথমেই বলে রাখি কিয়ামতের জ্ঞান শুধুমাত্র আল্লাহ’র কাছে আছে ।
‘(হে নবী মুহাম্মাদ!) মানুষ তোমাকে কিয়ামত (কবে হবে, সে) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। তুমি বলো, এর (একেবারে সঠিক) জ্ঞান শুধুমাত্র আল্লাহ’র কাছে আছে। আর (হে নবী !) তুমি কি জানো, কিয়ামত (ঘটার) সম্ভাবনা নিকটে চলে এসেছে !’ [সূরা আহযাব ৬৩]
এখানে শুধুমাত্র হাদিস ও কিছু অনুমানের ভিত্তিতে আমরা কিয়ামতের আলামতগুলো ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি । সুতরাং এখানের সকল বক্তব্য কে আমরা কখনো চূড়ান্ত বলে মনে করি না । এগুলো শুধু উল্লেখ করছি, যাতে এই রেওয়ায়েতসমূহে বর্ণিত কোনো ঘটনা ঘটতে দেখলে তা চিনে নিতে পারেন এবং রেওয়াতের হক্ব আদায় করতে পারেন।
উল্লেখ্য, যেহুতু হয়তো এখানে বর্ণিত অল্প কিছু হাদিসের সনদগত ও অন্যান্য দূর্বলতা থাকতে পারে তাই এখানে উল্লেখিত হাদিসসমূহ কোনো বিজ্ঞ মুহাদ্দেস আলেমের পরামর্শ ব্যাতীত কারো কাছে বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছি।]

দাজ্জাল -এর ফিতনাই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ফিতনা


# আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- إِنِّي أُنْذِرُكُمُوهُ وَمَا مِنْ نَبِيٍّ إِلَّا قَدْ أَنْذَرَهُ قَوْمَهُ لَقَدْ أَنْذَرَهُ نُوحٌ قَوْمَهُ وَلَكِنْ سَأَقُولُ لَكُمْ فِيهِ قَوْلًا لَمْ يَقُلْهُ نَبِيٌّ لِقَوْمِهِ تَعْلَمُونَ أَنَّهُ أَعْوَرُ وَأَنَّ اللَّهَ لَيْسَ بِأَعْوَرَ . رواه البخاري في صحيحه , كتاب الجهاد والسير , باب كيف يعرض الإسلام على الصبي : رقم ٣٠٥٧ – ‘নিশ্চই আমি তোমাদেরকে তার (তথা দাজ্জালের) ব্যাপারে সতর্ক করছি। আর এমন কোনো নবী নেই যিনি তাঁর কওমকে তার ব্যাপারে সতর্ক করেননি। এমনকি (নবী) নূহও তাঁর কওম’কে তার ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন। তবে তার সম্পর্কে আমি এখন তোমাদেরকে এমন কথা বলবো, যা কোনো নবী তাঁর কওম’কে বলেননি। তোমরা জেনে রেখো, (সে নিজকে বিশ্ব জাহানের রব/প্রভু দাবী করবে, অথচ) নিশ্চই সে হবে (এক চোখ) অন্ধ (ব্যাক্তি)। আর নিশ্চই (তোমাদের প্রকৃত রব/প্রভু) আল্লাহ অন্ধ নন’। [সহিহ বুখারী, হাদিস ৩০৫৭]

# ইমরান বিন হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- مَا بَيْنَ خَلْقِ آدَمَ إِلَى قِيَامِ السَّاعَةِ خَلْقٌ أَكْبَرُ مِنْ الدَّجَّالِ . رواه مسلم في صحيحه: ٥٢٣٩, و احمد: ١٥٨٣١ – ‘(আদি পিতা নবী) আদমের সৃষ্টি থেকে নিয়ে কেয়ামত কায়েম হওয়া পর্যন্ত (সময়ের) মাঝে দাজ্জালের চাইতে বড় (ও ভয়ানক ফিতনাবাজ আর কোনো সৃষ্টি) নেই’। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ৫২৩৯; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ১৫৮৩১]

# আনাস বিন মালেক রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- مَا بُعِثَ نَبِيٌّ إِلا أَنْذَرَ أُمَّتَهُ الأَعْوَرَ الْكَذَّابَ ، أَلا إِنَّهُ أَعْوَرُ ، وَإِنَّ رَبَّكُمْ لَيْسَ بِأَعْوَرَ ، وَإِنَّ بَيْنَ عَيْنَيْهِ مَكْتُوبٌ “كَافِرٌ . رواه البخاري في الفتن باب ذكر الدجال: ٧١٣١ ، وأبو داود في الملاحم: ٣٧٦١، وأحمد: ١١٥٩٣ – ‘এমন কোনো নবী প্রেরিত হন নাই, যিনি তাঁর উম্মতকে (ওই) অন্ধ মিথ্যুক (দাজ্জাল)-এর ব্যাপারে সতর্ক করেননি। জেনে রেখো, (সে নিজকে বিশ্ব জাহানের রব/প্রভু দাবী করবে, অথচ) সে হবে অন্ধ। আর তোমাদের (প্রকৃত) রব (ও প্রভু আল্লাহ তাআলা) অন্ধ নন। আর তার দুই চোখের মাঝখানে (কপালে) লিখা থাকবে ‘কাফের’। [সহিহ বুখারী, হাদিস ৭১৩১; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৩৭৬১; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ১১৫৯৩]

ফায়দা: অন্য সূত্রে আনাস বিন মালেক রা. থেকে বর্ণিত অারেক হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- الدَّجَّالُ مَمْسُوحُ الْعَيْنِ مَكْتُوبٌ بَيْنَ عَيْنَيْهِ كَافِرٌ ثُمَّ تَهَجَّاهَا : “ك ف ر” ، يَقْرَؤُهُ كُلُّ مُسْلِمٍ . رواه مسلم في الفتن باب ذكر الدجال: ٢٩٣٣، والترمذي في الفتن: ٢١٧١، وأحمد: ١٢٧٩٤ – ‘দাজ্জাল হল এক চোখ অন্ধ (ব্যাক্তি)। তার দুই চোখের মাঝখানে (কপালে) লিখা থাকবে ‘কাফের’। অতঃপর তিনি (আলাদা আলাদা করে) বিশেষভাবে বললেন: ك ف ر (কাফ, ফা, রা)। তা প্রত্যেক মুসলীম পড়তে পারবে’। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ২৯৩৩; সুনানে তিরমিযী, হাদিস ২১৭১; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ১২৭৯৪]

# ইমরান বিন হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- مَنْ سَمِعَ بِالدَّجَّالِ فَلْيَنْأَ عَنْهُ فَوَاللَّهِ إِنَّ الرَّجُلَ لَيَأْتِيهِ وَهُوَ يَحْسِبُ أَنَّهُ مُؤْمِنٌ فَيَتَّبِعُهُ مِمَّا يَبْعَثُ بِهِ مِنْ الشُّبُهَاتِ أَوْ لِمَا يَبْعَثُ بِهِ مِنْ الشُّبُهَاتِ . رواه أبو داود: ٤٣١٩; و صححه الألباني في صحيح أبي داود – ‘যে ব্যাক্তি দাজ্জালের (আগমনের) কথা শুনবে, (তার জন্য অপরিহার্য হল) সে তার থেকে দূরে (কোথাও) চলে যাবে। আল্লাহ’র কসম, নিশ্চই (কোনো কোনো) ব্যাক্তি নিজকে মু’মিন ধারনা করে তার কাছে আসবে, পরে (ইমান নষ্টকারী) সন্দেহ-সংশয় সমূহের মধ্য থেকে যা নিয়ে (দাজ্জাল) প্রেরিত হয়েছে কিংবা সন্দেহ-সংশয় সমূহের মধ্য থেকে যে উদ্দেশ্যে তা নিয়ে প্রেরিত হয়েছে, সে তার অনুসরণ করে বসবে’। [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪৩১৯]

# হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- لَأَنَا لَفِتْنَةُ بعْضِكُمْ أَخْوَفُ عِنْدِي مِنْ فِتْنَةِ الدَّجَّالِ ، وَلَنْ يَنْجُوَ أَحَدٌ مِمَّا قَبلَهَا إِلَّا نَجَا مِنْهَا ، وَمَا صُنِعَتْ فِتْنَةٌ مُنْذُ كَانَتْ الدُّنْيَا صَغِيرَةٌ وَلَا كَبيرَةٌ ، إِلَّا لِفِتْنَةِ الدَّجَّالِ . رواه الإمام أحمد: ٥/٣٨٩, وقال الشيخ شعيب الأرناءوط: إسناده صحيح; و البزار في كشف الأستار: رقم ٣٣٩٢; قال الهيثمي: ٧/٣٣٥ رواه الإمام أحمد، والبزار و رجاله رجال الصحيح , و صححه الالباني في سلسلة الأحاديث الصحيحة: رقم ٣٠٨٢ – ‘তোমাদের (মুসলমানদের মধ্যে) কোনো কোনো গোষ্ঠি ফিতনাগ্রস্থ হওয়ার ব্যাপারে আমার কাছে অবশ্যই দাজ্জালের ফিতনাই সর্বাধিক আশংকাজনক। অার যারা তার সম্মুখিন হবে তাদের মধ্যে যে তার থেকে (ইমান নিয়ে) বাঁচার সে বাদে তাদের একজনও (তার ফিতনা থেকে) বাঁচতে পারবে না। দুনিয়ার সৃষ্টি থেকে নিয়ে (যত) ছোট ও বড় ফিতনা সংঘটিত হয়েছে, (সেগুলোর একটাও) দাজ্জালের ফিতনার মতো (ভয়ানক) নয়’। [মুসনাদে আহমদ, হাদিস- ৫/৩৮৯; মুসনাদে বাযযার, হাদিস ৩৩৯২; মাজমাউ যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৭/৩৩৬]

# অায়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْتَعِيذُ فِي صَلاتِهِ مِنْ فِتْنَةِ الدَّجَّالِ . رواه البخاري في الفتن باب ذكر الدجال: ٧١٢٩ ، وأحمد: ٢٥٧٩٥ – ‘আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ’কে তাঁর নামাযের মধ্যে দাজ্জালের ফিতনা থেকে (আল্লাহ তাআলার) আশ্রয় চাইতে শুনেছি’। [সহিহ বুখারী, হাদিস ৭১২৯; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ২৫৭৯৫]

# আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ- إِذَا تَشَهَّدَ أَحَدُكُمْ فَلْيَسْتَعِذْ بِاللَّهِ مِنْ أَرْبَعٍ يَقُولُ : اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ ، وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ. رواه مسلم في المساجد باب ما يستعاذ منه في الصلاة: ٥٨٨ ، والترمذي في الدعوات: ٣٥٢٨، والنسائي في السهو: ١٢٩٣ ; وأبو داود في الصلاة: ٣٣، وابن ماجه في إقامة الصلاة: ٨٩٩ ، وأحمد: ٧١٩٦; والدارمي في الصلاة: ١٣١٠ – ‘তোমাদের কেউ যখন (নামাযের মধ্যে) তাশাহুদ পাঠ করবে, তখন সে যেন (আমার প্রতি দরূদ পাঠের পর দোয়ার মধ্যে) অবশ্যই চারটি জিনিস থেকে আল্লাহ’র আশ্রয় চায়। সে (যেন) বলে: اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ ، وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ – ‘অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় কামনা করি জাহান্নামের আযাব থেকে, কবরের আযাব থেকে, জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে এবং মাসিহ দাজ্জালের ফিতনার অনিষ্টতা থেকে’। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ৫৮৮; সুনানে তিরমিযী, হাদিস ৩৫২৮; সুনানে নাসায়ী, হাদিস ১২৯৩; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৩৩; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৮৯৯; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ৮১৯৬; সুনানে দারেমী, হাদিস ১৩১]

# আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ- ثَلاثٌ إِذَا خَرَجْنَ لا يَنْفَعُ نَفْسًا إِيمَانُهَا لَمْ تَكُنْ آمَنَتْ مِنْ قَبْلُ أَوْ كَسَبَتْ فِي إِيمَانِهَا خَيْرًا : طُلُوعُ الشَّمْسِ مِنْ مَغْرِبِهَا وَالدَّجَّالُ وَدَابَّةُ الأَرْضِ . رواه مسلم في الإيمان باب بيان الزمن الذي لا يقبل فيه الإيمان: ١٥٨، والترمذي في تفسير القرآن: ٢٩٩٨ – ‘তিনটি জিনিস যখন বেড় হবে, তখন এমন কারোর ইমান (আনায়ন) উপকারী (সাব্যস্থ) হবে না, যে (সে ঘটনা ঘটার) আগে ইমান আনেনি কিংবা (যে সে ঘটনা ঘটার আগেই) তার ইমানের মধ্যে কোনো কল্যান আনতে পারেনি: (১) পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়া, (২) দাজ্জাল এবং (২) দাব্বাতুল আরদ’। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ১৫৮; সুনানে তিরমিযী, হাদিস ২৯৯৮]

দাজ্জাল একজন মানব সন্তান, তার জীবন আছে এবং সে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করবে


রাসুলুল্লাহ ﷺ -এর হাদিস সমূহ থেকে সকল সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন, আয়িম্মায়ে মুজতাহিদীন, আয়িম্মায়ে মুহাদ্দেসীন ও পরবর্তী সকল যুগের মুহাক্কিক আলেমে দ্বীন তথা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ’র সকলের আক্বিদা হল: দাজ্জাল একজন মানব সন্তান, তার জীবন আছে এবং একসময় সে ঈসা ইবনে মারইয়াম আ.-এর হাতে মারা যাবে।

কিন্তু আমাদের এই অত্যাধুনি নেটনোলচির যুগে অনেকেই মনে করে যে, দাজ্জাল কোনো মানুষ/ব্যাক্তি নয়, বরং রাসুলুল্লাহ ﷺ শেষ জামানার আধুনিক টেকনোলজি ও যন্ত্র ব্যবহারকারী চরম মিথ্যুক, প্রতারক ও ধোকাবাজ ইহূদী-খৃষ্টানদের সম্মিলিত সৃষ্ট পশ্চিমা সভ্যতাকে বোঝানোর জন্য রূপকার্থে ‘দাজ্জাল’ (চরম প্রতারক/ধোকাবাজ/ফিতনাবাজ) কথাটি উল্লেখ করেছেন। অনেকে এও মনে করে যে, দাজ্জালের এক চোখ কানা হওয়ার অর্থ হল: পশ্চিমাদের মিথ্যা, প্রতারনা, ধোকাবাজী ও অন্যায়-অবিচার গুলোকে একপেশে ভাবেই জনমানুষের সামনে ‘প্রকৃত সত্য, প্রকৃত কল্যান, প্রকৃত মানব উন্নতি’র চাবিকাঠি নাম দিয়ে তাদেরকে ধোকায় সম্মহিত করাকেই রূপকার্থে এক চোখ কানা/অন্ধ বলা হয়েছে। আবার দাজ্জালের কপালে ‘কাফের’ লেখা থাকা এবং শুধুমাত্র মুমিনরা তা বুঝতে পারার অর্থ অনেকে এভাবে করে থাকে যে: এর অর্থ পশ্চিমাদের প্রচারিত ‘প্রকৃত সত্য, প্রকৃত কল্যান, প্রকৃত মানব উন্নতি’ -এসব কথার আড়ালে লুকিয়ে থাকা আল্লাদ্রোহীতা ও কুফরী, যা শুধুমাত্র মুমিনরা চিনতে পাবে, আর বাদবাকি মুনাফেকরা পশ্চিমাদের আহবান বুঝতে না পেরে তাদের অনুসরণ করবে। তাদের এই মত ও ব্যাখ্যাটি শুনতে ভাল লাগলেও বাস্তবে এটি একটি ভুল ধারনা। নিম্নের হাদিসগুলোর প্রতি লক্ষ্য করুন-

# আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- بَيْنَمَا أَنَا نَائِمٌ رَأَيْتُنِي أَطُوفُ بِالْكَعْبَةِ، فَإِذَا رَجُلٌ آدَمُ، سَبِطُ الشَّعْرِ، بَيْنَ رَجُلَيْنِ يَنْطِفُ رَأْسُهُ مَاءً – أَوْ يُهَرَاقُ رَأْسُهُ مَاءً . قُلْتُ: مَنْ هَذَا؟ قَالُوا: هَذَا ابْنُ مَرْيَمَ . ثُمَّ ذَهَبْتُ أَلْتَفِتُ، فَإِذَا رَجُلٌ أَحْمَرُ، جَسِيمٌ، جَعْدُ الرَّأْسِ، أَعْوَرُ الْعَيْنِ، كَأَنَّ عَيْنَهُ عِنَبَةٌ طَافِيَةٌ . قُلْتُ: مَنْ هَذَا؟ قَالُوا: الدَّجَّالُ، أَقْرَبُ النَّاسِ بِهِ شَبَهًا ابْنُ قَطَنٍ . رواه بخاري: رقم٣٤٤١; و مسلم: رقم ١٧١ – ‘আমি ঘুমিয়ে ছিলাম, এমতাবস্থায় আমি আমাকে দেখতে পেলাম আমি ক্বাবা (ঘর) তওয়াফ করছি। তখন বাদামী বর্ণের একজন পুরুষ(কে দেখলাম) -সোজা লম্বা চুল- দুজনের মাঝে (দাঁড়ানো) – তাঁর মাথা থেকে পানি টপকে পড়ছে, অথবা (বলেছেন) তাঁর মাথা থেকে পানি বেয়ে পড়ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম: ইনি কে? তারা বললেন: ইনি হলেন (ঈসা) ইবনে মারইয়াম। এরপর আমি এদিক ওদিক ঘুরছিলাম, তখন স্থুলদেহী লালচে বর্ণের এক পুরুষ ব্যাক্তি(কে দেখলাম) – মাথার চুল কোঁকড়ানো, (এক) চোখ অন্ধ – (আর) তার (সেই) চোখটা ছিল (কোটড় থেকে কিছুটা) বেড়িয়ে আসা আঙ্গুর (-এর মতো)। আমি জিজ্ঞেস করলাম: এই ব্যাক্তি কে? তারা বললেন: ‘দাজ্জাল’। (আমার দেখা) মানুষের মধ্যে ইবনু ক্বাতানের সাথে তার (চেহারার) অধিক সাদৃশ্যতা রয়েছে’। [সহিহ বুখারী, হাদিস ৩৪৪১; সহিহ মুসলীম, হাদিস ১৭১]

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   শরীয়ত আইন বিষয়ক আয়াত

ফায়দা: এই হাদিসে রাসুলুল্লাহ ﷺ স্বপ্নে ঈসা ইবনে মারইয়াম আ. কে দেখেছিলেন, যিনি একজন ব্যাক্তি/মানুষ এবং নবী, যিনি হলেন ‘প্রকৃত মাসিহ’। ওই একই স্বপ্নে ‘ভন্ড মাসিহ’ হিসেবে ‘দাজ্জাল’কে দেখেছিলেন। আর হাদিসটিতে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে যে, ‘দাজ্জাল’ একজন رَجُل (পুরুষ লোক)। সে স্থুলদেহী, লালচে বর্ণের, কোঁকড়ানো চুলওয়ালা, এক চোখ অন্ধ একজন ব্যাক্তি। রাসুলুল্লাহ ﷺ-এও ইংগীত দিয়েছেন যে, তাঁর সময়কার ইবনু ক্বাতান নামক এক ব্যাক্তির চেহারার সাথে দাজ্জালের চেহারার সাদৃশ্যতা রয়েছে। দাজ্জালের এসকল বৈশিষ্টকে কোনো যুক্তিতেই রূপকার্থে নিয়ে একথা বলার সুযোগ নেই যে, ‘দাজ্জাল মানুষ নয়, বরং পথভ্রষ্ট পশ্চীমা সভ্যতার রূপক নাম’। একই ভাবে নিচের হাদিসগুলো লক্ষ্য করুন। الله اعلم بالصواب

# নওয়াস বিন সামআন রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলে- রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- إنَّه شَابٌّ قَطَطٌ، عَيْنُهُ طَافِئَةٌ، كَأَنِّي أُشَبِّهُهُ بعَبْدِ العُزَّى بنِ قَطَنٍ . أخرجه مسلم في الصحيح , كتاب الفتن وأشراط الساعة : رقم ٢٩٣٧ ; و الترمذي في سننه , كتاب الفتن عن رسول الله ﷺ , باب ما جاء في فتنة الدجال : رقم ٢٢٤٠ دون السؤال ، و أحمد في مسنده : رقم ١٧٦٢٩ – “(ভাল করে দাজ্জালের বৈশিষ্ট জেনে রাখো)। নিশ্চই সে একজন অধিকমাত্রার চুল ওয়ালা যুবক, তার (এক দিকের) চোখটি (কোটরের ভিতরে) নির্জীব/অসতেজ (থাকবে)। আমি -তার সাদৃশ্যতা (কার সাথে মিলে, সেই উদাহরণ) দিলে (বলবো, সে অনেকটা) আব্দুল উযযা বিন ক্বাতানের মতো (দেখতে)”। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ২৯৩৭; সুনানে তিরমিযী, হাদিস ২২৪০; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ১৭৬২৯; মুসতাদরাকে হাকিম– ৪/৬৬১ হাদিস ৮৫৭৩; আল-ইমান, ইমাম ইবনু মানদাহ- ২/৯৩৩ হাদিস ১০২৭]

# উবাদাহ বিন সামেত রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- إِنِّي قَدْ حَدَّثْتُكُمْ عَنْ الدَّجَّالِ حَتَّى خَشِيتُ أَنْ لا تَعْقِلُوا ، إِنَّ مَسِيحَ الدَّجَّالِ رَجُلٌ قَصِيرٌ أَفْحَجُ جَعْدٌ أَعْوَرُ مَطْمُوسُ الْعَيْنِ لَيْسَ بِنَاتِئَةٍ وَلا حَجْرَاءَ فَإِنْ أُلْبِسَ عَلَيْكُمْ فَاعْلَمُوا أَنَّ رَبَّكُمْ لَيْسَ بِأَعْوَرَ . رواه أبو داود برقم٣٧٦٣ ، والحديث صحيح كما في صحيح الجامع الصغير: حديث رقم ٢٤٥٥ – ‘বস্তুতঃ আমি তোমাদেরকে দাজ্জালের (অনেক) বর্ণনা দিয়েছি। (কিন্তু) অবশেষে আমার আশংকা হচ্ছে যে, (বোধ হয়) তোমরা (দাজ্জালকে তখন) চিনতে পারবে না। (শোন) নিশ্চই মাসিহ দাজ্জাল (হবে) একটা খাঁটো পুরুষ লোক, (দুই) পা (হবে হাটু থেকে বাহিরের দিকে কিছুটা) বাঁকানো, (মাথার চুলগুলো হবে) কোঁকড়ানো, (বাম চোখটি হবে) অন্ধ (এবং) চোখটি (যেন কোটর থেকে তুলে ফেলে দেয়া হয়েছে -এরকম) সমান (দেখতে) -স্ফীতও নয়, আবার (কোটরের ভিতরে) ঢুকে যাওয়াও নয়। এতেও যদি তোমরা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে থাকো, তাহলে (অন্ততঃ এতটুকু) জেনে রাখো যে, তোমাদের রব (আল্লাহ) অন্ধ নন’। [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৩৭৬৩]

# আবু হুরায়রাহ রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- خَرَجْتُ إِلَيْكُمْ وَقَدْ بُيِّنَتْ لِي لَيْلَةُ الْقَدْرِ ومَسِيحُ الضَّلَالَةِ فَكَانَ تَلَاحٍ بَيْنَ رَجُلَيْنِ بِسُدَّةِ الْمَسْجِدِ فَأَتَيْتُهُمَا لِأَحْجِزَ بَيْنَهُمَا فَأُنْسِيتُهُمَا وَسَأَشْدُو لَكُمْ مِنْهُمَا شَدْوًا أَمَّا لَيْلَةُ الْقَدْرِ فَالْتَمِسُوهَا فِي الْعَشْرِ الْأَوَاخِرِ وِتْرًا وَأَمَّا مَسِيحُ الضَّلَالَةِ فَإِنَّهُ أَعْوَرُ الْعَيْنِ أَجْلَى الْجَبْهَةِ عَرِيضُ النَّحْرِ فِيهِ دَفَأٌ كَأَنَّهُ قَطَنُ بْنُ عَبْدِ الْعُزَّى قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلْ يَضُرُّنِي شَبَهُهُ قَالَ لَا أَنْتَ امْرُؤٌ مُسْلِمٌ وَهُوَ امْرُؤٌ كَافِرٌ . أخرجه أحمد في مسنده : ٢/٢٩١ ، وَ قَالَ أحمد شاكر في شرحه : ٨/٢١ رقم ٧٨٩٢ : إسناده صحيح – “(আল্লাহ তাআলা’র পক্ষ থেকে) লাইলাতু ক্বদর এবং পথভ্রষ্ঠ মাসিহ (দাজ্জাল) সম্পর্কে (কিছু তথ্য) আমার কাছে পরিষ্কার প্রতিভাত হয়েছিল, (আর) আমি (সে খবরটাই দেয়ার জন্য) তোমাদের উদ্দেশ্যে বের হয়ে এসেছিলাম। পরে (দেখলাম) মসজিদের দরজায় দুই ব্যাক্তির মাঝে বাকযুদ্ধ চলছে। ফলে আমি তাদের দুজনের কাছে এলাম, যাতে তাদের উভয়ের মাঝে (ঘটিত বিষয়টির) রফা করা যায়। (তাদের দুজনকে সামাল দিতে গিয়ে) পরে আমি (ওই) দুইটি (তথ্যের কিছু অংশ) ভুলে যাই। তবে আমি তোমাদেরকে এখনই (সেই প্রতিভাত হওয়া বিষয়) দুটি থেকে কিছু জানাবো। লাইলাতুল ক্বদর সম্পর্কে কথা হল, তোমরা তা (রমযান মাসের) শেষ দশদিনের বেজোরে তালাশ করো। আর পথভ্রষ্ঠ মাসিহ (দাজ্জাল) সম্পর্কে কথা হল, নিশ্চই সে হচ্ছে (এক) চোখ অন্ধ, প্রশস্ত ললাট (এবং) চওড়া গন্ডদেশ/কাঁধ (বিশিষ্ট এক ব্যাক্তি)। তার (দেহের গঠনের) মধ্যে (একটু) বাঁকা (ভাব) রয়েছে। সে (অনেকটা আরবের) কাতান বিন আব্দে উযযা’র মতো (দেখতে)”। [মুসনাদে আহমদ- ২/২৯১]

# হুযাইফা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- الدَّجَّالُ أَعْوَرُ الْعَيْنِ الْيُسْرَى جُفَالُ الشَّعَرِ مَعَهُ جَنَّةٌ وَنَارٌ فَنَارُهُ جَنَّةٌ وَجَنَّتُهُ نَارٌ . رواه مسلم, كتاب الفتن وأشراط الساعة » باب ذكر الدجال وصفته وما معه: ٨/١٩٥ ; و احمد في المسنده: ٥/٣٨٣; و نعيم بن حماد في الفتن: ١٥٣٢ – ‘দাজ্জাল হল বাম চোখ অন্ধ (ও) মাথাভর্তি চুল ওয়ালা (এক ব্যাক্তি)। তার সাথে (থাকবে) জান্নাত ও দোযখ। বস্তুতঃ তার দোযখটি হল জান্নাত (এর পথ) এবং তার জান্নাতটি হল দোযখ (এর পথ)’। [সহিহ মুসলীম- ৮/১৯৫; মুসনাদে আহমদ- ৫/৩৮৩; আল-ফিতান, নুআইম বিন হাম্মাদ- ১৫৩২]

# হিশাম বিন আমের রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- إِنَّ رَأْسَ الدَّجَّالِ مِنْ وَرَائِهِ حُبُكٌ حُبُكٌ . رواه عبد الرزاق في مصنفه, كتاب الجامع, باب الدجال: رقم ٢٠٨٢٨; و أحمد: ١٥٨٢٦ ; و الحاكم في المستدرك على الصحيحين: ٤/٥٠٨ ; و صححه الألباني في الصحيحة: ٢٨٠٨ – ‘নিশ্চই দাজ্জালের মাথার পিছনের (চুলগুলো পাকানো পাকানো এবং) খুব বেশি হেলেদুলে ওঠে’। [মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক -১১/৩৯৫ হাদিস ২০৮২৮; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ১৫৮২৬; মুসতাদরাকে হাকিম– ৪/৫০৮]

# আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- رَأَيْتُ لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِي مُوسَى رَجُلاً آدَمَ طُوَالاً جَعْدًا ، كَأَنَّهُ مِنْ رِجَالِ شَنُوءَةَ ، وَرَأَيْتُ عِيسَى رَجُلاً مَرْبُوعًا ، مَرْبُوعَ الْخَلْقِ إِلَى الْحُمْرَةِ وَالْبَيَاضِ ، سَبِطَ الرَّأْسِ ، وَرَأَيْتُ مَالِكًا خَازِنَ النَّارِ ، وَالدَّجَّالَ . رواه البخاري, كتاب بدء الخلق, باب إذا قال أحدكم: آمين والملائكة في السماء، آمين فوافقت إحداهما الأخرى، غفر له ما تقدم من ذنبه : ٣٢٣٩ ، ومسلم في الإيمان: ١٦٥ ، وأحمد: ٣١٦٩ – ‘আমি ইসরা (মেরাজে)র রাতে (নবী) মুসা’কে দেখেছি, তিনি বাদামী বর্ণের কোকড়ানো চুলওয়ালা একজন লম্বা ব্যাক্তি, তাকে (দেখতে) যেন (অনেকটা) শানওয়াআহ’র লোকদের একজন (বলে মনে হয়)। আমি (সেখানে নবী) ঈসাকে দেখেছি; (তিনি একজন) মধ্য গড়নের (মানুষ, যার গায়ের রং ’টা) লাল ও উজ্জল সাদা মিশ্রিত; মাথার চুলগুলো (খানিকটা লম্বা ও সোজা কাঁধের দিকে) ছেড়ে দেয়া। আমি (সেই রাতে) দোযখের ব্যবস্থাপক মালেক (ফিরেশতা) এবং (মাসিহ) দাজ্জালকে দেখেছি’। [সহিহ বুখারী, হাদিস ৩২৩৯; সহিহ মুসলীম, হাদিস ১৬৫; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ৩১৬৯]

ফায়দা: এই হাদিসটিতে মুসা আ. এবং ঈসা আ. দুজনই হলেন মানুষ ও নবী, আর দোযখের ব্যবস্থাপক মালেক হলেন ফেরেশতা। এই তিনজনই পৃথক পৃথক ব্যাক্তি। সুতরাং, কেবলমাত্র ‘দাজ্জাল’-কে ব্যাক্তির তালিকা থেকে বাদ দিয়ে একথা বলা যে, “দাজ্জাল কোনো ব্যাক্তি নয় বরং ‘আধুনিক পথভ্রষ্ঠ প্রতারক সভ্যতা’র নাম” -এর কোনোই যৌক্তিকতা নেই। الله اعلم بالصواب

# আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- أَنَّ عُمَرَ انْطَلَقَ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِي رَهْطٍ قِبَلَ ابْنِ صَيَّادٍ، حَتَّى وَجَدُوهُ يَلْعَبُ مَعَ الصِّبْيَانِ عِنْدَ أُطُمِ بَنِي مَغَالَةَ، وَقَدْ قَارَبَ ابْنُ صَيَّادٍ الْحُلُمَ فَلَمْ يَشْعُرْ حَتَّى ضَرَبَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بِيَدِهِ ثُمَّ قَالَ لاِبْنِ صَيَّادٍ ‏”‏ تَشْهَدُ أَنِّي رَسُولُ اللَّهِ ‏”‏‏.‏ فَنَظَرَ إِلَيْهِ ابْنُ صَيَّادٍ فَقَالَ أَشْهَدُ أَنَّكَ رَسُولُ الأُمِّيِّينَ‏.‏ فَقَالَ ابْنُ صَيَّادٍ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَتَشْهَدُ أَنِّي رَسُولُ اللَّهِ فَرَفَضَهُ وَقَالَ آمَنْتُ بِاللَّهِ وَبِرُسُلِهِ‏.‏ فَقَالَ لَهُ ‏”‏ مَاذَا تَرَى ‏”‏‏.‏ قَالَ ابْنُ صَيَّادٍ يَأْتِينِي صَادِقٌ وَكَاذِبٌ‏.‏ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ خُلِّطَ عَلَيْكَ الأَمْرُ ‏”‏ ثُمَّ قَالَ لَهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ إِنِّي قَدْ خَبَأْتُ لَكَ خَبِيئًا ‏”‏‏.‏ فَقَالَ ابْنُ صَيَّادٍ هُوَ الدُّخُّ‏.‏ فَقَالَ ‏”‏ اخْسَأْ، فَلَنْ تَعْدُوَ قَدْرَكَ ‏”‏‏.‏ فَقَالَ عُمَرُ ـ رضى الله عنه ـ دَعْنِي يَا رَسُولَ اللَّهِ أَضْرِبْ عُنُقَهُ‏.‏ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ إِنْ يَكُنْهُ فَلَنْ تُسَلَّطَ عَلَيْهِ، وَإِنْ لَمْ يَكُنْهُ فَلاَ خَيْرَ لَكَ فِي قَتْلِهِ ‏”‏‏.‏ وَقَالَ سَالِمٌ سَمِعْتُ ابْنَ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ يَقُولُ انْطَلَقَ بَعْدَ ذَلِكَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأُبَىُّ بْنُ كَعْبٍ إِلَى النَّخْلِ الَّتِي فِيهَا ابْنُ صَيَّادٍ وَهُوَ يَخْتِلُ أَنْ يَسْمَعَ مِنِ ابْنِ صَيَّادٍ شَيْئًا قَبْلَ أَنْ يَرَاهُ ابْنُ صَيَّادٍ فَرَآهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ مُضْطَجِعٌ، يَعْنِي فِي قَطِيفَةٍ لَهُ فِيهَا رَمْزَةٌ أَوْ زَمْرَةٌ، فَرَأَتْ أُمُّ ابْنِ صَيَّادٍ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ يَتَّقِي بِجُذُوعِ النَّخْلِ فَقَالَتْ لاِبْنِ صَيَّادٍ يَا صَافِ ـ وَهْوَ اسْمُ ابْنِ صَيَّادٍ ـ هَذَا مُحَمَّدٌ صلى الله عليه وسلم‏.‏ فَثَارَ ابْنُ صَيَّادٍ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ لَوْ تَرَكَتْهُ بَيَّنَ . رواه البخاري في الصحيح, كتاب الجنائز: رقم ١٣٥٥ – ‘(একবার অামার পিতা) ওমর রা কিছু লোক সহ রাসুলুল্লাহ ﷺ -এর সাথে ইবনে সাইয়্যাদের (বাড়ির) দিকে গেলেন। অবশেষে তাকে বানু-মাগালাহ দূর্গের পাশে ছেলেপুলেদের সাথে খেলারত অবস্থায় পেলেন। তখন সে বালেগ হওয়ার নিকটবর্তী (বয়সে উপনীত) ছিল। সে বুঝে ওঠার আগেই রাসুলুল্লাহ ﷺ তার হাত ধরে ফেললেন। অতঃপর ইবনে সাইয়্যাদকে বললেন: ‘তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে আমি আল্লাহ’র রাসুল’? তখন ইবনে সাইয়্যাদ তাঁর দিকে তাকিয়ে বললো: ‘আমি সাক্ষ্য দেই যে, আপনি (আরব) উম্মীদের (কাছে প্রেরিত) রাসুল; (আমাদের ইহূদীদের নয়)’। তখন ইবনে সাইয়্যাদ নবী ﷺ-কে জিজ্ঞেস করলো: ‘আপনি কি সাক্ষ্য দেন যে, আমি আল্লাহ’র রাসুল? এতে তিনি তাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন: ‘আমি আমি ইমান এনেছি আল্লাহর উপর এবং তার (প্রেরিত) রাসুলগণের উপর’। তারপর তাকে বললেন: ‘তুমি কী দেখতে পাও’? ইবনে সাইয়্যাদ বললো: ‘আমার কাছে সত্যবাদী এবং মিথ্যাবাদী আগমন করে’। তখন নবী ﷺ বললেন: ‘বিষয়টিকে তোমার উপর খলৎমলৎ /বিভ্রান্তিকর করা হয়েছে’। এরপর নবী ﷺ তাকে বললেন: ‘আমি (আমার মনের মধ্যে) তোমার জন্য একটি গোনীয় বিষয় লুকিয়ে রাখলাম। (বলো-তো দেখি কী লুকিয়ে রেখেছি)? তখন ইবনে সাইয়্যাদ বললো: ‘ওটা হল الدُّخُّ‏ (আদ-দুখ্খু’। তখন তিনি বললেন: ‘লাঞ্চিত হও! তুমি কখনোই তোমার সীমা অতিক্রম করতে পারবে না’। তখন ওমর রা. বললেন: ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাকে অনুমতি দেন, ওর গর্দানটা উড়িয়ে দেই’। তখন নবী ﷺ বললেন: যদি সে-ই (আসল দাজ্জাল) হয়, তাহলে তুমি তার উপর প্রভাব ফেলতে পারবে না। আর সে যদি (দাজ্জাল না) হয়, তাহলে তাকে কতল করার মধ্যে তোমার কোনো কল্যান নেই’। (হাদিসটির রাবী সালেম রহ.) বলেন, আমি ইবনে ওমর রা.কে (এও) বলতে শুনেছি: এরপর রাসুলুল্লাহ ﷺ ও উবাই বিন কা’ব রা. ওই খেজুর বাগানের দিকে গেলেন যেখানে ইবনে সাইয়্যাদ ছিল। তিনি (সেখানে) লুকিয়ে পড়লেন, যাতে -ইবনে সাইয়্যাদ তাঁকে দেখে ফেলার আগেই- তার (মুখ) থেকে কিছু (কথা) শুনতে পান। তখন নবী ﷺ দেখলেন যে, সে চাদর মুড়ি দিয়ে খাটে শুয়ে আছে, যার ভিতর থেকে তার বিড়বিড় আওয়াজ (বেড়) হচ্ছে। এমন সময় ইবনে সাইয়্যাদের মা -রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে খেজুর বাগানের ঝোপে লুকিয়ে থাকতে দেখে ফেললো। তখন সে ইবনে সাইয়্যাদ’কে বললো: ‘হে সাফ -এটা ছিল ইবনে সাইয়্যাদের নাম- এই যে মুহাম্মাদ (খেজুর বাগানের ফাঁকে লুকিয়ে আছে’। এতে ইবনে সাইয়্যাদ চটকে উঠলো। তখন নবী ﷺ বললেন: সে (অর্থাৎ তার মা) যদি তাকে (সে যা করছিল সেই অবস্থায়ই) তাকে ছেড়ে যেতো, (তাহলে আজ তার মাসিহ দাজ্জাল হওয়া না-হওয়ার বিষয়টি) পরিষ্কার হয়ে যেতো’। [সহিহ বুখারী, হাদিস ১৩৫৫]

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   শেষ জামানায় মালাহেম বা মালহামা বা মহাযুদ্ধ সম্পর্কে ব্যাখ্যা ও উদাহরণসহ কেয়ামতের আলামত ও ভবিষ্যতবাণী

ফায়দা: ইবনে সাইয়্যাদ জন্মগ্রহন করেছিল আরবের একটি ইহূদী পরিবারে খোদ রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর জামানায়েই এবং সে ইহূদী হিসেবেই বেড়ে উঠেছিল। আল্লাহ তাআলা রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে তখনো পর্যন্ত দাজ্জাল সম্পর্কে যেসকল তথ্য ও ইশারা ইংগীত ওহীসূত্রে জানিয়েছিলেন বা দেখিয়েছিলেন, তাতে করে রাসুলুল্লাহ ﷺ পুরোপুরি পরিষ্কার হতে পারছিলেন না যে, ইবনে সাইয়্যাদ’ই পরবর্তীতে শেষ জামানায় ‘মাসিহ দাজ্জাল’ হিসেবে আবির্ভূত হবে কিনা, নাকি অন্য কেউ। তবে ইবনে সাইয়্যাদের আচরন সম্পর্কিত সার্বিক সম্ভাব্য তথ্যের ভিত্তিতে রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর মন সায় দিচ্ছিল যে, ইবনে সাইয়্যাদ মাসিহ দাজ্জাল হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে এবং তা নিশ্চিত হওয়ার উদ্দেশ্যেই তিনি বেশ কয়েকবার ইবনে সাইয়্যাদের কথাবার্তা ও আচরন পরীক্ষা করে বিষয়টি জানার চেষ্টা করেন। তবে ইবনে সাইয়্যাদ’ই শেষ জামানার ‘মাসিহ দাজ্জাল’ -এ মর্মে রাসুলুল্লাহ ﷺ -এর সুস্পষ্ট কোনো উক্তি হাদিসের ভান্ডারে মুহাদ্দেসগণ পাননি। মনে হয়, বিশেষ কোনো হিকমতের কারণে বিষয়টিকে মূল সময়ের আগে প্রকাশ হওয়া থেকে গোপন করে রাখা হয়েছে।

তবে সাহাবীগণের অনেকেই মনে করতেন যে, ইবনে সাইয়্যাদ’ই শেষ জামানার ‘মাসিহ দাজ্জাল’। যেমন: মুহাম্মাদ বিন মুনকাদির রহ. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন- رَأَيْتُ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ يَحْلِفُ بِاللَّهِ: أَنَّ ابْنَ الصَّائِدِ الدَّجَّالُ، قُلْتُ: تَحْلِفُ بِاللَّهِ؟ قَالَ: إِنِّي سَمِعْتُ عُمَرَ يَحْلِفُ عَلَى ذَلِكَ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَمْ يُنْكِرْهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. رواه البخاري, كتاب الاعتصام بالكتاب والسنة, باب من رأى ترك النكير من النبي صلى الله عليه وسلم حجة، لا من غير الرسول: رقم ٧٣٥٥ – ‘অামি যাবির বিন আব্দুল্লাহ রা.-কে আল্লাহ’র কসম খেয়ে বলতে শুনেছি যে, নিশ্চই ইবনুস সাইয়্যাদ’ই হল দাজ্জাল। তখন আমি (তাঁকে) বললাম: ‘আল্লাহ’র কসম খেলেন’! (যদি আপনার ধারনা ভুল হয়, তখন)! তিনি বললেন: আমি নিজে ওমর রা.-কে রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর সামনে ওর ব্যাপারে (তথা ইবনুস সাইয়্যাদের দাজ্জাল হওয়ার ব্যাপারে) কসম খেতে শুনেছি। তখন রাসুলুল্লাহ ﷺ তার কথাকে রদ/অস্বীকার করেন নি’। [সহিহ বুখারী, হাদিস ৭৩৫৫]

নাফে রহ. থেকে আরেক রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন- لَقِيَ ابْنُ عُمَرَ ابْنَ صَائِدٍ فِي بَعْضِ طُرُقِ الْمَدِينَةِ فَقَالَ لَهُ قَوْلا أَغْضَبَهُ فَانْتَفَخَ حَتَّى مَلأَ السِّكَّةَ فَدَخَلَ ابْنُ عُمَرَ عَلَى حَفْصَةَ وَقَدْ بَلَغَهَا فَقَالَتْ لَهُ رَحِمَكَ اللَّهُ مَا أَرَدْتَ مِنْ ابْنِ صَائِدٍ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّمَا يَخْرُجُ مِنْ غَضْبَةٍ يَغْضَبُهَا . رواه مسلم في الصحيح, كتاب الفتن وأشراط الساعة, باب ذكر ابن صياد : رقم ٢٩٣٢ – ‘(একবার আব্দুল্লাহ) ইবনে ওমর রা. মদিনার রাস্তা সমূহের কোনো একটিতে ইবনুস সাইয়্যাদের সাক্ষাত পেলেন। তিনি তখন তাকে এমন কিছু বললেন, যা তাকে (এতটা) রাগিয়ে দিলো (যে), এতে সে (রাগে ক্ষোভে অস্বাভাবিক ভাবে দৃশ্যতঃ) স্ফীতকায় হতে লাগলো, এমনকি (স্ফীত হতে হতে অবশেষে তার দেহটি প্রস্থে পুরো) রাস্তা/গলি’কে পূরণ করে ফেললো। তখন ইবনে ওমর রা. (সেখান থেকে চলে গেলেন এবং তাঁর বোন উম্মুল মুমিনিন) হাফসাহ রা.-এর কাছে গিয়ে (ঘটনাটি) জানালেন। তখন হাফসাহ রা. তাঁকে বললেন: (ভাই!) আল্লাহ আপনার প্রতি রহম করুন। আপনি ইবনুস সাইয়্যাদ থেকে (এর বেশি) কী কামনা করেন! (তার এরকম অদ্ভুত আচরণ-তো তার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক)। (আর) আপনিও তো জানেন যে, সে রাগাহ্নিত অবস্থায় রাগ প্রকাশ করতে করতে বেড় হবে’। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ২৯৩২]

এ থেকে কি প্রমাণিত হয় না যে, ‘মাসিহ দাজ্জাল’ বলতে রাসুলুল্লাহ ﷺ একজন আদম সন্তানকে বুঝিয়েছেন! পশ্চিমা সভত্যাই যদি মাসিহ দাজ্জাল হত, তাহলে ইবনে সাইয়্যাদই শেষ জামানার মাসিহ দাজ্জাল কিনা -তা জানার জন্য রাসুলুল্লাহ ﷺ কি ওর পিছু নিতেন ?!। সুতরাং মাসিহ দাজ্জাল বলতে রূপকার্থে ‘আজকের ধোকাবাজ প্রতারক পশ্চিমা সভ্যতা’কে অর্থ করার কোনোই সুযোগ নেই। الله اعلم بالصواب

# ফাতেমা বিনতে কায়েস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- سَمِعْتُ نِدَاءَ الْمُنَادِي مُنَادِي رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُنَادِي الصَّلاَةَ جَامِعَةً ‏.‏ فَخَرَجْتُ إِلَى الْمَسْجِدِ فَصَلَّيْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَكُنْتُ فِي صَفِّ النِّسَاءِ الَّتِي تَلِي ظُهُورَ الْقَوْمِ فَلَمَّا قَضَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم صَلاَتَهُ جَلَسَ عَلَى الْمِنْبَرِ وَهُوَ يَضْحَكُ فَقَالَ ‏”‏ لِيَلْزَمْ كُلُّ إِنْسَانٍ مُصَلاَّهُ ‏”‏ ‏.‏ ثُمَّ قَالَ ‏”‏ أَتَدْرُونَ لِمَ جَمَعْتُكُمْ ‏”‏ ‏.‏ قَالُوا اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ ‏.‏ قَالَ ‏”‏ إِنِّي وَاللَّهِ مَا جَمَعْتُكُمْ لِرَغْبَةٍ وَلاَ لِرَهْبَةٍ وَلَكِنْ جَمَعْتُكُمْ لأَنَّ تَمِيمًا الدَّارِيَّ كَانَ رَجُلاً نَصْرَانِيًّا فَجَاءَ فَبَايَعَ وَأَسْلَمَ وَحَدَّثَنِي حَدِيثًا وَافَقَ الَّذِي كُنْتُ أُحَدِّثُكُمْ عَنْ مَسِيحِ الدَّجَّالِ حَدَّثَنِي أَنَّهُ رَكِبَ فِي سَفِينَةٍ بَحْرِيَّةٍ مَعَ ثَلاَثِينَ رَجُلاً مِنْ لَخْمٍ وَجُذَامَ فَلَعِبَ بِهِمُ الْمَوْجُ شَهْرًا فِي الْبَحْرِ ثُمَّ أَرْفَئُوا إِلَى جَزِيرَةٍ فِي الْبَحْرِ حَتَّى مَغْرِبِ الشَّمْسِ فَجَلَسُوا فِي أَقْرُبِ السَّفِينَةِ فَدَخَلُوا الْجَزِيرَةَ فَلَقِيَتْهُمْ دَابَّةٌ أَهْلَبُ كَثِيرُ الشَّعَرِ لاَ يَدْرُونَ مَا قُبُلُهُ مِنْ دُبُرِهِ مِنْ كَثْرَةِ الشَّعَرِ فَقَالُوا وَيْلَكِ مَا أَنْتِ فَقَالَتْ أَنَا الْجَسَّاسَةُ ‏.‏ قَالُوا وَمَا الْجَسَّاسَةُ قَالَتْ أَيُّهَا الْقَوْمُ انْطَلِقُوا إِلَى هَذَا الرَّجُلِ فِي الدَّيْرِ فَإِنَّهُ إِلَى خَبَرِكُمْ بِالأَشْوَاقِ ‏.‏ قَالَ لَمَّا سَمَّتْ لَنَا رَجُلاً فَرِقْنَا مِنْهَا أَنْ تَكُونَ شَيْطَانَةً – قَالَ – فَانْطَلَقْنَا سِرَاعًا حَتَّى دَخَلْنَا الدَّيْرَ فَإِذَا فِيهِ أَعْظَمُ إِنْسَانٍ رَأَيْنَاهُ قَطُّ خَلْقًا وَأَشَدُّهُ وِثَاقًا مَجْمُوعَةٌ يَدَاهُ إِلَى عُنُقِهِ مَا بَيْنَ رُكْبَتَيْهِ إِلَى كَعْبَيْهِ بِالْحَدِيدِ قُلْنَا وَيْلَكَ مَا أَنْتَ قَالَ قَدْ قَدَرْتُمْ عَلَى خَبَرِي فَأَخْبِرُونِي مَا أَنْتُمْ قَالُوا نَحْنُ أُنَاسٌ مِنَ الْعَرَبِ رَكِبْنَا فِي سَفِينَةٍ بَحْرِيَّةٍ فَصَادَفْنَا الْبَحْرَ حِينَ اغْتَلَمَ فَلَعِبَ بِنَا الْمَوْجُ شَهْرًا ثُمَّ أَرْفَأْنَا إِلَى جَزِيرَتِكَ هَذِهِ فَجَلَسْنَا فِي أَقْرُبِهَا فَدَخَلْنَا الْجَزِيرَةَ فَلَقِيَتْنَا دَابَّةٌ أَهْلَبُ كَثِيرُ الشَّعَرِ لاَ يُدْرَى مَا قُبُلُهُ مِنْ دُبُرِهِ مِنْ كَثْرَةِ الشَّعَرِ فَقُلْنَا وَيْلَكِ مَا أَنْتِ فَقَالَتْ أَنَا الْجَسَّاسَةُ ‏.‏ قُلْنَا وَمَا الْجَسَّاسَةُ قَالَتِ اعْمِدُوا إِلَى هَذَا الرَّجُلِ فِي الدَّيْرِ فَإِنَّهُ إِلَى خَبَرِكُمْ بِالأَشْوَاقِ فَأَقْبَلْنَا إِلَيْكَ سِرَاعًا وَفَزِعْنَا مِنْهَا وَلَمْ نَأْمَنْ أَنْ تَكُونَ شَيْطَانَةً فَقَالَ أَخْبِرُونِي عَنْ نَخْلِ بَيْسَانَ قُلْنَا عَنْ أَىِّ شَأْنِهَا تَسْتَخْبِرُ قَالَ أَسْأَلُكُمْ عَنْ نَخْلِهَا هَلْ يُثْمِرُ قُلْنَا لَهُ نَعَمْ ‏.‏ قَالَ أَمَا إِنَّهُ يُوشِكُ أَنْ لاَ تُثْمِرَ قَالَ أَخْبِرُونِي عَنْ بُحَيْرَةِ الطَّبَرِيَّةِ ‏.‏ قُلْنَا عَنْ أَىِّ شَأْنِهَا تَسْتَخْبِرُ قَالَ هَلْ فِيهَا مَاءٌ قَالُوا هِيَ كَثِيرَةُ الْمَاءِ ‏.‏ قَالَ أَمَا إِنَّ مَاءَهَا يُوشِكُ أَنْ يَذْهَبَ ‏.‏ قَالَ أَخْبِرُونِي عَنْ عَيْنِ زُغَرَ ‏.‏ قَالُوا عَنْ أَىِّ شَأْنِهَا تَسْتَخْبِرُ قَالَ هَلْ فِي الْعَيْنِ مَاءٌ وَهَلْ يَزْرَعُ أَهْلُهَا بِمَاءِ الْعَيْنِ قُلْنَا لَهُ نَعَمْ هِيَ كَثِيرَةُ الْمَاءِ وَأَهْلُهَا يَزْرَعُونَ مِنْ مَائِهَا ‏.‏ قَالَ أَخْبِرُونِي عَنْ نَبِيِّ الأُمِّيِّينَ مَا فَعَلَ قَالُوا قَدْ خَرَجَ مِنْ مَكَّةَ وَنَزَلَ يَثْرِبَ ‏.‏ قَالَ أَقَاتَلَهُ الْعَرَبُ قُلْنَا نَعَمْ ‏.‏ قَالَ كَيْفَ صَنَعَ بِهِمْ فَأَخْبَرْنَاهُ أَنَّهُ قَدْ ظَهَرَ عَلَى مَنْ يَلِيهِ مِنَ الْعَرَبِ وَأَطَاعُوهُ قَالَ لَهُمْ قَدْ كَانَ ذَلِكَ قُلْنَا نَعَمْ ‏.‏ قَالَ أَمَا إِنَّ ذَاكَ خَيْرٌ لَهُمْ أَنْ يُطِيعُوهُ وَإِنِّي مُخْبِرُكُمْ عَنِّي إِنِّي أَنَا الْمَسِيحُ وَإِنِّي أُوشِكُ أَنْ يُؤْذَنَ لِي فِي الْخُرُوجِ فَأَخْرُجَ فَأَسِيرَ فِي الأَرْضِ فَلاَ أَدَعَ قَرْيَةً إِلاَّ هَبَطْتُهَا فِي أَرْبَعِينَ لَيْلَةً غَيْرَ مَكَّةَ وَطَيْبَةَ فَهُمَا مُحَرَّمَتَانِ عَلَىَّ كِلْتَاهُمَا كُلَّمَا أَرَدْتُ أَنْ أَدْخُلَ وَاحِدَةً أَوْ وَاحِدًا مِنْهُمَا اسْتَقْبَلَنِي مَلَكٌ بِيَدِهِ السَّيْفُ صَلْتًا يَصُدُّنِي عَنْهَا وَإِنَّ عَلَى كُلِّ نَقْبٍ مِنْهَا مَلاَئِكَةً يَحْرُسُونَهَا قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَطَعَنَ بِمِخْصَرَتِهِ فِي الْمِنْبَرِ ‏”‏ هَذِهِ طَيْبَةُ هَذِهِ طَيْبَةُ هَذِهِ طَيْبَةُ ‏”‏ ‏.‏ يَعْنِي الْمَدِينَةَ ‏”‏ أَلاَ هَلْ كُنْتُ حَدَّثْتُكُمْ ذَلِكَ ‏”‏ ‏.‏ فَقَالَ النَّاسُ نَعَمْ ‏”‏ فَإِنَّهُ أَعْجَبَنِي حَدِيثُ تَمِيمٍ أَنَّهُ وَافَقَ الَّذِي كُنْتُ أُحَدِّثُكُمْ عَنْهُ وَعَنِ الْمَدِينَةِ وَمَكَّةَ أَلاَ إِنَّهُ فِي بَحْرِ الشَّامِ أَوْ بَحْرِ الْيَمَنِ لاَ بَلْ مِنْ قِبَلِ الْمَشْرِقِ ما هُوَ مِنْ قِبَلِ الْمَشْرِقِ مَا هُوَ مِنْ قِبَلِ الْمَشْرِقِ مَا هُوَ ‏”‏ ‏.‏ وَأَوْمَأَ بِيَدِهِ إِلَى الْمَشْرِقِ ‏.‏ قَالَتْ فَحَفِظْتُ هَذَا مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏. رواه مسلم في صحيحه, كتاب الفتن وأشراط الساعة, باب قصة الجساسة: رقم ٢٩٤٢ – ‘আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর আহবানকারীকে আহবান করতে শুনলাম। আহবানকারী আহবান করলেন: ‘নামাযের জন্য একত্রিত হও’। তখন আমি মসজিদের উদ্দেশ্যে বেড় হলাম এবং রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর সাথে নামায আদায় করলাম। লোকজনের পিছনে নারীদের যে কাতার ছিল আমি ছিলাম সেখানে। রাসুলুল্লাহ ﷺ নামায শেষ করে হাস্যজ্বল অবস্থায় মিম্বরের উপরে বসলেন। তারপর বললেন: সকলে (তার নিজ নিজ) মুসল্লায় বসে থাকো। অতঃপর বললেন: তোমরা কি জানো, আমি তোমাদেরকে কি জন্য একত্রিত করেছি? তারা বললেন: আল্লাহ জানেন ও তাঁর রাসুল জানেন। তিনি বললেন: ‘আল্লাহ’র কসম, আমি তোমাদেরকে কোনো আশা-কামনার জন্যও একত্রিত করিনি, ভয়-ভীতির জন্য (একত্রিত) করিনি। আমি একত্রিত করেছি এজন্য যে, তামীম দ্বারী ছিল একজন খৃষ্টান ব্যাক্তি। সে (আমার কাছে) এসে (আমার হাতে) বায়াত হয়েছে ও ইসলাম কবুল করেছে। সে আমাকে এমন ঘটনা শুনিয়েছে, যা -আমি তোমাদেরকে মাসিহ দাজ্জাল সম্পর্কে যা বলেছিলাম -তার সত্তায়ন করে। সে আমার কাছে বর্ণনা করেছে যে, সে লাখ্ম ও জুযান (গোত্রের) ত্রিশ’জন লোকের সাথে সামুদ্রিক জাহাজে আরোহন করে(যাত্রা করে)ছিল। পরে (উথাল পাতাল) ঢেউ তাদেরকে নিয়ে সমুদ্রের মধ্যে মাস খানেক খেলা করতে থাকে। এরপর তারা সমূদ্রের একটি দ্বীপ/উপত্যকার দিকে ভিড়তে ভিরতে সূর্যাস্ত হয়ে যায়। তখন তারা জাহাজের (সাথে বাঁধা) পার্শ্বনৌকায় করে উপত্যকাটিতে প্রবেশ করে। এরপর একটি জন্তু তাদের সাথে সাক্ষাত করে; সে ছিল লোমে একদম ভরপুর। প্রচুর লোমের কারণে তারা বুঝতেই পারছিল না -কোনটি তার সামন, কোনটি পিছন। তারা তখন জিজ্ঞেস করলো: ‘হতভাগা, তুই কে’? সে বললো: আমি ‘জাস্সাসাহ’। তারা জিজ্ঞেস করলো: ‘জাস্সাসাহ কি’? সে (উত্তর না দিয়ে) বললো: ‘হে লোকসকল! তোমরা (সবাই) আশ্রমে অবস্থিত এই ব্যাক্তির দিকে অগ্রসর হও। সে তোমাদের তথ্যের জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে’। সে (তামীম) বলেছে: আমাদেরকে যখনই বলা হল ‘ব্যাক্তি’, তখনই আমরা -সে শয়তান হতে পারে- মনে করে ভয় পেয়ে গেলাম। সে বলেছে: আমরা (তখন) তড়িঘড়ি করে অগ্রসর হয়ে একেবারে তার আশ্রমে প্রবেশ করতেই তাতে দেখতে পেলাম -একজন বিরাটাকারের মানুষকে; এরকম মাখলূক আগে কখনো দেখিনি। সে ছিল লোহার শিকলে (এমন ভাবে) শক্ত করে বাঁধা (যে,) তার হাত দুটি ছিল তার গর্দানের দিকে, যেটা (আবার) ছিল তার দুই হাটুর মাঝখানে -পায়ের পাতা মুখী হওয়া অবস্থায়। আমরা বললাম: হতভাগা ! তুই কে? সে বললো: তোমরা আমার তথ্য পাবে। (আগে) বলো, কে তোমরা? তারা বললো: আমরা আরবের লোক; (মাস খানেক আগে) সমূদ্র জাহাজে আরোহন করি, (পরে এক সময় এমন এক) সমূদ্রের মুখামুখী হই, যা আমাদেরকে ধাক্কা (-র পর ধাক্কা) দিতে থাকে, এভাবে ঢেউ আমাদেরকে নিয়ে মাস খানেক খেলতে থাকে, অতঃপর (আজ সন্ধায়) আমাদেরকে তোমার এই উপত্যাকায় এনে ফেলে দিয়েছে। পরে আমরা (জাহাজের সাথে বাঁধা) পার্শ্বনৌকায় করে (তোমার এই) উপত্যকায় প্রবেশ করেছি। তার পর (এমন এক) জন্তু আমাদের সাথে সাক্ষাত করে, যে ছিল লোমে ভরপুর, বোঝাই যাচ্ছিল না -কোনটা তার সামন কোনটা পিছন। আমরা জিজ্ঞেস করলাম: হতভাগা, কে তুই? সে বললো: আমি ‘জাস্সাসাহ’। আমরা জিজ্ঞেস করলাম: ‘জাস্সাসাহ কি’? সে (উত্তর না দিয়ে) বললো: ‘হে লোকসকল! তোমরা (সবাই) আশ্রমে অবস্থিত এই ব্যাক্তির দিকে অগ্রসর হও। সে তোমাদের তথ্যের জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে’। তখন আমরা তার কথায় ভয় পেয়ে এবং তুই শয়তান হতে পারিস আশংকা করে তোর কাছে তড়িঘড়ি করে এলাম। তখন সে বললো: আমাকে বাইসান/বিসান (এলাকার) খেজুর গাছের ব্যাপারে অবগত করো (তা এখন কি অবস্থায় রয়েছে)’। আমরা বললাম: ‘তুই ওর কোন অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাস’? সে বললো: ‘আমি তোমাদেরকে জিজ্ঞেস করছি ওর খেজুর গাছ সম্পর্কে যে তা ফল দেয় কিনা’? আমরা বললাম: হ্যাঁ (ফল দেয়)। সে বললো: ‘নিশ্চই অচিরেই তা আর ফল দিবে না’। সে বললো: ‘আমাকে ত্বাবারী হ্রদের ব্যাপারে খবর দাও’। আমরা বললাম: ‘ওর কোন অবস্থা সম্পর্কে তুই জানতে চাস’? সে বললো: তার মধ্যে কি (এখনও) পানি আছে? তারা বললো: সেখানে প্রচুর পানি আছে’। সে বললো: ‘নিশ্চই অচিরেই তার পানি চলে যাবে’। সে বললো: ‘আমাকে জুগারের ঝরনা’র ব্যাপারে খবর দাও’। আমরা বললাম: ‘ওর কোন অবস্থা সম্পর্কে তুই জানতে চাস’? সে বললো: ‘ঝরনাটিতে কি পানি আছে এবং এর (আশেপাশের) বাসিন্দারা কি ঝরনাটির পানি দিয়ে চাষবাস করে?’ আমরা তাকে বললাম: হ্যাঁ, তাতে অনেক পানি আছে এবং তার (আশেপাশের) বাসিন্দারা তার পানি দিয়ে চাষবাস করে’। সে বললো: ‘আমাকে উম্মী নবীর ব্যাপারে তথ্য দাও, তিনি কী করেছেন’। তারা বললো: ‘তিনি মক্কা থেকে বেড়িয়ে ইয়াছরিবে (মদিনায়) ঠাঁই নিয়েছে’। সে বললো: ‘আরবরা কি তাঁর সাথে যুদ্ধ করেছে’? আমরা বললাম: ‘হ্যাঁ’। সে বললো: ‘তিনি তাদের সাথে কেমন ব্যবহার করেছেন’? তখন আমরা তাকে জানালাম যে, আরবের যারা তার প্রতিবেশি ছিল তিনি তাদের উপর বিজয় লাভ করেছেন এবং তারা তাঁর বশ্যতা স্বীকার করেছে। সে বললো: ‘তাদের সে অবস্থা হয়েছে’! আমরা বললাম: ‘হ্যাঁ’। সে বললো: ‘যদি তেমনটাই হয়ে থাকে, তাহলে তাঁর অনুগত্য করাই তাদের জন্য কল্যানকর হবে। আর আমি তোমাদেরকে আমার তথ্য দিচ্ছি। আমিই হলাম মাসিহ (দাজ্জাল)। আর অচিরেই আমাকে বেড় হওয়ার অনুমতি দেয়া হবে। আমি তখন বেড় হয়ে পৃথিবী ভ্রমন করবো। তখন চল্লিশ রাতের মধ্যে (পৃথিবীর) এমন কোনো পল্লী-এলাকাও (বাদ) থাকবে না, যেখানে আমাকে অবতরন করতে দেয়া না হবে -শুধু মক্কা ও ত্বইয়্যেবাহ ছাড়া; এই দুটোর দুটোই (আমার জন্য প্রবেশাধিকার) নিষিদ্ধ (থাকবে)। যখনই আমি ওই দু’স্থানের কোনো একটিতে একবার প্রবেশ করতে চাবো, তখনই একজন ফেরেশতা উন্মুক্ত তরবারী হাতে আমার মোকাবেলায় চলে আসবে ও আমাকে তাতে বাঁধা দিবে। বস্তুতঃ (এ দু’ স্থানের) প্রতিটি অলি-গলির সামনে ফেরেশতারা পাহারা দিতে থাকবে। ফাতেমা বিনতে কায়েস রা. বলেন: রাসুলুল্লাহ ﷺ তাঁর (হাতের) লাঠি/ছড়ি দিয়ে মিম্বরে মেড়ে বললেন: এটাই ত্বইয়্যেবাহ! এটাই ত্বইয়্যেবাহ! এটাই ত্বইয়্যেবাহ! অর্থাৎ মদিনা। ওহে! আমি কি তোমাদেরকে এসব আগে বলিনি? তখন লোকজন বললো: জি (বলেছেন)। (রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন): ‘তামীমের কথা আমাকে অবাক করে দিয়েছে। আমি তোমাদেরকে দাজ্জাল, মক্কা ও মদিনা সম্পর্কে ইতিপূর্বে যা বলেছি, (তামীম) তা সত্ত্বায়ন করে দিয়েছে। শুনে রাখো, সে (দাজ্জাল) শামের সমূদ্রে বা ইয়ামেনের সমূদ্রে রয়েছে। না, বরং পূর্ব দিকস্থ (সমূদ্রে)। সে রয়েছে পূর্ব দিকস্থ (সমূদ্রে), সে রয়েছে পূর্ব দিকস্থ (সমূদ্রে)’। আর (একথা বলার সময়) তিনি তার হাত দ্বারা পূর্ব দিকে ইশারা করছিলেন’। ফাতেমা বিনতে কায়েস রা. বলেন: ‘এসব কথা আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর কাছ থেকে মুখস্ত করে রেখেছি’। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ২৯৪২; আস-সুন্নাহ, ইমাম দানী-১/১১৪৮ হাদিস ৬২৬; সুনানে তিনমিযী, হাদিস ২২৫৩; আল-মু’জামুল কাবীর, তাবরাণী- ২৪/৩৮৬-৪০৫ হাদিস ৯৫৭-৯৮৩]

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   বিবিধ বা অন্যান্য কিছু বিষয়ের ব্যাখ্যা ও উদাহরণসহ কেয়ামতের আলামত ও ভবিষ্যতবাণী

ফায়দা: এই হাদিসটিতে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে যে, মাসিহ দাজ্জাল একজন إِنْسَانٍ (মানুষ), যাকে পূর্ব দিকস্থ কোনো এক দ্বীপে/উপত্যকায় লোহার শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে, এক সময় সে ছাড়া পাবে। এখানে রূপক অর্থ নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। الله اعلم بالصواب

# ইমরান বিন হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- مَا بَيْنَ خَلْقِ آدَمَ إِلَى قِيَامِ السَّاعَةِ فتنة أَكْبَرُ مِنْ الدَّجَّالِ، قد أكل الطعام و مشى في الأسواق . رواه الداني في السنن الواردة في الفتن : ١/١٨٤ رقم ٢٥ ، قال شيخ عبد القادر بن عبد الكريم في حاشية المطالب العالية بزوائد المسانيد الثمانية : ١٨/٤٥١ رقم ٤٥٢٤ : قلت هذا الإسناد صحيح رواته ثقات و عليه فان الحديث من رواية عمران بن حصين صحيح بهذا الإسناد – ‘(আদি পিতা নবী) আদমের সৃষ্টি থেকে নিয়ে কেয়ামত কায়েম হওয়া পর্যন্ত (সময়ের) মাঝে দাজ্জালের চাইতে বড় (ও ভয়ানক) ফিতনা (আর) নেই। বস্তুত: সে (ইতিমধ্যে) বাজারগুলিতে খাবার খেয়েছে এবং ঘোরাফেরা করেছে’। [সুনানুল ওয়ারিাহ, ইমাম দানী- ১/১৮৪ হাদিস ২৫]

ফায়দা: অন্য সূত্রেও ইমরান বিন হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- لقد أكل الطعام ومشى في الأسواق . يعني الدجال . رواه حميدي في مسنده : ٢/٣٦٨ رقم ٨٣٢، و أحمد في مسنده: ٤/٤٤٤، و الطبراني في الكبير: ١٨/١٥٥ رقم ٣٣٩، و غيرهم ، قال الهيثمي في مجمع الزاوئد : ٨/٧ : و في إسناد أحمد علي بن زيد وحديثه حسن ، وبقية رجاله رجال الصحيح . وفي إسناد الطبراني محمد بن منصور النحوي الأهوازي ، ولم أعرفه ، وبقية رجاله رجال الصحيح – “বস্তুত: সে -অর্থাৎ দাজ্জাল- (ইতিমধ্যে) বাজারগুলিতে খাবার খেয়েছে এবং ঘোরাফেরা করেছে”। [মুসনাদে আহমদ- ৪/৪৪৪; মুসনাদে হুমাইদী- ২/৩৬৮ হাদিস ৮৩২; আল-মু’জামুল কাবীর, ত্বাবরাণী- ১৮/১৫৫ হাদিস ৩৩৯; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৭/৮] বাজারে খাওয়া-দাওয়া ও ঘোরাফেরা কে করে?

# হযরত আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَنْزِلَ الرُّومُ بِالأَعْمَاقِ أَوْ بِدَابِقَ فَيَخْرُجُ إِلَيْهِمْ جَيْشٌ مِنَ الْمَدِينَةِ مِنْ خِيَارِ أَهْلِ الأَرْضِ يَوْمَئِذٍ فَإِذَا تَصَافُّوا قَالَتِ الرُّومُ خَلُّوا بَيْنَنَا وَبَيْنَ الَّذِينَ سَبَوْا مِنَّا نُقَاتِلْهُمْ ‏.‏ فَيَقُولُ الْمُسْلِمُونَ لاَ وَاللَّهِ لاَ نُخَلِّي بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ إِخْوَانِنَا ‏.‏ فَيُقَاتِلُونَهُمْ فَيَنْهَزِمُ ثُلُثٌ لاَ يَتُوبُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ أَبَدًا وَيُقْتَلُ ثُلُثُهُمْ أَفْضَلُ الشُّهَدَاءِ عِنْدَ اللَّهِ وَيَفْتَتِحُ الثُّلُثُ لاَ يُفْتَنُونَ أَبَدًا فَيَفْتَتِحُونَ قُسْطُنْطِينِيَّةَ فَبَيْنَمَا هُمْ يَقْتَسِمُونَ الْغَنَائِمَ قَدْ عَلَّقُوا سُيُوفَهُمْ بِالزَّيْتُونِ إِذْ صَاحَ فِيهِمُ الشَّيْطَانُ إِنَّ الْمَسِيحَ قَدْ خَلَفَكُمْ فِي أَهْلِيكُمْ ‏.‏ فَيَخْرُجُونَ وَذَلِكَ بَاطِلٌ فَإِذَا جَاءُوا الشَّأْمَ خَرَجَ فَبَيْنَمَا هُمْ يُعِدُّونَ لِلْقِتَالِ يُسَوُّونَ الصُّفُوفَ إِذْ أُقِيمَتِ الصَّلاَةُ فَيَنْزِلُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ فَأَمَّهُمْ فَإِذَا رَآهُ عَدُوُّ اللَّهِ ذَابَ كَمَا يَذُوبُ الْمِلْحُ فِي الْمَاءِ فَلَوْ تَرَكَهُ لاَنْذَابَ حَتَّى يَهْلِكَ وَلَكِنْ يَقْتُلُهُ اللَّهُ بِيَدِهِ فَيُرِيهِمْ دَمَهُ فِي حَرْبَتِهِ – কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যাবৎ রোম’রা আ’মাক অথবা দাবিক-এ অবতরণ না করে। সেসময় পৃথিবীবাসীর মধ্য থেকে (মুমিনদের) সর্বোত্তম একটি সৈন্যদল মদিনা হতে (বের হয়ে) তাদের দিকে ধাবিত হবে। তারা পরষ্পরে যখন সারিবদ্ধ হয়ে (মালহামাতুল কুবরা তথা মহাযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হবে, তখন) রোম’রা বলবে: আমাদের এবং যারা আমাদের লোকদেরকে আটকিয়ে রেখেছে তাদের মাঝ থেকে তোমরা সরে যাও, আমরা ওদের সাথে যুদ্ধ করবো। তখন মুসলমানরা বলবে: (এটা কখনই হতে পারে) না, আল্লাহ’র শপথ, আমারা তোমাদের এবং আমাদের (মুসলমান) ভাইদের মাঝ থেকে সরে দাঁড়াবো না। এরপর তাঁরা তাদের (তথা রোম বাহিনীর) সাথে যুদ্ধ করবে। তখন (যদ্ধের ভয়াবহতা দেখে মুসলমানদের মধ্যে) তিন ভাগের এক ভাগ (ভয়ে) পালিয়ে যাবে, আল্লাহ তাদের তওবা আর কখনই কবুল করবেন না। আর এক তৃতীয়াংশ শহীদ হয়ে যাবে; তাঁরা হবে আল্লাহ’র কাছে (সেই জিহাদের) সর্বোত্তম শহীদ। আর (অবশিষ্ট) এক তৃতীয়াংশ (যাঁরা বেঁচে যাবে তাঁরা ওই জিহাদে রোমদের উপর) বিজয় লাভ করবে; (পরে) তাঁরা আর কখনই ফিতনায় পতিত হবে না। এরপর তাঁরা (সামনে অগ্রসর হয়ে) কুস্তুনতুনিয়া (কন্সট্যান্টিনোপোল/ ইস্তাম্বুল, তুরষ্ক) জয় করবে। তারা যখন তাদের তরবারী জয়তুন গাছে ঝুলিয়ে গণীমতের মাল বন্টন করতে থাকবে, এমন সময় শয়তান তাদের মাঝে চিৎকার দিয়ে বলবে: নিশ্চই মাসিহ (দাজ্জাল) তোমাদের পরিবারের পিছনে লেগেছে। তখন তাঁরা (অবস্থার সত্যতা যাঁচাইয়ের জন্য) বেরিয়ে পড়বে, কিন্তু (বাস্তবে) খবরটি ছিল মিথ্যা। তাঁরা যখন শাম-এ গিয়ে পৌছবে, (তখন) দাজ্জাল বের হবে। তাঁরা জিহাদের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে সারিবদ্ধ হতে হতেই (আযান ও) নামাযের আকামত দেয়া হবে। তখন ঈসা ইবনু মারইয়াম (আ.) নাজিল হবেন। এরপর (নামায আদায় করা হবে ইমাম মাহদীর ইমামতীতে এবং নামাযের পর দাজ্জালের মুকাবেলায় মুসলীম উম্মাহ’র) তিনি নেতৃত্ব দিবেন। আল্লাহ’র দুশমন (দাজ্জাল) যখন তাঁকে দেখবে, তখন সে এমনভাবে গলে যাবে যেভাবে লবন পানিতে গলে যায়। তিনি যদি তাকে (ওভাবেই) ছেড়ে দিতেন, তাহলে (সে গলতে গলতে) একসময় (পুরাপুরি) ধ্বংস হয়ে যেতো। কিন্তু আল্লাহ ঈসা আ.-এর হাত দ্বারা তাকে হত্যা করবেন। তাই (শেষ পর্যন্ত ) ঈসা আ.-এর বর্শার মধ্যে তার রক্ত তারা দেখতে পাবে। [সহিহ মুসলীম ২৮৯৭]

ফায়দা: এই হাদিসে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে যে, মাসিহ দাজ্জাল যখন ঈসা ইবনে মারইয়াম আ.-কে দেখবে, তখন পানিতে লবন গলার মতো গলতে আরম্ভ করবে। আরো বলা হয়েছে যে, ঈসা ইবনে মারইয়াম আ. যদি দাজ্জালকে নিজ হাতে না মেড়ে ওভাবেই গলন রতঃ অবস্থায় ছেড়ে দিতেন, তাহলে সে (গলতে গলতে একসময় নিজেই) ধ্বংস হয়ে যেতো। এথেকেও প্রমাণিত হয়, যে দাজ্জালের জীবন আছে েএবং সে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করবে। কোনো কোনো হাদিস থেকে বোঝা যায় (যা আমরা সামনের পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছি), ঈসা আ. তাকে (ফিলিস্তিনের) বাবে-লুদ -এ কতল করবেন। الله اعلم بالصواب

MuslimPoint Organization

About MuslimPoint Organization

MuslimPoint একটি অনলাইন ভিত্তিক ইসলামী প্রশ্নোত্তর, গ্রন্থাগার, ব্লগিং, কুরআন, হাদিস, কুইজ এবং বিষয় ভিত্তিক রেফারেন্স প্ল্যাটফর্ম।

View all posts by MuslimPoint Organization →

One Comment on “দাজ্জালের আগমন ও ফিতনা সম্পর্কে ব্যাখ্যা ও উদাহরণসহ কেয়ামতের আলামত ও ভবিষ্যতবাণী পর্ব-১”

  1. ভাই দাজ্জালের কথা খুব তো কইলেন কিন্তু পবিত্র কোরআনে দাজ্জালের কথা কোন সূরার কত নম্বর আয়াতে আছে ভাই। আর কত কাল তুতা পাখির মত মিছা কথা প্রচার করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *