ইসলাম ও হিন্দু ধর্মের সাদৃশ্য বা মিল ,ব্যাখ্যা এবং দলিল বা রেফারেন্স সহ বিস্তারিত

হিন্দুধর্ম ভুল ভ্রান্তি সাদৃশ্য প্রতিমা বা মূর্তি পূজা নিষিদ্ধ হিন্দু ধর্মেই গরুর মাংস বৈজ্ঞানিক ভুল মোহাম্মাদ (স:) সনাতন চূরান্ত কলকি অবতার কলি বেদ শ্রীমদ্ভগবদগীতা বা গীতা মহাভারত পুরাণ উপনিষদ রামায়ণ ঋগ্বেদ যজুর্বেদ সামবেদ অথর্ববেদ ভারত হিন্দুস্থান দেবতা দেবী প্রসাদ গঙ্গা
ইসলাম ও হিন্দু ধর্মের সাদৃশ্য বা মিল ,ব্যাখ্যা এবং দলিল বা রেফারেন্স সহ বিস্তারিত
[ঈশ্বর ও আল্লাহ , সিয়াম/রোযা ও উপবাস , জান্নাত ও সর্গ , জাহান্নাম ও নরক , হজ্জ ও তীর্থযাত্রা ,নবী-রাসূল-অবতার ও মহাপুরুষ ইত্যাদি শব্দগুলোর মধ্যে অর্থগত এবং ব্যাকারণগত আকাশ-পাতাল পার্থক্য রয়েছে । কিন্তু এতো পার্থক্য থাকার পরও এখানে এই শব্দগুলো ব্যবহার এর কারণ হলো যেহতু এই পোষ্টটি হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষ ও পড়বে তাই তারা যেনো সহজে বুঝতে পারে তাই এসকল টার্ম এখানে ব্যবহার করা হয়েছে । ]

[সুরা আলে-ইমরান এর ৬৪ তম আয়াতে উল্লেখ করা আছে, “হে অনুসারীরা, আসমানি কিতাবের আসো সেই কথায়, যাহা তোমাদের এবং আমাদের মধ্যে এক। প্রথম সাদৃশ্য কি? আমরা আল্লাহ্‌ ব্যতীত আর কারও ইবাদত করি না। আমরা কোন কিছুতে তার শরীক করি না।]

ইসলাম ও হিন্দু ধর্মে মদ নিষিদ্ধ।

পবিত্র কোরআনে ‘সূরা মায়েদাহ’ আছে- “হে বিশ্বাসীগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদি ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্ত, শয়তানের কাজ, সুতরাং তোমরা তা বর্জন করো যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।” (৫ নং সূরা, ৪ আয়াত ৯০)

‘মনু স্মৃতিতে আছে :“ঋষি-হত্যাকারী, মদ্যপানকারী, তস্কর এবং গুরুর বিবাহ-শয্যা লঙ্ঘনকারী—এরা সবাই বৃহৎ পাপী হিসেবে পরিগণিত।” (৯ অধ্যায় , শ্লোক ২৩৫)

মদ চাউল থেকে প্রাপ্ত এক অপবিত্র নংরা; নোংরা সবসময় অশুভ; তাই কোন ঋষি, শাসক বা সাধারণ মানুষের মদ খাওয়া উচিত নয়।” (১১ অধ্যায় , শ্লোক ৯৪)

মদ্যপান যে নিষিদ্ধ নিচে উল্লিখিত শ্লোকগুলিতে তা বারে বারে উচ্চারিত হয়েছে :

(i) মনুস্মৃতি ১১ অধ্যায়, শ্লোক ৫৫। (ii) মনুস্মৃতি ১১ অধ্যায়, শ্লোক ১৫১। (iii) মনুস্মৃতি ৭ অধ্যায়, শ্লোক ৪৭-৫০। (iv) মনুস্মৃতি ৯ অধ্যায়, শ্লোক ২২৫। (v) মনুস্মৃতি ১২ অধ্যায়, শ্লোক ৪৫। (vi) মনুস্মৃতি ৩ অধ্যায়, শ্লোক ১৫৯। (vii) ঋগ্বেদ ৮ মণ্ডল, ২ সূক্ত, শ্লোক ১২। (viii) ঋগ্বেদ ৮ মণ্ডল, ২১ সূক্ত, শ্লোক ১৪।

জুয়া খেলা নিষিদ্ধ:

ইসলাম ধর্মে জুয়া হারাম এটা সব মুসলমানই জানে কিন্তু বেশির ভাগ হিন্দুই জানে না যে হিন্দু ধর্মেও জুয়া খেলা হারাম বা নিষিদ্ধ। বেদে আছে “জুয়ারি ব্যক্তির শ্বাস তাকে অভিশাপ দেয়, তার স্ত্রীও তাকে ত্যাগ করে। জুয়ারি কে কেউ কানাকরি ঋন দেয় না”(ঋকবেদ/১০।৩৪।৩)। চিন্তা করুন জুয়ারি ব্যাক্তির শ্বাস তাকে অভিশাপ দেয় । অর্থাৎ সে ২৪ ঘন্টায় অভিশাপ পেতে থাকে। হিন্দু ধর্মে জুয়া খেলা তাহলে কত বড় পাপ, কত জঘন্য অপরাধ । ঈশ্বর আমাদের এ রকম জঘন্য খেলা থেকে বাঁচার ক্ষমতা দিন। আমিন!

মদ পান করা নিষিদ্ধ:

পাশ্চাত্যে একটা সমিক্ষায় দেখা গিয়েছে যারা নিকট আত্মীয়ের সাথে যৌনসংসর্গ করে তাদের বেশীর ভাগই তা নেশা অবস্থায় বা মাতাল অবস্থায় করে । এ ছাড়া যারা HIV তে আক্রান্ত হয় তাড়া তো প্রায় সবাই মদ্য পানকারি । যা খেলে মানুষ তার হোশ হারায় সে খাদ্য কিভাবে ভালো হতে পারে। এ কারনে ইসলামে মদ্যপান কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ ।

সাধারন হিন্দুদের মধ্যে যদিও মদ পান করা কে কোনো ঘৃন্য কাজ বলে মনে করা হয় না কিন্তু হিন্দু ধর্মের প্রধান ধর্ম গ্রন্থ বেদে মদ্য পান থেকে দূরে থাকার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। যেমন ঋকবেদে ১০।৩৪।১৩ শ্লোকে বলা হয়েছে “মদ পান করার পর মদের নেশা পানকারির হৃদয়ে স্থান লাভের জন্য লড়াই শুরু করে”। অর্থাৎ মদ পান করার ফলে মদের নেশা মানুষের মন দখল করে নেয় ফলে সে ভালো-খারাপ, পাপ-পুন্য সব কিছুই ভুলে যায় এবং নোংরা কাজে লিপ্ত হয়। তাই মদের নেশা যাতে মনে স্থান করতে না পারে তার জন্য মদ থেকে দূরে থাকতে হবে।

নারীদের পর্দা বা হিজাব:

মুসলিম ও এবং অমুসলিমদের মধ্যে একটি ভুল ধারনা প্রচলিত আছে যে ইসলাম নারীদের ছোটো করে রাখে, তাদের পর্দায় রাখে। এটা আসলে তারা তাদের অজ্ঞানতার কারনে বলে থাকে। ইসলাম শুধু নারীদের নয় পুরুষদেরও পর্দার কথা বলে । আর প্রথমে পুরুষদের কথা বলা হয়েছে তার পর নারীদের। যেমন কুরানের ২৪ নম্বার সুরার ৩০ নম্বার আয়াতে পুরুষদের পর্দার কথা বলা হয়েছে। এর পরের আয়াতে অর্থাৎ ৩১ নম্বার আয়াতে নারীদের পর্দার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যদি পুরুষ এবং নারী উভয়ই শরীর ঢেকে রাখে তাহলে সমাজ থেকে ধর্ষন, ব্যভিচার, অবৈধ সম্পর্ক অনেক কমে যাবে। সৌদি আরব ধর্ষন, ব্যভিচা্র বা অনান্য নোংরামীতে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে। এর কারন হল পর্দা এবং ইসলামী শরিয়তের বাস্তবায়ন।

হিন্দু ধর্মেও নারীদের পর্দার কথা বলা হয়েছে। যেমন- যেহেতু ব্রহ্মা তোমাদের নারী করেছেন তাই দৃষ্টিকে অবনত রাখবে, উপরে নয়। নিজেদের পা সামলে রাখো। এমন পোষাক পড়ো যাতে কেউ তোমার দেহ দেখতে না পায় (ঋকবেদ ৮।৩৩।১৯)।

উপনিষদে ঈশ্বর, আল্লাহ ও মূর্তি পূজা সম্পর্কে।

ছান্দোগ্য উপনিষদে (৬/২) আছে — ” একমেবদ্বিতীয়ম্‌ ” তিনি এক, অদ্বৈত।
শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ (৬/৮) আছে– ” ন তস্য কারযং করণঞ্চ বিদ্যতে ন তৎসমশ্চাব্যধিকশ্চ দৃশ্যতে ।” সরলার্থ— পরমেশ্বরের শরীর নেই, ইন্দ্রিয়ও নেই,তাঁর সমান বা তাঁর থেকে শ্রেষ্ঠ কেউ নেই।
শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের (৬/৯) শ্লোকে আছে– ” ন চাস্য কশ্চিৎ জনিতা ন চাধিপঃ।” সরলার্থ— তাঁর কোনও জনক বা অধিপতি নেই।
শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের (৪/১৯) শ্লোকে আছে– ” ন তস্য প্রতিমা অস্থি।” সরলার্থ —– সেই পরমেশ্বর অখণ্ড এবং অদ্বিতীয়, এজন্য তাঁর প্রতিমা বা প্রতিকৃতি নেই।
শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের (৪/২০) শ্লোকে আছে– ” ন সন্দৃশে তিষ্ঠতি রূপমস্য ন চক্ষুষা পশ্যতি কশ্চনৈনম্‌ ।” সরলার্থ— এই পরমেশ্বরের স্বরূপ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয়, কেউই তাঁকে চক্ষু দ্বারা দর্শন করতে পারে না। ( এই সমস্ত শ্লোকের বাংলা উচ্চারণ ও সরলার্থ গ্রহণ করা হয়েছে অতুলচন্দ্র সেন অনূদিত “উপনিষদ” থেকে।)

ভাগবদ্গীতায় ঈশ্বর, আল্লাহ ও মূর্তি পুজা সম্পর্কে।

ভাগবদ্গীতার সপ্তম অধ্যায়ের ২০ নং শ্লোকে আছে—- “যারা বস্তগত আকাঙ্ক্ষার দ্বারা বুদ্ধিভ্রষ্ট হয়েছে তারা দেবতাসমূহের পূজা করে; সত্যিকার ঈশ্বরের পরিবর্তে বিভিন্ন দেবতাই বস্তবাদীদের আরাধ্য।”(৭-২০)
ভাগবদ্গীতার দশম অধ্যায়ের ৩ নং শ্লোকে আছে—- “যে আমাকে জন্মরহিত, সূত্রপাতরহিত এবং সমগ্র জগতের একমাত্র অধিশ্বর হিসেবে জানে ( সে-ই সফলকাম )।” (১০-৩)
হিন্দুদের সবচেয়ে জনপ্রিয় ধর্মগ্রন্থ হল ভাগবদ্গীতা আশ্চর্যজনকভাবে সেখানে মূর্তিপূজাকে সমর্থন করা হয়নি।

বেদ ঈশ্বর, আল্লাহ ও মূর্তি পূজা সম্পর্কে।

যজুর্বেদের ৩২ নং অধ্যায়ের ২ নং শ্লোকে আছে – ‘ন তস্য প্রতিমা অস্তি।’ অর্থাৎ… ‘স পরমেশ্বর অখণ্ড ও অদ্বিতীয়, এজন্য তাঁর প্রতিমা বা প্রতিকৃতি নেই।’
যজুর্বেদের ৪০ নং অধ্যায়ের ৭ নং শ্লোকে আছে – ‘স পরযগাছ ক্রমকায়মব্রণ মস্রাবিরং ‘অর্থাৎ… ‘তিনি প্রাকৃত শরীররহিত, অক্ষত, স্নায়ুরহিত’
যজুর্বেদের ৪০ নং অধ্যায়ের ৮ নং শ্লোকে আছে – ‘অন্ধং তমঃ প্রবিণন্তি যে হ সংভূতিমপাসতে।’ অর্থাৎ… ‘যারা অবিদ্যা কাম্য কর্মের বীজস্বরূপ প্রকৃতির উপাসনা করে,তারা অন্ধকার সংসারে প্রবেশ করে।’ এর অর্থ— যারা জল, বায়ু, অগ্নি, চন্দ্র, সূর্য ইত্যাদি প্রাকৃতিক জিনিসের উপাসনা করে তারা অন্ধকারে পতিত হয়।
ঋগ্বেদের প্রথম মণ্ডল, ১৬৪ সূক্ত, ৪৬ নং শ্লোকে আছে– ‘একং সদ্ধিপ্রা বহুধা বদন্ত্যগ্নিং…’। সরলার্থ— ঋষিরা এক ঈশ্বরকে বহু নামে ডাকেন। সত্য হল এক। এক ঈশ্বর। ঋষিরা একে বহু নামে ডাকেন। ঋগ্বেদে সর্বশক্তিমান স্রষ্টার প্রায় তেত্রিশটি ভিন্ন ভিন্ন গুনের কথা প্রকাশিত হয়েছে।
ব্রহ্মা = স্রষ্টা : ঋগ্বেদ, দ্বিতীয় মণ্ডল, সূক্ত ১, শ্লোক ২— সর্বশক্তিমান স্রষ্টাকে ঋগ্বেদে কখনও কখনও ব্রহ্মা বলা হয়েছে। ব্রহ্মা’ শব্দটির অর্থ ‘স্রষ্টা। এর আরবি প্রতিশব্দ হল ‘খালিক’। ইসলামে সর্বশক্তিমান আল্লাহকে খালিক বলা হয়। বেদে বলা হয় ব্রহ্মা। কিন্তু প্রশ্ন হল, ব্রহ্মার চারটি মাথার কল্পনা কোথা থেকে এল?
যজুর্বেদের ৩২নং অধ্যায়ের ২নং শ্লোকে আছে– ‘ন তস্য প্রতিমা অস্তি।’ সরলার্থ—“অদ্বিতীয় পরমেশ্বরের কোনও প্রতিমা বা প্রতিকৃতি নেই।’ অর্থাৎ, পরমেশ্বরের চারটি মাথার কল্পনা এই শ্লোকের পরিপন্থী।
শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের তৃতীয় অধ্যায়ের ১০নং শ্লোকে আছে— ‘তদরূপমনাময়’। সরলার্থ—“তিনি অরূপ (নিরাকার) ও অনাময় (নীরোগ)।’ ধর্মগ্রন্থে যাঁকে অরূপ বা নিরাকার বলা হল, পরবর্তীকালে তাকে চারটি মাথাযুক্ত শরীরী অবয়ব দান করা হল কোন উদ্দেশ্যে?
বিষ্ণু = রক্ষাকারী বা পালনকর্তা : ঋগ্বেদ, দ্বিতীয় মণ্ডল, সূক্ত ১, শ্লোক ৩… সর্বশক্তিমান স্রষ্টাকে ঋগ্বেদে কখনও কখনও বিষ্ণু বলা হয়েছে। ‘বিষ্ণু’ শব্দের অর্থ রক্ষাকারী বা পালনকর্তা। এর আরবি প্রতিশব্দ হল ‘রব’। বিষ্ণুকে যদি স্রষ্টা ভাবা হয় তাহলে তার চারটি বাহুর কল্পনা করা হল কেন? তার কোনও বাহুতে ‘চক্র’, আবার কোনও বাহুতে ‘শঙ্খ’ এল কোথা থেকে? যাঁর কোনও রূপ নেই, সেই সর্বশক্তিমান স্রষ্টাকে রূপের বাঁধনে বাঁধা, ইসলামে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। শুধু ইসলামে সেটা নিষিদ্ধ নয়, উপনিষদে সেটা নিষিদ্ধ, শ্রীমদ্ভাগবতেও সেটা নিষিদ্ধ।

উপনিষদে আছে

— দিব্যো হ্যমূর্তঃ পুরুষঃ সবাহ্যাভ্যন্তরে হ্যজঃ। অপ্রাণা হ্যমনঃ শুভদ্রা হ্যক্ষরাৎ পরতঃ পরঃ।। (মুণ্ডক উপনিষৎ : দ্বিতীয় মুণ্ডক : প্রথম খণ্ড : শ্লোক ২)।
সরলার্থ—“সেই জ্যোতিঃস্বরূপ পুরুষের কোনও মূর্তি বা আকার নেই। তিনি বাইরে ও ভিতরে সর্বত্র বিদ্যমান, তিনি জন্মরহিত এবং প্রাণের ক্রিয়াবর্জিত, ইন্দ্রিয়ের প্রধান মনও তার নেই। তিনি শুদ্ধ এবং স্থূল প্রকৃতি হতে | শ্রেষ্ঠ যে অব্যাকৃত প্রকৃতি (অক্ষর) তা হতেও শ্রেষ্ঠ।” (উপনিষদ , রণব্রত সেন , পৃষ্ঠা – ২৬৩)
শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের চতুর্থ অধ্যায়ের প্রথম শ্লোকে আবার দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করা হয়েছে– ‘য একোহবর্ণো…” সরলার্থ– সর্বশক্তিমান স্রষ্টা এক এবং বর্ণরহিত (তার কোনও রূপ নেই)। (ওই, পৃষ্ঠা ৪০৭) যাঁর রূপ নেই, তার প্রতিকৃতিও নেই, তার প্রতিমাও নেই।
শ্রীমদ্ভাগবতে আছে— অহং সর্বেষু ভূতেষু ভূতাত্মবস্থিতঃ সদা। তমবজ্ঞায় মাং মত্যঃ কুরুতে হর্চা বিড়িম্বনম।।২১ যমাং সর্বেষু ভূতেষু সন্ত মাত্মানমীশ্বরম। হিত্বাৰ্চাং ভজতে মৌঢ়েঢ়ুস্মন্যব ভূজুহতিসঃ।।২২
সরলার্থ– “ভগবানই সর্বভূতে বর্তমান এবং সকল প্রাণীর আত্মা তথা অধীশ্বর। তাঁকে মূঢ়তাবশত পরিত্যাগ করে প্রতিমাপূজা ভস্মে ঘৃতাহুতি নিক্ষেপের মত বিফল প্রচেষ্টা। এ ধরনের লক ঈশ্বরবিদ্বেষী এবং বৃথাভিমানী, ভিন্নদর্শী এবং সর্বভূতের জাতবৈরী জীব। সে শান্তি পায় না।”
(শ্রীমদ্ভাগবত, ৩য় স্কন্ধ, ২৯ অধ্যায় ; সম্পাদনা : রণব্রত সেন , পৃষ্ঠা -১৫৪)
এখানে স্পষ্টই ঘষণা করা হল যারা প্রতিমা পূজা করেন তাঁরা ‘ঈশ্বরবিদ্বেষী’। তারা পৃথিবীতে শান্তি পাবেন না, মৃত্যুর পরেও শান্তি পাবেন না। ইসলামেও প্রতিমাপূজাকে চিরতরে নিষিদ্ধ ঘষণা করা হয়েছে। আল্লাহ এক এবং অদ্বিতীয়। হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলিতেও তার একত্বের কথা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে বারে বারে।
আলকিত বধ নিয়ে কেউ যদি উভয় ধর্মের ধর্মগ্রন্থসমূহ পাঠ করেন তাহলে তিনি দুটি ধর্মের গভীরে প্রবাহিত অন্তর্নিহিত সাদৃশ্যের ফল্গুধারাটি উপলব্ধি করতে পারবেন। অংশীবাদিত্বের পলিকেও তিনি অনায়াসে দুরীভূত করতে পারবেন। দেখবেন, দুটি ধর্মেই একেশ্বরবাদের কথা আছে— আছে ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়। তার কোনও আকার নেই—তিনি সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন- তার কোনও উপমা নেই।

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   সমাজে প্রচলিত কিছু মারাত্মক ভুল জেনে নিই ।
হিন্দুধর্মের মহাপুরু বা অবতার। সাধারণ হিন্দুদের মতে অবতার।

সাধারণ হিন্দুদের মধ্যে অবতার সম্পর্কে নিম্নোক্ত ধারণা বর্তমান। সংস্কৃত ‘অবতার’ শব্দটি ভাঙলে পাওয়া যায় ‘অব’ ও ‘তার’। অব’-এর অর্থ ‘নিম্ন’ এবং ‘তার’-এর অর্থ ‘অবতরণ’। তাই ‘অবতারে’র পূর্ণ অর্থ নিম্নে অবতরণ”। Oxford Dictionary’-তে “Avatar’-এর যে অর্থ আছে তা হল এই রকম : “(In Hindu mythology) descent of a deity or released soul to earth in bodily form.”
অর্থাৎ, হিন্দুপুরাণ অনুযায়ী অবতারের অর্থ হচ্ছে, কোনও দেবদেবী বা মুক্ত আত্মার দেহধারণ করে মর্ত্যে আগমন।সাধারণ হিন্দুরা একে সহজ করে ভাবেন। ভগবান মানবদেহ ধারণ করে যখন মর্ত্যে আগমন করেন, তখনই একজন অবতারের আবির্ভাব ঘটে।
সাধারণ হিন্দুরা মনে করেন, ধর্ম রক্ষা করার জন্য, উদাহরণ সৃষ্টির জন্য অথবা মানবজীবনের নিয়মনীতি নির্ধারণের জন্য ভগবান দেহধারণ করে মাটির পৃথিবীতে নেমে আসেন। হিন্দুদের ‘শ্রুতি’ পর্যায়ের সবচেয়ে প্রামাণিক ও পবিত্র ধর্মগ্রন্থ বেদে কিন্তু অবতারের উল্লেখ নেই। অবতারের উল্লেখ আছে ‘স্মৃতি’ পর্যায়ের গ্রন্থ পুরাণ ও মহাকাব্যে।
অবতারের কথা আছে হিন্দুদের জনপ্রিয় ও বহুল পঠিত ধর্মগ্রন্থে।
ভাগবদ্গীতার ৪ অধ্যায়ের ৭-৮ শ্লোকে আছে – “যখনই যেখানে ধর্মপ্রাণতার অভাব ঘটে, অধর্ম উত্থিত হয়, তখন সেখানে আমি প্রকাশিত হই। ভালোকে রক্ষা করার জন্য,খারাপকে বিনাশ করার জন্য এবং ধর্মকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমি প্রতিটি যুগেই জন্মগ্রহণ করি।”
ভাগবত পুরাণে (৯ : ২৪ : ৫৬) আছে – “যখন ধর্মপ্রাণতার অবনতি ঘটে এবং যখন পাপ বৃদ্ধি পায়, তখন গৌরবময় প্রভুর আবির্ভাব ঘটে।”
বেদ এবং ইসলামে অবতারের কোনও প্রসঙ্গ নেই, আছেন বার্তাবাহক।
ইসলাম কখনও বিশ্বাস করে না যে সর্বশক্তিমান স্রষ্টা মানবদেহ ধারণ করে মানুষের মাঝে অবতরণ করেন। বরং তিনি মানুষের মধ্য থেকে মানুষকে মনোনীত করেন তার বার্তাবাহক হিসেবে এবং সেই বার্তাবাহক বা পয়গম্বরের মাধ্যমে তার বাণী পৌঁছে দেন সমস্ত মানুষের মধ্যে। এই বার্তাবাহককে বলা হয় আল্লাহর রসূল।
আগেই বলেছি, ‘অবতার’ শব্দের অর্থ নিম্নে অবতরণ। পণ্ডিতরা অবশ্য মনে করেন ‘নিম্নে অবতরণ’ মানে আকাশ থেকে পড়া নয়। অবতার মানুষের মধ্যে থেকেই মনোনীত হন এবং তিনি ঈশ্বরের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক স্থাপন করেন। বেদের বিভিন্ন জায়গায় এই মনোনীত মহাপুরুষদের কথা বলা হয়েছে।
যদি আমরা ভাগবদ্গীতা ও পুরাণের সঙ্গে বেদের সামঞ্জস্যপূর্ণ আলোচনা করি তাহলে দেখব ভাগবদ্গীতা ও পুরাণে অবতার বলতে আসলে মনোনীত মহাপুরুষদের বোঝানা হয়েছে। ইসলামে মনোনীত মহাপুরুষদের রসূল বলা হয়।

হিন্দু ধর্মগ্রন্থ বেদ ও পুরাণে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)।

প্রাচীন ভারতীয় ধর্মগ্রন্থ ভবিষ্য পুরাণে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল যে ‘মহামদ’ নামে এক মহাপুরুষ মরুভূমিতে আপন দলবল-সহ আবির্ভূত হবেন এবং তিনি জগতের যাবতীয় কলুষনাশ করবেন ।

হিন্দু ধর্মগ্রন্থ বেদ ও পুরাণে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)।
এতস্মিন্নন্তরে ম্লেচ্ছ আচার্যেন সমন্বিতঃ। মহামদ ইতি খ্যাতঃ শিষ্যশাখা সমন্বিতঃ(৫)। নৃপশ্চৈব মহাদেবং মরুস্থল নিবাসিনম্। গঙ্গা জলৈশ্চ সংস্নাপ্য পঞ্চগব্য সমম্বিতৈঃ চন্দনা দিভিরভর্চ তুষ্টাব মনসা হরম্(৬)। নমস্তে গিরিজানাথ মরুস্থল নিবাসিনে। ত্রিপুরাসুর নাশায় বহুমায়া প্রবর্তিণে(৭)। লিঙ্গচ্ছেদো শিখাহীন শ্মশ্রুধারী সদুষকঃ। উচ্চালাপী সবর্ভক্ষী ভবিষ্যতি জননাময়(২৬)। (ভবিষ্যপুরাণ, প্রতিসর্গ পর্ব, ৩য় খণ্ড, ৩য় অধ্যায়, শ্লোক নং ৫, ৬, ৭, ২৬)

সরলার্থ :একজন ম্লেচ্ছ আচার্য (বিদেশে অবস্থিত এবং বিদেশি ভাষায় বাক্যালাপকারী) শিষ্যদের নিয়ে আবির্ভূত হবেন। তার নাম হবে মহম্মদ এবং তিনি মরুস্থলনিবাসী। গঙ্গাজলের দ্বারা (বহমান পানিতে অজু করে) পঞ্চগব্য-সহ (নামাজ দ্বারা) মনের আনন্দ লাভ করবেন। হে মরুস্থলের প্রভু, তোমার প্রতি আমার স্তুতিবাদ। তুমি জগতের সমুদয় কলুষ নাশ করার বহু উপায় জানো, তোমাকে নমস্কার। হে পবিত্র পুরুষ। আমাকে তোমার চরণতলে স্থান দাও। তার লিঙ্গের অগ্রভাগ ছেদিত, তিনি টিকিবিহীন এবং তিনি দাড়ি রাখবেন। উচ্চস্বরে ধ্বনি করবেন (আযান দেবেন) এবং সকলকে আশ্রয়দান করবেন।

হিন্দু ধর্মগ্রন্থ বেদ – এ মহম্মদ (সাঃ)।

অথর্ববেদের ‘কুন্তাপ সূক্তে’ বিশ্বনবি মহম্মদ (সাঃ)-এর আবির্ভাবের পূর্বাভাস স্পষ্ট ইঙ্গিতে উচ্চারিত হয়েছে অথর্ববেদের ২০শ কাণ্ডের একত্রিংশ (৩১) সূক্তকে কুন্তাপ সূক্ত বলা হয়। ‘কুন্তাপ’ শব্দটি বিবিধ অর্থে ব্যবহৃত এবং প্রতিটি অর্থই গভীরভাবে ব্যঞ্জনাময়।

‘কুন্তাপ’ শব্দটির অর্থ ‘দুঃখ ও কষ্ট ধ্বংসকারী’ পৃথিবীর সমস্ত দুঃখের প্রতিকারের উদ্দেশ্যে এই সুক্ত গীত হয়। ইসলামের আদর্শ এবং মহম্মদ (সাঃ)-এর আলোকিত শিক্ষাই পৃথিবীর সমস্ত দুঃখ মোচনের একমাত্র উপায়। তার শিক্ষা মানবতার জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।

‘কুন্তাপে’র অর্থ ‘শান্তির বার্তাবাহক। কুন্তাপের অপর অর্থ ‘শান্তির বার্তাবাহক’। মহম্মদ (সাঃ) তো পৃথিবীর বুকে শান্তির বার্তাবাহক। তাঁকে সমগ্র বিশ্বের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ প্রেরণ করা হয়েছিল।

‘কুন্তাপ’ শব্দের অন্য একটি অর্থ ‘উদরে লুকানো গ্রন্থি ‘কুন্তাপ’ শব্দের অন্যতম অর্থ হল ‘উদরে লুকানো গ্রন্থি’। পণ্ডিতরা মনে করেন :

“পৃথিবীর নাভিপ্রদেশ অথবা মাঝখানে অবস্থিত ‘মক্কা’ নগরী হল কুন্তাপ। আবার ‘মক্কা’ শব্দের অন্য অর্থ ‘উদর’। কোরআনে ‘মক্কা’কে ‘বাক্কা’-ও বলা হয়েছে, যার অর্থ ‘বৃক্ষ’। ‘কুন্তাপ’ শব্দটি ‘মক্কা’ ও ‘বাক্কা’—এই উভয় অর্থেই প্রযোজ্য। একজন মানুষ মায়ের উদর এবং বক্ষ—এই দুটি স্থানেই লালিত হয়। তাই কুন্তাপের মধ্য দিয়ে বোঝানো হয়েছে মানবজাতিকে লালন করার দুগ্ধ মক্কাভূমিতেই আছে। যে তার মাকে চিনতে পারবে, সে-ই তার কাছে যাবে।”[Mohammad in World Scriptures (Adam Publishers, Delhi) pages 68–69]

কুন্তাপ সূক্তের প্রথম মন্ত্র (খিলানি)।

ইদং জনা উপশ্রুত নরাশংস স্তবিষ্যতে। ষষ্টিং সহস্রা নবতিং চ কৌরম আ রুশমেষু দদ্মহে(১)। (অথর্ববেদ : ২০শ কাণ্ড, ৯ম অনুবাক, ৩১ সূক্ত, শ্লোক ১)

‘নরাশংস স্তবিষ্যতে’-এর অর্থ ‘মানবকুলে তিনি হবেন প্রশংসনীয়’। ‘মহম্মদ’ শব্দের আক্ষরিক অর্থই হল ‘প্রশংসনীয়’। অর্থাৎ, এই শব্দগুচ্ছের মধ্য দিয়ে মানবকুলের সবচেয়ে প্রশংসনীয় মানুষটি যে ধরার বুকে আবির্ভূত হতে চলেছেন তার স্পষ্ট ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

‘কৌরম’ শব্দের দুটি অর্থ : যিনি শান্তি বিস্তার করেন, যিনি দেশত্যাগ করেন। ‘কৌরম’ শব্দের দুটি অর্থই মহম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে প্রযোজ্য। নিখিল জগতের প্রতিপালক সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাকে শান্তির বার্তাবাহক হিসেবে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন। এই শান্তির বার্তাবাহক মক্কার অবিশ্বাসীদের অত্যাচারে ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ২০ জুন মাতৃভূমি ত্যাগ করে মদিনায় চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। একে ‘হিজরত’ বলে।

‘রুশমেষু’ শব্দের অর্থ নবি (সাঃ)-এর শত্রু। উপরের এই মন্ত্রের অনুবাদ করতে গিয়ে পণ্ডিত রাজারাম লিখেছেন : “তোমরা শোনো! তিনি হলেন সমস্ত মানুষের মধ্যে প্রশংসনীয়। ষাট হাজার নব্বই জনের মধ্যে আমরা সেই ‘কৌরম’কে বরণ করে নেব।” ঐতিহাসিকদের মতে, তখন মক্কার জনসংখ্যা ছিল ষাট থেকে সত্তর হাজারের মতো।

কুন্তাপ সূক্তের দ্বিতীয় মন্ত্র।

উস্ট্রা যস্য প্রবাহণো বধুমন্তো দ্বির্দশ। বরস্মা রথস্য নি জিহীড়তে দিব ঈষমাণা উপস্পৃশঃ(২) এই উষ্ট্র-আরোহী ঋষি দ্বাদশ পত্নীধারী হবেন, যিনি রথে আরোহণ করে স্বর্গে ভ্রমণ করবেন।

এই স্বর্গ ভ্রমণ প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক রফিকউল্লাহ লিখেছেন – “স্বর্গ ভ্রমণ ইসলামের ইতিহাসে ‘মিরাজ’ বা মেরাজ নামে সুপরিচিত। ‘মিরাজ’ শব্দের অর্থ উর্ধ্বগমন বা স্বর্গভ্রমণ। ৬২১ খ্রিস্টাব্দের রজব মাসের ২৭ তারিনে তাঁর এই মিরাজ বা স্বর্গ ভ্রমণ অনুষ্ঠিত হয়। গভীর রাতে যখন তিনি কাবাগৃহের চত্বরে ঘুমোচ্ছিলেন, তখন জিবরাইল (আঃ) তার ঘুম ভাঙালেন। হজরত দেখলেন, অদূরে ক্ষিপ্রগতি ডানাবিশিষ্ট অশ্বের আকৃতি জ্যোতির্ময় স্বর্গীয় বাহন ‘বোরাক’ অপেক্ষা করছে। স্বর্গীয় দূত জিবরাইল (আঃ)-এর সহায়তায় তিনি ওই স্বর্গীয় অশ্ব বোরাকে আরোহণ করে প্রথম মক্কার মসজিদুল-হারাম (কাবাশরিফ) থেকে বায়তুল মোকাদ্দাস বা জেরুজালেমের মসজিদে গমন করলেন।…. তারপর একে একে সাত আসমান অতিক্রম করলেন। …… তারপর বেহেস্ত, দোজখ পরিদর্শন করে তিনি তাঁর পরম স্রষ্টা ও পরমবন্ধু জ্যোতির্ময় আল্লাহতায়ালার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন।” (ইসলামের ইতিহাস ; পৃ. ৩৮-৩৯)

কুন্তাপ সূক্তের তৃতীয় মন্ত্র।

এষ ইষায় মামহে শতং নিষ্কান দশ স্রজঃ। ত্ৰীণি শতান্যবর্তং সহস্রা দশ গনাম(৩)। ‘মামহে’ শব্দের অর্থ মহম্মদ (সাঃ)। ‘শতং নিষ্কান’-এর অর্থ একশো স্বর্ণমুদ্রা। এখানে ‘স্বর্ণমুদ্রা’ বলতে সংসারত্যাগী, আল্লাহ-বিশ্বাসী একদল সাহাবিকে বোঝানো হয়েছে, যারা ইতিহাসে ‘আসহাবে সুফফা’ নামে খ্যাত।

‘দশ স্বজঃ’-এর অর্থ দশটি জপমালা। এখানে বেহেশতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজন বিখ্যাত সাহাবির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যারা ইতিহাসে ‘আশারা মোবাশ্বারা’ হিসেবে খ্যাত।

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   কালেমার অপরিহার্য ৭ টি দাবী

‘ত্রীণি শতান্যবর্তাং’-এর অর্থ তিনশো অশ্ব। বদর যুদ্ধে (৬২৪ খ্রিঃ) অংশগ্রহণকারী সাহাবাদের বোঝানো হয়েছে। তাঁদের প্রকৃত সংখ্যা ছিল তিনশো তেরো।

সহস্রা দশ গোনম-এর অর্থ দশ হাজার গোরু। অষ্টম হিজরিতে মহম্মদ (সাঃ)-এর যে দশ হাজার সাহাবি ছিল, এখানে তাদের কথাই উল্লেখ করা হয়েছে। বেদ-এ গোরু পবিত্রতার প্রতীক। অন্য অর্থে, গোরু বিজয়ের স্মারক।

এই শ্লোকের অনুবাদ করতে গিয়ে পণ্ডিত রাজারাম লিখেছেন – “তিনি মামহ ঋষিকে দিলেন একশো স্বর্ণমুদ্রা, দশটি জপমালা, তিনশো ঘোড়া এবং দশ সহস্র গোরু।”

কুন্তাপ সূক্তের চতুর্থ মন্ত্র।

বচ্যস্ব রেভ বচ্যস্ব বৃক্ষে ন পক্বে শকুনঃ। নষ্টে জিহ্বা চৰ্চরীতি ক্ষুরো ন ভুরিজোরিব(৪)। মর্মার্থ : তিনি এবং তাঁর অনুগামীরা সর্বদা প্রার্থনার প্রতি মনোযোগী। এমনকি যুদ্ধক্ষেত্রেও তারা প্রভুর উদ্দেশে মাথা নত করেন।” এখানে মুসলমানদের দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের কথাই উল্লেখ করা হয়েছে।

কুন্তাপ সূক্তের পঞ্চম মন্ত্র।

প্র রেভাসো মনীষা বৃষা গাব ইবেরতে। অমোত পুত্ৰকা এষাম মোত গা ইবাসতে(৫)। এর অনুবাদ করতে গিয়ে পণ্ডিত রাজারাম লিখেছেন – “তিনি জগৎকে দিয়েছিলেন জ্ঞানের আলো, অর্থাৎ পবিত্র কোরআন।” (Mohammad in World Scriptures Adam Publishers, Delhi) Page 104)।

এই সমস্ত মন্ত্র থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে মহম্মদ (সাঃ)-এর আগমন সম্পর্কে হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলিতে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল তার জন্মের অনেক আগেই। অজ্ঞতাবশত অনেকে তা বোঝেননি, অথবা বুঝলেও নীরব থেকে গিয়েছেন। তিনিই যে আর্তমানবতার পথের দিশারি, তিনিই যে এপার-ওপার দুপারের পথপ্রদর্শক তা যে ব্যক্তি উপলব্ধি করবেন, তিনি ইহকাল ও পরকালে সফলকাম হবেন।

হিন্দুধর্মে মৃত্যুর পরের জীবন।
(১) হিন্দুধর্মে পুনর্জন্ম বা আত্মার দেহান্তরপ্রাপ্তি।

অধিকাংশ হিন্দু জন্ম, মৃত্যু এবং পুনর্জন্মে বিশ্বাস করেন। বিশ্বাস করেন, আত্মার দেহান্তরপ্রাপ্তির মতবাদে। এই মতবাদে আছে, মানুষের অতীত ‘কর্মফল’ অনুযায়ী জন্মলগ্নে মানুষে মানুষে বিভাজন রচিত হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একটা শিশু হয়তো সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে জন্মগ্রহণ করল, অন্য শিশু হয়তো বিকলাঙ্গ বা অন্ধ হয়ে জন্মগ্রহণ করল। জন্মলগ্নের এই পার্থক্যের কারণ হল তাদের পূর্ব ‘কর্ম’। তবে পার্থক্য যতই থাক প্রতিটি মানুষ কিন্তু তাদের পূর্বজন্মের পাপমোচনের সুযোগ পেতে পারে নবজন্মে।

এটি উল্লিখিত হয়েছে ভাগবদ্গীতায় (২ : ২২) –

“যেমন একজন মানুষ পুরনো পোশাক পরিত্যাগ করে নতুন পোশাক পরিধান করে, আত্মা তেমনি পুরনো দেহ ত্যাগকরে নতুন দেহ গ্রহণ করে।”

পুনর্জন্মের মতবাদ বৃহদারণ্যক উপনিষদেও (৪ : ৪ : ৩) আছে –

“যেমন একটা শুয়োপোকা কিলবিল করে ঘাসের ডগার উপরে উঠে একটি ঘাসের ডগা থেকে অন্য একটি ডগায় যায়, তেমনি আত্মা পুরনো শরীরকে ছেড়ে নতুন অস্তিত্বে প্রবেশ করে।”

(২) কর্ম : কার্যকারণ ও ফলের সূত্র।

‘কর্মে’র অর্থ কাজ। দেহ দ্বারা যে কাজ সম্পাদিত হয় এখানে শুধু সেই কাজের কথা বলা হয়নি, বরং মন দ্বারা যে কাজ সংঘটিত হয় এখানে সেই কাজের কথাও বলা হয়েছে। ‘কর্ম’ আসলে হল কার্যকারণ এবং ফলের সূত্র। কথায় বলে ‘যেমন কর্ম তেমনি ফল’।

চাষি যদি গম বপন করে, তাহলে ধানের আশা করতে পারে না। অনুরূপভাবে সৎচিন্তা এবং সৎকর্ম শুভফল প্রদান করে যা পরকালেও সৌভাগ্যের কারণ হয়। কিন্তু কু-চিন্তা, কু-বাক্য, কু-কর্ম ইহকালে এবং পরকালে অশুভ ফল বয়ে আনে।

(৩) ধর্ম : পবিত্র কর্তব্য।

‘ধর্ম’ কথাটির অর্থ সঠিক ও পবিত্র কর্তব্য। এই পবিত্র কর্তব্য শুধু ব্যক্তিবিশেষের জন্য সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না, এই কর্তব্য ছড়িয়ে দিতে হবে পরিবার, জাতি এবং সমগ্র বিশ্বের মাঝে। শুভ ‘কর্ম’ লাভ করতে গেলে ‘ধর্ম’-অনুযায়ী জীবন যাপন করতে হবে, নতুবা ফল অশুভ হবে। ‘কর্ম’ বর্তমান ও ভবিষ্যৎ উভয় জীবনকেই প্রভাবিত করে।

(৪) মোক্ষ : পুনর্জন্মের চক্র থেকে মুক্তি।

‘মোক্ষ’ কথাটির অর্থ হল পুনর্জন্মের চক্র থেকে মুক্তি। প্রতিটি হিন্দুর চরম লক্ষ্য হচ্ছে একদিন না একদিন পুনর্জন্মের চক্র থেকে মুক্তি লাভ করা। এটা ঘটবে তখনই যখন মানুষ শুভকর্ম করবে—অশুভ বা কুকর্ম করলে তাকে পুনর্জন্মের চক্রে আবর্তিত হতে হবে।

(৫) পুনর্জন্মের কথা বেদে উল্লিখিত হয়নি।

পুনর্জন্মের কথা বেদে স্বতঃসিদ্ধ বলে ধরে নেওয়া হয়নি, এমনকি উল্লিখিতও হয়নি। অথচ বেদ হিন্দুদের সবচেয়ে প্রামাণিক ধর্মগ্রন্থ। আত্মার দেহান্তরপ্রাপ্তির কথাও বেদে নেই।

(৬) পুনর্জন্ম বলতে পৃথিবীতে আবার জন্ম নয়, বরং মৃত্যুর পরের জন্মকে বোঝানো হয়েছে ।

সংস্কৃত ‘পুনঃ’ শব্দটির অর্থ ‘পরের বার’ বা ‘আবার’। আর ‘জন্ম’ মানে ‘জীবন ধারণ’। তাই ‘পুনর্জন্ম’-এর অর্থ ‘আবার জীবন ধারণ’। এর অর্থ অবশ্য আবার পৃথিবীতে জীবন্ত প্রাণী হিসেবে ফিরে আসা নয়।যদি কেউ বেদকে পাশে রেখে হিন্দুধর্মে পুনর্জন্মের ব্যাপারটি অধ্যয়ন করেন, তাহলে তিনি অনায়াসে বুঝতে পারবেন যে পুনর্জন্ম বলতে আবার পৃথিবীতে ফিরে আসার কথা বোঝানো হয়নি, বরং পরকালের জন্মকে বোঝানো হয়েছে।

পুনর্জন্মের কথা প্রাচীন ও প্রামাণিক বেদে নেই। একথা আছে অধিকতর নবীন হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলিতে। ওই সব ধর্মগ্রন্থের রচয়িতারা উপলব্ধি করেছিলেন যে ঈশ্বর তো কখনও অবিচার করেন না অথচ জন্মলগ্নে মানুষে মানুষে পার্থক্য রচিত হয়। এই পার্থক্যের কারণ তাদের পূর্ব কমফল। ইসলাম এর বুদ্ধিদীপ্ত এবং যুক্তিসঙ্গত উত্তর দিয়েছে।

(৭) বেদ-এ মৃত্যুর পরের জীবন।

বেদে মৃত্যুর পরের জীবনের কথা উল্লিখিত হয়েছে।

ঋগ্বেদ-এ আছে :

“এ মৃত্যব্যক্তির যে অংশ অজ অর্থাৎ জন্মরহিত, চিরকালই আছে, হে অগ্নি! তুমি সে অংশকে তোমার তাপ দ্বারা উত্তপ্ত করো, তোমার শিখা সে অংশকে উত্তপ্ত করুক। হে জাতবেদা বহ্নি! তোমার যে সকল মঙ্গলময়ী মূর্তি আছে, তাদের দ্বারা এ মৃত্যব্যক্তিকে পুণ্যবান লোকদের ভুবনে বহন করে নিয়ে যাও।” (১০ মণ্ডল; ১৬ সূক্ত; শ্লোক ৪ : অনুবাদ : রমেশচন্দ্র দত্ত :পৃ. ৪৫৯)

‘সুকৃতামু লোকম’–এই সংস্কৃত শব্দদ্বয়ের অর্থ ‘পুণ্যবান লোকদের ভুবন’ যা পরকাল বা স্বৰ্গকেই ইঙ্গিত করে।

ঋগ্বেদে এর পরবর্তী শ্লোকে আছে :

“হে অগ্নি! যে তোমার আহুতিস্বরূপ হয়ে যজ্ঞের দ্রব্য ভোজন করে আসছে, সে মৃতকে পিতৃলোকের নিকট প্রেরণ কর।… হে জাতবেদা! সে পুনর্বার শরীর লাভ করুক।” (১০ মণ্ডল : ১৬ সূক্ত : শ্লোক ৫ : ওই)

এই শ্লোকেও মৃত্যুর পরের জীবন সম্পর্কে ইঙ্গিত করা হয়েছে।

(৮) বেদে স্বর্গ ।

বেদ-এর বেশ কিছু জায়গায় স্বর্গের বর্ণনা আছে।

অথর্ব বেদ ৪ অধ্যায় ৩৪ স্তোত্র : ৬ শ্লোক (দেবী চাদ)।

“সেখানে থাকবে মাখনের স্রোতধারা আর তার তীরভূমিতে থাকবে মধু। পরিশ্রুত জলধারা বয়ে যাবে, থাকবে দুধ ও দই এবং সবই তোমার জন্য আনন্দদায়ক হবে। এই সবগুলি অর্জন করে তুমি তাোমার আত্মাকে ভিন্ন ভিন্নভাবে শক্তিশালী করতে পারবে।”

অথর্ব বেদ ৪ অধ্যায় : ৩৪ স্তোত্র : শ্লোক ২

“পার্থিব শরীর থেকে মুক্ত হয়ে তারা যাবে বুদ্ধিদীপ্ত আলোর জগতে। অগ্নি তাদের পুঃ অঙ্গকে পোড়াতে পারবে না। আনন্দের জগতে তারা প্রচুর রমণী লাভ করবে।”

বেদে নরক।

বেদে যে সংস্কৃত শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে তা হল-‘নরকাস্থানম’।

ঋগ্বেদে আছে : “বিদ্বান মিত্র ও বরুণের প্রিয় এবং ধ্রুব কর্মে যারা বাধা দেয়, সুন্দর ধনবিশিষ্ট ও তীক্ষ্ণদন্ত অগ্নি অত্যন্ত সন্তাপকর তেজ দ্বারা তাদের দগ্ধ করুন।” (৪ মণ্ডল : ৫ সূক্ত : ৪ শ্লোক)

হিন্দুধর্মে ঈশ্বরের প্রার্থনা। হিন্দুধর্মের অন্যতম প্রার্থনা সাষ্টাঙ্গ।

হিন্দুধর্মে প্রার্থনার অনেক রীতি আছে। সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল ‘সাষ্টাঙ্গ’। ‘স-অষ্ট-অঙ্গ’ থেকে এসেছে ‘সাষ্টাঙ্গ’। শরীরের আটটি অংশ দিয়ে ভূমি স্পর্শ করে এই প্রার্থনা করতে হয়। মুসলমানরা নামাযের মধ্যে সিজদা করার সময় যেমন করে, ‘সাষ্টাঙ্গ প্রণাম’ অনেকটা সেই রকম। এই সময় কপাল, নাক, দুটি হাতের তালু, দুটি হাঁটু এবং দুটি পায়ের দুটি বৃদ্ধাঙ্গুলি ভূমি স্পর্শ করে।

হিন্দুধর্মে মূর্তিপূজা নিষিদ্ধ।

অধিকাংশ হিন্দুই মূর্তিপূজায় মেতে থাকেন—মূর্তিপূজাটাকে ধর্ম বলে মনে করেন—অথচ হিন্দুধর্মগ্রন্থে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় সে কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

i) ভাগবদ্গীতায় আছে :“যাদের বস্তুগত আকাক্ষা দ্বারা বুদ্ধিনাশ হয় তারাই প্রতিমা পূজা করে।”(৭ম অধ্যায় : শ্লোক ২০)।

ii) শ্বেতাশ্বতর উপনিষদে আছে : ‘ন তস্য প্রতিমা অস্তি’ ‘অদ্বিতীয় পরমেশ্বরের কোনও প্রতিমা বা প্রতিকৃতি নেই। (৪র্থ অধ্যায় : শ্লোক ১৯)

iii) যজুর্বেদেও আছে : ‘ন তস্য প্রতিমা অস্তি’। (৩২ নং অধ্যায় : শ্লোক ২)

iv) যজুর্বেদের অন্য শ্লোকে আছে : “অন্ধং তম : প্রৰিণন্তি যেহসংভূতিমুপাসতে। ততো ভূয় ই তে তমো য উ সভৃত্যাং রতাঃ।”

যারা অবিদ্যা কাম্য কর্মের বীজস্বরূপ প্রকৃতির (অর্থাৎ জল, বায়ু, অগ্নি ইত্যাদির) উপাসনা করে তারা অন্ধকার সংসারে প্রবেশ করে, আর যারা ‘সত্যাং ’ অর্থাৎ সৃষ্ট পদার্থের (যেমন মূর্তি, গৃহ, গাড়ি ইত্যাদির) পূজা করে তারা তা থেকেও অধিক অন্ধকারে প্রবেশ করে। (যজুর্বেদ সংহিতা : ৪০ শ অধ্যায় : শ্লোক ৯)

অনুবাদকের সংযোজন :

উপনিষদে আছে : ‘দিবব্যা হ্যমূর্তঃ পুরুষঃ সবাহ্যাভ্যন্তরে হ্যজঃ। সরলার্থ : ‘সেই জ্যোতিঃ স্বরূপ পুরুষের কোনও মূর্তি বা আকার নেই। তিনি বাহিরে ও ভিতরে সর্বত্র বিদ্যমান, তিনি জন্মরহিত। (মুণ্ডক উপনিষৎ, দ্বিতীয় মুণ্ডক, প্রথম খণ্ড, শ্লোক ২ : অনুবাদ : অতুলচন্দ্র সেন, পৃঃ ২৬৩)।

যাঁর আকার নেই, তিনি বাইরে ও ভেতরে সর্বত্র বিরাজমান তার মুর্তি গঠিত হতে পারে না। মুর্তি গঠন করার অর্থ তাকে ক্ষুদ্র করা, কারণ ওই মূর্তির বাইরে পড়ে রয়েছে বিশাল বিশ্ব নিখিল।

শ্রীমদভাগবতে আছে – অহং সর্বেষু ভূতেষু ভূতাত্মবস্থিতঃ সদা। তমবজ্ঞায় মাং মত্যেঃ কুরুতে হর্চা বিড়িম। ১১ যোমাং সর্বেষু ভূতেষু সন্ত মাত্মাননীশ্বরম। হিত্বাৰ্চাং ভজতে মৌঢ়ে ভূখন্যেৰ ভূজুহেতিলঃ ।১৯

সরলার্থ : “ভগবানই সর্বভূতে বর্তমান এবং সকল প্রাণীর আত্মা তথা অধীশ্বর। তাকে মূঢ়তাবশত পরিত্যাগ করে প্রতিমাপূজা ভস্মে ঘৃতাহুতি নিক্ষেপের মতো বিয়া প্রচেষ্টা। এ ধরনের লোক ঈশ্বরবিদ্বেষী এবং বৃথাভিমানী ভিন্নদর্শী এবং সর্বভূতের জাতবৈরী জীব। সে শান্তি পায় না।”

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   সমাজে প্রচলিত কিছু জাল হাদিস বা হাদিসের নামে মিথ্যা জেনে নিই পর্ব ৪

(শ্রীমদ্ভাগবত, ৩য় স্কন্ধ, ২৯ অধ্যায়; সম্পাদনা : রণব্রতসেন, পৃ. ১৫৪)।

এই শ্লোক থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, যিনি সর্বভূতে বিরাজমান তাকে মূর্তি দ্বারা আবদ্ধ করে সংকীর্ণ অর্থে প্রকাশ করা যায় না। সব কিছুর মধ্যেই যখন তিনি, তখন মাটির একটা কাঠামোর মধ্যে তাকে বন্দি করা হয় কেন ? তাহলে যে সর্বভূতে তার অবস্থানটাই মিথ্যা হয়ে যায়। এই শ্লোকে আরও একটি কথা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করা হয়েছে যে মূর্তিপূজা ভস্মে ঘৃতাহুতি নিক্ষেপের মতো বিফল প্রচেষ্টা।

যে মূর্তিপূজা করল সে ঈশ্বরবিরোধী কাজ করল এবং সে সর্বভূতের জাতবৈরী অর্থাৎ শত্রুতে পরিণত হল। ইসলামধর্মেও মূর্তিপূজা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এখানে হিন্দু ও ইসলামধর্মের মধ্যে অন্তর্নিহিত সাদৃশ্যটা বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বোঝা গেল, অন্তঃসলিলা ফন্তু ধারার মতোই বিশ্বাসের একই স্রোতধারা বয়ে গেছে উভয় ধর্মের অন্তরে অন্তরে।

যাকাত ঃ
হিন্দুধর্মে দানশীলতা।

ইসলামে যেমন দরিদ্রকে দান করা ধর্মের অঙ্গ, হিন্দুধর্মেও তেমনি দরিদ্রকে দান করা অতি পুণ্যের কাজ।

১. ঋগ্বেদ-এ আছে – ‘উতো রয়ি : পৃণতো লোপ দস্যতা পূণন্মর্ডিোরং ন বিন্দুতে। (১০ মণ্ডল, ১১৭ সূক্ত, শ্লোক ১) সরলার্থ – “দাতার ধন হ্রাস হয় না। অদাতাকে কেউই সুখী করে না।” (ঋগ্বেদ সংহিতা ৪ অনুবাদ ; রমেশচন্দ্র দত্ত, পৃঃ ৬১২)

অর্থাৎ দান করলে কমে না, বরং দাতা সুখী হয়। দান করলে যে কমে না সে কথা যাকাতের মধ্যেও আছে। যাঁর আধ্যাত্মিক বোধ আছে তিনি জানেন, দানে সম্পদ বৃদ্ধি পায়।

পৃণীয় দিন্নধমানায় ব্যান্দ্রাঘীয়াংসমনু পশ্যেত পন্থা। আ হি বৰ্তন্তে রথ্যেব চক্ৰান্যমন্যমুপ তিন্ত রায়ঃ।(ঋগ্বেদ : ১০ মণ্ডল, ১১৭ সূক্ত, শ্লোক ৫)

সরলার্থ – “যাচককে অবশ্য ধন দান করবে। সে দাতা ব্যক্তি অতি দীর্ঘ পথপ্রাপ্ত হয়। রথে চক্র যেমন উর্ধাধোভাবে ঘূর্ণিত হয় সে রূপ ধন কখনও এক ব্যক্তির কাছে, কখনও অপর ব্যক্তির কাছে গমন করে অর্থাৎ এক স্থানে চিরকাল থাকে না।” (ওই, পৃঃ ৬১২)

“যে কেবল নিজে ভোজন করে, তার কেবল পাপই ভোজন করা হয়।” (ঋগ্বেদ-সংহিতা ; অনুবাদ : রমেশচন্দ্র দত্ত ১০ মণ্ডল, ১১৭ সূক্ত, শ্লোক ৬ ; পৃঃ ৬১২)।

অর্থাৎ, ভোজন করার সময় অভুক্ত অনাহারী মানুষকে দিয়ে খেতে হবে। অপরকে না দিয়ে শুধুমাত্র নিজের উদর পূর্তি করা পাপ। ইসলামধর্মেও অনাহারী ব্যক্তিকে আহার দান করার কথা এসেছে বারে বারে। নিজে খাওয়ার আগে প্রতিবেশীদের খোঁজ-খবর নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে সেখানে। দানশীলতার কথা ভাগবত গীতার ১৭ অধ্যায়ের ২০ নং শ্লোক এবং ১৬ অধ্যায়ের ৩ নং শ্লোকে উল্লিখিত হয়েছে।

সিয়াম : রোযা : উপবাস। হিন্দুধর্মের উপবাস।

হিন্দুধর্মেও উপবাসের কথা আছে। মনুস্মৃতি’ গ্রন্থের ৬নং অধ্যায়ের ২৪নং শ্লোকে একমাসব্যাপী উপবাসব্রত পালনের বিষয় উল্লিখিত হয়েছে। আরও বেশ কিছু শ্লোকে পরিশােধনের উপায় হিসেবে উপবাসের কথা বর্ণিত হয়েছে, মনুস্মৃতি ৪ নং অধ্যায়, শ্লোক ২২২ ও মনুস্মৃতি ১১ নং অধ্যায়, শ্লোক ২০৪

হজ্ব : তীর্থযাত্রা। হিন্দুধর্মের তীর্থযাত্রা।

হিন্দুধর্মে বিভিন্ন তীর্থস্থানের কথা উল্লিখিত হয়েছে।

i) ঋগ্বেদ-এ আছে ; ইলায়াস্তা পদে বয়ং নাভা পৃথিব্যা আঁধি (৩ মণ্ডল, ২৯ সূক্ত, শ্লোক ৪)“ইলা’ শব্দের অর্থ আল্লাহ। রাস্তার অর্থ স্থান। এতএব ইলায়া’ পাশের অর্থ আল্লাহ স্থান। নাভা’র অর্থ নাভি ৰা পৃথিবীর কেন্দ্রভূমি। অর্থাৎ, পৃথিবীর কেন্দ্রভূমিতে আল্লাহর স্থান বা তীর্থক্ষেত্র অবস্থিত।

মোনিয়ার উইলিয়ামস প্রণীত সংস্কৃত-ইংরেজি অভিধানে (২০০৬ সাঋেরপ) আছে ‘ইলয়াস্তা’ একটা তীর্থক্ষেত্রের নাম। কিন্তু এটা পৃথিবীতে কোথায় অবস্থিত তা কেউ জানে না।

ii) কোরআন শরিফে আছে – “নিশ্চয় মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম যে গৃহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা তো ৰক্কায়, তা শিসাপ্ত ও বিশ্বজগতের দিশারী।” (সূরা আল-ই-ইমরান : ৩ নং সূরা, আয়াত ৪৬) ‘বাক্কা’ মক্কারই অন্য নাম। মক্কা-ই পৃথিবীর নাভিপ্রদেশ ৰা কেন্দ্রে অবস্থিত। অথর্ববেদে ‘কুন্তাপ’ সূক্তে উল্লেখ আছে। সেখানে কুন্তাপ’ বলতে পৃথিবীর নাভি প্রদেশ বা মক্কা (বাক্কা) নগরীকে বোঝানো হয়েছে।

iii) ঋগ্বেদের ৩য় মণ্ডলের, ১৯ সূক্তের শ্লোক নরাশংস’ শব্দটির উল্লেখ আছে। পণ্ডিতরা মনে করেন এটি মহম্মদ (সাঃ)-এর প্রশংসাসূচক নাম। তাই বলা যায় ‘ইলয়াস্তা নিঃসন্দেহে মক্কা’।

iv) ঋগ্বেদের ১ মণ্ডলের ১২৮ সূক্তের ১নং শ্লোকে যে ইলম্পদ শব্দের উল্লেখ আছে তা আল্লাহর পবিত্র স্থান বা মক্কাকেই ইঙ্গিত করে।

ভাগবদ্গীতায় জিহাদ।

সমস্ত ধর্মের অনুগামীদের ‘চেষ্টা করতে’ অথবা অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভাগবদ্গীতায় আছে : “হে অর্জুন! যোগ অভ্যাস করো। যা সমস্ত কর্মের কৌশল স্বরূপ।” (২য় অধ্যায় , শ্লোক ৫০)।

ভাগবদ্গীতায় লড়াই বা যুদ্ধের নির্দেশ।

সমস্ত বড় ধর্মে অন্যায় এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মহাভারত একটি মহাকাব্য। হিন্দুদের কাছে এটি খুবই পবিত্র। এতে আছে কৌরব ও পাণ্ডব নামক দুই জ্ঞাতি ভ্রাতৃগোষ্ঠীর মধ্যে লড়াইয়ের কাহিনী। যুদ্ধক্ষেত্রে পাণ্ডবদের মুল যোদ্ধা অর্জুন আত্মীয়দের বিরুদ্ধে লড়াই করতে অনীহা প্রকাশ করেন। হত্যাকাণ্ডে তার বিবেক ভারাক্রান্ত হয়।

এই সময় কৃষ্ণ তাকে উপদেশ দেন এবং উদ্বুদ্ধ করেন। কৃষ্ণের সেই উপদেশমালা নিয়ে তৈরি হয় ভাগবদ্গীতা। গীতার বিভিন্ন শ্লোকে কৃষ্ণ অর্জুনকে উপদেশ দিয়েছেন শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। আত্মীয়ও যদি শত্রু হয়, তাকেও হত্যা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

১. ভাগবদ্গীতার প্রথম অধ্যায়ের ৪৩-৪৬ শ্লোকে বলা হয়েছে। 

৪৩) ও কৃষ্ণ, মানুষের পরিচালক, আমি শুনেছি যারা আত্মীয় পরিজনদের ধ্বংস করে তারা নরকে বাস করে।

৪৩) ‘হায়! অবাক লাগে যে রাজসুখ ভোগ করার জন্য আমরা নিজেরাই মহাপাপের কাজ করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

৪৫) যুদ্ধ করার পরিবর্তে আমি বরং ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রদের হাতে নিরস্ত্র অবস্থায় মারা যেতে চাই।’

৪৬) এ সমস্ত কথা বলে, তির-ধনুক পাশে ফেলে দিয়ে অর্জুন রথের উপর বসে পড়লেন। তার মন দুঃখে ভারাক্রান্ত হয়ে গেল।

২. উত্তরে কৃষ্ণ বললেন (ভাগবদ্গীতা : ২ নং অধ্যায় : শ্লোক ২, ৩)

২) প্রিয় অর্জুন, এমন মালিন্য তোমার মধ্যে এল কীভাবে? এই মনোভাব সেই মানুষের মানায় না যিনি জানেন জীবনের প্রগতিশীল মূল্যবোধ। এই মালিন্য কাউকে স্বর্গের দিকে নিয়ে যায় না, বরং অখ্যাতির দিকে নিয়ে যায়।

৩) হে বৎস পার্থ, মর্যাদাহানিকর দুর্বলতার কাছে আত্মসমর্পণ করো না। এটা তোমার মানায় না। হে অরিন্দম, হৃদয়ের ক্ষুদ্র দুর্বলতা ত্যাগ করে জেগে ওঠো।

৩. কৃষ্ণ আরও বললেন (ভাগবদগীতা : ২ নং অধ্যায়, শ্লোক ৩১-৩৩) :

৩১) “ক্ষত্রিয়ের কর্ম বিবেচনা করো। তোমার জানা উচিত ধর্মীয় নীতির ভিত্তিতে যুদ্ধ করা ছাড়া তোমার জন্য অধিকতর শুভকর্ম আর নেই। সুতরাং তোমার দ্বিধা করার প্রয়োজন নেই।

৩২) হে পার্থ! সেই ক্ষত্রিয়রাই সুখী যাদের কাছে না চাইতেই এমন যুদ্ধের সুযোগ চলে আসে যা কেবলমাত্র স্বর্গের দ্বারকেই উন্মুক্ত করে।

৩৩) “যদি তুমি এই ধর্মীয় যুদ্ধ না করো, তবে নিশ্চয়ই তুমি পাপে জড়িয়ে পড়বে কর্তব্যে অবহেলা করার কারণে এবং এই ভাবে যোদ্ধা হিসেবেও তুমি তোমার খ্যাতি হারাবে।’

৪. ভাগবদ্গীতায় শতাধিক এমন শ্লোক আছে যেখানে যুদ্ধ ও হত্যায় উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। যার সঙ্গে কোরআনের পূর্বোক্ত আয়াতের অদ্ভুতভাবে কিছুটা মিল আছে।

ধরুন আনুপূর্বিক প্রসঙ্গ উল্লেখ না করে কেউ যদি বলেন যে ‘ভাগবদ্গীতায় পারিবারিক সদস্যদের হত্যা করার ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে, তাহলে তিনি নারকীয় কাজ করবেন। কিন্তু আমি যদি বলি সত্য এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য অশুভশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করা অবশ্যকর্তব্য, তাহলে তার একটি প্রাসঙ্গিকতা থাকবে।

৫. আমার অবাক লাগে কোরআনে যখন অশুভশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার কথা থাকে বা অশুভ শত্রুকে বিনাশ করার কথা থাকে তখন ইসলামের কট্টর সমালোচকরা সে দিকে আঙুল তোলেন কীভাবে। আমার মনে হয় তারা ভাগবদ্গীতা, মহাভারত বা বেদের মতো পবিত্র গ্রন্থগুলি পাঠ করেননি।

৬. হিন্দুসহ বিভিন্ন ধর্মের সমালোচকরা কোরআন এবং নবি (সাঃ)-এর সমালোচনা করতে গিয়ে বলেন যে, জিহাদে যারা নিহত হন তাদের জন্য জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। কোরআন থেকে উদ্ধৃতি তোলার সঙ্গে সঙ্গে তারা বুখারি শরিফের ‘জিহাদ’ অধ্যায়ের (২ নং অধ্যায়) ৪৬ নং হাদিস উদ্ধৃত করেন- ‘আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে মুজাহিদকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যদি সে নিহত হয়, অন্যথায় সে বাড়ি ফিরে আসবে যুদ্ধলব্ধ সামগ্রী-সহ।

ভাগবদ্গীতাতে অনেক শ্লোক আছে যেখানে বলা হয়েছে যে কোনও ব্যক্তি পবিত্র যুদ্ধে মারা গেলে স্বর্গে প্রবেশ করবে। ভাগবদ্গীতার ২নং অধ্যায়ের ৩৭ নং শ্লোকে আছে – ‘হে কুন্তীর পুত্র! যদি তুমি যুদ্ধে নিহত হও তাহলে তুমি স্বর্গে প্রবেশ করবে অথবা যদি তুমি জয়ী হও তাহলে তুমি পার্থিব রাজত্ব ভোগ করবে। তাই ওঠো এবং দৃঢ় সংকল্পের সঙ্গে যুদ্ধ করো।

৭. অনুরূপভাবে ঋগ্বেদেও শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই এবং শত্রু বিনাশের কথা উল্লিখিত হয়েছে। ঋগ্বেদ সংহিতার ১ মণ্ডলের ১৩২ সূক্তের ২ নং থেকে ৬নং শ্লোকে যুদ্ধ ও শত্রু নিধনের কথা বারে বারে ঘোষিত হয়েছে। এই অংশের শেষ শ্লোকে আছে “হে ইন্দ্র ও পর্জন্য! তোমরা দুজনে অগ্রগামী হয়ে যে শত্রু আমাদের বিরুদ্ধে সেনা সংগ্রহ করে তাদের সকলকেই বিনাশ করো। বজ্র প্রহার দ্বারা তাদের সকলকেই বিনাশ করো।” (ঋগ্বেদ-সংহিতা, ১ মণ্ডল, ১৩২ সূক্ত, শ্লোক ৬; অনুবাদ : রমেশচন্দ্র দত্ত ; পৃ. ১৮৩)

MuslimPoint Organization

About MuslimPoint Organization

MuslimPoint একটি অনলাইন ভিত্তিক ইসলামী প্রশ্নোত্তর, গ্রন্থাগার, ব্লগিং, কুরআন, হাদিস, কুইজ এবং বিষয় ভিত্তিক রেফারেন্স প্ল্যাটফর্ম।

View all posts by MuslimPoint Organization →

5 Comments on “ইসলাম ও হিন্দু ধর্মের সাদৃশ্য বা মিল ,ব্যাখ্যা এবং দলিল বা রেফারেন্স সহ বিস্তারিত”

  1. পড়ে মনে হলো কমেন্ট করা প্রয়োজন। প্রথমত অনেক কিছু আছে গ্রহণযোগ্য ,তবে অনেক কিচ্ছু আছে ন্যাক্কারজনক ব্যাখ্যা , মোহাম্মুদ সম্পর্কে বেদ,পুরান বা অন্যান্য গ্রন্থ দিয়ে মিলানোর অপচেষ্টা, মূর্তিপূজা নিয়ে বেদ,গীতা ও উপনিষদে মিথ্যাচার করা। আপনাদের কেউ আলোচনাকরতে চাইলে আমার সাথে করতে পারেন। এইসব কাটছাট নিজের মতো বানাও গ্রন্থ কুরআনের মতো করানোর অপচেষ্টা ও কুরআনকে সত্য বানানোর অপচেষ্টা। এইসব লোকাল ব্যাখ্যা দিয়ে কিচ্ছু হবে না ,আলোচনা করতে চাইলে আমার সাথে করুন।

    মূর্তি ভগবান না!!!!!!! এটি কাঠ,মাটি দিয়ে তৈরী একটা উদাহরণ মাত্র!!
    তাই,মূর্তি খায় না,মূর্তিতে মশা মাছি বসতে পারে,মূর্তি ভেঙ্গে অনেক মূর্খ ভাবে হিন্দুদের সৃষ্টিকর্তাকে ভেঙেছি।

    মূর্তি হিন্দুদের সৃষ্টিকর্তাও না!!!!!!
    তাই, মূর্তিকে হিন্দুরা নিজ হাতে বানায়!

    তবে মূর্তি কি??কেন হিন্দুরা মূর্তিপূজা করে??

    মূর্তি হলো সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অসংখ্য রূপের একটি রূপক মাত্র,যেটা কেবলমাত্র একটা চিহ্ন।যেটার মাধ্যমের ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি প্রকাশ করা হয় মাত্র।ভক্তের ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি প্রকাশের একটা মাধ্যম।

    হিন্দু শাস্ত্র মতে ঈশ্বরের নিরাকার, সাকার দুই রূপেই বিরাজিত।ঈশ্বরের সাকার রূপ হলো দেবদেবী আর নিরাকার রূপ হলো আকৃতিবিহীন।বর্তমান যুগে আমাদের অশান্ত মনকে শান্ত করতে একটা মাধ্যম প্রয়োজন হয়,তাই মূর্তিকে মাধ্যম হিসেবে ধরলে ঈশ্বর আরাধনা সহজ হয়।

    আমরা যখন প্রার্থনায় বসি তখন ঈশ্বরের রূপ মূর্তি বা ছবি হিসেবে সামনে থাকলে প্রার্থনায় মন বসানো যায়।
    ঈশ্বরকে সহজে কল্পনা করা যায়।
    ভগবানের অস্তিত্ব উপলব্ধি করা যায়।

    যেমন,ক্লাসে সমগ্র বিশ্বকে বুঝাতে ম্যাপ বা গ্লোব ব্যবহার হয়।এতে ছাত্রছাত্রীরা সহজে বিশ্ব সম্পর্কে জানতে পারে।
    ঠিক তেমনি মূর্তির মাধ্যমে ঈশ্বরের রূপকে সহজে বুঝানো হয়।

    এখন যদি কেউ গ্লোব,ম্যাপকেই সমগ্র বিশ্ব মনে করে আর গ্লোব ভেঙ্গে,ম্যাপ ছিড়ে যদি বলে বিশ্ব ধ্বংস করলাম, তবে তাকে মহামূর্খ, পাগল ছাড়া আর কি বলবেন????

    মূর্তি যদি ভগবান বা সৃষ্টিকর্তা না হয় তবে হিন্দুরা এর সামনে খাবার কেন দেয়?? মূর্তি ভাঙ্গলে রাগ করে কেন??

    মূর্তির সামনে খাবার দেয়ার মাধ্যমে ভগবানের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করা হয়।
    এখন আপনার মা বাবার ছবি ভালোবেসে যেমন আপনি যত্ন অ্যালবামে ভরে রাখেন ঠিক তেমন।

    আর আপনার বাবা মায়ের ছবি কেউ ছিড়লে, পা দিয়ে মাড়ালে আপনার যেমন কষ্ট হয়।তেমনি কারো শ্রদ্ধার জিনিস নষ্ট করলে তারও কষ্ট হয়।তাই মূর্তি ভাঙ্গলে হিন্দুরা রাগে।

    ইসলামে মূর্তিপূজা হারাম নয়, হালাল। ১৪০০ বছর ধামাচাপা দেওয়া একটি সত্য কোরানের আয়াতের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট আয়াত উল্লেখ করেই উন্মোচন করা হলো।

    🍎🍎 আল্লাহ সকল প্রকার মূর্তিপূজা হারাম করেনি, মক্কার মূর্তিপূজকরা আল্লাহর মূর্তিসহ অন্যান্য মূর্তি কাবাঘরে রেখে কেউ শুধুমাত্র আল্লাহর মূর্তির পূজা করতো, কেউ অন্য মূর্তিগুলোকে আল্লাহর শরিক ভেবে সেগুলোকে আল্লাহর কাছে সুপারিশকারী বিবেচনা করে পূজা বা উপাসনা করতো। আল্লাহ তার মূর্তির সাথে ঐসব শরিক বিবেচনা করা মূর্তিগুলোর পুজা হারাম করে শুধুমাত্র তার মূর্তিটিরই পুজা করতে বলেছে। আল্লাহর ঐসব শরিক বিবেচনা করা মূর্তির পুজকদেরকে উদ্দেশ্যে করেই নিম্নে উল্লেখিত আয়াতগুলো কোরানে নাজিল হরেছে।

    🌻🌻 আল্লাহ কোরানের ২১ঃ৯৮, ৩১ঃ৩০, ৪০ঃ৬৬, ৪১ঃ১৪, ৪৩ঃ৮৬ ও ৪৬ঃ০৪-০৫ আয়াত মক্কার মূর্তিপূজকদের উদ্দেশ্যেই বলেছে। সুতরাং মক্কার মূর্তিপূজকরা আল্লাহর মূর্তিসহ তাদের অন্যান্য উপাস্য মূর্তির যেভাবে পুজা করতো ঠিক সেইভাবেই অন্যান্য মূর্তিদের বাদ দিয়ে শুধুমাত্র তার মূর্তির পুজা করতে ও সেজদা দিতে বলেছে। মূর্তিপূজকদের মতো পুজা করতে ও সেজদা দিতে সামনে মূর্তি থাকা দরকার। স্মরণীয়, আদমকে সামনে রেখেই ফেরেশতাদেকে আদমকে সেজদা করতে বলা হয়েছিলো।

    ২১. সূরা আম্বিয়া
    ৯৮. তোমরা এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের পুজা কর, সেগুলো দোযখের ইন্ধন। তোমরাই তাতে প্রবেশ করবে।

    ৩১. সূরা লোকমান
    ৩০. এটাই প্রমাণ যে, আল্লাহ্-ই সত্য এবং আল্লাহ্ ব্যতীত তারা যাদের পূজা করে সব মিথ্যা। আল্লাহ্ সর্বোচ্চ, মহান।

    ৪০. সূরা আল-মু’মিন
    ৬৬. বলুন, যখন আমার কাছে আমার পালনকর্তার পক্ষ থেকে স্পষ্ট প্রমাণাদি এসে গেছে, তখন আল্লাহ্ ব্যতীত তোমরা যার পূজা কর, তার এবাদত করতে আমাকে নিষেধ করা হয়েছে। আমাকে আদেশ করা হয়েছে বিশ্ব পালনকর্তার অনুগত থাকতে।

    ৪১. সূরা হা-মীম সেজদাহ
    ১৪. যখন তাদের কাছে রসূলগণ এসেছিলেন সম্মুখ দিক থেকে এবং পিছন দিক থেকে এ কথা বলতে যে, তোমরা আল্লাহ্ ব্যতীত কারও পূজা করো না। তারা বলেছিল, আমাদের পালনকর্তা ইচ্ছা করলে অবশ্যই ফেরেশতা প্রেরণ করতেন, অতএব, আমরা তোমাদের আনীত বিষয় অমান্য করলাম।

    ৪৩. সূরা যুখরুফ
    ৮৬. তিনি ব্যতীত তারা যাদের পূজা করে, তারা সুপারিশের অধিকারী হবে না, তবে যারা সত্য স্বীকার করত ও বিশ্বাস করত।

    ৪৬. সুরা আল আহক্বাফ
    ০৪. বলুন, তোমরা আল্লাহ্ ব্যতীত যাদের পূজা কর, তাদের বিষয়ে ভেবে দেখেছ কি? দেখাও আমাকে তারা পৃথিবীতে কি সৃষ্টি করেছে? অথবা নভোমণ্ডল সৃজনে তাদের কি কোন অংশ আছে? এর পূর্ববর্তী কোন কিতাব অথবা পরস্পরাগত কোন জ্ঞান আমার কাছে উপস্থিত কর- যদি তোমরা সত্যবাদী হও।
    ০৫. যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র পরিবর্তে এমন বস্তুর পূজা করে, যে কেয়ামত পর্যন্তও তার ডাকে সাড়া দেবে না, তার চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে? তারা তো তাদের পূজা সম্পর্কেও বেখবর।

    🍎🍎 কোথায়ও আল্লাহর মূর্তি না থাকলে আল্লাহর সামনে দাঁড়ায় কীভাবে?

    ০০২. সূরা আল-বাক্বারাহ
    ২৩৮. সমস্ত নামাযের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষ করে মধ্যবর্তী নামাযের ব্যাপারে। আর আল্লাহ্‌র সামনে একান্ত আদবের সাথে দাঁড়াও।

    🌴🌴 কোথায়ও আল্লাহর মূর্তি না থাকলে নিজের মুখ আল্লাহর অভিমুখী করে কীভাবে?

    ৩১. সূরা লোকমান
    ২২. যে ব্যক্তি সৎকর্মপরায়ণ হয়ে স্বীয় মুখমণ্ডলকে আল্লাহ্ অভিমুখী করে, সে এক মজবুত হাতল ধারণ করে। সকল কর্মের পরিণাম আল্লাহ্‌র দিকে।

    উপরের কোরানের আয়াতগুলি নীচের লিঙ্কের কোরান থেকে নেওয়া হয়েছে।

    কোরআনুল করীম।
    অনুবাদ ও সম্পাদনা : মাওলানা মুহিউদ্দীন খান।
    http://onushilon.org/corpus/trans/koran/koranind.htm

    পুরানএ মুহাম্মদ দেয়ার মিথ্যাচারের প্রমান ,মিথ্যা মন্ত্র, কাটছাট মন্ত্র ও বিকৃত মন্ত্র এর জবাব:
    https://back2thevedas.blogspot.com/2018/01/blog-post_18.html?m=1&fbclid=IwAR3q4T3C06RWKDfP5jb26HL-lnYyeENGsWswPrkPrq2nqVL8v1MoAw7ePbc

    https://www.shongshoy.com/%E0%A6%AD%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B7%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%AA%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%A3%E0%A7%87-%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A7%8D/

    https://www.google.com/url?sa=i&url=https%3A%2F%2Fwww.shongshoy.com%2F%25E0%25A6%25AD%25E0%25A6%25AC%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%25B7%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25AF-%25E0%25A6%25AA%25E0%25A7%2581%25E0%25A6%25B0%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25A3%25E0%25A7%2587-%25E0%25A6%2587%25E0%25A6%25B8%25E0%25A6%25B2%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25AE%25E0%25A7%2587%25E0%25A6%25B0-%25E0%25A6%25AA%25E0%25A7%258D%2F&psig=AOvVaw03ey9kBo4mfeex8xMb9heE&ust=1650558399675000&source=images&cd=vfe&ved=2ahUKEwiQtYKqh6P3AhVuk9gFHUFsBcYQr4kDegUIARCsAQ

    বেদে কি মুহাম্মদের কথা লেখা আছে

    https://www.agniveerbangla.org/2018/03/blog-post_1.html

    https://www.facebook.com/162456170459755/posts/605299622842072/

    https://www.facebook.com/sothikdhormo/photos/%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%A8%E0%A6%83-%E0%A6%B9%E0%A6%AF%E0%A6%B0%E0%A6%A4-%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%A5%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A6%BF-%E0%A6%85%E0%A6%AC%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%95%E0%A6%BF-%E0%A6%89%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%B0%E0%A6%83-%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%A8-%E0%A6%86%E0%A6%AE%E0%A6%B2%E0%A7%87-%E0%A6%8F%E0%A6%95/208926252851631/

    https://pathoksusupto.wordpress.com/tag/%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%A6%E0%A7%87-%E0%A6%AE%E0%A7%8B%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A6%A6/

    1. আপনার একটা কথায় খুব হাসি পেলো আমার
      ইশ্বরের আরাধনা করতে হলে মুর্তি চাই তার প্রতিরূপ চাই না হলে আমার ধ্যান বসে না।
      এইটা কেমন ইশ্বর যাকে ডাকতে হলে টেলিফোনের মতো মূর্তি ব্যবহার করতে হয়।না হলে তারা শোনেনা।
      আর আপনার প্রতিটি কথায় ভুল।আমাদের ধর্মগ্রন্থে আজ পর্যন্ত কোনো মানুষ ভুল ধরতে পরেনি আর পারবেও না।কারন এই কিতাব সয়ং ইশ্বর হতে পেরিতো।
      আপনি পরতে জানেন না আর আপনি লিখছেন।তাতে আবশ্যই প্রতিটি লাইনে ভুল থাকবে।আগে পরতে শিখুন তার পর লিখুন।তহলে আপনার ভুল হবে না।

    2. আমি একজ ন মুসলিম ঘরের ছেলে ব্লগার যা লিখেছে সেটা আমি ছোট থেকে বিশ্বাস করে আসতাম। তারপর যখন সব কিছু বুঝতে শিখলাম জানতে শিখলাম তখন দেখলাম না এগুলো সব মিথ্যা কথা। আমি আপনার কথায় একমত ঈশ্বর হচ্ছেন এক এবং ঈশ্বরের বার্তা বাহক রা ঈশ্বরের এক একটি রূপ যেমন , শিব, কৃষ্ণ, মোহাম্মদ, জিসা, রাম এরা হচ্ছেন আল্লাহর এক একটা রূপ
      আর যেই মূর্তি পুজো করতে নিষেধ করেছেন ওটা হলো সড় রিপু যেটা শরিয়ত এর মুসলিম রা মানতে চাইনা তাই তারা বলে মূর্তি পূজা হারাম। আমি মুসলিম হোয় এ রাধা গোবিন্দের এর একজন বড়ো ভক্ত এমনকি কৃষ্ণ পুজো ও করি কৃষ্ণ কে ঈশ্বর এর রূপ বলতে আমি অস্বীকার করিনা মূর্খ দের মতো। আর একটা কথা যদি মূর্তি পুজো হারাম বলে তাহলে কাবা তো একটা জড়ো পদার্থ মূর্তির মতো তাহলে শরিয়ত এর লোক রা এর পুজো করে কেনো। কারণ একটাই কাবা টা হচ্ছে কেন্দ্র আল্লহ নই ঠিক সেরকম মূর্তি টা হচ্ছে কেন্দ্র। আমরা কাবার মাধ্যমে আল্লাহ কে খুঁজি আর আপনারা মূর্তির মাধ্যমে দুটো একই। তাই মূর্তি পুজো আর কাবা পুজো দুটোই একই জিনিষ

  2. ভাই তাহলে ভালোই হবে আসুন ব্রাদার রাহুল আমিনের সাথে ডিবেট করতে পারেন।
    আর আপনার কোরানের অনুবাদ শুনে হাসি আসলো 😅।
    আলহামদুলিল্লাহ আমরা আপনার মতো জ্ঞানী মানুষকেই খোজছি। রাহুলের সাথে যোগাযোগ করেন

    1. Vhai Ei bekti ashole kono muslim noy, se murti pujarider agent, muslim besh dhore esheche. Jiboneo brother rahul er sathe debate e jabe na. Jane gelei dhora khabe 😅

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *