পীর মুরীদি সম্পর্কে ইসলাম কি বলে ? জেনে নিন বিস্তারিত ।

পীর মুরিদ muslimpoint

অনেকে শুনেছেন পীরের মুরীদ হওয়া ছাড়া বেহেশতে যাওয়া যাবে না। এজন্য তাদের উচিত,দরকার কুরআন ও হাদীস থেকে বিষয়টার ব্যাপারে পরিস্কার হওয়া ।বাংলাদেশে এমন অনেক ভণ্ড পীরকে দেখা যাই যে, তাদেরকে “বাচনেওয়ালা, মারনে ওয়ালা ” বলে তাদেরই মুরিদরা ।নাউজুবিল্লাহ এইগুলো শিরিক ! আল্লাহ এমন কোন পীরকে ক্ষমতা দেইনি যে সে কুরআন-হাদীসের বাইরে আল্লাহ প্রেমসম্পর্কিত শব্দ ছাড়া অন্য কিছু ব্যাবহার করতে পারবে । ঢাকার দেওয়ানবাগ ভণ্ডপীর সহ আরও অনেক বিদা’তি পীর রয়েছে যারা আমাদের সঠিক ইসলাম থেকে শধুমাত্র দূরেই রাখছেনা বরং আমাদের দেশের সহজ-সরল মানুষ গুলোরে মাজারে-পীরের আসরে অনৈতিক কাজে প্রলুব্ধ করে বিদআতি কর্মে লিপ্ত রেখে তা সমাজে ভাইরাস আকারে ছড়াচ্ছে ।
আসলে পীর শব্দটা আরবী ভাষার নয়। কুরআন হাদিসের কোথাও রাসুল (সাঃ)ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তির নির্দেশ সর্বাবস্থায় বিনা প্রশ্নে মেনে নেয়ার অনুমতি দেয়া হয়নি।তাকে অনুসরণ কিংবা তার নির্দেশ বাস্তবায়ন করা যাবে শুধুমাত্র সে সকল ক্ষেত্রে যখন তা কুরআন ও হাদিসের অনুকূলে হয়। কোন আলেমের কাছেও শিখতে যাওয়া যেতে পারে।
আল্লাহতায়ালা বলেছেন:
”তোমরা যদি না জেনে থাক তাহলে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞাসা কর।”(সুরা নাহল:৪৩)
অনেকে বলে থাকে “যার পীর নেই তার পীর শয়তান”।আসলে এ ধরণের কথা হয়ত কোন পীরভক্তের আবেগ প্রসুত কথা হতে পারে যার সাথে কুরআন হাদীসের কোন সম্পর্ক নেই । অথচ,কুরআন শরীফে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:
,যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ)এর অনুগত্য করবে,তাকে আল্লাহ তায়ালা এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন,যার নিচ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হবে,সেখানে তারাথাকবে চিরকাল।আর এটিই সবচেয়েবড় সাফল্য। (সুরা নিসা: ১৩)
ইসলামআমাদের বলে তোমরা তাদেরই পক্ষাবলম্বন করো যারা সঠিক ইসলামের বার্তা বহন করে এবং যেবার্তা তোমার জান্নাতের পথকে সহজতর করে দেই ।এইজন্য আল্লাহ বলেন:
“যে আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করবে তারা নবী,সিদ্দীক,শহীদ ও সৎকর্মশীল তথা যাদেরকে আল্লাহ তায়ালাপুরস্কৃত করেছেন তাদের সাথী হবে। এরা কতই না চমৎকার সংগী।(সুরা নিসা: ৬৯)
“যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের হুকুম মেনে চলে,আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর নাফরমানী করা থেকে দূরে থাকে,ওরাই সফলকাম। (সুরা নুর: ৫২)
কিয়ামতের দিনটা হবে অত্যন্ত ভয়াবহ এবং মর্মান্তিক । আমাদের মধ্যে যারা সঠিক পথ অনুসরন করবে তারাই সফলকাম এবং ঠিকই জান্নাত তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে ,আর যারা ভুলপথ অনুসরণ করে নিজেকে বিদা’তি কর্মে লিপ্ত রাখবে তাদের জন্য নির্ধারিত জায়গা কঠিন জাহান্নাম ।
আল্লাহ বলেন ,
“আর যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালা ও তার রাসুলের আনুগত্য করবে সে নিশ্চিত সফলকাম হয়েছে। (সুরা আহযাব: ৭১)
“যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করবে,আল্লাহ তায়ালা তাকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন,যার নিম্নদেশে ঝর্ণাধারাসমূহ প্রবাহমান থাকবে।আর যে মুখ ফিরিয়ে নেবে আল্লাহ তাকে মর্মান্তিক আযাব দেবেন। (সুরা ফাতহ:১৭)
অনেক পীর সাহেব নাকি মুরীদদেরকে বলে থাকেন:আমার কাছে মুরীদ হও । তাহলে,আমি তোমাদেরকে আমারহাত ধরে ধরে বেহেশতে নিয়ে যাব। অনেকে আছে অগ্রিম ভবিষ্যৎ দিয়েও থাকেন ।
আমারপ্রশ্ন – যেইখানে পীরসাহেবকে নিজের ব্যাপারে গ্যারান্টি দেওয়ার ক্ষমতা মহান আল্লাহদেননাই , সেইখানে তিনি এ ধরণের কথা বলার দুঃসাহস কোথায় পেলেন?এইধরনের কথার অনুমতি ইসলাম তাদের কতোটুকু দিয়েছে ?
আল্লাহতায়ালা বলেছেন:
“আজকে (কিয়ামতের দিন) তোমাদের কেউ কাউকে উপকার কিংবা ক্ষতি করতে পারবে না। আর আমি অপরাধীদেরকেবলব-জাহান্নামের আগুনের স্বাদ গ্রহণ কর দুনিয়ায় যাকে তোমরা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছ। (সুরা সাবা: ৪২)
“সেটি এমন দিন যেদিন কোন নিকটতম প্রিয়জনও কোন নিকটতম প্রিয়জনের কাজে আসবে না। আর তাদেরকে সাহায্যওকরা হবে না। (সুরা দুখান:৪১)
আল্লাহতায়ালা বলেন:هِ
“সেদিন এমন একটি দিন যখন কারও জন্য কোন কিছু করার সাধ্য থাকবে না। ফায়সালার ভার সেদিনএকমাত্র আল্লাহ তায়ালার হাতেই থাকবে। (সুরা ইনফিতার:১৯)
“বল! ‘দিনে ও রাত্রিতে কে তোমাদেরকে পরম করুণাময় আল্লাহ’র শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারে?’ কিন্তু না, তারা তাদের রবের স্মরণ থেকে গাফিল।”(সূরা আল আম্বিয়া, ২১ : ৪২)
আল্লাহ শিরিকি কর্ম কোন অবস্থায় বরদাশত করবেন না , নিজেদেরকে অবশ্যই এহেন কর্ম থেকে দুরে থাকতে হবে। আল্লাহ আমদের উন্নতমানের মস্তিষ্ক ,বোধশক্তি সম্পন্ন বিবেগ দিয়েছেন যাতে আমরা সঠিকটা অন্বেষণের মাধ্যমে গ্রহন করি এবং তা আমল করে জান্নাত লাভ করতে পারি। আমরা আমাদের বিবেগকে একটু খাটিয়ে ভাবলেই দেখি যে, রাসুল(সঃ) কে আল্লাহ দুনিয়ায় সচ্ছলতা কম দিয়েছেন , তার জীবন কর্ম কেমন ছিল আর এই সমস্ত ভণ্ড পীরগুলোর চলা চরিত্র কেমন !
এদের বিলাসিতা জীবন পরিচালন কি আপানার মনে কোন প্রশ্ন জন্ম দেইনা ?
কখনও ভেবে দেখেছেন কি রাসুল(সঃ) পরিচালিত জীবন এবং এই সকল ভণ্ডপীরদের পরিচালিত জিবনের মধ্যেকতোটুকু তফাৎ ?
এরা কতোটুকু সহিহভাবে কুরআন-সুন্নাহ অনুসরণ করছে ?
এই সকল পীর কি আপনাকে জান্নাত দিতে পারে,নাকি রাসুল(সঃ)এর সহিহ-সুন্নাত এবং পরিপূর্ণ বিধান ‘আল-কুরাআন” আপনাকে জান্নাত দিবে ?
মাজারে সিজদা দেওয়া , গানের আসর জমিয়ে গাঁজাখানার আড্ডা এগুলো কিরাসুল(সঃ) এর সুন্নাহ’র মধ্যে পড়ে ?
নিজেকেপ্রশ্ন করুন আপনি কি সঠিক পথে আছেন কিনা ?
আপনার লক্ষ্য জান্নাত ! এই পথ অবলম্বন করে আপনি জান্নাত পাবেন কিনা ?
রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, সাবধান ! তোমাদের পূর্বের যুগের লোকেরা তাদের নবী ও নেককার লোকদের কবর সমূহ মসজিদ (সিজদার স্থান) হিসেবেগন্য করতো। তবে তোমরা কিন্তু কবর সমূহকে সিজদার স্থান বানাবে না। আমি এরূপ করতে তোমাদের নিষেধ করে যাচ্ছি। [মুসলিম, ১০৭৭]
আল্লাহকুরআনে বলেন ,
“তাঁর নিকট রয়েছে গায়েবের চাবিসমূহ, এবং এক তিনিছাড়া এ সম্পর্কে কারও জ্ঞান নেই।” (সূরা আল আনআম, ৬ : ৫৯)

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   সমাজে প্রচলিত কিছু জাল হাদিস বা হাদিসের নামে মিথ্যা জেনে নিই (পর্ব ১)
আসুন এখন জেনে নিই  পীর-মুরীদ দের কিছু কার্যকালাপ সম্পর্কে।

সুবিধাবাদী একদল লোক আমাদের সমাজের অশিক্ষিত নিরিহ মানুষেদের ব্রেন ওয়াস করে বা বোকা বানিয়ে তাদের এই ব্যবসা চালিয়ে সুবিধা হাতিয়ে নিচ্ছে। আমারা যদি আমাদের দেশের প্রতিটা গ্রামের দিকে লক্ষ্য করি তা হলেই দেখবো দু – চারজন তথা কথিত ভন্ড পীরের বসবাস তারা নানা ছলচাতুরীতে মানুষ বস করে মুরীদ বানায় আর তাদের থেকে টাকা পয়সা মোরগ মুরগী হাতায় এমনকি গরীব চাষীও তাদের কষ্টে তিলে তিলে বছর ধরে পালিত গরুটা ও রোগ মুক্তির আশায় বা অন্য কোন নিয়তে পীরের দরবারে দিয়ে দেয়। আবার গ্রামে দেখা যায় প্রতিটা পীরের দরবারে প্রতি বছর ওরোস নামের একটা অনুষ্ঠান করা হয়। তারা মনে করে এই অনুষ্ঠান তারা রাসূল (ছঃ) কে খুশি করার জন্য করে থাকে কিন্তু তাতে দেখাযাই পুরোটাই শিরক বেদাতে পরিপূর্ণ, গান বাজনা সহ নাচগান দিয়ে সেই অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয় দিন শেষে তবারক দেয়া হয় যে গরু কেটে সেই গরুটাও হয়তো কোন মুরীদের দান, আবার দেখা যাই সেই অন্ধ পীরের মুরীদের বাবা-মা-ই ভাতের অভাবে কষ্ট করছে কিন্তু পীরের দরবারে গরু হাজির। আবার সেই পীরদের নামাজ রোজার কোন খোঁজই থাকে না। গাজা ও খাই অনেকে। আমার এক পরিচিত দাদাকে প্রশ্ন করলাম আপনি যে অমুক পীরের ভক্ত তো সে কি নামাজ আদায় করেন ঠিক মতো? উত্তর আসলো আমার পীর নামাজ না পড়লে ও সারাসময় জিকীর করে । হা হা হাস্যকর। আবার একদিন ভ্যানে চরে আমি আসছিলাম হুট করে দেখি ভ্যাল চালক ভ্যান থেকে নেমে পড়ে প্রায় অনেকটা পথে হেটে ভ্যান টেনে আনলেন পরে জানলাম সামনে তার পীর সাহেব ছিলেন তাই তার সন্মান এর জন্যই এমন করা। ঠিক এমনই অনেক অদ্ভুত কাজ আমাদের পীর-মুরীদি সমাজে হয়ে থাকে যা একজন মুসলিমের কখনোই করা উচিত না। এখনকার সমাজে ভন্ড পীরদের আস্তানাই নাচ, গান বেহায়াপনা, মাদক পরিপুর্ণ আর শিরক, বেদাতের কথা বা নাই বললাম । যা একদমই ইসলাম পরিপন্থি।আমাদের সমাজের বেশিরভাগ অশিক্ষিত নিরহ মানুষগুলো এই ভন্ড পীরদের শিকার। তাদের ব্রেন ওয়াস করা হয় এই বলে যে পীর না ধরলে জান্নাত পাওয়া যাবে না এর জন্য তারা কোরআন, হাদিস থেকে ভুল ব্যাখ্যাও করে। । আস্তাগফিরুল্লাহ ,আল্লাহ তাদের হেদায়েত দিক। সেইসব ভন্ড পীররা মানুষদের হেদায়েত এর জন্য ডেকে এনে পথভ্রষ্ট বানাই এই বলে যে আমার কাছে মুরীদি নিলেই জান্নাত আর বাঙালিতো সুযোগ সন্ধানী পেয়ে গেলো জান্নাতের রাস্তা কিন্তু তারা জান্নাতের রাস্তার বদলে জাহান্নামের দিকে চলেছে তা বুঝতে চাই না। আল্লাহ তাদের চোখ আর রূহকে খুলে দিক যেন তারা সত্যি ইসলামটা জানতে পারে বুঝতে পারে। ।
পরিশেষে বলব…
আমরা সকলে এসমস্ত লোকদের সংস্পর্শে আসার ব্যাপারে সতর্ক থাকব এবং অপরকে সতর্ক করব ।আমরা কুরআন ও হাদীসানুযায়ী আমল করে নিজের বাস্তব জীবনে তা প্রবেশ ঘটালে দুনিয়া ও আখিরাতে আমরা সফল হব,ইং-শা-আল্লাহ।ইসলাম আমাদের সুন্দর জীবন বেবস্থা দিয়েছে , দিয়েছে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত পুনাঙ্গ জীবন বিধান । আমরা যদি সুন্দর ও পবিত্র ইসলাম পরিপূর্ণভাবে মেনে চলি তাহলে ইং-শা-আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে আমরা সফল হব ইং-শা-আল্লা।

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   প্রচলিত ইঞ্জিল বা বাইবেল এ যীশু বা ঈসা মাসীহকে কট্টর বর্ণবাদী ও সাম্প্রদায়িক রূপে চিত্রিত করা হয়েছে

লেখাঃ modified + এস এম সায়িম (কুষ্টিয়া)

MuslimPoint Organization

About MuslimPoint Organization

MuslimPoint একটি অনলাইন ভিত্তিক ইসলামী প্রশ্নোত্তর, গ্রন্থাগার, ব্লগিং, কুরআন, হাদিস, কুইজ এবং বিষয় ভিত্তিক রেফারেন্স প্ল্যাটফর্ম।

View all posts by MuslimPoint Organization →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *