বিবর্তনবাদের সত্যমিথ্যা বিস্তারিত

বিবর্তনবাদ

বিবর্তনবাদীদের মতে, সেই অনেক অনেক বছর আগে এই পৃথিবীর পরিবেশের যে উপাদানগুলো ছড়িয়ে আছে সেগুলো একত্রিত হয়ে একটি কোষ গঠন করে। এরপর আস্তে আস্তে অংখ্য কোষ সৃষ্টি হয়ে ছোট একটা প্রাণীর আবির্ভাব ঘটে। সেগুলো আবার পরিবেশে থাকতে থাকতে এক প্রাণী থেকে আরেক প্রাণীতে রুপান্তরিত হতে হতে ডায়নোসরের মত বিশাল প্রাণীতেও রুপান্তরিত হয়, এবং আস্তে আস্তে আমরা মানুষদের আবির্ভাব। ব্যাপারটা বেশ অলৌকিক শুনাচ্ছে না? আসলে, ছোট খাটো কিছু পরিবর্তন পরিবেশের কারণে হয়। যেমন প্রয়োজন অনুযায়ী পাখির ঠোঁট ছোট বড় হওয়া যা ডারউইন একটা দ্বীপে গিয়ে দেখেছিলেন। ছোটখাট পরিবর্তন হলেই যে বড় পরিবর্তন হবে, অর্থাৎ একটা প্রাণী থেকে আরেক নতুন প্রাণীর সৃষ্টি হবে বিষয়টা কিন্তু এমন নয়। ধরো, কেউ যদি বলে মিঃ আবুল লাফ দিয়ে তিন ফিটের দেয়াল অতিক্রম করতে পারে, আবার পাঁচ ফিটের দেয়াল অতিক্রম করতে পারে। অতএব, মিঃ আবুল ১০০ ফিটের দেয়াল অতিক্রম করতে পারবে। এটা কি আমরা মেনে নেব? যাইহোক বিবর্তনবাদ নিয়ে তোমাদের (নবম-দশম) বইয়ে অনেক প্রমাণ দেয়ার প্রচেষ্টা লক্ষ্যনীয়। আমি এই প্রবন্ধে দেখাবো এ সবগুলো প্রমাণই প্রশ্নবিদ্ধ, বরং আমরা যে একজন সর্বশক্তিমানেরই সৃষ্টি সেই চিন্তাটাই কিন্তু ঘুরেফিরে আসতে বাধ্য।

প্রানের উৎপত্তি ঃ

তোমাদের বইতে যে কথাটা বলা হয়েছে,২৬০ কোটি বছর আগে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রচুর পরিমাণে মিথেন, অ্যামোনিয়া, হাইড্রোজেন সালফাইড এবং জলীয় বাষ্প, নাইট্রোজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস ছিল। কিন্তু অক্সিজেন গ্যাস ছিল না। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সবকিছু মিলিত হয়ে অ্যামাইনো এসিড তৈরি হয় যা থেকে প্রোটিন তৈরি হয়। অনেকগুলো ইট মিলে যেমন দেয়াল তৈরি হয় তেমনি অনেকগুলো অ্যামাইনো এসিড মিলে প্রোটিন তৈরি হয় আর প্রোটিনগুলো মিলিত হয়ে জীব কোষ তৈরি করে। বাহ! বিষয়টা অনেক সরল মনে হচ্ছে, তাই না?
প্রথম কথা হচ্ছে, “প্রানহীন বস্তু থেকে প্রানের উদ্ভব হয় এমন কোন পরীক্ষা এখনো পর্যন্ত কেউ করে দেখাতে পারেনি”।
ফ্রেড হোয়েল নামের এক ইংরেজ গণিতবিদ এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানী ‘nature’ নামক জনপ্রিয় একটা বিজ্ঞান ম্যাগাজিনে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বলেন “ এভাবে উচ্চশ্রেনীর প্রানীর আবির্ভাব হওয়াটা যেন এমন টর্নেডো এসে লোহা লক্করগুলোকে একত্র করে বিশাল একট বিমান তৈরি করে দিয়ে গেল”
বিবর্তনের সমর্থকগোষ্ঠী জীবের গঠনকে একটা সরল গঠন হিসেবে প্রচারণা (Propaganda) চালায়। ডারউইন কোষের গঠনকে খুব সরল একটা গঠন হিসেবে কল্পনা করেছিলেন কারণ তখন বিজ্ঞান সেরকমভাবে অগ্রসর ছিলনা। আজকের বিজ্ঞানের এ জয়জয়কার সময় যখন আমরা জানতে পারছি আমাদের শরীর প্রত্যেকটা কোষ,অঙ্গের গঠন অত্যন্ত জটিল।
আসো, আমরা প্রোটিনের গঠন নিয়ে আলোচনা করি। নিম্নোক্ত সব কিছু যখন একসাথে ঘটে তখন হয়ত পরিবেশে একটা প্রোটিন পাওয়া সম্ভব। তাহলে সবগুলো ঘটনা একসাথে ঘটার সম্ভাবনা কতটুকু?
প্রথমত,জীব প্রোটিন তৈরিতে যে অ্যামাইনো এসিড লাগে পরীক্ষায় দেখা গেছে প্রত্যেকটি এমাইনো এসিড যে ক্রমে আছে সেই ক্রমেই থাকতে হবে। অর্থাৎ এক নং এসিডটি এক নংয়েই থাকতে হবে ১০ নাম্বারটি ১০ নাম্বারেই।
দ্বিতীয়ত, এমাইনো এসিড দুরকমের হতে পারে ডানঘূর্নবর্তী এবং বাম ঘূর্নবর্তী। পরিবেশে এমাইনো তৈরি হলে ডানও হতে পারে। বামও হতে পারে। পরীক্ষায় দেখা গেছে জীবের প্রোটিনের সব এমাইনো এসিডই বাম ঘূর্নবর্তী। এটা কিভাবে সম্ভব?
তৃতীয়ত এমাইনো এসিডগুলো পরস্পরের সাথে পেপটাইড বন্ডে থাকে। এখন পরিবেশে দৈবচয়নে (আন্দাজে) এমাইনো এসিড গুলো ৫০% ক্ষেত্রে পরস্পরের সাথে পেপটাইড বন্ডে যুক্ত হয় এবং বাকী ৫০% অন্যান্য বন্ডের মাধ্যমে পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়।
চতুর্থত, DNA এনজাইম তৈরি করে যা প্রোটিন তৈরিতে সহায়ক। আবার DNA এর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজন প্রোটিন। তারমানে প্রোটিন ও এনজাইম একই সময়ে উপস্থিত থাকতে হবে।
পঞ্চমত, প্রোটিন তৈরিতে রাইবোসোম লাগবে। তাপমাত্রা ও PH এর মান একটা নির্দিষ্ট পরিমানে না থাকলে প্রোটিন তৈরি হবেনা।
এতকিছু একসাথে ঠিকভাবে কাজ করলে পরিবেশে প্রোটিন তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
তুমি একটি একটাকার পয়সা হাতে নাও। একপাশে মানুষ আরেকপাশে শাপলা। তুমি এবার টস কর। এক কোটি বার টস করলে প্রত্যেকবার শাপলা উঠার সম্ভাবনা কতটুকু আছে বলে তোমার মনে হয়? মাথায় নিশ্চয় ঘুরতেছে -“০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০”
হ্যাঁ ঠিক তাই। “The Britannica science encyclopedia” বিবর্তনের সমর্থক হয়েও একই কথাই বলছে। এমাইনো এসিড থেকে এভাবে প্রোটিন তৈরি সম্ভবনা ‘শূন্য’। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, একটি প্রোটিন তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ১/১০^৩০০ । মানে ১ এর পর তিনশো শূন্য দিয়ে যে সংখ্যা পাওয়া যায় ,১ কে সেটা দিয়ে ভাগ। কোন কিছুর সম্ভাবনা ১/১0^৫০ হলে তাকে অসম্ভব ধরে নেয়া হয়। তাহলে তো এটা অসম্ভব,অসম্ভব,অসম্ভব………
বিবর্তনবাদীরা কিন্তু তারপরো থেমে থাকেনি। তারা পরীক্ষা করে প্রমান করতে চেয়েছে প্রোটিন পরিবেশে ‘অটো’ (এমনি এমনি) আসতে পারে। ১৯৫৩ সালে বিজ্ঞানী মিলার এবং উরে একটি এক্সপেরিমেন্টের মাধ্যমে গোঁজামিল দিয়ে প্রমান করতে চেয়েছেন পরিবেশে এমাইনো এসিড থেকে প্রোটিন আসা সম্ভব। এটা ‘মিলার’স এক্সপেরিমেন্ট’ নামে বিখ্যাত। যদিও পরে মিলার নিজেই তার এক্সপেরিমেন্টের স্বীকৃতি দিতে নারাজ হয়েছেন। এখন অনেক বিবর্তনবাদী মিলার’স এক্সপেরিমেন্টকে স্বীকার করেনা। মিলার যে আদিপরিবেশের কথা চিন্তা করেছেন, আসলে তা তেমন ছিলনা। মিলারের গোঁজামিলগুলোকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বিজ্ঞানী ফক্স “ফক্স এক্সপেরিমেন্ট’ নামে নতুন একটা এক্সপেরিমেন্ট করেন। কিন্তু তিনি আবার নতুন গোঁজামিলের শরনাপন্ন হন। অতএব আমরা বুঝতে পারলাম প্রানের প্রথম আদি পরিবেশে আসা সম্ভব না। প্রথম কোষের আগমন ব্যাখ্যা করতে না পেরে এখন বলছে প্রথম কোষ ভিন্ন জগত থেকে আসছে। তারপরে আস্তে আস্তে বহুকোষী প্রানীতে পরিনত হয়েছে। তারা কিন্তু সাধনা করেই যাচ্ছে। ‘হাল ছেড়ে না দিয়ে সাধনা কিভাবে চালিয়ে যেতে হয়’ তা আমরা বিবর্তনবাদীদের কাছ থেকে শিখতে পারি। তাদেরকে ‘থ্যাংকু’ না বলে পারছি না।
একই রকম অঙ্গ কি বিবর্তনবাদের প্রমান?
মনেকরো, চট্টগ্রামে তুমি ১০ তলা বাসায় থাকো। ঢাকায় গিয়ে দেখলে তোমার বাসার মতই একটা ৬ তলা বসা। তোমার মাথায় প্রথমে কি আসবে? নিশ্চয়ই তুমি চিন্তা করছো একই আর্কিটেক্ট এ দুটো বাসায় ডিজাইন করেছে। এটাই আমাদের বিবেক বুদ্ধির দাবী। নাকি তুমি চিন্তা করবে যেহেতু এই বাসা রড,ইট,বালি সিমেন্ট দিয়ে তৈরি এবং তোমাদের বাসাও তাই, তাহলে এই বাসা বাচ্ছা জন্ম দিয়েছে। আস্তে আস্তে পরিবর্তিত হয়ে দশতলা বিশিষ্ট তোমাদের বাসায় পরিণত হয়েছে। না বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ এভাবে চিন্তা করেনা। একই রকম দেখতে হলে একজন ডিজাইনারই সবকিছু ডিজাইন করেছে এমন বুদ্ধিদীপ্ত কথাই তোমার মাথায় আসবে।
প্রানীজগতে আমরা দেখতে পাই অনেক প্রানীর অঙ্গ একইরকম দেখতে। এটাকে বিজ্ঞানে ভাষায় বলতে সমসংস্থ (homologous) অঙ্গ বলে। এটাকে বলা যায় বিবর্তনবাদী ‘ট্রাম কার্ড’। কারণ বিজ্ঞানের জ্ঞান যাদের নেই তাদেরকেও এ সদৃশতা দেখিয়ে বিবর্তনবাদ বিশ্বাস করানো সহজ। তারা উদাহরণ হিসেবে যেটা নিয়ে আসে তা হল- পাখি ও বাদুড়ের অগ্রপদ ওড়ার জন্য, তিমির ফ্লিপার সাঁতারের জন্য,ঘোড়ার অগ্রপদ দৌঁড়ানোর জন্য এবং মানুষের অগ্রপদ কোন জিনিস ধরার জন্য।
এখনো পর্যন্ত তারা এটার পক্ষে বিজ্ঞানের সুদৃঢ় কোন প্রমান দিতে পারেনি। বিজ্ঞানের উন্নতিতে যেটা দেখা যাচ্ছে সমসংস্থ অঙ্গগুলো বিবর্তনবাদের বিরুদ্ধে প্রমান হিসেবে চলে আসছে। তিনটি কারণে একই রকম দেখতে এ অঙ্গগুলো বিবর্তনবাদের প্রমান হতে পারেনা।
১,আমাদের সবকিছুতে DNA তে লেখা আছে। একে DNA Code বলে।গবেষনায় দেখা গেছে বিভিন্ন প্রানীর সমসংস্থ অঙ্গগুলোর DNA code একই হওয়ার কথা থাকলেও এদের এরা একই রকম নয়।
২,প্রানীজগতের সম্পূর্ন ভিন্নপর্বের দুটো প্রানীর সমসংস্থ অঙ্গ থাকার কারণ বিবর্তনবাদীরা এখনো ব্যাখ্যা করতে পারেনি। অক্টোপাস মলাস্কা পর্বের প্রানীর অপরদিকে মানুষ মেরুদন্ডী প্রানী এবং এদের মধ্যে বিবর্তনিক কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু পরীক্ষায় দেখা গেছে এ দুটোর চোখ গঠন খুবই কাছাকাছি।
৩,ভ্রুনাবস্থায় অর্থাৎ যখন মায়ের গর্ভে থাকে তখন তাদের ভ্রুনের এ ক্রমপরিবর্তন তা বিভিন্ন প্রানীতে বিভিন্ন রকম অথচ সেগুলো একই হওয়ার কথা।
অতএব একইরকম দেখতে হলে যে একটি থেকে আরেকটি বিবর্তিত হয়েছে এমন কোন প্রমান নেই। উল্টো এটা বিবর্তনবাদকে ধ্বসিয়ে দিচ্ছে।
সাইকেল, কার, ট্রাক,বিমান সবকিছুর চাকাই গোল। তাই বলে কি এরা বিবর্তন প্রক্রিয়ার ফল? না। বরং আমরা দেখেছি এটা গোল হলে সবচেয়ে বেশী কার্যকর হয়। তাই এটা আয়তাকার,ত্রিভূজাকার না হয়ে গোল হয়। তেমনি স্রষ্টা জানেন কোন অঙ্গগুলো কিভাবে সৃষ্টি হলে সর্বাধিক কার্যকর হবে তাই তিনি সেভাবে আমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন।

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   পৃথিবীর ইতিহাসের প্রথম নাস্তিক বা অবিশ্বাসী সম্পর্কে অজানা তথ্য জেনে নিন | First Atheist in the World

লুপ্তপ্রায় অঙ্গ (Vestigial organ) কি বিবর্তনবাদের প্রমান হতে পারে?


বিবর্তনবাদের সমর্থকরা বিবর্তনের পক্ষে একটা জোরালো প্রমান হিসেবে আমাদের শরীরের লুপ্তপ্রায় (vestigial organ) অঙ্গগুলোকে উপস্থাপন করে। আমাদের শরীরের এমন কিছু অঙ্গ আছে যা আগে কাজ করত কিন্তু কালের বিবর্তনে এখন নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে বলে তারা দাবী করে। যেমন এপেন্ডিক্স,ককসিক্স,টনসিল ইত্যাদি। তারা বলে এপেন্ডিক্স স্তন্যপায়ী তৃনভোজী গিনিপিগদের দেহে সক্রিয় থাকলেও মানুষের দেহে সক্রিয় নয়। তেমনি ভাবে দেহে লেজ নেই তবু মেরুদন্ডের শেষপ্রান্তে ককসিক্স নামক লুপ্তপ্রায় অঙ্গ দেখা যায়। বিবর্তনবাদীদের মতে এ অঙ্গগুলো পূর্বপুরুষে সুগঠিত ছিল কিন্তু এখন অকেজো। আসলেই কি তাই? ১৮৯৫ সালে বিজ্ঞানী Wiedersheim ১০০ মত লুপ্তপ্রায় অঙ্গের শনাক্ত করলেও সময়ের পরিক্রমায় প্রমাণ করেছে এ প্রত্যেকটা অঙ্গই আমাদের জন্য উপকারী,কার্যকরী।
এপেন্ডিক্স তো বিবর্তনবাদীদের সবচেয়ে পছন্দের লুপ্তপ্রায় অঙ্গ। অথচ দেখা গেছে, যে পূর্ববর্তী বানর সদৃশ প্রাণী থেকে আমাদের বিবর্তন হয়েছে বলা হচ্ছে তাদেরও অনেকের এপেন্ডিক্স নেই। তাহলে এটা কোন ধরণের যুক্তি হল! তারউপর এপেন্ডিক্সের অনেক গুরুত্বপূর্ন কার্যক্রম লক্ষ্য করা গেছে। এটা ভালো জীবানুগুলোর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন এবং ব্যাকটেরিয়ার সেইফ হাউস হিসেবে কাজ করে।
ককসিক্স কে আগে অকেজো মনে করা হলেও আধুনিক বিজ্ঞান বলে, এটা তার চারপাশের (মূলত পেলভিসের চারপাশের) হাড়গুলোর জন্য সহায়ক হয়। এবং আমাদেরকে আরাম করে বসতে সাহায্য করে। টনসিল আমাদের গলার ইনফেকশান থেকে রক্ষা করে।


ভ্রুণতত্ত্বঘটিত প্রমাণঃ


ডিমের ভিতরে কিংবা মাতৃগর্ভের(স্তন্যপায়ীদের ক্ষেত্রে) ভিতরে ভ্রুণগুলোর ক্রমবৃদ্ধি অনেকগুলো ধাপ পার হয়ে ঘটে।মৎস,উভচর,সরীসৃপ, পাখি কিংবা স্তন্যপায়ী যে পর্বেরই হোক না কেন তাদেরকে ভ্রুনাবস্থায় বুঝা মুশকিল। মানুষের ক্ষেত্রে ভ্রুনের প্রাথমিক অবস্থায় মাছের মত ফুলকা দেখা যায়,অতঃপর লেজ দেখা যায় এবং আস্তে আস্তে সেটি মানবাকৃতি ধারণ করে। হেকেল এটা লক্ষ্য করে বলতে চেয়েছেন- ভ্রুণে অতি অল্প সময়ের জন্য হলেও পূর্বপুরুষদের বিবর্তনের পুনরাবৃত্তি ঘটায়। অর্থাৎ মানুষ যে মৎস থেকে আস্তে আস্তে বিবর্তিত হয়ে লেজওয়ালা বানর সদৃশ প্রাণী, অতঃপর সেটা থেকে মানুষ হয়, তার একটা পুনরাবৃত্তি ভ্রুনের ক্রমপরিণতিতেও দেখা যায়। হেকেল ভ্রুনের ধাপগুলো জন্য গোঁজামিলের চিত্রও তৈরি করেন। এগুলো হচ্ছে বিজ্ঞানের শিশুকালের গালগপ্প। ‘বিজ্ঞান’ আস্তে আস্তে যৌবনপ্রাপ্ত হয়ে অনেক কিছুর সত্যতা মেলে ধরে। ভ্রুণের প্রাথমিক অবস্থায় মানুষের মধ্যকর্ণের অংশ, প্যারাথাইরয়েড এবং থাইমাসকে দেখতে অনেকটা ফুলকার মত মনে হয়। আর ভ্রুণাবস্থায় পায়ের আগে মেরুদন্ডের সৃষ্টি হয় বলে মেরুদন্ডকে লেজের মত মনে হয় আর হেকেল সেই ভুলটাই করে বসে। জর্জ গেলর্ড সিম্পসনের মত বিবর্তনবাদীরাও হেকেলের এ ব্যাখ্যাকে প্রত্যাখান করেন। হেকেলের ছলচাতুরী যখন উদঘাটিত হয়ে যায় তখন এই বলে তিনি নিজেকে বাঁচাতে চেয়েছেন যে, ‘বিবর্তন সংক্রান্ত বেশীরভাগ বইপত্র এবং ম্যাগাজিনের চিত্রগুলো তো এভাবেই তৈরি করা তাহলে আমাকেই কেন শুধু বলা হবে’ মানে দুই নাম্বারি করলে তো হরহামেশা সকল বিবর্তনবাদীরাই করছে শুধু আমাকে কেন ‘দুই নাম্বার’ বলবেন?!শক্ত যুক্তি। অখন্ডনীয় তো বটেই।

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   প্যারানরমাল বা জ্বীন বিষয়ে ইসলাম কি বলে ?

জীবাশ্মঘটিত প্রমাণঃ


বিবর্তনবাদ অনুযায়ী তারা মনে করে যে প্রথমে মাছ জাতীয় প্রাণী তারপর তাদের থেকে বিবর্তিত হয়ে উভচর প্রানী তৈরি হয়েছে। সে উভচর আবার বিবর্তিত হয়ে সরীসৃপ হয়েছে, সেই সরীসৃপ থেকে আবার পাখি এবং স্তন্যপায়ী প্রানী তৈরি হয়েছিল। তাহলে যেহেতু সময়ের আবর্তণে একটা পর্বের প্রাণী আরেকটা পর্বের প্রাণীতে রুপান্তরিত হয়েছে তাহলে নিশ্চয় এমন কিছু হাড়গোড় (যাকে আমরা জীবশ্ম (fossil) বলতে পারি) পাওয়া যাওয়ার কথা যা পুরোপুরি সরীসৃপও নয় আবার পাখিও নয়। অর্ধ-সরীসৃপ অর্থ পাখি টাইপের কিছু কিংবা অর্ধ সরীসৃপ অর্ধ স্তন্যপায়ী টাইপের। এগুলোকে মিসিং লিংক (missing link) বলে। ডারউইন যে বইটি লিখেছিলেন সেখানে একটা চ্যাপ্টার ছিল “Difficulties of theory”। সেখানে তিনি বলেছেন এরকম কোন মিসিং লিংক পাওয়া যায়নি, তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, এমন লিংক পাওয়া যাবে এবং তার থিউরী সঠিক প্রমাণিত হবে।
বিবর্তনবাদীরা এ ‘মিসিং লিংক’ আবিষ্কারের অনেক চেষ্টা করেছেন। যেমন তোমাদের বইতে একটা উদাহরণ দেয়া আছে যার নাম Archaeopteryx। এটির সরীসৃপের মত পা ও দাঁত এবং পাখির মত পালক,ডানা ও চঞ্চু আছে।
প্রকৃতপক্ষে এ ফসিলটি নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। পাখিদের উড়ার জন্য বুকের একটা হাড় খুব সহায়ক। এ ফসিলটি মধ্যে প্রথমদিকে সেটা পাওয়া যায়নি। তাই বিবর্তনবাদীরা বলা শুরু করল এটা এমন একটা পাখি যে উড়তে পারেনা।মূলত এ কারণেই তারা একে অর্ধসরীসৃপ-অর্ধপাখি নাম দিয়েছিল। পরবর্তীতে এর আরো কিছু ফসিল আবিষ্কার হয় যেখানে বুকের হাড়টি পাওয়া যায়। এটা ছিল বিবর্তনবাদীদের জন্য একটা বড় ধাক্কা। তার উপর তখনকার কিছু পাখি ছিল যাদের দাঁত আছে এবং তারা পরিপূর্ণ পাখি। তাই দাঁত থাকলেই পাখি হতে পারবেনা এমন কোন কথা নেই। আর নখরযুক্ত পা (claw) এখনকার কিছু পাখিদের মধ্যেও দেখা যায়। তবে যে বিষয়টি এ প্রমাণের বিরুদ্ধে বিবর্তনবাদীদের মর্মান্তিক অবস্থায় ফেলে দিয়েছে তা হলো- তারা যে ডায়নোসর অর্থাৎ সরীসৃপ থেকে এ Archaeopteryx এসেছে বলতো সে ডায়নোসরটির বয়স এ পাখিটির চেয়ে কম। অর্থাৎ তারা বলতে চাচ্ছে ছেলের চেয়ে বাবার বয়স কম? একটু উদ্ভট লাগছে কি? একোন ধাঁধায় ফেলল বিবর্তনবাদীরা!
তোমাদের বইতে ‘জীবন্ত জীবাশ্ম’ বলতে একটা প্যারাগ্রাফ আছে। এটা আসলে কি? বইয়ের ভাষায়-কতগুলো জীব সুদূর অতীতে উৎপত্তি লাভ করেও কোনরকম পরিবর্তন ছাড়াই এখনো পৃথিবীতে বেঁচে আছে। তারাই মূলত জীবন্ত জীবাশ্ম। চোখ বন্ধ করে এক মিনিট চিন্তা করো তো। এটা বিবর্তনবাদের পক্ষের প্রমাণ নাকি বিপক্ষের? ……চিন্তা……চিন্তা…
বিবর্তনবাদ থিউরী অনুযায়ীতো এসকল প্রানী গুলো পরিবর্তন হওয়ার কথা ছিল।কিন্তু কোন রকম পরিবর্তন ছাড়া ১৭ কোটি বছর ধরে চিংড়ী চিংড়ীর মতোই আছে,তিমি ১৯ কোটি বছর এবং আমাদের পরিবারের সদস্য তেলাপোকাটি ৩৫ কোটি বছর ধরে নূন্যতম পরিবর্তন না হয়ে অবিকৃত অবস্থায় রয়ে গেল! একি করে হল!
“ ক্যামব্রিয়ান পিরিয়ড” নামে আজ থেকে ৫২-৫৩ কোটি বছর আগে এমন একটা সময় ছিল যখন কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রাণীর হঠাৎ উদয় হলো। কিন্তু বিবর্তনবাদী দের বক্তব্য অনুযায়ী তো প্রাণীদের এরকম হঠাৎ উদয় হওয়ার কথা না, তারা তো তার পূর্ববতী প্রানী থেকে আবির্ভাব হওয়ার কথা। এ সমস্যার সমাধান করতে তাদেরকে বেশ মাথার চুল ছিঁড়তে হচ্ছে।
বানর সদৃশ মানুষের ছবিঃ আমাদের কি বোকা বানানো হচ্ছে?
আমরা বিভিন্নসময় পত্রিকায় কিংবা বইপত্রে বানর (Ape) সদৃশ কিছু মানুষের ছবি দেখি। দেখে মনে হয় বানরজাতীয় প্রাণীগুলো থেকে এরকম মানুষের আবির্ভাব হয় সেখান থেকে আজকের যুগের আমাদের মত আধুনিক মানুষের অবয়ব এসেছে। আচ্ছা অর্ধ বানর-মানুষের এ ছবিগুলো কিভাবে আঁকা হয়? তখন তো আর ক্যামেরা ছিলনা যে ছবি তুলে রেখেছে। তোমাদের বিজ্ঞান শাখার জীব বিজ্ঞান বইতেও এরকম একটি ছবি আছে। মূলত বিজ্ঞানীরা কোন হাড়গোড় কিছু পেলে সেটার উপর ভিত্তি করে কল্পনা করে পুরো একটি মানুষের অবয়ব এঁকে ফেলে।
১৯১২ সালের দিকে বিজ্ঞানীরা ইংল্যান্ডে মাটি খুঁড়তে গিয়ে মুখের চোয়াল এবং মাথার খুলির কিছু অংশ আবিষ্কার করল। এ ছোট দুটি হাড়ের ভিত্তিতে তারা পুরো একটা বানর সদৃশ মানুষ এঁকে ফেলল এবং নাম দিল Piltdown Man। দীর্ঘ চল্লিশ বছর, এটাই বিবর্তনবাদের প্রমাণ এবং আমরা এভাবেই বানর সদৃশ প্রাণী থেকে এসেছি বলে প্রচার করল। ৫০০ ও বেশী PhD শুধু এটা নিয়েই করা হল। ১৯৪৯ সালে পরীক্ষা করে দেখা গেল,খুলিটি ৫’শ বছর আগের আর চোয়ালটি খুব বেশি দিনের না। অথচ কি সুন্দর করে দুটোকেই একই মানুষের নামে চালিয়ে দিয়ে পুরো অবয়ব এঁকে ফেলল!
আরেকবার কি হল, একটা দাঁত পাওয়া গেল। এই একটি মাত্র দাঁতের উপর ভিত্তি করে পুরো মানুষটাকে এঁকে ফেলল এবং নাম দিল Nebraska Man। যে কেউ দেখলে মনে করবে আমরা বানরজাতীয় প্রাণী থেকে এসেছি। এ চিত্রের চেয়ে উত্তম প্রমান আর কি হতে পারে! কি হাস্যকর! । কয়েকবছর পর আবিষ্কার হল এটা বানরের দাঁতও না মানুষের দাঁতও না বরং একটা আমেরিকান শূকরের দাঁত। তাজ্জব ব্যাপার না!
এরকম আরো অসংখ্য উদাহরণ আছে। সব শোনার মত ধৈর্য্য তোমাদের আছে কি?

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   প্যারানরমাল বা জ্বীন বিষয়ে ইসলাম কি বলে ?

collected from:

MUZAHID RASEL

MuslimPoint Organization

About MuslimPoint Organization

MuslimPoint একটি অনলাইন ভিত্তিক ইসলামী প্রশ্নোত্তর, গ্রন্থাগার, ব্লগিং, কুরআন, হাদিস, কুইজ এবং বিষয় ভিত্তিক রেফারেন্স প্ল্যাটফর্ম।

View all posts by MuslimPoint Organization →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *