বিশ্বকাপ আয়োজন করে কাতারের কি লাভ বা ক্ষতি হলো? কেনো অন্য দেশের তুলনায় তাদের বেশি টাকা খরচ হচ্ছে? FIFA World Cup Qatar in Bangla.

qatar world cup কাতারের ফুটবল বিশ্বকাপ
বিশ্বকাপ আয়োজন করে কাতারের কি লাভ বা ক্ষতি হলো? কেনো অন্য দেশের তুলনায় তাদের বেশি টাকা খরচ হচ্ছে? FIFA World Cup Qatar in Bangla.

আজকে আমরা সমসাময়িক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জানবো। আমরা সকলে জানি যে বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে বড় ক্রীড়া ইভেন্ট ফুটবল বিশ্বকাপ। আর এবার জমজমাট আসরটি বসেছে আরব রাষ্ট্র কাতারে। অর্থাৎ এবারের ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনের মূল দায়িত্ব নিয়েছে কাতার।

এখন প্রথমেই বলে নিই, আজকে আমরা জানবো, কেনো অন্যান্য দেশের তুলনায় এই ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন করতে কাতারের এত বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ হচ্ছে। এবং এর সাথে আরো জানার চেষ্টা করবো, বিশ্বকাপ আয়োজনে কাতার কি এমন করেছে যেটা অন্য দেশ করে নাই বা আসলে মূল সমস্যা টা কোথায় যার কারণে অন্যান্য দেশের তুলনায় এই বিশ্বকাপ আয়োজন করতে কাতারের এত বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ হচ্ছে।
এবং সবশেষে জানবো, কাতার কেনো বিশ্বকাপ আয়োজন করে এতো বিপুল পরিমাণ অর্থ নষ্ট করছে? আসলে তাদের লাভ বা উদ্দেশ্য টাই বা কি? তারা কি কোন লাভ বা উদ্দেশ্য ছাড়ায় এমনটা করছে? এসকল প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো এই লেখাতে।

[আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এই বিষয়ে একটি ভিডিও আছে। চাইলে সেটা এখানে ক্লিক করে দেখে নিতে পারেন।]

আপনাদের জেনে রাখা ভালো হবে যে, দ্য ইকোনমিস্টের তথ্য অনুযায়ী, এই বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রস্তুতি বাবদ এরই মধ্যে কাতার প্রায় ৩০ হাজার কোটি ডলার খরচ করে ফেলেছে। এবং প্রতিযোগিতা চলাকালীন খরচের পরিমাণ আরও অনেক বেড়ে যাবে। অথচ আপনারা জেনে অবাক হবেন যে, ২০১৪ সালে ব্রাজিলে বিশ্বকাপ আয়োজন করতে খরচ করেছিল ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার এবং ২০১৮ সালে রাশিয়ায় বিশ্বকাপ আয়োজনে খরচ করেছিল ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার যার তুলনায় কাতার ব্যয় করছে অনেক অনেক গুন বেশি।

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   ইতিহাস বা প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ক আয়াত

এখন মূল বিষয়ে আসা যাক। আসুন প্রথমে জেনে নেওয়া যাক, কেনো অন্যান্য দেশের তুলনায় বিশ্বকাপ আয়োজন করতে কাতারের এত বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ হচ্ছে।

প্রথমত এটা জেনে রাখা ভালো হবে যে, কাতার মধ্যপ্রাচ্যের খুব ছোট্ট একটা দেশ। দেশটির আয়তন মাত্র ১১,৪৩৭ বর্গ কি.মি. । আর যেহুতু আমরা জানি যে মধ্যপ্রাচ্য মানেই মরুভূমি, সুতরাং কাতার ও এর ব্যাতিক্রম নয়। কাতার হলো মরুভূমির দেশ। এখন এই মরুভূমির মাঝে বিশ্বকাপ আয়োজন করার জন্য কাতারকে সব করম ব্যবস্থা করতে হয়েছে। যেমন আয়োজনে যে খরচ করেছে তার বিশাল একটা অংশ মূলত ব্যয় হয়েছে অবকাঠামো নির্মাণে। কারণ বিশ্বকাপের জন্য কাতারে আটটি নতুন স্টেডিয়াম তৈরি করা হয়েছে। এর সাথে ফুটবলারদের অনুশীলনের জন্যও মাঠের বন্দোবস্ত করতে হয়েছে। এই স্টেডিয়াম, মাঠ ও দর্শকদের সুযোগ-সুবিধার জন্য খরচ করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ।

এরপরও কাতারে বিশ্বকাপ দেখতে প্রায় ১২ লক্ষ দর্শকের যাওয়ার কথা। কিন্তু শুনলে অবাক হবেন যে, কাতারে সব মিলিয়ে হোটেলে ঘরের সংখ্যা মাত্র ৩০ হাজারের মতো। তার মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ ঘর বুক করে রেখেছে ফিফা। কারণ ফুটবলার ও তাদের পরিবার, বিনিয়োগকারী এবং বিশেষ অতিথিদের জন্য সেই সব ঘর বুক করা হয়েছে। এখন দর্শকদের জন্য নতুন অনেক হোটেল তৈরি করতে হয়েছে কাতারকে। এই হোটেল তৈরিতেও বিপুল পরিমাণ খরচ হয়েছে তাদের।

এছাড়া তাদের আরো একটি বড় অংশ খরচ হয়েছে মেট্রো নেটওয়ার্ক তৈরিতে। বিশ্বকাপের খেলা দেখতে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ এক শহর থেকে আরেক শহরে যাবেন। তাঁদের যাতায়াত সহজ করতেই মূলত এই মেট্রোব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। মূলত এসব কারণেই অন্যান্য দেশের তুলনায় বিশ্বকাপ আয়োজন করতে কাতারের এত বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হচ্ছে।

এখন আসুন জেনে নেওয়া যাক, কাতার কেনো বিশ্বকাপ আয়োজন করে এতো বিপুল পরিমাণ অর্থ নষ্ট করছে? আসলে তাদের লাভ বা উদ্দেশ্য টাই বা কি? তারা কোন লাভ বা উদ্দেশ্য ছাড়ায় এমনটা করছে কি না?

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   তাওহীদ বিষয়ক

প্রথমত মনে করিয়ে দিই যে, কাতার মধ্যপ্রাচ্যের খুব ছোট্ট একটা দেশ এবং যেহুতু মধ্যপ্রাচ্য মানেই মরুভূমি, সুতরাং কাতার দেশটাও মরুভূমির দেশ। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো কাতারের অর্থনীতি অনেক সমৃদ্ধ এবং বর্তমানে মাথাপিছু আয়ের হিসেবে কাতার বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলির একটি।
এখন কথা হলো যে, কাতারে আসলে টাকা আসে কোথা থেকে? মূলত দেশটিতে খনিজ তেল এর অনেক বড় মজুদ আছে। আর একারণেই তাদের আছে বিপুল পরিমাণ পেট্রোডলার।

এখন কথা হলো, মোটামুটি সবাই জানে যে আগামি প্রায় ৪০ বছরের মধ্যে তেলের রিজার্ভ শেষ হতে যাচ্ছে। এখন তেলের এই রিজার্ভ যদি শেষ হয়ে যায় তাহলে কাতারের অর্থ উপার্জনের আর একটি মাত্র ভালো অপশন বাকি থাকবে এবং সেটি হলো ট্যুরিজম। অর্থাৎ প্রতিবছর বিভিন্ন দেশ থেকে কাতারে যে পর্যটকরা ভ্রমণ করেন তার মাধ্যেমে কাতার অনেক বড় অংকের টাকা উপার্জন করে থাকে। আর এজন্যই মূলত কাতার তেলের রিজার্ভ শেষ হওয়ার পরে এই ট্যুরিজম এর মাধ্যমে তাদের দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে চাই।

এখন কাতারে ট্যুরিজম বা পর্যটক সংখ্যা আরো বাড়াতে কাতারের প্রয়োজন বিশাল ব্রান্ডিং বা মার্কেটিং। কারণ ওই এলাকায় কাতারের প্রতিদ্বন্দ্বী হলো দুবাই। এখন দুবাইকে পিছনে ফেলানোর জন্য তাদের এই বিশাল ব্রান্ডিং বা মার্কেটিং দরকার। মূলত এই বিশ্বকাপ আয়োজনের মাধ্যমে আগামি ১ মাস পুরো দুনিয়া জানবে কাতার কি জিনিস, কাতারে কি কি পাওয়া যায়, কি কি বেনিফিট আছে সেখানে বা কাতার কতো লাক্সারিয়াস ইত্যাদি। অর্থাৎ এর মাধ্যমে তাদের বিশাল ব্রান্ডিং বা মার্কেটিং হয়ে যাচ্ছে।

এরপরেও স্পন্সরশীপ, টিকিট, এয়ারলাইন্স, হোটেল ইত্যাদির মাধ্যমেও বিপুল পরিমাণ অর্থ তারা আয় করবে। মূলত এতো বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করার পেছনে আসল কারণ এটা নয় যে কাতার কেবল দেশ জুড়ে রাস্তাঘাট, হোটেল, স্টেডিয়াম, পার্কই গড়ে তুলতে চেষ্টা করেছে, বরং তাদের সুদূরপ্রসারি চিন্তায় ছিল অতিমাত্রায় ‘সফট পাওয়ার’ সঞ্চয় করা। ‘সফট পাওয়ার’ বলতে বোঝায় শক্তি প্রদর্শন না করে পারস্পরিক সহযোগিতা বা বিশেষ কোনো দিক উপস্থাপনের মাধ্যমে অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টার মাধ্যমে নিজের অবস্থান জানান দেওয়া। যেটা কাতার বিশ্বকাপ আয়োজনের মাধ্যমে খুব ভালোভাবেই করতে পারছে।

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   নারী বিষয়ক আয়াত

এছাড়াও আগেই বলেছি প্রায় মাসব্যাপী বিশ্বকাপে কয়েক লাখ লোকের সমাগম হবে দেশটিতে। এতে পর্যটন ব্যবসা, হোটেল ও রেস্টুরেন্টসহ অন্যান্য সকল ক্ষেত্রের ব্যবসায়ীদের আয় বৃদ্ধি পাবে। এবং সবচেয়ে গুরুতপূর্ন বিষয় হলো বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পরও নতুন নতুন অবকাঠামো, সড়ক এবং পরিবহন ব্যবস্থা দেশেটির অর্থনীতিতে অনেক ভূমিকা রাখবে।

সুতরাং, এ কথা বলাই যেতে পারে যে, ২০২২ বিশ্বকাপের সফল আয়োজনের মধ্য দিয়ে কাতার এক মহাকাব্যের জন্ম দিতে যাচ্ছে।

MuslimPoint Organization

About MuslimPoint Organization

MuslimPoint একটি অনলাইন ভিত্তিক ইসলামী প্রশ্নোত্তর, গ্রন্থাগার, ব্লগিং, কুরআন, হাদিস, কুইজ এবং বিষয় ভিত্তিক রেফারেন্স প্ল্যাটফর্ম।

View all posts by MuslimPoint Organization →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *