রোজার মাসে কুরআন খতম করার বিধান কি? কুরআন খতমের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন সীমারেখা কত দিন? বিস্তারিত জেনে নিন

রোজার মাস কুরআন
রোজার মাসে কুরআন খতম করার বিধান কি? কুরআন খতমের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন সীমারেখা কত দিন? দলিলসহ বিস্তারিত জেনে নিন।

ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে রমাদান মাসে পবিত্র কুরআন অধিক হারে তেলওয়াত করা এবং খতম করার চেষ্টা করা মুস্তাহাব;  কিন্তু ওয়াজিব নয়। অর্থাৎ কেউ রমাদানে সম্পূর্ণ কুরআন খতম না করতে পারলেও গুণাহ হবেনা। তবে রমাদানে কুরআন খতম দিতে পারা অধিক উত্তম এবং অধিক ফজিলতপূর্ণ কাজ। কারণ সর্বাধিক কুরআন তেলাওয়াতের মাস রামাযান। প্রত্যেক রামাযানে জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে কুরআন মাজীদ শুনাতেন। তাই তিনিও এ মাসে অধিক হারে কুরআন তেলাওয়াত করতেন। এমর্মে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে- যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুফাসসিরকুল শিরোমণি, উম্মাহ’র শ্রেষ্ঠ ইলমী ব্যক্তিত্ব, সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা) [মৃত: ৬৮ হি.] বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) অধিক দানশীল ছিলেন। যখন জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) রামাযানে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করেন, তখন তিনি আরও বেশি দান করতেন। কারণ রামাযানের প্রতি রাতে তিনি জিব্রীল (আলাইহিস সালাম)-এর নিকট কুরআন তেলাওয়াত করতেন এবং প্রবাহিত বাতাসের ন্যায় অধিকহারে দান করতেন। (সহীহ বুখারী, হা/১৯০২; নাসাঈ, হা/২০৯৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৪২৫; সহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৩৪৪০; মিশকাত, হা/২০৯৮)। আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা) অপর বর্ণনায় আরো বলেছেন, প্রতি বছর (রামাযানে) জিব্রীল (আঃ) রাসূল (ﷺ)-এর সঙ্গে একবার কুরআন পাঠের পুনরাবৃত্তি করতেন। কিন্তু যে বছর তিনি মৃত্যুবরণ করেন সে বছর তিনি রাসূল (ﷺ)-এর সঙ্গে দু’বার কুরআন পাঠ করেন। (সহীহ বুখারী হা/৪৯৯৮; মিশকাত হা/২০৯৯)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদর্শ অনুসরণ করে রমজানে কুরআন তিলাওয়াত করার জন্য সচেষ্ট হওয়া সালাফদের রীতি ছিল।

সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল; রোযাদারের জন্য কি রমযানে কুরআন খতম করা ওয়াজিব? তিনি জবাব দিলেন;রমজানে কুরআন খতম করা রোজাদারের জন্য ওয়াজিব নয়, তবে তার উচিত রমজানে প্রচুর পরিমাণে কুরআন তিলাওয়াত করা, কারণ এটাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত এবং তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি রমযানে জিব্রীল (আঃ)-এর সাথে কুরআন পাঠ করতেন(উসাইমীন, মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল,খন্ড:২০ পৃষ্ঠা:৫১৬)

শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে কুরআন খতমের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন সীমারেখা কত দিন?

শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে পবিত্র কুরআনুল কারিম খতম দেওয়ার সর্বোচ্চ সময়সীমা নিয়ে আহালুল আলেমগনের মধ্যে যদিও কিছুটা মতানৈক্য রয়েছে; তবে বিশুদ্ধ কথা হলো সর্বোচ্চ কোন সময়সীমা নেই। কারণ রাসূল (ﷺ) থেকে নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে কুরআন খতম করা বাধ্যতামূলক এমন কোন দলিল নেই। কিন্তু তিন দিনের কমে খতম দেওয়া নিষেধ মর্মে রাসূল (ﷺ) থেকে দলিল রয়েছে। তবে রমাদানে রাসূল (ﷺ) অধিক কুরআন তেলোয়াত করতেন এবং মৃত্যুর পূর্বে জীবনের শেষ বছর দুইবার কুরআন খতম করেছিলেন। সেই হাদীসের আলোকে কোন কোন আহালুল আলেমগনের মতে প্রতি বছরে অন্তত দুইবার পবিত্র কুরআন খতম দেওয়া উচিত। যেমন;

শাফেয়ী মাজহাবের প্রখ্যাত ইমাম আল-হিন্দী রাহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু:৭১৫ হি:) বলেছেন, মুসলিমকে বছরে দুবার কুরআন খতম করা উচিত; যদি সে এর বেশি তেলাওয়াত করতে না পারে। (ফাত-আল-মুঈন)। হানাফি মাযহাবের ইমাম আবু হানীফা (রাহিমাহুল্লাহ)-এর জন্ম ৮০ হি./৬৯৯ খ্রি. এবং মৃত্যু ১৫০ হি./৭৬৭ খ্রি বলেন, “যে ব্যক্তি বছরে দুবার কুরআন কুরআন খতম করবে, সে তার উপর তার প্রাপ্য হক পূর্ণ করল। হাম্বালী মাযহাবের এবং আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের ইমাম,শাইখুল ইসলাম আবু আব্দুল্লাহ আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন হাম্বাল আশ-শাইবানী (রাহিমাহুল্লাহ) [জন্ম ১৬৪ হি./৭৮০ খ্রি. এবং মৃত্যু ২৪১ হি./৮৫৫ খ্রি.] বলেছেন, বৈধ ওজর ব্যতীত চল্লিশ দিনের বেশি সময় ধরে পুরো কুরআন খতম করা অপছন্দনীয়। কারণ আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আল-আস রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আমি কয়দিনে কুরআন খতম করব? তিনি প্রথমে বললেন,চল্লিশ দিনে তারপর বলবেন এক মাসে। অবশেষে বললেন, সাত দিনে খতম করবে। সর্বশেষ বললেন, যে ব্যক্তি তিন দিনের কমে কুরআন খতম করে, সে কুরআনকে হৃদয়ঙ্গম করতে পারে না। (সহীহ আবু দাঊদ হা/১২৬১, তিরমিজি হা/২৯৪৭ সিলসিলা সহীহাহ্‌ হা/১৫১২, বিস্তারিত দেখুন, কাতার ভিত্তিক বিখ্যাত ওয়েবসাইট ইসলাম ওয়েব, ফাতওয়া নং-৩৫৫৬৫৭)

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   শেষ জামানায় (الروم) রোম সম্রাজ্য ও মুসলীম উম্মাহ সম্পর্কে ব্যাখ্যা ও উদাহরণসহ কেয়ামতের আলামত ও ভবিষ্যতবাণী

তবে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে এবং আহালুল ইমামগণের বিশুদ্ধে মতে রমাদানে অথবা রমাদানের বাহিরে সর্বাবস্থায় সর্বোচ্চ কোনো সীমারেখা নেই। কিন্তু তিন দিনের কমে কুরআন খতম দেওয়া মাকরুহ। প্রত্যেক মুসলিমের উপর কুরআনের অধিকার হলো এটি তেলাওয়াত করা, এটিকে সম্মান করা, এর শিক্ষার উপর আমল করা এবং যেকোন কুরআনের যে কোন বিধান পরিত্যাগ করা থেকে বিরত থাকা। যার সামর্থ্য আছে তার জন্য ন্যূনতম তিন দিনের মধ্যে, এক মাস বা তার কম সময়ে পুরো কুরআন তেলাওয়াত করা উত্তম।আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমি কয়দিনে কুরআন খতম করব? তিনি বললেন, এক মাসে। তিনি বললেন, আমি এর চেয়ে অধিক শক্তি রাখি। আবু মুসার বর্ণনায় রয়েছে অতঃপর আলোচনার মাধ্যমে সময়ের ব্যবধান কমিয়ে অবশেষে বললেন, সাত দিনে খতম করবে। তিনি বললেন, আমি এর চেয়েও বেশী শক্তি রাখি। তিনি বললেন, যে ব্যক্তি তিন দিনের কমে কুরআন খতম করে, সে কুরআনকে হৃদয়ঙ্গম করতে পারে না।(আবূদাঊদ হা/১৩৯০; তিরমিযী হা/২৯৪৬; সহীহাহ হা/১৫১৩; মিশকাত হা/২২০১)। হাদীসের বাহ্যিক অর্থ থেকে বুঝা যায় যে, তিন দিনের কমে কুরআন খতম করা মাকরূহ। এ মতের উপর অধিকাংশ আলিম, মুহাদ্দিস ফাতাওয়া প্রদান করেছেন। এর কমে খতম করলে কুরআনকে বুঝতে পারবে না এবং তার প্রতিপাদ্য বিষয়াদি অনুধাবন করতে সক্ষম হবে না। তবে তার সাওয়াব হবে। তিন দিনের কমে খতম না করার আরো অনেক বর্ণনা রয়েছে। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনো এক রাত্রে পূর্ন কুরআন খতম করেছেন বা কখনো সকাল পর্যন্ত পূর্ণ রাত্র সালাত আদায় করেছেন। কিংবা রমাযান মাস ব্যতীত পূর্ণ এক মাস কখনো সাওম (রোযা) পালন করেছেন বলে আমার জানা নেই। (সুনানে আন-নাসায়ী হা/২৩৪৮)

শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন, ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) কতবার কুরআন তিলাওয়াত করতে হবে তা সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, অধিকাংশ আলিমের অভিমত হলো যে- এর কোন নির্দিষ্ট মেয়াদ নেই। এটা পাঠকের উৎসাহ, আগ্রহ, চাহিদা, শক্তির উপর নির্ভরশীল। ব্যক্তি বিশেষ অবস্থার কারণে পড়ার সময় বিভিন্ন রকম হতে পারে। সুতরাং, যেই ব্যক্তির দ্রুত পড়ার সাথে সাথে আয়াতের ভাবার্থ, তাৎপর্য, মাহাত্ম্য পূর্ণরূপে বুঝতে পারবে সে তাড়াতাড়ি পড়বে। আর এর ব্যতিক্রম হলে সে ধীরে ধীরে পড়বে। মির্‘আতুল মাফাতীহ গ্রন্থকার বলেন, আমার নিকটে আহমাদ, ইসহাক-এর মতটি পছন্দনীয়। কেননা আবদুল্লাহ ইবনু উমার ও আয়িশাহ্ এর হাদীস সর্বাধিক অনুসরণযোগ্য। (আল-তিবিয়ান পৃষ্ঠা:৭৬; আরো বিস্তারিত জানতে দেখুন- ইসলামী সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং -৬৫৭৫৪)

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   হজ্জ ও ওমরাহ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ লেখা ।

বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] কে কুরআন খতম করার সবচেয়ে কম সময় কোনটি? এমন প্রশ্ন করা হলে উত্তরে শাইখ বলেন, কুরআন খতম করার কোন নির্দিষ্ট সীমা নেই। তবে তিন দিনের কম সময়ে না পড়াই উত্তম, যেমন আবদুল্লাহ ইবনে আমরের হাদীসে আছে- যে তিন দিনের কম সময়ে পাঠ করে সে বুঝতে পারে না। বরং তেলোয়াত শুদ্ধ করা আয়াতের ভাবার্থ, তাৎপর্য, মাহাত্ম্য বুঝে পড়াই তার জন্য উত্তম।উদ্দেশ্য তাড়াহুড়ো নয়, রমজান মাসে তার অধিক পড়া উচিত, যেমনটি সালাফরা রমাদানে বেশি বেশি কুরআন তেলোয়াত করেছিলেন। তবে এই কুরআন তেলোয়াত হবে গবেষণা এবং বুঝে বুঝে আর এভাবে পড়তে গিয়ে যদি তিন দিনে খতম হয়ে যায় তাহলে সেটি উত্তম ভাল। কিন্তু সুন্নাত পদ্ধতি হলো রমজান ও অন্যান্য সময়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। বরং প্রত্যেকের উচিত কুরআন তেলোয়াতে তাড়াহুড়া না করা, ধীর-স্থিরভাবে তেলাওয়াত করা; যেমনটি রাসূল (ﷺ) আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.)কে নির্দেশ দিয়েছেন। রাসূল (ﷺ) তাকে তিন দিনের কমে কুরআন খতম করতে নিষেধ করেছেন। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি তিন দিনের কমে কুরআন খতম করে, সে কুরআনকে হৃদয়ঙ্গম করতে পারে না। এখানে তিনি বলেননি “রমজান ব্যতীত।” কিছু কিছু সালাফ এটিকে রমজান ছাড়া অন্য কিছু হিসাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন। তবে সবচেয়ে বিশুদ্ধ মত হলো প্রত্যেক মুমিনের উচিত কুরআনের অর্থ জানা, কুরআন তেলাওয়াতে তাড়াহুড়া না করা, যত্নসহকারে তেলাওয়াত করা, কুরআনের মর্ম উপলদ্ধি করা এবং কুরআন নিয়ে চিন্তা ভাবনা বা গবেষণা করা। এটি তিন দিনের কম সময়ের মধ্যে খতম না করাই উত্তম। কেননা এটি রাসূল (ﷺ) এর সুন্নাহ অনুযায়ী করা উচিত রমজান হোক অথবা রমজানের বাহিরে। (ইমাম বিন বায রাহিমাহুল্লাহ মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খন্ড:১১ পৃষ্ঠা:৩৫০)

কুরআনুল কারিম খতম সংক্রান্ত সাহাবায়ে কেরাম থেকে বিভিন্ন রকমের আমল রয়েছে। যেমন:

(১) উসমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এক রাতে কুরআন খতম করেন। আব্দুর রহমান তায়মী হতে বর্ণিত; তিনি বলেন, আজকে রাত জাগরণে আমার উপর কেউ বিজয়ী হতে পারবেনা। আমি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় শুরু করলাম। হঠাৎ করে আমি পিছন থেকে কোন ব্যক্তির উপস্থিতি অনুভব করলাম। আমি পিছনে তাকিয়ে দেখি উসমান বিন আফফান (রাঃ)। আমি তার জন্য জায়গা ছেড়ে দিলাম। তিনি সালাত শুরু করলেন এবং কুরআনের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত শেষ করলেন। অতঃপর রুকু সিজদাহ করে তিনি সালাত শেষ করলেন। আমি বললাম, এই বৃদ্ধ হয়ত সন্দেহে পড়েছেন। সালাত শেষে আমি বললাম, হে আমীরুল মুমেনীন, আপনি তো এক রাক‘আত আদায় করলেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ এইটা আমার বিতরের সালাত।’ (শারহু মা‘আনিল আছার হা/১৬১৯; ইবনুল মুবারক, আয-যুহুদ হা/১২৭৬; বায়হাকী, সুনানুল কুবরা হা/৪৫৬১; দারাকুৎনী হা/১৫)

(২) উবাই ইবনু কাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, নিশ্চয় আমরা আট রাতে কুরআন খতম করতাম।(আল-ফিরইয়াবী, ফাযাইলুল কুরআন, ১ম খ-, পৃ. ২২১)

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   ব্যাখ্যা ও উদাহরণসহ কেয়ামতের আলামত ও ভবিষ্যতবাণী পর্ব-৪

(৩) ইব্রাহীম আল-নাখায়ী (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আল-আসওয়াদ রমজানে প্রতি দুই রাতে কুরআন খতম করতেন। (আল-সিয়ার:খন্ড:৪ পৃষ্ঠা:৫১)।

(৪) কাতাদাহ সাত দিনে কুরআন খতম করতেন এবং রমজান এলে প্রতি তিন দিনে কুরআন খতম করতেন।শেষ দশদিন এলে প্রতি রাতেই তা পূর্ণ করতেন। আল-সিয়ার: খন্ড:৫ পৃষ্ঠা:২৭৬)

(৫) মুজাহিদ থেকে বর্ণিত যে, তিনি রমজানের প্রতি রাতে কুরআন খতম করতেন। (আল-নাওয়াবী রচিত আল-তিবিয়ান পৃষ্ঠা:৭৪)। ইমাম নববী বলেন, এর সনদ সহীহ।
(৬) মুজাহিদ বলেন; আলী আল-আযদী রমজানের প্রতি রাতে কুরআন খতম করতেন। (তাহদীব আল-কামাল খন্ড:২ পৃষ্ঠা:৯৮৩)

(৭) আল-রাবী ইবনে সুলায়মান বলেন; শাফিঈ রমজানে ষাট বার কুরআন খতম করতেন।(আল-সিয়ার খন্ড:১০ পৃষ্ঠা:৩৬)

(৮) আল-কাসিম ইবনুল হাফিজ ইবন আসাকির বলেন, আমার পিতা জামাআতে নামায পড়তেন এবং নিয়মিত কুরআন পড়তেন। তিনি প্রতি সপ্তাহে এবং রমজানে প্রতিদিন এটি সম্পন্ন করতেন। (আল-সিয়ার খন্ড:২০ পৃষ্ঠা:৫৬২)

(৯) সালাম ইবনু আবী মুতী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘ক্বাতাদাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) সাতদিনে কুরআন খতম করতেন। আর যখন রমাযান মাস আগমন করত তখন তিনদিনে কুরআন খতম করতেন।’ (সিয়ারু আ‘লামুন নুবালা, ৮ম খ-, পৃ. ৪৯০; কিতাবু মিন আখবারিস সালাফিস সালিহ, পৃ. ১৫৩)

(১০) আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন; আমাদের মধ্যে একজন ছিলেন, যিনি ১০টি আয়াত পাঠ করার পর আর আগে বাড়তেন না। যতক্ষণ না তার মর্ম অনুধাবন করতেন ও সেমতে আমল করতেন।(মুক্বাদ্দামা ইবনু কাছীর; তাফসীর ত্বাবারী হা/৮১, হাদীস সহীহ)

(১১) আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, পিতা ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) ১২বছরে সূরা বাক্বারাহ শেষ করেন। অতঃপর যেদিন শেষ হয়, সেদিন তিনি কয়েকটি উট নহর অর্থাৎ কুরবানী করে সবাইকে খাওয়ান। (ইমাম যাহাবী, তারীখুল ইসলাম, বৈরূত: দারুল কিতাবিল আরাবী, ১ম সংস্করণ ১৪০৭/১৯৮৭, ৩/২৬৭)। ওমর (রাঃ)-এর ন্যায় একজন মহান ব্যক্তির এই দীর্ঘ সময় লাগার অর্থ সূরাটির গভীর তাৎপর্য অনুধাবনে দীর্ঘ সময় ব্যয় করা।

(১২) আব্দুর রহমান আব্দুল্লাহ বিন হাবীব আস-সুলামী (মৃ. ৭২ হি.) বলেন, আমাদেরকে যারা কুরআন পাঠ করিয়েছেন তারা বলতেন, তারা রাসূল (ﷺ)-এর নিকট থেকে যখন কুরআন পাঠ শিখতেন, তখন ১০টি আয়াত জানলে তারা আর তাঁর পিছে পড়তেন না, যতক্ষণ না ঐ আয়াতগুলির উপর তারা আমল করতেন। এভাবে আমরা কুরআন ও তদনুযায়ী আমল সবই শিখতাম।(মুক্বাদ্দামা তাফসীর ইবনু কাসীর সনদ জাইয়িদ)।

(১৩) আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, আমাদের জন্য কুরআনের শব্দাবলী মুখস্ত করা খুবই কঠিন। কিন্তু এর উপর আমল করা সহজ। আর আমাদের পরের লোকদের অবস্থা হবে এই যে, তাদের জন্য কুরআন হেফয করা সহজ হবে। কিন্তু তার উপর আমল করা কঠিন হবে। (মুক্বাদ্দামা তাফসীর কুরতুবী পৃষ্ঠা: ৭৫) অপর বর্ননা ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন কেয়ামতের আলামত হল, ক্বারীর সংখ্যা অধিক হবে এবং ফকীহ (অভিজ্ঞ আলেমদের) সংখ্যা কম হবে।(হাদিস সম্ভাব হা/১৮৪)

(১৪) আব্দুল্লাহ ইবনু শাওযাব (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, উরওয়া ইবনু যুবাইর প্রত্যেক দিন কুরআনের এক চতুর্থাংশ পড়তেন। (হায়াতুত তাবিঈন, ১ম খ-, পৃ. ৫৬০; কিতাবু মিন আখবারিস সালাফিস সালিহ, পৃ. ১৫৩)।

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে জীবনের সকল ক্ষেত্রে এবং কুরআন তেলাওয়াত সহ ইসলামী আদব বা শিষ্টাচার মেনে চলার তাওফীক্ব দান করুন-আমীন! (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)

MuslimPoint Organization

About MuslimPoint Organization

MuslimPoint একটি অনলাইন ভিত্তিক ইসলামী প্রশ্নোত্তর, গ্রন্থাগার, ব্লগিং, কুরআন, হাদিস, কুইজ এবং বিষয় ভিত্তিক রেফারেন্স প্ল্যাটফর্ম।

View all posts by MuslimPoint Organization →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *