সত্যিই কি আদম (আ) শ্রীলঙ্কায় অবতরণ করেছিলেন? জানুন আদম চূড়া এর অজানা রহস্য। Adam’s Peak

আদম (আ) শ্রীলঙ্কায় অবতরণ
সত্যিই কি আদম (আ) শ্রীলঙ্কায় অবতরণ করেছিলেন? জানুন আদম চূড়া এর অজানা রহস্য। Adam’s Peak

আজকে আমরা জানবো শ্রীলঙ্কায় অবস্থিত অ্যাডাম’স পীক নামক একটি স্থান সম্পর্কে। কারণ কথিত আছে যে, হজরত আদম (আ.) নাকি আল্লাহতায়ালা কর্তৃক বেহেশত থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর সর্বপ্রথম এখানেই অবতরণ করেন।

এখন আসলে এই ঘটনাটি কতটুকু সত্য বা প্রকৃতপক্ষে কুরআন ও হাদিসে এই ঘটনার কোন অথেনটিক স্পষ্ট বর্ণনা আছে কিনা সে বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাক।

[আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এই বিষয়ে একটি ভিডিও আছে। চাইলে সেটা এখানে ক্লিক করে দেখে নিতে পারেন।]

প্রথমেই বলে রাখি, এই স্থান ও আদম (আ.) কে নিয়ে অনেক কল্প কাহিনি শোনা যায় যেগুলোর কোন অথেনটিক সোর্স খুজে পাওয়া যায় না।

আসলে বিশ্বজুড়ে সকল মুসলমানই হজরত আদম (আ.) কে পৃথিবীর প্রথম মানব বলে বিশ্বাস করেন।

কথিত আছে যে, আল্লাহতায়ালা কর্তৃক বেহেশত থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর আদম (আ.) সর্বপ্রথম এই শ্রীলঙ্কায় অবস্থিত অ্যাডাম’স পীক নামক স্থানে অবতরণ করেন। আর সমসাময়িক স্থানীয়রা এটিকে সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ বলে মনে করতো। যদিও পরবর্তীতে এটি স্পষ্ট হয়েছে যে, এটি পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতচূড়া নয়।

শ্রীলঙ্কার জঙ্গল থেকে শুরু করে ঊর্ধ্বমুখী হয়ে বিস্তৃত হওয়া এই পদচিহ্ন ৭ হাজার ফিটেরও বেশি উঁচু। স্থানীয় লোকেরা হজরত আদমের (আ.) এই পদচিহ্নকে অনেক পবিত্র মনে করে এবং ভক্তিভরে শ্রীপদ বলে থাকে। বলা হয়ে থাকে যে, এ পাহাড়টি অবয়বের দিক থেকে অনেকটা জাবালে নূরের মতো।

মূলত বছরের চার মাস বৃষ্টি আর মেঘে ভাসে দ্বীপটি। ১৯০৩ সালে পদচিহ্ন সম্বলিত পাহাড়ে উঠার জন্য পাথর দ্বারা সিঁড়ি বানিয়ে লোহার রেলিং দেওয়া হয়। যাতে পর্যটকদের পাহাড়ে উঠতে কোনো ধরনের বেগ পেতে না হয়।

এখানে বলে রাখা ভালো হবে যে, বৈশ্বিকভাবে এই পর্বতচূড়াটি অ্যাডাম’স পীক নামে পরিচিত যার বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘আদমের শৃঙ্গ’।

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময়সীমা , ব্যাখ্যা ও দলিল বা রেফারেন্স সহ

কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই যে, বর্তমানে অনেকেই এই জায়গাটিকে একটি ধর্মীয় তীর্থস্থান বানিয়ে নিয়েছে। ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বছরের এই পাঁচটি মাস দর্শনার্থীদের ভীড়ে স্থানটি জনাকীর্ণ থাকে।

তবে ইন্টারেষ্টিং বিষয় এই যে, অনেক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করে এই পদচিহ্নটি গৌতম বুদ্ধের, আবার অনেক হিন্দুরা বিশ্বাস করে এই পদচিহ্নটি তাদের দেবতা শিবের। আর অন্যদিকে অনেক মুসলমান ও খ্রিষ্টানরা বিশ্বাস করে এটি পৃথিবীর প্রথম মানব হজরত আদমের (আ.)।

এই পদচিহ্নের দৈর্ঘ্য হলো ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি আর প্রস্থে ২ ফুট ৬ ইঞ্চি। যদিও একটি সহিহ হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি যে, আদম (আ.) প্রায় ৬০ হাত লম্বা ছিলেন। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৬২৮)। তবে তার শরীরের প্রশস্ততা ৭ ফুট ছিল এ মর্মে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না।

তবে একটি মজার বিষয় হলো, কথিত আছে, প্রতি বছর একগুচ্ছ প্রজাপতি অ্যাডাম’স পীক অভিমুখে উড়ে যায়। তবে এই প্রজাপতিরা আর ফিরে আসে না; আমৃত্যু ওখানেই বসবাস করে। একারণে স্থানীয়ভাবে অ্যাডাম’স পীকের আরেকটি নাম হলো সামানালাকান্দা, বাংলায় প্রজাপতিচূড়া।

লোকমুখে শোনা যায় যে, হজরত আদম (আ.) যখন এ পাহাড়ে নামেন এবং প্রথমে ‘ডান’ পা রাখেন। এবং পাহাড়ে নামার পর হজরত আদম (আ.) ১০০ বছর পর্যন্ত শুধু ডান পায়ের ওপর ভর করে দাঁড়িয়েছিলেন। এ ১০০ বছর তিনি বাম পা মাটিতে রাখেননি। আবার অনেকে বলে থাকেন যে, হজরত আদম (আ.)-এর ডান পায়ের চিহ্নটা কেবলামুখী অর্থাৎ পবিত্র কাবার দিকে ফেরানো।

মূলত শ্রীলঙ্কা সরকার এই পায়ের চিহ্নটি সংরক্ষণের জন্য একটি চার কোণা বিশিষ্ট বিল্ডিং তৈরি করেছে। সেখানে প্রবেশের জন্য রয়েছে একটি শক্ত লোহার গেট।

আগেই বলেছি যে, আগ্রহী পর্যটক ও সাধারণ মানুষ এ পদচিহ্ন অঙ্কিত দ্বীপটাকে তীর্থস্থান মনে করেন। তাই তো বৃষ্টি ছাড়া বছরের বাকি সময় হাজার হাজার পর্যটক এখানে প্রশান্তি লাভের জন্য হাজির হন; সেখানে বিশেষ উদ্দেশ্য লাভের আশায় যান।

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   কাদিয়ানীরা শুধুই এক দল নয় । বর্তমানে তারা বহু দলে বিভক্ত এবং তাদের আকিদা বা বিশ্বাসে অনেক পার্থক্য আছে । তথ্য ও প্রমাণ সহ বিস্তারিত

সেখানে পর্যটকরা স্বাভাবিকভাবে নিজ নিজ ধর্ম বিশ্বাসমতে ইবাদত-বন্দেগি, আরাধনা-উপাসনা করে থাকেন। ওখানে আবার একটি ঘণ্টাও লাগানো আছে। বিভিন্ন ধর্মের লোকেরা মনোবাসনা পূরণের আশায় ওই ঘণ্টায় ৩৬টা করে বাড়ি দিয়ে থাকে, বিশেষ করে বৌদ্ধরা এটি করে থাকে। কারণ শ্রীলঙ্কা যেহেতু বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ও বৌদ্ধ শাসিত দেশ- ওখানে ঘন্টি দেওয়াটাকে তারা বিশেষ ইবাদত বলে মনে করে।

এখন আসুন মূল আলোচনায়, আসলে এই ঘটনাটি বা কথিত কাহিনীগুলো কতটুকু সত্য বা প্রকৃতপক্ষে কুনআন ও হাদিসে এই ঘটনার কোন অথেনটিক স্পষ্ট বর্ণনা আছে কিনা সে বিষয়ে দেখা যাক।

প্রথমত কুরআন ও সহিহ হাদিসে এই ঘটনার কোন উল্লেখযোগ্য সুস্পষ্ট বর্ণনা নাই। সুতরাং, আদম (আঃ) জান্নাতে নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল খাওয়ার পরে তাকে পৃথিবীতে কোথায় নামানো হয়েছিল তা প্রমাণিত নয়। তবে বিভিন্ন যঈফ ও জাল বর্ণনার ভিত্তিতে বিদ্বানগণ বিভিন্ন স্থানের কথা বলেছেন যেগুলি তাদের ইজতিহাদ মাত্র। শরী‘আতের কোন দলীল নয়।
একদল বিদ্বান মনে করেন, তিনি ভারতে অবতরণ করেছিলেন (ইবনু আসাকির ৭/৪৩৭ পৃ.; যঈফাহ হা/৪০৩)। আরেকদল বিদ্বান মনে করেন তারা আরাফাহ, জেদ্দা, সাফা-মারওয়া কোন এক পাহাড়ে অবতরণ করেছিলেন (তাফসীরে ইবনু কাছীর ১/২৩৭ পৃ.)। ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, এ সকল বর্ণনার কোন প্রমাণ নেই।

এখন শ্রীলংকায় আদম (আঃ)-এর পদচিহ্ন থাকার বিষয়টি প্রাচীনকাল থেকেই প্রসিদ্ধ। ভূগোলবিদ ইয়াকূত হামাভী (৬২৬ হি.), বিশ্ব পরিব্রাজক ইবনে বতুতা (৭৭৯ হি.) প্রমুখ বিদ্বানগণ পাহাড়টিকে ‘জাবালে আদম’ বা আদমের পাহাড় বলে অভিহিত করেছেন (মু‘জামুল বুলদান ৩/২১৬; রিহলাহ ইবনু বতূতা, ২/৪৬১)।

এখন কথা হলো, যেহেতু বিষয়টি কুরআন বা হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয়, অতএব এ ব্যাপারে বেশি বাড়াবাড়ি না করে চুপ থাকাই শ্রেয়। কারণ বর্তমানেও এই স্থান ও আদম (আ.) কে নিয়ে অনেক কল্প কাহিনি শোনা যায় যার উপর ভিত্তি করে অনেকে শিরক এর মতো মারাত্নক পাপে জড়িয়ে পড়ে। যেমন আগেই বলেছি, অনেকে দ্বীপটাকে তীর্থস্থান মনে করেন আবার অনেকেই ইবাদত-বন্দেগি বা আরাধনা-উপাসনা করে থাকেন এটিকে কেন্দ্র করে আর অনেকে তো নিজেদের মনোবাসনা পূরণের আশায় ওইখানে গিয়ে কোন এক ঘণ্টায় নির্দিষ্ট সংখ্যক বাড়ি দিয়ে থাকে। এই কাজ গুলো আসলেই মারাত্নক পর্যায়ের গোনাহ এর কাজ। যেগুলো সম্পর্কে অন্যদের সতর্ক করা আমাদের দায়িত্ব।

কোথায় যাচ্ছেন? আরো নতুন কিছু জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুনঃ   কুরআন আল্লাহর সৃষ্টি মাখলুক নয় , এটি আল্লাহর বাণী , ব্যাখ্যা ও দলিল বা রেফারেন্স সহ
MuslimPoint Organization

About MuslimPoint Organization

MuslimPoint একটি অনলাইন ভিত্তিক ইসলামী প্রশ্নোত্তর, গ্রন্থাগার, ব্লগিং, কুরআন, হাদিস, কুইজ এবং বিষয় ভিত্তিক রেফারেন্স প্ল্যাটফর্ম।

View all posts by MuslimPoint Organization →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *