আসসালামু আলাইকুম । এখানে রেজিস্ট্রেশন না করেই অংশগ্রহণ/ব্যবহার করতে পারবেন কিন্তু সর্বোচ্চ সুবিধার জন্য বিনামূল্যে রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন !
+4 votes
75 views
in মাসআলা মাসায়েল by (280 points)
এটা জানতে চাই যে লম্বা জামা, টুপি, পাগড়ি কি সুন্নতি পোশাক নাকি এগুলো কালচারাল বা নরমাল পোশাক মক্কা-মদিনার জন্য ?

1 Answer

+1 vote
by (345 points)
edited by
প্রকৃতপক্ষে সুন্নতি পোশাক/কাপড় বলতে পোশাকের কোনো নির্দিষ্ট কাটিং/স্টাইল সুন্নাহর মধ্যে পাওয়া যায় না। সুন্নাহ বলতে আমি বোঝাচ্ছি, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিসের মধ্যে আসেনি। অর্থাৎ রাসূল (সা.)-এর সহিহ হাদিসের মধ্যে পোশাকের সুনির্দিষ্ট কোনো কাটিং রাসূল (সা.) জানিয়ে যাননি।
সুতরাং লম্বা জামা, টুপি, পাগড়ি এই পোশাকগুলো এভাবে রাসূল (সা.)-এর কোনো সহিহ হাদিসের মধ্যে পাওয়া যায় না। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা.) পাগড়ি ব্যবহার করেছেন মর্মে সহিহ হাদিস আছে । রাসূলুল্লাহ (সা.) জোব্বা ব্যবহার করেছেন মর্মে সহিহ হাদিস আছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) পাগড়ির নিচে টুপিও পরেছেন মর্মে সহিহ হাদিস পাওয়া যায়।
সুতরাংং এগুলো রাসূল (সা.) ব্যবহার করেছেন, এটি প্রমাণিত হয়েছে, এটা রাসূল (সা.)-এর কাজ। তাই এই কাজগুলো কীভাবে ইসলামী শরিয়তের মধ্যে গুরুত্ব দেওয়া হবে, অর্থাৎ প্রকৃত অবস্থানটি কী হবে, এ নিয়ে বিজ্ঞা আলেম-উলামা দের মধ্যে মতবিরোধ  রয়েছে। জুমহুর/অধিকাংশ আহলুত তাহকিক, মাহকি ওলামায়ে কেরাম মতামত ব্যক্ত করেছেন যে, রাসূল(ছঃ) যেসব কাজ স্বভাবজাত বা মানুষের প্রকৃতিগত কাজ, সেগুলো সবই মূলত আদতের বা অভ্যাস, প্রথা বা প্রচলন এর মধ্যে included/অন্তর্ভুক্ত। তাই রাসূল (সা.) এর এই কাজগুলো অভ্যাসের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে, এগুলো সাধারণত ইবাদতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে না।
এরফলে দেখা গেছে যে এগুলো যদি ইবাদতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতো, তাহলে সাহাবায়ে কেরামকে রাসূলুল্লাহ (সা.) অবশ্যই এভাবেই পোশাক পরতে বা এভাবে কাজ করতে বলতেন কেননা যা যা প্রয়োজন সবই রাসূল(ছঃ) সাহাবিদের শিখিয়ে গেছেন। কিন্তু রাসূল (সা.) এভাবে বলেছেন বা আদেশ/নির্দেশ দিয়েছেন সেটা পাওয়া যায় না । তাই এসব থেকে এটা বোঝা যাচ্ছে বা প্রতিয়মান হচ্ছে যে এগুলো মূলত প্রথাগত প্রচলন বা আদতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল। ফলে অধিকাংশ বা জুমহুর ওলামায়ে কেরামের বক্তব্য এটাই, যে এগুলো মূলত প্রথা বা প্রচলনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত, এগুলো ইবাদতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয়।
তবে কেউ যদি মাথায় পাগড়ি পরেন অথবা মাথায় টুপি পরেন অথবা বড় জোব্বা পরেন, এই কারণে যে রাসূল (সা.)-এর অনুসরণ করার জন্য, যে রাসুল (সা.) ব্যবহার করেছেন, প্রমাণিত হয়েছে, সে কারণে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসার কারণে, তাহলে অবশ্যই তিনি সওয়াব পাবেন আশা করা যায় ইং-শা-আল্লাহ, যেহেতু আল্লাহু কুরআন এর মধ্যে  বলেছেন, ‘আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ।’
অতএব, যেহেতু একটা নমুনা, আদর্শ, মডেল আমার সামনে আছে, এই মডেলের অনুসরণের কারণে, আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর অনুসরণের কারণে তিনি সওয়াব পাবেন। শুধু ওই পোশাকের কারণে নয় বা পোশাকটাকে সুন্নাত আখ্যায়িত করার জন্য নয়। তাই সুন্নতি পোশাক বলতে যদি কেউ মনে করে থাকেন যে সুনির্দিষ্ট কোনো কাটিংকে বা স্টাইলকে, এই কাজটি শুদ্ধ নয়।
তবে রাসূলুল্লাহ (সা.) কোনো পোশাক পরেছেন, এটি প্রমাণিত হলে, যদি কেউ রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ভালোবাসার কারণে, অনুসরণের কারণে পোশাকটি পরেন, তাহলে তিনি সওয়াব পাবেন, এতেও কোনো সন্দেহ নেই।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবা গন পাগড়ি ব্যবহার করতেন যা তা বহু হাদীস দ্বারা প্রমাণিত আছে। এখানে দু’ একটি হাদীস উল্ল্যেখ করছি।
১)হযরত যাবের রা. বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মক্কায়) প্রবেশ করলেন। তখন তাঁর মাথায় কালো পাগড়ি ছিল।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৩৫৮
২)হযরত মুগীরা ইবনে শুবা রা. বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওযু করলেন এবং মাথার অগ্রভাগ ও পাগড়ির উপর মাসাহ করলেন।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৮১
সাহাবা, তাবেয়ীগণও নামাযে এবং নামাযের বাইরে বিভিন্ন সময় ব্যাপকভাবে পাগড়ি ব্যবহার করতেন। : সহীহ বুখারী ১/৫৬
এছাড়াও সুলাইমান ইবনে আবি আবদিল্লাহ রাহ. বলেন, আমি মুহাজির সাহাবীগণকে কালো, সাদা, হলুদ, সবুজ বিভিন্ন রঙের পাগড়ি পরতে দেখেছি।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২৫৪৮৯
আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. সম্পর্কে বর্ণিত আছে, তিনি মক্কা মুকাররমার উদ্দেশে বের হলে সঙ্গে পাগড়ি নিতেন এবং তা পরিধান করতেন।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৫৫২
আবু উবাইদ রাহ. বলেছেন, আমি আতা ইবনে ইয়াযিদকে পাগড়ি পরিহিত অবস্থায় নামায পড়তে দেখেছি।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১১৭৮০
ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺑﻦ ﻋﺪﻯ ﺍﻟﺒﻬﺮﺍﻧﻰ ﻋﻦ ﺍﺧﻴﻪ ﻋﺒﺪ ﺍﻻﻋﻠﻰ ﺑﻦ ﻋﺪﻯ ﺍﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺩﻋﺎ ﻋﻠﻰ ﺑﻦ ﺍﺑﻰ ﻃﺎﻟﺐ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﻳﻮﻡ ﻏﺪ ﻳﺮﺧﻢ ﻓﻌﻤﻤﻪ ﻭﺍﺭﺧﻰ ﻋﺬﺑﺔ ﺍﻟﻌﻤﺎﻣﺔ ﻣﻦ ﺧﻠﻔﻪ ﺛﻢ ﻗﺎﻝ ﻫﻜﺬﺍ ﻓﺎﻋﺘﻤﻮﺍ ﻓﺎﻥ ﺍﻟﻌﻤﺎﺋﻢ ﺳﻴﻤﺎﺀ ﺍﻻﺳﻼﻡ - ﻭﻫﻰ ﺍﻟﺤﺎﺟﺰ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ﻭﺍﻟﻤﺸﺮﻛﻴﻦ .
অর্থ: “হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আদিয়্যীল বাহরানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ভাই হযরত আব্দুল আ’লা ইবনে আদি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার হতে বর্ণনা করেন যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইমামুল আউওয়াল মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহ হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে এক বৃষ্টির দিনে ডেকে উনার মাথা মুবারকে পাগড়ী বেঁধে তার শামলা পিছনে পিঠের উপর ঝুলিয়ে দিলেন। অতঃপর বললেন, তোমরা অনুরূপভাবে পাগড়ী পরিধান কর। কেননা নিশ্চয়ই পাগড়ী পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিশেষ নিদর্শন। আর এটা (পাগড়ী) মুসলমান ও মুশরিকদের মধ্যে পার্থক্যকারী। অর্থাৎ পাগড়ী পরা মুসলমানগণের নিদর্শন আর পাগড়ী পরা ছেড়ে দেয়া মুশরিকদের নিদর্শন।”
[উমদাতুল কারী ২১তম জিঃ ৩০৮ পৃষ্ঠা, যুরকানী ৬ষ্ঠ জিঃ ২৭২ পৃষ্ঠা, খছাইলে নববী ৭৮ পৃষ্ঠা, তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম জিঃ ৪১২পৃষ্ঠা]
ﻋﻦ ﺍﺑﻰ ﺍﻟﻤﻠﻴﺢ ﺑﻦ ﺍﺳﺎﻣﺔ ﻋﻦ ﺍﺑﻴﻪ ﺭﻓﻌﻪ ﺍﻋﺘﻤﻮﺍ ﺗﺰﺩﺍﺩﻭﺍ ﺣﻠﻤﺎ ‏( ﻓﺘﺢ ﺍﻟﺒﺎﺭﻯ ﺝ ১০ ﺹ ২৮৩- ﺧﺼﺎﺋﻞ ﺍﻟﻨﺒﻮﻯ ﺹ ৭৮- ﺍﻟﻤﺴﺘﺪﺭﻙ ﺝ ৪ ﺹ ১৯৩- ﻛﺸﻒ ﺍﻟﻐﻤﺔ ﺝ ১ ﺹ ৯৪- ﺍﻟﻠﺒﺎﺱ ﻭﺍﻟﺰﻳﻨﺔ ﺹ ১২৫- ﻣﺠﻤﻊ ﺍﻟﺰﻭﺍﺋﺪ ﺝ ৫ ﺹ ১১৯- ﺍﻟﻜﺒﻴﺮ ﺝ ১
ﺹ ১৯৪- ﻛﺸﻒ ﺍﻟﺨﻔﺎﺀ ﻭﻣﺰﻳﻞ ﺍﻻﻟﺒﺎﺱ ﺝ ২ ﺹ ৬৭)
অর্থ: “হযরত আবুল মুলাইহ্ ইবনে উসামাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা পাগড়ী পরিধান কর। এতে সহনশলীতা ও গাম্ভীর্যতা বৃদ্ধি পাবে।”
[ফতহুল বারী ১০ম জিঃ ২৮৩ পৃষ্ঠা, খছাইলে নববী ৭৮ পৃষ্ঠা, আল্ মুসতাদ্রক ৪র্থ জিঃ ১৯৩ পৃষ্ঠা, কাশফুল গুম্মাহ্ ১ম জিঃ ৯৪ পৃষ্ঠা, আল্ লিবাসু ওয়ায্ যীনাহ্ ১২৫ পৃষ্ঠা, মাজমাউয্ যাওয়াইদ ৫ম জিঃ ১১৯ পৃষ্ঠা, আল্ কবীর ১ম জিঃ ১৯৪ পৃষ্ঠা, কাশফুল খফা ওয়া মুযীলুল্ ইলবাস ২য় জিঃ ৬৭ পৃষ্ঠা]
উপরোক্ত হাদীস ও আছার থেকে এ কথা সুস্পষ্ট যে, সাহাবা, তাবেয়ীন নামাযে ও নামাযের বাইরে বিভিন্ন সময় ব্যাপকভাবে পাগড়ি পরতেন। তাঁদের কাছে পোশাক হিসেবে পাগড়ির একটি বিশেষ অবস্থান ও গুরুত্ব ছিল।
এখন প্রশ্ন হল পাগড়ি কিভাবে বাঁধবেন?
শিয়া ও অমুসলিমদের পাগড়িতে শিমলা বা পাগড়ির অপর মাথার চার আঙ্গুল বা এক বিগত পরিমান ঝুলানো থাকেনা কিন্তু মুসলিমদের পাগড়িতে পিচনে শিমলা বা পাগড়ির অপর মাথার চার আঙ্গুল বা এক বিগত পরিমান পিচনে ঝুলিয়ে রাখতে হয়।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا اعْتَمَّ سَدَلَ عِمَامَتَهُ بَيْنَ كَتِفَيْهِ قَالَ نَافِعٌ: وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ يَسْدِلُ عِمَامَتَهُ بَيْنَ كَتِفَيْهِ، قَالَ عُبَيْدُ اللهِ: وَرَأَيْتُ القَاسِمَ، وَسَالِمًا يَفْعَلاَنِ ذَلِكَ.
হযরত ইবনে উমর রাঃ হতে বর্ণিত, রাসূল সাঃ যখন পাগড়ি পরতেন, তখন তার শিমলা উভয় কাঁধের মাঝখানে পেছন দিকে ঝুলিয়ে রাখতেন। নাফে রহঃ বলেন, আমি আব্দুল্লাহ বিন উমর রাঃ কে এরূপ করতে দেখেছি। নাফেল শিষ্য উবায়দুল্লাহ বলেন, আমি আবু বকর রাঃ এর পৌত্র কাশেম বিন মুহাম্মদকে এরূপ করতে দেখেছি। {তিরমিজী, হাদীস নং-১৭৩৬}
أدركت المهاجرين الأولين يعتمون بعمائم كرابيس سود وبيض وحمر وخضر وصفر، يضع أحدهم العمامة على رأسه ويضع القلنسوة فوقها، ثم يدير العمائم هكذا على كوره لا يخرجها من ذقنه
আমি প্রথম সারির মুহাজিরগণকে দেখেছি তাঁরা সুতির পাগড়ি পরিধান করতেন। কালো, সাদা, লাল, সবুজ, হলুদ ইত্যাদি রংয়ের। তারা পাগড়ির কাপড় মাথায় রেখে তার উপর টুপি রাখতেন। অতপর তার উপর পাগড়ি ঘুরিয়ে পরতেন।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১২/৫৪৫

Related questions

...