আসসালামু আলাইকুম । এখানে রেজিস্ট্রেশন না করেই অংশগ্রহণ/ব্যবহার করতে পারবেন কিন্তু সর্বোচ্চ সুবিধার জন্য বিনামূল্যে রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন !
0 votes
366 views
in সালাত by
আমার বাসা ৫ তলায় ,আমার বাসা থেকে উঠতে নামতে অনেক হয়রান লাগে তাই আমি বাসায় নামাজ পড়ি ,আমার সালাত হবে কি? 

1 Answer

0 votes
by (1.9k points)
বাসায় সালাত আদায়ের জন্য আপনি যে কারণটা বললেন এই কারণে আপনি জামাত ত্যাগ করে বাসায় একাকী সালাত আদায় করতে পারবেন না । আপনাকে জামাতেই সালাত আদায় করতে হবে । যদি আপনার ৫ তালায় উঠতে বা নামতে কষ্ট হয় তাহলে কষ্ট করেই জামাতে সালাত আদায় করতে হবে অথবা ওই বাসা ছেড়ে নিচ তালায় বাসা পাওয়া যায় এমন বাসা নিতে হবে ।
অন্ধ সাহাবি আব্দুল¬হ ইবনে উম্মে মাকতুম রা. জামাতে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকার অনুমতি চাইলে রাসূল সা: তাকে অনুমতি দেননি।
তিনি রাসূলের দরবারে এসে বলেন : -
ইয়া রাসুলুল্লাহ ! আমি একজন অন্ধ মানুষ, আমার বাড়িও অনেক দূরে এবং আমার একজন পথচালক আছে সে আমার পছন্দনীয় নয়। আমার জন্য ঘরে সালাত পড়ার অনুমতি আছে কি ? রাসূল সা: বললেন তুমি কি আজান শুন ? বললেন হ্যাঁ। তার পর রাসূল সা. বললেন, তাহলে আমি তোমার জন্য জামাতে অনুপস্থিত থাকার কোন অনুমতি দিচ্ছি না।
(আবুদাউদ:৪৬৫)

[আর প্রথম কয়েকদিন উঠতে বা নামতে কষ্ট হয় ( মূলত শয়তানে প্ররোচনা দেয় ) কিন্তু পরে আল্লহর রহমতে অভ্যাস হয়ে যায় । আমি নিজে ৬ তালায় থাকি । আর আলহামদুলিল্লাহ , ৬ তালা থেকেই জামাতে সালাত আদায় করি । প্রথমে কষ্ট হলেও এখন অভ্যাস হয়ে গেছে । ]
আপনি যে যে কারণে জামাত ত্যাগ করে একাকী সালাত আদায় করতে পারবেন তা নিন্মরূপ ঃ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
مَنْ سمعَ النداءَ فلمْ يُجِبْ مِن غيرِ عذرٍ فلا صلاةَ لَه
“যে ব্যক্তি আজান শুনে তাতে তাতে সাড়া দিলো না তার সালাত হবে না। তবে যদি ওজর থাকে তাহলে ভিন্ন কথা।” [সহীহ ইবনে হিব্বান ৫/৪১৫, ৪৫০, সহীহুত তারগীব ১/২৪০]
বিশেষ পরিস্থিতি এবং মানুষের কিছু সমস্যা বা অসুবিধার কারণে শরিয়ত তাদেরকে জামাআতে সালাত আদায়ের জন্য মসজিদে না যাওয়ার বা জামাআতে অংশ গ্রহণ না করার অনুমতি দিয়েছে।
 নিম্নে এমন ৭টি কারণ (ওজর) উল্লেখ করা হল:
 ◈ ১) অসুস্থতা: অসুস্থতার কারণে যদি মসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করা কষ্টকর হয়।
 ◈ ২) ভয়: বিশেষ পরিস্থিতিতে জামাতে সালাত পড়তে গেলে যদি চোর-ডাকাত, ছিনতাইকারী, যুদ্ধ, পুলিশ-প্রশাসনে নিষেধাজ্ঞা (যেমন: দেশের জরুরি অবস্থা/কারফিউ), বন্য পশুর আক্রমণ, রোগ-ব্যাধির সংক্রমণ ইত্যাদি কারণে ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।
 ◈ ৩) বৃষ্টি-বাদল।
 ◈ ৪) কর্দমাক্ত পিচ্ছিল পথ।
قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ لِمُؤَذِّنِهِ فِي يَوْمٍ مَطِيرٍ إِذَا قُلْتَ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ‏.‏ فَلاَ تَقُلْ حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ‏.‏ قُلْ صَلُّوا فِي بُيُوتِكُمْ‏.‏ فَكَأَنَّ النَّاسَ اسْتَنْكَرُوا، قَالَ فَعَلَهُ مَنْ هُوَ خَيْرٌ مِنِّي، إِنَّ الْجُمُعَةَ عَزْمَةٌ، وَإِنِّي كَرِهْتُ أَنْ أُخْرِجَكُمْ، فَتَمْشُونَ فِي الطِّينِ وَالدَّحْضِ‏.‏
ইবনে ‘আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত: তিনি তাঁর মুয়াজ্জিনকে এক প্রবল বর্ষণের দিনে বললেন, যখন তুমি (আযানে) ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ্‌ বলবে, তখন ‘হাইয়া আলাস্‌ সালাহ্’ বলবে না; বলবে, “সাল্লূ ফী বুয়ুতিকুম” (তোমরা নিজ নিজ বাসগৃহে সালাত আদায় কর)।
 এ কথা শুনে লোকজন আপত্তি করল। তখন তিনি বললেন, আমার চেয়ে উত্তম ব্যক্তি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা করেছেন। জুমার সালাত নিঃসন্দেহে জরুরি কিন্তু মাটি ও কাদার মধ্য দিয়ে যাতায়াত করায় তোমাদের অসুবিধা হোক সেটা আমি অপছন্দ করি।” (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৯০১)
 ◈ ৫) অন্ধকার রাতে প্রচণ্ড ঠাণ্ডার প্রকোপ:
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْمُرُ مُؤَذِّنًا يُؤَذِّنُ، ثُمَّ يَقُولُ عَلَى إِثْرِهِ: أَلَا صَلُّوا فِيْ الرِّحَالِ فِي اللَّيْلَةِ الْبَارِدَةِ أَوْ الـْمَطِيرَةِ فِيْ السَّفَرِ».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে থাকাবস্থায় ঠাণ্ডা কিংবা বৃষ্টিমুখর রাতে মুয়াজ্জিনকে আজান দেওয়ার পর এ কথা বলার আদেশ করতেন: “আলা সাল্লূ ফির-রি’হাল” “তোমরা নিজ নিজ ঘরে ঘরে সালাত পড়ো।" [সহীহ বুখারি, হাদিস নং ৬৩২]
সহিহ মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. একদা দমকা বায়ু ও বৃষ্টিময় ঠাণ্ডা রাতে আজান দেওয়ার পর বললেন: “আলা সাল্লূ ফী-রিহালিকুম”  “আলা সাল্লূ ফী-রিহালিকুম” “হে লোকজন, তোমরা নিজ নিজ ঘরে ঘরে সালাত পড়ো। হে লোকজন, তোমরা নিজ নিজ ঘরে ঘরে সালাত পড়ো।”
 অতঃপর বললেন: আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে থাকাবস্থায় বৃষ্টিময় ঠাণ্ডা রাতে মুয়াজ্জিনকে নিম্নোক্ত কথাটি বলার আদেশ করতেন:
أَلَا صَلُّوا فِيْ رِحَالِكُمْ»
“আলা সাল্লূ ফী রিহালিকুম”
“হে মানুষজন! তোমরা নিজ নিজ ঘরে সালাত পড়।” [সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৬৯৭]
 ➧ উপরোক্ত কারণগুলোতে মসজিদে গিয়েে জামাআতে সালাত আদায় করা সম্ভব না হলে যথসময়ে বাড়িতে পরিবারের লোকজন সহ জামাতে সলাত আদায় করা উত্তম।
 ◈ ৬) পেশাব পায়খানার চাপ: এ ক্ষেত্রে করণীয় হল, পেশাব-পায়খানা শেষ করে ফ্রেশ হয়ে তারপর জামাতে অংশগ্রহণ করা।
◈ ৭) খাবারের উপস্থিতি: ক্ষুধার্ত অবস্থায় যদি খাবার সামনে প্রস্তুত হয়ে যায় তাহলে আগে খাওয়া সেরে তারপরে জামাআতে অংশগ্রহণ করবে। তবে তা অভ্যাসে পরিণত করা ঠিক নয়।
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَا صَلَاةَ بِحَضْرَةِ الطَّعَامِ، وَلَا وَهُوَ يُدَافِعُهُ الْأَخْبَثَانِ»
খাবারের উপস্থিতিতে এবং পেশাব-পাখানার চাপ অবস্থায় সালাত নেই।” [সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৬০]

যেহুতু উপরের ৭ টি অসুবিধার/সমস্যার কোনটাই আপনার নাই তাই  কষ্ট করে হলেও জামাতে সালাত আদায় করতে হবে । আর ইং-শা-আল্লহ এই কষ্টের প্রতিদান আল্লাহ আপনাকে দিবেন ।

১-আল্লাহ রুকুকারীদের সাথে রুকু করার নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন : -
তোমরা সালাত কায়েম কর, জাকাত প্রদান কর এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু কর। (সূরা বাকারাহ আয়াত ৪৩) অর্থাৎ- সালাত আদায়কারীর সাথে সালাত আদায় কর।
২- আল্লাহ তাআলা ভীষণ ভয়ের সময় জামাতে সালাত পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ তার নবীকে বলেন -
এবং যখন তুমি তাদের মাঝে থাক, তখন তাদের জন্য নামাজ প্রতিষ্ঠিত কর, যেন তাদের একদল তোমার সাথে দণ্ডায়মান হয় এবং স্ব-স্ব অস্ত্র গ্রহণ করে: অতঃপর যখন সেজদা সম্পন্ন করে তখন যেন তারা তোমার পশ্চাদ্‌বর্তী হয় এবং অন্যদল, যারা নামাজ পড়েনি, তারা যেন অগ্রসর হয়ে তোমার সাথে নামাজ পড়ে এবং স্ব - স্ব সতর্কতা এবং অস্ত্র গ্রহণ করে। (সুরা নিসা:১০২)
উল্লেখিত আয়াতটি صلاة الخوف সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। এ বিষয়ে ইজমা বিদ্যমান আছে। আর এ কথা নি:সন্দেহে বলা যায় যে, ভয়ের সময় যদি জামাত ওয়াজিব হয়, তবে নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যের সময় ওয়াজিব হওয়া অধিক যুক্তিযুক্ত।
৩-নবী করিম সা: জামাতে সালাত আদয়ের নির্দেশ দেন
তিনি বলেন : -
যখন তারা তিন জন হবে তখন তাদের একজন ইমামতি করবে আর তাদের মাঝে যিনি ভাল পড়তে পারবে সেই ইমাম হওয়ার জন্য অধিক বিবেচ্য। (মুসলিম:১০৭৭ )

আল্লাহু আলাম।

Related questions

...