আপনার প্রশ্নটির উত্তর দেওয়া হচ্ছে ঃ প্রকৃতপক্ষে জামাআতের সাথে সালাত বা নামাজ আদায় এর সময় মুক্তাদি বা মুসল্লিরাও ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলবে, না কি কেবল রাব্বালা লাকাল হামদ বলবে এটা নিয়ে বিজ্ঞ আলেমদের মাঝেই দ্বিমত বা মতপার্থক্য আছে। জুমহুর/অধিকাংশ আলেম উলামাদের মতে মুক্তাদি বা মুসল্লিরা কেবল ‘রাব্বানা লাকাল হামদ…’ বলবে। কেননা, এ মর্মে একাধিক সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
 তার মধ্যে একটি হাদীস হল:
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يَقُولُ “ إِذَا قَالَ الإِمَامُ سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ . فَقُولُوا اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেনঃ ইমাম যখন “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ” বলে তখন তোমরা বলবে, “আল্লাহুম্মা রববানা ওয়া লাকাল হামদ।” (সহীহ মুসলিম)
 আরো একটি হাদীস:
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করা হয়েছে যে একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোড়ায় সওয়ার হন এবং তিন ঘোড়ার পিঠ থেকে নিচে পড়ে গিয়ে ডান পাঁজরে ব্যথা পান। এর ফলে তিনি কোন এক ওয়াক্তের সলাত বসে আদায় করেন। আমরাও তাঁর পেছনে বসে সলাত আদায় করে নিলাম। সলাত শেষ হওয়ার পর তিনি বললেনঃ ইমাম বা প্রতিনিধি এজন্যই নিয়োগ/নিযুক্ত করা হয়, যেন তার অনুসরণ করা হয়। যখন ইমাম দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করবে তোমরাও তখন দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করবে। যখন ইমাম রুকু‘ করবে তখন তোমরাও রুকু‘ করবে। যখন ইমাম মাথা উঠাবে তখন তোমরাও মাথা উঠাবে। আর যখন ইমাম বা প্রতিনিধি ‘‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’’ বললে তোমরা বলবে, ‘‘রব্বানা লাকাল হামদ’’। আর কখনো ইমাম বসে সলাত আদায় করলে তোমরা সকলেই তাই করবে। ।
[বুখারী (অধ্যায়ঃ সালাত, ছাদে সালাত আদায়, হাঃ ৩৭৮, মুসলিম, অধ্যায়ঃ সালাত, সুফিয়ান সূত্রে যুহরী থেকে।]
আরেকটি হাদীস:
عَنْ رِفَاعَةَ بْنِ رَافِعٍ الزُّرَقِيِّ، قَالَ كُنَّا يَوْمًا نُصَلِّي وَرَاءَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَلَمَّا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرَّكْعَةِ قَالَ ” سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ ”. قَالَ رَجُلٌ وَرَاءَهُ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ، حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ، فَلَمَّا انْصَرَفَ قَالَ ” مَنِ الْمُتَكَلِّمُ ”. قَالَ أَنَا. قَالَ ” رَأَيْتُ بِضْعَةً وَثَلاَثِينَ مَلَكًا يَبْتَدِرُونَهَا، أَيُّهُمْ يَكْتُبُهَا أَوَّلُ
আবদুল্লাহ্ ইবনু মাসলামা (রহঃ) … রিফা’আ ইবনু রাফি’ যুরাকী (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে , তিনি বলেন, একবার আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিছনে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম। যখন তিনি রুকূ’ থেকে মাথা উঠিয়ে سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বললেন, তখন পিছন থেকে এক সাহাবী رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ، حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ বললেন। সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কে এমন বলেছিল? সে সাহাবী বললেন, আমি। তখন তিনি তাকে বললেনঃ আমি দেখলাম ৩০ এর ও বেশী ফেরেশতা এর সাওয়াব বা নেকি কে আগে লিখবেন সেটা নিয়ে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করছেন।
(সহীহ বুখারী, হাদিস নম্বরঃ [763] অধ্যায়ঃ ১০/ আযান (كتاب الأذان) ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
উপরের হাদীসগুলো থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, মুক্তাদি বা মুসল্লি কেবল ‘রাব্বানা লাকাল হামদ’ বা আল্লাহুম্মা রাব্বানা লাকাল হামদ’ বলবে। কেননা উপরোক্ত হাদীসগুলোতে রাসুলুল্লাহ সা. ইমাম এবং মুক্তাদির জন্য আলাদা আলাদা বাক্য বলার নির্দেশনা দেয়ে গেছেন।
সাহাবীদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর, আবু হুরায়রা রা. এর এই মত পোষণ করেছেন। ইমাম শাবী, ইমাম মালেক, ইমাম আবু হানিফা রহ. প্রমূখওএ মত ব্যক্ত করেছেন এবং দলীলের আলোকে এটাই অধিক শক্তিশালী মত ইং-শা-আল্লাহ। আধুনিক/বর্তমান যুগে আল্লামা উসাইমীন রহ. প্রমূখও এই মতকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।
অপরদিকে কিছু আলিম, ইমাম-মুক্তাদি সবাইকে ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ এবং ‘রাব্বানা লাকাল হামদ’ পড়ার পক্ষে তাদের মত ব্যক্ত করেছেন।
এর জন্য তারা যে সব দলীল দেন সেগুলোর মধ্যে একটি হল, রাসূল (ছাঃ) বলেন:
ﺻَﻠُّﻮْﺍ ْﻛَﻤَﺎ ﺭَﺃَﻳْﺘُﻤُﻮْﻧِﻲ ﺃُﺻَﻠِّﻲْ “তোমরা ঠিক সেভাবে সালাত আদায় কর , যেভাবে আমাকে সালাত আদায় করতে দেখছো।” (সহীহুল বুখারী: ৬৩১, ৬০০৮, ৭২৪৬)
এবং যে সব হাদীসে ‘সামিআল্লাহু লিমান হামীদাহ’ বলার হাদীসে এসেছে সে সকল আম বা সাধারণ হাদীস উল্লেখ করেছেন।
এ পক্ষে মত দিয়েছেন, ইবনে সীরীন, আবু বুরদা, ইমাম শাফেয়ী, আত্বা প্রমূখ। আত্বা রহ. বলেন, “(ইমাম-মুক্তাদি উভয়েই) উভয় দুআ (সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ এবং রাব্বানা লাকাল হামদ) পাঠ করবে। এবংং এটাই আমার নিকট অধিক যুক্তিযুক্ত।”
শাইখ আলবানী রহঃ ও এ মতকেই প্রধান্য প্রদান করেছেন।
মোটকথা, বিষয়টি দ্বিমতপূর্ণ বা মতবিরোধমূলক হলেও ১ম মতটি মানে মুক্তাদি বা মুসল্লিরা কেবল ‘রাব্বানা লাকাল হামদ…’ বলবে এটা দলীলের আলোকে অধিক শক্তিশালী বা যুক্তিযুক্ত বলে বিবেচিত হয়। তাই মুক্তাদি বা মুসল্লি যদি রাব্বালাকাল হামদ…পাঠ করে তাহলে তাই যথেষ্ট হবে ইং-শা-আল্লাহ। কিন্তু যদি কেউ ২য় মতটিকে গ্রহণ/যথার্থ মনে করে তাতেও আপত্তি/ক্ষতি নেই ইং-শা-আল্লাহ।
উল্লেখ থাকে যে, রাব্বানা লাকাল হামদটি চারভাবে বলা সহীহ হাদীস দ্বারা সুপ্রমাণিত। যেমন ঃ
১. রাব্বানা লাকাল হামদ
২. আল্লাহুম্মা রাব্বানা লাকাল হামদ।
৩. রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ
৪. আল্লাহুম্মা রাব্বা ওয়া লাকাল হামদ
আল্লাহু আলাম(এ বিষয়ে আল্লাহই সব থেকে বেশি জানেন)।