আসসালামু আলাইকুম । এখানে রেজিস্ট্রেশন না করেই অংশগ্রহণ/ব্যবহার করতে পারবেন কিন্তু সর্বোচ্চ সুবিধার জন্য বিনামূল্যে রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন !
+3 votes
2.4k views
in বিজ্ঞান ও ইসলাম। by (195 points)
সূর্য ও পৃথিবী দুটোই ঘোরে নাকি সূর্য থেমে আছে পৃথিবী ঘোরে?

1 Answer

0 votes
by (1.9k points)
প্রাচীনকালে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, মহাবিশ্বের সব কিছুই পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরে। কিন্তু “পৃথিবী স্থির।” এ ধারণাটা পরবর্তী বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে ভুল প্রমাণিত হয়। পোল্যান্ডের জ্যোতিবিজ্ঞানী “কোপানিকাস” বলেছিলেন, পৃথিবী সূর্যের চতুর্দিকে ঘুরে। কিন্তু কেউই তার উক্তিটি বিশ্বাস করেনি। পরবর্তীযুগে বিজ্ঞানী “গ্যালিলিও” আবিস্কার করেন, যে পৃথিবী সূর্যের চতুর্দিকে ঘুরে এবং পক্ষান্তরে সূর্যও তার নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘুরে। অথচ কুরআনুল কারীম আজ থেকে প্রায় সাড়ে ১৪শত বছর আগেই একথা বলে দিয়েছে যে, সূর্য ও পৃথিবী উভয়ই ঘুরে।’আর পৃথিবীর চারপাশে সূর্য নয় বরং সূর্যের চারপাশে পৃথিবী আবর্তন করে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, -
"১)ﺎﻬﻟﺮﻘﺘﺴﻤﻟ ﻯﺮﺠﺗ ﺲﻤﺸﻟﺍﻭ "
"সূর্য তার নির্দিষ্ট অবস্থানে আবর্তন করে।এটা পরাক্রমশালী,সর্বজ্ঞ আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে।"(সূরা ইয়ািসন:৩৮)
সুতরাং সূর্যের ঘূর্ণায়ন প্রমাণিত হলো।
২) “চন্দ্রের জন্য আমি বিভিন্ন মনযিল নির্ধারিত করেছি। অবশেষে সে পুরাতন খর্জুর শাখার অনুরূপ হয়ে যায়।” [সূরা ইয়াসীন : ৩৯]
৩)“সূর্য নাগাল পেতে পারেনা চন্দ্রের এবং রাত্রি অগ্রে চলতে পারে না দিনের। প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে সন্তরণ করে। [সূরা ইয়াসীন : ৩৮-৪০]
অর্থাৎ তাদের কক্ষপথ ভিন্ন।এজন্যই চন্দ্র ও সূর্য একে অপরের সংস্পর্শে আসতে না।
৪) তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র। সবই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে। [সূরা আম্বিয়া : ৩৩]
এখানে তিনটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে-
ক) দিন ও রাত্রি(যার সাথে পৃথিবী সম্পৃক্ত!আমরা জানি আহ্নিক গতির ফলে দিন রাত্রি হয়)
খ)সূর্য
গ) চাঁদ
এর পরে বলেছে" সবাই নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরন করে"!
লক্ষণীয় যে-
সূরা আম্বিয়ার ৩৩নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-ﻰﻓ ﻞﻛﻥﻮﺤﺒﺴﻳ ﻚﻠﻓ "প্রত্যেকে নিজ নিজ কক্ষে বিচরণ করে। ﻚﻠﻓ(ফালাক) হলো সেই বৃত্ত যাতে কোনো গ্রহ বিচরণ করে। এ হিসাবে প্রথিবীর প্রদক্ষিণও সাব্যস্ত হয়। আর আজকের বিজ্ঞানও এটিকে সমর্থন করে।
সুতরাং বলা যায় কুরআন পরিষ্কার ভাবেইপৃথিবী, চন্দ্র এবং সূর্যের একটি নিদিষ্ট অরবিটে ঘূর্ণনের কথা বলেছে।
অর্থাৎ পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্য নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরন করে!
চন্দ্র সম্পর্কে আমরা জানি এটি পৃথিবীর সাপেক্ষে ২৭.৩ দিনে একবার আবর্তিত হয়। পৃথিবীও সূর্যের চারদিকে ঘুরে বলে এসময় কিছুটা বেড়ে গিয়ে ২৯.৫ দিন হয়। অর্থাৎ চন্দ্র তার নিজ কক্ষপথে পৃথিবীর চারদিকে ঘুরে আসতে ২৯.৫ দিন সময় লাগে।
অপরদিকে সূর্যের নিজ অক্ষে ঘুর্ণন এবং নিজস্ব অরবিটে গ্যালাক্সীর চারদিকে আবর্তন একটি সাম্প্রতিক আবিষ্কার। ১৫১২ সালে দেয়া কোপার্নিকাসের “Heliocentric theory” এর মতে সূর্য স্থির। ১৬০৯ সালে কেপলারের “Astronomia Nova '' নামক বইতে সব গ্রহের নিজ অক্ষের চারদিকে ঘুর্ণনের কোন কথা বলা হয় নি। সাম্প্রতিক গবেষনায় দেখা গেছে সূর্য ২৫ দিনে নিজ অক্ষে একবার ঘূর্ণন সম্পন্ন করে। অতি সাম্প্রতিক গবেষনায় আমরা এর চেয়ে বিস্ময়কর তথ্য পাই। সূর্য 251km/s বেগে স্পেসের মধ্যদিয়ে 225-250 মিলিয়ন বছরে milkyway Galaxy এর কেন্দ্রের চারদিকে আবর্তিত হয়। অর্থাৎ বর্তমানে বিজ্ঞানের ঘোষনা sun rotates and revolves.
সূরা আম্বিয়ার ৩৩ নং আয়াতে যে শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে তা হল ‘ইয়াসবাহুন’। ‘সাবাহা’ শব্দটি থেকে এ শব্দটি এসেছে। এ শব্দটি কোন মাটিতে চলা লোকের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হলে বুঝতে হবে সে হাঁটছে অথবা দৌঁড়াচ্ছে। এ শব্দটি পানিতে থাকা কোন লোকের ক্ষেত্রে বলা হলে এর অর্থ এই না যে লোকটি ভাসছে, বরং বুঝতে হবে লোকটি সাঁতার কাটছে। এ শব্দটি কোন মহাজাগতিক বস্তুর (Celestial body) ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হলে এর অর্থ করতে হবে এটা নিজ অক্ষে ঘুরছে সাথে সাথে কোন কিছুকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে।
অতএব দেখা যাচ্ছে কোরআনের এ আয়াতগুলোতে কোন বৈজ্ঞানিক অসংগতি নেই।
বিশ্বখ্যাত মুফাসসীরে কুরআন, বিজ্ঞানী আল্লামা ত্বানত্ববী আল জাওহারী রহ. স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে সূরা আম্বিয়ার ৩৩নং আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন যে, উক্ত আয়াতটি ব্যাপক অর্থ সম্বলিত। অর্থাৎ সূর্য, চন্দ্র, তারকা ও পৃথিবী, মোটকথা প্রত্যেকটি নক্ষত্র নিজ নিজ কক্ষপথে ঘুরছে। [আল জাওয়াহিরু ফী তাফসীরিল কুরআনিল কারীম : ১০/১৯৯]
প্রখ্যাত তাফসীরকারক আল্লামা আহমদ মোস্তফা মারাগী রহ. স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে সূরা ইয়াসীনের ৪০নং আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন যে, প্রত্যেকটি গ্রহ-নক্ষত্র অর্থাৎ পৃথিবী, সূর্য ও চন্দ্র নিজ নিজ কক্ষপথে সাঁতার কাটছে (ঘুরছে)। যেভাবে মাছ পানিতে সাঁতার কাটে। সূর্য ঘুরছে নিজ কক্ষপথে। ‘সূর্য’কে একবার প্রদক্ষিণ করতে পৃথিবীর সময় লাগে একদিন ও একরাত(২৪ ঘন্টা)। পক্ষান্তরে “পৃথিবী”-কে একবার প্রদক্ষিণ করতে চন্দ্রের সময় লাগে একমাস। [আত তাফসীরুল মারাগী : ২৩/১০]
বিশ্বনন্দিত মুফাস্সীরে কুরআন আল্লামা মাহমুদ হিজাযী রহ. স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে সূরা আম্বিয়ার ৩৩নং আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন যে, আল্লাহ পাক পৃথিবীর বুকে পাহাড়সমূহের বোঝা রেখে দিয়েছেন; যাতে করে পৃথিবী মানব মণ্ডলীকে নিয়ে ঝুঁকে না পড়ে। পৃথিবী নিজ কক্ষে ঘুরে এবং সুর্যকে প্রদক্ষিণ করে। (আল্লাহ্) সূর্য ও চন্দ্রকে সৃষ্টি করেছেন যেন প্রত্যেকটি নিজ নিজ কক্ষপথে ঘুরে। [আত তাফসীরুল ওয়াজেহ : ১৭/৫২৮]
উক্ত আলোচনার সারাংশ এই দাঁড়াল যে, পৃথিবী,চন্দ্র,সূর্য সহ সকল গ্রহ নক্ষত্র নিজ নিজ কক্ষপথে আবর্তন করছে, চন্দ্র ঘুরে পৃথিবীকে কেন্দ্র করে; পক্ষান্তরে পৃথিবী ঘুরে সূর্যকে কেন্দ্র করে। সূর্য ঘুরে নিজ কক্ষপথে।
সুবহানাল্লাহ!!
কত সুন্দরভাবে আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন কোরআনুল করিমে ১৪০০ বছর আগে উল্লেখ করলেন পৃথিবী সূর্যের চারপাশে আবর্তন করছে ঠিক তেমনিভাবে যেমনভাবে সকল গ্রহ,নক্ষত্র আবর্তন করছে নিজ নিজে কক্ষপথে।এরপরেও কি অবিশ্বাসীদের অন্তঃচক্ষু উন্মোচিত হবেনা?

Related questions

...