আসসালামু আলাইকুম । এখানে রেজিস্ট্রেশন না করেই অংশগ্রহণ/ব্যবহার করতে পারবেন কিন্তু সর্বোচ্চ সুবিধার জন্য বিনামূল্যে রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন !
0 votes
73 views
in মাসআলা মাসায়েল by

1 Answer

0 votes
by (2.0k points)

عَنْ سَلَمَةَ بْنِ عُبَيْدِ اللهِ بْنِ مِحْصَنٍ الخَطْمِيِّ عَنْ أَبِيهِ وَكَانَتْ لَهُ صُحْبَةٌ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ أَصْبَحَ مِنْكُمْ آمِنًا فِي سِرْبِهِ مُعَافًى فِي جَسَدِهِ عِنْدَهُ قُوتُ يَوْمِهِ فَكَأَنَّمَا حِيزَتْ لَهُ الدُّنْيَا.

সালামা ইবনে উবাইদুল্লাহ ইবনে মিহছান আল-খাত্বমী হতে বর্ণিত, তিনি তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। তার (পিতা) রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহচর্য লাভ করেছিলেন। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার বাসায় নিরাপদে দিন যাপন করে, শারীরিকভাবে সুস্থ থাকে আর একদিন অতিবাহিত করার সমপরিমাণ খাবার তার নিকটে থাকে, তার যেন সমগ্র পৃথিবী হস্তগত হয়েছে’।[1]

أَصْبَحَ – (সকাল করল) এই বাক্যে একথার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, একজন মুমিন কখনো ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয় না। কেননা তার সকল বিষয় আল্লাহ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়। তিনি সকল বিষয় সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন এবং সকলের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেন। তাছাড়া আল্লাহর উপর ভালো ধারণা রাখা এবং তাঁর নিকট কল্যাণের প্রত্যাশা করা প্রত্যেক মুমিনের নৈতিক কর্তব্য।

آمِنًا فِي سِرْبِهِ (পরিবার-পরিজন নিয়ে নিরাপদে থাকা) বলতে নিজ বাসায় বা চলার পথে নিরাপদে থাকার কথা বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ সে এমন নিরাপত্তা অর্জন করে যে, জীবনহানির সম্ভাবনা থাকে না বা তার মাল-সম্পদ খোয়া যাওয়ার কোনরূপ আশঙ্কা থাকে না কিংবা তার সম্ভ্রম হরণের কোনো প্রকার ভয় থাকে না।

ঈমান ও ইসলামের নিয়ামতের পর মানুষের নিকট সবচেয়ে বড় নিয়ামত জীবনের নিরাপত্তা। আর এই নিরাপত্তার গুরুত্ব ও তাত্পর্য একমাত্র ওই ব্যক্তি অনুধাবন করতে পারে, যে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। যে ব্যক্তি এমন দেশ বা অঞ্চলে বসবাস করে, যেখানে কঠিন রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ব্যাপক সামাজিক বিশৃঙ্খলা বিরাজ করে এবং যেখানে তুমুল যুদ্ধ চলে। কামানের গুলির বিকট শব্দ বার বার প্রতিধ্বনিত হয়। আকাশ থেকে যুদ্ধ বিমানের মুহুর্মুহু গোলা বর্ষণ হৃদয়কে প্রকম্পিত করে। নির্বিচারে গুলি করে মানুষকে হত্যা করা হয় আর ক্ষেত-খামার জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে মানুষ সামান্য নিরাপত্তার জন্য পাগলের মতো এদিক-ওদিক ছুটোছুটি করতে থাকে। বুকের উপর হাত রেখে মৃত্যুর প্রহর গুণতে গুণতে নির্ঘুম রাত্রি যাপন করে। এমন অবস্থায় প্রকৃত মুমিনকে সান্ত্বনা দিয়ে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন, ‘যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের ঈমানকে যুলমের (শিরকের) সাথে মিশায়নি, তাদের জন্য রয়েছে নিরাপত্তা আর তারাই সঠিক পথপ্রাপ্ত’ (আল-আনআন-৬/৮২)

তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করা, ঈমানকে একনিষ্ঠ করা এবং সৎকর্ম সম্পাদন করার শর্তে আল্লাহ তাআলা মুমিনকে নিরাপত্তা প্রদানের অঙ্গীকার করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্য হতে যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে, তাদের সাথে আল্লাহ তাআলা অঙ্গীকার করেছেন যে, অবশ্যই তিনি তাদের পৃথিবীতে প্রতিনিধিত্ব দান করবেন, যেমনভাবে প্রতিনিধিত্ব দান করা হয়েছিল তাদের পূর্ববর্তী জাতিকে আর অবশ্যই তিনি তাদের জীবনবিধানকে সুদৃঢ় করবেন, যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তাদের ভয়-ভীতির পরিবর্তে নিরাপদ থাকার ব্যবস্থা করবেন, যাতে করে তারা আমার ইবাদত করে এবং আমার সাথে কোনো কিছু শরীক না করে। এরপরও যারা অকৃতজ্ঞ হবে, তারাই প্রকৃতপক্ষে ফাসিক্ব’ (আন-নূর, ২৪/৫৫)। আল্লাহ তাআলা অন্য জায়গায় বলেছেন, ‘তোমরা মনোযোগ দিয়ে শোনো! নিশ্চয় আল্লাহ তাআলার অলীগণের কোনো ভয় নেই এবং তাদের চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণও নেই। নিশ্চয় যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহকে ভয় করে তাদের জন্য ইহকাল ও পরকালে শুভসংবাদ রয়েছে। আল্লাহ তাআলার বাণীর কখনো পরিবর্তন হয় না আর এটাই সবচেয়ে বড় সাফল্য’ (ইউনুস, ১০/৬২-৬৪)

 مُعَافًى فِي جَسَدِهِ (শারীরিক সুস্থতা) শারীরিকভাবে সুস্থ-সবল এবং অসুখ-বিসুখমুক্ত অবস্থায় ঘুম থেকে উঠেছে। অর্থাৎ সব ধরনের সমস্যামুক্ত হয়ে সুস্থ শরীর নিয়ে দিনটি অতিবাহিত করতে পেরেছে। আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর নিয়মিত রোগমুক্তি চাওয়ার কথা উল্লেখ আছে। তিনি বলতেন,

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ البَرَصِ وَالْجُنُونِ وَالْجُذَامِ وَمِنْ سَيِّئِ الْأَسْقَامِ

‘হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট শ্বেতরোগ, পাগলামি, কুষ্ঠরোগ ও বিভিন্ন প্রকার দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তি চাই’।[2]

আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় আল্লাহ তাআলার নিকট ইবাদত আদায়ে একনিষ্ঠতা, পার্থিব বিষয়ের সুস্থতা, স্বাস্থ্যকর জীবন, পরিবারিক পবিত্রতা ও অর্থ-সম্পদের নিরাপত্তা কামনা করতেন। একইভাবে তিনি তাঁর ছহাবীগণের উল্লিখিত বিষয়গুলো চাওয়ার জন্য আদেশ দিতেন। আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সকাল ও সন্ধ্যায় এই দুআগুলো পড়া হতে কখনোই বিরত থাকতেন না। তিনি বলতেন,

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِي دِينِي وَدُنْيَايَ وَأَهْلِي وَمَالِي

‘হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকটে দুনিয়া ও পরকালীন জীবনের নিরাপত্তা চাই। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আমার দ্বীনী বিষয়, আমার দুনিয়াবী বিষয়, আমার পরিবারিক বিষয় ও অর্থ-সম্পদের সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণ, ব্যবহার ও নিরাপত্তা চাই’।[3]

মুআয ইবনু রিফাআ তার পিতা থেকে বর্ণিত রেওয়ায়েতে বলেন, আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) মিম্বারে দাঁড়িয়ে কাঁদতে লাগলেন, অতঃপর বললেন, আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হিজরতের প্রথম বর্ষে মিম্বারে দাঁড়িয়েছিলেন। অতঃপর কাঁদতে শুরু করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘তোমরা আল্লাহর নিকট নিরাপত্তা এবং সুস্বাস্থ্য কামনা করো। কেননা ঈমানের পরে তোমাদের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ যে জিনিসটি দেওয়া হয়েছে, তা হলো সুস্বাস্থ্য’।[4] আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুস্বাস্থ্য ও অবসার সময়ের সৎব্যবহারের গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, ‘বেশিরভাগ মানুষই আল্লাহর এই নিয়ামতের ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন করে এবং প্রতারিত হয়। আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘(আল্লাহর) দুইটি নিয়ামত আছে, যার (সদ্ব্যবহারের গুরুত্ব) সম্পর্কে বেশিরভাগ মানুষই অসচেতন থাকে। তার একটি হচ্ছে সুস্বাস্থ্য আর অপরটি হচ্ছে অবসর সময়’।[5] স্বাস্থ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যার যত্ন নেওয়া, পরিচর্যা করা প্রতেকের উচিত।

আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অন্য হাদীছে তাঁর উম্মতকে অসুস্থতার পূর্বে সুস্থতাকে গনীমত হিসাবে গ্রহণ করার জন্য আদেশ দিয়ে বলেন, ‘তোমরা পাঁচটি বস্তুকে অপর পাঁচটি বস্তুর আগমনের পূর্বে গনীমত হিসেবে গ্রহণ করো। তার একটি হচ্ছে অসুস্থতা আসার পূর্বে সুস্থতা’।

[1]. সুনানে তিরমীযী, হা/২৩৪৬।

[2]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩০০৪।

[3]. সুনানে আবূ দাঊদ, হা/২৩৪৯।

[4]. সুনানে তিরমিযী, হা/২৮২১।

[5]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৩১২।

Related questions

...