আসসালামু আলাইকুম । এখানে রেজিস্ট্রেশন না করেই অংশগ্রহণ/ব্যবহার করতে পারবেন কিন্তু সর্বোচ্চ সুবিধার জন্য বিনামূল্যে রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন !
0 votes
179 views
in সালাত by
৫ ওয়াক্তের নামাজের শুধুই ফরজ সালাত টুকু আদায় করা যায় কি

1 Answer

0 votes
by (1.9k points)
সুন্নত নামাজ যদি কেউ আদায় না করে থাকেন, তাহলে তিনি গুনাহগার হবেন না। তবে তিনি বড় ধরনের ফজিলত থেকে মাহরুম হবেন। কারণ, প্রতিটি সুন্নত নামাজের ব্যাপারে রাসুলের (সা.) ফজিলতের বিষয়টি যুক্ত আছে এবং ফজিলতের হাদিসগুলো আছে। তাই তিনি ফজিলত থেকে মাহরুম হবেন, কিন্তু তিনি গুনাহগার হবেন না। কারণ এগুলো রাসুল (সা.) একে অতিরিক্ত বা নফল নামাজ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। যেগুলোর ওপর আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, সেগুলোই শুধু ফরজ।   

দলিল সহ বিস্তারিত:

কোন ব্যক্তি যদি ফরজ সালাতগুলো আদায়ের পাশাপাশি এ সকল সুন্নত সালাতগুলো যত্নসহকারে আদায় করে তাহলে তার জন্য রয়েছে অবারিত সওয়াব ও বিশাল মর্যাদা। কোন ওজর বশত: আদায় না করলে গুনাহ হবে না। কিন্তু এগুলো নিয়মিত পরিত্যাগ করা বা সুন্নত পরিত্যাগ করাকে অভ্যাসে পরিণত করা অত্যন্ত বিপদজনক ও বিশাল সওয়াব থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণ-এতে কোনো সন্দেহ নাই।

বিস্তারিত নিম্নরূপ:
তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাজদবাসী এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলো। তার মাথার চুল ছিল এলোমেলো। আমরা তার কথার মৃদু আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম, কিন্তু সে কি বলছিল, আমরা তা বুঝতে পারছিলাম না। এভাবে সে কাছে এসে ইসলাম সম্পর্কে প্রশ্ন করতে লাগল।
● রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: দিন-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত।
– সে বলল: ‘আমার উপর এ ছাড়া আরো সালাত আছে কি?’
● তিনি বললেন: ‘না, তবে নফল আদায় করতে পার।

● রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আর রমযানের সিয়াম।
– সে বলল, ‘আমার উপর এ ছাড়া আরো রোযা আছে?
● তিনি বললেন: না, তবে নফল আদায় করতে পার।

বর্ণনাকারী বলেন:

● রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে যাকাতের কথা বললেন।
– সে বলল, ‘আমার ওপর এ ছাড়া আরো দেয় আছে?
● তিনি বললেন: না, তবে নফল হিসেবে দিতে পার।

বর্ণনাকারী বলেন:
সে ব্যক্তি এই বলে চলে গেলেন, وَاللَّهِ لاَ أَزِيدُ عَلَى هَذَا وَلاَ أَنْقُصُ “আল্লাহর কসম! আমি এর চেয়ে বেশিও করব না এবং কমও করব না।”
তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: أَفْلَحَ إِنْ صَدَقَ “সে সফলকাম হবে যদি সত্য বলে থাকে।”

উল্লেখ্য যে, ফরজ ব্যতিরেকে যত সালাত আছে সবই নফল হিসেবে পরিগণিত।

[সহীহ বুখারী হাদিস নম্বর: [44] অধ্যায়ঃ ২/ ঈমান (كتاب الإيمان), ইসলামিক ফাউন্ডেশন]
উক্ত হাদিসের আলোকে আলেমগণ বলেন, ফরজ ছাড়া অন্যান্য ইবাদত না করলেও আখিরাতের সাফল্য লাভ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের জন্য যথেষ্ট হবে।
❖ সুন্নত সালাত পরিত্যাগ করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ:

কেবল ফরয সালাতগুলোর উপর নির্ভর করা এবং সুন্নত, বিতর ইত্যাদিগুলো বাদ দেয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কেননা, আমরা কেই নিশ্চিত করে বলতে পারি না যে, আমাদের ফরয সালাতগুলো আল্লাহর নিকট ১০০% গৃহীত হচ্ছে। হতে পারে আমাদের ফরয সালাতে বিভিন্ন দিক দিয়ে অপূর্ণতা, ত্রুটি-বিচ্যুতি ও ঘাটতি থেকে যায়। বরং ভুল-ত্রুটি থাকার সম্ভাবনাই ১০০%। অথচ হাদিসে এসেছে, আল্লাহ তাআলা ফরয সালাতের ঘাটতি পূরণ করবেন ফরয ছাড়া অন্যান্য সালাতের মাধ্যমে। যেমন নিন্মোক্ত হাদিস:
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
إِنَّ أَوَّلَ مَا يُحَاسَبُ بِهِ العَبْدُ يَوْمَ القِيَامَةِ مِنْ عَمَلِهِ صَلَاتُهُ، فَإِنْ صَلُحَتْ فَقَدْ أَفْلَحَ وَأَنْجَحَ، وَإِنْ فَسَدَتْ فَقَدْ خَابَ وَخَسِرَ، فَإِنْ انْتَقَصَ مِنْ فَرِيضَتِهِ شَيْءٌ، قَالَ الرَّبُّ عَزَّ وَجَلَّ: انْظُرُوا هَلْ لِعَبْدِي مِنْ تَطَوُّعٍ؟ فَيُكَمَّلَ بِهَا مَا انْتَقَصَ مِنَ الفَرِيضَةِ، ثُمَّ يكون سائر عَمَلِه على ذلكَ
“কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার নামাজের হিসাব নেওয়া হবে। যদি সে সঠিক হিসাব দিতে পারে তবে কৃতকার্য হয়ে যাবে। আর যদি ব্যর্থ হয় তবে ক্ষতিগ্রস্ত ও ধ্বংস হয়ে যাবে। যদি তার ফরজসমূহের মধ্যে কোনো ঘাটতি থাকে তবে বরকতয় মহান আল্লাহ বলবেন : দেখো, আমার বান্দার কোনো নফল আছে কিনা? যদি থাকে তবে তা দিয়ে তার ফরজের ঘাটতি পূরণ করা হবে। অতঃপর একইভাবে তার অন্যান্য আমলের হিসাব নেওয়া হবে।” (তিরমিযী, তিনি এটিকে হাসান বলেছেন। ইবনে মাজাহ, নাসাঈ-আলবানী এটিকে সহীহ বলেছেন)

❖ সুন্নত নামাযের বিশাল মর্যাদা:
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে,
‏ مَنْ صَلَّى اثْنَتَىْ عَشْرَةَ رَكْعَةً فِي يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ بُنِيَ لَهُ بِهِنَّ بَيْتٌ فِي الْجَنَّةِ ‏”‏ ‏.‏ قَالَتْ أُمُّ حَبِيبَةَ فَمَا تَرَكْتُهُنَّ مُنْذُ سَمِعْتُهُنَّ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏.‏ وَقَالَ عَنْبَسَةُ فَمَا تَرَكْتُهُنَّ مُنْذُ سَمِعْتُهُنَّ مِنْ أُمِّ حَبِيبَةَ ‏.‏ وَقَالَ عَمْرُو بْنُ أَوْسٍ مَا تَرَكْتُهُنَّ مُنْذُ سَمِعْتُهُنَّ مِنْ عَنْبَسَةَ ‏.‏ وَقَالَ النُّعْمَانُ بْنُ سَالِمٍ مَا تَرَكْتُهُنَّ مُنْذُ سَمِعْتُهُنَّ مِنْ عَمْرِو بْنِ أَوْسٍ
দিন ও রাতে যে ব্যক্তি মোট ১২ রাক‘আত (সুন্নাত) সলাত আদায় করে তার বিনিময়ে জান্নাতে ঐ ব্যক্তির জন্য একটি ঘর নির্মাণ করা হয়। উম্মু হাবীবাহ্‌ বলেছেন: আমি যে সময়ে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর কাছে এ সলাত সম্পর্কে শুনেছি তখন থেকে আর কখনো তা আদায় করা পরিত্যাগ করিনি। ‘আম্‌বাসাহ ইবনু আবূ সুফ্‌ইয়ান বলেছেন: এ সলাত সম্পর্কে যখন আমি উম্মু হাবীবার কাছে শুনেছি; তখন থেকে আর ঐ সলাত গুলো কখনো পরিত্যাগ করিনি। ‘আম্‌র ইবনু আওস বলেছেনঃ যে সময়ে এ সলাত সম্পর্কে আমি ‘আম্‌বাসাহ্‌ ইবনু আবূ সুফ্‌ইয়ান- এর নিকট থেকে শুনেছি সে সময় থেকে আর কখনো তা পরিত্যাগ করিনি। নু’মান ইবনু সালিম বলেছেন: যে সময় আমি এ হাদীসটি ‘আম্‌র ইবনু আওস- এর নিকট থেকে শুনেছি তখন থেকে কখনো আর তা পরিত্যাগ করিনি। [সহিহ মুসলিম অধ্যায়: ফরযের পূর্বে ও পরে নিয়মিত সুন্নাতের ফাযীলাত এবং তার সংখ্যার বিবরণ। হা/১৫৭৯]
উক্ত ১২ রাকআত হল: যোহরের পূর্বে ৪ ও পরে ২, মাগরিবরে পর ২, ইশার পরে ২ এবং ফজরের পূর্বে ২ রাকআত।
তাছাড়াও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ফরয ইবাদতের পাশাপাশি সুন্নত, নফল ইত্যাদি ইবাদত আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সুতরাং সফর, অসুস্থতা বা জরুরি কোনো ওজর ছাড়া সুন্নত সালাতগুলো পরিত্যাগ করা মোটেও উচিৎ নয়। বরং এ সব সুন্নত সালাত পরিত্যাগ করা দ্বীনের ব্যাপারে অলসতা ও অবহেলার প্রমাণ বহন করে- যা জান্নাত প্রত্যাশী মুমিনের নিকট কাম্য হতে পারে না।

Related questions

...