মূলত " গাদিরে খুম " একটি স্থানের নাম । এটা আসলে মদীনার উপকণ্ঠের একটি স্থান ।
আসলে , এই "গাদিরে খুম" স্থানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি ভাষণ প্রদান করেন। যাতে তিনি তার মৃত্যু সন্নিকটে হবার ইশারা করেন এবং কুরআন ও সুন্নাহকে আকড়ে ধরার তাকীদ করেন। এবং সেই সাথে আহলে বাইতের সদস্যদের প্রতি ভালোবাসা মোহাব্বতের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। হযরত আলী রাঃ বিষয়ে ইরশাদ করেন যে, আমি যাদের বন্ধু, আলীও তাদের বন্ধু।
আর মূলত এই ভাষণ কে কেন্দ্র করে শিয়ারা বিশ্বাস করে বা মনে করে যে মুহম্মদ আলী ইবনে আবী তালিবকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত ঘোষণা করেন এবং এর ঠিক পরপরই পবিত্র কুরআনের সর্বশেষ আয়াত নাজিল হয় যার মাধ্যমে ইসলামকে পরিপূর্ণ দ্বীন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এর মানে , এই ভাষণ কে কেন্দ্র করে শিয়াদের দাবী যে , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মৃত্যুর পর খলিফা হওয়ার কথা ছিলো আলী (রাঃ) এর । কিন্তু আয়েশা (রাঃ) এর কারণে নাকি আবু বকর (রাঃ) কে খলিফা প্রদান করা হয় । (নাউজুবিল্লাহ)
আপনি প্রশ্নে বিস্তারিত উল্লেখ করেন নাই । হয়তো আপনি শিয়াদের এই মিথ্যা বা ভুল দাবী সম্পর্কে বা এটার খন্ডন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাচ্ছেন । কারণ "গাদিরে খুম" বা "গাদিরে খুমের ভাষণ" বিষয়ে প্রশ্ন শিয়াদের এই মিথ্যা বা ভুল দাবী সম্পর্কিত হয়ে থাকে । এজন্য এই বিষয়কে সামনে রাখে আসুন আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করি ।
প্রথমে আসুন , এই বিষয়ে হাদিস টা জেনে আসি । আসলে শিয়ারা মূলত আমাদের কে এই হাদিস টি দিয়ে এটা বোঝাতে চায় যে , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মৃত্যুর পর খলিফা হওয়ার একমাত্র হকদার বা যোগ্য ছিলেন আলী (রাঃ) । কিন্তু তারা এই হাদিসের ব্যাখ্যা বা পেক্ষাপট বোঝে না বা বোঝার চেষ্টা করে না ।
আসুন আমরা ব্যাখ্যা বা পেক্ষাপট সহ হাদিসটি জেনে নিই ।
প্রথমে আসুন হাদিস টি দেখি ,
এটির উল্লেখ আছে , মুসনাদে আহমাদ ( ৯৬১ , ৯৫০ নং হাদীস ও ৮৬৪ নং হাদীস )
আলী (রাঃ) খোলা ময়দানে দাঁড়িয়ে জনগণকে উদ্দেশ্য করে বললেন, যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গাদিরে খুমের ভাষণ শুনেছে সে যেন উঠে দাঁড়ায়। এ কথা শুনে সাঈদের পক্ষ থেকে ছয়জন এবং যায়িদের পক্ষ থেকে ছয়জন উঠে দাঁড়ালো। তারা সাক্ষ্য দিল যে, তারা গাদিরে খুমে আলী (রাঃ) কে উদ্দেশ্য করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছে, আল্লাহ কি মুমিনদের জন্য অধিকতর আপনজন নন? সবাই বললো, অবশ্যই। তিনি বললেনঃ “হে আল্লাহ, আমি যার আপনজন, আলীও তার আপনজন। হে আল্লাহ, যে ব্যক্তি আলীর বন্ধু হয়, তুমি তার বন্ধু হও। আর যে ব্যক্তি আলীর শত্রু হয়, তুমি তার শত্রু হও।”
এখন আসুন , এই হাদিসের ব্যাখ্যা বা পেক্ষাপট টা জেনে নিই । যাতে করে আমরা শিয়াদের মতো বিভ্রান্ততে পতিত না হয় ।
ব্যাখ্যা বা পেক্ষাপট :
গাদীরে খুমের মূল ঘটনা হল, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্জ শেষে যখন মদীনা ফিরছিলেন তখন মদীনার উপকণ্ঠে গাদীরে খুম নামক স্থানে এসে যাত্রাবিরতি করেন। তখন বুরাইদা আসলামী রাঃ নামে একজন সাহাবী হযরত আলী রাঃ এর বিষয়ে কিছু অভিযোগ নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পেশ করেন।
এরপর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গাদীরে খুমে একটি ভাষণ প্রদান করেন। যাতে তিনি তার মৃত্যু সন্নিকটে হবার ইশারা করেন এবং কুরআন ও সুন্নাহকে আকড়ে ধরার তাকীদ করেন।
সেই সাথে আহলে বাইতের সদস্যদের প্রতি ভালোবাসা মোহাব্বতের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। হযরত আলী রাঃ বিষয়ে ইরশাদ করেন যে, আমি যাদের বন্ধু, আলীও তাদের বন্ধু।
উক্ত ভাষণের মাধ্যমে আহলে বাইতের প্রতি সকলের মোহাব্বতের সম্পর্ক রাখার তাকীদ করা হয়েছে। এর দ্বারা বুরাইদা আসলামী রাঃ এর মন থেকে হযরত আলী রাঃ এর প্রতি যে ধারণা ছিল তা দূরিভূত হয়ে যায়।
ব্যাস এতটুকুই। উক্ত খুতবার কোথাও নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর হযরত আলী রাঃ কে খলীফা নিযুক্ত করতে হবে এমন কোন কথা নেই। শুধু মোহাব্বতের তাকীদ করা হয়েছে। আর মোহাব্বত কখনোই নেতৃত্বের হকদার হবার মানদণ্ড নয়।
মোহাব্বততো মা বাবাকেও করতে হয়। মোহাব্বত স্ত্রী সন্তানকেও করতে হয়। কিন্তু এর মানে কি এ মোহাব্বত নেতৃত্বের গুণ?
যদি শুধু নবী পরিবারের সদস্য হওয়া এবং অধিক মোহাব্বতই নেতৃত্ব পাবার যোগ্যতা হয়, তাহলে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর হযরত ফাতিমা রাঃ প্রথম খলীফা হবার প্রথম হকদার। তারপর হযরত হাসান রাঃ, তারপর হযরত হুসাইন রাঃ, তারপর হযরত আলী রাঃ।
শিয়া সম্প্রদায়ের মূলনীতি অনুপাতে নবী পরিবারের সদস্য হওয়া এবং মোহাব্বতই খলীফা হবার মানদণ্ড হলেও হযরত আলী রাঃ চতুর্থ খলীফা। তাহলে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অনুসারীগণ হযরত আলী রাঃ কে চতুর্থ খলীফা নিযুক্ত করা অপরাধ মনে করা হয় কেন?
গাদীরে খুমের ঘটনাকে হযরত আলী রাঃ এর প্রথম খলীফা হবার দলীল হিসেবে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে, এবং সাহাবায়ে কেরামের যুগে কেউ পেশ করেনি। এমন কি আহলে বাইতের কোন সদস্য গাদীরে খুমের ভাষণকে খলীফা হবার দলীল হিসেবে কখনোই পেশ করেননি।
এটা পরবর্তী যুগের কট্টরপন্থী শিয়াদের উর্বর মস্তিস্কের ফসল।
এমন কি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকালের পর যখন সাকীফায়ে বনী সা’আদে খিলাফত বিষয়ে মাশোয়ারা হচ্ছিল। তখন গাদীরে খুমে উপস্থিত সাহাবাগণও ছিলেন। ছিলেন আহলে বাইতের সদস্যগণও। কিন্তু কেউ গাদীরে খুমের ভাষণকে খিলাফতের দলীল হিসেবে উপস্থাপন করেননি।
এর মানে গাদীরে খুমের ঘটনাটি কেবলি আহলে বাইতের প্রতি একটি মোহাব্বতের তাগীদ ছাড়া অন্য কিছু ছিল না। যা যেমন সকল সাহাবাগণ জানতেন, তেমনি আহলে বাইতের সদস্যগণও জানতেন। তাই এ বিষয়কে সামনে কেউ আনেননি। [সীরাতে মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-৩/১৪৯-১৫১, ইদ্রিস কান্ধলবী রহঃ কৃত]
আল্লাহ তাআলা আমাদের শিয়াদের মিথ্যাচার থেকে হিফাযত করুন। আমীন।