আসসালামু আলাইকুম । এখানে রেজিস্ট্রেশন না করেই অংশগ্রহণ/ব্যবহার করতে পারবেন কিন্তু সর্বোচ্চ সুবিধার জন্য বিনামূল্যে রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন !
+3 votes
132 views
in হাদিস,ফিকহ ও এর নানা শাস্ত্র by (722 points)
edited by
টাখলুর নিচে কাপড় পড়া বিষয়ে ইসলাম কি বলে? এ বিষয়ে বিস্তারিত জানবেন প্লিজ । রেফারেন্স সহ জানতে বিস্তারিত জানতে চাই । 

1 Answer

+1 vote
by (380 points)
selected by
 
Best answer
প্রশ্নঃ  টাখনুর নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পরিধান করা সম্পর্কে ইসলাম কি বলে? যদি অহংকার বশতঃ হয় তবে তার শাস্তি কি? কিন্তু যদি অহংকার বশতঃ না হয় তবে তার শাস্তি কি? আবু বকরের হাদীছ দ্বারা যারা দলীল পেশ করে তাদের দাবীর কি জবাব?

জবাবঃ
প্রথম কথা হলঃ
أَحْمَدُ بْنُ يُونُسَ حَدَّثَنَا زُهَيْرٌ حَدَّثَنَا مُوسٰى بْنُ عُقْبَةَ عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللهِ عَنْ أَبِيهِ عَنْ النَّبِيِّصلى الله عليه وسلم قَالَ مَنْ جَرَّ ثَوْبَه“ خُيَلاَءَ لَمْ يَنْظُرْ اللهُ إِلَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ قَالَ أَبُو بَكْرٍ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّ أَحَدَ شِقَّيْ إِزَارِي يَسْتَرْخِي إِلاَّ أَنْ أَتَعَاهَدَ ذ‘لِكَ مِنْه“ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لَسْتَ مِمَّنْ يَصْنَعُه“ خُيَلاَءَ.

আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি অহঙ্কার বশতঃ নিজের পোশাক ঝুলিয়ে চলবে, আল্লাহ তার প্রতি কিয়ামাতের দিন (দয়ার) দৃষ্টি দিবেন না। তখন আবূ বকর (রাঃ) বললেনঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমার লুঙ্গির এক পাশ ঝুলে থাকে, আমি তাতে গিরা না দিলে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যারা অহঙ্কার বশতঃ এমন করে তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত নও।(সহি বুখারি ৫৭৮৪ আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৫৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৫৫

آدَمُ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ أَبِي سَعِيدٍ الْمَقْبُرِيُّ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَا أَسْفَلَ مِنْ الْكَعْبَيْنِ مِنْ الإِزَارِ فَفِي النَّارِ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইযারের বা পরিধেয় বস্ত্রের যে অংশ পায়ের গোড়ালির নীচে থাকবে, সে অংশ জাহান্নামে যাবে।(সহি বুখারি ৫৭৮৭ আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৫৮)

লুঙ্গি, পায়জামা, প্যান্ট ইত্যাদি কাপড় যদি পায়ের কিঞ্চিৎ নিচে ঝুলিয়ে পরিধান করা হয় এবং তাঁর উদ্দেশ্য হয় অহংকার করা, তবে তাঁর শাস্তি হল – কিয়ামত দিবসে আল্লাহ্‌ তা’আলা তাঁর দিকে দৃষ্টি দিবেন না, তাঁর সাথে কথা বলবেন না, তাকে পবিত্র করবেন না এবং তাঁর জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আর যদি অহংকারের সাথে নয় বরং সাধারণভাবে কাপড় ঝুলিয়ে পরে, তবে তাঁর শাস্তি হল –তাঁর টাখনুদ্বয়কে জাহান্নামের আগুনে পোড়ানো হবে। কেননা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

ثَلاَثَةٌ لاَ يُكَلّمُهُمُ اللّهُ يَوْمَ الْقِياَمَةِ وَلاَ يَنْظُرُ إلَيْهِمْ وَلاَ يُزَكّيْهِمْ وَلَهُمْ عَذاَبٌ ألِيْم: المُسْبِلُ وَالمَنَّانُ وَالْمُنْفِقُ سِـلْعَتَهُ بـاِلْحَلِفِ الكـاَذِبِ

“কিয়ামত দিবসে আল্লাহ্‌ তা’আলা তিনি ব্যাক্তির সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। সেই তিনি ব্যাক্তি হল –
১) পায়ের টাখনুর নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পরিধানকারী,
২) দান করে খোটাদানকারী
৩) মিথ্যা শপথ করে পন্য বিক্রয়কারী “ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেনঃ

مَنْ جَرَّ ثَوْبَهُ خُيَلاَءَ لَمْ يَنْظُرِ الله إلَيْهِ يَوْمَ الْقِياَمَـةِ

“যে ব্যাক্তি অহংকার বশতঃ কাপড় ঝুলিয়ে পরিধান করবে কিয়ামত দিবসে আল্লাহ্‌ তাঁর দিকে দৃষ্টিপাত করবেন না” এ বিধান ঐ ব্যাক্তির জন্য যে অহংকার বশতঃ কাপড় ঝুলিয়ে পরে।
আর যে ব্যাক্তি অহংকারের উদ্দেশ্য ছাড়া কাপড় ঝুলিয়ে পরবে তাঁর ব্যাপারে হাদীসে এসেছে, আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

ماَ أسْفَلَ الكعبين مِـنَ الإزاَرِ فَفِيْ النّـارِ

“যে টাখনুদ্বয়ের নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পরা হত তা আগুনের মধ্যে জ্বলবে” এ হাদিসে দোযখের আগুনে টাখনু জ্বলার ব্যাপারে অহঙ্কারের কথা উল্লেখ নেই।
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

إِزْرَةُ الْمُؤْمِنِ إِلَى نِصْفِ السَّاقِ وَلا حَرَجَ أَوْ لا جُنَاحَ فِيمَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْكَعْبَيْنِ ومَا كَانَ أَسْفَلَ مِنَ الْكَعْبَيْنِ فَهُوَ فِي النَّارِ وَمَنْ جَرَّ إِزَارَهُ بَطَرًا لَمْ يَنْظُرِ اللَّهُ إِلَيْهِ يَوْمَ الْقِياَمَةِ

“মুমিম ব্যাক্তির কাপড় নেসফে সাক তথা অর্ধ হাঁটু পর্যন্ত, এতে কোন অসুবিধা নেই” (হাঁটু থেকে পায়ের তোলার মধ্যভাগকে নেসফে সাক বলা হয়) অন্য বর্ণনায় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরুপ বলেনঃ “পায়ের টাখনু এবং হাটুর মধ্যবর্তী স্থানে কাপড় পরিধান করাতে কোন অসুবিধা নেই। যে টাখনুর নীচে কাপড় পরিধান করা হবে তা জাহান্নামে যাবে, এবং যে ব্যাক্তি অহংকার বশতঃ কাপড় ঝুলিয়ে পরবে, কিয়ামত দিবসে আল্লাহ্‌ তাঁর দিকে দৃষ্টিপাত করবেন না”।

অনেকে কাপড় ঝুলিয়ে পরিধান করে এবং যুক্তি দেখায় যে আমি তো অহংকার বশতঃ কাপড় টাখনুর নীচে ঝুলিয়ে পরিনাই, সতরাং এতে তেমন অসুবিধা নেই। উল্লেখিত হাদিসগুলি থেকে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, এ ব্যাক্তির যুক্তি সম্পূর্ণ অসাড়।

অতএব অহংকারের উদ্দেশ্য ব্যাতিত এমনিই সাধারণভাবে কাপড় টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পরলেই জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে। আর তাঁর সাথে যদি অহংকার যুক্ত হয় তবে তাঁর শাস্তি আরও কঠিন, তা হল – আল্লাহ্‌ তাঁর সাথে কথা বলবেন না, তাঁর দিকে তাকাবেন না, তাকে পবিত্র করবেন না এবং তাঁর জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।

আবু বকর (রাঃ) এর হাদীছ দ্বারা যারা দলীল পেশ করতে চায় দু’দিক থেকে তাদের যুক্তি খন্ডনঃ

প্রথম কথাঃ আবু বকর (রাঃ) বলেছেন, আমার কাপড়ের এক পার্শ্ব (অনিচ্ছাকৃত) ঝুলে পড়ে কিন্তু আমি তা বারবার উঠিয়ে নেয়ার চেষ্টা করি।” অতএব তিনি তো ইচ্ছাকৃত একাজ করতেন না। বরং তাঁর শরীর অধিক ক্ষীণ হওয়ার কারণে অনিচ্ছাকৃত কাপড় ঝুলে যেত। তাছাড়া তিনি তা উঠিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতেন। কিন্তু যারা কাপড় ঝুলিয়ে পরে এবং ধারণা করে যে তারা অহংকার করে না, তারা তো ইচ্ছাকৃত একাজ করে। অতএব তাদের ক্ষেত্রে আমরা বলব, অহংকারের উদ্দেশ্য ব্যতীত ইচ্ছাকৃত কাপড় ঝুলিয়ে পরলে তার টাখনু জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে। যেমনটি আবু হুরায়রার হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। আর যদি অহংকার বশতঃ হয় তবে তার শাস্তি হচ্ছে, আল্লাহ্‌ তাঁর সাথে কথা বলবেন না, তাঁর দিকে তাকাবেন না, তাকে পবিত্র করবেন না এবং তাঁর জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।

দ্বিতীয় কথাঃ নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজেই আবু বকর (রাঃ)কে পরিশুদ্ধ করেছেন এবং সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তিনি সেই সকল লোকদের অন্তর্ভুক্ত নন, যারা অহংকার বশতঃ একাজ করে থাকে। অতএব বর্তমানে এরা কি নবীজীর পক্ষ থেকে এরূপ সচ্চরিত্রের সনদ ও তাঁর সাক্ষ্য লাভ করেছে? কিন্তু শয়তান প্রবৃত্তির অনুসারী লোকদেরকে কুরআন্তসুন্নাহ্‌ থেকে সামঞ্জস্যপূর্ণ উক্তি সমূহকে খেয়াল-খুশির উপর ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধু করে। তখন তারা বিভ্রান্ত হয়। আল্লাহ্‌ যাকে ইচ্ছা সঠিক পথে পরিচালিত করে থাকেন
আল্লাহু আলাম   

Related questions

...