আসসালামু আলাইকুম । এখানে রেজিস্ট্রেশন না করেই অংশগ্রহণ/ব্যবহার করতে পারবেন কিন্তু সর্বোচ্চ সুবিধার জন্য বিনামূল্যে রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন !
0 votes
68 views
in ব্যবসায়িক by

1 Answer

0 votes
by (1.9k points)

ইসলাম একটি শাশ্বত, সার্বজনীন ও পূর্ণাঙ্গ জীনব ব্যবস্থা। সৃষ্টি জগতে এমন কোন দিক ও বিভাগ নেই, যেখানে ইসলাম নিখুঁত ও স্বচ্ছ দিক-নির্দেশনা প্রদান করেনি। মহান আল্লাহ বলেন, مَا فَرَّطْنَا فِي الْكِتَابِ مِنْ شَيْءٍ ‘আমরা এ কিতাবে কোন কিছুই অবর্ণিত রাখিনি’ (মায়েদাহ ৫/৩৮)।

এখন আপনার প্রশ্নে আসি।

মূল্য নির্ধারণ :
----------
মূল্য নির্ধারণ বলতে পণ্যের এমন একটি নির্দিষ্ট মূল্য নির্ধারণ বুঝায়, যাতে লভ্যাংশ থাকবে যেন পণ্যের মালিক ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, আবার উক্ত পণ্যের ভোক্তাদের জন্যও কষ্টসাধ্য না হয়।

আনাস (রাঃ) বলেন, غَلاَ السِّعْرُ عَلَى عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ سَعِّرْ لَنَا. فَقَالَ إِنَّ اللهَ هُوَ الْمُسَعِّرُ الْقَابِضُ الْبَاسِطُ الرَّزَّاقُ وَإِنِّىْ لأَرْجُو أَنْ أَلْقَى رَبِّىْ وَلَيْسَ أَحَدٌ مِنْكُمْ يَطْلُبُنِىْ بِمَظْلَمَةٍ فِىْ دَمٍ وَلاَ مَالٍ- ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগে (একবার পণ্যের) মূল্য বেড়ে গেল। তখন ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমাদের জন্য মূল্য নির্ধারণ করে দিন। তখন তিনি বললেন, নিঃসন্দেহে আল্লাহই হচ্ছেন মূল্য নির্ধারণকারী; তিনি সঙ্কোচনকারী, সম্প্রসারণকারী ও রিযিকদাতা। আর আমি অবশ্যই এমন এক অবস্থায় আমার রবের সাথে সাক্ষাৎ করার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করি যাতে তোমাদের মধ্য থেকে কেউ আমার বিরুদ্ধে রক্ত (প্রাণ) ও সম্পদ সম্পর্কে যুলুমের অভিযোগ উত্থাপন করতে না পারে’।[16]

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমাদের দ্রব্যের মূল্য নির্ধারণ করে দিন। তখন তিনি বললেন, بَلِ اللهُ يَخْفِضُ وَيَرْفَعُ وَإِنِّىْ لأَرْجُو أَنْ أَلْقَى اللهَ وَلَيْسَ لأَحَدٍ عِنْدِىْ مَظْلَمَةٌ ‘বরং আল্লাহই সঙ্কোচন-সম্প্রসারণ করেন। আমি অবশ্যই এমতাবস্থায় আল্লাহর সাথে মিলিত হ’তে চাই যে, আমার পক্ষ থেকে কারো প্রতি সামান্যতম যুলুমও থাকবে না’।[17]

ইমাম শাফেঈ (রহঃ) তাঁর ‘কিতাবুল উম্ম’-এ ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হ’তে বর্ণনা করেন, তিনি একদা বাজারে হাতিব ইবনে আবী বালতা‘আর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন, তার কাছে ছিল কিসমিস ভর্তি দু’টি বস্তা। তখন ওমর (রাঃ) তার দাম জিজ্ঞেস করলেন। উত্তরে হাতিব (রাঃ) বললেন, এক দিরহাম। ওমর (রাঃ) বললেন, তায়েফ থেকে কিসমিস নিয়ে আসা একটি কাফেলার ব্যাপারে অবগত হ’লাম, তারা তোমাকে মূল্যে ঠকাচ্ছে। অর্থাৎ তারা এর চেয়ে বেশী দামে বিক্রি করছে। অতএব তুমি দাম বাড়িয়ে দাও অথবা বাড়ীতে গিয়ে যেভাবে ইচ্ছে বিক্রি কর। এ কথা শুনে হাতিব (রাঃ) বাড়ী চলে গেলেন। অতঃপর ওমর (রাঃ) বিষয়টি চিন্তা করে হাতিব (রাঃ)-এর বাড়ীতে আসলেন এবং তাকে বললেন, আমি তোমাকে যেটা বলেছিলাম সেটা শাসক হিসাবে, যা অবশ্য পালনীয় নয়; বরং এর মাধ্যমে আমি দেশবাসীর কল্যাণ চেয়েছিলাম। সুতরাং তুমি যেভাবে এবং যে দামে ইচ্ছা বিক্রি কর।[18]

ইমাম শাওকানী (রহঃ) বলেন, দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হারাম। কারণ তা যুলুমের নামান্তর। কেননা মানুষ তার সম্পদের উপর কর্তৃত্বের অধিকারী অথচ দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করে দেয়াটা এর প্রতিবন্ধক স্বরূপ। রাষ্ট্রপ্রধান জনগণের কল্যাণ হেতু দ্রব্যমূল্য কম রাখার ও উৎপাদন বৃদ্ধির যাবতীয় ব্যবস্থা করবে, এটাই তার বড় দায়িত্ব।[19]


লাভের পরিমাণ :
------------
কোন পণ্যে কত লাভ করা যাবে এরূপ কোন নির্দেশনা কুরআন-হাদীছে পাওয়া যায় না। আবার সকল পণ্যে এক রকম লাভ করা যাবে না এরূপ কোন নিষেধাজ্ঞাও নেই। আসলে শরী‘আতে বিষয়টিকে উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। কারণ লাভ নির্ণয়ের বিষয়টি নির্ভর করে স্থান-কাল-পাত্র ভেদে পরিস্থিতি-পরিবেশের উপর। তবে লাভের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন সীমা সম্পর্কে একটা ধারণা আমরা হাদীছ থেকে লাভ করতে পারি। উরওয়া ইবনে আবিল জাদ আল-বারেকী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

عَرَضَ لِلنَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم جَلَبٌ فَأَعْطَانِى دِيْنَاراً وَقَالَ أَىْ عُرْوَةُ ائْتِ الْجَلَبَ فَاشْتَرِ لَنَا شَاةً. فَأَتَيْتُ الْجَلَبَ فَسَاوَمْتُ صَاحِبَهُ فَاشْتَرَيْتُ مِنْهُ شَاتَيْنِ بِدِيْنَارٍ فَجِئْتُ أَسُوْقُهُمَا أَوْ قَالَ أَقُوْدُهُمَا فَلَقِيَنِىْ رَجُلٌ فَسَاوَمَنِىْ فَأَبِيْعُهُ شَاةً بِدِيْنَارٍ فَجِئْتُ بِالدِّيْنَارِ وَجِئْتُ بِالشَّاةِ فَقُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ هَذَا دِيْنَارُكُمْ وَهَذِهِ شَاتُكُمْ. قَالَ وَصَنَعْتَ كَيْفَ. قَالَ فَحَدَّثْتُهُ الْحَدِيْثَ فَقَالَ اللَّهُمَّ بَارِكْ لَهُ فِىْ صَفْقَةِ يَمِيْنِهِ.

‘নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট পশুর একটি চালানের সংবাদ আসল। তিনি আমাকে একটি দীনার দিয়ে বললেন, উরওয়া! তুমি চালানটির নিকট যাও এবং আমাদের জন্য একটি বকরী ক্রয় করে নিয়ে আস। তখন আমি চালানটির কাছে গেলাম এবং চালানের মালিকের সাথে দরদাম করে এক দীনার দিয়ে দুইটি বকরী ক্রয় করলাম। বকরী দু’টি নিয়ে আসার পথে এক লোকের সাথে দেখা হয়। লোকটি আমার থেকে বকরী ক্রয় করার জন্য আমার সাথে দরদাম করল। তখন আমি তার নিকট এক দীনারের বিনিময়ে একটি বকরী বিক্রয় করলাম এবং একটি বকরী ও একটি দীনার নিয়ে চলে এলাম। তখন আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! এই হচ্ছে আপনার দীনার এবং এই হচ্ছে আপনার বকরী। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, এটা করলে কিভাবে? উরওয়া বলেন, আমি তখন তাঁকে ঘটনাটি বললাম। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, হে আল্লাহ! আপনি তার হাতের লেন-দেনে বরকত দিন’।[20]

উল্লেখ্য, উক্ত ছাহাবী রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পক্ষে ১০০% লাভ করা সত্ত্বেও রাসূল (ছাঃ) তার জন্য বরকতের দো‘আ করেছেন এবং এ দো‘আর ফলে উক্ত ছাহাবী জীবনে প্রচুর বরকত লাভে ধন্য হয়েছেন। বুখারীর বর্ণনায় এসেছে, উক্ত ছাহাবী মাটি ক্রয় করলেও তাতে লাভ হ’ত। সুতরাং মজুতদারী না করে, প্রতারণার আশ্রয় না নিয়ে ক্রেতার স্বাভাবিক ও স্বেচ্ছা সম্মতির ভিত্তিতে কোন পণ্য বিক্রি করে বিক্রেতা ১০০% লাভ করলেও শরী‘আতে কোন বাধা নেই। তবে এক্ষেত্রে ক্রেতা বা ভোক্তা যেন যুলুমের শিকার না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা যরূরী।

লাভের সর্বনিম্ন সীমা সম্পর্কে ইসলামী চিন্তাবিদগণ বলেছেন, সম্পদ ব্যবসায় বিনিয়োগ করলে কমপক্ষে এতটুকু লাভ করা যায় যাতে ব্যবসায়ীর পরিবারের ভরণ-পোষণ, ব্যবসার কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদান ও ২.৫% যাকাত দেয়ার পর মূলধন অক্ষত থাকে। তবে ব্যবসা-বাণিজ্য ও পাওনা আদায়ের ক্ষেত্রে মানুষের সাথে দয়ার্দ্র, নম্র ও সদ্ব্যবহার পূর্বক ন্যায্য মূল্য গ্রহণ করা অত্যন্ত নেক কাজ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, رَحِمَ اللهُ رَجُلاً سَمْحًا إِذَا بَاعَ، وَإِذَا اشْتَرَى، وَإِذَا اقْتَضَى ‘আল্লাহ ঐ মহানুভব মানুষের প্রতি দয়া করেন, যে ক্রয়-বিক্রয়ে এবং নিজের পাওনা আদায়ে নম্রতা ও সহনশীলতা প্রদর্শন করে’।[21]


প্রথমতঃউভয়ের সন্তুষ্টি আছে কি না নেই?সেদিকে অত্যান্ত সতর্কতার সাথে লক্ষ্য রাখতে হবে ,কেননা আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍْ ﻻَ ﺗَﺄْﻛُﻠُﻮﺍْ ﺃَﻣْﻮَﺍﻟَﻜُﻢْ ﺑَﻴْﻨَﻜُﻢْ ﺑِﺎﻟْﺒَﺎﻃِﻞِ ﺇِﻻَّ ﺃَﻥ ﺗَﻜُﻮﻥَ ﺗِﺠَﺎﺭَﺓً ﻋَﻦ ﺗَﺮَﺍﺽٍ ﻣِّﻨﻜُﻢْ ﻭَﻻَ ﺗَﻘْﺘُﻠُﻮﺍْ ﺃَﻧﻔُﺴَﻜُﻢْ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠّﻪَ ﻛَﺎﻥَ ﺑِﻜُﻢْ ﺭَﺣِﻴﻤًﺎ
তরজমাঃ-হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। কেবলমাত্র তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয় তা বৈধ। আর তোমরা নিজেদের কাউকে হত্যা করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের প্রতি দয়ালু।(সূরা নিসা(২৯)

এবং হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত,
عن ابن عباس قال;قال رسول اللّٰه صلى اللّٰه عليه و سلم
  " ﻻ ﻳﺤﻞ ﻣﺎﻝ ﺍﻣﺮﺉ ﻣﺴﻠﻢ ﺇﻻ ﺑﻄﻴﺐ ﻧﻔﺲ ﻣﻨﻪ "
নবী কারীম সাঃ বলেনঃ"কোন মুসলমানের জন্য  অন্য কোনো মুসলমানের মাল তার অন্তরের সন্তুষ্টি ব্যতীত হালাল হবে না।(তালখিসুল হাবীর-১২৪৯)

সুপ্রিয় পাঠকবর্গ!
অত্র আয়াত এবং হাদীস থেকে আমরা সুস্পষ্টভাবে  বুঝতে পারলাম যে,যে কোনো ধরণের লেনদেনে উভয়ের সন্তুষ্টি একান্ত অত্যাবশ্যকীয় একটি বিষয়।সুতরাং উভয়ের সন্তুষ্টিতে যেকোনো মূল্যে লেনদেন করা যাবে,বৈধ আছে।কিন্তু কারো সন্তুষ্টি না থাকলে জোর করে বা তাকে বাধ্য করে তার সাথে লেনদেন করা কখনো জায়েয হবে না।

দ্বিতীয়তঃকারো উপর জুলুম হচ্ছে কি না?সে দিকটাও নজরে রাখতে হবে।হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাঃ থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাঃ বলেনঃ
ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻈﻠﻢ ﻇﻠﻤﺎﺕ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ
জুলুম/নির্যাতন কিয়ামতের দিন অন্ধকাররূপ ধারণ করবে।(সহীহ বুখারী-২৩১৫)

এবং অত্র হাদীস থেকে আমরা সুস্পষ্টভাবে বুঝতে পারলাম যে লেনদেনে কারো প্রতি জুলুম/নির্যাতন না হওয়া চাই। জুলুম/নির্যাতন করা সর্বাবস্থায়  হারাম।
কিন্তু এক্ষেত্রে যেহেতু ক্রয়-বিক্রয়ের নির্ধারিত শর্ত ইজাব-কবুল(প্রস্তাব-সম্মতি)পাওয়া যাচ্ছে,তাই লেনদেন সংগঠিত হয়ে গেলেও জুলুম-নির্যাতনের গোনাহ অবশ্যই হবে।

ইমদাদুল ফাতাওয়া৩/১৯
আবকে মাসাঈল আউর উনকা হল৬/২৭
জামেউল ফাতাওয়া ৬/৬২

(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)


[16]. তিরমিযী, মুসনাদে আহমাদ হা/১২৬১৯।
[17]. আবূদাঊদ হা/৩৪৫০; ছহীহুল জামে‘ হা/২৮৩৬।
[18]. ইমাম শাফেঈ (রহঃ), আল-উম্ম (কায়রো: দারুশ সাউব, ১৯৬৯), ২/২০৯ পৃঃ; মুছান্নাফ আব্দুর রায্যাক হা/১৪৯০৬, ৮/২০৭।
[19]. ইমাম শাওকানী (রহঃ), নায়লুল আওত্বার (কায়রো : মাকতাবাতুল হালাবী, ১৩৯১ হিঃ) ৫/৩৩৫।
[20]. বুখারী হা/৩৬৪২; আবূদাঊদ হা/৩৩৮৪; তিরমিযী হা/১২৫৮।
[21]. বুখারী হা/২০৭৬ ‘ক্রয়-বিক্রয়’ অধ্যায়; ইবনু মাজাহ হা/২২০৩; মিশকাত হা/২৭৯০।

Related questions

...