আসসালামু আলাইকুম । এখানে রেজিস্ট্রেশন না করেই অংশগ্রহণ/ব্যবহার করতে পারবেন কিন্তু সর্বোচ্চ সুবিধার জন্য বিনামূল্যে রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন !
+1 vote
29.7k views
in মাসআলা মাসায়েল by (1.9k points)
খেলাধুলা নিয়ে ইসলাম কি বলে ? কোন খেলা জায়েজ/হালাল আর কোনগুলো নাজায়েজ/হারাম?

1 Answer

+1 vote
by (380 points)

প্রশ্নঃ ইসলামে খেলাধুলার বিধান কি? বিস্তারিত দলিল সহ 

হাদীসের আলোকে খেলাধুলা:
স্বাস্থ্য সুরক্ষা, রণ নৈপুণ্যের প্রয়োজনে তীর নিক্ষেপ, বর্শা চালনা, দৌড় প্রতিযোগিতা ইত্যাদিকে ইসলাম সমর্থন করে। হাদীসে বর্ণিত রয়েছে- প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘ঘোড়া অথবা তীর নিক্ষেপ কিংবা উটের প্রতিযোগিতা ব্যতীত (ইসলামে) অন্য প্রতিযোগিতা নেই।’ (তিরমিজি: ৫৬৪)

তিনি আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি তীর চালনা শেখার পর তা ছেড়ে দেয় সে আমার দলভুক্ত নয়।’ (মুসলিম: ৭৬৬৮)

অন্য হাদিসে এসেছে, নবীজী (সা.) বলেন, ‘তোমাদের জন্য তীর নিক্ষেপ শিক্ষা করা কর্তব্য। কেননা, এটা তোমাদের জন্য একটি উত্তম খেলা।’ (ফিকহুস সুন্নাহ, ২য় খ. পৃ ৬০)

হজরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাফইয়া থেকে সানিয়াতুল বিদা পর্যন্ত সীমানার মধ্যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ঘোড়াসমূহের দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান করেছেন। স্থান দুইটির দূরত্ব ছিল ছয় মাইল।’ (বুখারি: ৩৬৫৭)

অন্যত্র বর্ণিত আছে, হজরত আলি (রা.) এর দৌড়ের গতি ছিল খুব বেশি। তাই তো দেহ মনের আনন্দের প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে হজরত আলি (রা.) বলতেন, ‘অন্তরকে কাজের ফাঁকে ফাঁকে অবকাশ ও শান্তি দান কর। কেননা, অন্তরের অস্বস্তি অন্তরকে অন্ধ করে ফেলে।’

পবিত্র কোরআনের একটি আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন-

আরবি আয়াত:
وَمِنَ النَّاسِ مَن يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَن سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا أُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُّهِينٌ

বাংলা অর্থ:
‘মানুষের মধ্যে এক শ্রেণির মানুষ এমন আছে, যারা খেলাধুলা-কৌতুকাবহ কথা ক্রয় করে মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে ভ্রষ্ট করার জন্য। আর এটা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে। এদের জন্য রয়েছে অবনামনাকর শাস্তি।’(সূরা: লোকমানের, আয়াত: ৬) আলোচ্য আয়াতটি খেলাধুলা ও অনর্থক কাজের নিন্দায় সুস্পষ্ট ও প্রকাশ্য। (রুহুল মাআনি: ৫৬৪৪)

বিংশ শতাব্দির প্রখ্যাত মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ শফী (র.) তার ‘আহকামুল ককোরআনে’ বর্ণিত আয়াতের হুকুম প্রসঙ্গে বলেন, পবিত্র ককোরআনের এ আয়াতে ঐসকল কথা, কাজ, বস্তু ও বিষয়কে হারাম করা হয়েছে, যা মানুষকে আল্লাহ তায়ালার এবাদত ও তাঁর স্মরণ থেকে গাফিল করে দেয়। তা গান-বাজনা হোক বা খেলাধুলা কিংবা ক্রিড়া-কৌতুক-সবই এর অন্তর্ভুক্ত।

খেলাধুলায় জায়েজ না নাজাজের শর্ত:
ইসলাম নির্দিষ্ট কোনো খেলাধুলাকে জায়েজ বা নাজায়েজ বলে নাই; বরং তিনটি শর্তের সঙ্গে জায়েজ-নাজায়েজের সম্পর্ক। তা হলো, 

(১) শারীরিক উপকার সাধন। 

(২) ইসলামি শরিয়াতের কোনো বিধান লঙ্ঘন না হওয়া। 

(৩) আর্থিক ক্ষতিসাধন না হওয়া। 

এ তিনটি শর্ত যে খেলার মাঝে পাওয়া যাবে তা জায়েজ, আর পাওয়া না গেলে জায়েজ নয়।


যেসব শর্তে খেলাধুলা জায়েজ:
এর ওপর ভিত্তি করে ইসলামি ফকিহরা আরো কিছু বিষয় সম্পর্কে স্পষ্ট ফাতোয়া তুলে ধরেছেন। যেকোনো ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ হওয়ার জন্য তাতে নিম্নোক্ত শর্তগুলো উপস্থিত থাকতে হবে-

(১) ধর্মীয় জরুরি কর্তব্য পালন থেকে উদাসীন না করা:
কোনো খেলা বৈধ হতে হলে তার মধ্যে এ বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে যে তার নেশার ঘোর যেন মহান আল্লাহর কোনো ফরজ বিধান পালনের কথা দিব্যি ভুলিয়ে না দেয়। খেলার ছলে যেন ফরজ ছুটে না যায়। যেমন কোনো ফরজ নামাজের সময় খেলাধুলা করা। মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, আর মানুষের মধ্য থেকে কেউ কেউ না জেনে আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য অনর্থক কথা খরিদ করে, আর তারা ঐগুলোকে হাসি-ঠাট্টা হিসেবে গ্রহণ করে; তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর আজাব।’ (সূরা: লুকমান, আয়াত: ৬) এ আয়াত দ্বারা কেউ ব্যাখ্যা করেছেন যে, অতিরিক্ত খেলাধুলাও মানুষকে আল্লাহর পথ বা বিধান পালন থেকে বিরত রাখে।

(২) শরিয়তের মহৎ লক্ষ্যের প্রতি খেয়াল রাখা:
মহান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসীমাত্রেই জানেন, পৃথিবীতে আমাদের আগমন অহেতুক নয়। পৃথিবীতে আমাদের জীবন লক্ষ্যহীন নয়। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনুল কারিমে বলেন,

আরবি আয়াত:
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ

বাংলা অর্থ:
‘আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি।’ (সূরা: আয-যারিয়াত, আয়াত: ৫৬)

অতএব খেলার লক্ষ্য যেন উদ্দেশ্যহীন খেলায়ই সীমাবদ্ধ না থাকে। খেলাটি হতে হবে হয়তো ইসলামের জন্য জীবনবাজি রেখে জিহাদের প্রস্তুতি হিসেবে, যেটি ইসলামের শরীরচর্চার সর্বোচ্চ লক্ষ্য অথবা শারীরিক সক্ষমতা অর্জন, কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি বা বৈধ চিত্তবিনোদনের উদ্দেশ্যে।

(৩) সতর আবৃত থাকা এবং যৌন সুড়সুড়িদায়ক না হওয়া:
অন্য সময়ের মতো খেলাধুলার সময়ও সতর ঢাকা ওয়াজিব। অথচ অনেক খেলায় ফিতনা উসকে দেবার মতো সতর খোলা থাকে। যেমন ফুটবল খেলায় পুরুষের উরুর অর্ধেক বা তারও বেশি অংশ খোলা থাকে। হজরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তুমি নিজের উরুকে উম্মুক্ত করো না এবং কোনো জীবিত বা মৃত ব্যক্তির উরুর দিকে দৃষ্টি দিও না।’ (আবূ দাউদ: ৪০১৭; শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, দেখুন সহীহুল জামে: ৭৪৪১)

(৪) জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ না হওয়া:
খেলাটি এমন হতে হবে যাতে জীবন নাশের নিশ্চিত বা প্রবল সম্ভাবনা না থাকে। কেননা নিজের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলা বা ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়ার অনুমতি ইসলামে নেই।মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন,

আরবি আয়াত:
وَأَنفِقُواْ فِي سَبِيلِ اللّهِ وَلاَ تُلْقُواْ بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ وَأَحْسِنُوَاْ إِنَّ اللّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ

বাংলা অর্থ:
আর ব্যয় কর আল্লাহর পথে, তবে নিজের জীবনকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না। আর মানুষের প্রতি অনুগ্রহ কর। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদেরকে ভালবাসেন। (সূরা: আল-বাকারা, আয়াত: ১৯৫)

(৫) হারাম উপার্জনমুক্ত হওয়া:
খেলা বৈধ হবার আরেক মৌলিক শর্ত হলো, সেটি যেকোনো ধরনের জুয়া ও বাজিমুক্ত হওয়া। খেলাধুলার মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক বাজির অর্থ বৈধ উপার্জন নয়। আজকাল আন্তর্জাতিক খেলাধুলায় বাজি এবং বাজিকে কেন্দ্র করে নানা অনভিপ্রেত ঘটনার উদ্ভব প্রায়ই ঘটতে যায়। ইসলাম এসব অবৈধ উপার্জন ও দুর্নীতি প্রতিরোধে সর্বদাই বদ্ধপরিকর। মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,

আরবি আয়াত:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالأَنصَابُ وَالأَزْلاَمُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَن يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاء فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَن ذِكْرِ اللّهِ وَعَنِ الصَّلاَةِ فَهَلْ أَنتُم مُّنتَهُونَ

বাংলা অর্থ:
‘হে মুমিনগণ, নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদী ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ তো নাপাক শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। শয়তান শুধু মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চার করতে চায়। আর (চায়) আল্লাহর স্মরণ ও সালাত থেকে তোমাদের বাধা দিতে। অতএব, তোমরা কি বিরত হবে না?’ (সূরা: আল-মায়িদা, আয়াত: ৯০-৯১)

(৬) প্রতিযোগিতার জয়-পরাজয়ে শত্রুতা-মিত্রতা সৃষ্টি না হওয়া:
খেলাধুলাকে শত্রুতা-মিত্রতার মাপকাঠি বানালে সে খেলাটি তার স্বাভাবিক বৈধতা হারায়। ভালো খেলার কারণে অতিভক্তি বা খারাপ খেলার কারণে অতিভক্তি কোনোটাই ইসলামে কাম্য নয়। ফুটবলে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সমর্থক কিংবা ক্রিকেটে ভারত-পাকিস্তানের সমর্থকদের মধ্যে নিজেদের সমর্থিত দল নিয়ে মারামারি, হানাহানি ও শত্রুতা তৈরির ঘটনা পত্র-পত্রিকা প্রায়ই চোখে পড়ে। মানুষকে শয়তানের এসব দুরভিসন্ধিমূলক ঘটনার হাত থেকে বাঁচাতে তাই মহান আল্লাহ তায়ালা পরিষ্কার ঘোষণা করেছেন,

আরবি আয়াত:
إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَن يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاء فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَن ذِكْرِ اللّهِ وَعَنِ الصَّلاَةِ فَهَلْ أَنتُم مُّنتَهُونَ

বাংলা অর্থ:
‘নিশ্চয় শয়তান শুধু মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চার করতে চায়। আর (চায়) আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে তোমাদের বাধা দিতে। অতএব, তোমরা কি বিরত হবে না?’ (সূরা: আল-মায়িদা, আয়াত: ৯১)

এসব শর্তে খেলাধুলার বৈধতা দেওয়া হলেও বর্তমানে প্রচলিত খেলাধুলায় ইসলামি মূল্যবোধের প্রতিফলন প্রায়ই পরিলক্ষিত হয় না। এসব খেলার মধ্যে জীবনের ঝুঁকি, নামাজেরর প্রতি অবহেলা, অন্য ধর্মের অনুসরণ, সময় ও অর্থের অপচয়, জুয়া-বাজিধরা, রঙখেলা, গ্যালারিতে উদ্দাম নৃত্য-গান, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, উল্কী আঁকা ইত্যাদির বাহুল্য থাকে। তাই এসব খেলাধুলা সম্পূর্ণ নাজায়েজ ও হারাম।

কারণ, আধুনিক কালে খেলাধুলার নানা শাখা-প্রশাখার বিস্তৃতি ঘটেছে। খেলার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আনুষঙ্গিক বহু বিষয়। খেলার বৈধতা-অবৈধতার ক্ষেত্রে এসব বিষয়ও বিবেচ্য। যেমন এখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সব খেলার প্রাণ দর্শক-শ্রোতা। দর্শকরাই খেলাধুলার মাধ্যমে আয়ের প্রধান উৎস। দর্শক না এলে বিশ্বফুটবলের নিয়ন্ত্রক ফিফা কিংবা বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি মাঠে মারা যাবে। এ দর্শকদের কারণেই খেলাধুলা নিয়ে মিডিয়া ও পুঁজিপতিদের যত আগ্রহ।

দাবা,তাস,লুডু এই জাতীয় যত খেলা আছে সব হারাম: 

লোক সমাজে অনেক খেলাধূলার সাথেই হারাম জড়িত আছে। দাবা খেলা ঐ সম¯ত হারাম খেলাধূলার মধ্য হতে অন্যতম। আর এই দাবা খেলার মাধ্যমে আরো অনেক রকম হারাম খেলার প্রতি ঝুকে পড়ে মানুষ। বিশেষ করে এই দাবা খেলার দ্বারা বিভিন্ন রকম জুয়া খেলার সূচনা হয়।
আর এ জন্যেই রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই দাবা খেলা সম্পর্কে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেছেন,
مَنْ لَعِبَ بِالنَّرْدِ شِيْرٍ فَكَأَنَّمَا صَبَغَ يَدَهُ فِيْ لَحْمِ خِنْزِيْرٍ وَدَمِهِ
(مسلم ৪/ ১৭৭০).
অর্থঃ “যে ব্যক্তি দাবা খেলল সে যেন শুকরের রক্ত-মাংসে নিজের হাত রঞ্জিত করল”*_
(মুসলিম ৪/১৭৭০)।

আবূ-মূসা আশ‘আরী (রাঃ) হ'তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
مَنْ لَعِبَ بِالنَّرْدِ فَقَدْ عَصَى اللهَ وَ رَسُوْلَهُ
(أحمد ৪/৩৯৪, صحيح الجامع ৬৫০৫).
অর্থঃ “যে ব্যক্তি দাবা খেলে সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিধানকে অমান্য করল”
(আহমাদ ৪/৩৯৪, ছহীহুল জামে ৬৫০৫)।
সুতরাং দাবা ও তার আনুসঙ্গিক খেলা যেমন তাশ, পাশা, ফ্লাশ ইত্যাদি সম্বন্ধে অবশ্যই শরী‘আতের আদেশ মেনে চলতে হবে।

প্রশ্নঃ তাস খেলা ও দাবা খেলার বিধান কী? তাস খেলা ও দাবা খেলা যদি খেলোয়াড়কে নামায থেকে গাফেল বা বিরত না রাখে তাহ’লে কি তা খেলা জায়েয হবে?

উত্তরঃ
তাস খেলা, দাবা খেলা এবং এধরনের আরো অন্যান্য খেলা সবই না জায়েয । কেননা এধরনের খেলা সবই অনর্থক সময় নষ্ট করার হাতিয়ার। কেননা এ সমস্ত খেলা আল্লাহর যিকির-আযকার হ’তে, যথা সময়ে নামায পড়া হ’তে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে । এবং অনর্থক সময় নষ্ট করতে বাধ্য করে। এ ছাড়া এ সমস্ত খেলা অনেক সময় পারস্পরিক শত্র“তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর যদি এ সমস্ত খেলা অর্থের বিনিময়ে অর্থাৎ হার-জিত হিসাবে খেলা হয়, তাহ’লে এ সমস্ত খেলা খুব বড় ধরনের হারাম কাজে পরিণত হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

নিষিদ্ধ খেলাধূলা: 

عن بُرَيْدَةَ أَنَّ النَّبِىَّ ﷺ قَالَ مَنْ لَعِبَ بِالنَّرْدَشِيرِ فَكَأَنَّمَا صَبَغَ يَدَهُ فِى لَحْمِ خِنْزِيرٍ وَدَمِهِ
(২৩২৭) বুরাইদা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি পাশা-জাতীয় খেলা খেলল, সে যেন তার হাতকে শুকরের রক্তে রঞ্জিত করল।’’*_
(মুসলিম ২২৬০, আবূ দাঊদ ৪৯৩৯, ইবনে মাজাহ ৩৭৬৩)
হাদীস সম্ভার হাদিস নম্বরঃ ২৩২৭
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

عَنْ أَبِـيْ مُوسَى قال : قال رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ لَعِبَ بِالنَّرْدِ فَقَدْ عَصَى الله وَرَسُولَهُ
(২৩২৮) আবূ মূসা (রাঃ) প্রমুখাৎ বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি পাশা-জাতীয় খেলা খেলল, সে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নাফরমানী করল।’’*_
(মালেক, আবূ দাঊদ ৪৯৩৮, ইবনে মাজাহ ৩৭৬২, হাকেম ১/৫০, বাইহাকীর শুআবুল ঈমান, সহীহুল জামে’ ৬৫২৯)
হাদীস সম্ভার হাদিস নম্বরঃ ২৩২৮
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ رَأَى رَجُلاً يَتْبَعُ حَمَامَةً فَقَالَ شَيْطَانٌ يَتْبَعُ شَيْطَانَةً
(২৩২৯) আবূ হুরাইরা (রাঃ) প্রমুখাৎ বর্ণিত, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে পায়রা উড়িয়ে খেলা করতে দেখে বললেন, ‘‘শয়তান শয়তানের অনুসরণ করছে।’’
(আহমাদ ৮৫৪৩, আবূ দাঊদ ৪৯৪২, ইবনে মাজাহ ৩৭৬৫ হাসান সনদে)
হাদীস সম্ভার হাদিস নম্বরঃ ২৩২৯
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ الله وَ جَابِرِ بْنِ عُمَيْرٍ قَالَ أَحَدُهُمَا لِلْآخَرِ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ كُلُّ شَيْءٍ لَيْسَ مِنْ ذِكْرِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ فَهُوَ لَهُوٌ أَوْ سَهْوٌ إِلا أَرْبَعَ خِصَالٍ : مَشْيُ الرَّجُلِ بَيْنَ الْغَرَضَيْنِ وَتَأْدِيبُهُ فَرَسَهُ ومُلاعَبَةُ أَهْلِهِ وَتَعَلُّمُ السِّبَاحَةِ
(২৩৩০) জাবের বিন আব্দুল্লাহ ও জাবের বিন উমাইর (রাঃ) প্রমুখাৎ বর্ণিত, তাঁদের একজন অপরজনকে বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘প্রত্যেক সেই জিনিস (খেলা) যা আল্লাহর স্মরণের পর্যায়ভুক্ত নয়, তা অসার ভ্রান্তি ও বাতিল। অবশ্য চারটি কর্ম এরূপ নয়; হাতের নিশানা ঠিক করার উদ্দেশ্যে তীর খেলা, ঘোড়াকে প্রশিক্ষণ দেওয়া, নিজ স্ত্রীর সাথে প্রেমকেলি করা এবং সাঁতার শিক্ষা করা।’’
(নাসাঈর কুবরা ৮৯৩৮-৮৯৪০, ত্বাবারানীর কাবীর ১৭৬০, সিলসিলাহ সহীহাহ ৩১৫)
হাদীস সম্ভার হাদিস নম্বরঃ ২৩৩০

Related questions

...