আমরা সমাজের কিছু লোক রাসূল(ছাঃ)এবং তার সাহাবাগণ থেকে সুন্নাত গুলোকে এতই বেশি বুঝে ফেলেছি কথায় কথায় অতিরিক্ত সুন্নাত পালন করতে যেয়ে নিত্য নতুন এবং বিদ’আত সৃষ্টি করে চলেছি। বিদ’আতে হাসনা নামক বস্তু আবিষ্কার করে বসেছি। সহীহ ইলমধারী কোন আলেম কোন যঈফ হাদীসকে যঈফ বললে। আমরা বলি কিছু আলেম আছে হাদীসের সনদে সামান্য ত্রুটি থাকলেই যঈফ বলে বসে।
.
.
প্রথমে: তাদের বলবো রাসূল (ছাঃ)বলেছেন, সমস্ত বিদ’আতই ভ্রষ্টতা এবং তার পরিনাম জাহান্নাম।
দ্বিতীয়ত: বিজ্ঞ আলেমরা যেটাকে যঈফ বলে থাকে তা নিজেদের কথা না। অতীত যুগের মুহাদ্দিসগণ তা নির্ধারণ করেছেন এবং আমাদের উচিৎ তাদের নির্দেশনা অনুসরণ করা। কারণ হাদীসের নির্ভরতার কষ্টিপাথর একমাত্র মুহাদ্দিসগণের সিদ্ধান্ত। হাদীস কোনটি সহীহ, যঈফ অথবা মিথ্যা তা জানার জন্য সাহাবীগণ হতে তাবেঈ-তাবে তাবেঈ গণের মতামতের আলোকে পরবর্তী কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত মুহাদ্দিসগণ বিস্তারীত বিধানাবলী, লিপিবদ্ধ করে গেছেন।
.
একমাত্র তাদের বক্তব্যের আলোকে হাদীসের মান নির্ধারণ করা হয়। অতীতের মুহাদ্দিসগণ হাদীসের বর্ণনার সাক্ষীগণের (রাবী) জীবনী সহ যাবতীয় তথ্যাদি লিপিবদ্ধ করে গেছেন।
.
যেমন, হাদীস সংকলনের পর হাদীস কোনটি সহীহ কোনটি যঈফ কোনটি বানোয়াট তাও বলে দিয়েছেন। বর্তমান যুগের এ বিষয়ে পারদর্শী বিশ্লেষকগণ ঐ সকল প্রমানাদি একত্রিত করে তুলনা মূলক বিবেচনা ও নিরীক্ষার মাধ্যমে হাদীস সমূহের নির্ভরযোগ্যতা বিশ্লেষণ করেছেন মাত্র এবং ভবিষ্যতেও করবেন।
.
কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখা যায় আমাদের সমাজে যে সকল ভ্রান্তদ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা এই যঈফ হাদীসের মাধ্যমে। দুর্বল হাদীস অর্থ রাবী দুর্বল এটা অনেকের ধারণা। রাবীর শরীরে পুষ্টি কম, শরীরে শক্তি নেই এমন কারন হলে তো কথা থাকতো না। আসলে এমনটি নয়। যদি কোনো বিশ্বস্ত রাবী হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে স্মৃতিশক্তি দুর্বলতার কারণে যেমন, আমি- এর জায়গায় আমরা অথবা তোমরা অথবা এর চেয়ে একটু বেশি ভুল বাক্য উচ্চারণ করে ফেলে।
.
এরকম দুর্বলতার ক্ষেত্রে যে সকল রাবীর দুর্বলতা প্রকাশ পায় আর এর স্বপক্ষে যদি উক্ত কর্ম মূল বিধানটি সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত থাকে তাহলে শুধু মাত্র ঐ যঈফ হাদীস ফযিলতের (বর্ণিত উপকারিতা) ক্ষেত্রে আমল করা যাবে। এটাই উলামা ও হাদীস বিশেষজ্ঞদের প্রসিদ্ধ মত। তবে রাবী মিথ্যাবাদী, জাল হাদীস রচনাকারী, এক রাবী এক রাবীর সঙ্গে সাক্ষাত হয়নি অথচ কোনো মাধ্যম ছাড়া বর্ণনা করছে অথবা মূল রেওয়াতটি বিকৃত করে ফেলেছে, সনদে এমন কোনো (রাবীর) নাম সংযোজন করা হয়েছে, যেমন তাকে কেউ চেনেই না। আবার কোনো রাবী হাদীসের ক্ষেত্রে সত্য বলে কিন্তু অন্য সব জায়গায় মিথ্যা বলে এরকম বহু যে কারণে রাবীর দুর্বলতা প্রকাশ পায়।
.
তার সনদের বর্ণনা আহকাম হোক বা ফযিলত হোক কোনো ক্ষেত্রেই তা আমল করা যায়েজ নেই। বরং এগুলো হাদীসের নামে মিথ্যা কথা।
.
মুহাদ্দীসগণের অন্যতম মূলনীতি হল,যঈফ বর্ণনা উল্লেখ করার সময় রাসূলুল্লাহ(ছাঃ) এর দিকে সম্বোধন না করা। এছাড়াও মুহাদ্দিসগণ ও ওলামায়ে কেরামগণ সহ অন্যান্য বিদ্বানগণ বলেছেন, যখন কোন হাদীস যঈফ প্রমাণিত হবে,তখন উক্ত বর্ণনার ক্ষেত্রে রাসূল(ছাঃ) বলেছেন,করেছেন,নির্দেশ দিয়েছেন, নিষেধ করেছেন, সিদ্ধান্ত দিয়েছেন এবং এরূপ অন্যান্য দৃঢ়তা বাচক কোন শব্দ প্রয়োগ করা যাবে না।
.
যেমন,আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, বলেছেন, উল্লেখ করেছেন, সংবাদ দিয়েছেন অথবা এরূপ অন্যান্য শব্দও বলা যাবে না। এমনকি তাবেঈ ও তাদের পরবর্তীদের ব্যাপারেও বলা যাবে না। যদি তা দুর্বল প্রমাণিত হয়। বরং উপরিউক্ত ক্ষেত্রসমূহে বলতে হবে তার থেকে কথিত বা বর্ণিত আছে, উদ্বৃত হয়েছে অথবা বিবৃত হয়েছে-----। (ইমাম মুকাদ্দামা বরহে মুসলিম অনুচ্ছেদ ২এর শেষাংশ; আল-মারমু ‘শারহু মুহাযযাব ১/৬৩ পৃঃ; তামামুল মিন্নাহ পৃঃ৩৯)।
.
তোমরা অবশ্যই মানুষের মতামত বর্জন করে চলবে (তরিকাতুস সালাফ, মিযান শারানী ১/৫১ পৃঃ)।
.
শুধুমাত্র ইমাম আবু হানীফা নয় ইমাম চতুষ্ঠয় সকলেই সহীহ্ হাদীসের আমল করতে বলেছেন, কোথাও বলেননি যঈফ (হাদীস) বর্ণনা আমলের কথা। আবার এ কথাও বলেননি কিছু কিছু যঈফ (হাদীস) বর্ণনা আমল করা যায়।
সকল উলামায়ে কেরামগণ একমত যে, সহীহ হাদীস মোতাবেক আমল করা ওয়াজিব। (শরহু নুখবাতিল ফিকার ১/৮৪ পৃষ্ঠা)।
.
কাজেই দ্বীন ও শরিয়াতের ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ) হতে সহীহ সনদে বর্ণিত সুন্নাত ছাড়া অন্য কিছু জাল, যঈফ, মুনকার ইত্যাদি বর্ণনা গ্রহন সম্পূর্ণ পরিহার যোগ্য। কারণ এগুলো সন্দেহ পূর্ণ, ধারনা পূর্ণ। প্রখ্যাত হাদীস বিশ্লেষক গণ বলেন লোকদেরকে সেদিকে আহ্বান করো যে, দুর্বল হাদীসের উপর কোন অবস্থাতেই আমল করা যাবে না। সে ফাযায়েলের ক্ষেত্রে হোক, বা মুস্তাহাব গুলোর ক্ষেত্রে হোক কিংবা অন্য কিছুর ক্ষেত্রে হোক। কারণ বিনা মতভেদে আলেমদের নিকট দুর্বল হাদীস দুর্বল ধারনা অথবা অনুমানের অর্থ বহন করে। যেখানে আল্লাহ তা’আলা একাধিক আয়াতে অনুমানের উপর ভিত্তি করে আমল করাকে অপছন্দ করেছেন, সেখানে কিভাবে বলা যায় যঈফ, দুর্বল হাদীসের উপর আমল করা যায়।
.
.
আল্লাহ বলেন ঃ
شيءا اكق من لايفنى الظن وان الاالظن يتبعون ان علم من به لهم وما
“এ বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই। তারা কোন অনুমানের উপর চলে। অথচ সত্যের ব্যাপারে অনুমান মোটেই ফলপ্রসু নয়”। (সুরা-আন নজম ২৮)।
আরও বলেছেন ঃ وماتالانغسهوى الالظن يتبعون ان
“তারা কেবল মাত্র অনুমান (ধারনা) এবং প্রবৃত্তিরই অনুসরন করে”। (সুরা-আন নজম ২৩)।
.
.
রাসূল (ছাঃ)বলেনঃ তোমরা অনুমান (ধারনা) করা হতে নিজেদের রক্ষা কর, কারণ অনুমান (ধারনা) সর্বাপেক্ষা মিথ্যা কথা। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫০২৮)।
.
“তোমরা আমার হাদীস বলা থেকে দুরে থাক। তবে যা তোমরা জানো তা ব্যতীত”।
(তিরমিযী, আহমাদ)।
.
.
এই হাদীসে তিনি দুর্বল (যঈফ) হাদীস বলতে নিষেধ করেছেন। তাহলে এর উপরে আমলও নিষিদ্ধ এটাই যুক্তিসংঙ্গত।
.
তিনি আরো সাবধান করে বলেছেন, শেষ যুগে কতক মিথ্যুক দাজ্জালের আগমন ঘটবে, তারা তোমাদের এমন সব হাদীস পেশ করবে, যা তোমরা ও তোমাদের পূর্ব পুরুষরাও কখনও শোনেনি। অতএব তাদের ব্যাপারে সতর্ক হয়ে যাও। তারা যেন তোমাদেরকে পথভ্রষ্টতা ও ফিৎনা ফ্যাসাদে নিপাতিত করতে না পারে। (মুকাদ্দামা, মুসলিম ১/৩৬, হা/১৬)।
.
অনেকে বলে থাকেন দুর্বল (যঈফ) হাদীসের উপর আমল করা যাবে কিন্তু এর পক্ষে কোরান এবং হাদীসে কোন দলীল পাওয়া যায় না। এবং উলামা কেরাম গন ও এর বিপক্ষে রাসূল (ছাঃ) কোন দুর্বল কথা বলতেন না। দুর্বল রাবীগণ বিভিন্ন সাহাবীদের রেওয়াতের নামে নিজেদের অনুমানের উপর হাদীস সাব্যস্ত করার চেষ্টা চালিয়েছেন এবং বিভ্রান্তিছড়িয়েছেন।যঈফ হাদীসগুলোর বিস্তারিত তথ্যই এরকম পাওয়া যায়। অতএব এ সকল হাদীস আমল না করাই যুক্তিযুক্ত এবং উত্তম।
.
ইমাম ইবনে হাযম আন্দালুসী বলেন, যে সকল বর্ণনাকে মিথ্যার অভিযোগে অভিযুক্ত অমনযোগী এবং অজ্ঞাত অবস্থায় সম্পন্ন তাদের বর্ণিত হাদীস গ্রহণ করা খ্রিষ্টান ও ইয়াহুদীদের মিথ্যা বর্ণনার সমতুল্য।
.
তার পূর্ণাঙ্গ বক্তব্যটি হল, “ইতিপূর্বে আমরা যে সকল বর্ণনায় প্রকৃতির কথা উল্লেখ করে আসছি এর মধ্য থেকে পঞ্চম প্রকৃতি হলো, প্রাচ্য ও প্রতীচ্যবাসীদের বর্ণনা। বিরাট এক সমষ্টি থেকে অপর এক বিরাট সমষ্টি কিংবা নির্ভর যোগ্য- বিশ্বস্ত ব্যক্তি থেকে অপর নির্ভরযোগ্য-বিশ্বস্ত ব্যক্তির বর্ণনা এভাবেই বর্ণনার প্রকৃত ধারা শেষ পর্যন্ত নবীর কাছে গিয়ে পৌছেছে। কিন্তু বর্ণনা পরষ্পরায় কোনো এক পর্যায়ে মিথ্যার অভিযোগে সমালোচিত, অমনোযোগি অথবা অজ্ঞতা অবস্থা সম্পন্ন বলে যদি কাউকে পাওয়া যায়, তবে মুসলমানদের কেউ কেউ তা মেনে নিলেও আমাদের কাছে তা মেনে নেওয়া, একে সত্য মনে করা এবং সামান্যতম অংশ গ্রহণ করাও বৈধ নয়। এ ধরনের বর্ণনাকেই তারা তাদের নবীদের প্রতি সুসম্পর্কিত করেছে। আর তাদের এই অপকর্মটি যে সম্পূর্ণরূপে কুফরী কাজ তাতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই”।
(আল ফিসাল ১/৩৩৭, ফিল মিলাল্ ওয়ান্ নিহাল ওয়াল আহওয়াহ)।
.
আহলে হাদীসের একদল আলেম ফযিলত সংক্রান্তযঈফ হাদীসের ব্যাপারে নমনীয়তা প্রদর্শন করেন। কিন্তু আহলে হাদীসের গবেষক এবং উছুল ও ফিকাহ বিশেষজ্ঞ আলেমগণের কাছে তা ভুল বরং হাদীসের দুর্বলতা জ্ঞাত হবার পর তা স্পষ্ট করে ব্যক্ত করা অপরিহার্য। অন্যথায় নাবী এর ঘোষিত শাস্তির সম্মুখিন হয়ে যাবে। তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি আমার থেকে কোন হাদীস বর্ণনা করে অথচ সে জানে যে, তা মিথ্যা, তবে সেও মিথ্যাবাদীদের একজন”।
(মুসলিম ১/১; তিরমিযী ২৬২৬, হযরত মুগীরা থেকে; আল বাইছ ‘আল ইন্কারীল বিদা ওয়াল হাওয়াদিহ’৬৪-৬৫; আল্লামা আবূ শামা আল মুকাদ্দিসী)।
.
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহঃ) বলেন, দুর্বল হাদীস সমূহ যা না সহীহ, না হাসান। শরীয়ায় এগুলোর ওপর নির্ভর করার যায়েজ নেই। (কায়িদাহ্ জালীলাহ্ ফিত্ তাওস্সুল ওয়াল ও সিলাহ্ ৮৪)।
.
আহকাম ও ফযিলত উভয়ই শরীয়াহ এ ব্যাপারে দুর্বল হাদীসের ভিত্তিতে আমল করার ব্যপারে কোন পার্থক্য নেই। সুতরাং ফযিলতের কথা বলে দুর্বল হাদীসের ওপর আমল করা যাবে না”।
(র্তাযীনুল আজাব বিমা ওয়ারাদা ফী সাহ্রি-রাজাব ২৬ পৃষ্ঠা হাফিয ইবনে হাজার আসকালানী)।
.
দুর্বল হাদীসের আমলের প্রতিফল বিদ’আতে লিপ্ত হওয়ার গুনাহ ছাড়া আর কিছুই নয়।
(ইমাম শাওকানী এবং ফাতহুল লাতিফ ১৯-২০ পৃষ্ঠা)।
ইবনে মুঈন বলেন, আহকাম ও ফাযাইল উভয়ই সমান। (উযূনুল আছার ১/১৫; ইবনে সাইদিন্ নাস)।
.
ইমাম ইবনুল আরবী মালিকী বলেন, দুর্বল হাদীসের ওপর কোন অবস্থাতেই আমল করা যায় না।
(আরিদ্বাতু আহওয়াযী ৫ম খন্ড ২০১-২০২ পৃষ্ঠা)।
.
এছাড়াও ইমাম বুখারী, মুসলিম,আবূ যুরযা,আবূ হাতিম, ইমাম শাতিবী, ইমাম ইবনে হাযম আন্দালুসী,শায়খ মুগবীল আল-ওয়াদায়ী,শায়খ নাসীরুদ্দীন আলবানী সহ আগের ও পরের অসংখ্য আলেম উল্লেখিত অভিমতই পোষন করেছেন।
.
যঈফ হাদীসের সমর্থনে অন্য কোন সহীহ্ হাদীসের সমর্থন যদি থাকে সেটা আমল করলে করা যাবে অন্যথায় নয়।
.
ছাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈ থেকে তাবে তাবেঈন সহ আল্লাহ ও রাসুলের সকল অনুসারী গণ কোন বিষয়ে সহ্ীহ হাদীস পেলে বিনা শর্তে তার উপর আমল করেছেন।
ইমাম আবু হানিফা (৮০-১৫০ হিঃ) সহ সকল মুযতাহিদ ইমামগণ বলেছেন যে, সহীহ হাদীসই আমার মাযহাব। (শ রানী, কিতাবুল মীযান, দিল্লি ১/৭৩)।
.
.
ইমাম মুসলিম নিম্নোক্ত শিরোনাম রচনা করেছেন ঃ
‘দুর্বল রাবীদের কাছ থেকে হাদীস বর্ণনা করা নিষিদ্ধ এবং তা বর্ণনার ব্যপারে সতর্কতা অবলম্বন’। (সহীহ মুসলিম মুকাদ্দামা ১ম খন্ড পৃঃ ৯)।
.
অতঃপর তিনি এর পক্ষে অনেক প্রমাণ উল্লেখ করেছেন তার নিকট যঈফ হাদীস বর্ণনা করাই নিষেধ।
মাওলাানা আঃ রহিম বলেন, কেবল মাত্র ছহীহ হাদীস ব্যাতীত অন্য কোন হাদীস গ্রহন করা যাবে না, এ কথায় হাদীসের সকল ইমাম একমত ও দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। (হাদীস সংকলনের ইতিহাস পৃষ্ঠাঃ ৪৪৫ দশম প্রকাশ জানুঃ-২০০৭)।
.
সিরিয়ার মুজাদ্দেদ আল্লামা জামাদ্দীন কাশেমী বলেন, ইমাম বুখারী, মুসলিম, ইয়াহইয়া, ইবনে মুঈন, ইবনুল আরাবী, ইবনে হাযম ও ইবনে তায়াইমিয়া (রহঃ) বলেন, ফযীলত কিংবা আহকাম কোন ব্যাপারেই যইফ হাদীস আমল যোগ্য নয়। (ক্বাওয়াইদুত তাওহীদ পৃঃ ৯৫)।
.
কোন হাদীস যঈফ সাব্যস্ত হওয়ার পর সে হাদীসকে ইসলামী আক্বিদাহ, আহকাম ইত্যাদি উৎস হিসাবে ব্যবহার করা যাবে না। এমনকি দূর্বল হাদীসকে ফাযায়েলের আমলের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যাবে না।
(ফিকহে হানাফির ইতিহাস ও দর্শন পৃঃ-২৩৮ ইঃ ফাঃ)।
.
যঈফ হাদীস আমল না করার ব্যাপারে আহ্কাম ও ফাযায়েলের আমল ইত্যাদির মধ্যে কোন পার্থক্য নেই বরং কারো জন্য রাসূল (ছাঃ) এর সহীহ ও হাসান হাদীস ছাড়া অন্য কিছু হুজ্জত হতে পারে না।(আহাম্মদ-মোহাম্মদ শাকের (রঃ) ঐ)।
যঈফ হাদীস আক্বিদাহ, ইবাদত ও আহকামের ক্ষেত্রে গ্রহনযোগ্য নয়।
(আহমাদ ইবনে হাম্বল, আঃ রহমান ইবনে মাহাবি, আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক ঐ পৃঃ-২৩৯)।
.
ফাযায়েলের ক্ষেত্রে যঈফ হাদীস আমল করার ব্যাপারে বলতে যেয়ে আল্লামা ইবনে হাজার হাম্বলি ও আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন, ‘যঈফ হাদীস যেসব ইবাদতের ক্ষেত্রে আমল করা যায় যার আসল বা ভিত্তি সহীহ দলিল দ্বারা প্রমানিত।(ঐ ২৩৯ পৃঃ)।
.
উক্ত গ্রন্থে আল্লামা ইবনে হাজার এ বিষয়ে তিনটি শর্ত আরোপ করেছেন তা উল্লেখ করা হয়নি। উপরোক্ত বক্তব্যের সারমর্ম হচ্ছে যার আসল বা ভিত্তি সহীহ দলিল দ্বারা প্রমানিত হয় তা আমল করা যাবে কিন্তু সহীহ হাদীস বিরোধী হলে তা চলবে না। অপরপক্ষে অন্যান্য আলেমগণের মতে যঈফ, জ্বাল ও বানোয়াটী হাদীস কোনক্রমেই গ্রহনযোগ্য নয়। এ ধরণের হাদীসের উপর কোন অবস্থাতেই আমল করা যাবে না। (ক্বাওয়াইদুত তাহাদীছ পৃঃ-১১৩)।
.
ইবনে হাজার এর দুর্বল হাদীসের আমল করার ব্যাপারে শর্ত তিনটি ঃ
১ম শর্ত ঃ বর্ণিত দুর্বল হাদীস শরিয়ত প্রনীত কার্যকর মূলনীতির অধীনে থাকা। অর্থাৎ মূল বিধান কর্মটি সহীহ দলীল দ্বারা সাব্যস্ত থাকতে হবে।
.
২য় শর্ত ঃ যে যঈফ বর্ণনাটি আমল করা যাবে তা অত্যাধিক দুর্বল না হওয়া, যাতে করে মিথ্যাবাদী, মিথ্যার অপরাধে অভিযুক্ত এবং নির্লজ্জ ভুলের শিকার বর্ণাকারীদের বর্ণিত হাদীস থেকে তা পৃথক হয়ে যায়।
৩য় শর্ত ঃ এর উপর আমল করার সময় তা প্রমানিত বলে মনে না করা, সতর্কতা মনে করে আমল করা। (ক্বাওয়াইদুত তাহাদীছ পৃঃ-১১৯)।
.
উপোরক্ত শর্ত সম্বন্ধে আল্লামাহ আহমাদ শাকের ‘আল বায়েসুল হাদীস গ্রন্থে (পৃঃ১০১) বলেন, আহমাদ বিন হাম্বল, আব্দুর রহমান বিন মাহদী এবং আব্দুল¬াহ বিন (রহঃ) এর উক্তি ‘যখন আমরা হালাল ও হারামে হাদীস বর্ণনা করি তখন কড়াকড়ি এবং যখন ফাযায়েল ইত্যাদিতে বর্ণনা করি তখন শৈথিল্য করি...। আমার মতে আল¬াহ-আলাম তাদের বলার উদ্দেশ্য এই যে, শৈথিল্য কেবল হাসান হাদীস গ্রহণে করতেন যা ‘সহীহ’ এর দর্জায় পৌছায় না। কারণ সহীহ ও হাসানের মাঝে পার্থক্যরূপ পরিভাষা তাদের যগে স্পষ্ট স্থিত ছিল না। বরং অধিকাংশ পূর্ববর্তী হাদীসকে সহীহ অথবা যঈফ কেবল (এই দুই প্রকার) বলেই মনে করতেন।
(সুতরাং তাদের ঐ শৈথিল্য যঈফ হাদীস বর্ণনায় নয়,হাসান হাদীস বর্ণনায়)।
আল্লামা আলবানী বলেন, আমার নিকট এর দ্বিতীয় ব্যাখ্যা রয়েছে, তাদের ঐ উলি¬খিত শৈথিল্য ইসনাদ (বর্ণনা সুত্র) সহ যঈফ হাদীস ওরয়ায়ত করার উপর মানা যায়। যেমন তাদের বর্ণনার ধারার ও প্রকৃতি এবং তার দুর্বলতা বর্ণনা না করা- যেমন ওদের অধিকাংশের রীতি-এমন পদ্ধতি অবলম্বন করা থেকে তারা (ইমাম আহমাদ প্রভৃতিগণ) বহু উর্দ্ধে এবং এ বিষয়ে তারা আল্লাহকে অধিক ভয় করতেন- আর আল্লাহই অধিক জানেন।