আসসালামু আলাইকুম । এখানে রেজিস্ট্রেশন না করেই অংশগ্রহণ/ব্যবহার করতে পারবেন কিন্তু সর্বোচ্চ সুবিধার জন্য বিনামূল্যে রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন !
0 votes
168 views
in আল-কুরআন ও তার বিভিন্ন জ্ঞান-শাস্ত্র by (195 points)
ওযু ছাড়া কি কুরআন ধরে পড়া যাবে সহিহ হাদিস কি বলে?

1 Answer

0 votes
by (1.9k points)
 এ সম্পর্কে কোরআনে কারীমের যে আয়াত দ্বারা সাধারণত দলীল পেশ করা হয়ে থাকে,সেই আয়াত হল নিম্নরূপ-
ﺇِﻧَّﻪُ ﻟَﻘُﺮْﺁﻥٌ ﻛَﺮِﻳﻢٌ
নিশ্চয় এটা সম্মানিত কোরআন,
ﻓِﻲ ﻛِﺘَﺎﺏٍ ﻣَّﻜْﻨُﻮﻥٍ
যা আছে এক গোপন কিতাবে,
ﻟَّﺎ ﻳَﻤَﺴُّﻪُ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟْﻤُﻄَﻬَّﺮُﻭﻥَ
যারা পাক-পবিত্র, তারা ব্যতীত অন্য কেউ একে স্পর্শ করবে না।
ﺗَﻨﺰِﻳﻞٌ ﻣِّﻦ ﺭَّﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴﻦَ
এটা বিশ্ব-পালনকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ।
(সূরা ওয়াক্বেয়া-৭৭)

এই আয়াত সমূহের ব্যাখ্যা সম্ভবত শরীয়তে ইসলামীর জটিল-কঠিন মাস'আলা সমূহের একটি।আল্লাহর বাণী- “যারা পাক-পবিত্র, তারা ব্যতীত অন্য কেউ একে স্পর্শ করবে না।” দ্বারা আমাদের সামনে বিদ্যমান কোরআনে কারীম উদ্দেশ্য কি না? এ সম্পর্কে অনেক অনেক মতপার্থক্য রয়েছে।তবে এই সমূহ মতপার্থক্যর মধ্যে এটাই বিশুদ্ধ যে,অত্র আয়াতে ঐ কোরআন-ই  উদ্দেশ্য যা আমাদের সামনে বিদ্যমান।সুতরাং আয়াতের অর্থ হবে, 'তোমরা অপবিত্র অবস্থায় তোমাদের সামনে বিদ্যমান কোরআন-কে স্পর্শ করবে না।'

রাসূলুল্লাহ সাঃ এর যামানা এবং প্রথম দুই খলিফার যামানায় কোরআন বর্তমান সময়ের মত লিপিবদ্ধ ছিলনা।অথচ তখনই কোরআনের এ আয়াত নাযিল হয়েছে।তাই বুঝা গেল, যেখানেই কোরআন লিখা থাকবে,সে জিনিষকে স্পর্শ করা যাবে না।

আমাদের সহসাই যে প্রশ্নটা জাগে, তাহলে গিলাফ বা কিছুর আবরণ দ্বারা স্পর্শ করা যাবে কি? সে প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় যে,

    একদল উলামায়ে কেরাম বলেন, অপবিত্র ব্যক্তি কোরআনকে স্পর্শ করতে পারবে না।চায় গিলাফ বা কিছুর আবরণ দ্বারা হোক না কেন?ইহা মুহাম্মদ ইবনে আলী রাহ,আ'তা রাহ,তাউস রাহ,সালিম রাহ,ক্বাসিম রাহ,আব্দুর রহমান ইবনে আসওয়াদ রাহ,ইবরাহিম রাহ,সুফইয়ান রাহ,ইমাম মালিক রাহ,শাফেয়ী রাহ মহোদয়গণের মত ও মাযহাব।(তাফসীরে বাসিত-২১/২৬১)

    অন্য একদল উলামায়ে কেরামের মতে গিলাফ বা কিছুর আবরণ দ্বারা কুরআনকে স্পর্শ করা যাবে।ইহা ইমাম আবু হানিফা রাহ সহ আরো কিছু ফুকাহায়ে কেরামের মাযহাব।

গিলাফ বা আবরণ মূলত সেটাই যা কুরআনকে ঢেকে ফেলবে।কিন্তু সেন্সর গ্লাস মূলত কুরআনকে ঢাকে না।যেন মনে হয় কাগজে লিখিত কুরআনই আমাদের দিকে থাকিয়ে আছে।তাই কুরআনের সম্মানার্থে সেন্সর গ্লাসের উপর দিয়ে স্পর্শ করাও উচিৎ হবে না।

এই মাসআলা কে  নিয়ে মানহাযগত ইখতেলাফ বলতে গেলে ইখেলাফের চুড়ান্ত সীমায়।কেউ কেউ তো এমন ও বলেছেন যে,পূর্বে বর্ণিত সূরা ওয়াক্বেয়ার ৭৭ নং আয়াতের অর্থ হল,এটা এমন এক কুরআন যাকে লৌহে মাহফুজে ফিরিস্তাগণ ব্যতীত আর কেউ স্পর্শ করতে পারে নি।বিধায় এ অর্থ অনুযায়ী আমাদের সামনের কুরআনকে বিনা অজুতে স্পর্শ করা জায়েয রয়েছে।কেননা তখন এ অায়াত নাজায়েয হওয়ার পক্ষে দলীল থাকবে না।

বেশিরভাগ আলেমগণ একমত যে ওযু ছাড়া অনুবাদ সহ কুরআন স্পর্শ করা যাবে কিন্তু যে কুরআনে শুধুই আরবি আছে সেটা স্পর্শ করা যাবে না  । তবে অপরপক্ষে কিছু আমেলগণ বলেছেন যে  শুধু আরবি থাকলেও  সেটা স্পর্শ করা যাবে ।

কুরআন তেলাওয়াতের আদব সমূহঃ

১. পবিত্রতা অর্জন করা : পবিত্র অবস্থায় তথা ওযূ অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াত করা উত্তম। রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنِّيْ كَرِهْتُ أَنْ أَذْكُرَ اللهَ إِلَّا عَلَى طُهْرٍ، أَوْ قَالَ: عَلَى طَهَارَةٍ، ‘ওযূ ব্যতীত আমি আল্লাহর নাম নেয়া অপসন্দ করি অথবা তিনি বললেন, পবিত্রাবস্থায় ব্যতীত’।[3] আর কুরআন তেলাওয়াত যিকরের অন্তর্ভুক্ত। তবে ওযূ ছাড়াও কুরআন তেলাওয়াত করা যাবে। আয়েশা (রাঃ) রাসূল (ছাঃ) সম্পর্কে বলেন,كَانَ يَذْكُرُ اللهَ عَلَى كُلِّ أَحْيَانِهِ، ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সর্বাবস্থায় আল্লাহর যিকর করতেন’।[4] তাই ওযূ ছাড়াও তেলাওয়াত করা যাবে। কিন্তু ওযূ অবস্থায় তেলাওয়াত করা উত্তম।

২. মিসওয়াক করা : তেলাওয়াতের পূর্বে মিসওয়াক করে মুখ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنَّ أَفْوَاهَكُمْ طُرُقٌ لِلْقُرْآنِ، فَطَيِّبُوْهَا بِالسِّوَاكِ، ‘তোমাদের মুখ হ’ল কুরআনের রাস্তা। অতএব তোমরা মিসওয়াক করে তা পবিত্র ও সুগন্ধযুক্ত করো’।[5] অন্য বর্ণনায় এসেছে, আলী (রাঃ) বলেন,أُمِرْنَا بِالسِّوَاكِ. وَقَالَ: إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا قَامَ يُصَلِّي أَتَاهُ الْمَلَكُ فَقَامَ خَلْفَهُ يَسْتَمِعُ الْقُرْآنَ وَيَدْنُو، فَلاَ يَزَالُ يَسْتَمِعُ وَيَدْنُو حَتَّى يَضَعَ فَاهُ عَلَى فِيْهِ، فَلاَ يَقْرَأُ آيَةً إِلَّا كَانَتْ فِيْ جَوْفِ الْمَلَكِ، ‘আমাদেরকে মিসওয়াক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই বান্দা যখন ছালাতে দাঁড়ায়, তখন একজন ফেরেশতা এসে তার পিছনে দাঁড়িয়ে কুরআন তেলাওয়াত শুনতে থাকেন এবং নিকটবর্তী হন। এভাবে তিনি শুনতে থাকেন এবং নিকটবর্তী হ’তে থাকেন। এমনকি তিনি তাঁর মুখ মুছল্লীর মুখের উপরে রাখেন। অতঃপর যখনই সে কোন আয়াত তেলাওয়াত করে তখন তা ফেরেশতার পেটে চলে যায়’।[6] অন্যত্র এসেছে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, فَطَهِّرُوْا أَفْوَاهَكُمْ لِلْقُرْآنِ، ‘অতএব তোমরা কুরআনের জন্য তোমাদের মুখকে পবিত্র কর’।[7]

৩. ক্বিবলামুখী হওয়া : তেলাওয়াতকারীর জন্য মুস্তাহাব হচ্ছে ছালাতের বাইরে কিবলামুখী হওয়া। শিক্ষকের সামনে আদব সহকারে বসার ন্যায় বিনম্র হয়ে বসে তেলাওয়াত করা উত্তম। তবে দাঁড়িয়ে, বসে বা কাত হয়ে কুরআন তেলাওয়াত করলেও তা জায়েয হবে। যেমন আল্লাহ বলেন,الَّذِيْنَ يَذْكُرُوْنَ اللهَ قِيَامًا وَقُعُوْدًا وَعَلَى جُنُوْبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُوْنَ فِيْ خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَذَا بَاطِلًا سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ، ‘যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আসমান ও যমীনের সৃষ্টি বিষয়ে চিন্তা-গবেষণা করে এবং বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! তুমি এগুলিকে অনর্থক সৃষ্টি করনি। মহা পবিত্র তুমি। অতএব তুমি আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে বাঁচাও’ (আলে ইমরান ৩/১৯১)!

আয়েশা (রাঃ) বলেন,كَانَ يَتَّكِئُ فِيْ حَجْرِيْ وَأَنَا حَائِضٌ، ثُمَّ يَقْرَأُ القُرْآنَ، নবী করীম (ছাঃ) আমার কোলে হেলান দিয়ে কুরআন তেলাওয়াত করতেন। আর তখন আমি হায়েয অবস্থায় ছিলাম’।[8]

৪. তেলাওয়াতের শুরুতে আঊযুবিল্লাহ পাঠ করা : তেলাওয়াতের শুরুতে আঊযুবিল্লাহ পাঠ করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,فَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآنَ فَاسْتَعِذْ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ، ‘যখন তুমি কুরআন তেলাওয়াত কর, তখন (শুরুতে) বিতাড়িত শয়তান হ’তে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা কর’ (নাহল ১৬/৯৮)। এজন্য কোন বিদ্বান ‘আঊযুবিল্লাহ’ পাঠ করাকে ওয়াজিব এবং জমহূর বিদ্বান মুস্তাহাব বলেছেন।

৫. তেলাওয়াতের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা : তেলাওয়াতের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা সুন্নাত। শায়খ ছালেহ আল-ওছায়মীন বলেন, ছালাতে ছানা বা দো‘আয়ে ইস্তেফতাহ পড়া, বিসমিল্লাহ ও আঊযুবিল্লাহ বলা এবং আমীন বলা সুন্নাত।[9] সুতরাং বিসমিল্লাহ বলা ছালাতের মধ্যে যখন ওয়াজিব নয়, সুন্নাত, তখন তা ছালাতের বাইরেও সুন্নাত, ওয়াজিব নয়।

শায়খ বিন বায (রহঃ) বলেন, সূরা ফাতিহা অথবা অন্য সূরা তেলাওয়াতের ক্ষেত্রে বিসমিল্লাহ পড়া ছালাতের ভিতরে ও বাইরে সুন্নাত, ওয়াজিব নয়। এটাই সঠিক কথা।[10]

অতএব যদি কেউ তেলাওয়াতের ক্ষেত্রে বিসমিল্লাহ ছেড়ে দেয়, তবুও তার তেলাওয়াত সিদ্ধ হবে। কিন্তু সুন্নাত পরিত্যাগ করা হবে। এজন্য তেলাওয়াতের ক্ষেত্রে বিসমিল্লাহ পড়াকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

৬. গুরুত্বপূর্ণ অর্থবহ আয়াতের পুনরাবৃত্তি : গুরুত্বপূর্ণ আয়াতের অর্থ ও মর্ম অনুধাবনের জন্য বারবার একই আয়াত তেলাওয়াত করা যায়। আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,قَامَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى أَصْبَحَ بِآيَةٍ وَالْآيَةُ: (إِنْ تُعَذِّبْهُمْ فَإِنَّهُمْ عِبَادُكَ وَإِنْ تَغْفِرْ لَهُمْ فَإنَّك أَنْت الْعَزِيز الْحَكِيْم)- ‘একদা নবী করীম (ছাঃ) ছালাতে দাঁড়িয়ে ভোর হওয়া পর্যন্ত একটি আয়াত বারবার তেলাওয়াত করতে থাকেন। (আয়াতের অর্থ) আপনি যদি তাদের শাস্তি দেন তবে তারা তো আপনারই বান্দা। আর আপনি যদি তাদের ক্ষমা করেন তবে আপনি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’ (মায়েদা ৫/১১৮)।[11]

৭. বিনম্রভাবে তেলাওয়াত করা : বিনম্রভাবে বা কান্না জড়িত কণ্ঠে কুরআন তেলাওয়াত করা। যেমন আল্লাহ বলেন,وَيَخِرُّوْنَ لِلْأَذْقَانِ يَبْكُوْنَ وَيَزِيْدُهُمْ خُشُوْعًا- ‘আর তারা কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং তাদের বিনয়চিত্ততা আরও বৃদ্ধি পায়’ (বনু ইসরাঈল ১৭/১০৯)।

মুত্বাররিফ ইবনু আব্দুল্লাহ বিন শিখখীর (রহঃ) স্বীয় পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يُصَلِّي وَلِجَوْفِهِ أَزِيزٌ كَأَزِيزِ الْمِرْجَلِ يَعْنِي: يَبْكِي وَفِي رِوَايَةٍ قَالَ: رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي وَفِي صَدْرِهِ أَزِيزٌ كَأَزِيزِ الرَّحَا مِنَ الْبُكَاءِ. ‘আমি নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট আসলাম। তখন তিনি ছালাত আদায় করছিলেন এবং তাঁর ভিতর থেকে টগবগে আওয়াজ হচ্ছিল যেমন ডেগের ফুটন্ত পানির টগবগ আওয়াজ হয়। অর্থাৎ তিনি কান্নাকাটি করছিলেন। অন্য বর্ণনায় আছে, তিনি বলেন, আমি নবী করীম (ছাঃ)-কে ছালাত আদায় করতে দেখেছি। এমতাবস্থায় তাঁর বুকের মধ্যে চাক্কির আওয়াজের ন্যায় কান্নার আওয়াজ হ’তে থাকত।[12]

৮. রহমতের আয়াত আসলে তা চাওয়া এবং আযাবের আয়াত আসলে তা হ’তে পানাহ চাওয়া : কুরআন তেলাওয়াতকালে রহমতের আয়াত আসলে আল্লাহর নিকটে তাঁর রহমত প্রার্থনা করা এবং আযাবের আয়াত আসলে তা থেকে আল্লাহর নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করা কর্তব্য। হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,  

صَلَّيْتُ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْلَةً فَافْتَتَحَ الْبَقَرَةَ، فَقُلْتُ: يَرْكَعُ عِنْدَ الْمِائَةِ، فَمَضَى، فَقُلْتُ: يَرْكَعُ عِنْدَ الْمِائَتَيْنِ، فَمَضَى، فَقُلْتُ: يُصَلِّي بِهَا فِي رَكْعَةٍ، فَمَضَى، فَافْتَتَحَ النِّسَاءَ، فَقَرَأَهَا، ثُمَّ افْتَتَحَ آلَ عِمْرَانَ فَقَرَأَهَا، يَقْرَأُ مُتَرَسِّلًا إِذَا مَرَّ بِآيَةٍ فِيهَا تَسْبِيحٌ سَبَّحَ، وَإِذَا مَرَّ بِسُؤَالٍ سَأَلَ، وَإِذَا مَرَّ بِتَعَوُّذٍ تَعَوَّذَ،

‘আমি এক রাত্রে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে ছালাত আদায় করলাম। তিনি সূরা বাক্বারাহ শুরু করলেন, আমি মনে মনে বললাম যে, হয়তো তিনি একশত আয়াত পরিমাণ তেলাওয়াত করে রুকূ করবেন। কিন্তু তিনি তেলাওয়াত চালিয়েই যেতে থাকলেন, আমি মনে মনে বললাম, হয়তো তিনি দু’শত আয়াত পরিমাণ তেলাওয়াত করে রুকুতে যাবেন, কিন্তু তিনি তেলাওয়াত চালিয়েই যেতে থাকলেন। আমি মনে মনে বললাম, হয়তো তিনি পূর্ণ সূরা এক রাক‘আতেই তেলাওয়াত করে ফেলবেন। কিন্তু তিনি তেলাওয়াত চালিয়ে যেতে থাকলেন এবং সূরা নিসা শুরু করে তাও তেলাওয়াত করে ফেললেন। তারপর সূরা আলে ইমরানও শুরু করে তাও তেলাওয়াত করে ফেললেন। তিনি ধীরে ধীরে তেলাওয়াত করতেন। যদি তিনি এমন কোন আয়াত তেলাওয়াত করে ফেলতেন যাতে কোন তাসবীহ রয়েছে তবে তাসবীহ পাঠ করতেন, যদি কোন যাঞ্ছা করার আয়াত তেলাওয়াত করতেন তখন যাঞ্ছা করতেন। যদি কোন বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনার আয়াত তেলাওয়াত করতেন, তখন আশ্রয় প্রার্থনা করতেন।[13]

৯. তেলাওয়াতে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী বস্ত্ত দূরে রাখা : কুরআন তেলাওয়াতের সময় তেলাওয়াতে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী যাবতীয় কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকা মুস্তাহাব। যেমন হাসাহাসি, খেলাধূলা, হাতে অনর্থক কাজ করা, বিনা প্রয়োজনে এদিক-সেদিক তাকানো, মোবাইল টেপা অন্যের সাথে অনর্থক কথা বলা, তেলাওয়াতের মাঝে লোকের সাথে অপ্রয়োজনীয় কথা বলে তেলাওয়াত বন্ধ করে দেওয়া এবং অযথা বিভিন্ন বিষয়ে চিন্তা করা ইত্যাদি।

১০. হাই তোলার সময় তেলাওয়াত বন্ধ রাখা : হাই তোলার সময়ে তেলাওয়াত বন্ধ রাখা কর্তব্য। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন,إذَا تَثَاءَبْتَ وَأَنْتَ تَقْرَأُ، فَأَمْسِكْ عِنْدَ الْقِرَاءَةِ تَعْظِيْمًا حَتَّى يَذْهَبَ تَثَاؤُبَكَ، ‘যখন তুমি হাই তোল তেলাওয়াত অবস্থায়, তখন তুমি ক্বিরাআত থেকে বিরত থাক কুরআনের সম্মানে, যতক্ষণ না তোমার হাই চলে যায়’।[14]

নাফে‘ (রহঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,كَانَ ابْنُ عُمَرَ رضى الله عنهما إِذَا قَرَأَ الْقُرْآنَ لَمْ يَتَكَلَّمْ حَتَّى يَفْرُغَ مِنْهُ، ‘ইবনু ওমর (রাঃ) যখন কুরআন তেলাওয়াত করতেন তখন কুরআন তেলাওয়াত হ’তে অবসর না হয়ে কোন কথা বলতেন না’।[15]

১১. সুন্দর কণ্ঠে তেলাওয়াত করা : আল্লাহ কুরআন তেলাওয়াত শুনে থাকেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَا أَذِنَ اللهُ لِشَىْءٍ مَا أَذِنَ لِلنَّبِىِّ أَنْ يَتَغَنَّى بِالْقُرْآنِ ‘আল্লাহ তা‘আলা কোন বিষয়ের প্রতি এরূপ কান লাগিয়ে শুনেন না যেরূপ তিনি নবীর সুমধুর তেলাওয়াত শুনেন’।[16] এজন্য সুন্দর কণ্ঠে কুরআন তেলাওয়াত করতে রাসূল (ছাঃ) নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, زَيِّنُوا الْقُرْآنَ بِأَصْوَاتِكُمْ ‘তোমরা সুললিত কণ্ঠে কুরআনকে সুসজ্জিত করে পাঠ কর’।[17] তিনি আরো বলেন,حَسِّنُوا الْقُرْآنَ بِأَصْوَاتِكُمْ، فَإِنَّ الصَّوْتَ الْحَسَنَ يَزِيْدُ الْقُرْآنَ حُسْناً- ‘তোমরা তোমাদের কণ্ঠস্বর দ্বারা কুরআনকে সেŠন্দর্যমন্ডিত কর। কারণ সুমিষ্ট স্বর কুরআনের সৌন্দর্য বাড়ায়’।[18] সুন্দর আওয়াজে তেলাওয়াত করা কুরআনের সৌন্দর্য। রাসূল (ছাঃ) বলেন,حُسْنُ الصَّوْتِ زِيْنَةُ القُرْآنِ، ‘সুন্দর আওয়াজ (কণ্ঠস্বর) কুরআনের সৌন্দর্য’।[19] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنَّ مِنْ أَحْسَنِ النَّاسِ صَوْتًا بِالْقُرْآنِ الَّذِى إِذَا سَمِعْتُمُوْهُ يَقْرَأُ حَسِبْتُمُوْهُ يَخْشَى اللهَ، ‘মানুষের মধ্যে সুকণ্ঠে কুরআন তেলাওয়াতকারী সেই ব্যক্তি যার তেলাওয়াত শুনে তোমাদের ধারণা হয় যে, সে আল্লাহর ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত’।[20] উল্লেখ্য, গানের সুরে ও বাজনার তালে তালে কুরআন তেলাওয়াত করা যাবে না।

১২. তারতীল ও তাজবীদসহ তেলাওয়াত করা : ধীরে-সুস্থে কুরআন তেলাওয়াত করা। আল্লাহ বলেন,وَرَتِّلِ الْقُرْآنَ تَرْتِيْلاً، ‘আর কুরআন তেলাওয়াত করুন ধীরে-সুস্থে সুন্দরভাবে’ (মুযযাম্মিল ৭৩/৪)। ক্বতাদাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,سُئِلَ أَنَسٌ كَيْفَ كَانَتْ قِرَاءَةُ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم. فَقَالَ كَانَتْ مَدًّا. ثُمَّ قَرَأَ بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْمِ، يَمُدُّ بِبِسْمِ اللهِ، وَيَمُدُّ بِالرَّحْمَنِ، وَيَمُدُّ بِالرَّحِيْمِ. ‘আনাস (রাঃ)-কে নবী করীম (ছাঃ)-এর ক্বিরাআত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হ’ল যে, নবী করীম (ছাঃ)-এর ক্বিরাআত কেমন ছিল? উত্তরে তিনি বললেন, নবী করীম (ছাঃ)-এর ক্বিরাআত দীর্ঘ ছিল। এরপর তিনি বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম তেলাওয়াত করলেন এবং বললেন, নবী করীম (ছাঃ) বিসমিল্লাহ আর-রহমান, আর-রহীম পড়ার সময় দীর্ঘায়িত করতেন’।[21]

১৩. বড় অপবিত্রতায় কুরআন স্পর্শ না করা : গোসল ফরয হওয়া, হায়েয, নেফাস ইত্যাদি অবস্থায় কুরআন স্পর্শ না করা। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,لاَ يَمَسُّهُ إِلاَّ الْمُطَهَّرُوْنَ، ‘পবিত্রগণ ব্যতীত কেউ একে স্পর্শ করেনি’ (ওয়াকি‘আহ ৫৬/৭৯)। এখানে পবিত্রগণ বলতে ফ

Related questions

...