সশব্দে বা জোরে বা সরবে আমিন বলার দলিল , ব্যাখ্যা ও দলিল বা রেফারেন্স সহ
(1) عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ إِذَا قَرَأَ وَلاَ الضَّالِّيْنَ قَالَ آمِيْنَ وَرَفَعَ بِهَا صَوْتَهُ.
(১) ওয়ায়েল ইবনু হুজর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) যখন ‘গাইরিল মাগযূবি আলাইহিম ওয়ালায য-ল্লীন’ বলতেন, তখন তিনি আমীন বলতেন। তিনি আমীনের আওয়াযটা জোরে করতেন।[1]
(2) عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ قَرَأَ غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّيْنَ فَقَالَ آمِيْنَ وَمَدَّ بِهَا صَوْتَهُ.
(২) ওয়ায়েল ইবনু হুজর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) যখন ‘গাইরিল মাগযূবি আলাইহিম ওয়ালায য-ল্লীন’ বলতেন তখন তাকে আমীন বলতে শুনেছি। তিনি আমীনের আওয়ায জোরে করতেন।[2] ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন,
وَبِهِ يَقُوْلُ غَيْرُ وَاحِدٍ مِنْ أَهْلِ الْعِلْمِ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ وَالتَّابِعِيْنَ وَمَنْ بَعْدَهُمْ يَرَوْنَ أَنَّ الرَّجُلَ يَرْفَعُ صَوْتَهُ بِالتَّأْمِيْنِ وَلَا يُخْفِيْهَا وَبِهِ يَقُوْلُ الشَّافِعِيُّ وَأَحْمَدُ وَإِسْحَقُ.
‘রাসূলের ছাহাবী, তাবেঈ এবং তাদের পরবর্তী মুহাদ্দিছগণের মধ্যে অনেকেই এই কথা বলেছেন যে, মুছল্লী আমীন জোরে বলবে, নীরবে নয়। ইমাম শাফেঈ, আহমাদ ও ইসহাক্ব এ কথাই বলেছেন’।[3]
(3) عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ أَنَّهُ صَلَّى خَلْفَ رَسُوْلِ اللهِ فَجَهَرَ بِآمِيْنَ.
(৩) ওয়ায়েল ইবনু হুজর (রাঃ) একদা রাসূল (ছাঃ)-এর পিছনে ছালাত আদায় করেন। তখন রাসূল (ছাঃ) জোরে আমীন বলেন।[4]
(4) عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِيَّ قَالَ إِذَا أَمَّنَ الْإِمَامُ فَأَمِّنُوْا فَإِنَّهُ مَنْ وَافَقَ تَأْمِيْنُهُ تَأْمِيْنَ الْمَلَائِكَةِ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَقَالَ ابْنُ شِهَابٍ وَكَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَقُوْلُ آمِيْنَ.
(৪) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘ইমাম যখন আমীন বলবেন, তখন তোমরা আমীন বল। কারণ যার আমীন ফেরেশতাদের আমীনের সাথে মিলে যাবে, তার পূর্বের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। ইবনু শিহাব বলেন, রাসূল (ছাঃ) আমীন বলতেন।[5]
(5) عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ إِذَا قَالَ الْإِمَامُ غَيْرِالْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّيْنَ فَقُوْلُوْا آمِيْنَ فَإِنَّهُ مَنْ وَافَقَ قَوْلُهُ قَوْلَ الْمَلَائِكَةِ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ.
(৫) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ইমাম যখন ‘গাইরিল মাগযূবি আলাইহিম ওয়ালায য-ল্লীন’ বলবেন, তখন তোমরা ‘আমীন’ বল। কারণ যার কথা ফেরেশতাদের কথার সাথে মিলে যাবে, তার পূর্বের সকল পাপ ক্ষমা হয়ে যাবে’।[6] অন্য হাদীছে এসেছে, তোমরা আমীন বল আল্লাহ তোমাদের দু‘আ কবুল করবেন।[7] অন্য বর্ণনায় আছে, ক্বারী যখন আমীন বলবেন, তখন তোমরা ‘আমীন’ বল।[8]
ইমাম বুখারী (রহঃ) অনুচ্ছেদ রচনা করে বলেন, بَابُ جَهْرِ الْإِمَامِ بِالتَّأْمِيْنِ وَقَالَ عَطَاءٌ آمِيْنَ دُعَاءٌ أَمَّنَ ابْنُ الزُّبَيْرِ وَمَنْ وَرَاءَهُ حَتَّى إِنَّ لِلْمَسْجِدِ لَلَجَّةً… ‘ইমামের উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলা অনুচ্ছেদ। আত্বা বলেন, আমীন হল দু‘আ। ইবনু যুবাইর এবং তার পিছনের মুছল্লীরা এমন জোরে আমীন বলতেন, যাতে মসজিদ বেজে উঠত..’। অতঃপর তিনি নিম্নোক্ত অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন- بَابُ جَهْرِ الْمَأْمُوْمِ بِالتَّأْمِيْنِ ‘মুক্তাদীর উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলা অনুচ্ছেদ’।[9]
জ্ঞাতব্য : অনেকে দাবী করেন, উক্ত হাদীছগুলোতে আমীন জোরে বলার কথা নেই। অথচ হাদীছে বলা হয়েছে ‘যখন ইমাম আমীন বলবে তখন তোমরা আমীন বল’। তাহলে ইমাম ‘আমীন’ জোরে না বললে মুক্তাদীরা কিভাবে বুঝতে পারবে এবং কখন আমীন বলবে? তাছাড়া মুছল্লীদের আমীনের সাথে ফেরেশতাদের আমীন কিভাবে মিলবে? অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ مَا حَسَدَتْكُمُ الْيَهُوْدُ عَلَى شَيْءٍ مَا حَسَدَتْكُمْ عَلَى السَّلاَمِ وَالتَّأْمِيْنِ.
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা ‘সালাম’ ও ‘আমীন’ বলার কারণে ইহুদীরা তোমাদের সাথে সবচেয়ে বেশী হিংসা করে’।[10]
ইহুদীরা যদি আমীন না শুনতে পায় তাহলে তারা হিংসা করবে কিভাবে? অতএব উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলার সুন্নাত গ্রহণ করাই হবে প্রকৃত মুমিনের দায়িত্ব। কিন্তু দুঃখজনক হল, এতগুলো হাদীছ থাকা সত্ত্বেও ‘হেদায়া’ কিতাবে বলা হয়েছে, মুক্তাদীরা নিম্নস্বরে ‘আমীন’ বলবে’।[11] এটাই মাযহাবী শিক্ষা। এছাড়াও ‘মাযহাব বিরোধীদের স্বরূপ সন্ধানে’ বইটিতে নানা কৌশল ও অপব্যাখ্যার আশ্রয় নেয়া হয়েছে।[12]
অনুরূপভাবে আল্লামা মুনীর আহমদ মুলতানী প্রণীত, রুহুল্লাহ নোমানী অনূদিত এবং আল-মাকবাতুতু (আল-মাকতাবাতুত) তাওফিকিয়্যাহ, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম প্রকাশিত ‘আহলে হাদীসের প্রতি ওপেন চ্যালেঞ্জ’ নামে পুস্তকে উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলার সুন্নাতের অপব্যাখ্যা করা হয়েছে। ফেরেশতাগণ আমীন আস্তে বলেন তাই আমীন আস্তে বলার দাবী করা হয়েছে। কিন্তু ইমাম আমীন জোরে না বললে মুক্তাদীরা যে শুনতে পাবে না এবং ইমামের সাথে আমীন বলতে পারবে না, তা লেখক বুঝেননি। তাছাড়া যঈফ হাদীছ উল্লেখ করে গলাবাজি করেছেন এবং ছহীহ হাদীছগুলোকে গোপন করে পাঠকদেরকে ধোঁকা দিয়েছেন আহলে হাদীসের প্রতি ওপেন চ্যালেঞ্জ, পৃঃ ৮৫-৮৭। মাযহাবী সম্পদকে রক্ষা করতে গিয়ে মিথ্যা কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন। এর পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ (বাক্বারাহ ৬৫; মায়েদাহ ৬০)।
উল্লেখ্য যে, ‘আহলে হাদীসের প্রতি ওপেন চ্যালেঞ্জ’ বইটিতে প্রথমে ১২টি মাসআলা আলোচনা করা হয়েছে এবং চ্যালেঞ্জ করে ২০ লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। উক্ত ১২ মাসআলার মধ্যে অধিকাংশই ছালাত সংক্রান্ত, যা আমাদের বইয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আসলে মাসআলা বর্ণনা করা লেখকের মূল লক্ষ্য নয়; বরং অসত্য কথা বলে গালিগালাজ করা ও পাঠকদেরকে প্রতারণার ফাঁদে আটকানোই মূল উদ্দেশ্য। বইটির শেষে আহলে হাদীসের প্রতি ১০০টি প্রশ্ন করা হয়েছে। তার মধ্যে ৮৬টি প্রশ্নই তাকলীদ সংক্রান্ত, যার শারঈ কোন ভিত্তি নেই। অথচ আহলেহাদীছগণ কখনো বাজে কাজে সময় নষ্ট করেন না। তারা পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের প্রতিনিধিত্ব করেন। শিরক, বিদ‘আত ও নব্য জাহেলিয়াতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন, যা তাদের চিরন্তন বৈশিষ্ট্য (মুসলিম হা/৫০৫৯; আহমাদ হা/৪১৪২)। উক্ত লেখক ও অনুবাদক রূপকথার গল্প শুনিয়ে এবং অর্থের লোভ দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছেন। কুরআন-হাদীছ যেন তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি। মুখরোচক কথা বলে অর্থে বিনিময়ে বিক্রয় করতে চায়। এধরনের চাকচিক্যময় কথা দ্বারা আদম সন্তানকে বিপদগামী করা কার স্বভাব, তা হয়ত তারা ভুলে গেছেন (আন‘আম ১১২-১১৩)। আমরা আশা করি হক্ব পিয়াসী মুমিনকে যখন শয়তান প্রতারণায় ফেলতে ব্যর্থ হয়, তখন তল্পীবাহক তথাকথিত মাযহাবী গোলামরাও ব্যর্থ হবে ইনশাআল্লাহ।
জ্ঞাতব্য : অনেক মসজিদে ইমাম ‘আমীন’ বলার পূর্বেই মুক্তাদীরা আমীন বলে থাকে। সে জন্য ইমাম ‘য-ল্লীন’ বলার পর ওয়াক্ফ না করেই একই সঙ্গে ‘আমীন’ বলে দেন। কোনটিই সঠিক নয়। বরং ইমাম ওয়াক্ফ করবেন।[13] অতঃপর ইমাম আমীন বলা শুরু করলে মুক্তাদীরাও একই সঙ্গে আমীন বলবে। যাতে করে ইমাম-মুক্তাদীর আমীন ও ফেরেশতাদের আমীন এক সঙ্গে হয়। অন্যথা আমীন বলার ফযীলত থেকে বঞ্চিত হবে।[14] আরো উল্লেখ্য যে, কোন মসজিদে ইমামের আমীন বলা শেষ হলে তারপর মুক্তাদীরা আমীন বলে। এটাও বাড়াবাড়ি।
সহীহ বুখারীতে জোরে আমিন বলার হাদীসটি আবার পেশ করা হলোঃ
সাইয়েদুনা আবূ হুরাইয়রা রাদ্বীআল্লাহু আনহু হ’তে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ” إِذَا أَمَّنَ الإِمَامُ، فَأَمِّنُوا، فَإِنَّهُ مَنْ وَافَقَ تَأْمِينُهُ تَأْمِينَ المَلاَئِكَةِ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ যখন ইমাম আমীন বলে তখন তোমরাও আমীণ বলবে। কেননা যার আমিন ফেরেশতার আমিনের সাথে মিলে যাবে; তার পূর্বের গুণাহ সমূহকে মাফ করে দেয়া হবে। (সহীহ বুখারী হা/৭৮০)
ইমাম বুখারী রাহ. শিরোনাম দিয়েছেন জোরে আমীন বলা!
আমি কেবল ইমাম বুখারী রহঃ এর শিরোনাম নয় বরং আরো তিনজন ইমামের শিরোনাম দিয়েছি। সেগুলো আবার পেশ করলামঃ
১. ইমাম বুখারী (রহঃ)ঃ “ইমাম ও মুক্তাদির আমীন জোরে বলার অনুচ্ছেদ”
২. ইমাম ইবনে খুযায়মাহ (রহঃ)ঃ “সূরা ফাতেহাহ শেষে সশব্দে আমিন বলার অনুচ্ছেদ”
৩. ইমাম নাসাঈ (রহঃ)ঃ “ইমামের উচ্চ স্বরে আমিন বলা”
৪. ইমাম ইবনে মাজাহ (রহঃ)ঃ “জোরে আমিন বলা”
১ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ইমাম যখন বলে
غير المغضوب عليهم ولا الضالين
তখন তোমরা বল আমীন।’ এ থেকে বোঝা যায়, ইমাম জোরে আমীন বলবে না। তাই ইমাম
غير المغضوب عليهم ولا الضالين
বলার পর মুকতাদিকে আমীন বলার আদেশ করা হয়েছে।
২ এই হাদীসের এক রেওয়ায়েতে সহীহ সনদে আছে, ইমাম যখন বলে –
غير المغضوب عليهم ولا الضالين
তখন তোমরা বল আমীন। কারণ ফেরেশতাগণ বলেন আমীন এবং ইমামও বলেন আমীন। যার আমীন বলা ফেরেশতাদের আমীন বলার সাথে মিলবে তার পিছনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।
إذا قال الإمام غير المغضوب عليهم ولا الضالين فقولوا آمين، فإن الملائكة تقول آمين، وإن الإمام يقول آمين، فمن وافق تأمينه تأمين الملائكة غفر له ما تقدم من ذنبه
(সুনানে নাসাঈ ১/১৪৭)
আসুন আরো বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাকঃ
যেমন এরশাদ হয়েছে, ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲْ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَﺭَﺳُﻮْﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺇِﺫَﺍ ﺃَﻣَّﻦَ ﺍﻟْﺈِﻣَﺎﻡُ ﻓَﺄَﻣِّﻨُﻮْﺍ …ﻭَﻓِﻲ ﺭِﻭَﺍﻳَﺔٍ : ﺇِﺫَﺍ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟْﺈِﻣَﺎﻡُ ﻭَﻻَ ﺍﻟﻀَّﺎﻟِّﻴْﻦَ ﻓَﻘُﻮْﻟُﻮْﺍ ﺁﻣِﻴْﻦَ،ﻓَﺈِﻥَّ ﺍﻟْﻤَﻶﺋِﻜَﺔَ ﺗَﻘُﻮْﻝُ ﺁﻣِﻴْﻦَ ﻭَﺇِﻥَّ ﺍﻟْﺈِﻣَﺎﻡَ ﻳَﻘُﻮْﻝُ ﺁﻣِﻴْﻦَ، ﻓَﻤَﻦْﻭَﺍﻓَﻖَ ﺗَﺄْﻣِﻴْﻨُﻪُ ﺗَﺄْﻣِﻴْﻦَ ﺍﻟْﻤَﻶﺋِﻜَﺔِ ﻏُﻔِﺮَ ﻟَﻪُ ﻣَﺎ ﺗَﻘَﺪَّﻡَ ﻣِﻦْ ﺫَﻧْﺒِﻪِﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺠﻤﺎﻋﺔُ ﻭﺃﺣﻤﺪُ- ﻭَﻓِﻲْ ﺭِﻭَﺍﻳَﺔٍ ﻋﻨﻪ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮْﻝُ ﺍﻟﻠﻪِﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ﺇِﺫَﺍ ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﺁﻣِﻴْﻦَ ﻭَﻗَﺎﻟَﺖِﺍﻟْﻤَﻶﺋِﻜَﺔُ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀِ ﺁﻣِﻴْﻦَ، ﻓَﻮَﺍﻓَﻘَﺖْ ﺇِﺣْﺪَﺍﻫُﻤَﺎ ﺍﻟْﺄُﺧْﺮَﻯ،ﻏُﻔِﺮَ ﻟَﻪُ ﻣَﺎ ﺗَﻘَﺪَّﻡَ ﻣِﻦْ ﺫَﻧْﺒِﻪِ، ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺸﻴﺨﺎﻥُ ﻭﻣﺎﻟﻚُ- ﻭﻋﻦﻭَﺍﺋِﻞِ ﺑْﻦِ ﺣُﺠْﺮٍ ﻗَﺎﻝَ : ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺭَﺳُﻮْﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺮَﺃَ ﻏَﻴْﺮِ ﺍﻟْﻤَﻐْﻀُﻮْﺏِ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻭَﻻَ ﺍﻟﻀَّﺂﻟِّﻴْﻦَ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺁﻣِﻴْﻦَ،ﻭَﻣَﺪَّ ﺑِﻬَﺎ ﺻَﻮْﺗَﻪُ، ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺑﻮﺩﺍﺅﺩَ ﻭﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻯُّ ﻭﺍﺑﻦُ ﻣﺎﺟﻪ -কুতুবে সিত্তাহ সহ অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে বর্ণিত উপরোক্ত হাদীছ গুলির সারকথা হ’ল এই যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, যখন ইমাম ‘আমীন’ বলে কিংবা ‘ওয়ালায্ যা-ল্লীন’ পাঠ শেষ করে, তখন তোমরা সকলে ‘আমীন’ বল। কেননা যার ‘আমীন’ আসমানে ফেরেশতাদের ‘আমীন’-এর সাথে মিলে যাবে, তার পূর্বেকার সকল গুনাহ মাফ করা হবে’। [মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৮২৫,‘ছালাতে ক্বিরাআত’ অনুচ্ছেদ-১২; মুওয়াত্ত্বা (মুলতান,পাকিস্তান ১৪০৭/১৯৮৬) হা/৪৬ ‘ছালাত’ অধ্যায়, পৃঃ ৫২।]
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকেও অনুরূপ বর্ণনাএসেছে। [দারাকুৎনী হা/১২৫৩-৫৫, ৫৭, ৫৯;আবুদাঊদ, তিরমিযী, দারেমী, মিশকাতহা/৮৪৫।]
আত্বা বলেন,আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের (রাঃ) সরবে ‘আমীন’ বলতেন। তাঁর সাথে মুক্তাদীদের ‘আমীন’-এর আওয়াযে মসজিদ গুঞ্জরিত হয়ে উঠত’ ( ﺣَﺘَّﻰ ﺇِﻥَّﻟِﻠْﻤَﺴْﺠِﺪِ ﻟَﻠَﺠَّﺔً )। [বুখারী তা‘লীক্ব ১/১০৭ পৃঃ, হা/৭৮০;ফাৎহুল বারী হা/৭৮০-৮১ ‘সশব্দে আমীন বলা’অনুচ্ছেদ-১১১।]
অনুরূপভাবে যদি কেউ জেহরী ছালাতে ‘আমীন’ বলার সময় জামা‘আতে যোগদান করেন, তবে তিনি প্রথমে সরবে ‘আমীন’ বলে নিবেন ও পরে নীরবে সূরায়ে ফাতিহা পড়বেন। ইমাম ঐ সময় পরবর্তী ক্বিরাআত শুরু করা থেকে কিছু সময় বিরতি দিবেন। যাতে সূরা ফাতিহা ও পরবর্তী আমীন ও ক্বিরাআতের মধ্যে পার্থক্য বুঝা যায়।
উল্লেখ্য যে, এ সময় মুক্তাদীর সূরা ফাতিহা পাঠ করা এবং সেই সময় পরিমাণ ইমামের চুপ থাকার কোন দলীল নেই।
[তিরমিযী, আবুদাঊদ প্রভৃতি; মিশকাত হা/৮১৮ –এর টীকা-আলবানী, ‘তাকবীরের পর যা পড়তে হয়’অনুচ্ছেদ-১১; দ্রঃ মাসিক আত-তাহরীক, রাজশাহী ৭মবর্ষ ১০ম সংখ্যা, জুলাই ২০০৪, প্রশ্নোত্তর:৪০/৪০০, পৃঃ ৫৫-৫৬ ।]
‘আমীন’ শুনে কারু গোস্বা হওয়া উচিত নয়।
কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন, ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَﻗَﺎﻝَ : ﻣَﺎ ﺣَﺴَﺪَﺗْﻜُﻢُ ﺍﻟْﻴَﻬُﻮْﺩُ ﻋَﻠَﻰ ﺷَﻲْﺀٍ ﻣَﺎ ﺣَﺴَﺪَﺗْﻜُﻢْ ﻋَﻠَﻰﺍﻟﺴَّﻼَﻡِ ﻭَﺍﻟﺘَّﺄْﻣِﻴْﻦِ، ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ ﻭﺇﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ ﻭﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻲ-ﻭﻓﻲ ﺭﻭﺍﻳﺔ ﻋﻨﻬﺎ ﺑﻠﻔﻆ : ﻣَﺎ ﺣَﺴَﺪَﺗْﻜُﻢُ ﺍﻟْﻴَﻬُﻮْﺩُ ﻋَﻠَﻰ ﺷَﻲْﺀٍﻣَﺎ ﺣَﺴَﺪَﺗْﻜُﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﻗَﻮْﻝِ ﺁﻣِﻴْﻦَ –
‘ইহুদীরা তোমাদের সবচেয়ে বেশী হিংসা করে তোমাদের ‘সালাম’ ও‘আমীন’ -এর কারণে’। [আহমাদ, ইবনু মাজাহ হা/৮৫৬;ছহীহ আত-তারগীব হা/৫১২।] কারণ এই সাথে ফেরেশতারাও ‘আমীন’ বলেন। ফলে তা আল্লাহর নিকট কবুল হয়ে যায়।
উল্লেখ্য যে, ‘আমীন’ বলার পক্ষে ১৭টি হাদীছ এসেছে।[আর-রাওযাতুননাদিইয়াহ ১/২৭১।]
যার মধ্যে ‘আমীন’ আস্তে বলার পক্ষে শো‘বা থেকে একটি রেওয়ায়াত আহমাদ ওদারা কুৎনীতে এসেছে ﺃﻭ ﺃَﺧْﻔَﻲ ﺑِﻬَﺎ ﺻَﻮْﺗَﻪُ ﺧَﻔَﺾَবলে। যার অর্থ ‘আমীন’ বলার সময় রাসূল (ছাঃ)-এর আওয়ায নিম্নস্বরে হ’ত’। একই রেওয়ায়াত সুফিয়ান ছাওরী থেকে এসেছে ﺭَﻓَﻊَ ﺑِﻬَﺎ ﺻَﻮْﺗَﻪُ বলে।যার অর্থ- ‘তাঁর আওয়ায উচ্চৈঃস্বরে হ’ত’। হাদীছ বিশারদ পন্ডিত গণের নিকটে শো‘বা থেকে বর্ণিত নিম্নস্বরে ‘আমীন’ বলার হাদীছটি‘ মুযত্বারিব’ ( ﻣﻀﻄﺮﺏ )। অর্থাৎ যার সনদ ও মতনে নামও শব্দগত ভুল থাকার কারণে ‘যঈফ’।
পক্ষান্তরে সুফিয়ান ছওরী (রাঃ) বর্ণিত সরবে আমীন বলারহাদীছটি এসব ত্রুটি থেকে মুক্ত হওয়ার কারণে ‘ছহীহ’। [দারাকুৎনী হা/১২৫৬-এর ভাষ্য, আর-রাওযাতুননাদিইয়াহ ১/২৭২; নায়লুল আওত্বার ৩/৭৫।]
[মুয়াত্তা মালিক ১ম খণ্ড,পরিচ্ছেদনং১১, রেওয়াত নং৪৫,পৃষ্ঠা নং১৪০, প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃবাংলাদেশ।]
[সুনানু ইবনু মাজাহ,১ম খণ্ড,হাদিস নং ৮৫৬,পৃষ্ঠা নং ৩২৭, প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ। এসংক্রান্ত আরো দেখুন ৮৫৪,৮৫৫ ও ৮৫৭ নং হাদিস।]
[1]. আবুদাঊদ হা/৯৩২, ১/১৩৪-১৩৫ পৃঃ।
[2]. তিরমিযী হা/২৪৮, ১/৫৭-৫৮ পৃঃ।
[3]. তিরমিযী ১/৫৭-৫৮ পৃঃ।
[4]. আবুদাঊদ হা/৯৩৩, ১/১৩৫ পৃঃ, সনদ ছহীহ।
[5]. বুখারী হা/৭৮০, ১ম খন্ড, পৃঃ ১০৭, (ইফাবা হা/৭৪৪ ও ৭৪৬, ২/১২১ পৃঃ); মুসলিম হা/৯৪২, ১ম খন্ড, পৃঃ ১৭৬; আবুদাঊদ হা/৯৩২ ও ৯৩৩, ১/১৩৫ পৃঃ; তিরমিযী হা/২৪৮, ১/৫৭ ও ৫৮ পৃঃ; ইবনু মাজাহ হা/৮৫৬।
[6]. ছহীহ বুখারী হা/৭৮২, ১ম খন্ড, পৃঃ ১০৭-৮।
[7]. আবুদাঊদ হা/৯৭২, ১/১৪০ পৃঃ إذا قرأ: (غير المغضوب عليهم ولا الضالِّين) فَقُوْلُوْا آميْن يُجبْكُم الله।
[8]. বুখারী হা/৬৪০২, ২/৯৪৭ পৃঃ।
[9]. ছহীহ বুখারী ১ম খন্ড, পৃঃ ১০৭-৮, হা/৭৮০, (ইফাবা হা/৭৪৪ ও ৭৪৬, ২/১২১ পৃঃ)-এর অনুচ্ছেদ।
[10]. আহমাদ, ইবনু মাজাহ হা/৮৫৬, সনদ ছহীহ; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৬৯১।
[11]. হেদায়া ১/১০৫ পৃঃ।
[12]. ঐ, পৃঃ ২৯৭-৩১২।
[13]. তাফসীরে কুরতুবী ১/১২৭ পৃঃ।
[14]. ফাতাওয়া উছায়মীন ১৩/৭৮ পৃঃ।