বিবিধ বা অন্যান্য কিছু বিষয়ের ব্যাখ্যা ও উদাহরণসহ কেয়ামতের আলামত ও ভবিষ্যতবাণী
[আমরা ইতিপূর্বে কেয়ামতের আলামত ও ভবিষ্যতবাণী সম্পর্কে পর্ব ভিত্তিক অনেকগুলো হাদিস ও আছার পেশ করেছি। সেগুলো দেখতে এখানে ক্লিক করুন ।]
[প্রথমেই বলে রাখি কিয়ামতের জ্ঞান শুধুমাত্র আল্লাহ’র কাছে আছে ।
‘(হে নবী মুহাম্মাদ!) মানুষ তোমাকে কিয়ামত (কবে হবে, সে) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। তুমি বলো, এর (একেবারে সঠিক) জ্ঞান শুধুমাত্র আল্লাহ’র কাছে আছে। আর (হে নবী !) তুমি কি জানো, কিয়ামত (ঘটার) সম্ভাবনা নিকটে চলে এসেছে !’ [সূরা আহযাব ৬৩]
এখানে শুধুমাত্র হাদিস ও কিছু অনুমানের ভিত্তিতে আমরা কিয়ামতের আলামতগুলো ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি । সুতরাং এখানের সকল বক্তব্য কে আমরা কখনো চূড়ান্ত বলে মনে করি না । এগুলো শুধু উল্লেখ করছি, যাতে এই রেওয়ায়েতসমূহে বর্ণিত কোনো ঘটনা ঘটতে দেখলে তা চিনে নিতে পারেন এবং রেওয়াতের হক্ব আদায় করতে পারেন।
উল্লেখ্য, যেহুতু হয়তো এখানে বর্ণিত অল্প কিছু হাদিসের সনদগত ও অন্যান্য দূর্বলতা থাকতে পারে তাই এখানে উল্লেখিত হাদিসসমূহ কোনো বিজ্ঞ মুহাদ্দেস আলেমের পরামর্শ ব্যাতীত কারো কাছে বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছি।]
# যুহরী রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন- لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يُخْسَفَ بِقَوْمٍ فِي مَرَاتِعِ الْغَنَمِ، وَلاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يُخْسَفَ بِرَجُلٍ كَثِيرِ الْمَالِ وَالْوَلَدِ . رواه عبد الرزاق في مصنفه : ١١/٣٧٥ رقم ٢٠٧٨٤، و نعيم بن حماد في الفتن : ١/٣٧٥، اسناده مرسل راوياه ثقتان – “কেয়ামত কায়েম হবে না, যাবৎ না একটি গোষ্ঠি গবাদীপশুর চারণভূমিতে ধ্বসে যায়। আর কেয়ামত কায়েম হবে না, যাবৎ না প্রচুর ধ্বনসম্পদ ও সন্তানাদিওয়ালা এক ব্যাক্তি (ভূগর্ভে) ধ্বসে যায়”। [আল-মুসান্নাফ, ইমাম আব্দুর রাজ্জাক- ১১/৩৭৫ হাদিস ২০৭৮৪; আল-ফিতান, নুআইম বিন হাম্মাদ- ১/৩৭৫]
# ছওবান রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَلْحَقَ قَبَائِلُ مِنْ أُمَّتِي بِالمُشْرِكِينَ، وَحَتَّى يَعْبُدُوا الأَوْثَانَ . رواه الترمذي في سننه , أبواب الفتن , باب ما جاء لا تقوم الساعة حتى يخرج كذابون : رقم ٢٢١٩ ; و أبو داود في سننه , كتاب الفتن والملاحم , باب ذكر الفتن ودلائلها : رقم ٤٢٥٢ ، وصححه الألباني في صحيح الجامع: ١٧٧٣ – ‘কেয়ামত কায়েম হবে না -যাবৎ না আমার উম্মতের কবিলাহ সমূহ মুশরেকদের সাথে গিয়ে মিলিত হয় এবং যাবৎ না তারা মূর্তি সমূহের পুঁজো করে’। [সুনানে তিরমিযী, হাদিস ২২১৯; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪২৫২]
# আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- تَلَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : { إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دَيْنِ اللَّهِ أَفْوَاجًا } فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : لَيُخْرِجَنَّ مِنْهُ أَفْوَاجًا كَمَا دَخَلُوا فِيهِ أَفْوَاجًا . رواه الحاكم في في مستدركه : رقم ٨٦٥٧ و قال : هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحُ الْإِسْنَادِ ، وَلَمْ يُخْرِجَاهُ , ووافقه الذهبي في تلخيصه كما في إتحاف الجماعة بما جاء في الفتن والملاحم وأشراط الساعة : ٢/٢٢٤ – ‘রাসুলুল্লাহ ﷺ তেলাওয়াত করলেন- إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دَيْنِ اللَّهِ أَفْوَاجًا – ‘যখন আল্লাহ’র সাহায্য ও বিজয় আসবে, তখন তুমি দেখতে পাবে মানুষ দলে দলে আল্লাহ’র দ্বীনের ভিতরে প্রবেশ করছে’। তারপর বললেন: তারা যেমন (আজ) দলে দলে (আল্লাহ’র দ্বীন ইসলামের ভিতরে) প্রবেশ করছে, তেমনি (এমন একটা সময় আসবে যখন) তারা অবশ্যই তা থেকে দলে দলে বেড় হয়ে যাবে’। [মুসতাদরাকে হাকিম, হাদিস ৮৬৫৭]
# হযরত আবু হুরায়রাহ রা. বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَقْتَتِلَ فِئَتَانِ عَظِيمَتَانِ، يَكُونُ بَيْنَهُمَا مَقْتَلَةٌ عَظِيمَةٌ، دَعْوَتُهُمَا وَاحِدَةٌ، وَحَتَّى يُبْعَثَ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ، قَرِيبٌ مِنْ ثَلاَثِينَ، كُلُّهُمْ يَزْعُمُ أَنَّهُ رَسُولُ اللَّهِ، وَحَتَّى يُقْبَضَ الْعِلْمُ، وَتَكْثُرَ الزَّلاَزِلُ، وَيَتَقَارَبَ الزَّمَانُ، وَتَظْهَرَ الْفِتَنُ، وَيَكْثُرَ الْهَرْجُ وَهْوَ الْقَتْلُ، وَحَتَّى يَكْثُرَ فِيكُمُ الْمَالُ فَيَفِيضَ، حَتَّى يُهِمَّ رَبَّ الْمَالِ مَنْ يَقْبَلُ صَدَقَتَهُ، وَحَتَّى يَعْرِضَهُ فَيَقُولَ الَّذِي يَعْرِضُهُ عَلَيْهِ لاَ أَرَبَ لِي بِهِ. وَحَتَّى يَتَطَاوَلَ النَّاسُ فِي الْبُنْيَانِ، وَحَتَّى يَمُرَّ الرَّجُلُ بِقَبْرِ الرَّجُلِ فَيَقُولُ يَا لَيْتَنِي مَكَانَهُ. وَحَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا، فَإِذَا طَلَعَتْ وَرَآهَا النَّاسُ ـ يَعْنِي ـ آمَنُوا أَجْمَعُونَ، فَذَلِكَ حِينَ لاَ يَنْفَعُ نَفْسًا إِيمَانُهَا لَمْ تَكُنْ آمَنَتْ مِنْ قَبْلُ، أَوْ كَسَبَتْ فِي إِيمَانِهَا خَيْرًا، وَلَتَقُومَنَّ السَّاعَةُ وَقَدْ نَشَرَ الرَّجُلاَنِ ثَوْبَهُمَا بَيْنَهُمَا، فَلاَ يَتَبَايَعَانِهِ وَلاَ يَطْوِيَانِهِ، وَلَتَقُومَنَّ السَّاعَةُ وَقَدِ انْصَرَفَ الرَّجُلُ بِلَبَنِ لِقْحَتِهِ فَلاَ يَطْعَمُهُ، وَلَتَقُومَنَّ السَّاعَةُ وَهْوَ يُلِيطُ حَوْضَهُ فَلاَ يَسْقِي فِيهِ، وَلَتَقُومَنَّ السَّاعَةُ وَقَدْ رَفَعَ أُكْلَتَهُ إِلَى فِيهِ فَلاَ يَطْعَمُهَا . أخرجه البخاري في صحيحه: ج ٨/ص١٠١ رقم ٦٧٠٤ ،و المسلم الفتن وأشراط الساعة ١٥٧ ، أبو داود الفتن والملاحم ٤٢٥٥ ، ابن ماجه الفتن ٤٠٤٧ ، أحمد ٢/٤١٧ – ‘কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যাবৎ না বিরাট বিরাট দু’টি দল পরষ্পরে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে না যায়। তাদের উভয়ের মাঝে যুদ্ধটি হবে এক মহাযুদ্ধ। উভয়ের আহবান হবে এক। এবং যাবৎ না প্রায় ত্রিশজন দাজ্জাল (ধোকাবাজ) মিথ্যুকের আবির্ভাব হয়। তাদের প্রত্যেকেই দাবী করবে যে, সে আল্লাহ’র রাসুল। যাবৎ না ইলম উঠে যায়, প্রচুর ভূমিকম্প হয়, জামানা পরষ্পরে কাছাকাছি (মনে) হয়, ফিতনা প্রকাশিত হয়ে ওঠে এবং হারজ্ বেড়ে যায়, আর সেটা হল ‘খুন’। এবং যাবৎ না তোমাদের মধ্যে প্রচুর ধ্বনসম্পদ হয়ে যায়, এবং তা এত বেড়ে যায় যে, এমনকি সম্পদের মালিক চিন্তায় পড়ে যায় যে -কে তার সদকাহ গ্রহন করবে। এমনকি সে কাউকে দিতে চাইলে -যাকে দিতে চাওয়া হচ্ছে- সে বলবে- এটা আমার প্রয়োজন নেই। এবং যাবৎ না মানুষ একে অন্যকে (টেক্কা দিয়ে) উঁচু উঁচু ইমারত তৈরীতে লেগে যায়। এবং যাবৎ না কোনো ব্যাক্তি অন্য ব্যাক্তির করর অতিক্রম করার সময় বলে- হায়! তার যায়গায় যদি আমি হতাম। এবং যাবৎ না পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হয়; আর সেটা যখন উদিত হবে এবং মানুষ তা দেখবে, অর্থাৎ (তখন) সবাই ইমান আনবে। কিন্তু সেই মুহূর্তে কারো ইমান কাজে দিবে না -যে এর আগে ইমান আনেনি কিংবা ইমান অনুযায়ী কোনো নেকি উপার্যন করেনি। কিয়ামত অবশ্যই (এমতাবস্থায়) সংঘটিত হবে যে, দুই ব্যাক্তি তাদের মাঝে উভয়ের কাপড়কে মেলিয়ে ধরবে কিন্তু তারা পরষ্পরে না পারবে ক্রয়-বিক্রয় (শেষ) করতে, আর না পারবে তা গুছিয়ে নিতে। কিয়ামত অবশ্যই (এমতাবস্থায়) সংঘটিত হবে যে, এক ব্যক্তি তার উটনীর দুধ দোহন করে নিয়ে ফিরেছে, কিন্তু সে তা পান করতে পারবেনা। কিয়ামত অবশ্যই (এমতাবস্থায়) সংঘটিত হবে যে, এক ব্যক্তি তার হাওয আস্তর করছে, কিন্তু সে পানি সিঞ্চিত করাতে পারবেনা। কিয়ামত অবশ্যই (এমতাবস্থায়) সংঘটিত হবে যে, এক ব্যক্তি তার মুখের কাছে লোকমা তুলেছে কিন্তু সে তা আহার করতে পারবেনা। [সহীহ বুখারী-৮/১০১, হাদিস ৬৭০৪; সহীহ মুসলীম, হাদিস ১৫৭; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪২৫৫; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৪০৪৭; মুসনাদে আহমাদ-২/৪১৭]
হযরত আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- كَيْفَ أَنْتُمْ إِذَا لَمْ تَجْتَبُوا دِينَارًا وَلَا دِرْهَمًا ؟ فَقِيلَ لَهُ وَكَيْفَ تَرَى ذَلِكَ كَائِنًا يَا أَبَا هُرَيْرَةَ ؟ قَالَ إِي وَالَّذِي نَفْسُ أَبِي هُرَيْرَةَ بِيَدِهِ عَنْ قَوْلِ الصَّادِقِ الْمَصْدُوقِ . قَالُوا عَمَّ ذَاكَ ؟ قَالَ تُنْتَهَكُ ذِمَّةُ اللَّهِ وَذِمَّةُ رَسُولِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَيَشُدُّ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ قُلُوبَ أَهْلِ الذِّمَّةِ فَيَمْنَعُونَ مَا فِي أَيْدِيهِمْ – ‘তখন তোমাদের (মুসলমানদের) কি অবস্থা হবে, যখন তোমরা (ইহূদী-খৃষ্টানদের থেকে জিজিয়া হিসেবে) না দিনার (স্বর্ণমূদ্রা) পাবে আর না দেরহাম (রৌপ্যমূদ্রা)’? তখন তাকে বলা হল: ‘হে আবু হুরায়রাহ ! এমনটা ঘটবে এটা আপনি কিভাবে বলেন? তিনি বললেন: যে সত্ত্বার হাতে আবু হুরায়রাহ’র জীবন তার শপথ, সকল সত্যবাদীদের মধ্যে সর্বাধিক সত্যবাদী ব্যাক্তি (মুহাম্মাদ সা.) থেকে (শোনা) বাণী এটি। তারা জিজ্ঞেস করলো: কি জন্য এমনটা হবে? তিনি বললেন: (জিম্মীদেরকে দেখভাল করার ব্যাপারে) আল্লাহ’র জিম্মা ও তাঁর রাসুলের জিম্মা ক্ষুন্ন করা হবে। তখন আল্লাহ তাআলা আহলে-জিম্মা’দের অন্তরকে (মুসলমানদের বিপক্ষে) কঠোর করে দিবেন। ফলতঃ তাদের হাতে যা থাকবে (তা) তারা (মুসলমানদেরকে দেয়া) বন্ধ করে দিবে’। [সহিহ বুখারী, হাদিস ৩১৮০]
# হযরত আবু হুরায়রাহ রা. বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَقْتَتِلَ فِئَتَانِ عَظِيمَتَانِ، يَكُونُ بَيْنَهُمَا مَقْتَلَةٌ عَظِيمَةٌ، دَعْوَتُهُمَا وَاحِدَةٌ، . أخرجه البخاري في صحيحه: ج ٨/ص١٠١ رقم ٦٧٠٤ ،و المسلم الفتن وأشراط الساعة ١٥٧ ، أبو داود الفتن والملاحم ٤٢٥٥ ، ابن ماجه الفتن ٤٠٤٧ ، أحمد ٢/٤١٧ – ‘কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যাবৎ না বিরাট বিরাট দু’টি দল পরষ্পরে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে না যায়। তাদের উভয়ের মাঝে যুদ্ধটি হবে এক মহাযুদ্ধ। উভয়ের আহবান হবে এক’। [সহীহ বুখারী-৮/১০১, হাদিস ৬৭০৪; সহীহ মুসলীম, হাদিস ১৫৭; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪২৫৫; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৪০৪৭; মুসনাদে আহমাদ-২/৪১৭]
# হযরত ইবনে হওয়ালাহ রা. বর্ণনা করেন- وضع رسول الله – صلى الله عليه وسلم – يده على رأسي ثم يَا ابْنَ حَوَالَةَ إِذَا رَأَيْتَ الْخِلَافَةَ قَدْ نَزَلَتْ الْأَرْضَ الْمُقَدَّسَةَ ، فَقَدْ دَنَتْ الزَّلَازِلُ وَالْبَلَايَا وَالْأُمُورُ الْعِظَامُ ، وَالسَّاعَةُ يَوْمَئِذٍ أَقْرَبُ إِلَى النَّاسِ مِنْ يَدَيَّ هَذِهِ مِنْ رَأْسِكَ – أخرجه أبو داود من حديث عبد الله بن حوالة الأزديّ – رضي الله عنه – برقم ٢٥٣٥ ، وأحمد في المسند ٥/٢٢٨، والحاكم في المستدرك ٤/٤٧١، وصحّحه ، ووافقه الذّهبيّ ، وصحّحه الألبانيّ في صحيح سنن أبي داود برقم ٢٥٣٥ – (একদিন) রাসুলুল্লাহ ﷺ তাঁর হাত দ্বারা আমার মাথায় স্পর্শ করে বললেন: হে ইবনে হাওয়ালাহ! যখন দেখবে যে খিলাফত আরদুল-মুকাদ্দাসা’য় গিয়ে ঠেঁকেছে, তখন ভূ-কম্পন, বালা-মুসিবত ও বিরাট বিরাট ঘটনা ঘটতে থাকবে এবং তোমার মাথা থেকে আমার এই হাতের (দূরত্বের) চাইতেও সেদিন কিয়ামত মানুষের অধিক নিকটবর্তী হয়ে আসবে। [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ২৫৩৫; মুসনাদে আহমাদ-৫/২২৮; মুসতাদরাকে হাকিম-৪/৪৭১]
ফায়দা: এখানে আরদুল মুকাদ্দাসা বলতে সম্ভবত: সিরিয়ার দামেশক উদ্দেশ্য, যা বরকতময় শাম-এর একটি বিশেষ অংশ, যেখানে ইমাম মাহদি রা.-এর খিলাফতের কেন্দ্র/রাজধানী হবে। বড় বড় ঘটনা বলতে সম্ভবত: কেয়ামতের বড় বড় আলামত প্রকাশ পাওয়া উদ্দেশ্য। যেমন: ঈসা ইবনে মারইয়াম আ. সিরিয়ার দামেশকের জামে মসজিদের মিনারে আসমান থেকে অবতরণ করবেন এবং ইমাম মাহদির পিছনে মুক্তাদি হয়ে নামায আদায় করবেন। তারপর ঈসা ইবনে মারইয়াম আ. ফিলিস্তিনের লুদ নামক স্থানে দাজ্জালকে হত্যা করবেন। এরপর ইয়াজুজ মাজুম মুমিনদের উপর চড়াও হবে…ইত্যাদি ইত্যাদি। الله اعلم بالصواب
# হযরত সওবান রা. বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- يَقْتَتِلُ عِنْدَ كَنْزِكُمْ ثَلَاثَةٌ ، كُلُّهُمْ ابْنُ خَلِيفَةٍ ، ثُمَّ لَا يَصِيرُ إِلَى وَاحِدٍ مِنْهُمْ ، ثُمَّ تَطْلُعُ الرَّايَاتُ السُّودُ مِنْ قِبَلِ الْمَشْرِقِ فَيَقْتُلُونَكُمْ قَتْلًا لَمْ يُقْتَلْهُ قَوْمٌ – ثُمَّ ذَكَرَ شَيْئًا لَا أَحْفَظُهُ – فَقَالَ : فَإِذَا رَأَيْتُمُوهُ فَبَايِعُوهُ وَلَوْ حَبْوًا عَلَى الثَّلْجِ ، فَإِنَّهُ خَلِيفَةُ اللَّهِ الْمَهْدِيُّ – رواه ابن ماجه في ” السنن “, كتاب الفتن, باب “خروج المهدي ٢/ ١٣٦٧، رقم ٤٠٨٤ , قال ابن كثير في النهاية في الفتن والملاحم: ١/٢٩ : إسناده قوي صحيح , و صححه القرطبي في التذكرة ” ص١٢٠١، و صححه البوصيري في مصباح الزجاجة ٣/٢٦٣، و صححه الشيخ حمود التويجري رحمه الله في كتابه ” إتحاف الجماعة بما جاء في الفتن والملاحم وأشراط الساعة ” ٢/١٨٧ و ضعفه الألباني في ضعيف سنن ابن ماجة . و رواه ايضا البزار في المسند ٢/١٢٠، و الروياني رقم ٦١٩، و الحاكم في ” المستدرك ” ٤/٥١٠، ومن طريقه البيهقي في دلائل النبوة ٦/٥١٥ – ‘তিন ব্যাক্তি তোমাদের ধ্বনসম্পদের কাছে লড়াইয়ে লিপ্ত হবে; তারা প্রত্যেকেই হবে খলিফার পুত্র। পরে (সেই ধ্বনসম্পদ বাস্তবে) তাদের কারোর হাতেই আসবে না। এরপর পূর্ব দিক (-এর একটি অঞ্চল) থেকে কালো পতাকা উত্তলিত হবে, তখন তারা তোমাদেরকে এমনভাবে হত্যা করবে যে, সেরকম হত্যা কোনো জাতি করেনি। এরপর তিনি আরো কিছু উল্লেখ করলেন, যা আমার স্মরণে নেই। এরপর বললেন: সুতরাং তোমরা যদি তাঁকে দেখতে পাও, – যদি বরফের উপর দিয়েও হামাগুড়ি দিতে হয়- তবুও (সে কষ্ট সহ্য করে হলেও) তাঁর কাছে (গিয়ে) বায়াত করো। কারণ, তিনি হলেন (শেষ জামানায়) আল্লাহ’র (নিযুক্ত) খলিফাহ; আল-মাহদী’। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৪০৮৪; মুসনাদে বাযযার-২/১২০; মুসনাদে রোইয়ানী- হাদিস ৬১৯; মুসতাদরাকে হাকিম-৪/৫১০; দালায়েলুন্নাবুয়াত, বাইহাকী-৬/৫১৫]
ফায়দা: এখানে كُلُّهُمْ ابْنُ خَلِيفَةٍ – ‘তারা প্রত্যেকেই হবে খলিফার পুত্র’ বলতে একই খলিফার তিন পুত্রও হতে পারে, আবার তিন তিনজন আলাদা আলাদা খলিফার পুত্রও হতে পারে। আবার كَنْزكُمْ – ‘তোমাদের ধ্বনসম্পদ’ বলতে এখানে কোন ধ্বনসম্পদ বোঝানো হয়েছে তা নিয়েও বিভিন্ন অনুমান নির্ভর মত রয়েছে। যেমন: কেউ বলেছেন, ইরাকের ফুরাত নদী থেকে যে স্বর্ণের পাহাড় বেড় হবে মর্মে হাদিসে রয়েছে সেটি হতে পারে (নিম্নে আবু হুরায়রাহ রা. থেকে হাদিসটি দেখুন), আবার কেউ বলেছেন, ক্বাবার নিচে যেসব ধ্বনসম্পদ প্রথিত রয়েছে -সেগুলো হতে পারে…. ইত্যাদি। এমনও হতে পারে যে, এগুলোর একটিও নয়, বরং অন্য কোনো ধ্বনসম্পদ উদ্দেশ্য। মোটের উপরে এই ভবিষ্যৎবাণী কিভাবে ফলবে তা যথা সময়ের আগে বলা সম্ভব নয়। অপেক্ষায় থাকুন, দেখা যাক কিভাবে কি ঘটে।
এরপর বলা হয়েছে যে, পূর্বদিক থেকে কালো পতাকাধারী একটি গোষ্ঠির আবির্ভাব হবে যারা মুসলমানদেরকে নজিরবিহীন ভাবে হত্যা করবে। আর মুসতাদরাকে হাকিমের রেওয়ায়েতে আছে- তোমাদের সাথে যুদ্ধ করবে। বোঝাই যাচ্ছে, এরা ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ’র মধ্যে শামিল গোষ্ঠি নয়, অন্যথায় তারা মুসলমানদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে খুনাখুনির পথ বেঁছে নিতো না। আমার মতে, এই খুনি কালো পতাকাধারীরা ইমাম মাহদী’র কালো পতাকাধারী মর্দে মুজাহিদগণের দল থেকে ভিন্ন একটি দল। খুনি কালো পতাকাধারীরা মুসলমানদেরকে খুন করার পর কোনো এক সময় কালো পতাকাধারী মর্দে মুমিন মুজাহিদগণের জামাআতটি বেড় হবে যার মধ্যে ইমাম মাহদী’ও থাকবেন। হাদিসটিতে ইমাম মাহদীর কালো পতাকাবাহী জামাআতের সাথে মুসলমানদেরকে যুক্ত হতে বলা হয়েছে -চাই তা করতে গিয়ে বরফের উপর দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে আগানোর মতো শ্রম শিকার করতে হোক না কেনো। ইমাম মাহদীর হাতে মক্কায় বায়াত হওয়ার পর কোনো এক সময় তিনি খুরাসানে/আফগানিস্তানে আসবেন এবং তার পর এ ঘটনা ঘটবে। হাদিসের বক্তব্য থেকে আমার কাছে অনুমিত হয় যে, সে সময়টিতে খুরাসানে বরফ পড়ার মৌসুম থাকবে। الله اعلم بالصواب
আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ সা. এরশাদ করেছেন- لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يُقَاتِلَ الْمُسْلِمُونَ الْيَهُودَ ، فَيَقْتُلُهُمُ الْمُسْلِمُونَ حَتَّى يَخْتَبِئَ الْيَهُودِيُّ مِنْ وَرَاءِ الْحَجَرِ وَالشَّجَرِ، فَيَقُولُ الْحَجَرُ أَوِ الشَّجَرُ: يَا مُسْلِمُ يَا عَبْدَ اللهِ هَذَا يَهُودِيٌّ خَلْفِي ، فَتَعَالَ فَاقْتُلْهُ ، إِلَّا الْغَرْقَدَ، فَإِنَّهُ مِنْ شَجَرِ الْيَهُودِ . رواه مسلم , كتاب الْفِتَنِ وَأَشْرَاطِ السَّاعَةِ, بَاب لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَمُرَّ الرَّجُلُ بِقَبْرِ الرَّجُلِ فَيَتَمَنَّى أَنْ يَكُونَ مَكَانَ الْمَيِّتِ مِنْ الْبَلَاءِ: رقم ٢٩٢٢ ; و الدانى في السنن الواردة في الفتن, بَابُ مَا جَاءَ فِي قِتَالِ هَذِهِ الأُمَّةِ أَهْلَ: ٤٥١; و أحمد في المسنده: رقم ٢٧٥٠٢ ; و الخطيب البغدادي في تاريخ: ٨/١١٤ – ‘কেয়ামত কায়েম হবে না, যাবৎ না মুসলমানরা ইহুদীদের সাথে ক্বিতাল (স্বসস্ত্র জিহাদ) করে। পরে মুসলমানরা তাদেরকে কতল করবে। এমনকি (মুসলমানদের ধাওয়া খেয়ে) ইহূদীরা পাথর ও গাছের পিছনে লুকিয়ে পড়বে। তখন পাথর বা গাছ বলবে: ‘হে মুসলীম! ওহে আল্লাহ’র বান্দা ! এই যে আমার পিছনে ইহূদী (লুকিয়ে আছে)’। তখন সে এসে তাকে কতল করবে। শুধু বাবলা গাছ স্বতন্ত্র (সে একথা বলবে না), কারণ সে ইহূদীদের গাছ’। [সহিহ মুসলীম, হাদিস ২৯২২; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ২৭৫০২; আস-সুনানুল ওয়ারিদাহ, ইমাম দানী, হাদিস ৪৪৯; তারিখে বাগদাদ, খতীব- ৮/১১৪]
ফায়দা: এখানে ইহূদীদেরকে কতল করা বলতে যে সকল ইহূদী সে সময় মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ করবে তাদের কথা বলা হচ্ছে। সাধারণ ইহূদী নারী, পুরুষ, শিশু বা রাবাই (ইহূদী আলেম) যারা সেই যুদ্ধে অংশ নিবে না, তাদেরকে হত্যা জায়েয হবে না, কারণ রাসুলুল্লাহ সা. এরকম ব্যাক্তিদেরকে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন।
এর আগে দুনিয়াতে ফিতনা ফ্যাসাদের বাজার গরম করায় আল্লাহ’র সাময়ীক দুনিয়াবী আযাব হিসেবে ইহূদীরা দু’ দুবার ভিন্ন ভিন্ন শক্রু দ্বারা চরম ভাবে আক্রান্ত হয় এবং তাদের ওই শক্রুরা তাদের রক্তের বন্যা বইয়ে দেয়। ফলে তারা দুই বার পবিত্র ভূমি থেকে বিতারিত হয় এবং পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পরে। সুদীর্ঘ প্রায় ২০০০ বছর তারা কোনো দেশেই স্থির হয়ে জিড়িয়ে নিতে পারেনি, বরং এখানে ওখানে ঠোকড় খেয়ে বেড়িয়েছে। ফলে দীর্ঘ ২০০০ বছর পর ইহূদী ধর্ম গ্রহনকারী একটি ইউরোপিয়ান ধ্বনকুবের ব্যাংকার ইহূদী গোষ্ঠি (যাদেরকে জায়োনিষ্ট ইহূদী বলা হয় এবং যাদের সাথে বাস্তবেই প্রকৃত বনী ইসরাঈলদের বংশধারাগত কোনো সম্পর্ক নেই, যা আজ ডিএনএ টেষ্ট দ্বারাও বৈজ্ঞানীক ভাবে প্রমাণিত হয়েছে, তারা) বিশ্বের ইহূদীদেরকে একটি একজোট শক্তিশালী জাতি হিসেবে দুনিয়ার বুকে পূণরায় দাঁড় করিয়ে তোলার একটি সুবর্ণ সুযোগের গন্ধ পায় এবং তাদের সকল অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কৌশল ব্যবহার করে (যার বহু গবেষনাধর্মী ডকুমেন্টারী রয়েছে) গত শতাব্দিতে তথা ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনের মুসলমানদেরকে জোর করে তাড়িয়ে দিয়েে ইসরাঈল নামক একটি দেশ বিশ্বের মানচিত্রে প্রতিস্থাপন করিয়ে নিতে পূর্ণভাবে সমর্থ হয়। এরপর থেকে আরব আজমে মুসলমানদের যে করুন দশা শুরু হয়েছে, তার পিছনে এই জায়োনিষ্ট ধ্বনকুবেড় ইহূদিদের প্রত্যক্ষ কলকাঠি নাড়ার বিষয়টি আজ সচেতন মানুষের কাছে অজানা নয়। বাহ্যতঃ সকলের মনে হচ্ছে যে, ইউরোপ আমেরিকার শয়তান পলিটিশিয়ানরা মুসলমানদের রক্ত ও ইজ্জত আব্রু নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে, কিন্তু বাস্তবে দাবার গুটি চালছে এই ইহুদীরা। ইহূদীরা তৃতীয় বারের মতো পৃথিবীতে পূণরায় ফিতনা ফ্যাসাদের বাজার গরম করার প্রায় শেষ সীমায় এসে পৌচেছে। আমার ব্যাক্তিগত ক্ষুদ্র গবেষনা মতে, এই জায়োনিষ্ট ইহুদীরাই হল সেই ইহুদী যাদের কথা উপরোক্ত হাদিসে ইংগীত করা হয়েছে, যাদেরকে আল্লাহ তাআলা তৃতীয়বারের মতো চুড়ান্ত শিক্ষা দিবেন মুসলমানদের হাত দ্বারা। সম্ভবতঃ সামনে আগত ইমাম মাহদী রা.-এর নেতৃত্বে এদেরকে সাইজ করা হবে, ইনশাআল্লাহ। হতে পারে দাজ্জাল বেড় হওয়ার আগেই মালহামাতুল-কুবরার সময় ইসরাঈলের জায়োনিষ্ট ইহুদী এদের সাথে মুসলমানদের এই যুদ্ধটি হবে, কিংবা দাজ্জাল বেড় হওয়ার পর যখন ইরানের ইসফাহানের ৭০ হাজার ইহূদী তার অনুসরণ করবে, তখন ইসরাঈলের জায়োনিষ্ট ইহুদীরাও তাদের সাথে মিলিত হবে এবং মুসলমানরা এদের সকলের সাথে যুদ্ধ করবে। তবে ঘটনা যাই হোক, সময় কিন্তু খুব কম, তাই প্রস্তুত হয়ে থাকতে হবে। الله اعلم بالصواب
# হযরত আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে এরশাদ করতে শুনেছি- يَظْهَرُ مَعْدِنٌ فِي أَرْضِ بَنِي سُلَيْمٍ ، يُقَالُ لَهُ فِرْعَوْنُ أَوْ فِرْعَانُ ، وَذَلِكَ بِلِسَانِ أَبِي الْجَهْمِ قَرِيبٌ مِنَ السَّوَاءِ يَخْرُجُ إِلَيْهِ شِرَارُ النَّاسِ ، أَوْ يُحْشَرُ إِلَيْهِ شِرَارُ النَّاسِ . اخرجه أبو يعلى الموصلي فى المسند: ١١/٣٠٥ رقم ٦٤٢٠;قال الهيثمى فى المجمع الزوائد: ٣/٧٨ رواه أبو يعلى ورجاله ثقات – ‘বনু সালেমের ভূমি’তে (এক প্রকার) খনিজ-পদার্থ প্রকাশ পাবে। সেটাকে বলা হবে ফিরআউন বা ফিরআন। (এই হাদিসের রাবী) আবু জাহাম এরকমই বর্ণনা করেছেন; এরকম কাছাকাছি (শব্দ উল্লেখ করছেন)। (এ খবর জানার পর তাতে দখলদারী স্থাপনের জন্য) নিকৃষ্ট মানুষগুলো সেদিকে ধাবিত হবে অথবা (বলেছেন) নিকৃষ্ট মানুষগুলো সেখানে গিয়ে জমায়েত হবে’। [মুসনাদে আবু ইয়া’লা– ১১/৩০৫, হাদিস ৬৪২০; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৩/৭৮]
ফায়দা: ইমাম হাকিম তিরমিযী রহ. আবু গাতাফান রহ. সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস রা.-কে বলতে শুনেছি- تَخْرُجُ مَعَادِنُ مُخْتَلِفَةٌ مَعْدِنٌ مِنْهَا قَرِيبٌ مِنَ الْحِجَازِ يَأْتِيهِ مِنْ شِرَارِ النَّاسِ ، يُقَالُ لَهُ فِرْعَوْنُ ، فَبَيْنَمَا هُمْ يَعْمَلُونَ فِيهِ إِذْ حَسَرَ عَنِ الذَّهَبِ فَأَعْجَبَهُمْ مُعْتَمَلُهُ إِذْ خُسِفَ بِهِ وَبِهِمْ . اخرجه الحاكم فى المستدرك: ٨٤١٥ و قال: هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحُ الْإِسْنَادِ ، وَلَمْ يُخْرِجَاهُ ووافقه الذهبي – ‘বিভিন্ন (মূল্যবান) খনিজ-পদার্থ বেড় হবে। এর মধ্যে (একটা মূল্যবান) খনিজ পদার্থ (বেড় হবে) হিজাজের নিকটবর্তী স্থান থেকে। (এ খবর জানার পর তাতে দখলদারী স্থাপনের জন্য) নিকৃষ্ট নিকৃষ্ট মানুষগুলো সেখানে আসবে। সেই (মূল্যবান খনিজ-পদার্থ’টিকে) বলা হবে ফিরআউন। তারা ওটি নিয়ে কাজ করতে থাকবে, এমন সময় তাদের জন্য স্বর্ণ উন্মোচিত হয়ে যাবে। এতে তারা অবাক হয়ে যাবে। তারা সেটা নিয়ে ব্যাস্ত থাকবে, এমন সময় সেই (স্বর্ণ) তাদেরকে নিয়ে (ভূগর্ভে) তলিয়ে যাবে’। [মুসতাদরাকে হাকিম– ৪/৫০৫, হাদিস ৮৪১৫]
ইমাম নুআইম বিন হাম্মাদ রহ. নিজ সূত্রে আবু গাতাফান রহ. থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস রা.-কে বলতে শুনেছি- حدثنا ابن وهب، عن ابن أبي ذئب ، عن قارظ بن شيبة ، عن أبي غطفان، قال: سمعت عبد الله بن عمرو، يقول: تَخْرُجُ مَعَادِنُ مُخْتَلِفَةٌ مَعْدِنٌ فِيهَا قَرِيبٌ مِنَ الْحِجَازِ يَأْتِيهِ شِرَارُ النَّاسِ يُقَالُ لَهُ فِرْعَوْنُ ذَهَبَ ، يَذْهَبُ إِلَيْهِ شِرَارُ النَّاسِ ، فَبَيْنَمَا هُمْ يَعْمَلُونَ فِيهِ إِذْ حُسِرَ لَهُمْ عَنِ الذَّهَبِ فَأَعْجَبَهُمْ مُعْتَمَلُهُ إِذْ خُسِفَ بِهِ وَبِهِمْ . اخرجه نعيم بن حماد فى الفتن: ٢/٢٧٢ رقم ١٦٩٤ – ‘বিভিন্ন (মূল্যবান) খনিজ-পদার্থ বেড় হবে। এর মধ্যে (একটা মূল্যবান) খনিজ পদার্থ (বেড় হবে) হিজাজের নিকটবর্তী স্থান থেকে। (এ খবর জানার পর তাতে দখলদারী স্থাপনের জন্য) নিকৃষ্ট নিকৃষ্ট মানুষগুলো সেখানে আসবে। সেই (মূল্যবান খনিজ-পদার্থ’টিকে) বলা হবে ফিরআউন-স্বর্ণ। নিকৃষ্ট মানুষরা সেখানে যাবে। তারা ওটি নিয়ে কাজ করতে থাকবে, এমন সময় তাদের জন্য স্বর্ণ উন্মোচিত হয়ে যাবে। এতে তারা অবাক হয়ে যাবে। তারা সেটা নিয়ে ব্যাস্ত থাকবে, এমন সময় সেই (স্বর্ণ) তাদেরকে নিয়ে (ভূগর্ভে) তলিয়ে যাবে’। [আল-ফিতান, নুআইম বিন হাম্মাদ- ২/২৭২ হাদিস ১৬৯৪]
# হযরত আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন- لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَحْسِرَ الْفُرَاتُ عَنْ جَبَلٍ مِنْ ذَهَبٍ، يَقْتَتِلُ النَّاسُ عَلَيْهِ، فَيُقْتَلُ مِنْ كُلِّ مِائَةٍ، تِسْعَةٌ وَتِسْعُونَ، وَيَقُولُ كُلُّ رَجُلٍ مِنْهُمْ: لَعَلِّي أَكُونُ أَنَا الَّذِي أَنْجُو. ورواه مسلم في كتاب الفتن، باب لا تقوم الساعة حتى يحسر الفرات عن جبل من ذهب:٤/٢٢١٩ ، حديث رقم ٢٨٩٤ – ‘কেয়ামত কায়েম হবে না, যাবৎ না ফুরাত (নদী তার বুক চিড়ে) স্বর্ণের পাহাড় উন্মুক্ত করে দেয়। মানুষ ওটাকে কেন্দ্র করে লড়াই করবে। পরে (তাদের) শতকরা নিরানব্বইজন (তাতে) নিহত হবে। আর তাদের প্রত্যেকেই বলবে: হতে পারে আমিই সেই ব্যাক্তি যে বেঁচে যাবে’। [সহিহ মুসলীম- ২/২২১৯, হাদিস ২৮৯৪]
ফায়দা: الْفُرَاتُ (ফোরাত) হল দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার একটি নদী (Euphrates River), যা তুরস্ক’তে উৎপত্তি লাভ করে সিরিয়া ও ইরাকের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দজলা নদী (Tigris River) সাথে মিলিত হয়েছে এবং শাত-আল-আরব নামে পারস্য উপসাগরে পতিত হয়েছে।
এখানে جَبَل مِنْ ذَهَبٍ (স্বর্ণের পাহাড়) বলতে বাস্তবেই ‘স্বর্ণের পাহাড়’ কিনা, নাকি অন্য কিছু, যেটাকে রূপকার্থে স্বর্ণের পাহাড়ের সাথে তুলনা করা হয়েছে -এ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। পূর্বাপর মুহাক্কেক আলেমে দ্বীনের প্রায় সকলেই ‘স্বর্ণের পাহাড়’ বলবে বাস্তবেই ‘স্বর্ণের পাহাড়’ বেড় হওয়ার অর্থ নিয়েছেন। [বিস্তারিত: শারহু মুসলীম, নববী- ১৮/৯৪; ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার- ১৩/৮০; ইতহাফুল জামাআহ- ২/১৮৫] আবার এ যুগের অনেক মুহাক্কেক আলেমে দ্বীন যেমন শায়েখ উসাইমিন দা:বা: -এর ন্যায় অনেকে মনে করেন যে, ‘স্বর্ণের পাহাড়’ বলতে তেলের প্রকান্ড খনিও হতে পারে, যেমন আজকালকার খনিজ তেলকে পেট্রো-গোল্ড (তৈল-স্বর্ণ)ও বলা হয়ে থাকে। তবে আসলে কি বেড় হবে, তা যথা সময়ের পূর্বে কারো বলা সম্ভব নয়।
তবে যা-ই বেড় হোক, ওই ‘স্বর্ণের পাহাড়’ দলখ করতে যে-ই যাবে, তাদের কেউ-ই তা হাসিল করতে পারবে না। যেমন: হযরত আবু হুরায়রাহ রা. বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- يُوشِكُ الفُرَاتُ أَنْ يَحْسِرَ عَنْ كَنْزٍ مِنْ ذَهَبٍ ، فَمَنْ حَضَرَهُ فَلاَ يَأْخُذْ مِنْهُ شَيْئًا –‘অচিরেই ফুরাত (নদী তার বুক চিড়ে) স্বর্ণের খনি উন্মুক্ত করে দিবে। তখন যে ব্যাক্তি (তা হাসিল করার জন্য) সেখানে হাজির হবে, সে তা থেকে কিছুই নিতে পারবে না’। [সহিহ মুসলীম- ৪/২২১৯ হাদিস ২৮৯৪; সহিহ বুখারী, হাদিস ৭১১৯; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪৩১৩; সুনানে তিরমিযী, হাদিস ২৫৭২] হযরত উবাই বিন ক্বাব রা. বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি- يُوشِكُ الْفُرَاتُ أَنْ يَحْسِرَ عَنْ جَبَلٍ مِنْ ذَهَبٍ، فَإِذَا سَمِعَ بِهِ النَّاسُ سَارُوا إِلَيْهِ، فَيَقُولُ مَنْ عِنْدَهُ: لَئِنْ تَرَكْنَا النَّاسَ يَأْخُذُونَ مِنْهُ لَيُذْهَبَنَّ بِهِ كُلِّهِ، قَالَ: فَيَقْتَتِلُونَ عَلَيْهِ، فَيُقْتَلُ مِنْ كُلِّ مِائَةٍ تِسْعَةٌ وَتِسْعُونَ – ‘অচিরেই ফুরাত (নদী তার বুক চিড়ে) স্বর্ণের পাহাড় উন্মুক্ত করে দিবে। মানুষ যখন একথা শুনবে, তখন তারা সেদিক পানে ধাবিত হবে। (সেখানে গিয়ে যখন পৌছবে) তখন ওটার কাছে (দাঁড়িয়ে) বলবে: আমরা যদি (এখন) লোকজনকে (এই অবস্থায়) রেখে (কিছু না নিয়েই চলে) যাই, তাহলে তারা তা থেকে নিতে থাকবে (এমনকি) এর সবই নিয়ে যাবে। তিনি বলেন: তখন তারা ওটাকে কেন্দ্র করে লড়াই বাঁধিয়ে দিবে। ফলে শতকরা নিরানব্বইজন (তাতে) নিহত হবে। [সহিহ মুসলীম-৪/২২২০ হাদিস ২৮৯৫; সহিহ বুখারী, হাদিস ৭১১৯; মুসনাদে আহমদ- ১৫/৪৬৮, হাদিস ২১১৫৮]
# হযরত মায়মুনা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- مَا أَنْتُمْ إِذَا مَرَجَ الدِّينُ ، وَسُفِكَ الدَّمُ ، وَظَهَرَتِ الزِّينَةُ ، وَشَرُفَ الْبُنْيَانُ ، وَاخْتَلَفَ الأَخَوَانِ ، وَحُرِّقَ الْبَيْتُ الْعَتِيقُ . اخرجه الطبراني في ” المعجم الكبير: ٢٤/٢٦ رقم ٦٧, قال الهيثمي: رجاله ثقات: ٧/٣١٠ ; أحمد في ” مسنده: ٦/٣٣٣ رقم ٢٦٨٧٢ ،ابن وضاح في ” البدع والنهي عنها: ٢٢٧ و رواتهما ثقات ,و ابن أبي شيبة في ” مصنفه: ٧/٤٦٠ رقم ٣٧٢٢٥ – ‘তোমাদের (মুসলমানদের তখন) কি হবে, যখন দ্বীন (ইসলাম মানুষের চোখে) গড়বড় / খলতমলত হয়ে যাবে, (বিভিন্ন দুনিয়াবী স্বার্থে নির্বিচারে) রক্ত ঝড়ানো হবে, (সর্বপ্রকারের ভোগ-সামগ্রীতে) যিনাত (সৌন্দর্য/জাকজমক/চাকচিক্যতা) প্রকাশ পাবে, ইমারত সমূহ’কে (সুন্দর, জাকজমকপূর্ণ) সুগঠিত/মার্জিত করা হবে, দুই ভাই বিরোধ বাঁধাবে এবং বায়তুল-আতিক (পরোনো ঘর)কে পুড়িয়ে দেয়া হবে’ !!! [আল-মু’জামুল কাবীর, ত্বাবরাণী- ২৪/২৬ হাদিস ৬৮; মুসনাদে আহমদ- ৬/৩৩৩ হাদিস ২৬৮৭২; ইবনে ওযায়হ- ২২৭; আল-মুসান্নাফ, ইবনু আবি শায়বাহ- ৭/৪৬ হাদিস ৩৭২২৫; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৭/৩১]
# হযরত আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ ، لا تَفْنَى هَذِهِ الأُمَّةُ حَتَّى يَقُومَ الرَّجُلُ إِلَى الْمَرْأَةِ فَيَفْتَرِشَهَا فِي الطَّرِيقِ ، فَيَكُونَ خِيَارُهُمْ يَوْمَئِذٍ مَنْ يَقُولُ لَوْ وَارَيْتَهَا وَرَاءَ هَذَا الْحَائِطِ .أخرجه أبو يعلى في ” مسنده: ٢/٢٩١رقم ٦١٨٤; قال الهيثمي في ” مجمع الزوائد: ٨/٣٣١ – رواه أبو يعلى ورجاله رجال الصحيح – ‘ওই সত্ত্বার কসম যাঁর হাতে আমার জীবন, এই উম্মত খতম হবে না, যাবৎ না (এমন ঘটনা ঘটে যে, এক) পুরুষ উঠে কোনো নারীর কাছে যায়, তারপর রাস্তার মধ্যেই তার সাথে শুয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে সেদিন উত্তম হবে সে, যে বলবে: তাকে যদি আড়ালে নাও তো এই দেয়ালের আড়ালে নিতে পারো (তারপর যা করার করো)। [মুসনাদে আবু ইয়া’লা– ২/২৯১, হাদিস ৬১৮৪; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৮/৩৩১]
ফায়দা: এখানে বল হয়েছে فَيَفْتَرِشَهَا فِي الطَّرِيقِ – ‘তারপর রাস্তার মধ্যেই তার সাথে শুয়ে পড়ে’। এই শব্দের মূল ক্রিয়া হল اِفتَرشَ যার অর্থ- কিছুকে বিছিয়ে দেয়া, কিছুর উপর শুয়ে পড়া, কাউকে ধরে ভূপাতিত করা। যেমন বলা হয় اِفتَرشَ الأرْضَ (সে জমিনকে বিছানা বানিয়েছে) অর্থাৎ সে জমিনকে বিছানা বানিয়ে তার উপর শুয়ে পড়েছে; বা اِفتَرشَ عَدُوَّهُ (সে তার শত্রুকে ভূপাতিত করেছে), অর্থাৎ- সে তার শত্রুকে ধরাসায়ী করেছে বা মাটিতে শুইয়ে দিয়েছে; বা اِفتَرشَ المرأةَ – (সে নারীটিকে নিয়ে শুয়েছে), অর্থাৎ- সে নারীটির সাথে মেলামেশা/ যৌন কসরত করেছে (এখানে উদ্দেশ্য একেবারে সহবাস/সঙ্গমও হতে পারে, আবার সহবাস/সঙ্গম না করে শুধু উপরে উপরে যৌন কসরতও হতে পারে)। এই হিসেবে فَيَفْتَرِشَهَا فِي الطَّرِيقِ – ‘তারপর রাস্তার মধ্যেই তার সাথে শুয়ে পড়ে’ -বলতে রাস্তাপথে একেবারে সহবাস/সঙ্গমও হতে পারে, আবার সহবাস/সঙ্গম না করে শুধুমাত্র যৌন কসরতও হতে পারে। রাস্তার পাশে শুধু ছেলে-মেয়ে’দের যৌন কসরত-তো আজ-কাল দিনে দুপুরে পার্কে বা ঝোপ-ঝারের আড়ালে লক্ষ্য করা যায়। এদের জন্য স্ত্রী-সন্তানদেরকে নিয়ে পার্কের নিরিবিলিতে একটু হাটা-হাটি করারও আজ দায় হয়ে গেছে। তবে আমার ধারনা, এখানে ‘পূর্ণ যৌন সঙ্গম’ উদ্দেশ্য, যেমনটা নিচের দুটি হাদিসে আপনারা দেখতে পাবেন।
এই হাদিসটি দেখে অনেকে ধারনা করে থাকেন যে, এখানে পৃথিবীর সবাই বা বেশিরভাগ মানুষ এরকম নির্লজ্জ হয়ে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে ! কিন্তু এ ধারনাটি ঠিক নয়, হাদিসের উদ্দেশ্যও সেটা নয়। উদ্দেশ্য হল, শেষ জামানায় অশ্লিলতা ও জেনা-ব্যাভিচার এত ব্যাপক আকার ধারন করবে যে, এসব পাপ গোপনে গোপনেও চলবে, আবার কেউ কেউ তা ‘ঘরোয়া প্রকাশ্যেও’ চালাবে। (ঘরোয়া প্রকাশ্য বলতে, যেমনটা কোনো কোনো নাইট-ক্লাব, অশ্লীল ডান্সপার্টি ইত্যাদির ঘরোয়া পরিবেশে গুটি কয়েক মানুষের সামনে এসব গোনাহ’র কাজ করে থাকে)। এসব পাপে অভ্যস্তের পরও যাদের মনের তখনো সৃষ্টিগত লজ্জানুভুতির কিছুটা হলেও অবশিষ্ট থাকবে, তারা হয়-তো সবাই অতটা প্রকাশ্যে এই পাপ করতে চাইবেনা সমাজের ভয়ে। কিন্তু এসকল মহা পাপ উপর্যপুরি করতে করতে কোনো কোনো লোকজনের চরিত্রে এতটাই পঁচন ধরবে যে, তাদের কেউ কেউ এসব প্রকাশ্যে করতেও লজ্জাবোধ করবে না। এরা হয়-তো সমাজের গুটি কয়েক লোক হবে। হাদিসটি থেকে বোঝা যায়, যারা এটা প্রকাশ্যে করবে, তাদের আশপাশে থাকা লোকগুলিও এসবে অশ্লীল পরিবেশে বেড়ে ওঠা সম-মনমানুষিকতারই লেকজন হবে, যার কারণে তারাও এটাকে স্বাভাবিক মনে করে যে যার কাজে থাকবে। আর তাদেরই মধ্যে যে ব্যাক্তির বিবেকে খানিকটা অসস্থ্যিবোধ বিদ্যমান থাকবে, সে বলবে যে, ‘আরে ভাই একটু আড়ালে গেলে……হয় না’!!!! এই লোকটি সেখানকার উপস্থিত লোকদের মধ্যে উত্তম গণ্য হওয়ার উপযোগী; কিন্তু পৃথিবীর সবার চেয়ে উত্তম নয়। এরপর ঈসা ইবনে মারইয়াম আ. ও মুমিনগণের মৃত্যুর পর পৃথিবীতে থেকে যাওয়া নিকৃষ্ট লোকরা জেনা-ব্যাভিচারে এতটা উন্মত্ত হয়ে যাবে যে, তারা এই পাপটি লোকসম্মুখে করতেও দ্বিধাবোধ করবে না। الله اعلم بالصواب
# আব্দুল্লাহ বিন আমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- لا تقوم الساعة حتى يتسافدوا في الطريق تسافد الحمير. اخرجه ابن حبان فى صحيحه , رقم ١٨٨٩, و البزار في ” مسنده, رقم ٢٣٨, و أبو يعلى في ” مسنده: ٢/٢٩١, و قال الهيثمي في ” مجمع الزوائد “: ٨/٣٣١, ” رواه أبو يعلى و رجاله رجال الصحيح‘‘ – ‘কেয়ামত কায়েম হবে না, যাবৎ না (নারী-পুরুষ) রাস্তাপথে পরষ্পর সঙ্গম-যৌনাচার করে, (যেমনি ভাবে) গাধা পরষ্পর সঙ্গম-যৌনাচার করে থাকে’। [সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস ১৮৮৯; মুসনাদে বাযযার, হাদিস ২৩৮; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইসামী- ৮/৩৩১]
ফায়দা: রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর এই ভবিষ্যৎবানীটি যদি অমুসলীমদের সম্পর্কে হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের এই জামানায় এরকম ঘটনা অমুসলীম বিভিন্ন দেশে অনেক ঘটেছে এবং প্রায়ই ঘটছে।একজন (বিশ্বস্থ্য) পরিচিত লোক জানিয়েছেন যে, তিনি নিজ চোখে বিদেশের এক যাত্রী ভর্তি বাসে এক ছেলে এবং এক মেয়েকে প্রকাশ্যে সঙ্গম করতে দেখেছেন, অথচ যাত্রীদের মধ্যে কেউই কিছু বলছিলো না, কেউ কেউ হাসছিল, কেউ কেউ একটু অপ্রস্তত অবস্থায় জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়েছিল। তার মতে, বিদেশের কোনো কোনো যৌনলিপ্সু গোষ্ঠি নিরিবিলি রাস্তার ধারে, বনে-বাদারে, আড়ালে, স্কুল-কলেজ-ভার্সিটিতে, বাড়িতে, ক্লাবে, পার্টিতে যখন যেখানেই সুযোগ পায় এরকম যৌনচর্চায় লিপ্ত হয়। আমি মুসলীম উম্মাহ’র মধ্যে এরকম ঘটনা ঘটতে এপর্যন্ত শুনিনি, কোথাও ঘটেছে কিনা তা জানি না। তবে রাস্তা-ঘাটে পশুর মতো এরকম যৌনচর্চার ব্যাপক মহড়া পূর্ণ মাত্রায় দেখা যাবে আরো অনেক পরে, যখন ঈসা ইবনে মারইয়াম আ.-এর পর কোনো এক দিন একটি বাতাস এসে সকল মুমিনদের রূহ কবজ করে নিয়ে যাবে, তার পরে অবশিষ্ট রয়ে যাওয়া অমুসলীম এবং এই উম্মাহ’র ইমানহীনরা অ-কাম কু-কামে ফুল ভলিয়মে জড়িয়ে পড়বে।
# আবু সাঈদ খুদরী রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى لاَ يُحَجَّ الْبَيْتُ . رواه أبو يعلى في مسنده : ٢/٢٧٧ ، و ابن حبان في صحيحه : ١٥/١٥١، و الحاكم في الميتدرك: ٤/٥٠٠ و قال: هذا حديث صحيح على شرط الشيخين ولم يخرجاه، وقد أوقفه أبو داود عن شعبة و وافقه الذهبي و قال: على شرط البخاري ومسلم؛ و قال الألباني في السلسلة الصحيحة: ٢٤٣٠: و هذا إسناد صحيح على شرط الشيخين كما قال الحاكم و وافقه الذهبي – “কেয়ামত কায়েম হবে না, যাবৎ না (আল্লাহ’র) ঘরের হজ্জ না হওয়া(র ঘটনা সংঘটিত) হয়”। [মুসনাদে আবু ইয়া’লা– ২/২৭৭ হাদিস ৯৯১ (১৮); সহিহ ইবনে হিব্বান– ১৫/১৫১; মুসতাদরাকে হাকিম- ৪/৫০০]